ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশটিতে যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ। আজ থেকে চার দশক আগের চোখ দিয়ে দেখি কেবলই গ্রেভইয়ার্ড । একটা নিরীহ গোবেচারা ধরনের সমাজ এখন ক্ষুব্ধ ক্রূর! গাছগাছালিময় আনআরবান প্রায় গ্রাম্য ঢাকা এখন কসমোপলিটান। আরবানাইজড। সাঁই সাঁই করে হাইরাইজ দাঁড়িয়ে গেছে। ঝাঁচকচকে জেল্লা আর বিত্ত-বৈভবের প্লাবনে জঞ্জালময় ঢাকার রাজপথ প্লাবিত। চারিদিকে সুখের পায়রা পতপত করে উড়ছে। সুখ,স্বস্তি আর শান্তির দেবদূতেরা ডলার-পাউন্ডের ভেলায় চরে এই দেশে নেমেছে। তাদের শুভাগমনে সারা দেশে দুধের নহর আর ক্ষীরের পাহাড় গড়ে উঠেছে! সেই নহর আর পাহাড়ের কোণায় শেয়াল-কুকুরের মত একজিস্ট করে চলেছে কিছু পোকামাকড়! খুব কাছে গিয়েই শুধু ঠাওর করা যায়-তারা মানুষ! হোমো স্যাপিয়েন্স! এদেরকে ডাম্প করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগুনোর খতিয়ান রাখায় ব্যস্তসমস্ত হচ্ছেন পরিসংখ্যানবিদগণ। ডাটাবেজে ডিজিট উঠছে…..জিডিপি-সাড়ে পাঁচ! কিছু দিন পরেই ছয়…সাত!
দেশকে সাঁই সাঁই করে টার্বো গতিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান কারিগর ধরা হয় তৈরি পোশাক শিল্পকে। আসলেই, কি দেয়নি এই গার্মেন্ট? একটা রাইজিং ক্লাস দিয়েছে, যারা কর্পোরেট কালচারকে ”সর্বজনগ্রাহ্য” করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একটা বিশাল সংখ্যক হা-ভাতে আনস্কিল্ড শ্রমিককে খাওয়া-পরা দিয়েছে। পথের ধারের টাউট-বাটপাড়দের প্রায় বিনে পয়সায় নারী সম্ভোগের সুযোগ দিয়েছে! তালাসংস্কৃতি চালু করে ইঁদুরের মত পুড়িয়ে মানুষ কমানোর ত্বরিকা দিয়েছে। আর সরকারকে বুকে আঙ্গুল ঠুকে এত কোটি ডলার রেমিট্যান্স মওজুদ দেখানোর ক্ষমতা দিয়েছে। এত দেওয়ার পরও এই হতভাগা হা-ভাতে জাতির শনৈ শনৈ উন্নতির চাকায় আরো খানিকটা মবিল দিয়ে আরো সচল করার জন্য এবার চালু হয়েছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। এবার এই নতুন শিল্পের ল্যাজ ধরে পাপী-তাপী সব স্বর্গে পৌঁছে যাবার নিষ্কন্টক পথও পেয়ে যাব আমরা!
“বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনা আছে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। বিশ্ববাজারে বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বাজার উন্মুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ কোটি ডলারের বাজারও যদি বাংলাদেশ ধরতে পারে, তাহলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ২ থেকে ৩ শতাংশ। কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক দক্ষ ও অদক্ষ বেকার যুবকের। একটি সুষ্ঠু নীতিমালা করেই সরকার বদলে দিতে পারে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের চিত্র। আর এটি সম্ভব হলে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা উন্নয়নের পরশ দিয়ে পাল্টে দিতে পারবেন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারা। এই শিল্পের বিকাশে সব ধরনের সম্ভাবনা ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতে আন্তর্জাতিক নজরও পড়েছে বাংলাদেশের প্রতি।”
ব্যাস! আর আমাদের চিন্তা নাই! আমাদের জিডিপি এবার একলাফে ৮এ উঠে যাবে। চট্টগ্রামের টাকা ম্যাগলেভ ট্রেনে চেপে ঢাকায় এসে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। আমরা রাতারাতি এলডিসি থেকে পৌঁছে যাব ডেভেলপিং কান্ট্রিতে। এই পরাবাস্তব স্বপ্ন দেখার পরেও পাওয়া যাবে। তার আগে দেখা যাক ইউরোপিয়ান দেশগুলো যেমন, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর কেন আমাদের দেশে জাহাজ নির্মাণে আগ্রহ দেখাচ্ছে? ইউরোপিয়ান দেশগুলো তো নিজেরাই বছরের পর বছর জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পৃথিবীর সেরা। গত প্রায় এক শতাব্দীধরেই তো তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাহাজ, ফেরি বোর্ট, টাগ বোট রপ্তানি করে আসছে, এখন কি এমন হলো যে তারা আমদানী করতে চাইছে? তাদের কারখানাগুলোকি বাঁজা হয়ে গেছে? নাকি তারা সব ভুলে গেছে? না। সবই ঠিক আছে।
তারা তাদের দেশের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং দায়বদ্ধ। তাই তাদের নিজের দেশের মানুষদের দিয়ে যে অমানবিক এবং বিপজ্জনক কাজ করাতে পারে না তা-ই আমাদের মত লেস ডেভেলপ্ড দেশে করিয়ে নেয়। তাদের পারমানবিক বর্জ্য জাহাজে ভরে সারা ইউরোপের কোথাও ফেলতে পারেনা। গ্রীণপিস কর্মীরা তেড়ে আসে। সেই সব জাহাজ একসময় এসে ভেড়ে এই বাংলাদেশে। মারাত্মক বিষাক্ত পারমানবিক বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক, টক্সিন, প্রাণঘাতি যৌগ ডাম্প এবং রিসাইক্লিং করার মোক্ষম জায়গা এই বাংলাদেশ, কেননা এখানে সস্তায় মানুষ মেলে! নামমাত্র দামে এই যুগেও দাস পাওয়া যায়! এরা ঝাঁকে ঝাঁকে মরলেও তেমন কোন সামাজিক প্রতিবাদের মুখোমুখি হতে হয়না। বড় অংকের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়না।
