গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়েরের সাথে সাথে দু'টো বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে: (১) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধের বিষয়টি নাকি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক মীমাংসিত একটি ইস্যু; (২) এমন বয়স্ক একজন মানুষকে বিনা জামিনে গ্রেফতার করে হেফাজতে রাখা বা বিচার করা ঠিক না। এই দু'টো বিষয়ের ওপরই আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই পোস্টে।

গত ৫ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে আসামী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়। এই অভিযোগপত্র দায়েরের সাথে সাথে শুরু হল আসামীর বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়া, এবং সেইসাথে অবসান ঘটলো ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধসমূহের দায়ে এক অভিযুক্ত শিরোমণির প্রায় চার দশক বিস্তৃত বিচারহীনতার অধ্যায়ের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার শুরু হয়েছে এখন, এবং আইন তার নিজের গতিতে চলবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যেটা লক্ষণীয় তা হল, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের এবং তাঁর গ্রেফতারের পর থেকেই মিডিয়ায়, উইকিপিডিয়ার মতো উম্মুক্ত বিশ্বকোষগুলোতে (যে বিষয়ে পরে একসময় লেখার ইচ্ছে আছে), এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু কিছু প্রচারণা চালানো হচ্ছে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে যে দু'টো বিষয় বারবার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে গোলাম আযমের অনুসারী এবং নিযুক্ত আইনজীবীরা সেগুলো হল: (ক) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধের বিষয়টি একটি মীমাংসিত ইস্যু, কারণ ১৯৯৪ সালে তাঁর নাগরিকত্ব মামলার সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে তেমনটিই নাকি বলা হয়েছে; (খ) গোলাম আযমের বয়স এখন ৮৯ বছর, এবং এমন বয়স্ক একজন মানুষকে বিনা জামিনে গ্রেফতার করে হেফাজতে রাখা বা বিচার করা ঠিক না। দুই ভাগে ভাগ করে নেয়া এই পোস্টটিতে এই দু'টো বিষয়ের ওপরই আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। কিন্তু তার আগে পাঠক এক নজরে দেখে নিন গোলাম আযমের মামলার বিষয়ে এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত ঠিক কী কী ঘটেছে: ১৫ জুলাই ২০১০: আসামী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্য শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্তের উদ্দেশ্য -- আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ধারা ৩(২)-এর আওতায় উল্লেখিত অপরাধসমূহে অভিযুক্তের সংশ্লিষ্টতা যাচাই। ৩১ অক্টোবর ২০১১: তদন্ত শেষে আসামীর বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট, অন্যান্য তথ্য প্রমাণ, এবং আলামত তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন অফিসে দাখিল করা হয়। ১২ ডিসেম্বর ২০১১: প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইবুনালের কাছে আসামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (formal charge) দাখিল করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর ২০১১: অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অভিযোগসমূহ আমল গ্রহণের (cognizance) জন্য ধার্য এই দিনে ট্রাইবুনাল অভিযোসমূহ আমলে নেয়ার পরিবর্তে তা আবার প্রসিকিউশনের কাছে ফেরত পাঠান। কারণ, দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি সঠিক বিন্যাসে (not in form) উপস্থাপিত হয়নি। ৫…

গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়ের করা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগসমূহ খণ্ডন করে ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, যা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেকর্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এখানে তাঁর বক্তব্যের বঙ্গানুবাদ।

গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশন বাংলাদেশে বর্তমানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে সকল পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল -- বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিচারে অভিযুক্তের অধিকার কতটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে। এই বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পূর্বেই ট্রাইবুনালের প্রক্রিয়াকে সমালোচনা করে বিস্তারিত আইনি ব্রিফ জমা দেয়া হয়। ৩১ তারিখে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শুনানির লক্ষ্য ছিল ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়ের করা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের এই সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই। আসামী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে টোবি ক্যাডম্যান বক্তব্য রাখেন। বিপরীতে ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, যা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেকর্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কীভাবে তদন্ত ও বিচারের উন্নত মানদণ্ডের নীতিসমুহ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে তা বর্ণনা করেন।মূল ইংরেজিতে দেয়া বক্তব্যটি প্রথম প্রকাশিত হয় আইসিএসএফ এর ব্লগে যা থেকে আইসিএসএফ অনুবাদ টিমের সদস্যবৃন্দ বাংলায় অনুবাদ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলোর প্রতিনিয়ত বিচারের মান নিয়ে করা মিথ্যাচারে যাঁরা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়ী এবং একই সাথে যাঁরা পুরো পক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেতে চান লেখাটি তাঁদের কাজে লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ডেলিগেশনের সামনে পুরো শুনানিটিতে সকল পক্ষের বক্তব্য নীচের এই ভিডিও থেকেও দেখে নেয়া যাবে: --------------------------------------------------- বাংলাদেশ বিষয়ক সভা: যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জবাবদিহিতা প্রসঙ্গে মতবিনিময় দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের সম্পর্কবিষয়ক কমিটি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ৩১ জানুয়ারি ২০১২ কক্ষ ১ই-২, আলতেইরো স্পিনেল্লি ভবন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ব্রাসেলস বক্তব্য - এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ________________________ ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সন্মানিত সদস্যবৃন্দ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:   ১. প্রথমেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনের সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেবার জন্য। বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের অপরাধসমূহের বিচারের দাবীকে সবসময় সমর্থন জানিয়ে আসার জন্যও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ইয়োরোপীয় পার্লামেন্টে ইতঃপূর্বে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা, বিশেষ করে ২০০৫ সালে যখন আপনারা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের সন্মুখীন করার দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।   ২. এছাড়াও ধন্যবাদ জানাই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ (ICDB) এবং বাংলাদেশ সাপোর্ট…

ড. ইউনূস কি ভারতের ত্রাণকর্তা? এমন একটি প্রশ্নই মনে জাগতে পারে চলতি সংখ্যা লাইফস্টাইলস পড়লে বা এর প্রচ্ছদ দেখলে।...

ড. ইউনূস কি ভারতের ত্রাণকর্তা? এমন একটি প্রশ্নই মনে জাগতে পারে চলতি সংখ্যা লাইফস্টাইলস পড়লে বা এর প্রচ্ছদ দেখলে। লাইফস্টাইলস একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকা। অনেকে বলেন, বিশ্বরাজনীতিতেও এ পত্রিকার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই ম্যাগাজিনের চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদে এসেছেন ড. ইউনূস। প্রচ্ছদেই লেখা হয়েছে, ‘ফার্স্ট হি সেইভড ইন্ডিয়া। নাও হি’জ ওয়ার্কিং অন দ্য রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড। দ্য ফাদার অব মাইক্রোক্রেডিট, মুহাম্মদ ইউনূস।’ প্রচ্ছদে এবং ভেতরেও দেখা যাচ্ছে, ইউনূস তার ক্ষুদ্র ঋণমনস্ক পুরানো গ্রামীণ চেক-এর পোশাক ছুড়ে ফেলেছেন। পত্রিকার ভেতর সাক্ষাৎকারটির শুরুতে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি নেহেরু ক্যাপপরিহিত ইউনূসকে! ছবিসমেত মাত্র কয়েকটি পৃষ্ঠা ব্যবহার করা হয়েছে ইউনূসের পেছনে। কিন্তু আড়ম্বরটি চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এতে নেই বললেই চলে, বরং সামাজিক ব্যবসা, আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে ইউনূসকে তুলে ধরাই এর মূল প্রসঙ্গ। প্রমোশনাল এই সাক্ষাৎকার, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন উল্লেখ করার মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে (গ্যাবরিয়েল ইরেম, বিল ক্লিনটন, রিচার্ড গেরে, নিরো প্রমুখ) তোলা ইউনূসের বিভিন্ন ছবি রয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারটিতে অথবা এর ভূমিকায় অথবা অন্য কোথাও কিন্তু লেখা নেই, কীভাবে তিনি প্রথমে ভারতকে রক্ষা করেছেন, অথবা ক্ষুদ্র ঋণের জনকই বা তিনি হলেন কী করে! বুঝতে পারছি না, পত্রিকাটি এরকম করেছে কেন। কানাডায় অবস্থানরত আমার এক বন্ধু পত্রিকার অফিসে টেলিফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ড. ইউনূস তো বাংলাদেশের নাগরিক, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তিনি মূলত সেখানেই কাজ করেছেন। তিনি কীভাবে ইন্ডিয়াকে রক্ষা করলেন? পত্রিকাটি তাকে এভাবে উপস্থাপন করছে কেন? উত্তরে তাকে বলা হয়েছে, ‘আপনি আপনার বক্তব্য লিখিতভাবে জানাতে পারেন।’

