‘যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর রাজনীতিকরণ’ বলতে ঠিক কী বোঝায় আসলে? গত বছর বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই এরকম একটি বিষয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সবাইকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা তেমন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু নির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে আর তখন থেকেই কেউ কেউ ছবক দিতে শুরু করেছেন, বিষয়টির ‘রাজনীতিকরণ’ ঠিক হবে না। লক্ষণীয় বিষয়, এ কথা যারা বলছেন, তারা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক দলের সদস্য। আর কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী যখন একটি ইস্যু সম্পর্কে মন্তব্য করেন, নিঃসন্দেহে তাতে একটি রাজনৈতিক বার্তা থাকে এবং সেকারণে এর রাজনৈতিক একটি মাত্রাও থাকে। এরকম কথা বলার মধ্যে দিয়ে প্রকারান্তরে জনগণের সবার কাছে একটি রাজনৈতিক বার্তাই পৌঁছে দেয়া হয়। লোকে বলে, ‘জ্ঞানী বোঝে ইশারা পেলে, মুর্খ বোঝে অণ্ডকোষে লাথি পড়লে।’ জ্ঞানী কিংবা মুর্খ, আমাদের যেটাই ভাবা হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধের শিকার একটি জনগোষ্ঠীর অংশ হিসেবে একটা বার্তাই পাই আমরা তাঁদের ওই দাবির মধ্যে থেকে। সে-বার্তাটি হলো : তাদের দলের কাউকে যেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত না করা হয়, শাস্তি দেয়া না হয়। এ-বার্তার আরেকটি অর্থ হলো, সত্যিকার যুদ্ধাপরাধী কাউকেও যদি অভিযুক্ত করা হয় তা হলে তা ‘যুদ্ধাপরাধের রাজনীতিকরণ’ হবে, কেননা তিনি তাদের দলীয় নেতা, কেননা তিনি তাদের রাজনৈতিক মিত্র। স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা যুদ্ধের সময়েও কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল অথবা সরকারের আজ্ঞাবহ ছিল। যুদ্ধের পর তাদের অবস্থানগত সংকট প্রকট হয়ে ওঠে এবং নিজেদের গরজেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি সরকারি দল আওয়ামী লীগেও এদের অনেক আশ্রয় নিয়েছেন তখন, তারও চেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ও ভাসানী ন্যাপে। কারণ বেঁচে থাকার জন্যে, নিরাপদ থাকার জন্যে একটি অবস্থান দরকার হয় তাদের সবার; আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় সেই অবস্থান রাজনৈতিক হলে। মানবতার বিরুদ্ধে যে-অপরাধ করা হয়, তা ঢাকার জন্যে এর চেয়ে বড় বর্ম আর কিইবা হতে পারে! ১৯৭৫ সালের পর এরা রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার পায়। তখন এদের কপাল খুলে যায়। এখন, যারা বলছেন যে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর রাজনৈতিকীকরণ ঠিক…
ব্রিটেনের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট-এ গেল মে মাসের ২৪ তারিখে ছাপা সংবাদের শিরোনাম: বাংলাদেশ ইজ সেফ হেভেন ফর ব্রিটিশ ইসলামিক টেরোরিস্টস। শিরোনামের খানিকটা উদ্ধৃতাংশের মধ্যে রাখলেও ইনডিপেনডেন্ট-এর তাগিদ যে ওই উদ্ধৃতাংশকেই মানুষজনের মনে স্থায়ী করে দেয়া, বাংলাদেশকে ব্রিটিশ-ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে প্রমাণের নানা ইঙ্গিত ও ধারণা তুলে ধরা, তা বলাই বাহুল্য। উপশিরোনামে যে-বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার মর্মার্থ আরও উদ্বেগজনক,- পাকিস্তানে প্রতিরোধের মুখে পড়ায় এখন সেখানকার মৌলবাদীরা প্রশিক্ষণের জন্যে নতুন এক আস্তানা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ব্রিটেনে বাংলাদেশের একটি হাইকমিশন আছে, প্রতিদিনই প্রত্যাশা করেছি হয়তো সেখানে প্রকাশিত হবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবাদবিবৃতি। কিন্তু সেরকম কিছু আমার চোখে পড়েনি। এমনকি, সংবাদটি সম্পর্কে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নীরব [...]