ভাটিয়ারী। এমনিতেই এক দুর্গম্য স্থান। এখানে মিলিটারী একাডেমী হওয়ায় এর আশেপাশে সবার জন্য অবারিত নয়। এই ভাটিয়ারীতেই গড়ে উঠেছে জাহাজ ভাঙ্গার গ্রেভইয়ার্ড! জায়গাটা আপাতদৃষ্টে বাংলাদেশের মনে হলেও প্রকারান্তর “নোম্যানস ল্যান্ড”! এখানে সাধারণ মানুষ তো বটেই কোন সাংবাদিকের প্রবেশ নিষেধ। বাছাইকৃত এবং মুচলেকা দেওয়া শ্রমিক, মালিক, মালিকের পোষ্য আর বেনিফিশিয়ারী ছাড়া আর কারোই এখানে প্রবেশাধিকার নেই। বাংলাদেশ সরকারের কোন আইনও এখানে বলবৎ নয়! গত দুই দশক ধরে এই জাহাজ ভাঙ্গা ভাগাড়ে যা হচ্ছে তা শিউরে ওঠার মত। উন্নত দেশগুলোর যে সব বিষাক্ত পরিত্যক্ত জাহাজ তাদের কোন বন্দরে ভেড়ার সুযোগ পায় না সেই সব হ্যাজার্ড কার্গো চলে আসে বাংলাদেশে। ভাটিয়ারীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তারা নোঙ্গর ফেলে বসে থাকে। কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি, ব্রেকিং গিয়ার, ফাইটোস্যানেটারি সার্টিফিকেট, মুচলেকা, প্রাণহানির দায়বদ্ধতা ছাড়াই মাত্র ৪ হাজার থেকে ৫ শ টাকার শ্রমিক দিয়ে জাহাজ ভাঙ্গা শুরু হয়। এই পুরোনো –পরিত্যক্ত জাহাজ এক অদ্ভুত বিড়ম্বনা! একটা নতুন জাহাজ যেমন ওই মালিকের ইনভেস্টমেন্ট, তেমনি একটি পরিত্যক্ত জাহাজ তার গলার কাঁটা। সেটিকে কোথাও ডাম্প করার উপায় নেই! কোথাও নোঙ্গর করে দিনের পর দিন রেখে দেওয়ারও সুযোগ নেই। পুড়িয়ে ফেলাও যাবেনা। তাই তাকে সেটা ভাঙ্গতেই হবে। আর ভাঙ্গার জন্য বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রেভইয়ার্ড।
জাহাজভাঙ্গা শিল্প বিকাশের ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে কি কি উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে তা নিয়ে শিটের পর শিট ডাটা দিয়ে ডেভেলপমেন্ট গ্রাফ একে দেওয়া যায়, কিন্তু এই কাজে দেশের মানুষের কি কি ক্ষতি হচ্ছে, পরিবেশের কি কি ক্ষতি হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে জাতীয় অর্থনীতিতে কতটুকু অবদান রাখতে পারছে সেই খতিয়ান কোথাও পাওয়া যাবেনা। এবার দেখি কি কি ডিজাস্টার ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে, এবং এখনো ঘটে চলেছেঃ
SOS-arsenic.net জানাচ্ছে….. গত ১৮ বছরে “মাত্র” ৩০০ শ্রমিক মারা গেছে!(আমরা এই সংখ্যাকে গণায়ই ধরি না!)
Some 45,000 workers of the ship-breaking industry in Chittagong are now working in hazardous atmosphere risking life in handling of old equipment used to break ships and dealing with toxic chemicals in their daily routine work. In the absence of any protective measures at least 300 workers of the yards had so far died and about 550 were handicapped in accidents in harness in the last 18 years. At present the workers of 30 ship-breaking yards in Chittagong are working at high risk of accident particularly explosion of gas cylinder and oil tanker.
Sources said, one worker at a ship-breaking yard was killed and three others were injured in a gas explosion in a scrapped ship on April 9 this year at Shitalpur area under Sitakundu upazila in the district. The dead worker was the cutter man of the Lalbagh shipyard and identified as Sagar (21). The three injured were identified as Babul, Anwar and Suvash
In another workplace accident, two workers at a ship-breaking yard were killed and six others injured when they were struck by a scrapped steel plate in August last year at Kadam Rasul area under Sitakundu upazila. The two victims were the cutter men of Ahmad Mujtaba Steel Industry and identified as Humayun (28) and Md. Belal (30). Another worker Selim Uddin (28) died in a similar accident in July last year.
GreenPeace জানাচ্ছে Shipping industry must strip ships of toxic materials before sending them for scrapping
Highest court in Netherlands says scrap ship is toxic waste
June 19th 2002 – The Highest Court in the Netherlands, the Council of State in The Hague, has today ruled that a ship destined for scrapping in India which contains asbestos, heavy metals and other toxic materials, should be classified as toxic waste.
এই ধরণের বিষাক্ত জাহাজগুলি ইউরোপে ঠাঁই না পেয়ে চলে আসবে বাংলাদেশে। সস্তায় জাহাজগুলো ভাঙ্গার পর যার যার টাকা দিয়ে, টাকা নিয়ে চলে যাবে। রেখে যাবে বছরের পর বছর ধরে বিষাক্ত কেমিক্যালসের মরণ ব্যাধি। চেরনোবিল পারমানবিক বিষাক্ততার পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় এখনো সেখানে বিকলাঙ্গ শিশু আর প্রাণীর জন্ম হয়। আর এখানে জন্ম হবে বিশ্বের অভূতপূর্ব সব রোগব্যাধী আর ভাইরাস!!
