...দুদেশের মুখচেনা রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই বোধকরি চাইবে না, একটি পরিবেশবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের এজেন্ডা নিয়ে দুদেশের মানুষ একই মঞ্চে উঠুক, একই ভাষায় কথা বলুক, ঐক্যবদ্ধভাবে দুটি সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুক।...

ভিলিংগিলি দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। সেই দ্বীপের অভিজাত রিসোর্ট সাংরিলাতে গত ২৬ কার্তিক (১০ নভেম্বর) সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আশার বাণী শুনছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছ থেকে। তিনি কি তখন জানতেন, তিস্তা চুক্তি স্থগিত করার পর বাংলাদেশকে আশাহত করার মতো আরো একটি ঘটনা ঘটিয়েছে ভারত? তিনি কি জানতেন না, ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ চুক্তি করে বসে আছে? যদি তিনি না জেনে থাকেন, তা হলে সেই দায় কার? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের? নাকি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের? নাকি কোনো উপদেষ্টার? এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা কখনই পাব না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক জবাবদিহিতার যে ঐতিহ্য গড়ে ওঠার কথা, গড়ে তোলার কথা, আমাদের রাজনীতিকরা সে ব্যাপারে কখনই মনোযোগী হননি। কোনোদিন হবেন বলে মনেও হয় না। তাই ভারত কেন এভাবে বাংলাদেশকে কোনো কিছু না জানিয়েই হঠাৎ বিনিয়োগ চুক্তি করে বসল, সরকারের কোনো প্রতিনিধি তার ব্যাখ্যা দেবেন বলে আমাদের মনে হয় না। বরাক নদের ওপর দিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ ও একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে দিল্লীতে যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে গত ৭ কার্তিক (২২ অক্টোবর)। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে টিপাইমুখে বাঁধের ব্যাপারে ভারত কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, এ রকম আশ্বাস পেয়ে আমাদের সরকার-প্রতিনিধিরা ২০১০ সাল থেকে বগল বাজিয়ে আসছেন। সরকারের সেই বগলসংগীত এতই শ্রুতিমধুর ছিল যে, বাঁধ প্রতিরোধের জন্য যেসব রাজনীতিক ও সুশীল ভাইয়েরা নানা কিসিমের কমিটি গড়ে তুলেছিলেন, তারাও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গত ৫ অগ্রহায়ণ (১৯ নভেম্বর) মিডিয়া আমাদের সবার ঘুম ভাঙিয়েছে। ঘুমভাঙা চোখে আমরা জানতে পেরেছি, তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকার যেমন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, বরাক নদীতে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় রেখেছে। এই নিয়ে কি আমাদের মতো আমজনতার বেশি কিছু বলা বা লেখা উচিত হবে? শেখ হাসিনা গত ৫ অগ্রহায়ণ (১৯ নভেম্বর) রাতে তার শ্রুতিমধুর কণ্ঠে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বদলে বিদ্যুতের ভর্তুকি বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা করায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ তিনি; তাই বিদ্যুৎ বিভাগে তিনি আদেশ দিয়ে রেখেছেন, এরপর থেকে কেউ সমালোচনা করে কোনো কিছু লিখলে সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে। ‘বাবু যত বলে পারিষদ দলে…

...সামাজিক আন্তর্জালগুলো ব্যবহার করে সংগঠিত এই তরুণ-তরুণীরা তখনো জানতেন না, নতুন এক ইতিহাস লিখতে যাচ্ছেন তারা। তারা জানতেন না, নতুন এই ইতিহাস পাল্টে দিতে চলেছে গণতন্ত্রের ধারণা, বদলে দিতে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের প্রক্রিয়া। তারা জানতেন না, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা আর কার্যক্রমও নতুন করে খতিয়ে দেখার পরিসর তৈরি করবে তাদের এই আপাতদৃষ্টিতে অসংগঠিত ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন।...

