চোখ দিয়ে আমি প্রথম কী দেখেছি? তা মনে থাকবার কোনো কারণ নাই। আম্মার সাথে ছোট্টবেলায় ফকিরাপুলের একটা দোকানের ভোজ্যতেল কিনবার সময় তেলচিটচিটে হটপেটিস-এর উপর হলুদ আলো থেকে শুরু করে প্রিয়মানুষের মুখে ফুটিফুটি লজ্জা… সদ্যজন্মানো সন্তানের হাতগুলিতে অযথাই অপূর্ব সব ভাঁজ… আষাঢ়মাসের লটকানরঙ মেঘ… রাতের আকাশে অসীম পর্যন্ত তারার নীহার… এইসবকিছু দেখতে দেবার জন্যে আমি আমার চোখের কাছে ঋণী (পদার্থবিদ্যার বই আমাদের জানিয়েছিল, সুস্থ মানুষের দৃষ্টিসীমা নাকি অসীম)। অপাংক্তেয় জিনিস থেকে শুরু করে জীবন-ধন্য-করা জিনিস অব্দি সবই এই চোখ দিয়ে দেখা। মনের দিকে যাওয়া। বুদ্ধির ভিতরে তার বিশ্লেষণ। ধারণক্ষমতার ভিতর তার পরিস্রবণ।
আমার চোখ আমার সম্পদ। আমার বাকি শরীরটাও তাই, আমার ঈশ্বরদত্ত উপহার। আমার পৃথিবীর সকল দান গ্রহণের যন্ত্র। এই মানবশরীর আমার সার্বভৌম নিজ ভূখণ্ড। কত না যত্নে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের অন্ধকার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে এই শরীর পলে পলে তৈরি হয়েছে। এর উপর আমার অধিকার সর্বোচ্চ। সৌদি টিভি প্রেজেন্টার রানিয়া আল বা’জ-এর শরীরের উপর যেমন তাঁর অধিকার সর্বোচ্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের শরীরের উপর যেমন তাঁর অধিকার সর্বোচ্চ।
যে বা যারা এই অধিকার নষ্ট করেছে বা করে চলেছে বা করতে উদ্যত, তাদের জন্যে ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্মুরাবি খ্রীস্টের জন্মেরও সতেরশ বছর আগে নিয়ম করে গেছেন, তুমি নিজের শস্যক্ষেতে সেচ দিতে গিয়ে অপরের শস্য নষ্ট করলে তার জন্যে দণ্ডিত হবে, তোমার নষ্টচোখের বিনিময় আরেকটি চোখ (বিনষ্টকারীর), তোমার উৎপাটিত দাঁতের বিনিময় আরেকখানা দাঁত (পীড়নকারীর)…
আমি ভাল কি মন্দ, আমি সৎ কি অসৎ, আমি সহিষ্ণু কি অসহনশীল — আমার অঙ্গহানির অধিকার কারো নেই। যে আমার রাজ্যে অনধিকারবলে প্রবেশ করবে, আমার ঈশ্বরের দানকে ভাঙবে, মচকাবে, মটকাবে, দলবে, সে যেন আমার দেশে আমার পরিবারের সামনে আমার প্রতিবেশীর সামনে কোনো ওজর দেবার সাহস না পায়। শুনতে একরকম অমীমাংসিত নিরুচ্চারিত এবং উপেক্ষিত প্রার্থনার মতন শোনায় এই আশা। কেননা ছোটবেলা থেকে মেয়েশিশুরা সব দেশেই ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের কমবেশি প্রকাশ দেখে দেখে অভিজ্ঞ — নাওয়াল আল সাদায়ী-র দেশে তারা