Brain+Release_Valve সাইটটি বলছেঃ where immense ocean freighters and tankers are torn apart by hundreds of gritty, lean, strong, bronze-skinned, men–by manual labor. Using blow torches, sledgehammers and wedges they carve the mammouth steel whales into chunks just off shore. After the huge pieces crash into the water like glaciers calving, they are winched onto shore where they are cut up into bite-size pieces weighing hundreds of pounds then lifted and loaded by teams of guys–who sing in rhythm as they walk lock-step carrying the very heavy inch-thick steel plates–onto trucks to be sold (very profitably by the owners who live in huge mansions in town) as scrap metal across the country and Asia (with some reworked into ‘new’ ships).
Ship breaking is done from 7 AM to 11 PM (same crew) with two half hour breaks and an hour for lunch (supper is eaten after they go home at 11);
14 hours a day, 6-1/2 days a week (off half day Friday for Muslim observations). They are paid $1.25 per day.
কত টাকা প্রতি দিন? মাত্র ৮০ টাকার মত!
DEMOTIX news এর বর্ণনায়-Ship breaking Yard Chittagong : Darkness life of labors.
JAZJAZ.NET এর বর্ণনা এরকম: Hell on Earth – The Ship Breaking Yards of Alang and Chittagong
These hell holes are not just a killing ground for old vessels; thousands of hapless, but able-bodied young men have lost their lives doing back-breaking work in one of most hazardous working conditions in the world. Not only do they have to work without any basic safety equipment, they have to also endure prolonged exposure to toxic chemicals and waste matter during the course of work. Lung cancer and asbestosis is quite common among these poor souls কি অদ্ভুত ভাবে “গরিব আত্মার” করুণ মৃত্যু ঘটে চলেছে!
Click This Link এর খবরটা কি ভয়াবহ দেখুন :
The main Chittagong ship breaking area called Fauzdarhat is located on a 10-mile (16km) stretch of the Bay of Bengal that was once covered by a mangrove forest. It is the second-largest ship breaking operation in the world after Alang, India, employing around 100,000 people directly and indirectly. With a tidal flux ideal for the beaching of large vessels, Chittagong scraps around fifty percent of the world’s large-scale ships. Since the number of end-of-life tankers is expected to grow in coming years, this business and its hazards are also expected to rise.
Click This Link এই সাইটটির দেওয়া তথ্য আরো ভয়াবহ!
Shipbreaking Boom
The Freighter Graveyards of South Asia
By Joachim Hoelzgen
When times were good, shipping companies ordered huge numbers of new steel behemoths to ply the oceans. Now though, many of those same container lines are eager to get rid of their ships. The scrapping business in South Asia is booming.
The sandy beaches north of Chittagong in Bangladesh look like giant steel graveyards. Ships line the banks ready for dismantling. Others are so far disassembled that their hulls are all that is left protuding morosely from the water, according to shipping industry journal Lloyd’s List. All kinds of vessels get broken down here: bulk carriers, container ships, vehicle transporters and oil tankers.
আমাদের এখন অনেক টাকার দরকার! আমাদের ১৫ কোটি মানুষকে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে, তাই আমাদের যেকোন উপায়েই হোক টাকা কামাতে হবে। পৃখিবীর সকল বিষাক্ত জাহাজ, ট্যাঙ্কার, ভেসেল আর পারমানবিক বর্জ্যবাহী জাহাজও আমরা ভেঙ্গেচুরে শিটের আকার দিয়ে দিতে পারি! তাতে আমাদের প্রাণের ছোঁয়া লাগানো সবুজ বেষ্টনি ধ্বংস করে, পরবর্তী প্রজন্মকে বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে পঙ্গু করে হলেও আমরা বাঁচতে চাই! বাঁচার জন্য আমাদের এলিটরা আমাদের গার্মেন্ট দিয়েছে, বিষাক্ত চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের ট্যানারি দিয়েছে, এখন দিয়েছে জাহাজ ভাঙ্গার কাজ। একাজ করেই আমরা বছরে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য করতে পারব । এখানকার শ্রমের রক্ত-ঘামে-মৃত্যুতে মাখানো ষ্টিল শিট দিয়ে আমরা জাহাজ বানিয়ে ইউরোপে রপ্তানি করে ওই ৪০ হাজার কোটি ডলারের বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশকে আর পায় কে? কোরিয়া-জাপানকেও পেছনে ফেলে দিলাম বলে……..!!
কিন্তু আমরা দেখেছি এই শিল্প হোক আর গার্মেন্ট হোক, ভাগ্য বদলেছে ওপর তলার এলিটদের, তাদের চামচাদের, বরকন্দাজদের, মধ্যস্বত্তভোগী দালালদের আর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, ব্যাংক-বীমা এবং এই সংক্রান্ত বেনিফিশিয়ারীদের। ১.২৫ ডলারের শ্রমিক আঠারো বছর আগেও যে অশিক্ষিত আনস্কিলড ডেইলি লেবার, এখনো সে সেই অবস্থায়, একই ভাগ্যবিড়ম্বনা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য কোন এক অপার্থীব নির্দেশে ছুটে চলেছে! বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে চোখের নোনা জল মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে…..কিছুতেই আলাদা করে বোঝানো যাচ্ছেনা যে ওইটুকু আমাদের চোখের জল! আমাদের শরীরের ঘাম! আমাদের ধোঁয়াটে ভবিষ্যৎ!
কৃতজ্ঞতা এবং দায় স্বীকারঃ
গ্রান্ড থিফ ইকোনমিকস
আরবান ইমার্জেন্সিস
এনভায়োরনমেন্টাল ডিজাস্টার
রাইট বাংলাদেশ – র’ডিল ফর শিপব্রেকিং …..
