আবারও টঙ্গীতে নিহত হয়েছেন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা। কেন এই হত্যাকাণ্ড? কেন এই রক্ত নিয়ে খেলা? কিছুদিন আগে দেয়া একটি ঘোষণা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। গার্মেন্টস-শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। [...]

আবারও টঙ্গীতে নিহত হয়েছেন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা। কেন এই হত্যাকাণ্ড? কেন এই রক্ত নিয়ে খেলা? কিছুদিন আগে দেয়া একটি ঘোষণা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। গার্মেন্টস-শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাঁদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের এই গোয়েন্দারা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। উদ্যোগটি খুবই ভালো, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস-শিল্পে অস্থিরতা তৈরির একটি প্রবণতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এটা কারা করছে, কেন করছে, তা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হয়তো জানেন। হয়তো জানে রাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। তা জানারই কথা। কারণ রাষ্ট্রে এমন কোনো অশুভ তৎপরতা চলতে পারে না, যা রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রফতানিকে ব্যাহত করে।

অধুনা বিশ্বে গার্মেন্টস-শিল্প একটি লাভজনক ব্যবসা। বিশেষ করে শ্রমের মূল্য যেসব দেশে তুলনামূলকভাবে কম, সেসব দেশে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের প্রস্তুতকারক এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরোবাজার দখল করে নিয়েছে চীন। ‘মেড ইন চায়না’ এখন একটি কমন দ্রষ্টব্য বিষয়। তা ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও মেক্সিকো প্রভৃতি দেশেও ম্যানুফ্যাক্সারিং ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতারা। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যের সাশ্রয়। বিশেষ করে কম শ্রমমূল্যে ভালো কোয়ালিটির তৈরি পোশাক বাজারজাত করা। যুক্তরাষ্ট্রে সিয়ার্স, জেসি পেনি কিংবা মেসিজের মতো বৃহৎ স্টোরগুলোতে বাংলাদেশী তৈরি পোশাক যে পাওয়া যায় না তা নয়। পাওয়া যায়। তবে তা তুলনামূলক হারে কম। চীনই এখন দখল রেখেছে প্রথম স্থান। এই প্রথম স্থানটির রেকর্ড ভাঙার একটি প্রচেষ্টা চলছে বেশ জোরালোভাবে। সে-চেষ্টা করছেন খোদ তৈরি পোশাক বিক্রেতারাই।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে বাংলাদেশ একটি ভালো ম্যানুফ্যাক্সারিং জোন হতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা গড়ে তুলতে স্বাগতিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে তো? এই প্রশ্নটি আসছে বিভিন্ন কারণে। এ-কথাটি আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশে শ্রমের মূল্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের তুলনায় অত্যন্ত কম। যারা গার্মেন্টসে কাজ করে তারা গেল দেড় দশক আগে অন্য পেশায় ছিল। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই পেশায় যোগ দেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই শিল্পের বিকাশের তুলনায় গার্মেন্টস-কর্মীদের ভাগ্য ফিরেছে কি?

না, ফেরেনি। বরং তুলনামূলক চাকরির বাজারে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন গার্মেন্টস-শ্রমিকরা। তাদের জীবন ধারণের চাহিদার তুলনায় প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিতান্তই অপ্রতুল। এটা খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে ‘ওভারটাইম’ পদ্ধতি এখনো শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি। অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করিয়েও ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হয় না। এই ব্যবস্থার অবসান দরকার। বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। শ্রমিকদের ইউনিয়ন বিদেশেও আছে। কিন্তু সেসব ইউনিয়নগুলো এতই শক্তিশালী এবং সুসংহত যে তারা সব সময় শ্রমিকের অধিকারকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। অথচ বাংলাদেশের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সব সময়ই আপোসকামী। তারা সরকার কিংবা বিরোধীদলের সঙ্গে আঁতাত করে সব সময়ই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে ব্যস্ত থকে। সরকারি শ্রমিক ইউনিয়ন বনাম বিরোধীদলীয় শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিযোগিতায় পিষ্ট হয় সব সময় সাধারণ শ্রমিক। আর নেতারা ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয় রাতারাতি।

একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সব সময়ই অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজনৈতিকভাবে শান্তি না থাকলে সমাজও এগুতে পারে না। বিশেষ করে গেল দুই দশকের এই রাজনৈতিক অস্থিরতাই বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হয়েছে। সেই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র। তারা সরকার এবং বিরোধীদল উভয়ের ছত্রছায়ায় কায়েম করেছে নিজ নিজ রাজত্ব। এই রাজত্বের দীর্ঘসূত্রিতা এবং সঞ্চিত অপশক্তিই আজ দেশে সব উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করছে, যা একটি দেশের জন্য চরম বিপজ্জনক সংকেত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনে শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো খুবই দরকারি কাজ। গার্মেন্টস-শিল্প এবং শ্রমিকের মূল্যায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী এক্সপোর্ট জোন গড়ে তোলা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। এর স্বপক্ষে আমি কিছু সুপারিশ এখানে তুলে ধরতে চাই :
১. বাংলাদেশের গার্মেন্টস-শিল্পকে আরো লাভজনক করতে হলে তুলনামূলক মূল্য নির্ণয়ের মাধ্যমে বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। ক্রেতাদের বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের গুণগত মানের বিশেষত্ব দেখাতে হবে।
২. বাইরের শক্তির সব ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই শিল্পের ক্ষতি হলে গোটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিকভাবে।
৩. শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ভ্যালু বাড়াতে হবে। এই তদারকির কোনোভাবেই যেন গাফিলতি না হয়।
৪. শ্রমিককে যথার্থ পারিশ্রমিক দিতে হবে। শিশুশ্রম বিষয়টিকে কোনোভাবেই পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত নয়। ন্যায্য ওভারটাইম মানি যাতে সবাই পায় সেদিকে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
৫. গার্মেন্টস-শিল্পে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সব প্রবণতাকে রুখতে হবে। মালিকদের মনে রাখতে হবে, ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিলে সুনাম পুনরুদ্ধার বেশ কঠিন কাজ। তাই রাজনৈতিক মারমুখী নীতি কোনোভাবেই যেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

গোয়েন্দা সংস্থা পুষে ভেতরের আগুন নেভানো যাবে না যদি শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা না পায়। এছাড়া আমরা দেখছি, অত্যন্ত অপরিসর ও অস্বাস্থ্যকর ছোট চিলেকোঠায়ও গড়ে উঠছে অনেক গার্মেন্টস কারখানা। এর অবসান হওয়া দরকার। কারণ এমন ছোট পরিসর স্থানে আগুন লেগে বেশ কিছু গার্মেন্টসে কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাপাও হয়েছে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায়, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস-শিল্প সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বিদেশে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকারের উদার বাণিজ্যনীতি, বিনিয়োগে সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করলে অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। সরকারি সব নীতিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করা এখন সময়ের দাবি। কারণ বাণিজ্য করতে হলে নিজ উৎপাদিত সামগ্রীকে ভালোবাসতে শিখতে হবে।

ফকির ইলিয়াস

একটা সূর্য চাই, একটা চন্দ্র চাই / নদীর নীরব নগরে পসরা সাজাই ।।

৭ comments

  1. রায়হান রশিদ - ৫ নভেম্বর ২০০৯ (১১:০৯ অপরাহ্ণ)

    @ ফকির ইলিয়াস,

    ক.
    আপনি লিখেছেন:

    গার্মেন্টস-শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাঁদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের এই গোয়েন্দারা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। উদ্যোগটি খুবই ভালো, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস-শিল্পে অস্থিরতা তৈরির একটি প্রবণতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এটা কারা করছে, কেন করছে, তা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হয়তো জানেন। হয়তো জানে রাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও।

