আজো বুকটা ভারী হয়ে আছে। ২০০৪ থেকে ২০০৯, হয়তো অনন্তকাল ধরে, এই আঘাত আমরা ভুলতে পারব না, আমরা যারা লেখক বা লেখক হতে চাই, আমাদের ওপর এই আঘাত, এই আঘাতের প্রতীক হয়ে হুমায়ুন আজাদ, প্রতিদিন আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলতার হিংস্রতার কথা মনে করিয়ে দেবে। সফদর হাশমি যেমন ভারতে আমাদের দেশে হুমায়ুন আজাদ, আমরা ভুলতে পারব না, ভুললেই শেষ হয়ে যাব, বুকটা ভারী হয়ে আছে, প্রকাশ অক্ষম, কিন্তু সাবধান, শুধুই সাবধান। আমরা আজ ২০০৮-এর নির্বাচনের পর যে সময় কাটাচ্ছি, তাতে নিরাপদ বোধ করলে চরম ভুল করব। তাই ১২ আগস্ট-কে আমাদের আরো ব্যাপক পরিসরে পালন করা উচিত, লেখকদের ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’র মতো একটি আন্দোলনের কথা ভাবা উচিত, আরো ঐক্যবদ্ধ শক্তিই পারে লেখকদের আরো স্বাধীন করতে, তসলিমা নাসরিন-ও দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে বাহিরে পড়ে আছেন, কিন্তু কেন এমন হবে? ১২ আগস্ট ‘লেখক দিবস’ হয়ে উঠুক, এবং একে ঘিরে লেখকদের সম্মিলন আন্দোলন সম্ভব হোক, এখনই হোক, না হলে বাংলাদেশে লেখকদের ভবিষ্যৎ আরো ভয়ংকর বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে।
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক দিয়গনেস তাঁর দর্শন ও দর্শন-সম্বলিত জীবন যাপন নিয়ে সৎ ছিলেন। তিনি সিনিকদের পতি মহাত্মা এন্থিস্থিনিসকেও অতিক্রম করেছিলেন বলে জানা যায়। দিয়গনেস নির্লোভ নির্মোহ জীবন যাপন করতেন। তিনি থাকতেন একটা জালার ভেতর মতান্তরে পিপার ভেতর যেখানে অনেক কুকুরও থাকত তাঁর প্রতিবেশী হিসাবে। কুকুরদের সাথে রুটি ভাগাভাগি করে খেতেন তিনি। একটা রুটি রাখার থলে থাকত আর পানি রাখার জন্য একটা বোতল। এই হচ্ছে তাঁর জীবন যাপন। তিনি সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ত্যাগ করেছিলেন। মানুষের বানানো সব কিছুকে তছনছ করতে বলতেন। তাঁর জ্ঞানের পরিধি এবং সুনাম এত দূর গিয়েছিল যে স্বয়ং সম্রাট আলেকজান্দার একদিন খায়েস করলেন তাঁকে দেখতে যাবেন। যেই কথা সেই কাজ। ভোরে দিয়গনেস পিপার মুখে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। সম্রাট এসে দাড়ালেন পিপার মুখে । সম্রাট নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলেন তিনি তাঁর জন্য কিছু করতে পারেন কিনা। আর দিয়গনেস তারদিকে তাকিয়ে সুর্যের দিকে ইশারা করে বললেন - রোদ পোহাতে দাও (সরে দাড়াও, তোমাকে আমার দরকার নাই)। পরবর্তীতে সিনিকাল দর্শনটা খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়। নতুন নতুন ধরনের সিনিক্যাল মতবাদের উদ্ভব হয়। শেষে এটা বুর্জোয়া অসুখে পরিণত হয়। অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক কোন ব্যাপার সম্পর্কে মাথা না ঘামানো। তবে দিয়গনেসের মতটা ছিল অনেকটা বৌদ্ধিক। নিজেকে সবকিছু থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া। পরে অসত্দিত্ববাদিদের দর্শনেও সিনিক প্রভাব দেখা যায়। আলবেয়ার কামুর আউড সাইডার উপন্যাসের নায়ক যে তার মায়ের মৃত্যুতে