আমাদের মধ্যে এমন ছেলেমেয়ে বোধহয় খুব কমই আছে, আশি আর নব্বইয়ের দশকে যারা গণতন্ত্রের জন্যে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেনি। হয়তো আমাদের অনেকেই কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না; কিন্তু তারপরও আমাদের একটি সংগঠন ছিল : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি অন্যতম দাবি ছিল : একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
এই শিক্ষানীতি কেমন হবে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্কও ছিল। ড. কুদরত-ই খুদার শিক্ষানীতি নিয়েও ভিন্নমত ছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু তারপরও মোটা দাগে আমরা চেয়েছিলাম এমন এক শিক্ষানীতি যা প্রাথমিক স্তর থেকেই একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন ঘটাবে।
এই শিক্ষানীতির আকাঙ্ক্ষায় আমাদের অনেকে রাজপথেই শহীদ হয়েছেন, আমরা আমাদের সঙ্গীর লাশ কাঁধে বয়েছি, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও শপথ আরও তীব্রতর হয়েছে। একসময় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের প্রথানুগত শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও পূরিত হয়নি।
এসবই পুরানো কাসুন্দি। কিন্তু কী করব বলুন? লোককথা বলে, অতৃপ্তি নিয়ে মৃত্যু ঘটলে মানুষ ভূত হয়ে যায়; অতৃপ্তি নিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন ফুরিয়ে গেছে, আমরা বেঁচে আছি ভূতের মতো।
এবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। ওই শিক্ষানীতি ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে, যাতে সবাই মতামত দিতে পারেন। সত্যি কথা বলতে গেলে, দেখি-দেখি করেও তা দেখা হয়নি।
এবং দেখার আগেই এখন পত্রপত্রিকা থেকে জানতে পারছি, মৌলবাদীরা বলছে, এই শিক্ষানীতি নীতি নাকি মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। এই শিক্ষানীতি নাকি শিশুদের ধর্মশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে, নৈতিকতাহীন করে তুলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আশি আর নব্বইয়ের দশকে বছরের পর বছর আমরা শ্লোগান দিয়েছি, ‘একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু কর’, ‘সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চালু কর’। শিক্ষাঙ্গনে পাত্তা না পেলেও এই মৌলবাদীরা তখন আন্দোলনের নামে বড় বড় দলগুলির পিছু-পিছু ছুটোছুটি করেছে আর আমাদের সঙ্গীদের সময়-সুযোগমতো হত্যা করেছে, হাতপায়ের রগ কেটে দিয়েছে, ড্রিলিং মেশিন দিয়ে শরীর ফুটো করেছে।
একবার আমি ভার্সিটিতে দেখেছিলাম, পেয়ারাওয়ালার কাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে এক শিবির কর্মী সেটি টুকরো করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আর তার সঙ্গী তাকে বলছে, ‘এই পেয়ারা ঠিকমতো কাটতে পারিস না, কম্যুনিস্টদের কাটবি কেমন করে?’
এখন এই মৌলবাদীরাই কি না নৈতিকতার জন্যে আহাজারি করছে! তারা বলছে, নৈতিকতা আর ধর্মশিক্ষা উঠে যাবে নতুন শিক্ষানীতি চালু হলে!
হয়তো এ শিক্ষানীতি নিয়ে আমাদেরও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভিন্নমত রয়েছে; কিন্তু মৌলবাদীরা যে-সব কথা বলে বেড়াচ্ছে, যে-ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষানীতিতে আশি ও নব্বইয়ের দশকের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এমন কিছু-কিছু আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে, যা এই মৌলবাদীদের ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এবং যুদ্ধাপরাধী নিজামী তো কয়েকদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে খুব স্পষ্ট করেই বলেছে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
সত্য হলো, আমাদের এই সময়ে ধর্মশিক্ষা আর নৈতিকতার শিক্ষা ক্রমশই আলাদা হয়ে পড়ছে এবং নিজামী-গোত্রীয় মানুষদের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ অতীতকালের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্মশিক্ষা আর নৈতিকতার শিক্ষা যদি একই রকম হতো তা হলে একাত্তরে ধর্মজ্ঞানসম্পন্ন রাজনীতিকদের নেতৃত্বে কয়েকটি দল গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো সবচেয়ে নিন্দিত নৈতিকতাহীন জঘন্য কাজগুলি করতে পারত না, এ ধরণের কাজে সমর্থন যোগাতে পারত না।
তারা তখন সমর্থন যুগিয়েছে এবং এখনও যোগাচ্ছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতক ও ধর্ষকদের পাশেও দাঁড়িয়েছিল এই মৌলবাদীরা। ধর্মচিন্তা সক্রিয় থাকলেও তাদের নৈতিকতা তখন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রীয় ছিল।