    এ ধরণের ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব আগের সরকারগুলোও প্রচার করার চেষ্টা করেছে, গার্মেন্টস মালিকদের অথর্ব প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ তো করেছেই।

    প্রশ্ন ১: এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সপক্ষে আপনার যুক্তি কি?
    প্রশ্ন ২: ঠিক কোন্ যুক্তিতে আপনি মালিকদের তৈরী গোয়েন্দা সংস্থার ধারণাকে সমর্থন করছেন?
    প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিপীড়নকারী এবং নির্যাতনকারী চিত্রটির কথা আমরা সবাই জানি। এ ধরণের গোয়েন্দা-ব্যবস্থার প্রতি আপনার এই অতিরিক্ত আস্থার পেছনে যুক্তিটি কি জানতে পারি?
    প্রশ্ন ৪: একটু স্পষ্ট করুন। আপনি কি বলতে চাইছেন বেতন, ভাতা, ছাঁটাই, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে ক্ষোভ তা ন্যায্য নয়? আপনি কি বলতে চাইছেন এর জন্য গার্মেন্টস মালিকরা কোন ভাবেই দায়ী নয়?
    প্রশ্ন ৫: আপনি কি কখনো গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কোন নেতৃবৃন্দের বা কর্মীর সাথে কথা বলেছেন এই পোস্ট লেখার আগে? তারা কি আপনাকে এমন কিছু জানিয়েছে যা আপনার পোস্টের মূল প্রস্তাবকে সমর্থন করে?
    প্রশ্ন ৬: আপনার পোস্ট যে সব তথ্যের ভিত্তিতে লেখা সে সবের উৎস কি?

    খ.
    এই ব্লগেই এমন বেশ কয়েকজন কর্মী রয়েছেন যারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনগুলো খুব কাছে থেকে দেখেছেন এবং সে সম্পর্কে সরাসরি জানেন। আপনার উত্তরগুলো আশা করি তাঁদেরও চিন্তার খোরাক জোগাবে।
    এই একই বিষয় নিয়ে আহমেদ মুনির এবং মনজুরাউলের লেখা পোস্টগুলো আপনাকে পড়ার অনুরোধ করছি। দয়া করে সেগুলো পড়ে মন্তব্য করবেন?

    গ.
    আপনি আরও লিখেছেন:

    গার্মেন্টস-শিল্পে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সব প্রবণতাকে রুখতে হবে। মালিকদের মনে রাখতে হবে, ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিলে সুনাম পুনরুদ্ধার বেশ কঠিন কাজ। তাই রাজনৈতিক মারমুখী নীতি কোনোভাবেই যেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

    – আর সে অস্থিরতা যদি শ্রমিকদের বঞ্চনা থেকে প্রসূত হয়? সেক্ষেত্রে আপনার সুপারিশ কি হবে?

    ঘ.

    মানতেই হবে যে শ্রমিকদের মজুরীর স্বল্পতা, সুযোগ সুবিধা, আগুনে পুড়ে মরা ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনি পোস্টের বিভিন্ন স্থানে অল্প অল্প করে হলেও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলোর মূল কারণগুলো কি কিংবা কারা দায়ী শ্রমিকদের তথা পুরো গার্মেন্টস সেক্টরের এই দুরবস্থার জন্য – সে বিষয়ে কিন্তু স্পষ্টভাবে কিছু লিখেননি; কোন ধরণের বিশ্লেষণেই যাননি। কেন? এই বিষয়গুলো কি সত্যিই আপনার অজানা? সে সবের মূল কারণ উহ্য রাখার পাশাপাশি আপনি কিন্তু পোস্টের প্রথম প্যারাতেই সরকার আর মালিকপক্ষের বহুল ব্যবহৃত ষড়যন্ত্র তত্ত্বটির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন আর নতুন গোয়েন্দা সংস্থা গঠনের দিকে আপনার সমর্থন জানিয়েছেন। একটু স্ববিরোধিতা হয়ে গেল না?