নির্বিকার থাকে। ধর্ম আইন সবকিছু সম্পর্কে যে প্রশ্ন তোলে। এখনো আধুনিক মানুষদের একটা বড় অংশ সিনিক্যাল জীবন যাপন করে। তবে আমার মনে হয় এখানেও একটা যৌক্তিকতা আছে। দেশের সবচাইতে মেধাহীন গবেটরাই রাষ্টের নায়ক হয়, যেখানে আইন নাই, জ্ঞানীদের শাসন কার্যে অংশগ্রহণ নাই। সক্রাতেসের বিক্রিত মতেই যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র চলে সেখানে সিনিক্যাল কমপ্লেক্স থাকবেই। সিনিক্যাল কমপ্লেক্স একধরণের হতাশা। একজন চৈতন্য সমৃদ্ধ মানুষই কেবল সিনিক হতে পারে। তবে একটা সিনিকাল জীবন গবেট রাষ্ট্রও চাপিয়ে দিতে পারে মানুষের ওপর। প্রথম বিশ্বে মানুষ পুজিবাদের পূর্ণ বিকাশ এবং ভোগবাদী জীবনের কারণেই সিনিক হতে পারে। যেটাকে আমি ইতিমধ্যে বুর্জোয়াদের অসুখ বলে আখ্যায়িত করেছি। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকেনা। যদিও রাষ্ট্রীয় ভাবেই অধিকসংখ্যক মানুষকে কর্মহীন করে রাখা হয় এখানে।…
চারটে প্যারায় মুল কবিতাটি। প্রথম স্তবকে চারলাইন। দ্বিতীয় স্তবকে ছয় লাইন। তৃতীয় স্তবকে পাঁচ লাইন। এবং চতুর্থ স্তবকে তথা শেষ স্তবকে মাত্র দুটি লাইন। প্রথম যখন কবিতাটি পড়ে আনন্দ পাই তখন আমি ভাবতে চেয়েছি কবিতাটি কি কি কারণে আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আর আমি বার বার পড়েছি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে [...]
এইতো শোবার ঘর। অনুগ্র আলোর নীচে ঘুম, পেছনে র্নদমা আর তার পাশে ভেজা কালো মাটি- বাদাম গাছের ছায়া , নতুন কবর। প্রতি ভোরে আমিও নিজের কবর থেকে উঠে মশারি গুছিয়ে রাখি, দাঁত মাজি, ব্রেকফাষ্ট সারি ... পত্রিকার শিরোনামে দু'চোখ বুলিয়ে নেমে যাই ছাগবিষ্ঠাময় সিঁড়ি বেয়ে সন্তর্পনে পাতালের দিকে! বিকেলে অফিস ছুটি । যানজট। পায়ে হেঁটে বন্ধুর বাসায় । ফিরে আসি রাত দশটায় খাবার টেবিলে মাছি, আরশোলা, ঠান্ডা পাউরুটি। অনুগ্র আলোর নীচে আমার শোবার ঘর, আবার সকালে বেঁচে উঠা। ..................... প্রথম যখন কবিতাটি পড়ে আনন্দ পাই তখন আমি ভাবতে চেয়েছি কবিতাটি কি কি কারণে আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আর আমি বার বার পড়েছি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে । মনে হয়েছে তিনটে কারণে কবিতাটি আমাকে আনন্দিত করেছে। ১. বাহুল্যহীনতা, ২. প্রচলিত শব্দ ব্যবহার ৩. র্দশনকেন্দ্রিক স্থিরতা ও সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রন্থনা। চারটে প্যারায় মুল কবিতাটি বিভক্ত। প্রথম স্তবকে চারলাইন। দ্বিতীয় স্তবকে ছয় লাইন। তৃতীয় স্তবকে পাঁচ লাইন। এবং চতুর্থ স্তবকে তথা শেষ স্তবকে মাত্র দুটি লাইন। আমার সবসময় মনে হয়েছে একজন কবি যখন একটা কবিতা লেখার জন্য তৈরী হয়েছেন তখন সে অনুপ্রেরণা কিংবা যে ঘটনার দ্বারা সে নিজের বোধের শব্দের জন্য কিংবা বাক্য তৈরীর জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন তখন সে সংকেতটা তার সমগ্র স্মৃতির ওপর প্রতিফলিত হয়। এবং হতে পারে পাঠকেরও । ফলে কোন লাইনে তার জীবনের কোন দৃশ্যটা তৈরী হচ্ছে