কাজেই নৈতিকতাকে নৈতিকতার গুণেই বলিয়ান করে তুলতে আমরা চাই এমন একটি একমুখী, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাপদ্ধতি,- যাতে গতানুগতিক ও একক কোনও ধর্মশিক্ষা মুখ্য হয়ে দেখা দেবে না। আমরা জানি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি খুব বেশি বিকশিত না হওয়ায় অতীতে ধর্ম প্রত্যক্ষভাবে সমাজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে; সেই ধারাবাহিকতায় যে-সব নৈতিকতা মানবধর্ম বিকাশের অনুকুল ছিল, নিশ্চয়ই নতুন শিক্ষাপদ্ধতিতেও সেগুলি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নৈতিকতা যে আলাদা শক্তি, তা যে বিজ্ঞান ও সামাজিক-জ্ঞানভিত্তিক, এই চরম সত্য আমাদের সবাইকে ধারণ করতে হবে।
নব্বইয়ের পর, মনে হচ্ছে, আমরা সত্যিই ঝিমিয়ে পড়েছি। কিন্তু আমাদের সেই পুরানো শত্রুরা একদম বসে নেই। ধর্মশিক্ষা আর নৈতিকতা শিক্ষাকে একই পাত্রে ঢেলে তারা জনগণকে গেলাতে চাইছে। যে-মাদ্রাসা শিক্ষাকে নিজামীরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় নিজেরাই পাত্তা দেয়নি, এখন তাদের সেই শিক্ষার জন্যে কত মায়া, কত ভালবাসা! এত মায়া-ভালোবাসার কারণ, ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে সিদ্ধহস্ত তারা এবং সেই কাজটি আবারও করতে চাইছে তারা। তাদের পক্ষ থেকে কেবল সংবাদ সম্মেলনেই নয়, গ্রামে-গ্রামেও প্রচার চালানো হচ্ছে যে, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা তুলে দেয়া হবে’। পৃথিবীর সকল উন্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষাপদ্ধতি থেকে প্রমাণিত হয়েছে, ললিতকলা শিক্ষার মধ্যে দিয়ে শিশুর প্রতিভার স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ ঘটে; কিন্তু এই মৌলবাদীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, ধর্মহীন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এরকম করা হচ্ছে।
জামাতচক্র খুব সংঘবদ্ধভাবেই নেমেছে এ অপপ্রচারে। সংবাদসম্মেলনে নিজামীদের সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, শিক্ষানীতি সম্পর্কে ওয়েবসাইটে মত দেয়ার জন্যে তো আহ্বান জানানো হয়েছিল, আপনারা কি মত দিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তারা একেকরকম কথা বলেছে। একবার বলেছে, আমাদের মত যে ওয়েবসাইটে গোপন করা হবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? আবার বলেছে, আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানাচ্ছি। আবার বলেছে, ঠিক আছে, এই বক্তব্য ওয়েবসাইটে যাবে।
এক সাংবাদিক বন্ধু আশঙ্কিত, তারা সত্যিই ওয়েবসাইটটিতে হানা দেবে এবং তাদের সংঘবদ্ধ কর্মীবাহিনীদের মন্তব্যের পর মন্তব্যে সাইটটিকে স্থবির করে ফেলবে। আর সে জন্যেই না কি জনগণের মতামত নেয়ার জন্যে নিজামী সময়সীমা আরও দু সপ্তাহ বাড়াতে বলেছেন।
এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না, কেননা শিবির ‘প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষানীতি : আমাদের বক্তব্য’ নামের একটি প্রচারপত্র ইংরেজি, আরবি আর বাংলা ভাষায় ছাপিয়ে মাঠে নেমেছে। বিভিন্ন দূতাবাসগুলিতেও ধর্না দিচ্ছে এবং এবার আর তাদের মনে হচ্ছে না যে এর মধ্যে দিয়ে তারা বিদেশীদের পদলেহনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি জনগণ যাতে বিভ্রান্ত হয় সে-জন্যে তারা বঙ্গবন্ধু বলতে শুরু করেছে, জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করেছে! মিথ্যাবাদী রাখালরা এখন বলছে, ‘যা হয়েছে, তা তো পজিটিভই, তাই না?’
আমি আগেই বলেছি, হয়তো এই শিক্ষানীতি নিয়েও আমাদের অনেকের অনেক ভিন্নমত, অনেক সংযোজন-বিয়োজনমূলক বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু এসব ভিন্নমতের পরেও এই দাতালো শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। শরীফ শিক্ষাকমিশনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি সার্বজনীন, একমুখী, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতির জন্যে যে-আকাঙ্ক্ষা বিচ্ছুরিত হয়েছিল, সেই আকাঙ্ক্ষাকে নতুন করে উর্ধ্বে তুলে ধরতে না পারলে এবার আমাদের আকাঙ্ক্ষার চিরমৃত্যু ঘটবে।
কেননা অতীতে শিক্ষানীতির জন্যে আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে মূলত সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে, কিন্তু এবার করতে হচ্ছে মূলত মৌলবাদের বিরুদ্ধে। সামরিকতন্ত্রও তাদের শিক্ষানীতিতে মৌলবাদকে সংযোজন করতে চেয়েছে, কিন্তু আন্দোলন করে আমরা এবং আমাদের পূর্বসূরিরা সে-সব শিক্ষানীতি বাতিল করাতে সামরিক জান্তাকে বাধ্য করেছে। এখন সামরিকতন্ত্র নেই, তাই মৌলবাদীরা চেষ্টা চালাচ্ছে গণতান্ত্রিকতার পিঠে সওয়ার হয়ে মৌলবাদী শিক্ষাপদ্ধতিকে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষার নামে গেলাতে।