আপনজনের হাতে (মামা-চাচা-নানা-দাদা-খালু কে নয়) ধর্ষিত হয় আর বাকিজীবন ভয়ে থাকে এই পুষ্পদলনের ইতিহাস স্বামী আবিষ্কার করলে কী হবে, রানিয়া আল বা’জ-এর দেশে তারা বোনেরা মিলে রাতের আঁধারে রেডিও মন্টিকার্লোতে গান শুনে নাচে আর ধরা পড়ে বাপ-ভাইয়ের নিগ্রহের স্বীকার হয় — পয়সা না দিলে অপদার্থ স্বামীর ঘুষিতে ঘুষিতে ফেটে যায় রানিয়ার শ্রীময়ী মুখ। রুমানা মঞ্জুরের দেশ আরো এককাঠি সরেস। সেখানে লুকিয়ে রেডিও শুনে আমোদ পেতে হয় না। লুকিয়ে রাখতে হয় স্বামীর অনাচার-কদাচার-অসন্তোষ-গালিগালাজ-মারধোর, প্রকাশ করতে হয় শুধু স্বামীর ভালবাসার উপহার-উপচার-সুব্যবহারের নমুনা। নইলে ‘ভালো মেয়ে’ (অন্যায় যে সহে!) হওয়া যায় না, ‘অমায়িক’ হওয়া যায় না, বাঙালির সমাজ মেয়েদের খুশি হয়ে ঠকতে দেখতে ভালবাসে, প্রশ্ন না করে আড়ালে কেঁদে চোখ ফোলানো মেয়ে ভালবাসে, মেয়েদের অঙ্ক না জানাটা সেখানে এখনও রোমান্টিক।
একজন সুস্থ মানুষ বাকি জীবন প্রিয় সন্তানের বড় হতে থাকা পাকা হতে থাকা মুখ আর দেখবে না, সূর্যাস্তের আকাশ দেখবে না, বিদ্যার্জন করবার রাস্তা তার জন্যে আজ চূড়ান্ত বন্ধুর, আর আমরা এখনও অনেককে বলতে শুনছি, “নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে এমন ব্যবহারের, স্বামী হয়ে পরকীয়া কেমন করে সহ্য করবে?” আসলে আমরা তো বহুকাল ধরে অর্পিত সম্পত্তি (শত্রু সম্পত্তি) আইন বানিয়ে অন্যের স্থাবর সম্পত্তি গিলে খাওয়া জাত, আমরা অন্যের শরীরের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করবো কেমন করে?
কাকে আমাদের ঘৃণা ‘তৃণসম’ দহন করবে? যে পিশাচ স্ত্রীর দুইচোখ নষ্ট করে দেয়?
যে আত্ম-অসচেতন শিক্ষিত মহিলা দিনের পর দিন নির্দিষ্টসীমার শারীরিক-পীড়ন সহ্য করে?
যে বাপমা তাদের আদরনীয়া কন্যাকে সীমার ভিতরের নির্যাতন সহ্য করতে নিঃশব্দ সহযোগিতা করে (একটু আধটু হলে চেপে যাও, সয়ে যাও, এমন অনেক হয়?)?
যে পরিবার তার সদস্যকে তার ব্যাসের ভিতরেই নিজের রক্তে পিছলে পড়া থেকে বাঁচাতে অক্ষম?
যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান একটি শিশুকে বছরের পর বছর মায়ের প্রতি বাপের নিষ্ঠুর অত্যাচার দেখতে বাধ্য করে?
যে সামাজিক কাঠামো ‘বিবাহবিচ্ছেদ’কে এমন একটি দানবে পরিণত করে রেখেছে, যার ভোগে অমূল্য জীবন চলে যায়, আহুতি দিতে হয় মানুষের প্রতি (নিজের প্রতিও) মানুষের মৌলিক সম্মানবোধকে?
