বছরের প্রথম দিনটিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া যায় এবং বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করা যায়- এমন কথা কদিন আগেও বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। বরং নানা কারণে বই ছাপা হচ্ছে না, ছাপা হলেও বিদ্যালয়ে বই পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে বা পাঠানো হলেও সব বিষয়ের না পাঠিয়ে মাত্র কয়েকটি বিষয়ের বই পাঠানো হয়েছে- সংবাদপত্রের পাতায় ছাপানো ইত্যাদি খবরগুলো ছিল আমাদের জন্য স্বাভাবিক। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ অবশ্য বেশ আগে থেকে ‘বছরের প্রথমদিনেই বই দেয়া হবে’ ধরনের কথাবার্তা বলছিলেন, কিন্তু মন্ত্রীরা তো কতো কথাই বলেন! কথার সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া খুব কঠিন, তবে শিক্ষামন্ত্রী এক্ষেত্রে যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মন্ত্রীর সঙ্গে যারা আরও যারা ছিলেন, তাঁরাও ধন্যবাদার্হ হবেন। তাছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিদ্যালয় খোলা রেখে দিবস-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিবসটি পালন করার কিছুদিন আগে গৃহীত সিদ্ধান্তটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। আজকে বিভিন্নজনের মুখে শিক্ষার যে নিম্নমানের কথা উচ্চারিত হতে শোনা যায়, তার মূলে রয়েছে এসব নানাবিধ সমস্যা- যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ে কম কর্মঘণ্টা। শিশুদের সারাবছরে বিদ্যালয়ে যতোক্ষণ থাকার কথা, তার চেয়ে তারা অনেক কম সময় পায় বিদ্যালয়ে থাকার। নানা ধরনের লম্বা-ছোট ছুটিছাটা তো রয়েছেই, পাশাপাশি পড়ালেখাটা যে মুখ্যত বিদ্যালয়কেন্দ্রিক হওয়া উচিত- সেই সংস্কৃতিটাও এখানে তৈরি হয় নি এখনও। এ অবস্থায় বছরের প্রথমদিনই শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়টি অন্তত দুটি সমস্যার সমাধানের ইঙ্গিত দেয়। অথচ পূর্ববর্তী বছরগুলোতেও এরকম ভাবা যায় নি। শিশুদের পাঠ্যবইপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের টালবাহানা ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, প্রকাশকদের মুনাফা করার প্রবণতা, বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সংস্কৃতি ইত্যাদি নানা কিছু মিলে বছরের প্রথম বেশ কয়েকটি দিন কেটে যেত কোনো কাজ ছাড়াই। এবার যখন আগে থেকেই বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই বিতরণে ঘোষণা দেয়া হয়, তখন থেকেই সংশয় ছিল- আদৌ কি এটা করা সম্ভব হবে? বিশেষ করে গত বছরের শেষদিকে এনসিটিবির গুদামে আগুনে প্রচুর কাগজ পুড়ে যাওয়ার এই সংশয় আরও বেড়ে যায়। এই আগুন লাগার পেছনে কী কারণ ছিল, তা অবশ্য এখনও জানা যায় নি; কিন্তু কেউ যদি এটাকে দুর্ঘটনা…
এতে (‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার') পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ভাই-বেরাদর সহযোগে একধরনের ফুর্তির আয়োজন করতে পেরেছেন। এতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাণিজ্যিক জোশ আমদানি করতে পেরেছেন। [...]
সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না বহুদিন হলো। পারিবারিক আয়োজনের ভিতর দিয়েই তা দেখতে হলো। তার মানে শহুরে মধ্যবিত্তকে টিভি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এতে কিছুটা হলেও বোঝা যায়। এটি প্রায় দুই ঘণ্টা সময়ের এক আয়োজন। এতে পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ভাই-বেরাদর সহযোগে একধরনের ফুর্তির আয়োজন করতে পেরেছেন। এতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাণিজ্যিক জোশ আমদানি করতে পেরেছেন। সেগুলি একে একে জানানোর চেষ্টা করব। ১. যৌনতা : যৌনতার এমন সর্বব্যাপী ব্যবহার খুব কম ছবিতেই দেখা গেছে। একাকী এক মেয়ে এই সমাজে চলা খুবই ডিফিকাল্ট। নষ্টভ্রষ্ট সমাজ তাকে বেঁচে থাকার এতটুকু সাহস শক্তি তৎপরতা দিতে পারে না। তা এ ছবিটিতে আছে। কিন্তু এটিকে পুঁজি করে পুঁজি বানানোর এমন ধান্ধা সত্যি বিরল। ২. কমপিউটারাইজ্ড লাইফ : ইন্টারনেটে এখন যে ফেসবুক, ব্লগ, ইমেইল, টিভি-কার্ডের সম্মিলিত ব্যবহারের আয়োজন লক্ষ করা যায়, এমনই হুলস্থূল এক লম্ফঝম্ফ দেখা যায়। আমরা আশির দশকে শুনতাম, অঞ্জু ঘোষ সিনেমায় থাকবে, আর সে জলে নামবে না, তা তো হয় না। সেই রূপ ফারুকী ফিল্ম করবে তাতে সেলফোন থাকবে না, তা কী করে হয়? ৩. সতীত্ব প্রকল্প : যত যাই হোক, সতী নারীর পতি মরে না! এই হচ্ছে সনাতন চিন্তাভাবনার আধুনিক রূপায়ন। পরকীয়া আছে-আছে করেও নাই। আর এমন হাস্যকর সতীপনা, বাবা কেন চাকর ধরনের বাণিজ্যিক ছবিতেও হয়ত এতো দেখা যায় না। ৪. পার্টনার বাণিজ্য : এর রেডিও পার্টনার রেডিও ফুর্তি; আর এটিকে অত্যন্ত নির্লজ্জের সাথে চালাকি করে ফিল্মটিতে সরাসরি দেখানো হলো। তপু নামের গায়কটির সরাসরি উল্লেখ থাকলেও তিশা আর মোশাররফকে যথাক্রমে রুবা আর মুন্না চরিত্রেই অভিনয় করে যেতে হয়। ৫. চরিত-বিধান : কোনো একটা চরিত্রেরই কোনো বিকাশ নেই। এমনকি কেন্দ্রীয় মেয়ে চরিত্রটিও শেষতক পরিচালকের হাতের পুতুল হয়ে থাকে। আবার তাদের সুখে-শান্তিতে বসবাস করানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী-বন্ধুকে একেবারে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়া হয়। কক্সবাজার পাঠানো মানেই যেন ভালোবাসার বিদ্যানিকেতনে ভর্তি করিয়ে দেয়া। বালখিল্যতা কারে কয়! চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হলে খেয়াল করলাম, এর দর্শক মূলত কলেজ-ভার্সিটির ছেলে-মেয়ে। এরা যে ছবিটি দেখে কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! কর্পোরেট পুঁজির কী যে দাপট এখানে! এই ধরনের ছবির চেয়ে কথিত বাণিজ্যিক ছবি অনেক ভালো, কারণ এ সম্পর্কে আমরা জানি, আগে থেকেই…
ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব চায়না-য় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত সাম্প্রতিক কালের বৃহত্তম শিল্প-প্রদর্শনী। গণচীনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে চীনের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত মূর্ত হয়ে উঠেছে শিল্পীদের চিত্রকর্মে ও ভাস্কর্যে [...]
তুষারে ছাওয়া দুর্গম বিস্তীর্ণ প্রান্তর পেরিয়ে এগিয়ে চলছে লাল ফৌজ বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে। কিংবা বন্দুক হাতে বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে শত্রু সেনার শিবিরে। দাউ দাউ করে জ্বলছে যেন বিপ্লবের আগুন। অথবা চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বে অগণিত মুক্তিকামী মানুষের মিছিল। এই ছিল দৃশ্যপট, অর্থাৎ ঊনপঞ্চাশের চীন বিপ্লবের পরে চীনা চিত্রকলার চেহারাটা এইরকমই ছিল। বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত শিল্পীরা। মানুষের ছবি আঁকতে হবে, ক্যানভাসে উঠে আসবে সমাজবাস্তবতার চিত্র। বিপ্লবের রক্তিম সূর্যের আভা দিগন্ত জুড়ে, যুদ্ধে যুদ্ধে ক্যানভাস রঞ্জিত – প্রতিরোধের ছবি, শৌর্য বীর্য আর বীরত্বগাথার ছবি। তবে ১৯৪৯ থেকে ২০০৯ এই ষাট বছরে চীনের বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে, হোয়াং নদীতে বিস্তর জল গড়িয়েছে, আর চীন তার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে পৃথিবীর প্রধানতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একসময় কমিউনিস্ট চীনে শিল্প সংস্কৃতি