    • ফকির ইলিয়াস - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৪৮ অপরাহ্ণ)

      ষড়যন্ত্র অনেক ভাবেই হয়। দেশের- বিদেশের।
      কেউ চাইতেই পারে বাংলাদেশ তৈরী পোশাক রপ্তানী থেকে পিছিয়ে পড়ুক।
      আভ্যন্তরিন প্রতিদ্ধন্দ্বিতা ও থাকতে পারে।
      কথা হচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের পথ কি ?
      পথ হচ্ছে, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা দিয়ে দেয়া। তা না দেয়ায়/ না পাওয়ায় ই
      সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
      তত্ত্বের ঘটি না খুজে গার্মেন্টস শিল্প কে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এর
      সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার।

      মালিকরা দায়ী নয় , তা আমি কখনই বলি নি।
      মালিকরাই দায়ী। কারণ তারা টাকা কামাই করলেও শ্রমিকের বেতন দেয় না।
      হাঁ, আমি কথা বলেছি, অনেকের সাথেই।

      কাজ করার সুস্থ পরিবেশ, নিয়মিত বেতন-ভাতা, মানবতাপূর্ণ আচরণই এই সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

  2. রায়হান রশিদ - ৫ নভেম্বর ২০০৯ (১১:৩৯ অপরাহ্ণ)

    সাম্প্রতিক শ্রমিক হত্যা নিয়ে সামহোয়ার ইন ব্লগে মনজুরাউলের আরেকটি লেখা, এখানে

  3. মনজুরাউল - ৬ নভেম্বর ২০০৯ (২:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    লেখাটির মন্তব্য লিখতে গিয়ে দেখা গেল লেখক নিজেই কয়েক জায়গায় স্ববিরোধী হয়েছেন। পুরোটা পড়ে এটা মনে হলো যে, লেখক সর্বান্তকরণেই চাইছেন দেশের শিল্প বিকাশ, কিন্তু একদিকে তিনি ভাংচুর ইত্যাদির জন্য কার্যত শ্রমিকদের এবং রাজনৈতিক নীতি নির্ধারকদের দায়ী করছেন। আবার শ্রমিকের কষ্ট বোঝার জন্য মালিকদের পরামর্শও দিচ্ছেন। যাহোক, আমার যা লেখার ইচ্ছা ছিল তা রায়হান রশীদ’ই লিখে দিয়েছেন, তাই বিস্তারে যাওয়ার দরকার নেই। সংক্ষেপে ফকির ইলিয়াসের পয়েন্টগুলোর প্যাটার্ণ ধরবার চেষ্টা করছি…….

    ১. বাংলাদেশের গার্মেন্টস-শিল্পকে আরো লাভজনক করতে হলে তুলনামূলক মূল্য নির্ণয়ের মাধ্যমে বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। ক্রেতাদের বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের গুণগত মানের বিশেষত্ব দেখাতে হবে।

