তাকাই, দেখি, কাচঘেরা বাক্সটার মধ্যে দুশো বছর আগে জন্মানো এক মানুষের সংগ্রহ করা মকিংবার্ড দুটি শুয়ে আছে রূপকথার খাঁচাবাসী পাখির মতো। যেন বাণিজ্য থেকে ফিরে এসে পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সওদাগর তাদের শুনিয়েছে বনবাসী পাখিবন্ধুর হালসংবাদ। আর তা শুনে খাঁচার পাখি যেমন, মকিংবার্ড দুটিও কাচের বাক্সের মধ্যে আকাশের দিকে পা তুলে শুয়ে আছে মড়ার মতো। মৃত ভেবে কেউ ছুঁড়ে ফেললেই তারা ডানা মেলে উড়াল দেবে আকাশপথে। খুব কি শীত আজকে? নভেম্বরে যেমন হয়, তার চেয়ে একটু বেশি? নাকি শীতগ্রীষ্মনিরপেক্ষ নীরবতা সারা ঘরে? কাচের স্বচ্ছতা পেরিয়ে চোখ দুটো বার বার স্পর্শ করছে মকিংবার্ডগুলির ধূসর পালক। প্রাচীনতার লাবণ্য মেখে যতটুকু উজ্জ্বল হওয়া সম্ভব তার সবটাই ধরে রেখেছে তাদের প্রতিটি পালক। হঠাৎ সামনে-পড়া কোনো সাময়িকীতে যেমন কোনো কোনো অলস মুহূর্তে পাশাপাশি ছাপানো প্রায়-অবিকল দুটি আলোকচিত্রের পাঁচটি বা নয়টির পার্থক্য খুঁজে বের করার উদ্যম পাই, তেমনি এক অলসতা ভরা চোখে এখন খুঁজতে ইচ্ছে করে, কী এমন পার্থক্য আছে এই দুই মকিংবার্ডের মধ্যে, যা দেখে হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা সৃষ্টির অভিজ্ঞান সম্পর্কে একদিন এক মানুষের মনে সংশয় জেগেছিল? কী করে তাঁর ধারণা হয়েছিল প্রকৃতিই অনিবার্য করে তোলে একেকটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব? কী করে তাঁর মনে হয়েছিল, বদলে-যাওয়া প্রতিবেশের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার দুঃসাহস দেখালেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে মানিয়ে চলারই চেষ্টা করে পৃথিবীর সব প্রজাতিই? এবং তাই প্রতিটি প্রজাতিরই শেষ লক্ষ্য মূলত আপোশ করে, নিজেকে ক্রমশ পালটে ফেলে পরিবর্তিত প্রতিবেশের মধ্যে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার? এ সবই ঘটে এই মকিংবার্ডদের ভালভাবে দেখতে গিয়ে। প্রশ্ন জাগে, প্রশ্ন বাড়তেই থাকে এবং প্রশ্নের উত্তরের সূক্ষ্ম এক উত্তরও লুকিয়ে থাকে মকিংবার্ডদের ঠোঁটের আশপাশের অঞ্চলে। আপেল কেন মাটিতে পড়ে, সরল সহজ প্রশ্নটি যেমন পৃথিবীর গভীর এক রহস্যের পাশাপাশি আরও অসংখ্য রহস্য সমাধার পথ খুলে দিয়েছিল, ধূসররঙা ওই দুটো মকিংবার্ডের ঠোঁট দুরকম কেন প্রশ্নটিও তেমনি এক রহস্যের সমাধান করে বসে, মেলে ধরে জ্ঞানের অপার রহস্যভাণ্ডার। তার পরও জ্ঞানের এ-ধারা মানতে আজও অনেকে দ্বিধা করেন, বিশেষত ধর্মে প্রগাঢ় আস্থা যাঁদের। একটি মকিংবার্ড পাওয়া গিয়েছিল সান ক্রিস্টোবালে, আরেকটি ফ্লোরিয়ানা আইল্যাণ্ডে। কিন্তু সংগ্রহের সময়ও মানুষটি বুঝতে পারেননি ঘরে ফেরার পর এই মকিংবার্ড দুটি তাঁকে বাধ্য করবে বার…
শহুরে জীবন একেবারেই উন্নীত হলো না নাগরিক জীবনে। এখানেই নিজেকে বড়ো নিঃস্ব মনে হয় আমার। গত এক যুগ আমি শুধু গ্রামের সাথে সংযোগহীন নই, এ সময়কালে আমি নিজেকে গড়েও তুলেছি নাগরিক মূল্যবোধে। আমার চিন্তায় চেতনায় আমি কৃষির চেয়ে বেশি শিল্পলগ্ন, জীবনে যেমন, জীবনাচরণেও[...]