গ্লোবাল গে’জ ডট কম
দক্ষিণ এশিয়ার গ্রেভইয়ার্ডস
মনজুরাউল
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২৫ comments
মনজুরাউল - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:২০ পূর্বাহ্ণ)
দুঃখিত, পোস্টের সাথে লিংক দিতে পারলাম না। “বিষয়: বিভাগ/বিষয় নিরপেক্ষ”
একাধিক বিভাগো ঠিক করতে পারলাম না।
মুক্তাঙ্গন - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
আপনার একাউন্ট থেকে কি বিভাগ বসানো যাচ্ছে না? যাওয়ার তো কথা। একটু খুলে বলুন।
মনজুরাউল - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:০৪ পূর্বাহ্ণ)
ব্যাপারটা হচ্ছে আমি বিষয় নির্বাচন ট্যাবে ক্লিক করে কমা দিয়ে একাধিক বিষয় লিখে ইনসার্ট করার পরও কিছু দেখছিনা!
লিংক দেওয়ার জন্যে link ক্লিক করে link tab এ url টা পেস্ট করছি তারপর ok ক্লিক করছি, তার পরও লিংক যথাযথ ভাবে আসছেনা! শুধু ওয়ার্ডগুলো এসেছে। আমার নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে।
মুক্তাঙ্গন - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:২৫ পূর্বাহ্ণ)
১)
বুঝেছি। আপনি আসলে শুধু “Post Tags” এন্ট্রি করেছেন, যেগুলো হল: ” বিষক্রিয়া, মানবিকতা, রাষ্ট্র, শ্রম শোষ, ্আন্তর্জাতিক আইন”। পোস্ট ট্যাগগুলো বাইরে দেখানো হয় না। পোস্টের সাথে দেখানো হয় শুধু “বিভাগ” প্যানেল থেকে অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো। চেকবক্সে ‘টিক’ দিয়ে পোস্টের সাথে প্রযোজ্য “বিভাগ” যোগ করতে হয়।
আপনি সম্ভবত “বিভাগ” প্যানেলটি দেখতে পাচ্ছেন না, তাই নির্বাচনও করতে পারেননি। আপনার পোস্ট এডিটিং পাতার স্ক্রিনের উপরের দিকে খেয়াল করুন – সেখানে “Screen Options” নামে একটি ট্যাব রয়েছে। সেটি ক্লিক করে খুলুন এবং দেখুন “বিভাগ” বা “Categories” প্যানেলটি নির্বাচন করা রয়েছে কিনা। সম্ভবত নেই, পাল্টে নিন।
২)
লিন্ক ট্যাবটি মূলতঃ কোন টেক্সটকে লিন্কড করার জন্য। যেমন ধরুন, আপনি চাচ্ছেন “এখানে বিস্তারিত দেখুন” লেখাটিকে কোন ইউআরএল দিয়ে লিন্কযুক্ত করতে। তাহলে আপনাকে প্রথমে উপরের এই টেক্সটটিকে মাউস দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। তারপর “লিন্ক” ট্যাবটিতে ক্লিক করলেই একটি পপ্আপ্ আসবে; সেখানে পুরো ইউআরএল-টি বসিয়ে দিয়ে চূড়ান্ত করুন। হয়ে গেল।
মনজুরাউল - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ। এতক্ষণে দুটি বিষয়েরই সুরাহা হলো। কষ্ট করে ডেমো দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।
মুক্তাঙ্গন - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:০৯ পূর্বাহ্ণ)
দুঃখ আসলে আমাদেরই প্রকাশ করা উচিত বিষয়গুলো কোন সহজ ম্যানুয়েল এ এখনো অন্তর্ভূক্ত করে উঠতে পারিনি বলে। কেউ যদি এই সব টুকিটাকি সহায়িকাগুলো সংক্ষেপে লিখে একত্রিভূত করার কষ্টটুকু করতে পারেন তাহলে সেটা স্থায়ীভাবে মুক্তাঙ্গন-এর “সাহায্য” পাতাগুলোতে যোগ করে দেয়া যেতে পারে। তাতে ভবিষ্যতেও সবাই উপকৃত হবেন।
রায়হান রশিদ - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:৫৬ অপরাহ্ণ)
বেশ অনেক দিন আগে এই বিষয়ে “না বলা কথা”-য় সুবিনয় মুস্তফীর একটি লিন্কবহুল পোস্ট প্রকাশ হয়েছিল, “জাহাজের গোরস্থান – সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম” শিরোনামে। এতে ছিল জাহাজ-ভাঙ্গা নিয়ে দেশ বিদেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিন্ক। তথ্যবহুল এই পোস্টটির কিছু কিছু অকেজো লিন্ক মেরামত করে নিয়ে পুরোটাই নীচে তুলে দেয়া হল মুক্তাঙ্গনের পাঠকদের জন্য। আশা করি সুবিনয়ের আপত্তি হবে না এতে।
=====
— চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং ব্যবসা প্রায়ই বিদেশের গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার পায়। কিছুদিন আগে মার্কিন টিভির সিবিএস চ্যানেলে 60 Minutes শীর্ষক সংবাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটা আবার শিরোনামে এসেছে। (সম্পূর্ণ ভিডিও এখানে।) রিপোর্টার বব সাইমন।
— এ ছাড়াও গত দুই দশক ধরে বেশ কিছু নামকরা ফটো-জার্নালিস্ট এই ইস্যু নিয়ে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নিশ্চয়ই ব্রাজিলের আলোকচিত্রশিল্পী সেবাস্তিয়াও সাল্গাদো। তিনি আগের জনমে অর্থনীতিবিদ ছিলেন, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ফটো জার্নালিস্টদের অন্যতম। চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং নিয়ে সালগাদো ছবি তুলেছিলেন সেই ১৯৮৯ সালে। (দেখুন এখানে।) পরবর্তীতে তিনি আরো ২৫টি দেশে শ্রমিকদের সংগ্রাম নিয়ে ছবি তোলেন, এবং তার আলোকচিত্র গ্রন্থ Workers-এ এই ছবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
— কানাডীয় আলোকচিত্রশিল্পী এডওয়ার্ড বুর্টিন্সকি ২০০০ সালে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। শিপব্রেকিং বিষয়ে ৫১টি ছবি নিয়ে তার অনলাইন গ্যালারি এখানে। Manufactured Landscapes শীর্ষক ফটোগ্রাফি বইয়ে এই ছবিগুলো সংকলিত হয়েছে। একই শিরোনামে বুর্টিন্সকি একটি প্রামান্যচিত্রও রিলিজ করেছেন।
— শিপব্রেকিং ব্যবসার অতীত ও বর্তমান নিয়ে বিশাল এক রচনা লিখেছেন সাংবাদিক উইলিয়াম ল্যাংগেউইশ। (লিংক এখানে।) ২০০০ সালে মাসিক আটলান্টিক পত্রিকায় লেখাটি প্রথম ছাপা হয়েছিল। পরবর্তীতে ল্যাংগেউইশ একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখেন – The Outlaw Sea। সেই বইয়ে এই রচনাটি অন্তর্ভুক্ত হয়। ল্যাংগেউইশ তার অনুসন্ধানের জন্যে গিয়েছিলেন গুজরাটের আলাং শহরে। তার লেখা থেকে উদ্ধৃতি – “Today roughly 90 percent of the world’s annual crop of 700 condemned ships end their lives on the beaches of Pakistan, India, and Bangladesh — and fully half of them die at Alang.”