    আরো লাভজনক মানে মালিকের লাভ। তাতে শ্রমিকের কি? মালিকরা যে লাভ করে সেই আনুপাতিক হারে কি বেতন দেয়? না। নূন্যতম ১৬৫০ টাকা সমান কত ডলার? বাংলাদেশের মালিকরা কোন কোন খাত থেকে লাভ তোলে জানেন? সরকারী ইনসেন্টিভ থেকে শুরু করে ঝুট বিক্রি পর্যন্ত প্রায় ১৮ টি খাত থেকে লাভ তোলে। শুধুমাত্র ওভার ইনভয়েসিং করেই বছরে হাজার হাজার ডলার বিদেশের ব্যাংকে জমা করতে থাকে। এর কোন অংশটুকু শ্রমিক পায়? বিশ্বের সর্বনিম্ন মজুরিতে এদেশের শ্রমিকরা কাজ করে, আর তা করে অমানবিক ভাবে প্রায় ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা! এটা কিভাবে পারে? পারে এদেশের সরকারগুলোর স্বৈরনীতির কারণে। সরকার, সরকারের সকল সেক্টর শ্রমিকদের দাস ছাড়া আর কিছু ভাবেনা। কাজের মেয়েকে যেমন আধুনিক বাঙালিরাও কেপ্ট বা রক্ষিতা ভাবে, তেমনি শ্রমিককেও গতরখাটা ভৃত্য ভাবে এটা ভাবতে পারে বলেই প্রায় একই শ্রেণী থেকে আসা পুলিশ নির্মম ভাবে তাদের হত্যা করার পরও দেশের অপরাপর খুব কম মানুষই তার প্রতিবাদ করে, কেননা শিল্পমালিক বাঙালি আজো শিল্প শ্রমিক আর দিনমজুরের পার্থক্য বোঝে না।আমাদের সংস্কৃতিতে এটা পাকাপোক্ত হয়েছে যে, হা-ভাবে দিনমজুরদের শেয়াল কুকুরের মত উচ্ছ্বিষ্ট ছুড়েঁ দিলেই চলে!

    ২. বাইরের শক্তির সব ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই শিল্পের ক্ষতি হলে গোটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিকভাবে।

    এই ধারণাটিই সরকারী আর বিজিএমইএ গোষ্ঠির উর্বর মস্তিষ্কজাত একটা উদ্ভট ধারণা। “বাইরের শক্তি” বলতে যে ভারত কে বোঝানো হয় সেটা খুলে বললে ক্ষতি কি?
    এবার দেখুনঃ পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ,চেয়ার টেবিল আর কিছু টুকিটাকি ছাড়া পুরো সেক্টরটা কোরিয়া, চীন,আর ভারতের উপর নির্ভরশীল। এক্সসেসরিজ থেকে শুরু করে ফ্যাবরিক্স সবই আমদানিনির্ভর। ভারত যদি আমাদের বাজার নষ্ট করে নিজেরা হাতাতে চায় তাহলে এত কলাকৌশলের দরকার কি? বার্টার, এসইএম, আক্কু’র মাধ্যমে বাকিতে এক্সপোর্ট বন্ধ করে দিলেই কি তা পারেনা?

    ৩,৪,৫ এর উত্তর দেওয়ার কিছু দেখলাম না। ৫ এর সাথে আমিও সহমত। তবে তা কাকে বলছেন? যারা শ্রমিককে মারার জন্য নিত্যনতুন কৌশল বের করছে? এই যে নিজস্ব গোয়েন্দা এটা কি? এটা হচ্ছে আরো নিখুঁত ভাবে শ্রমিককে হত্যা করার কৌশল। আগে প্রকাশ্যে মারছিল, এখন সরকারী গোয়েন্দাদের মত করে ধরে নিয়ে নিভৃত সেলে টর্চার চালিয়ে মেরে গুম করে দেওয়া হবে। কেউ জানবেও না আর সে কারণে কোন বিদ্রোহও হবে না। চমৎকার না বুদ্ধিটা?

    সারা বিশ্বে মাতব্বরি করে বেড়ানো আমেরিকানরাও শ্রমিককে নার্সিং করে, কারণ তাকে দিয়ে সে আরো উৎপাদন করাতে চায়। বাঙালরা কেন করে না? কারণ বাঙালরা আজো শিল্প ব্যাপারটা বোঝেনি। এই গার্মেন্ট সেক্টরটা আসলে একটা বিশাল শ্রমঘন “এ্যাসেম্বলার”। শিল্প নয়। শিল্পের কোন গুণাগুণ তাই এখানে নাই। এটা অনেকটা বেগার হিসেবে বতরের সময় ধান কাটিয়ে নেওয়ার মত। একটা কস্ট্রাক্ট সিস্টেম।

    আপনি রায়হান এর পয়েন্টগুলোর উত্তর দিলে আবার আলোচনায় আসব আশা রাখি। ধন্যবাদ।

    • ফকির ইলিয়াস - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৫৬ অপরাহ্ণ)