আমরা যারা মাঝেমধ্যেই পিছু ফিরে তাকাই, বর্তমানের এই বিবর থেকে উঠে সামনেও যেতে চাই, যাদের এখনও হঠাৎ মধ্যরাতে প্রিয় বন্ধুর রক্তঝরার স্মৃতি অপরাধী করে তোলে, তাদের সবার প্রতি একটাই অনুরোধ : আসুন, সময় কখনোই শেষ হয় না, এখনও সময় আছে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং এমন এক শিক্ষানীতির সূচনা করি আমাদের ভবিষ্যতকে সুস্পষ্ট করে তুলবে এবং আমাদের অতৃপ্ত অতীতও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৭ comments
রায়হান রশিদ - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (৮:৪৪ অপরাহ্ণ)
@ ইমতিয়ার শামীম,
এতো গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার অভাব প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছিল এখানে। আপনার পোস্টের মাধ্যমে অবশেষে সুযোগ তৈরী হলো মত বিনিময়ের। অশেষ ধন্যবাদ সেজন্য। আপনার দেয়া লিন্ক থেকে শিক্ষানীতি ২০০৯ এর চূড়ান্ত খসড়াটি ডাউনলোড করে নিলাম। আজকের ছুটির দিনটা কাজে লাগবে। খসড়াটি পড়ে আলোচনায় অংশ নেয়ার আশা রাখি। আরও কিছু লিন্ক, আগের শিক্ষানীতিগুলোর কপি, কিংবা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে দেখবো পাই কি না। পেলে মন্তব্য কলামে তুলে দেয়ার চেষ্টা করবো। বাকীদের প্রতিও সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে, আপনাদের কোন লিন্ক (পক্ষ বিপক্ষ যেদিককারই হোক) বা তথ্য জানা থাকলে এখানে উল্লেখ করুন।
আবারও ধন্যবাদ ইমতিয়ার ভাইকে।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (৮:৫৪ অপরাহ্ণ)
ইমতিয়ার শামীমকে ধন্যবাদ জানাই খুবই এবং সময়োপযোগী একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট করার জন্য।
এখানে ইমতিয়ার-এর লেখায় স্মৃতিতাড়িত না-হয়ে পারছি না। সেই নব্বই দশকের কথা- তখনকার লড়াই-সংগ্রাম যারা না-দেখেছেন তারা কিন্তু তাঁর মানসিক তাড়নাটি বুঝতেই পারবেন না। তখন মিটিং-মিছিল, শ্লোগান, পথনাটকের সে কি বিস্তার, ছোটকাগজ পর্যন্ত তৎপরতা দেখিয়েছে। আন্দোলনের একপর্যায়ে শ্লোগানই হয়ে ওঠে- এক দফা এক দাবি/ এরশাদ তুই কবে যাবি।
ছাত্রদের বড়ো দাবিই ছিল একমুখী, সবর্জনীন, বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। এখনকার শিক্ষামন্ত্রী তার বিজ্ঞানমনস্কতার দরুনই একটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতির ঘোষণা, এতে আরবী শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কাজেই এটাো যদি কার্যকর করা যায়, তাও এক ধাপ এগোনো তো গেল? তবে এতে সামাজিক বিজ্ঞান, লৌকিক ধর্মের উৎকর্ষ সাধন, যুক্তবাদিতা কতদূর ঠাঁই পাবে তাো দেখার বিষয়।
তবুও যা এখন পাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাও বা কম কিসে।
mosharrof - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (১:২২ অপরাহ্ণ)
এ লেখাটি এ সময়ের অত্যন্ত তাংপর্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। ‘৯০ পরবর্তী শিক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে চাই। পরবর্তীতে আরো অংশ নেয়ার ও আশা আছে।
মৌলবাদী রাজনীতির বিরোধিতা অনেকেই করে থাকেন। ‘৯০ এর আন্দোলনের ১০ দফায় খুব সম্ভবত ২৪ টি ছাত্র সংগঠন একটি একমুখী সবর্জনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দাবি করেছিল। সেগুলোর মাঝে বামপন্থী ছাত্র সংগঠেনর বাইরে কোন সংগঠন আর এ বিষয়ে চিন্তিত নয়। যদিও অনেক শিক্ষাবিদ বা লেখালেখির সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ নানা বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অলোকপাত করে থাকেন। তাতেও এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়।
বর্তমান সরকার যে শিক্ষানীতি প্রস্তাবনা করেছে তা করার পূর্বে সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির সাথে মত বিনিময় করতে পারতো। কিন্তু তার পরিবর্তে তাদের কাছাকাছি ভাবধারার অনুসারিদের নিয়ে ১০ মাসের মধ্যে একে বাস্তবায়ন করাকে সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইছে। অন্যদিকে মৌলবাদী শক্তি সরকারের চটকদার কথাকে আশ্রয় করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এটা আমার অভিমত।
প্রশ্ন হতে পারে, সরকারের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা না করে কেন এ রকম অভিমত? উত্তরে আমার জবাব এমন যে, মৌলবাদীরা বিরোধিতা করলেই সরকারের পদক্ষেপকে যারা এক ধাপ এগুনো মনে করছেন তারা কী সুনিদির্ষ্টভাবে বলতে পারেন যে ১০ দফার আলোকে আজকের সমাজ বাস্তবতায় সরকার শিক্ষনীতি প্রণয়ন করছে। মোটেই তা নয়। শিক্ষার বাণিজ্যীকীকরণের ধারাকে অব্যাহত রেখে একটা গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি হতে পারে না। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার নামে নতুন মোড়কে উপস্থাপন করে, ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষাকে বহাল রেখে, এন জি ও ‘দের শিক্ষা কার্যক্রম বহাল রেখে একমুখী শিক্ষা হতে পারে কী? বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার আইন করা হয় ১৯৯২ সালে আর ২০০৯ সালে এসে দেখা যায় ৫০ হাজার গ্রামে সরকারি কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। প্রায় ৩৭ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পযর্ন্ত সরকার নতুন বছরের শুরুতে বই দিতে পারে না, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলো কাযর্কারিতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেখানে নিবার্চনী ওয়াদায় স্নাতক পযর্ন্ত সবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছিল সেখানে মাত্র অষ্টম শ্রেণী পযর্ন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে কথার অর্থে সবার জন্য ব্যবস্থা করার কথা বলা হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ের শিক্ষার দায়িত্ব কে নেবে তা না বলার মানেই হলো এখন যা চলছে ”টাকা যার শিক্ষা তার” সেটাই বহাল থাকছে। আর এর মাঝে আমাদের খুঁজতে হবে প্রগতি। ছাত্রসমাজসহ শিক্ষাদরদী মানুষের কাছে এ বিষয়ে আলোকপাত করা জরুরি। লেখকের কথার সূত্র ধরে কেমন শিক্ষানীতি দরকার তা নিয়ে এখানে মত বিনিময় হবে আশা করি। এবং একইসাথে মৌলবাদীদের প্রতিহত করে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতির দাবিকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার কাজে কীভাবে ভূমিকা রাখা যায় তাও আলোচনায় আসবে আশা করি।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৪৯ অপরাহ্ণ)
ভাই মোশাররফ, আপনাকে প্রথমেই আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে হয় এ জন্য যে, শিক্ষানীতির সমকালীন বিষয়টি সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে আপনার স্বচ্ছ ধারণা আছে বলে মনে হলো। আসলেই আমরা অতি সরলীকরণে এভাবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি যে, ইসলামী সংগঠনসূহ কোনো কিছুর বিরোধিতা করলেই ওই কাজটিকে ভালো বলতে আরাম বোধ করি। তারচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজটি হওয়া দরকার, আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা। এর জন্য কাজ করে যাওয়া।
আপনি সে কাজটিই করলেন, এ জন্যই আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
ইমতিয়ার - ৯ নভেম্বর ২০০৯ (৯:২৮ অপরাহ্ণ)
মোশাররফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে এনেছে। শিক্ষার বাণিজ্যকরণ যে শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে একটি অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক, তাতে কোনও দ্বিমত নেই। তবে আমি যে ‘ইসলামী সংগঠনগুলি বিরোধিতা করছে বলেই সে কাজটিকে ভালো বলার আরামবোধ’ থেকে আমার এই জরুরি আবেদন পেশ করেছি, তা কিন্তু নয়। বাণিজ্যকরণকে বহাল রেখে কোনও গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি হতে পারে না, এটি যেমন সত্য, তেমনি এটিও সত্য যে মৌলবাদাক্রান্ত উপাদানকে বহাল রেখে কোনও গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি হতে পারে না।
শিক্ষানীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের অনেক রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির আচরণ বিস্ময়কর। সংবাদপত্রে যতদূর পড়েছি, ৫০টির বেশি সংগঠন এই কমিটির সঙ্গে মত বিনিময় করেছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকার তাদের কাছের ভাবধারার মানুষদের নিয়ে কমিটি করেছেন। এই কমিটির সবার নাম আমার জানা নেই, তবে অন্তত একজনের নাম প্রায়শ:ই সংবাদপত্রে দেখি, তিনি ড. খলিকুজ্জামান, যিনি কয়েক বছর আগেও ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক সময় পত্রিকাকে অন্তরালে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলে জানি। জানি না, এরা এ কমিটির কেবল অলঙ্কার ছিলেন কি না। আবার কমিটি যখন সবাইকে প্রকাশ্যে মতবিনিময়ের জন্যে প্রচারমাধ্যমে ঘোষণা দিচ্ছে, তখন কোনও কোনও সংগঠন হয় আত্মঅহঙ্কার নিয়ে বসেছিলেন না হয় জামাতের মতো ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্যে বসেছিলেন। আমাকে না ডাকলে আমি মত দিতে যাব কেন? তার চেয়ে পরে আন্দোলন করব,- এই হলো এদের মনোভাব। একটি পত্রিকায় দেখেছি, শিক্ষানীতি নিয়ে ওয়েবসাইটে যেসব মত পড়েছে তাতে কথিত ধর্মশিক্ষা না রাখার অভিযোগ বড় করে তুলে ধরা হয়েছে। হতে পারে তারা সস্তা আবেগ ব্যবহার করছে, কিন্তু এতে আরও একটি সত্যও প্রকাশিত হচ্ছে যে মৌলবাদীরা ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে আমাদের বামপন্থী ভাইদের চেয়ে এ ক্ষেত্রে অনেক সক্রিয়ভাবে মতামত দিয়েছেন এবং এখন সাংগঠনিক পথে পা বাড়াচ্ছেন। মৌলবাদীরা সস্তা আবেগ ব্যবহার করছেন, এটি ঠিক, কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের তার মাশুল দিতে হচ্ছে। একে সস্তা বলে পাশ কাটানোর কোনও উপায় নেই। আমরা সস্তা আবেগ ব্যবহার করব না, কিন্তু আমাদের যুক্তিগ্রাহ্য আবেগকে যতটুকু সহজ ভাষায় তুলে ধরা দরকার তা কি পারছি?