কারও কি চোখে পড়েছে ব্রিটেনের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট-এ গেল মে মাসের ২৪ তারিখে ছাপা হওয়া ওই সংবাদটি? প্রথম পাতায় ছাপা হয়নি বটে; তাই বলে মোটেও গুরুত্বহীন নয় ওই সংবাদ। শিরোনামেই আমরা খুঁজে পাই ওই গুরুত্বের গন্ধ : বাংলাদেশ ইজ সেফ হেভেন ফর ব্রিটিশ ইসলামিক টেরোরিস্টস। শিরোনামের খানিকটা উদ্ধৃতাংশের মধ্যে (সেফ হেভেন ফর ব্রিটিশ ইসলামিক টেরোরিস্টস) রাখলেও ইনডিপেনডেন্ট-এর তাগিদ যে ওই উদ্ধৃতাংশকেই মানুষজনের মনে স্থায়ী করে দেয়া, বাংলাদেশকে ব্রিটিশ-ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে প্রমাণের নানা ইঙ্গিত ও ধারণা তুলে ধরা, তা বলাই বাহুল্য। এরপর সংবাদটির উপশিরোনামে যে-বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার মর্মার্থ আরও উদ্বেগজনক,- পাকিস্তানে প্রতিরোধের মুখে পড়ায় এখন সেখানকার মৌলবাদীরা প্রশিক্ষণের জন্যে নতুন এক আস্তানা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার মানে, এখানেও আমরা ইঙ্গিত পাই সেই নতুন আস্তানা হিসেবে বাংলাদেশের দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়ে দেয়ার। ব্রিটেনে বাংলাদেশের একটি হাইকমিশন আছে, আমি পরবর্তী কয়েকদিন ইনডিপেনডেন্ট খুব মনযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, প্রতিদিনই প্রত্যাশা করেছি হয়তো সেখানে প্রকাশিত হবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবাদবিবৃতি। কিন্তু সেরকম কিছু আমার চোখে পড়েনি। সংবাদটি প্রকাশের আগে ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি লন্ডনেই ছিলেন এবং কথা বলেছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ডের সঙ্গে পরদিন তিনি রওনা হয়েছেন সিরিয়ার পথে। এরকম এক সময়ে এরকম একটি সংবাদ প্রকাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ার কথা ছিল। কিন্তু সংবাদটি সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নীরব রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের কোনও পত্রিকাও সংবাদটি ট্রান্সক্রিপ্ট করেনি, কোনও কলামিস্টও এ নিয়ে কোনও কলাম লিখেছেন বলে মনে হয় না। লোকে বলে, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। এ ক্ষেত্রেও কি তা হলে তাই ঘটেছে? তথ্য ও পরিস্থিতির নিরিখে অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশে বিভিন্ন মৌলবাদী ও ইসলামী জঙ্গি সংগঠন এখন খুবই সক্রিয়। জোট সরকারের আমলে একযোগে দেশটির ৫০০ স্থানে বোমা হামলার ঘটনা তারই প্রমাণ। কিন্তু পাশাপাশি এটিও সত্য যে, বাংলাদেশের জনগণের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে মৌলবাদবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের। বাংলাদেশে বার বার সামরিক শাসন এসেছে, এই সামরিক শাসনের হাত ধরে এসেছে ধর্মজ রাজনীতি। সামরিক শাসন টিকে থাকতে পারেনি বটে, কিন্তু ধর্মজ রাজনীতিকে অনুপ্রবিষ্ট করে রেখে গেছে কথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভেতর। বাংলাদেশের মানুষ যেমন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তেমনি সংগ্রাম করে চলেছে ধর্মজ রাজনীতির বিরুদ্ধেও।…
মানুষের প্রস্থান, কিংবদন্তীর শুরু . . . (more…)
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারক আওয়ামী লীগের ষাটতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর খবর বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান পত্রিকা ‘প্রথম আলো’র প্রথম পাতা ও শেষ পাতায় দেখতে না পেয়ে পুরো পত্রিকাটিতেই খবরটি খুঁজলাম, না, কোথাও খবরটি পাওয়া গেল না। প্রচেষ্টার দশ বছর, কোন প্রচেষ্টা? হ্যাঁ, সেই প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে বলা যায়, এই দশটি বছর, অসৎ নিরপেক্ষতার মতিউর দশক। তার এই অসৎ নিরপেক্ষতা নিরন্তর যাকে লক্ষ্য করে এগিয়েছে সে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা বিরোধিতার সার্বক্ষনিক কর্মী মতিউর রহমান, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরদিন তার পত্রিকার শিরোনাম করেছিলেন ‘গণতন্ত্রের নাজাত দিবস’। সেই কর্মীই কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগে অনিয়মের প্রধান আসামী করলেন শেখ হাসিনাকে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের দুর্ভাগ্য এখানে যে, এই মতিউর দশক কাটিয়ে আর কোনো সম্পাদক বা কোনো পত্রিকা, প্রাণশক্তির স্পর্শে এই জগতকে অনুপ্রাণিত করতে পারল না। আমরা প্রেরণাহীন সময় কাটাচ্ছি, আমাদের প্রতিদিনের নিঃসঙ্গতা, খবরহীন উদাসীনতা, আমাদেরকে সংকটের শুধুই গভীরে নিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ফারুক চৌধুরীর এ লেখাটি আলোচনার জন্য নির্বাচন করা হল। প্রশ্ন হল, পাকিস্তানে সোয়াত উপত্যকার ঘটনাবলী বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের রাজনৈতিক আকাশে মেঘ জমার কোন আগাম ইঙ্গিত দিচ্ছে কি? (more…)