সেটা সম্ভবত জানা কবির পক্ষেও দুঃসাধ্য। আমার মনে হয়না কবি দীর্ঘক্ষণ এই জটিল যন্ত্রনার মধ্যে থাকতে পারেন। হতে পারে এটা কোন উপন্যাসিকের ক্ষেত্রেও। ফকনার একবার বলেছিলেন 'লেখা হয়ে যাবার পর বইটা পাঠকের । পাঠক বইটার ভেতর নিজেকে পেলে সে সেটা গ্রহণ করে। আর এজন্য লেখকের সময়-জ্ঞানটা এত জরুরী; লেখককে আমি সবসময় পাঠকের চেয়ে সময় সম্পর্কে প্রাগ্রসর বলে মনে করি। এ জন্য তাকে তিনচোখা বলা যায়। যে কোনো বিপর্যয় যে কোনো সৌন্দর্য্য-চেতনা যে কোনো আঘাত সাধারণের বহু আগেই সে অনুভব করতে পারে । তা নাহলে লেখার জন্য যন্ত্রনাটা সে কোত্থেকে পাবে। পুরো কবিতাটা পড়ার পর আমরা প্রাত্যহিকতা সম্পর্কে নতুন এক অনুভব পাই। একজন নগর ক্লান্ত মানুষকেই দেখি যার জীবন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। জীবিত ও…
সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৯ সেপ্টেম্বর - সেচ্ছাসেবক এবং সেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে “অশেন কনসারভেন্সি” বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক এবং স্থল বেস্টিত জলপথ এবং জলাধারগুলোর চারপাশে আবর্জনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই বছর “অশেন কনসারভেন্সী”-এর ২৩তম বার্ষিক “ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনাপ” ১০৪ টি দেশ ও স্থানে, প্রায় ৪,০০,০০০ সেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে [...]
সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৯ সেপ্টেম্বর - সেচ্ছাসেবক এবং সেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে “অশেন কনসারভেন্সি” বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক এবং স্থল বেস্টিত জলপথ এবং জলাধারগুলোর চারপাশে আবর্জনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই বছর “অশেন কনসারভেন্সী”-এর ২৩তম বার্ষিক “ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনাপ” ১০৪ টি দেশ ও স্থানে, প্রায় ৪,০০,০০০ সেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতি বছর সমুদ্রের আবর্জনার পরিস্যংখান প্রস্তুত করার জন্য দেশে-দেশে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৬.৮ মিলিয়ন পাউন্ড ওজনের আবর্জনা উত্তোলন করে সে সবের তথ্যাদি সংকলন করা হয়। এই পরিসংখ্যান আবর্জনার গুপ্ত রহস্য প্রকাশ করে। সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ এবং ফাস্টফুডের আবরনী কাগজ থেকে শুরু করে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, পুরোনো মাছ ধরার জাল - সাধারণত এসবই আবর্জনার সিংহভাগ দখল করে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই পরিসংখ্যান সমুদ্রের ধারণ ক্ষমতা ও এর জটিল জীবন-সহায়ক ব্যবস্থার ওপর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব তার সাথে সামুদ্রিক আবর্জনার কারণে উদ্ভুত সমস্যা সমুহের যোগসূত্রও নির্দেশ করে। এসব বিবেচনা করেই সামুদ্রিক আবর্জনা নির্মূলের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রণীত