আমি আমার আবেদনে মৌলবাদের প্রসঙ্গই বড় করে এনেছি বলে মনে করার কারণ নেই যে, আমি শিক্ষানীতিতে অন্যসব দিকগুলিকে ছাড় দিচ্ছি। সেজন্যেই পূর্বসূত্র হিসেবে সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফার কথা এসেছে। কিন্তু মৌলবাদীদের আমাদের এ-কারণেও হিসেবের মধ্যে রাখা উচিত, একমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবির জায়গাটি তারা ইতিমধ্যেই কথিত ধর্মশিক্ষা বহাল রাখার দাবি তুলে দখল করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং একমুখীকরণের আন্দোলনের পথে তারাও একটি অন্যতম প্রতিবন্ধক।
যাই হোক, জাহাঙ্গীর ভাই, মোশাররফ, রায়হান রশিদ এবং অন্যান্য সবাইকে ধন্যবাদ। তবে আমার মনে হয়, ইতিমধ্যেই গৌতম একটি শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং যদি শিক্ষানীতি ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা বা মন্তব্য করতে হয়, তা হলে সেখানে করাই ভাল। কেননা আমার এ লেখাটি একটি আবেদন মাত্র। ধন্যবাদ সবাইকে।
অনুপম শহীদ - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৫:৪৮ অপরাহ্ণ)
এই শিক্ষানীতিতে প্রথম অংশ ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অংশের সূচনা পর্বে বলছে ‘এই শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে সেক্যুলার গণমুখী, সুলভ, সুষম, সার্বজনীন, সুপরিকল্পিত এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে।’ আবার ৩ নং এ বলছে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণীত করে তোলা এবং তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং চরিত্রে সুনাগরিকের গূণাবলী (যেমনঃ ন্যায়বোধ,ধর্মনিরপেক্ষতা বোধ,…. ইত্যাদি) বিকাশ ঘটানো।’ এখন এই নীতিরই ৭৫ পৃষ্ঠায় শিক্ষা সংক্রান্ত বিধান যা সংবিধানে আছে তার উল্লেখ আছে। সেখানে লেখাটা এরকম ‘(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য;
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা-প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য;
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য;
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷’
এদিকে সংবিধানের মূলনীতিতে আছে – ‘৮৷ ১[ (১) সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার-এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে৷
(১ক) সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি৷]’
শিক্ষানীতির সূচনা অংশই এই সরকার সংসদে পাশ করাতে পারবেনা দুটি শব্দ ব্যবহারের জন্য। যদি বা এই ভাবেই পাশ করে তাহলেও সমস্যা আছে – কেউ যদি আদালতে যায়, তাহলে আদালত তা স্থগিত করতে পারবে।
তো সেজন্যই আমার মত আমাদের সরকারের বাইরে থেকে সরকারের ওপর এই শিক্ষানীতি যেভাবে এখন আছে তা পাশ করানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা। এর বিরোধী চাপ তো সংগঠিত।
আপনার বাকি মতামতের সাথে একমত কিন্তু এ জায়গাটায় এসে মতে মিললোনা, তাই লিখলঅম। এই শিক্ষানীতি নিয়ে আরো আলোচনার বিষয় আছে এবং সেই আলোচনার আগ্রহও আছে পরবর্তীতে। এই ব্লগেই আর একটা লেখা এসেছে বিশ্লেষণমূলক, সেখানেও আলোচনার ইচ্ছা আছে।
তবে এই মুহুর্তে এখানে বলতে চাই, ‘মৌলবাদীরা বিরোধিতা করলেই সরকারের পদক্ষেপকে যারা এক ধাপ এগুনো মনে করছেন’ আমি তাদের দলে এবং এ বিষয়ে আমাদের বোধহয় আরও বেশী সচেতন ও সংগঠিত হয়ে কাজে নামা উচিত।
ভাল থাকবেন।
(প্রচুর বানান ভুলের সম্ভবনা আছে, আমার এখানে ফন্ট খুবই ছোট আসছে! ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেই!)
ইমতিয়ার - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৮:৩৮ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ, অনুপম শহীদ
আপনার ব্যবহৃত উদ্ধৃতি থেকে দেখা যাচ্ছে শিক্ষানীতি বাংলাদেশের সংবিধানের বর্তমান প্রকৃতির সঙ্গেই এক অর্থে বিরোধ তৈরি করছে। বলাই বাহুল্য, সংবিধানের এই হালের বিরোধী অবশ্য আমরা অনেক আগে থেকেই। আমার যতদূর মনে পড়ছে, এমনকি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়েও কোনও কোনও বামপন্থী দল ১৯৭২-এর সংবিধান পুনর্বহালের দাবি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুক্ত করেছিল। এখন তারা যদি তেল-গ্যাস রপ্তানি চুক্তির বিরোধিতা ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতার পাশাপাশি তাদের সংবিধানবিষয়ক পুরানো দাবিটিও জোরালোভাবে তুলে আনেন, তা হলে অন্তত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মাঠে দৌড়ে বেড়ানো মৌলবাদের ভূতের নাকে হলুদ পোড়ানোর গন্ধ পৌঁছাবে। অবশ্য আমি জানি না, তারা কে কি করবেন। কেউ কি জানাবেন, চারদল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় নেয়ার পর বিশেষ করে বামদল ও সংগঠনগুলির কেউ বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে কোনও কথা বলেছেন কি-না?