২১ জুন, ২০১১
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১২ comments
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৩ জুন ২০১১ (২:৪১ পূর্বাহ্ণ)
চমৎকার উপলব্ধি_ভালো লাগল লেখাটি।
ধন্যবাদ তানিয়া।
নায়েম লিটু - ২৩ জুন ২০১১ (৪:৪১ অপরাহ্ণ)
`শরীরের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করবো কেমন করে?`
এই প্রশ্ন থেকেই সময়টা অনুভব করা সম্ভব। আমরা মনে মনে নিজেকে যতো আধুনিক ভাবি না কেন, নিজেকে যতো আধুনিক মানুষ হিসেবে জাহির করি না কেন- নারীর শরীরের সার্বভৌমত্বই যদি স্বীকার করতে না পারি তবে তো সেই মধ্যযুগের পুরুষের সাথে আমাদের কি ভেদ? নারীর ক্ষমতায়ন নারীর অধিকার যা কিছুই বলি না কেন সব ফাকা বুলিতে পরিণত হবে যদি না শরীরের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা না করা যায়। ধন্যবাদ তানিয়া, আপনার লেখাটিতে শুনতে পেলাম সময়ের কণ্ঠ।
রায়হান রশিদ - ২৩ জুন ২০১১ (৬:২৫ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ তানিয়া। যদি ঠিক বুঝে থাকি লেখাটার দু’টো মূল থীম – এক. নিজ শরীরের সার্বভৌমত্ব, এবং দুই. আমাদের তথাকথিত সামাজিক সম্পর্কবোধ কিভাবে সহিংসতাকে লালন করে সেই বিষয়টি। শিরোনাম ‘আই ফর এন আই’ (চোখের বদলে চোখ) পড়ে তাই একটু হোঁচট খাচ্ছি।
হাম্মুরাবি কোড থেকে নীতিটি উদ্ধৃত করেছো, এটি কিন্তু শরিয়া-নির্ভর ফৌজদারী আইনেরও কথা। তাহলে প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি বিষয় বলি। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য ইরানী তরুণী বাহরামীর চোখমুখ এসিডে ঝলসে দিয়েছিল মোভাহেদী। বিচারে ইরানের আদালত রায় দিয়েছে মোভাহেদীর চোখমুখও বাহরামীর হাত দিয়ে এসিডে ঝলসে দেয়া হোক (http://bit.ly/jCKhf7)। বাহরামী তার এই ‘অধিকার’ বাস্তবায়ন করার জন্য ক্যাম্পেইন এ নেমেছে। বাহরামীর এই দাবীতে কিন্তু পৃথিবীর খুব কম অধিকার কর্মীই সমর্থন জানাতে পারছে।
এখানে কারণ দু’টো। প্রথমটি বলাই বাহুল্য, আর তা হল – মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোন নিষ্ঠুর ফোজদারী শাস্তির বিরুদ্ধে অবস্থান। বিরোধিতার দ্বিতীয় কারণটিই আসলে বেশী তাৎপর্যপূর্ণ। সেটি হল, একটি ক্ষেত্রে যদি শরিয়া-নির্ভর শাস্তিকে আমরা uphold করি, তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রে সেই একই শরিয়ার শাস্তিগুলো আমরা বাতিলযোগ্য বলবো কোন্ যুক্তিতে? যেমন ধরা যাক, শরিয়ামতে বিচার করলে ব্যভিচারের শাস্তি হল মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা কিংবা দোররা মারা, যা আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর বহু স্থানেই বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, এবং আমাদের অবস্থান তো তার বিরুদ্ধেই, তাই না? রুমানা-সাঈদ এর ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করলে দেখবে রুমানার সম্ভাব্য পরকীয়া (এর সত্যাসত্য বিষয়ে নাই বা গেলাম) ইত্যাদি বিষয়গুলো