শীত ছুঁই ছুঁই সেপ্টেম্বরের ১৭-তে নিউইয়র্কের জুকোট্টি পার্কে মাত্র শ দুয়ের মতো তরুণ-তরুণী অবস্থান নিয়েছিল তাঁবু, টর্চলাইট ইত্যাদি নিয়ে। তার আগে তারা সারাদিন পদযাত্রা করেছে বিভিন্ন রাস্তায়। তখন তাদের সঙ্গে ছিল আরো অনেক সঙ্গী। তাদের সবার লক্ষ্য, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ওয়াল স্ট্রিট দখল করা। ওয়াল স্ট্রিটের কাছে জুকোট্টি পার্কে অবস্থান নেয় তারা সবাই- কেননা অন্য কোনো পার্কে অবস্থান নেয়া সম্ভব ছিল না, ব্যক্তিমালিকানাধীন এ পার্কটিই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা, যেখানে অবস্থান নিলে রাষ্ট্রশক্তি জোর খাটিয়ে তাড়িয়ে দিতে পারবে না রাতের বেলা। কিন্তু সন্ধ্যার পর যতই সময় গড়াতে শুরু করল, বিক্ষোভকারীর সংখ্যাও ক্রমেই কমতে শুরু করল, হাজারখানেক থেকে তা কমে এসে দাঁড়াল শ'দুয়েকে। কেননা অবস্থান নেয়ার অনুমতি থাকলেও পার্কে তাঁবু টাঙানোর অনুমতি ছিল না। কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পর এমন হলে হতোদ্যমই হওয়ার কথা কিন্তু হতাশ হননি তারা। যদিও সামাজিক আন্তর্জালগুলো ব্যবহার করে সংগঠিত এই তরুণ-তরুণীরা তখনো জানতেন না, নতুন এক ইতিহাস লিখতে যাচ্ছেন তারা। তারা জানতেন না, নতুন এই ইতিহাস পাল্টে দিতে চলেছে গণতন্ত্রের ধারণা, বদলে দিতে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের প্রক্রিয়া। তারা জানতেন না, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা আর কার্যক্রমও নতুন করে খতিয়ে দেখার পরিসর তৈরি করবে তাদের এই আপাতদৃষ্টিতে অসংগঠিত ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। তারা এ-ও জানতেন না, যে যে মতাদর্শেরই হোন না কেন, এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তারা আবারো জীবন্ত করে তুলছেন পুরনো এক মুক্তিকামী চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক নেতাকে - কার্ল মার্কসকে। ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল কর’ আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের কাউকে কাউকে প্রেরণা জুগিয়েছে আরব বসন্ত। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে এ রকম একটি বিক্ষোভের পরিস্থিতি দানা বাঁধতে শুরু করে প্রকৃতপক্ষে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাভাবের পর থেকেই-যা ২০০৯ সালে আমেরিকায়, পরে যুক্তরাজ্যেও তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করে। ১৯৩০-এর দশকের বিশ্ব অর্থনীতির মহামন্দার পর যেমন বিশ্বের দেশে দেশে মুক্তির আন্দোলন দানা বেঁধেছিল, ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়েও তেমনি মানুষের মনে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে নতুন করে। করপোরেট মিডিয়াগুলো ‘আরব বসন্ত’কে বড় করে তুললেও বিক্ষোভের সূচনা ঘটে মূলত ইউরোপেই, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, গ্রিস ও স্পেনে। আরব দেশগুলোতে বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় করপোরেট মিডিয়াগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, ইউরোপের বিক্ষোভকে…

নামাজ পড়লেও লিখি না পড়লেও লিখি। শুয়োর খেলেও লিখি না খেলেও লিখি। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশটা কে?[...]