কার্যপদ্ধতিতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে আচরণগত পরিবর্তন এবং উন্নততর নীতিমালা প্রণয়নের দিকে। সামুদ্রিক আবর্জনার সমস্যা মানুষের সৃষ্টি, তাই এর দায়-দায়িত্বও মানুষকেই নিতে হবে। “ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনাপ”-এর সুদীর্ঘ ২৩ বছরের ইতিহাসে প্রাপ্ত তথ্যাদির সংকলন এই কর্মোদ্যোগকেই আরও উদ্দীপনা এবং উৎসাহ জোগাবে বলে আশা করা যায়। নিসর্গপ্রেমী জনগণ, শীর্ষস্থানীয় সংস্থা সমুহ এবং সরকারী-রাজনৈতিক নেত্রীবর্গ একত্রে কাজ করলে সামুদ্রিক আবর্জনার উৎস চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব। আমাদের, পরবর্তী প্রজন্মের ও বিশ্বের ভবিষ্যত অনেকটাই এর উপর নির্ভর করছে। “কেওক্রাডং বাংলাদেশ” বিভিন্ন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দফতর, পৃষ্ঠপোষক এবং আরও অনেক শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক সহযোগিতায় ২০০৬ সাল হতে বাংলাদেশে এই মহান আন্তর্জাতিক কার্যক্রমটি সাফল্যের সাথে আয়োজন করে এতে শামিল হয়ে আসছে। এই পরিক্রমায় আমাদের সমুদ্র সৈকত থেকে যে পরিমান আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে তা হয়ে ওঠবে আমাদের বর্তমান সামুদ্রিক পরিবেশের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিক সংখ্যক পর্যটক হয়তো আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাচ্ছে কিন্তু একই সাথে স্বাস্থ্য এবং সামুদ্রিক পরিবেশের ধারণ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মূখীন করছে। দূষণ সম্পর্কিত জ্ঞানের স্বল্পতা, আবর্জনা সংরক্ষণকরণ পদ্ধতির অপ্রতুলতা, সমুদ্রের প্রতি তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনভাব দিনকেদিন এই অবস্থার আরও অবনতি ঘটাচ্ছে। সমুদ্র সৈকতে একটি দিন, একটি…
রায়গোপালদা তবলা বাজাতেন। বাজিয়ে হিসেবে তেমন পরিচিত কেউ ছিলেন না। তবে নাম পরিচয়হীন একজন গুণী বাজিয়ে ছিলেন—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সংসার চালাতেন তবলার শিক্ষকতা করে। প্রায় দেড় যুগ ধরে তবলার শিক্ষকতা করছেন। ২৭ জুলাই-ও চকরিয়া যাচ্ছিলেন তবলার শিক্ষকতার কাজে, সাতকানিয়ার রানীরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় আরো চার জনের সঙ্গে প্রাণ হারালেন। আমাদের রাস্তাগুলোতে, দিনের পর দিন, প্রাণ হারানো যেন খুবই নিয়মিত ঘটনা হয়ে পড়েছে। আমি বিষন্ন হয়েছি রায়গোপালদার জন্য, তো তার পরমুহূর্তেই আপনি হাহাকার করে উঠেছেন আর কারো জন্য। যে পরিমাণ যোগাযোগ অব্যবস্থাপনা, গাড়ির তুলনায় সড়কের যা অভাব, বেপরোয়া গাড়িচালকদের দৌরাত্ম্য—সব মিলিয়ে একে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলবার কোনো কারণ কি আর আছে? জানি না আর কতকাল অকালে এভাবে প্রিয়জন হারানোর বেদনা সইতে হবে। আমরা হয়তো যতো জন্মাই ততো মরি। কী যে জন্ম আমাদের! এদেশে কী বিকট জীবন যাপন আমাদের, অপঘাত দুর্ঘটনায় এ এক মহাদুর্যোগ। কোথায় জন্মালাম, হতাশা ছাড়া এ জীবন আমাদের কিছুই দিতে পারে না...