[...] খুন-ধর্ষণের বিচার হতেই হবে, সেটাই কি ইসলাম নয়? সেটা তখনই “ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” হয় যখন খুনী ধর্ষকেরা ইসলামের মালিকানা হাতিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। অপরাধীরা চিরকাল ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”, “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” এসব বাহানায় নিজেদের শুধু রক্ষাই করেনি বরং প্রতিপক্ষকে হেনস্থা ও হত্যা করেছে। কারবালায় শিশু-নারী সহ ইমাম হুসেইন (রা.)-কে নৃশংসভাবে হত্যার আগে ‘‘ইসলাম রক্ষা”র হুজুগ এরাই তুলেছিল। ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই কাবার দেয়াল ভেঙে তার চাদর আগুনে পুড়িয়েছিল, হজরত জুবায়েরকে কাবার ভেতরে হত্যা করেছিল। আজ গণহত্যা ও গণধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধের বিচার বানচাল করতেও এরা ইসলামকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে । [...]

‘‘অথচ ক’দিন আগে গো-আযমকে দেখলাম হেঁটে মসজিদে যেতে যেতে টিভি ক্যামেরায় কথা বলছে” -- শরিফ এ. কাফি উল্লাসে ফেটে পড়েছে জাতি। অবশেষে বিচারের লাঠি একাত্তরের গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের তাড়া করেছে । যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামাতের তখনকার আমীর গোলাম আজম ও কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের বিচার চলছে। জামাত ও তার সহযোগীরা দাবী করছে এ বিচার নাকি ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। কী নির্লজ্জ মিথ্যা কথা! খুন-ধর্ষণের বিচার হতেই হবে, সেটাই কি ইসলাম নয়? সেটা তখনই “ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” হয় যখন খুনী ধর্ষকেরা ইসলামের মালিকানা হাতিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। সেজন্যই নিজামী চটগ্রামের এক বক্তৃতায় বলেছিল জামাতের সমালোচনা করা নাকি ইসলামের সমালোচনা করা। স্পর্ধা দেখুন!! ওদের ভয়ংকর ইসলামি ব্যাখ্যাই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র যা আসলে মৌদুদিবাদ। সেজন্যই মৌদুদী'র উত্থানকালে ভারতবর্ষের বহু মওলানা তাঁকে কাফের বলেছেন, দজ্জাল বলেছেন। সৌদি পেট্রোডলার আর অপরাজনীতির ষড়যন্ত্র না হলে এই অপশক্তির মৃত্যু তখনই হত। বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি না হলে তাদের কোথাও জায়গা হত না, চেহারায় জনগণের ঘৃণার থুথু নিয়েই মরতে হত। এদের কারণেই রসুল বলেছেন: ‘‘উম্মতের জন্য আমার সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ পথভ্রষ্টকারী ইমামদের নিয়া” -- সহি ইবনে মাজাহ ৫ খণ্ড ৩৯৫২। অপরাধীরা চিরকাল ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”, “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” এসব বাহানায় নিজেদের শুধু রক্ষাই করেনি বরং প্রতিপক্ষকে হেনস্থা ও হত্যা করেছে। কারবালায় শিশু-নারী সহ ইমাম হুসেইন (রা.)-কে নৃশংসভাবে হত্যার আগে ‘‘ইসলাম রক্ষা”র হুজুগ এরাই তুলেছিল। ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই কাবার দেয়াল ভেঙে তার চাদর আগুনে পুড়িয়েছিল, হজরত জুবায়েরকে কাবার ভেতরে হত্যা করেছিল। “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই ইমাম বুখারীকে আমৃত্যু নির্বাসনে পাঠিয়েছে, ইবনে খালদুনের মত "ইতিহাস বিজ্ঞানের পিতা"কে দেশে দেশে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর মত দরবেশকে "কাফের" ফতোয়া দিয়েছে। এরা একাত্তরের ঘাতক, এরা ধর্মদস্যু, এরা আমেরিকা-ইউরোপ যেখানেই পালিয়েছে, আলখাল্লা-দাড়ি-টুপি পরে ইসলামি সংগঠনে ঢুকে পড়েছে। লন্ডনের আবু সাঈদ, মইনুদ্দীন, নিউ ইয়র্কের আশরাফ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আজ গণহত্যা ও গণধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধের বিচার বানচাল করতেও এরা ইসলামকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে । ইসলামের ধ্বজাধারী এই ধর্মদস্যুরা মিথ্যের পর মিথ্যেও বলে চলেছে। অথচ কোরান কতবার বলেছে সত্য গোপন না করতে, মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে -- (বাকারা ১০, ৪২ ও ২৮৩, মায়েদা…