আমি স্বাধীন তাই লিখি। লিখে কিছু পাই বা না পাই লিখি, শুধু পাই পয়সার জন্য লিখি না। পাতা পেলে লিখি ব্লগ পেলেও লিখি। নামাজ পড়লেও লিখি না পড়লেও লিখি। শুয়োর খেলেও লিখি না খেলেও লিখি। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশটা কে? পুলিশ মানে কি পরাধীনতার শৃঙ্খল? যদি পুলিশ তাই হয় তাহলে আমাকেও ঘোষণা করতে হবে আমি স্বাধীন তাই পরাধীনতার শৃঙ্খল হাতে বসে থাকা সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখি। বাংলাদেশের কাছে সে-স্মৃতি মোটেই তেমন পুরনো নয়, এই তো ৪০ বছর আগেই তো আমরা ঝাড়ে-বংশে পরাধীন ছিলাম। কেউ বলতে পারবে না বাংলাদেশের লেখকরা সেই পরাধীন দিনে লেখেননি, লিখেছেন এবং তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। রাষ্ট্র এখন বাংলাদেশ, এই চল্লিশ পেরনো বাংলাদেশ যদি আজ চালশের ছানিতে 'স্বাধীনতা বিরোধী'দের বিরুদ্ধে তসবিহ জপতে জপতে নিজেরাই আরো বৃহত্তর অর্থে পুলিশের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধিতার চর্চা করতে চায় তাহলে ওই কুলাঙ্গার গুণধর এএসপি রফিকুলের কথার সূত্রে আমরা যারা স্বাধীনতার জন্য লিখি তাদের বলতেই হবে : রাষ্ট্র, আমরা তোমার বিপক্ষে, এসো আমাদের নির্যাতন কর। যেজন্য চীনকে উপহাস করি -- পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শাসকদের সাধারণ মানুষের যম বলি -- যেজন্য প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সত্তার সাধনা করি : সেই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে সেই হাত সন্ত্রাসীর হাত বলেই বিবেচিত হবে। ২০০১--২০০৮-এর অস্বাভাবিক সময়ের বিরুদ্ধে যদি দাঁড়াতে চান যদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সত্যিই লড়তে চান মত প্রকাশের স্বাধীনতায় শস্য পরিমাণ হস্তক্ষেপ করবেন না। আমার মতের সমালোচনা করুন, যদি আমার মত বিধ্বংসী ও বিস্ফোরক বা মানহানিকর হয় মামলা করুন। কিন্তু আমার চোখ বাঁধবেন না, মুচলেকার অসভ্যতা দেখাবেন না, আমাকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করবেন না। জাতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে 'গুলাগ' সৃষ্টি করবেন না। উচ্চশিক্ষায় সরকার বিনিয়োগ করবে, না অভিভাবক বিনিয়োগ করবে, না দেশি-বিদেশি আর্থিক সংস্থা বিনিয়োগ করবে এটা পুরোপুরি 'পলিসি'র ব্যাপার -- 'পলিসি'র ব্যাপার নিয়ে বাকতিণ্ডা খুবই স্বাভাবিক, সেই স্বাভাবিকতার একটা অপরিহার্য কর্মপদ্ধতি হল সৃষ্ট অসন্তোষের ভেতরে পৌঁছে অসন্তোষের প্রকৃতিটাকে আগে বুঝতে পারা। তা না করে অসন্তোষ ছত্রভঙ্গের পুলিশি তৎপরতা 'দানা বাঁধতে দেব না' নামক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ ঘটায়। যা যেকোনো সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকেই সবার আগে সামনে নিয়ে আসে। এখন সরকার…

নিকট অতীতে কারো মৃত্যু আমাকে এতটা বিষণ্ণ করেনি। মৃত্যু আমাদের সবারই স্বাভাবিক পরিণতি, কিন্তু তারেক মাসুদ মারা গেলেন তাঁর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার বহু আগেই। [...]