— ফটোগ্রাফি বিষয়ক Luminous Landscape ওয়েবসাইটে আলোকচিত্রশিল্পী মাইকেল রাইখম্যানের ফটো সংগ্রহ – দেখুন এখানে। চট্টগ্রামে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে রাইখম্যান স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটি রচনাও লিখেছিলেন পাশাপাশি। সাল ২০০৫।
— পর্যটক অ্যাডাম কন (Adam Cohn) ২০০৫ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন, তার বৃহত্তর এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে। তিনি বিখ্যাত কেউ নন – কিন্তু চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং নিয়ে একটি সুদীর্ঘ, সুপাঠ্য রচনা তিনি লিখেছেন। (পড়ুন এখানে।) উদ্ধৃতি – “I fucking hate Greenpeace” declared the friend. “They are the fucking bane of my existence. They always try to block my work and make it impossible or too expensive to do business.”
— ২০০৬ সালে Foreign Policy পত্রিকায় একই বিষয়ে প্রকাশিত হয় ফটোজার্নালিস্ট ব্রেন্ডান কর-এর আলোকচিত্র সিরিজ।
— সর্বশেষ লিংক – পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট গ্রীনপীস সংগঠনের শিপব্রেকিং বিষয়ে ওয়েবসাইট।
মনজুরাউল - ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:০৭ পূর্বাহ্ণ)
অনেক দরকারী লিংকগুলো। এই বিষয়ে যে কেউ আরো বিস্তারিত লিখতে চাইলে আপনার দেওয়া এই লিঙ্কগুলো অনেক কাজে দেবে। কৃতজ্ঞ।
সুবিনয়ের এই লেখাটা আমার চোখে পড়েনি। খুটিনাটি প্রত্যেকটি বিষয় নিখুঁত ভাবে লিখেছেন। এই ফাঁকে সুবিনয় মুস্তফীকেও ধন্যবাদ।
আমার মনে হয় ওখানে কি ঘটছে সেটা কম-বেশি আমরা অবগত হয়েছি। এখন দরকার ওখানকার শ্রমিকদের আরো নিরাপদে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কাজের অধিকার নিয়ে লেখা। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার যেন নিশ্চিত হয় সেটি নিয়ে সোচ্চার হওয়া।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:০৫ পূর্বাহ্ণ)
এই লেখাটিতে জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, এই দুটি শিল্পের কথা বলা হয়েছে। 800 বিলিয়ন ডলারের শিল্পটি জাহাজ নির্মাণ শিল্প, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প নয়। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া এই শিল্পে শীর্ষস্থানে আছে এবং বাংলাদেশ এই খাতে একটি উদীয়মান রাষ্ট্র। আমার মতে এটি একটি ইতিবাচক দিক। জাহাজ নির্মাণ একটি শ্রমঘন শিল্প। আমাদের বিপুলসংখ্যক কর্মহীন তরুনদের মালয়েশিয়ার জঙ্গলে না পাঠিয়ে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এই জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার করা যায়।
মনজুরাউল - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:৪০ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ মোহাম্মদ মুনিম,
৪০০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য ব্যাবসাটিতে (শিল্পও ভাবা যেতে পারে) প্রধান কাঁচামাল লোহা। যার খনি আমাদের নেই। জাহাজভাঙ্গা লোহা যা বিষাক্ত পরিবেশে স্বল্প বেতনের শ্রমিকদের রক্ত-ঘাম নিংড়ে আসছে।
শ্রমঘন তো গার্মেন্টও, তার পরও কেন মালয়েশিয়ার জঙ্গলে যাওয়ার জন্য জানবাজি রাখে আমাদের ছেলেরা?