...২০১২-এর ১১ জানুয়ারিও হয়তো ২০০৭ সালের পুরানো চেহারায় ফিরে যেতে পারত। এ ধরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটানোর মূল ধাত্রী বলে যাদের মনে করা হয় তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টাও হয়েছে নানাভাবে। ‘সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তারা গুম খুনের শিকার হচ্ছেন’, রাজনৈতিক অঙ্গনের এরকম বক্তব্যে ও লিফলেটে সেনাবাহিনীতে ভীতি-অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে তো সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি বর্তমান সরকারকে অপসারণের আহ্বানই রাখা হয়েছিল। ...

একটি ক্রান্তিদিনই বলা যায় বোধকরি এবারের ১১ জানুয়ারিকে। এ দিনে আমাদের মনে হয় ২০০৭ সালের কথা, সামরিক বাহিনীশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থানের কথা। সামরিকতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই সম্ভব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পথ বন্ধ করা-এরকম একটি পাকিস্তানবাদী, সামরিকতান্ত্রিক ধারণা ফিরে আসতে শুরু করে ওই ১১ জানুয়ারি থেকে। এবং এ ধারণার পালে বাতাস যোগাতে থাকেন সুশীল নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। সেই অর্থে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সুশীলতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের গাঁটছড়া বাঁধার দিবসও বটে। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারিও একইভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। জনগণ দেখেছে, এদিন একদিকে গোলাম আযম গ্রেফতার হচ্ছেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাচ্ছেন, একইসঙ্গে আবার বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, সরকার ‘আইএসপিআরকে দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’ রাজনীতির এরকম বড় বড় ঘটনাগুলির বাইরে ওইদিন দেখা গেছে, সিআইডি অভিযোগপত্র দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ খুনের মামলায় ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নূরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বাদ দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছেন নূরন্নবী শাওনকে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। এখন জানা যাচ্ছে, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার মোঃ আবদুল হালিম বিয়ে করেছেন এমপি শাওনের আপন মামাতো বোনকে (মানবজমিন, ১ মাঘ ১৪১৮)। নারায়নগঞ্জে এইদিন ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮) সরকার আমাদের আবারও নিশ্চিত করেছে, গণতন্ত্র আর সরকারি গণতন্ত্র দু’ রকম গণতন্ত্র, সরকারি গণতন্ত্রে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন জায়েজ করা আছে। অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তবে মনে হচ্ছে, এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল আইএসপিআর’এর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র বিবৃতিটি। এ বিবৃতি থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশের প্র্রধান বিরোধী দল বিএনপি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা মনে করে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকায় আইএসপিআর’কে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বেসামরিক পর্যায়ে যেমন গুম খুন চলছে, সামরিক সামরিক কর্মকর্তারাও তেমনি গুম হয়ে যাচ্ছেন (প্রথম আলো, ২৭ পৌষ ১৪১৮)। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি’র এ অভিযোগ খুবই স্পর্শকাতর অভিযোগ। সামরিক বাহিনীতে কারও বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে অপরাধ বিচারের জন্যে বাহিনীটির নিজস্ব আইন আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.