তবে, দেখা যাচ্ছে, মৌলবাদীরা বেশ সংঘবদ্ধভাবেই সংবিধান ও শিক্ষানীতি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ইসলামী ছাত্র শিবির শিক্ষানীতি সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটির একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পাওয়া যাবে ফেইসবুকে তাদের পাতায়। এখানে তারা এ-ও বুঝানোর চেষ্টা করেছে, ধর্ম থেকেই নাকি নৈতিকতার উদ্ভব ঘটেছে! তবে ধর্মশিক্ষা সম্পর্কে কবির চৌধুরীর প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির অবস্থান স্পষ্ট বোঝা যায়, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা থেকে। শিবির যে-অপপ্রচার দাঁড় করিয়েছে তার একটি মোক্ষম প্রতিত্তুর এ নিবন্ধটি।
যতদূর জানতে পারছি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শিক্ষানীতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত দিয়েছে। চিন্তার ব্লগে সালাউদ্দিন সোহাগের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে,
ইসলামী ছাত্র শিবিরের দেয়া বক্তব্য সম্বন্ধে এখানে মূল্যায়ন এসেছে,
তবে দেখা যাচ্ছে, শিবির এতে মাদ্রাসা-মনস্কতা দেখিয়েছে এবং এর পেছনে মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে তাদের যে অভিলিপ্সা রয়েছে তাও কাজ করেছে।
শিবিরের পাশাপাশি শিক্ষানীতির বিরোধিতায় মাঠে নেমেছে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। রেডিও তেহরান-এর বাংলা বিভাগে কারা কাজ করেন, জানি না, তবে তাদের ওয়েব সাইটে দেখা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত এ নীতির বিরুদ্ধে ৩০ দিনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছিল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। এই কর্মসূচি শেষে নিশ্চয়ই তারা নতুন কর্মসূচি দেবে। এ ছাড়াও মাঠে আছে আদর্শ শিক্ষক সমাজ।
অচিরেই এদের আরও সংঘবদ্ধ রূপ আমরা দেখতে পাব।
এই প্রেক্ষাপটে, আমার যা মনে হয়েছে, আপনি চাইছেন, প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিটিকেই অনুমোদন করা। কিন্তু সেটির পথেও যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা কিন্তু আপনিই বর্ণনা করেছেন।
আরও একটি ব্যাপার, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে নতুন শিক্ষা বছর শুরু হচ্ছে আগামী জানুয়ারি থেকে। আলোচনার সুবিধার্থে যদি ‘এখনই অনুমোদনের’ বিষয়টি মেনে নেয়া যায়, তারপরও প্রশ্ন থাকে, সরকারেরই কি এ শিক্ষানীতিটিই চালু করার মতো অবকাঠামোগত প্রস্তুতি রয়েছে?
ধন্যবাদ আপনাকে।
গৌতম - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৩০ অপরাহ্ণ)
না, নেই। এবং সংসদের অনুমোদন পেলেও সরকার আগামী বছর থেকেই এটির বাস্তবায়ন শুরু করবে না। এর জন্য কমিটি বেশ কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করেছে। বর্তমানে সেগুলো নিয়ে আলোচনা-যাচাই-বাছাই হচ্ছে নানা মহলের সাথে, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে। অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কন্ডিশন মাথায় রেখে কীভাবে বিভিন্ন ধাপে শিক্ষানীতিটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব সে সম্পর্কিত দুটি প্রস্তাবনার কথা ইতোমধ্যে জানা গেছে। সময় পেলে কোনো একসময় তা তুলে দেওয়ার আশা রাখি। তবে একটি প্রস্তাবে ২০১৫ সালের মধ্যে এবং আরেকটি প্রস্তাবে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কমিটি চেষ্টা করছে এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের ওপর যেনো আর্থিক চাপ খুব বেশি না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে। সেটি করা গেলে হয়তো নানা বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষে শিক্ষানীতিটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আর শিক্ষামন্ত্রী তো ক্রমাগতই নানা মহলের কাছে এই শিক্ষানীতি যে ধর্মবিরোধী নয়, তা প্রমাণে ব্যস্ত আছেন!
সৈকত আচার্য - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (৮:০৩ অপরাহ্ণ)
@ মোশারফঃ
ছাত্র সমাজের ১০ দফা দাবীনামা কি আপনার কাছে আছে? যদি থাকে, এটা কি পিডিএফ করে আপনার পরবর্তী আলোচনায় তুলে দেয়া যায়? এটা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে হচ্ছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মুনিম - ৯ নভেম্বর ২০০৯ (৮:২০ অপরাহ্ণ)
শিক্ষানীতির লিঙ্কটা কাজ করছে না!