এক শ্রেনীর মানুষ বারবার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। চোখ উপড়ে নেয়ার মতো পৈশাচিক অপরাধের সাথে তুলনা করতে গিয়ে পরকীয়াকেও ‘সমান ঘৃণ্য অপরাধ’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কারণ, ওদের বিচারে আসলেই সেটা সমান ঘৃণ্য অপরাধ, এমনই মাত্রার অপরাধ যার শাস্তি হল মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে প্রাণে মেরে ফেলা, চোখ হারানো তো সেখানে কোন বিষয়ই না। সুতরাং, আমাদের মনস্থির করতে হবে আমরা কি চোখের বদলে চোখ চাই, এবং সেটা চাইতে গিয়ে তারই হাত ধরে মধ্যযূগীয় বাকি সব শাস্তিকেও কবর থেকে তুলে আনতে চাই কি না। আমি জানি রুমানার ক্ষেত্রে সহিংসতার মাত্রা এমনই বিবেকবিদারী যে সেখানে কোন যুক্তির পথকেই আর মানতে মন চায় না। কিন্তু এমন সংকটের সময়গুলোতেই কিন্তু আরও বৃহত্তর/সামগ্রিক প্রেক্ষাপটগুলো আরও বেশী প্রাসঙ্গিক এবং জরুরী হয়ে পড়ে।
বরাবরকার মতো তোমার এই লেখাটাও ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২৪ জুন ২০১১ (১২:০৩ অপরাহ্ণ)
আপনার এই মন্তব্যটি পড়ে আমি ভাবছিলাম, হ্যাঁ, এরকমই তো ভাবছিলাম কিন্তু আপনার মতো এতো স্বচ্ছভাবে নয়। তারপর আপনার মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে পোস্ট লেখকের মন্তব্য পড়ে মনে হল, রুমানার চোখের উপর এই নৃশংসতা দেখে আমাদের সমাজের ‘রক্তচক্ষু’র কোনো পরিবর্তন আসলেই কী হওয়া সম্ভব? আমার এক বন্ধু তো আমাকে ঘটনার পরপরই বলল, স্বামীরা এখন স্ত্রীকে খুব সহজেই বলবে দেখ হাসান সাঈদের মতো কিছু কিন্তু আমি করছি না — তোমাকে শুধু বোরখা পরতে বলছি, তোমাকে ওই পোষাকটা পরতে না করছি, ওই লোকটির সঙ্গে তোমাকে যেন আর না দেখি এরকম আরো নানাবিধ নিষেধ একের পর এক বলে যাবে তারা। মনে হল ঘরে ঘরে পর্দার অন্তরালে সত্যিই এমনই ঘটে যেতে পারে। আমাদের অবস্থান সত্যিই নাজুক। প্রতিটি অপরাধী যে নৃশংসতা নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের দ্বারা তো আর সম্ভব নয় ‘চোখের বদলে চোখ’ বলা — আমরা তো আইনের শাসনের দিকেই নিজেদের সৎ পক্ষপাত জারি রেখেছি, তাই আইনের সুবিবেচক ( অবশ্যই এক্ষেত্রে সুবিবেচনা এটা নয় যে স্ত্রী পরকীয়া করেছে তাই স্বামীর নৃশংসতার অপরাধ লঘু হয়ে গেছে বরং সুবিবেচনা এই যে পরকীয়া করুক বা যাই করুক স্বামী বা স্ত্রী বা সন্তান কেউই সেজন্য কারো উপর কোনো ধরনের অত্যাচার করতে পারে না) হস্তক্ষেপই আমরা চাই। এখন সেই হস্তক্ষেপের কালক্ষেপণ দেখেও আমরা বলতে পারছি না ‘হাতের বদলে হাত চাই’। আমরা সত্যিই সভ্যতার করুণ অংশে বসবাস করছি। আমাদের ওই এক সংগ্রাম থেকে চোখ ফেরালে চলবে না, নারী-পুরুষের সমান অধিকার বাস্তবায়নের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প আমাদের নেই। আর এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বাধা ধর্মকে জীবনের অনেক জায়গা থেকে বিদায় জানাতেই হবে। বিশেষত আমার মানবিক অধিকার কী? -তা জানতে আমি ধর্মের কাছে কেন যাব?
