তুষারে ছাওয়া দুর্গম বিস্তীর্ণ প্রান্তর পেরিয়ে এগিয়ে চলছে লাল ফৌজ বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে। কিংবা বন্দুক হাতে বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে শত্রু সেনার শিবিরে। দাউ দাউ করে জ্বলছে যেন বিপ্লবের আগুন। অথবা চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বে অগণিত মুক্তিকামী মানুষের মিছিল। এই ছিল দৃশ্যপট, অর্থাৎ ঊনপঞ্চাশের চীন বিপ্লবের পরে চীনা চিত্রকলার চেহারাটা এইরকমই ছিল। বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত শিল্পীরা। মানুষের ছবি আঁকতে হবে, ক্যানভাসে উঠে আসবে সমাজবাস্তবতার চিত্র। বিপ্লবের রক্তিম সূর্যের আভা দিগন্ত জুড়ে, যুদ্ধে যুদ্ধে ক্যানভাস রঞ্জিত – প্রতিরোধের ছবি, শৌর্য বীর্য আর বীরত্বগাথার ছবি। তবে ১৯৪৯ থেকে ২০০৯ এই ষাট বছরে চীনের বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে, হোয়াং নদীতে বিস্তর জল গড়িয়েছে, আর চীন তার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে পৃথিবীর প্রধানতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একসময় কমিউনিস্ট চীনে শিল্প সংস্কৃতি ছিল শুধু প্রপাগান্ডার হাতিয়ার, শুধুই প্রতিফলিত হতো সমাজবাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ক্যানভাস জুড়ে ছিল শুধু লাল ফৌজের বীরত্বগাথা। তবে ২০০৯ সালের প্রেক্ষাপট যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন – বেইজিং এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের প্রধানতম আধুনিক শিল্পের কলাকেন্দ্রে। কেউ কেউ বলছেন, চীন এখন সমকালীন শিল্পের এক অভূতপূর্ব কেন্দ্র। বেইজিং এখন নিউইয়র্ক, পারী আর তোকিওর কাতারে। শিল্পীরা বিস্তর আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক ধারার নানামুখী শিল্পকর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। বিশ্বব্যাপী বড় বড় শিল্প-আয়োজনগুলোতে চীনাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। চীনা শিল্পীদের দিনও পালটে গেছে। বেশ উচ্চমূল্যে বিকোচ্ছে তাঁদের শিল্পকর্ম। তাঁদের কৃচ্ছ্রতাসাধনের দিন শেষ। দামি গাড়ি, বিশালাকৃতির স্টুডিও – এগুলিই যেন তাঁদের বিলাসী জীবনের অনুষঙ্গ। তবে সাম্প্রতিক এক ইতিহাস-প্রদর্শনীতে চীন যেন ফিরে গেছে সেই সময়ে, সেই বিপ্লবের যুগে। যেন অনেকটা পিছনের দিকে ফিরে তাকানো একবার।
গণচীনের ষাট বছর পূর্তিতে নানা কর্মকাণ্ডে মুখরিত বেইজিং শহর; সর্বক্ষেত্রেই বিশেষ আয়োজন চোখে পড়ার মতো। এই উপলক্ষে সরকারি প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছে বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ‘দি ফাউন্ডিং অব এ রিপাবলিক’। বিপ্লবের সব মহানায়কের উপর ভিত্তি করে এই ছবির কাহিনি; মাও সে তুং, চৌ এন লাই, চিয়াং কাই শেক – সবাই এই ছবির চরিত্র। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হংকং-এর দুই মহাতারকা জ্যাকি চান এবং জেট লি প্রথমবারের মতো এই ধরনের ছবিতে অভিনয় করলেন। আর চারুকলার বিষয়ে যে-বড় আয়োজন করা হয়েছিল, তার খবর দিল আমার পিএইচ.ডি. ক্লাসের সহপাঠী ছাও ওয়ে। ছাও ওয়ে সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর তরুণ অধ্যাপক, মোটামুটি বেইজিং-এর শিল্পজগতের খোঁজখবর রাখে। আমাকে জানাল, চীনের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী নিয়ে একটি দারুণ প্রদর্শনী হচ্ছে বেইজিং-এর জাতীয় চিত্রশালায়। সরকারি আয়োজনের এই প্রদর্শনীতে চীনের সব বড় বড় শিল্পীই অংশগ্রহণ করেছেন। ছাও ওয়ে আরো যে খবরটি দিল তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ, খবরটি হলো – প্রদর্শিত ছবি ও ভাস্কর্য সবই সরকারি সংগ্রহে চলে যাবে, আর প্রত্যেক শিল্পী সম্মানী বাবদ পাবেন এক মিলিয়ন ইউয়ান যা বাংলাদেশী মুদ্রায় এক কোটি টাকা। তার মানে এটি একটি মিলিয়ন ইউয়ানের প্রদর্শনী। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এত বড় মাপের প্রদর্শনী সাম্প্রতিক বিশ্বে কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বলা যেতে পারে এই প্রদর্শনীটি চীনদেশে এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। ছাও ওয়ের সাথে আলাপচারিতায় আরো কিছু তথ্য জানতে পারলাম এই আয়োজন সম্পর্কে। ইতিহাসভিত্তিক এই চিত্রমালা ও ভাস্কর্যসমূহ সবই নতুন করে তৈরি; একটি শক্তিশালী কমিটির তত্ত্বাবধানে সমস্ত আয়োজনটি সম্পন্ন হয়েছে। এই কমিটির প্রধান ছিলেন চীনের স্বনামখ্যাত শিল্পী চিন সাং ই, যিনি সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর সুযোগ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ; বলা যেতে পারে তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বেইজিং-এর এই সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস আজ বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে। শিল্পী হিসাবে তাঁর দক্ষতাও প্রবাদপ্রতিম। বাস্তবধর্মী চিত্রে একমেবাদ্বিতীয়ং। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এই শিল্পী একবার এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর জুরি হিসাবে ঢাকাতেও ঘুরে গেছেন। যাই হোক, সহপাঠী ছাও ওয়ের প্রণোদনায় সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে একদিন সত্যি সত্যি পৌঁছে গেলাম জাতীয় চিত্রশালার প্রাঙ্গণে।
চীনের জাতীয় চিত্রশালা – যা ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব চায়না নামে পরিচিত – শহরের প্রাণকেন্দ্র ওয়াং ফু চিং সড়কের অদূরেই অবস্থিত। সুপরিসর চত্বরের মাঝখানে মিউজিয়ামের মূল ভবনটি ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যকলার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে পৌঁছতেই দেখতে পেলাম রীতিমতো সাজ সাজ রব। চত্বরের সামনের বেষ্টনীর পুরোটা জুড়ে বিশালাকৃতির লাল ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে গোটা গোটা চীনা অক্ষরে প্রদর্শনীর থিমটি লেখা আছে, যার ইংরেজি ভাষান্তর – ‘The show on National Significant History Theme Art Creation Program’। মিউজিয়ামের স্যুভিনিরে এইভাবেই লেখা আছে। টিকেট কাটতে গিয়ে অবাক হলাম, প্রদর্শনীটির প্রবেশমূল্য লাগবে না, অর্থাৎ সরকার প্রদর্শনীর জনগুরুত্ব অনুধাবন করে জনসাধারণকে বিনামূল্যে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। সাধারণত প্রবেশমূল্য থাকে বিশ ইউয়ান, যা নেহাত কম নয়। সুতরাং বলা যায় সরকার এক্ষেত্রে বড় রকমের ভরতুকি দিয়েছে।
নানা নিরাপত্তা ঘেরাটোপ পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছনো গেল মূল প্রদর্শনীকক্ষে। প্রথমেই চোখে পড়ল সেই ঐতিহাসিক বিখ্যাত চিত্রটি, থিয়ান আন মেন বেলকনিতে সপারিষদ দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান মাও, আর দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘চীনা জনগণ জেগে উঠেছে’। সেই লক্ষ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণার দিনটি ছিল ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর। এই ছবিটি বিশাল করে আঁকা হয়েছে। এটিই এই প্রদর্শনীর থীম-চিত্র। এই চিত্রটি যেন চীনদেশের একটি আইকনে পরিণত হয়েছে, শিল্পী থাং ইয়াং লি-র আঁকা, ২০৬ x ৮১৬ সেমি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে। বিশালাকৃতির এই ছবিটি চীনা পদ্ধতির অঙ্কনরীতিতে আঁকা।