ইমতিয়ার - ৯ নভেম্বর ২০০৯ (৮:৪৫ অপরাহ্ণ)
জানি না কেন কাজ করছে না। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে প্রথমেই এটির একটি পিডিএফ লিংক পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে এটি দেখা যেতে পারে।
মুক্তাঙ্গন - ৯ নভেম্বর ২০০৯ (৯:০৪ অপরাহ্ণ)
কোন কারণে সাইটটি হয়তো ডাউন। মুক্তাঙ্গনের সার্ভারেও চূড়ান্ত খসড়াটি তোলা রয়েছে। লিন্ক এখান থেকে ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
গৌতম - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (১১:০৮ পূর্বাহ্ণ)
১.
আপনার লেখার টোনের সাথে আমি পুরোপুরি একমত। এই শিক্ষানীতি যাতে বাস্তবায়িত না হতে পারে, সেজন্য কিছু গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে। এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের যাদের অবস্থান, তাদেরও উচিত কিছু একটা করা। শুধু শুধু চেয়ে দেখলে যেটুকু আছে, তাও হারাতে হবে।
২.
এখানে মন্তব্যে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, ধর্মশিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গ এসেছে। এই আলোচনাগুলো উঠে আসা অবশ্যই দরকার, কিন্তু আমার মনে হয় ভুল মানুষের কাছে চেয়ে লাভ নেই। শিক্ষানীতির খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর বাম ছাত্রসংগঠনের বর্তমান কিছু নেতার সাথে আলাপ করে দেখেছি— তারা যা চান, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করা ছাড়া সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব না। পুঁজিবাদ বা মুক্তবাজার অর্থনীতিকে অবহেলা করে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সরকারের পক্ষে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে এড়াতে পারবে না বা তাদের সেটা করার কোনো কারণও নেই। সুতরাং যা চাইতে হবে বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই তা চাওয়া উচিত। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সখেদে একদিন বলেছিলেন— প্রগতিশীলেরা মনে করে এই শিক্ষানীতি যথেষ্ট প্রগতিশীল নয়; কিন্তু কোন কোন জায়গায় প্রগতিশীলতার অভাব রয়েছে, সেটি তাদের কেউ স্পষ্ট করতে পারে নি। বাম ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতার সাথে কথা বলে একই উপলব্ধি আমারও।
৩.
ছাত্রাবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের বিকল্প শিক্ষানীতি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলাম। শিক্ষার বাস্তব ধারা ও বর্তমান অরাজকতা সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল না থাকায় সরকার কেন সেগুলো বাস্তবায়ন করে না— তা মাথায় ঢুকতো না। কিন্তু এখন এই সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে উপলব্ধি হচ্ছে— এই কাজগুলো একটি পুঁজিবাদী সরকারের করার কোনোই কারণ নেই। ছাত্র ইউনিয়নের বিকল্প শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হলে, আবারও বলি, সমাজতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার। বর্তমান শিক্ষানীতি সম্পর্কেও তাদের যা মতামত শুনেছি তাতে মনে হয় আমরা কেবলই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে পূর্বধারণাপ্রসূত ও আবেগনির্ভর কথাবার্তা বলে যাই অধিকাংশ সময়ই।
৪.
একমুখী বা একধারার শিক্ষানীতির কথা আমরা বলে থাকি। কিন্তু দুটো শব্দ একই অর্থ বহন করে না। তাছাড়া একটি দেশে সত্যিকার অর্থেই একধারার বা একমুখী শিক্ষার প্রয়োজন আছে কিনা তাও কিন্তু ভাবা দরকার। যদি একটি দেশের সব জনগণের জাতীয়তা ও ভাষা একই হয়, সেক্ষেত্রে একমুখী শিক্ষানীতি চালু হতে পারে, কিন্তু বহুভাষাভাষী বা বহু জাতির সংমিশ্রণে গঠিত দেশের ক্ষেত্রে এমনটা হলে কিন্তু তা প্রকারান্তরে সংখ্যাগুরু জাতির পক্ষেই যায়। প্রকৃতপক্ষে যেটা করা দরকার— শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে এবং কারিকুলামের সিমিলারিটির দিক দিয়ে একই স্তরের এবং একই মানের শিক্ষা দেওয়া। সেক্ষেত্রে সারা দেশের সবাই এক ধরনের শিক্ষা পাবে বলে আশা করা যায়।
৫.