ছিল শুধু প্রপাগান্ডার হাতিয়ার, শুধুই প্রতিফলিত হতো সমাজবাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ক্যানভাস জুড়ে ছিল শুধু লাল ফৌজের বীরত্বগাথা। তবে ২০০৯ সালের প্রেক্ষাপট যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন – বেইজিং এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের প্রধানতম আধুনিক শিল্পের কলাকেন্দ্রে। কেউ কেউ বলছেন, চীন এখন সমকালীন শিল্পের এক অভূতপূর্ব কেন্দ্র। বেইজিং এখন নিউইয়র্ক, পারী আর তোকিওর কাতারে। শিল্পীরা বিস্তর আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক ধারার নানামুখী শিল্পকর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। বিশ্বব্যাপী বড় বড় শিল্প-আয়োজনগুলোতে চীনাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। চীনা শিল্পীদের দিনও পালটে গেছে। বেশ উচ্চমূল্যে বিকোচ্ছে তাঁদের শিল্পকর্ম। তাঁদের কৃচ্ছ্রতাসাধনের দিন শেষ। দামি গাড়ি, বিশালাকৃতির স্টুডিও – এগুলিই যেন তাঁদের বিলাসী জীবনের অনুষঙ্গ। তবে সাম্প্রতিক এক ইতিহাস-প্রদর্শনীতে চীন যেন ফিরে গেছে সেই সময়ে, সেই বিপ্লবের যুগে। যেন অনেকটা পিছনের দিকে ফিরে তাকানো একবার। গণচীনের ষাট বছর পূর্তিতে নানা কর্মকাণ্ডে মুখরিত বেইজিং শহর; সর্বক্ষেত্রেই বিশেষ আয়োজন চোখে পড়ার মতো। এই উপলক্ষে সরকারি প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছে বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ‘দি ফাউন্ডিং অব এ রিপাবলিক’। বিপ্লবের সব মহানায়কের উপর ভিত্তি করে এই ছবির কাহিনি; মাও সে তুং, চৌ এন লাই, চিয়াং কাই শেক – সবাই এই ছবির চরিত্র। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হংকং-এর দুই মহাতারকা জ্যাকি চান এবং জেট লি প্রথমবারের মতো এই ধরনের ছবিতে অভিনয় করলেন। আর চারুকলার বিষয়ে যে-বড় আয়োজন করা হয়েছিল, তার খবর দিল আমার পিএইচ.ডি. ক্লাসের সহপাঠী ছাও ওয়ে। ছাও ওয়ে সেন্ট্রাল…
আমাদের মধ্যে এমন ছেলেমেয়ে বোধহয় খুব কমই আছে, আশি আর নব্বইয়ের দশকে যারা গণতন্ত্রের জন্যে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেনি। হয়তো আমাদের অনেকেই কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না; কিন্তু তারপরও আমাদের একটি সংগঠন ছিল : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি অন্যতম দাবি ছিল : একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। এই শিক্ষানীতি কেমন হবে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্কও ছিল। ড. কুদরত-ই খুদার শিক্ষানীতি নিয়েও ভিন্নমত ছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু তারপরও মোটা দাগে আমরা চেয়েছিলাম এমন এক শিক্ষানীতি যা প্রাথমিক স্তর থেকেই একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন ঘটাবে। এই শিক্ষানীতির আকাঙ্ক্ষায় আমাদের অনেকে রাজপথেই শহীদ হয়েছেন, আমরা আমাদের সঙ্গীর লাশ কাঁধে বয়েছি, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও শপথ আরও তীব্রতর হয়েছে। একসময় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের প্রথানুগত শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও পূরিত হয়নি। এসবই পুরানো কাসুন্দি। কিন্তু কী করব বলুন? লোককথা বলে, অতৃপ্তি নিয়ে মৃত্যু ঘটলে মানুষ ভূত হয়ে যায়; অতৃপ্তি নিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন ফুরিয়ে গেছে, আমরা বেঁচে আছি ভূতের মতো। এবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। ওই শিক্ষানীতি ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে, যাতে সবাই মতামত দিতে পারেন। সত্যি কথা বলতে গেলে, দেখি-দেখি করেও তা দেখা হয়নি। এবং দেখার আগেই এখন পত্রপত্রিকা থেকে জানতে পারছি, মৌলবাদীরা বলছে, এই শিক্ষানীতি নীতি নাকি মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। এই শিক্ষানীতি নাকি শিশুদের ধর্মশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে, নৈতিকতাহীন করে তুলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আশি আর নব্বইয়ের দশকে বছরের পর বছর আমরা শ্লোগান দিয়েছি, ‘একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু কর’, ‘সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চালু কর’। শিক্ষাঙ্গনে পাত্তা না পেলেও এই মৌলবাদীরা তখন আন্দোলনের নামে বড় বড় দলগুলির পিছু-পিছু ছুটোছুটি করেছে আর আমাদের সঙ্গীদের সময়-সুযোগমতো হত্যা করেছে, হাতপায়ের রগ কেটে দিয়েছে, ড্রিলিং মেশিন দিয়ে শরীর ফুটো করেছে। একবার আমি ভার্সিটিতে দেখেছিলাম, পেয়ারাওয়ালার কাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে এক শিবির কর্মী সেটি টুকরো করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আর তার সঙ্গী তাকে বলছে, ‘এই পেয়ারা ঠিকমতো কাটতে পারিস না, কম্যুনিস্টদের কাটবি কেমন করে?’ এখন এই মৌলবাদীরাই…
আবারও টঙ্গীতে নিহত হয়েছেন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা। কেন এই হত্যাকাণ্ড? কেন এই রক্ত নিয়ে খেলা? কিছুদিন আগে দেয়া একটি ঘোষণা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। গার্মেন্টস-শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। [...]
আবারও টঙ্গীতে নিহত হয়েছেন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা। কেন এই হত্যাকাণ্ড? কেন এই রক্ত নিয়ে খেলা? কিছুদিন আগে দেয়া একটি ঘোষণা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। গার্মেন্টস-শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাঁদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের এই গোয়েন্দারা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। উদ্যোগটি খুবই ভালো, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস-শিল্পে অস্থিরতা তৈরির একটি প্রবণতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এটা কারা করছে, কেন করছে, তা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হয়তো জানেন। হয়তো জানে রাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। তা জানারই কথা। কারণ রাষ্ট্রে এমন কোনো অশুভ তৎপরতা চলতে পারে না, যা রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রফতানিকে ব্যাহত করে। অধুনা বিশ্বে গার্মেন্টস-শিল্প একটি লাভজনক ব্যবসা। বিশেষ করে শ্রমের মূল্য যেসব দেশে তুলনামূলকভাবে কম, সেসব দেশে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের প্রস্তুতকারক এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরোবাজার দখল করে নিয়েছে চীন। ‘মেড ইন চায়না’ এখন একটি কমন দ্রষ্টব্য বিষয়। তা ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও মেক্সিকো প্রভৃতি দেশেও ম্যানুফ্যাক্সারিং ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতারা। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যের সাশ্রয়। বিশেষ করে কম শ্রমমূল্যে ভালো কোয়ালিটির তৈরি পোশাক বাজারজাত করা। যুক্তরাষ্ট্রে সিয়ার্স, জেসি পেনি কিংবা মেসিজের মতো বৃহৎ স্টোরগুলোতে বাংলাদেশী তৈরি পোশাক যে পাওয়া যায় না তা নয়। পাওয়া যায়। তবে তা তুলনামূলক হারে কম। চীনই এখন দখল রেখেছে প্রথম স্থান। এই প্রথম স্থানটির রেকর্ড ভাঙার একটি প্রচেষ্টা চলছে বেশ জোরালোভাবে। সে-চেষ্টা করছেন খোদ তৈরি পোশাক বিক্রেতারাই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে বাংলাদেশ একটি ভালো ম্যানুফ্যাক্সারিং জোন হতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা গড়ে তুলতে স্বাগতিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে তো? এই প্রশ্নটি আসছে বিভিন্ন কারণে। এ-কথাটি আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশে শ্রমের মূল্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের তুলনায় অত্যন্ত কম। যারা গার্মেন্টসে কাজ করে তারা গেল দেড় দশক আগে অন্য পেশায় ছিল। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই পেশায় যোগ দেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই শিল্পের বিকাশের তুলনায় গার্মেন্টস-কর্মীদের ভাগ্য ফিরেছে কি? না, ফেরেনি। বরং তুলনামূলক চাকরির বাজারে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা। তাদের জীবন ধারণের চাহিদার তুলনায় প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিতান্তই অপ্রতুল। এটা খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে ‘ওভারটাইম’…