আমাদের রাষ্ট্রনায়করা “হতে পারে” “করা যায়” শব্দগুলো ব্যবহার করে মাইলের পর মাইল লম্বা আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারে, করেও। তাতে সাড়ে চার কোটি বেকারের কিছু যায় আসে না। তেমনি মারাত্মক বিপজ্জনক জেনেও অসহায় শিশু শ্রমিকও ভাটিয়ারিতে ধর্না দেয়। আর এই বাস্তবতাই ওই তথাকথিত শিল্পমালিকদের ইনভেস্টমেন্ট। তারা জানে ভাত ছিটালে কাকেরও হয়ত অভাব হতে পারে তবে মানুষের (খেটে খাওয়া মানুষের) অভাব কখনোই হবে না।
রায়হান রশিদ - ১ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
সম্ভাবনাময় জাহাজ নির্মাণ শিল্প নিয়ে গত কয়েক দিন টিভিতেও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছে। স্বীকার করছি, খুব একটা গভীরভাবে ভাবা হয়ে ওঠেনি বিষয়টা নিয়ে। আর দশটা শিল্পোদ্যোগের মত করেই আসলে দেখেছি বিষয়টা। এই শিল্পে লোহা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার মতো এত সহজ বিষয়টাই মাথায় আসেনি। ধন্যবাদ মনজুরাউল বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়ায়। সত্যিই তো, ওটা আসবে কোথা থেকে? অবশ্যম্ভাবীভাবে সেটার জোগান আসতে হবে ভাটিয়ারী থেকেই। আর কোনো উৎস তো ভাবতে পারছি না। আমদানী হয়তো করা যেতে পারে বিদেশ থেকে, কিন্তু যত দূর বুঝি – হাতের কাছে এতো লাভজনক (কম ব্যয়বহুল অর্থে) উৎস থাকতে একজন ব্যবসায়ী নিশ্চয়ই কেবল মানবতার জন্য সে পথে পা বাড়াবেন না। ব্যবসায়ীরা অমন কাজ করেন না!
জানি না এই যুক্তিটি ইতোমধ্যেই দেয়া শুরু হয়েছে কি না, তবে কেন যেন মনে হচ্ছি জাহাজভাঙ্গার মানবেতরতাকে স্বীকার করে নিয়ে খুব শিগগিরই হয়তো নতুন কিছু যুক্তির আমদানী হবে। অনেকেই হয়তো তখন বলতে শুরু করবেন: ‘৪০০ বিলিয়ন ডলারের অমন শিল্প যখন মাঠে নামবে তখন নিশ্চয়ই আমাদের জাহাজভাঙ্গা ব্যবসাতেও নতুন নতুন “সংস্কার উদ্যোগ” গ্রহণ করা হবে।’ হয়তো বলা শুরু হবে, ‘এই শিল্পটিকেও তখন বৃহত্তর আরেকটি শিল্পের উপস্থিতির স্বার্থেই আইন এবং রেগুলেশনের আওতায় নিয়ে এসে সে-সবের যথাযথ বাস্তবায়ন করা শুরু হবে। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল!’
এই যুক্তিগুলো এখনো দেয়া শুরু না হয়ে থাকলে খুব শিগগিরই যে সে সব দেয়া শুরু হবে – মোটামুটি নিশ্চিত সে বিষয়ে। এটা বুঝতে ভবিষ্যতদ্রষ্টা হওয়া লাগে না কারও, অতীত অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। আর জাহাজভাঙ্গা খাতকে ঘিরে নতুন আইন এবং রেগুলেশনও হয়তো হবে। কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন হয়তো উচ্চতর আদালতে জনস্বার্থ মামলাও ঠুকে বসতে পারেন তত দিনে। এমন একটি তো ইতোমধ্যেই ঠোকা হয়েছে বলে জানি, পরিণতি জানা নেই। মনজুরাউল, আপনার কি বিস্তারিত জানা আছে?
সমস্যা হল, কোন একটি সেক্টর সম্ভাবনাময় হলেই তাকে ঘিরে “ইতিবাচক সংস্কার” আপনা-আপনিই সাধিত হয়ে যায় না। একটি হলেই আরেকটিও যে হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, তাই যদি থাকতো, তাহলে গার্মেন্টস শিল্প শুধু তার সম্ভাবনার জোরেই এতো দিনে এমন সব সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হতো যাতে করে (ন্যূনতমভাবে) স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা-কল্যাণমূলক আইনগুলোর বাস্তবায়ন হোতো কারখানাগুলোতে। কাউকে শেকল পড়ানো বদ্ধ কারখানায় জীবন্ত পুড়ে মরতে হোতো না, একবার না দুইবার না বারবার। সে সব অবিচার নিয়েও হাইকোর্টের অন্তত দু-দু’টো রায় রয়েছে বলে জানি। তাতেও কি অবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে? জাহাজভাঙ্গা সেক্টরের শ্রমিক এবং কর্মচারীদের পরিণতি এর থেকে আলাদা হবে তেমনটা ভাবার মতো এখনো কোন কারণ কিন্তু খুঁজে পাইনি।
স্বীকার করে নিচ্ছি, খুব বেশী জানা নেই এই নতুন শিল্পোদ্যোগের ব্যাপারে। সুতরাং কারও কাছে যদি আরও তথ্য থেকে থাকে তাহলে তাকে অনুরোধ করবো বিষয়গুলো নিয়ে লিখবার জন্য যাতে আমরা এর বিভিন্ন দিকগুলো নিয়ে আরও জানতে পারি। নিজেদের বোঝায় কোন ভুল থাকলে তাও ঝালাই করে নিতে পারি।
মোদ্দা কথা হল – সমস্যার সমাধান চাই আমরা। আবার কোথাও যদি “সত্যিকারের” কোন সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে তা থেকেও মুখ ফেরাতে চাই না। অমনটা গোঁয়ার্তুমী। কিন্তু সেটাকে “সত্যিকারের” সম্ভাবনাই হতে হবে; কিছু মানুষের রক্ত ঘাম আর প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল্যে আরও কিছু মানুষের আয়েশী বিলাসের সম্ভাবনা হলে চলবে না। সেখানে কোন ছাড় নেই।
মনজুরাউল - ২ অক্টোবর ২০০৯ (২:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
হ্যাঁ রায়হান, ঐ “যুক্তি”টি ইতিমধ্যেই দেওয়া শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়,বিভিন্ন সংবাদপত্রের “শিল্প/অর্থনীতি” পাতায় মাঝে মধ্যেই প্রগল্ভতায় পরিপূর্ণ এমবেডেড নিউজও ছাপা হচ্ছে! এবং তা সরাসরি”সম্মানী”র বিনিময়ে! এই ধরনের নিউজ কতটুকু সত্যি তা নিরুপণের কোন চেষ্টা কোন কালেও এখানে চল ছিল না, এখনো নেই। ধরুন র্যাব এর “ক্রসফায়ার”, এর মধ্যে ব্যাপক মানুষ “ইতিবাচক দিক” খুঁজে পায়। কেন পায়? তাদের নিউজ গেলানো হয়। অমুক খুনির “ক্রসফায়ারে” এলাকার মানুষ আনন্দমিছিল করছে বলে সেই ছবি ছাপিয়ে দিলে সাধারণ মানুষের আর তলিয়ে দেখার চেষ্টাটা থাকেনা। এই ব্যাপারটাও অনেকটা তেমনই।
আপনার বাকি জিজ্ঞাস্যগুলোর উত্তর মোহাম্মদ মুনিম ৪ নং মন্তব্যে বিস্তারিত দিয়েছেন, তাই বিস্তারে যাচ্ছি না।
আপনি যেমনটি বললেন, তেমনটিই হতে যাচ্ছে এই সেক্টরেও। ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
হ্যাঁ, আদালতে “বেলা”র রেজওয়ানা মামলা করে “স্টে অর্ডারও” পেয়েছিল। পরে কোন এক যাদুর কলকাঠির ছোঁয়ায় তা আবার উঠেও গেছে। এখন সরকারী বা পরিবেশ সংক্রান্ত কারো কোন বাধাই আর নেই।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা, টক্সিক এর ক্ষতিকারকের অনুপাত, বিষাক্ত বর্জ্যের অনুপাত এবং আরো কিছু বিষয় নিয়ে আরো একটি পোস্ট হতে পারে। আবার সাপের ল্যাজ দিয়ে কান চুলকোনোর বিপদের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হচ্ছে!!