      সমস্যা সমাধান করতে হলে দুপক্ষকেই সমোঝতায় আসতে হবে। এখানে কারো পক্ষ
      নেয়া – না নেয়ার কোনো কথা নয়। কেউ কাউকে বাদ দিয়ে তো অগ্রসর হওয়া যাবে না। আমার বক্তব্য স্ববিরোধী নয়। আমি তো আর এখানে বিতর্ক করছি না।
      বাইরের শক্তি, ভারত, ফিলিপিন, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, যে কেউ হতে পারে।
      সেটা কথা নয়। কথা হচ্ছে, নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলতে হবে।
      হাঁ, ফিডব্যাক কথাটা খুব জরুরী ।

      সারা বিশ্বে মাতব্বরি করে বেড়ানো আমেরিকানরাও শ্রমিককে নার্সিং করে, কারণ তাকে দিয়ে সে আরো উৎপাদন করাতে চায়। বাঙালরা কেন করে না? কারণ বাঙালরা আজো শিল্প ব্যাপারটা বোঝেনি। এই গার্মেন্ট সেক্টরটা আসলে একটা বিশাল শ্রমঘন “এ্যাসেম্বলার”। শিল্প নয়। শিল্পের কোন গুণাগুণ তাই এখানে নাই। এটা অনেকটা বেগার হিসেবে বতরের সময় ধান কাটিয়ে নেওয়ার মত

      আমিও একমত । নো ডাউট এবাউট ইট ।

  4. মোহাম্মদ মুনিম - ৬ নভেম্বর ২০০৯ (৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

    কোন গার্মেন্টস শিল্পে পান থেকে চুন খসলেই শত শত পুলিশ চলে আসে, নির্বিচারে মারধর চলে, দেশবাসী হাহাকার করে উঠে, এই বুঝি গেল, এই বুঝি গেল ১০ বিলিয়ন ডলারের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। হাঁস উড়ে চলে গেল ভারতে, চীনে আর ভিয়েতনামে। দেশবাসীর ‘অপার ভালোবাসা’ নিয়ে গার্মেন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে গত তিন দশক ধরে। শুরু হয়েছিল ‘with a very simple idea’, বিদেশ থেকে raw কাপড় আমদানী করে তা সেলাই করে বিদেশেই রপ্তানী করা। সেলাই করার জন্য আছে লক্ষ লক্ষ অসহায় নারী শ্রমিক, যাদের সাত চড়ে রা নেই, যাদের সপ্তাহে আশি ঘণ্টা খাটিয়ে মাসের শেষে ১০০০ টাকা হাতে গুঁজে দিলেই হয়, যাদের হাতের আঙ্গুল মেশিনে আটকে গেলে সে আঙ্গুল ছিঁড়ে ফেলা যায়। বছর বছর টাকার অবমূল্যায়ন হয়, ‘Made in Bangladesh’ আরো সস্তা হয়ে যায়, রপ্তানী বাড়ে। দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল সব দর্জির দোকান, নামে ইন্ডাস্ট্রি, কিন্ত নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কোন সামর্থ্য নেই, ট্রেড ইউনিয়ন চলবে না, শ্রমিকদের বোনাস দেয়া যাবে না, বেতন বকেয়া থাকলে কিচ্ছু বলা যাবে না, কিছু বললেই ইন্ডাস্ট্রি চলে যাবে ভিয়েতনামে। ‘একটি ফুলের’ চেয়েও পেলব এই ইন্ডাষ্ট্রি, এই ‘একটি ফুলকে বাঁচাতে’ হলে শুধু নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনীই নয়, নিজস্ব পুলিশ, স্থল, বিমান এবং নৌবাহিনীও প্রয়োজন।

    • ফকির ইলিয়াস - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৫৮ অপরাহ্ণ)

      আগে দরকার সৎ মানসিকতা। তা না হলে কিছুতেই কিছু হবে না।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.