আমি আপনার এই আবেদনের সাথে একমত। বর্তমান শিক্ষানীতির অনেককিছু নিয়ে দ্বিমত থাকলেও সেগুলো পরবর্তীতে বদলানো যাবে। বর্তমান শিক্ষানীতি কিন্তু সেই অপশনটি খোলা রেখেছে— দুঃখের বিষয়, এই বিষয়টি অনেকেই খেয়াল করেন না।
রায়হান রশিদ - ১৭ নভেম্বর ২০০৯ (৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
@ অনুপম শহীদ #৩.২
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ উত্থাপনের জন্য ধন্যবাদ। ‘পঞ্চম সংশোধনী মামলা’-র পর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত কিভাবে বিষয়গুলো দেখতে পারে সেটা আসলেই একটি ধূসর জায়গা মনে হচ্ছে। সরকারী আইনজীবিরা কিংবা আইন মন্ত্রণালয় এই বিষয়টার ব্যাপারে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু একটা ভেবে নিয়েই সবুজ সংকেত দিয়েছিল খসড়াটিকে। তাদের সেই যুক্তিগুলো কোনভাবে জানতে পারলে মন্দ হতো না। কমিটি সদস্যদের মধ্যেও ব্যারিস্টার নিহাদ এর নাম দেখছি। তাঁর অবস্থানই বা কি ছিল বোঝা যাচ্ছে না ‘চূড়ান্ত খসড়া’-টি পড়ে।
তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করে রাখা মনে হয় প্রয়োজন। সংবিধানের ধর্মীয় বিধানের সাথে শিক্ষানীতির বিরোধের ব্যাপারটা তো রয়েছেই। তবে সাধারণভাবে – বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে কোন রাষ্ট্রীয় নীতিকে (যেমন: পরিবেশ নীতি, স্বাস্থ্য নীতি, জ্বালানী নীতি ইত্যাদি) চ্যালেঞ্জ করার বিষয়টা এখনো খুব একটা স্পষ্ট নয়। যতদূর বুঝি, খুব মোটা দাগে ব্যাপারটা এমন:
১ – নীতিটিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা যায় না, কিন্তু নীতির ভিত্তিতে (কিংবা যে কোন) গৃহীত সরকারী পদক্ষেপ যদি আইন প্রদত্ত এখতিয়ারের বাইরে পড়ে তবে তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
২ – প্রচলিত আইনে নীতিটি প্রণয়নের পদ্ধতির ব্যাপারে যদি কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থেকে থাকে (যেমন: যদি কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে মত বিনিময়, কিংবা কোন নির্দিষ্ট তথ্য উম্মুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়), এবং সেটি যদি প্রণয়নকালে অনুসৃত না হয়, তবে তখনো প্রণীত দলিলটিকে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে এ ধরণের কোন নীতিগত দলিলকে চ্যালেঞ্জ করার নজির রয়েছে কি না সে বিষয়ে কোন তথ্য পেলেই এখানে লিখে জানানোর চেষ্টা করবো। দুই আইনজীবি বন্ধুকেও লিখেছি, এ বিষয়ে সঠিক অবস্থানটা আরেকটু স্পষ্টভাবে জানার জন্য। আপনার কাছেও এ বিষয়ে কোন তথ্য থেকে থাকলে এখানে শেয়ার করার অনুরোধ করবো।
তবে প্রসঙ্গত বৃটেনের উচ্চ আদালতের গত বছরকার একটি সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে এই আলোচনায়। যুক্তরাজ্য সরকার প্রণীত পারমানবিক শক্তি স্থাপনা প্রণয়ন নীতিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে সফল হয়েছিল গ্রীন-পিস। এ বিষয়ে আরও জানা যাবে এখানে। কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি:
অনুপম শহীদ - ১৮ নভেম্বর ২০০৯ (৩:৪৮ অপরাহ্ণ)
আমি আইনের বিষয়াদি বুঝিনা একেবারেই! তবে শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহের কারণেই সংবিধান উল্টে-পাল্টে দেখে যেটা বুঝেছি যে এতে বেশ কিছু বিষয় আছে যা একটা আর একটার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে। যেমন –
‘সুযোগের সমতা’ অংশে লেখা আছে –
১৯৷ (১) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন৷
(২) মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
‘ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য’ অংশে –
২৮। (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ অংশে বলা হচ্ছে –
(২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।
এই অংশগুলো পড়ার পর – এই শিক্ষানীতি ‘সুযোগের সমতা’ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়েছে। ‘সুষম-সুযোগ সুবিধাদির’ কথা বলছে। ‘ধর্মীয় কারণে বৈষম্য’ দূর করার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়নের কথা বলছে। ‘মাদরাসা-য় শিক্ষা’ পাওয়া অংশকে ‘সমাজের অনগ্রসর অংশ’ বিবেচনায় ‘বিশেষ বিধান প্রণয়ন’ করছে। আরও বলা যায় – ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’র বিষয়ে কোন ভাবেই এই শিক্ষানীতি দ্বিমত পোষণ করেনি।
সংবিধানে কাঁটাছেড়া হলেও এখনও বেশ কিছু ভাল বিষয় আছে!
আর একটা ব্যাপার হল আমাদের দেশে তো নির্বাহী আদেশে শিক্ষা বিষয়ক কর্মকান্ড চলে (এই বিষয়ে গৌতম-এর একটা লেখা পড়েছিলাম সচলায়তনে বেশ কিছুদিন আগে)। তো সরকারের প্রয়োজন নেই এই নীতিকে আগে সংসদে পাশ করানোর। ইচ্ছা থাকলে আগে এর বাস্তবায়ন শুরু করে ফেলতে পারে এবং পরে সুবিধা মত সংসদে পাশ করিয়ে নিতে পারে। এই তো হল অবস্থা, আমি যতটুকু বুঝি।
আইনগত দিকটা স্পষ্ট ভাবে জানার জন্য আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম…
রায়হান রশিদ - ১৯ নভেম্বর ২০০৯ (৬:৫০ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলোর মধ্যে আসলেই কিছু কিছু ভাল ব্যাপার এখনো টিকে গেছে, এতো কাটাছেঁড়ার পরও।
অবিশ্রুত - ১৭ নভেম্বর ২০০৯ (৫:২৩ অপরাহ্ণ)
শিক্ষানীতি সম্পর্কে কবীর চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার, যাতে তিনি খোলাখুলি বিভিন্ন কথা বলেছেন। এ নীতিতে ব্রতচারী কার্যক্রম ও দর্শনের প্রসঙ্গটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।