আমরা এখনো আদমশুমারি ২০১১-এর ফলাফল পাইনি তবে ধারণা করা হয় বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৭ থেকে ৮ ভাগ হতে পারে। তার মানে বাংলাদেশের ৪০ বছরে হিন্দুদের শতকরা হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে।[...]

বাংলাদেশের বড় সংখ্যালঘু হচ্ছে হিন্দু জনগোষ্ঠী। ১৯৪১ সালে আমাদের এই অঞ্চলে হিন্দুরা ছিলেন জনসংখ্যার ২৮ ভাগ, ১৯৫১ সালে এসে হল ২২ ভাগ। এভাবে ১৯৬১ সালে ১৮.৫০ ভাগ, ১৯৭১ সালে ১৩.৫০ ভাগ, ১৯৮১ সালে ১২.১৩ ভাগ, ১৯৯১ সালে ১১.৬২ ভাগ, ২০০১ সালে ৯.২০ ভাগ। এই ষাট বছরে প্রায় ১৯ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী কমে গেল আমাদের মোট জনসংখ্যা থেকে – তারমধ্যে প্রায় ১৫ ভাগই কমে গিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের ৩০ বছরে এবং আরো ৪ ভাগ কমেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরের ৩০ বছরে। আমরা এখনো আদমশুমারি ২০১১-এর ফলাফল পাইনি তবে ধারণা করা হয় বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৭ থেকে ৮ ভাগ হতে পারে। তার মানে বাংলাদেশের ৪০ বছরে হিন্দুদের শতকরা হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। কেন কমে যাচ্ছে হিন্দুরা? পাকিস্তান আমলে হিন্দুদের ভাগ কমে যাওয়ার মূল কারণ যদি হয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও রাজনৈতিক হিংসা তাহলে বাংলাদেশ আমলেও হিন্দুদের ভাগ কমে যাওয়ার অন্য কোনো কারণ থাকার কথা নয় – ওই একই কারণে কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের বড় সংখ্যালঘুর শতকরা অবস্থান। আর এই যদি হয় বড় সংখ্যালঘুর অবস্থা তাহলে ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর অবস্থা যে এর চেয়ে শোচনীয় হবে তাতে তো আর কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। আর কতদিন ‘ভোটব্যাংক’ হয়ে থেকে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তির চর্চা করবেন বাংলাদেশের বড় সংখ্যালঘুরা, যাদের চিহ্নিত ‘ভোটব্যাংক’ হয়ে থাকেন তারা সেই আওয়ামী লীগের আমলেও তো অত্যাচারের সংখ্যা কমলেও অত্যাচার তো বন্ধ থাকে না। বরঞ্চ বিএনপি আমলে অত্যাচার হলে অন্তত আওয়ামী লীগকে বলতে পারেন কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে হলে তো আর কাউকেই বলতে পারেন না তাদের অত্যাচারের কথা। হ্যাঁ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আছে – কিন্তু এটি তো কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা বড় জোর রাজনৈতিক তদবির করতে পারেন সংখ্যালঘুদের পক্ষে। কিন্তু আর কতকাল কাটবে রাজনৈতিক তদবিরে, যদি এই অব্যাহত অত্যাচারে রাজনৈতিক দলের কথা ভাবেন বড় সংখ্যালঘুরা – সাথে যদি নেন অন্য সংখ্যালঘুদেরও তখন বাংলাদেশের যা একটু ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির চেহারা আছে তার কী অবস্থা হবে?

এই লেখাটা লিখব না লিখব না বহুদিন ভেবেছি। কাছের মানুষরা ভয় দেখিয়েছেন কাকের মতন একতাবদ্ধ সাহিত্যিক দুর্বৃত্তদের। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে যে, লেখা উচিত। [...]