নিকট অতীতে কারো মৃত্যু আমাকে এতটা বিষণ্ণ করেনি। মৃত্যু আমাদের সবারই স্বাভাবিক পরিণতি, কিন্তু তারেক মাসুদ মারা গেলেন তাঁর কাজ শেষ হওয়ার বহু আগেই। আর্ট ফিল্ম কপচানো চলচ্চিত্রকর্মীর তো অভাব নেই আমাদের, অভাব আছে কাজের লোকের। তারেক মাসুদ রক্ষণশীল মাদ্রাসায় পড়েছেন, ‘ক্লাসিক’ পড়ে বড় হননি। সেখান থেকে নিউইয়র্কে গিয়ে ফিল্ম বানিয়ে ফেললেন, ফালতু abstract ফিল্ম নয়, কাজের ফিল্ম। ৭১-এ ‘জয় বাংলা’ বলা সাধারণ মানুষের ছবি, শরণার্থী শিবিরের ছবি, লুঙ্গি পরা মুক্তিযোদ্ধার ছবি। অন্যের তোলা raw ফিল্ম edit করে মুক্তির গান, কোন মৌলিক সৃষ্টিশীল কাজ নয়, কিন্তু কাজের কাজ। আমরা যারা ৭১-এর পরে জন্ম নিয়েছি তারা দেড় ঘণ্টাতেই বুঝে ফেললাম কী অসাধারণ স্বপ্নময় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়টা। তারেক মাসুদ মাটির ময়না তৈরি করেছেন বহু পরিশ্রমে, ছবি তৈরির পরিশ্রম তো আছেই, তার চেয়েও বেশি পরিশ্রম গবেষণাতে। ৭১-এর ঠিক আগের বাংলাদেশের ডিটেল ফুটিয়ে তোলা হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ব্যাপার। সাহিত্য-নির্ভর ছবি তো নয়, ইতিহাস-নির্ভর ছবি, এমন ছবি তৈরি সব দেশেই কঠিন, বাংলাদেশে তো আরও কঠিন। কাগজের ফুল-এর প্রেক্ষাপট আরও জটিল (৪০-এর দশকের বাংলাদেশ)। দু-চারটা ফরাসি আর রুশ ছবি দেখে আর কিছু বই পড়ে এসব ছবি তৈরি করা যায় না, দেশের প্রতি, দেশের ইতিহাসের প্রতি নাড়ির টান আর আসুরিক পরিশ্রমের ক্ষমতা থাকলেই এমন ছবি তৈরি করা যায়। আমাদের দেশ জীবননান্দের ‘রূপসী বাংলা’ নয়, আবার ‘মধ্যপন্থী মুসলিম’ দেশও নয়, আমাদের দেশ ‘জয় বাংলা’ আর ‘ইনশাআল্লাহ্’র দেশ। আমাদের ইতিহাসের নিজস্ব dynamics আছে, সেটা আমরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ৪৭-এর চাষা আর জেলের পূর্ব বাংলা মাত্র ২৪ বছরের মধ্যে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র তৈরি করে ফেলল, কী করে এই magic সম্ভব হল? কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা এখনো বাংলাদেশ বলতে ৪০-এর দশকের ‘নাদের আলীর’ পূর্ববঙ্গই বোঝেন, পশ্চিমারাও বাংলাদেশের কিছুই বোঝেন না (বন্যা, গ্রামীণ ব্যাংক, ইসলাম ইত্যাদি মিলিয়ে একটা কিম্ভুতকিমাকার ধারণা তাঁদের আছে)। তারেক মাসুদ নিজে বাবার আদেশে পশ্চাৎপদ মাদ্রাসায় পড়েছেন, আবার মুক্তিযুদ্ধের পরে সেই বাবাই ভুল বুঝতে পেরে তাঁকে মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। তাঁর নিজের জীবনই আমাদের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ। নিজের চোখে যেভাবে তিনি বাংলাদেশকে দেখেছেন সেভাবেই ছবি তৈরি করেছেন। ৭১-এর বাংলাদেশ, ৬০-এর দশকের বাংলাদেশ, আধুনিক বাংলাদেশ, শুধু শিল্পসম্মত ছবি নয়,…

ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বা পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে একটি পোস্ট। [...]