প্রদর্শনীর অধিকাংশ ছবিই বিশালাকৃতির। যেন আবার প্রমাণিত হলো, চীনদেশে যা কিছু আছে সবই বিশাল। চীনাদের মহাপ্রাচীর, নিষিদ্ধ নগরী, গ্রীষ্ম প্রাসাদ, থিয়ান আন মেন স্কয়ার – এসব কিছু নিয়ে চীনাদের গর্বের শেষ নেই। এই বিশালত্বের প্রভাব বোধহয় পেইন্টিংয়েও পড়েছে। ইদানীং চীনা শিল্পীদের ঝোঁক বড় আকৃতির ছবি আঁকার দিকে, বলা যেতে পারে এটি একটি স্টেটাস সিম্বলে পরিণত হয়েছে। এই প্রদর্শনীরও অধিকাংশ ছবি বড় ক্যানভাসের। ছবি ও ভাস্কর্য মিলিয়ে ১০২টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। বিশালাকৃতির ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়ামের তিন তলা ভবনের পুরোটা জুড়েই প্রদর্শনীর আয়োজন। শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু চীনদেশের ইতিহাসের গুরত্বপূর্ণ ঘটনাবলী থেকে আহরিত। তবে হাজার বছরের ইতিহাস থেকে শুধু জনগণের সংগ্রামের ইতিহাসকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিখ্যাত একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স-এর তাত্ত্বিকবৃন্দ নানা গবেষণা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছেন।
মূলত সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী লড়াই, সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব – এই সবই চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু। তবে ইতিহাস পরিক্রমায় দেখা যায় কোনো কোনো ব্যক্তির ভূমিকা হয়ে ওঠে অনেক মুখ্য, কাল পরিক্রমায় কোনো একক ব্যক্তির ভূমিকা হয়ে ওঠে পাহাড়-সম উচ্চতার, এক মনুমেন্টাল চরিত্রের। এই প্রদর্শনীর ক্যানভাসগুলো যেমন আন্দোলন-সংগ্রাম-প্রতিরোধের চিত্রে ব্যাপক মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে, তেমনি কোনো কোনো ছবিতে শুধু ইতিহাসের ব্যক্তিচরিত্র উঠে এসেছে মনুমেন্টাল আদলে। ডা. সান ইয়াত সেন, মাও সে তুং, চৌ এন লাই, ডা. সান ইয়াত সেনের সুযোগ্য পত্নী সোং ছি লিং, দেং শিয়াও পিং প্রমুখকে বিভিন্ন শিল্পীর ক্যানভাসে ঘুরে ফিরে দেখা যায়। প্রদর্শনী দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল ইতিহাসের সেই সময়গুলোতে ঢুকে পড়েছি। প্রতিটি ক্যানভাস যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে ইতিহাসের নানা ঘটনাবলীর আলোকে। আর চীনা শিল্পীদের বাস্তবধর্মী রীতিতে দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এই প্রদর্শনীতেও তাঁদের সেই দক্ষতার ছাপ স্পষ্ট। কোনো কোনো ছবি একেবারে ফটো রিয়েলিস্ট কায়দায় অঙ্কিত। গ্যালারির পর গ্যালারি ঘুরে ছবি দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভিড়টাই যেন বেশি। তাঁদের জন্য তো এই প্রদর্শনী সেই সময়ে ফিরে যাওয়া, সেই যৌবনের নস্টালজিয়ায়। প্রদর্শনীতে ছবি তোলা নিষেধ। চীনাদের তাই বেশ হতাশ মনে হলো। ছবি না তুলতে পারার যন্ত্রণায় ক্যামেরা ঠনঠন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে (চীনারা বলা যেতে পারে ফ্যানাটিক ফটো তুলিয়ে)। কেউ কেউ ছবি দেখে নানা আলোচনায় মত্ত। একটি ভাস্কর্যের সামনে বেশ জটলা দেখে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম – মাও সে তুং আর চিয়াং কাই শেক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। তবে ইদানীং তাইওয়ানের সাথে যে চীনের সুসম্পর্কের হাওয়া বইছে এটি বোধহয় তারই স্মারক। ভাস্কর্যের শিরোনাম ‘১৯৪৫ – সোংছিং’, শিল্পীর নাম লিয়াং মিং ঠেন। মাও আর চিয়াং ১৯৪৫ সালে সোংছিং শহরে মিলিত হয়েছিলেন জাপান-বিরোধী যুদ্ধে ঐকমত্য স্থাপনের লক্ষ্যে। শিল্পী মা কান এঁকেছেন মাওয়ের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি। দুই বিশিষ্ট পুঁজিবাদীর সাথে মাওয়ের সাক্ষাতের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। চীনদেশের এই সময়ের বাস্তবতার নিরিখে তা বোধহয় বেশ স্বাভাবিকই।