নূপুরকান্তি - ৬ ডিসেম্বর ২০১১ (১:১১ পূর্বাহ্ণ)
কারণ ধর্ম ছাড়া আপনি আর মানুষ থাকছেননা,ধর্ম আসার আগে মানুষ মানবিকতাপ্রাপ্ত হয়নি।ধর্মহীন হয়ে গেলে তাই আপনার মনুষ্যত্ব খারিজ হয়ে যায় এবং এ কারণে আপনাকে পিটিয়ে কুপিয়ে বা পাথর মেরে ধার্মিকেরা মেরে ফেলবার পথটিও পাকা হয়। ধর্মের কাছে আপনি যেতে না চাইলেও হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে,পরিত্রাণ নেই।
সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ২৪ জুন ২০১১ (৪:১৮ পূর্বাহ্ণ)
রায়হান ভাইয়া,
শরীয়া ল’তেও ‘আই ফর এন আই’ আছে, সেটা থাকবার পরও রানিয়া আল বা’জ কিন্তু তাঁর দুর্বৃত্ত স্বামীকে একরকম ক্ষমার দৃষ্টিতেই দেখেছেন পরবর্তীকালে। তাঁর মুখ এমন করে গুঁড়িয়ে দিতে চাননি যাতে ১৩টা অস্ত্রোপচার লাগে। আমার এই শিরোনামের উদ্দেশ্য হামমুরাবির কোড থেকে উদ্ধৃতি দেয়া, কিন্তু একটি রক্তমাংসের চোখের দামে একটি দৃষ্টিভঙ্গীর বদল। (পান ইনটেন্ডেড।) যে সামাজিক চক্ষু সাইক্লপস এর একখানা চোখের মতন জেগে আছে, মানুষকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে নির্যাতন এবং নিষ্পেষণ সইতে বাধ্য করবার জন্যে, সেই চোখটার বদল।
আমি চোখের বিনিময়ে চোখ বলতে আরেকটি সহিংসতাকে উশকানি দেইনি, সাইদ সুমনের কোনো শাস্তিই রুমানা যা হারিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। না চোখ, না দশটা বছর, না কন্যার সামনে পিতামাতার সামনে নিগৃহীত হবার চূড়ান্ত বেদনা।
তারপরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করবো লোকটার, যাতে বাকি দুর্বৃত্তরা দ্বিতীয়বার ভাবে স্ত্রীকে শারীরিক আঘাত করবার আগে।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৪ জুন ২০১১ (৮:২৪ পূর্বাহ্ণ)
অপরাধের প্রচণ্ডতা সীমা ছাড়িয়ে গেলে extraordinary শাস্তির ব্যাবহার হতেই পারে। Hammurabi র আইন বা শরিয়া আইন, আপাতদৃষ্টিতে সেকেলে এবং নিষ্ঠুর মনে হলেও এই আইনগুলো তৈরি হওয়ার পেছনেও নিশ্চয় যুক্তি ছিল। আইন কানুনের ব্যাপারে সামান্য যা জ্ঞান আছে তাতে মনে হয় আদি যুগে বা মধ্যযুগে নিষ্ঠুর শাস্তি দেওয়া হতো কোন sadistic কারণে নয়, শাস্তিকে deterrent হিসাবে দেখা হতো। বউ পরকীয়া করছে এই সন্দেহে তার সাথে মারামারি করা, মারামারির এক পর্যায়ে অসাবধানে দু চোখেই আঙ্গুল ঢুকে যাওয়া, crime of passion এর অজুহাত দেখিয়ে নামকা ওয়াস্তে বছর তিনেকের জেল, তারপর জেলে ‘ভদ্র ব্যবহার’ করে, তদবির করে, পরের ঈদেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসা, এই যদি এই মামলার পরিণতি হয়, তবে ভবিষ্যতে অনেক রুমানাই চোখ হারাবে। রুমানার স্বামীতো ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রায় অন্ধ দাবী করছে, পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেলে তার তো মনে হয় তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না।
সৈকত আচার্য - ২৫ জুন ২০১১ (৪:৩২ অপরাহ্ণ)
তানিয়া বলছেনঃ
সত্যি বলতে কি, যেদিন দেখলাম প্রথম খবরে রুমানার এই অবস্থা তাতে এমন shocked হয়ে গিয়েছিলাম যে নিত্যদিনের কাজ করতে গিয়ে মনটা অস্থির হয়ে উঠছিলো, বার বার। ভাবছিলাম এটা কি হয়ে গেলো…গত ৩০ বছরে নিষ্টুরতা তো কম দেখিনি…কিন্ত চোখ নষ্ট করে ফেলার মতো অবিশ্বাস্য এই ঘটনা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলছিলাম….ভাবছিলাম আমরা কি মধ্যপ্রাচ্যের বর্বর দেশগুলোর বাসিন্দা কিনা..নোরাংমিরও তো একটা সীমা থাকা দরকার !!