এই লেখাটা লিখব না লিখব না বহুদিন ভেবেছি। কাছের মানুষরা ভয় দেখিয়েছেন কাকের মতন একতাবদ্ধ সাহিত্যিক দুর্বৃত্তদের। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে যে, লেখা উচিত। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমার প্রথম বই কনফেশন বক্সের ভিতর। অটাম-দিনের গান প্রকাশিত হয়। বইটার মূলগল্পের কেন্দ্রে আছে একটি পরিবার, আজহারউদ্দিন আহমেদের পরিবার। আজহারউদ্দিনের স্ত্রীর নাম ফরহাত বানু। মেয়ে ঈশরাত বানু। ছেলে রঞ্জু। ঈশরাতের আরেকটি বোন আছে, তার নাম রওনক। রঞ্জুর একটি অজ্ঞাতনামা প্রেমিকা ছিল, তার ছদ্মনাম ক্রতু। রওনক বাদে এঁরা প্রত্যেকে স্মৃতিচারণ করেন। কেউ ডায়েরি লিখে। কেউ স্বগতঃভাষণে। কেউ চিঠিতে। এঁদের দৈনন্দিন জীবনে প্রেম-গ্লানি-প্রতারণা-প্রিয়বিয়োগের শোক এইসবই উপস্থিত। নিজের কাছে অবমুক্ত হবার সময় এঁরা প্রত্যেকে দেখতে পান এঁদের নিজস্ব স্খলন-পতন-ত্রুটি, এঁদের জীবনে ভালবাসা পাবার জন্যে অন্তিম হাহাকার। ব্যক্তিগত বেদনা ভুলতে আপাতঃস্বাভাবিক এইসব মানুষ প্রতিহিংসার আশ্রয়ও নেন, যেন তাতে স্থায়ী-শোক উপশমের উপায় আছে। এই বইটিতে আমার ভাষাব্যবহারের একটি উদ্দেশ্য ছিল ভাষাভাষীদের আলাদা করে দেয়া। যাতে প্রতিটি চরিত্রের জন্যে ভাষাও একটি চারিত্র হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সাধু-চলিত নয়, পরিভাষা এবং বিদেশী শব্দও আলাদা করে বসিয়েছিলাম আমি। এক এক করে। অদ্যাবধি আমার জানামতে বইটার দু’খানা রিভিউ হয়েছে, একটি মশিউল আলমের করা (প্রথম আলো-তে) আরেকটা সালাহ্ উদ্দিন শুভ্রের করা, সাময়িকী ডট কম-এ। প্রথম রিভিউটির কোনো কপি আমার কাছে নাই। তবে মনে আছে, মশিউল আলম লিখেছিলেন -- 'বইয়ের নামে ইংরেজি কেন? তার মানে কি লেখক বাংলা ভাল জানেন না?' (এই সম্পাদ্য উনি শেষ অব্দি শেষ করেছেন এইমত যে, লেখকের বই পড়ে তাঁর মনে হয়েছে লেখক বাংলা ভালই জানেন।) মজার বিষয় হচ্ছে একইসময় আরেকটি বইয়ের রিভিউ হয়েছে, আমার বইয়ের রিভিউয়ের পাশেই, একইসময়-একসাথে, সে বইটির নাম ফেস বাই ফেস, লেখক মাহবুব মোর্শেদ। তাঁকে প্রশ্ন সইতে হয়নি কেন তাঁর বইয়ের নাম পুরোটাই ইংরেজিতে (এবং বলতে নেই এবইয়ের নাম ইংরেজিতেও অর্থহীন, আমি একাধিক ইংরেজিভাষীর সাথে এই 'পান'-এর যথাযোগ্যতা নিয়ে আলাপ করেছি, তাঁরাও পাননি। তবে আমি মনে করি বইয়ের নাম বিষয়ে লেখকের সার্বভৌমত্ব আছে, তিনি রাখতেই পারেন।), তিনিও কি বাংলা জানেন না? নাকি উপযুক্ত শব্দাবলির অভাবে দ্রুত ইংরেজির সহায়তা নেয়ার অভ্যাস (মশিউল আলম এই অভ্যাসের কথা লিখেছেন প্রথমেই)? ফেস বাই ফেস-এর রিভিউয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও এরকম কোনো প্রশ্ন…

নিচ্ছে দিচ্ছে করছে চাই [...]

একটু + নিচ্ছে একটু - দিচ্ছে একটু × করছে একটু ÷ করছে, দেখি, কারো কোনো উদ্বেগ নেই। কিন্তু যখনই = অধিকার চাই তখনি তেড়ে আসে উগ্র আপত্তি।

শাসন করা তারই সাজে[...]

শাসন করা তারই সাজে শোষণ করে যে।

আসামের বাঙালিরা মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতর রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, শহীদ হয়েছেন — আমরা অনেকেই তাঁদের আত্মাহুতির কথা মনে রাখি না। বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভাষাশহীদদের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য দুটি লেখা এখানে সংকলন করা হলো। [...]

আসামের বাঙালিরা মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতর রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, শহীদ হয়েছেন — আমরা অনেকেই তাঁদের আত্মাহুতির কথা মনে রাখি না। বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভাষাশহীদদের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য দুটি লেখা এখানে সংকলন করা হলো। অধ্যাপক মাহবুবুল হক ও প্রয়াত সাংবাদিক মুহম্মদ ইদ্রিসের এ প্রবন্ধ দুটি ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা কর্তৃক প্রকাশিত সংকলন মাতৃভাষা-য়। সংকলনটির প্রকাশকাল : ১৮ বৈশাখ ১৪০৯, ১ মে ২০০২; সম্পাদক : আমীর রিদয়; সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডা. শুভার্থী কর। শুভার্থী নিজে বরাক উপত্যকা থেকে ঘুরে এসেছিলেন; তাঁর উদ্যোগেই বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ও একষট্টির উনিশে মে-র দুই স্বতন্ত্র ভাষা আন্দোলনকে একই সঙ্গে যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপন করে প্রকাশিত হয়েছিল মাতৃভাষা নামের সংকলনটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তথ্যসমৃদ্ধ স্বতন্ত্র গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। . . . ভাষার লড়াই : বরাক উপত্যকায় মাহবুবুল হক ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল সে আন্দোলনের কথা বাংলাদেশের জনগণের মনে চির জাগরূক হয়ে আছে। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের নয় বছর পরে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এমন আর একটি আন্দোলন হয়েছিল আসামের বরাক উপত্যকায়, সে কথা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। কিন্তু সে আন্দোলনে রক্ত ঝরেছিল। বাঙালির আত্মপরিচয় ও অধিকার রক্ষার সংগ্রামে সেখানেও শহীদ হয়েছিল এগারোটি তাজা প্রাণ। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন এবং বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় অভিন্নতা। প্রথমত, দুটি আন্দোলনই সংগঠিত হয়েছিল বাংলা ভাষার উপর অন্য ভাষার ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ত, দুটি আন্দোলনেই দলমত-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে দুই ভূখণ্ডের বাঙালি জনগোষ্ঠী প্রতিবাদী সংগ্রামে অংশ নিয়ে আত্মদান করেছিল অধিকার আদায় করতে গিয়ে। অন্যদিকে এ দুই আন্দোলনের মধ্যে আলাদা বিশিষ্টতাও ছিল। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষীর (৫৬%) উপর পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া সংখ্যালঘিষ্ঠ (৭%) ভাষা উর্দুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আসামের বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠ বাঙালির ভাষা অধিকার খর্ব করে তাদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের অসমিয়াকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। বরাক উপত্যকায় বসবাসরত বাঙালির যে ভাষা আন্দোলন তা আকস্মিক কোনো ঘটনা ছিল না। বাংলাদেশের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.