ঐতিহাসিক আনন্দঘন মুহূর্তগুলোও মূর্ত হয়েছে ক্যানভাসে, যেমন : হংকং ও ম্যাকাও-এর হস্তান্তর অনুষ্ঠান। আবার অতীতের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের কথাও ভুলে যাননি শিল্পীরা। ১৯৩৭ সালে সংগঠিত নানজিং গণহত্যার চিত্রটি অত্যন্ত আবেগমথিত ভাবে তুলে ধরেছেন শিল্পী সু চিয়াং, সান চিং ফাং, ইয়াং ছি রুই। এটি একটি যৌথ শিল্পকর্ম। মানবজাতির অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই দিনটি অপূর্ব দক্ষতায় শিল্পীবৃন্দ ক্যানভাসে মূর্ত করে তুলেছেন। ৩৬০ x ৯০০ সেমি-র বিশালাকৃতির ক্যানভাস তেলরঙে অঙ্কিত। দিগন্ত জুড়ে শুধু কালো ছায়া, কালিমায় ঢেকে গেছে সূর্য আর চরাচরে শুধু লাশ আর লাশ, আর অস্ত্র হাতে জাপানি সৈন্যদের বিকৃত উল্লাস। শিল্পী ওয়াং সি ছি এঁকেছেন লং মার্চ ছবিটি। তেলরঙে আঁকা ছবিটিতে ধরা দিয়েছে এক মহাকাব্যিক দ্যোতনা। বিশাল জনস্রোত এগিয়ে চলছে বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে, দিগন্ত জুড়ে সমুদ্ররেখা আর দুর্গম পাহাড়। যত বাধাই আসুক পৌঁছতেই হবে লক্ষ্যে। মনোক্রমিক নীলাভ রং ছবিটির মধ্যে যেন এক ভিন্ন আবেদন সঞ্চারিত করেছে। তবে অধিকাংশ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রাধান্য বেশি। বিপ্লবী ছবি মানেই লাল ছবি, সেটিই যেন আবার ঘুরে ফিরে এসেছে এই সময়ে। ২০০৯ সালের এই সময়ে আবার যেন ফিরে যাওয়া সেই ১৯৫০ ও ’৬০-এর দশকের বিপ্লবময় সেই যুগে।
ইতিহাসের পরিক্রমায় চীন আজ পৌঁছে গেছে সমৃদ্ধির এক সুবর্ণ সময়ে। কঠিন এক কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনকে আজ এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে। সামন্তপ্রভুদের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিদ্রোহ, জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, মাওয়ের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, লং মার্চ – এইসব ইতিহাস যেন ছায়ার মতো অনুসরণ করছে চীনের অগ্রগতিকে। চীনের জনগণকে মোকাবেলা করতে হয়েছে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সেই হোয়াং নদীর প্রলয়ঙ্করী বন্যা, আর দেশ জুড়ে ভূমিকম্প। আজকের এই চীন যেন কোনো কিছুকেই হারিয়ে যেতে দেবে না বিস্মৃতির অতলে। তাই শতাধিক মিলিয়ন ইউয়ান খরচ করে আয়োজন করেছে এই ব্যয়বহুল প্রদর্শনীর। নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে ইতিহাসের বার্তা। এই প্রদর্শনীটি যে শুধু ইতিহাসের ইলাস্ট্রেশন তা নয়, শিল্পমানেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ, পরিশ্রমী চীনা শিল্পীরা তাঁদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে এক-একটি শিল্পকর্ম নির্মাণ করেছেন। ইতিহাসের চিত্রায়নের পাশাপাশি একে শিল্পরসে সমৃদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছেন।
প্রদর্শনীটি চলেছে সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ থেকে অক্টোবরের ২০ তারিখ পর্যন্ত। ১০২টি শিল্পকর্মের মধ্যে ৩৩টি চীনা পদ্ধতিতে আঁকা, ৫১টি তেলরং আর ১৮টি ভাস্কর্য। চীনের শিল্পী সংঘের সাথে প্রদর্শনী আয়োজনে সম্পৃক্ত ছিল চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার কমিটি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩ comments
মুয়িন পার্ভেজ - ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ (১১:০৪ অপরাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ, রশীদ আমিন। ঘরে ব’সেই সুদূর চীনের সবিস্তার শিল্পসংবাদ পাচ্ছি ছবিসহ। ‘মিলিয়ন ইউয়ানের শিল্প প্রদর্শনী’ দেখে অনেকেই হয়তো ভিরমি খেয়ে যাবেন! শিল্পচর্চায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার এত মহার্ঘ উদাহরণ সত্যিই অভূতপূর্ব। যাঁরা ছবি এঁকেছেন বা ভাস্কর্য গড়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত হবেন এই উদার মূল্যায়নে। শিল্পী মা কান-এর আঁকা ‘মাওয়ের সাথে নিক্সন’ ছবিটি দেখে একটি পুরোনো মন্তব্য মনে প’ড়ে গেল। মন্তব্যটি মিসেস প্রসাদ সিংহের; কলকাতার পুরোনো মাসিক পত্রিকা উল্টোরথ-এর ‘মেলব্যাগ’ বিভাগ থেকে তুলে দিচ্ছি :
(বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ, পৃ. ২১)
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের (চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থন ছিল না।
রশীদ আমিন - ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ (৪:০৩ অপরাহ্ণ)
আমেরিকা ও চীনের প্রেমের রসায়ন যে কোন স্তরের তা বোঝা খুবই মুস্কিল। চীনাদের সবচেয়ে প্রিয় দেশ আমেরিকা। চীনা ভাষায় আমেরিকাকে বলে , “মেই কোয়ো” অর্থাৎ সুন্দর দেশ। মেই অর্থ সুন্দর। চীনারা বিশ্বাস করে যাহা কিছু আমেরিকান তাহাই শ্রেষ্ঠ। টেলিভিশনের স্পোর্টস চ্যানেল খুললেই দেখা যায় শুধু বাস্কেট বল খেলাই চলছে। আর আমেরিকান কায়দায় স্বল্পবসনা চিয়ারিং বালিকাদের নর্তন-কুর্দন প্রতিযোগিতা। এ এক অবাক ব্যপার এক দেশ হচ্ছে সমাজতন্ত্রের পুরোধা আরেকদেশ হচ্ছে পুজিবাদি, তাহলে এই গভীর প্রেমের কারন কি? বিপরিত মেরুর আকর্ষণ। তবে চীনের মানুষ কতটুকু সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে বুঝি না, তবে বাণিজ্যতন্ত্রটা ষোল আনাই বোঝে। চীনারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তবে টাকায় অপরিসীম বিশ্বাস।আর বোধ হয় সমস্ত প্রেমের অন্তর্নিহিত কারণই হচ্ছে বাণিজ্য।
চীন যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল এটি সত্যি একটি ক্ষত। এ ক্ষত শুকোবোর নয়। তবে চীনারা নানাভাবে চেষ্টা করছে আমাদের দেশের সাথে বন্ধুত্ব বাড়ানোর জন্য। সিসিটিভিতে (চীনের জাতিয় টেলিভিশন) ইদানীং হাসিনাকে খুব হাইলাইট করছে।
ধন্যবাদ মুয়িন মন্তব্য করার জন্য ।
মুয়িন পার্ভেজ - ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ (১০:০৬ অপরাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ, রশীদ আমিন। আমার উটকো মন্তব্যের উত্তরে আপনি ‘আমেরিকা ও চীনের প্রেমের রসায়ন’ সংক্ষিপ্ত পরিসরে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা প’ড়ে বেশ ভালো লাগল। অঘটন-ঘটন-পটীয়সী ‘পুঁজি’র প্রভাব বিশ্ব জুড়ে ক্রিয়াশীল থাকবে হয়তো আরও বহুদিন। যা হোক, একটা অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনার লেখায় ‘র’, ‘য়’ ইত্যাদি বর্ণের অন্ত্যজ বিন্দুগুলো একটু অস্বাভাবিক দেখায়; কোনো কারিগরি সমস্যা কি? আমি যা করি : প্রথমে ‘নোটপ্যাড’ খুলে লেখাটা ওখানেই তৈরি করি ‘অভ্র’-এর ‘ইউনিবিজয়’ লে আউটের সাহায্যে, পছন্দের ফন্ট থাকে ‘সোলাইমান লিপি’। ‘মুক্তাঙ্গন’-এর মন্তব্যের প্রকোষ্ঠে প্রকাশপূর্ব লেখা সংরক্ষণের সুযোগ নেই — লিখতে লিখতে কোনো কারণে যদি কম্পিউটার জড়ভরত হয়ে যায়, তাহলে তো লেখাটাই মাঠে মারা গেল! এজন্যই ‘নোটপ্যাড’।