যে কথা বলছিলাম, রুমানার পরিবারের দিনের পর দিন এভাবে চুপ করে থাকা, সহ্য করে যাওয়া, সহ্য করে যেতে উপদেশ দিয়ে যাওয়া…ইত্যাদি চরম অসহ্য লেগেছে আমার কাছে। সবচেয়ে বেশী এবং অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে, এত জঘন্য একটা পৈশাচিক ঘটনা অন্ততঃ দিন ছয়েক মিডিয়ার কাছ থেকে (আসলে সমাজের কাছ থেকে!) লুকানোর চেষ্টা করাকে! রুমানার পরিবার আত্নরক্ষা কিভাবে করতে হয় সেই শিক্ষা তাকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।। রুমানার পরিবার তাকে শিক্ষা দিয়েছে কি করে সয়ে সয়ে আত্নসম্মান বিকিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন বন্দী থাকতে হয়।। ধিক্কার জানাই এই দাসত্ববৃত্তিকে। চরম ধিক্কার।।
সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ২৬ জুন ২০১১ (৩:০০ অপরাহ্ণ)
অপরাধের স্তর এবং নমুনা বলে দিচ্ছে, এটা একদিনের কীর্তি না, দিনের পর দিন একটু একটু করে এই জিনিস চলেছে, রুমানার বাসাতেই, তার পারিবারিক মৌনতায় (সম্মতির লক্ষণ?), তার অবমাননাবোধহীনতার সীমাকে দিন দিন একটু একটু করে ঠেলে ঠেলে বাড়ানো হয়েছে।
যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে বিচার হয়, তাহলে যেন রুমানার পরিবার, তার মাতাপিতার অবশ্য শাস্তি হয়। সন্তানকে যে বাপমা ভুল করা-ভুলস্বীকার-ভুলশোধনের স্বাভাবিক অধিকার না দেন, জীবন বদলে নেবার সুযোগ না দেন তাঁরা তো মানবাধিকার বোঝেনই না।
shahalambadsha - ৩০ জুলাই ২০১১ (১১:১৫ অপরাহ্ণ)
বিতর্কের অবকাশ থাকলেও লেখকের মন-মানসের প্রতি শ্রদ্ধা; মানুষের মনের সুপ্ত আমিত্বকে জাগিয়ে দেয়ার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনোভাব তৈরির প্রয়াস থাকায় ভালো লাগলো পোস্টটি।
মোহাম্মদ মুনিম - ৫ ডিসেম্বর ২০১১ (৭:০৭ অপরাহ্ণ)
রুমানা মনজুরের স্বামী হাসান সাইদ মারা গেছেন। এই বিষয়ে প্রথম আলোর রিপোর্ট এখানে।
সবুজ পাহাড়ের রাজা - ১১ অক্টোবর ২০১২ (১:০৩ পূর্বাহ্ণ)
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হোক!