চোখ দিয়ে আমি প্রথম কী দেখেছি? তা মনে থাকবার কোনো কারণ নাই। আম্মার সাথে ছোট্টবেলায় ফকিরাপুলের একটা দোকানের ভোজ্যতেল কিনবার সময় তেলচিটচিটে হটপেটিস-এর উপর হলুদ আলো থেকে শুরু করে প্রিয়মানুষের মুখে ফুটিফুটি লজ্জা… সদ্যজন্মানো সন্তানের হাতগুলিতে অযথাই অপূর্ব সব ভাঁজ… আষাঢ়মাসের লটকানরঙ মেঘ… রাতের আকাশে অসীম পর্যন্ত তারার নীহার… এইসবকিছু দেখতে দেবার জন্যে আমি আমার চোখের কাছে ঋণী (পদার্থবিদ্যার বই আমাদের জানিয়েছিল, সুস্থ মানুষের দৃষ্টিসীমা নাকি অসীম)। অপাংক্তেয় জিনিস থেকে শুরু করে জীবন-ধন্য-করা জিনিস অব্দি সবই এই চোখ দিয়ে দেখা। মনের দিকে যাওয়া। বুদ্ধির ভিতরে তার বিশ্লেষণ। ধারণক্ষমতার ভিতর তার পরিস্রবণ। আমার চোখ আমার সম্পদ। আমার বাকি শরীরটাও তাই, আমার ঈশ্বরদত্ত উপহার। আমার পৃথিবীর সকল দান গ্রহণের যন্ত্র। এই মানবশরীর আমার সার্বভৌম নিজ ভূখণ্ড। কত না যত্নে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের অন্ধকার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে এই শরীর পলে পলে তৈরি হয়েছে। এর উপর আমার অধিকার সর্বোচ্চ। সৌদি টিভি প্রেজেন্টার রানিয়া আল বা’জ-এর শরীরের উপর যেমন তাঁর অধিকার সর্বোচ্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের শরীরের উপর যেমন তাঁর অধিকার সর্বোচ্চ। যে বা যারা এই অধিকার নষ্ট করেছে বা করে চলেছে বা করতে উদ্যত, তাদের জন্যে ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্‌মুরাবি খ্রীস্টের জন্মেরও সতেরশ বছর আগে নিয়ম করে গেছেন, তুমি নিজের শস্যক্ষেতে সেচ দিতে গিয়ে অপরের শস্য নষ্ট করলে তার জন্যে দণ্ডিত হবে, তোমার নষ্টচোখের বিনিময় আরেকটি চোখ (বিনষ্টকারীর), তোমার উৎপাটিত দাঁতের বিনিময় আরেকখানা দাঁত (পীড়নকারীর)… আমি ভাল কি মন্দ, আমি সৎ কি অসৎ, আমি সহিষ্ণু কি অসহনশীল — আমার অঙ্গহানির অধিকার কারো নেই। যে আমার রাজ্যে অনধিকারবলে প্রবেশ করবে, আমার ঈশ্বরের দানকে ভাঙবে, মচকাবে, মটকাবে, দলবে, সে যেন আমার দেশে আমার পরিবারের সামনে আমার প্রতিবেশীর সামনে কোনো ওজর দেবার সাহস না পায়। শুনতে একরকম অমীমাংসিত নিরুচ্চারিত এবং উপেক্ষিত প্রার্থনার মতন শোনায় এই আশা। কেননা ছোটবেলা থেকে মেয়েশিশুরা সব দেশেই ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের কমবেশি প্রকাশ দেখে দেখে অভিজ্ঞ — নাওয়াল আল সাদায়ী-র দেশে তারা আপনজনের হাতে (মামা-চাচা-নানা-দাদা-খালু কে নয়) ধর্ষিত হয় আর বাকিজীবন ভয়ে থাকে এই পুষ্পদলনের ইতিহাস স্বামী আবিষ্কার করলে কী হবে, রানিয়া আল বা’জ-এর দেশে তারা বোনেরা মিলে রাতের আঁধারে রেডিও মন্টিকার্লোতে গান শুনে নাচে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.