নিজের গ্রামে যাই না এক যুগ হয়ে গেছে। আবার আমার শহুরে জীবনেরও তিন দশক হতে চলল। জীবনের গত এক যুগে হারিয়েছি গ্রামের সেই মাঠ জল বাগান বাতাস, আর শহরে হারিয়েছি আমার নিজের কৈশোর যৌবনের কয়েকটি খেলার মাঠ, কিছু প্রিয় খোলা জায়গা, কিছু মোহমায়ার পাহাড়। কী হারিয়েছি, কেন গত কয়েক বছর নিজের নিভৃতে হাহাকার ওঠে, কী বলি তখন, কোথায় যেন দৃষ্টিহীনভাবে তাকিয়ে থাকি, বারবার কীসের কথা ভাবি, কী প্রেমটাই হারালাম, কে চলে গেল এ জীবন থেকে, কত হাজার বার কত রকম করে কত স্বরে কত অনুযোগে, আমি জানি নেই আমার শুধু : এক একর সবুজ ঘাস। শহুরে জীবন একেবারেই উন্নীত হলো না নাগরিক জীবনে। এখানেই নিজেকে বড়ো নিঃস্ব মনে হয় আমার। গত এক যুগ আমি শুধু গ্রামের সাথে সংযোগহীন নই, এ সময়কালে আমি নিজেকে গড়েও তুলেছি নাগরিক মূল্যবোধে। আমার চিন্তায় চেতনায় আমি কৃষির চেয়ে বেশি শিল্পলগ্ন, জীবনে যেমন, জীবনাচরণেও। আমার প্রিয় বিষয়ের মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য আগ্রহ হলো চিত্রকলা ও আর্কিটেকচার। প্রকৃতির পাশাপাশি আমি সচেতন নির্মাণ ভালোবাসি। একটি শহর এই সচেতন নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নগর হয়ে ওঠে। ডেভেলপার, মেয়র, নগর উন্নয়ন কর্তা এরাই হলো শহরকে নগর করে তোলার মূল চালিকাশক্তি, এদের চূড়ান্ত অসচেতনতাই দেশের প্রধান দুই শহরের নগর হয়ে ওঠার পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে যুগের পর যুগ। কনক্রিট সত্যিই এক ভালোবাসার বস্তু, কিন্তু তার পাশেও থাকতে হয়, এক একর সবুজ ঘাস, কনক্রিটকেও ভাবতে হয় পাহাড়ের কথা, বহতা দখলমুক্ত নদীই সবচেয়ে প্রাণবন্ত করে কনক্রিটকে, নদী বা সমুদ্র পাড়েই গড়ে ওঠে কনক্রিট হটস্পট। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের প্রধান দুই শহর, একটি নদীর পাড়ে ও আরেকটি মোহনা এবং পাহাড়ের সমন্বয়ে, প্রতিভাদীপ্ত প্রাকৃতিক অবস্থান পেয়েও আজ শহর হতে শহরের জঞ্জালে পর্যবসিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা যতই বলা হচ্ছে, বিশ্বের বড় বড় কর্তারা বারবার এর ‘উপশম’-এর কথা বলছেন, মানে রোগনির্ণয় হয়ে গেছে এখন এর চিকিৎসার কথা বলছেন। রোগনির্ণয়ে ক্ষতগুলো সব ধরা পড়েছে এশিয়ায় আফ্রিকায় ও দক্ষিণ আমেরিকায়। এ অঞ্চলগুলো থেকে এখন কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। এর মধ্যে চীন ৪০ শতাংশ ও ভারত ২০-২৫ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলও হয়তো…
আমার ছেলে এটা মোটেই ঠিক কাজ করেনি, তারেক জিয়ার সাথে তার পার্থক্যের উত্তরে শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা তুলে সে ঠিক কাজ করেনি, আমাকে খালেদা জিয়ার সাথে তুলনা করতে সারা পৃথিবী যেভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল এবং এখনো যে ব্যস্ততার কোনো শেষ নেই — কই, আমি তো কোনোদিন সে তুলনার উত্তরে শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা তুলিনি। তুলিনি কারণ এ তো সবাই দেখতে পায়, একথা বলে যার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই তার কোনো ক্ষতি হয় না, ক্ষতিটা হয় যার সেটা আছে। ওবামা জ্ঞানী মানুষ, বুশ, সারাপৃথিবী জানে ছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে স্টুপিড প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সেই জ্ঞানী মানুষ দিয়ে এখনো তো তেমন কিছু হল না, আগের বুশের বাহিনী ও তার ঘটানো সব কার্যকলাপের রিপেয়ারিং করেই যদি তার জীবন কাটে, তার এই জ্ঞান শুধু সুন্দর করে কথা বলার কাজেই যদি ব্যয় হয়, তাহলে পৃথিবীর কোন কাজটাই বা এগোবে। এবারের জলবায়ু সম্মেলনেও তাই হল, সেই পুরনো