মোহাম্মদ মুনিম - ১ অক্টোবর ২০০৯ (১১:০৪ পূর্বাহ্ণ)
ইন্টারনেট এ ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝলাম, তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা ইস্পাত রি রোলিং করে দেশের নির্মাণ শিল্পে প্রধানতঃ ব্যবহার করা হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণে যে ধরনের ইস্পাত ব্যবহার হয়, নির্মাণ শিল্পে সেই ইস্পাত গ্রহণযোগ্য হবার কথা নয় (কার্বনের অনুপাত, কাঠিন্য, যে তাপমাত্রাতে ইস্পাত রোল করা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি)। বাংলাদেশে যেহেতু নিয়ম কানুনের কোন বালাই নেই (বিএসটিআই এর সিল ঘুষ দিলেই মেলে) জাহাজ ভাঙ্গা ইস্পাত আধা খেঁচড়া রি রোলিং করে নির্মাণ শিল্পে দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে। এখন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বেশ একটা ইস্পাত শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে। জাহাজ ভাঙ্গা কোম্পানীগুলোই (যেমন পিএইচপি গ্রুপ) ইস্পাত রি রোলিং ব্যাবসাতে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশে প্রতিটন রডের মূল্য মার্কিন বাজারের প্রায় দেড়গুণ (প্রতিটন ১১০০ ডলার, মার্কিন বাজারে ৭০০ ডলার)। সুতরাং এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যাবসা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের যে সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে ইউরোপীয় কিছু দেশ বাংলাদেশের কিছু জাহাজ নির্মাণ সংস্থাকে সমুদ্রগামী ছোট জাহাজ বানানোর কাজ দিয়েছে। জাহাজ নির্মাণে যে মানের ইস্পাত লাগে (পুরু এবং চওড়া ইস্পাতের পাত এবং ‘নরম’ ইস্পাত), তা বাংলাদেশে তৈরী হয়না, এমনকি ভারতেও হয় না। ভারত একটি ইস্পাত রপ্তানীকারক দেশ হলেও জাহাজ তৈরির ইস্পাত ইউক্রেন, চীন বা জাপান থেকে আমদানী করে। কোরিয়া এবং জাপান জাহাজ নির্মাণ খাতে অগ্রগামী দেশ হলেও দুটি দেশের একটিতেও লোহার খনি বা জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প নেই। সুতরাং জাহাজ নির্মাণ কারখানা থেকে মাত্র দশ মাইল দূরে জাহাজ ভাঙ্গার ব্যবস্থা থাকার মানে এই নয় যে জাহাজ ভেঙ্গে সেই লোহা দিয়ে জাহাজ বানানো হবে।
বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের যে একটি বীভৎস চেহারা আছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ১২-১৪ বছরের কিশোরদের চোখ ঝল্সে যাচ্ছে ওয়েল্ডিং মেশিনের তীব্র আলোতে আর ফুসফুস ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত এসব্যাস্টসে, দুদশক ধরে চলছে এই মানবিক বিপর্যয়কর শিল্পটি। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প আমাদের দেশে আসার একটি বড় কারণ হচ্ছে এখানে ‘beaching’ পদ্ধতিতে জাহাজগুলো ডাঙ্গায় আনা হয়। ‘Beaching’ পদ্ধতিতে জাহাজটিকে জোয়ারের সময় সজোরে চালিয়ে ডাঙ্গায় নিয়ে আসা হয় এবং সেখানেই ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়। উপমহাদেশের উপকূলের বিশেষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এই পদ্ধতিটি খুব সহজে প্রয়োগ করা যায়। উন্নত বিশ্বে এই কাজটি করা হয় ড্রাই ডকে, এর ফলে জাহাজ ভাঙ্গার খরচ অনেক বেড়ে যায়। সাগরের তীরে জাহাজ ভাঙ্গার কারণে জাহাজের থেকে যাওয়া জ্বালানী এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ সাগরের পানিতে ধুয়ে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। Beaching পদ্ধতিতেও নাকি পরিবেশবান্ধব উপায়ে জাহাজ ভাঙ্গা যায়, কিন্তু সেটি ঠিক কিভাবে সম্ভব, তা আমার জানা নেই।
জাহাজ ভাঙ্গার কাজটি অতীব ঝুঁকিপূর্ণ সন্দেহ নেই, কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এখনো ব্যাপকসংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প আছে (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন কোটি শ্রমিক রাসায়নিক শিল্পে কাজ করে)। কিছু অতিসাধারণ সাবধানতা, শ্রমিকদের বিশেষ পোশাক আর শ্রমিক বীমার ব্যবস্থা করে সেখানে অঙ্গহানি এবং প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পটি ঠিক কুটির শিল্প নয়, এক একটি পুরনো জাহাজ কয়েক মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়। সামান্য কয়েক লাখ টাকা খরচ করে শ্রমিকদের নিরাপদে কাজ করার প্রশিক্ষণ আর বিশেষ পোষাকের ব্যবস্থা করা যায়। পৃথিবীর কোন দেশেই বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি বা খনির মালিকেরা নিজের গরজে শ্রমিকদের নিরাপদে কাজ করার ব্যবস্থা করেন না। শ্রমিকদের নিরাপত্তা বীমা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আইনের প্রয়োগ করেই এটা করা হয়। একটি ওয়েবসাইটে দেখলাম বাংলাদেশ সরকার এখনো জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পটিকে ‘শিল্প’ হিসাবেই স্বীকৃতি দেয়নি, এই informal status টিরই পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে জাহাজ ভাঙ্গা ব্যাবসায়ীরা।