সব কথা, উষ্ণায়ন কমানো হবে, কমাতেই হবে। কিন্তু আমার দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে যেখানে ১০৫২ জন লোকের বসবাস, সেখানে উষ্ণায়নের থাবায় শুধু একশ বর্গকিলোমিটার সাগরের পেটে গেলেই আমার দেশের এক লাখ লোক হবে শরণার্থী, আমি একটি তলানির দেশের প্রধানমন্ত্রী, আমি তো এখনো আমার নিজের দেশের ওপর সমুদ্রের এই আগ্রাসন নিয়ে গবেষণার করবার জন্য একটা মাল্টিডিসিপ্লিনারি পরিষদই গঠন করতে পারলাম না, আর এটা করা ছাড়া আমি বা আমার দেশের সরকার তার যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও প্রতিকারের কী ব্যবস্থা করবে? কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, তেমন দেশের গবেষণার জন্যই তো আমরা আছি, আমরা চলে আসব, ফান্ড আসবে, আর ফান্ডের খরচ করাটাই হবে আমাদের কাজ, আপনি শুধু ভাউচারে স্বাক্ষর করার লোক তৈরি রাখুন, তাদের কে কত পাবে, আপনার কত লাগবে এসব ঠিক করে রাখুন। আপনাদের ইচ্ছাপত্রের সাথে আমাদের ইচ্ছাপত্র মিলিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দেব। হ্যাঁ, সবকিছু সেভাবেই হবে — কিন্তু দুর্নীতির দায়ে আমাদের ইচ্ছাপত্রগুলোই শুধু প্রকাশিত হবে, তাদেরগুলো নয়। আমার বাবার একটা কথা সবসময় শোনা যায়, চাটার দল, কিন্তু এরা এখন আর শুধু চাটে না, এরা এখন খায়, আমার চারপাশে এখন জমিখোর, নদীখোর, শেয়ারখোর, খাদ্যখোরের আড্ডা। বাংলাদেশে এখন একটা কথা উঠেছে উন্নয়নভাবনার সাথে জলবায়ুর ভাবনাও ভাবতে হবে। আমার…
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশটিতে যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ। আজ থেকে চার দশক আগের চোখ দিয়ে দেখি কেবলই গ্রেভইয়ার্ড । একটা নিরীহ গোবেচারা ধরনের সমাজ এখন ক্ষুব্ধ ক্রূর! গাছগাছালিময় আনআরবান প্রায় গ্রাম্য ঢাকা এখন কসমোপলিটান। আরবানাইজড। সাঁই সাঁই করে হাইরাইজ দাঁড়িয়ে গেছে। ঝাঁচকচকে জেল্লা আর বিত্ত-বৈভবের প্লাবনে জঞ্জালময় ঢাকার রাজপথ প্লাবিত। চারিদিকে সুখের পায়রা পতপত করে উড়ছে। সুখ,স্বস্তি আর শান্তির দেবদূতেরা ডলার-পাউন্ডের ভেলায় চরে এই দেশে নেমেছে। তাদের শুভাগমনে সারা দেশে দুধের নহর আর ক্ষীরের পাহাড় গড়ে উঠেছে! সেই নহর আর পাহাড়ের কোণায় শেয়াল-কুকুরের মত একজিস্ট করে চলেছে কিছু পোকামাকড়! খুব কাছে গিয়েই শুধু ঠাওর করা যায়-তারা মানুষ! হোমো স্যাপিয়েন্স! এদেরকে ডাম্প করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগুনোর খতিয়ান রাখায় ব্যস্তসমস্ত হচ্ছেন পরিসংখ্যানবিদগণ। ডাটাবেজে ডিজিট উঠছে.....জিডিপি-সাড়ে পাঁচ! কিছু দিন পরেই ছয়...সাত! দেশকে সাঁই সাঁই করে টার্বো গতিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান কারিগর ধরা হয় তৈরি পোশাক শিল্পকে। আসলেই, কি দেয়নি এই গার্মেন্ট? একটা রাইজিং ক্লাস দিয়েছে, যারা কর্পোরেট কালচারকে ”সর্বজনগ্রাহ্য” করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একটা বিশাল সংখ্যক হা-ভাতে আনস্কিল্ড শ্রমিককে খাওয়া-পরা দিয়েছে।
পথের ধারের টাউট-বাটপাড়দের প্রায় বিনে পয়সায় নারী সম্ভোগের সুযোগ দিয়েছে! তালাসংস্কৃতি চালু করে ইঁদুরের মত পুড়িয়ে মানুষ কমানোর ত্বরিকা দিয়েছে। আর সরকারকে বুকে আঙ্গুল ঠুকে এত কোটি ডলার রেমিট্যান্স মওজুদ দেখানোর ক্ষমতা দিয়েছে। এত দেওয়ার পরও এই হতভাগা হা-ভাতে জাতির শনৈ শনৈ উন্নতির চাকায় আরো খানিকটা মবিল দিয়ে আরো সচল করার জন্য এবার চালু হয়েছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। এবার এই নতুন শিল্পের ল্যাজ ধরে পাপী-তাপী সব স্বর্গে পৌঁছে যাবার নিষ্কন্টক পথও পেয়ে যাব আমরা! “বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনা আছে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। বিশ্ববাজারে বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বাজার উন্মুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ কোটি ডলারের বাজারও যদি বাংলাদেশ ধরতে পারে, তাহলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ২ থেকে ৩ শতাংশ। কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক দক্ষ ও অদক্ষ বেকার যুবকের। একটি সুষ্ঠু নীতিমালা করেই সরকার বদলে দিতে পারে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের চিত্র। আর এটি সম্ভব হলে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা উন্নয়নের পরশ দিয়ে পাল্টে দিতে পারবেন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারা। এই শিল্পের বিকাশে সব ধরনের…
ভালোবাসাতে ব্যর্থ ভালোবাসা ফলাফল নয় অবস্থান, কূটনীতিতে ব্যর্থ কূটনীতি ফলাফলও অবস্থানও। আমি প্রতিবেশী হিসেবে ভারতকে ভালোবাসি, এবার আমার সে ভালোবাসা যদি ব্যর্থ হয়, সেই ব্যর্থ ভালোবাসা মোটেই আমার ভালোবাসার ফলাফল নয়। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে আমার প্রধান কাজ কূটনীতি, সেই কূটনীতি যাতে দেশের ভালো হয় এবং প্রতিবেশীরও ভালো হয়, তাতে যদি আমি ব্যর্থ হই, তাহলে সেই ব্যর্থ কূটনীতি শুধু আমার কূটনৈতিক ব্যর্থতা নয়, সে ব্যর্থতা আমার অবস্থানও, কারণ আমি দুপক্ষেরই ভালো চেয়েছিলাম। আমি মনমোহন সিং-এর সাথে দেখা করেছি, এমন সজ্জন সতত হাসিখুশী লোক আমি সরকারপ্রধানদের মধ্যে কম দেখেছি, আমার নেতা ও আমাদের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকেও আমি এই দুই গুণের জন্য এতো ভালোবাসি। আমি প্রণব মুখার্জির সাথে কথা বলার সময় সত্যিই বুঝতে পারিনি আমি ঢাকায় নেই দিল্লিতে আছি। একমাত্র চোখ ধাঁধিয়ে গেছে আমার ভারতীয় প্রতিপক্ষ কৃষ্ণাকে দেখে। আরে বাপ, অভিজাত কাকে বলে! যদি আমার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বছরের শুরুতে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা না হয়ে, কৃষ্ণার সাথে দেখা হতো আমি মনে হয়, এতো সাহসের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করতাম না। আর কৃষ্ণার সহকারী শশী থারুর সে তো পুরোদস্তুর এক পাশ্চাত্যবাসী, আমিতো মোটেই তাকে ভারতীয় ভাবতে পারছিলাম না। আমি এদের নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার সবকিছু সহজ করে দিলেন প্রণব মুখার্জি, আমি দিল্লি থাকতেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের দুই মাথাকে এমন এক আদেশ দিয়ে ব্যতিব্যস্ত করলেন, যে আমি তাদের সাথে মতবিনিময় করতে একদম ভয় পাইনি। কৃষ্ণা ও থারুর তাদেরকে দেয়া দিল্লির বাংলো পছন্দ হয়নি বলে দিনে লাখ রুপী ভাড়ার হোটেলে থাকছিলেন, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি সরকারের ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়ে এমন অবিমৃষ্যকারী মন্ত্রীদের হোটেল ছাড়ার নির্দেশ দিলেন। গত ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী সরকারের আমলে জ্যোতি বসু আমাদের জন্য যেমন ছিলেন, তেমনি এবার আছেন প্রণব মুখার্জি, কেন্দ্রে অসাধারণ ক্ষমতাশালী, কিন্তু বাঙালি, এবং বাংলাদেশের জন্য আছে গভীর মমত্ববোধ। আমি যে এসবের বাইরেও ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বনশাল ও বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি, তার নেপথ্যের মানুষ প্রণব মুখার্জি। টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে আমাদের দেশে ও ভারতে যা হচ্ছে, তা হল এই বাঁধের নির্মাণ কাজ অন্তত পাঁচ বছর ঠেকিয়ে রাখা, এতে…