মনজুরাউল - ২ অক্টোবর ২০০৯ (২:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
আপনার ৩.১ মন্তব্যের পরে একটি অসাধারণ মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আমি নেট ঘাটাঘাটি এবং ভাটিয়ারির সরজমিন রিপোর্ট একসাথে করার চেষ্টা করছি। আশা আছে আরো বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা যাবে।
আপনার মূল্যবান মন্তব্য এই পোস্টকে ঋগ্ধ করেছে, আগামীতেও করবে আশা করতে পারি।
মাহতাব - ১ অক্টোবর ২০০৯ (১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প এলাকার স্হানীয় দু একটি পরিবার, যারা প্রভাবশালী এবং এ শিল্পের সাথে জড়িত তাঁরা তাঁদের এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ে মোটেই ভাবিত নন, তাঁরা বলতে চান পরিবেশ দিয়ে কি হবে টাকাতো পাচ্ছি। পরিবেশ রক্ষা, শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা করবে সরকার, কারণ সরকারকে ট্যাক্স দেয়া হচ্ছে।
মনজুরাউল - ২ অক্টোবর ২০০৯ (২:৪১ পূর্বাহ্ণ)
তারা শুধু প্রভাবশালীই নয়, প্রচন্ড ক্ষমতাবান এবং সরকারের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় কাঠি প্রয়োগের সামর্থও রাখে। গোটা সমাজে যখন লুটেপুটে খাওয়ার মচ্ছব চলছে, তখন কোথায় কোন হা-ভাতে মার্জার গতরখাটা কিছু ”নো বডি”র কি হলো না হলো তা দেখার কি আছে!!
ইমতিয়ার - ৫ অক্টোবর ২০০৯ (৬:০৮ পূর্বাহ্ণ)
তিন বছর মেয়াদী আমদানী রফতানি নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বরে। অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এ বৈঠকে জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আখ্যায়িত করা হয়েছে নতুন থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে। এটি জাহাজ ভাঙার বিপরীত সংবাদ হলেও ফল বোধকরি একই রকম।
মনজুরাউল - ২৩ অক্টোবর ২০০৯ (১১:৪৭ অপরাহ্ণ)
আমাদের দুর্ভাগ্য এটাই যে আমরা যদি শ্রমিকের নিরাপত্তা আর ওয়েজ নিয়ে কথা বলি তো আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে গেলাম। আমরা শিল্প বিকাশের বিপক্ষ হয়ে গেলাম। আবার আমরা যদি ক্ষুদে ক্ষুদে শিল্পের বিপরীতে ভারি ব্যাপক শ্রমনির্ভর শিল্পের কথা বলি, তো আমরা হয়ে গেলাম পুজিঁবাদের দালাল! মোদ্দা কথা হলো আমাদেরকে যা-ই করি না কেন হা-ভাতে খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষ নেওয়া চলবে না! এই কথাটি ভেতরে গেঁথে দেওয়ার জন্য ওরা প্রয়োজনে ফায়ার করতেও পিছুপা হবে না, হচ্ছে না!
সুদীপ্ত শর্মা - ২৩ অক্টোবর ২০০৯ (১:৪০ অপরাহ্ণ)
দরকারি পোস্ট। আপনাকে ধন্যবাদ।
মনজুরাউল - ২৩ অক্টোবর ২০০৯ (১১:৫০ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ সুদীপ্ত। আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা।
রায়হান রশিদ - ২৬ অক্টোবর ২০০৯ (৫:২৩ পূর্বাহ্ণ)
বিডিনিউজ-২৪ এর খবর। সময়াভাবে অনুবাদ করা গেল না। খেলোয়াড়দের নাম ধাম লিপিবদ্ধ থাকুক এখানে। পরে প্রয়োজন পড়তে পারে।
মোহাম্মদ মুনিম - ৭ ডিসেম্বর ২০০৯ (৭:৫১ পূর্বাহ্ণ)
জাহাজভাঙ্গা শিল্প নিয়ে আইন হচ্ছে (প্রথম আলোর রিপোর্ট, ডিসেম্বর ৭, ২০০৯)
মোহাম্মদ মুনিম - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৯ (৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
ইউরোপে দুই হাজার ১৭২ পুরোনো ও বিষাক্ত জাহাজ – প্রধান ক্রেতা বাংলাদেশ (প্রথম আলোর রিপোর্ট, ডিসেম্বর ২৮, ২০০৯)
Pingback: জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রমঃ বিপন্ন মানুষ, মাছ আর পরিবেশ | BdFISH Blog
Pingback: জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রমঃ বিপন্ন মানুষ, মাছ আর পরিবেশ: BdFISH Bangla