রায়গোপালদা তবলা বাজাতেন। বাজিয়ে হিসেবে তেমন পরিচিত কেউ ছিলেন না। তবে নাম পরিচয়হীন একজন গুণী বাজিয়ে ছিলেন—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সংসার চালাতেন তবলার শিক্ষকতা করে। প্রায় দেড় যুগ ধরে তবলার শিক্ষকতা করছেন। ২৭ জুলাই-ও চকরিয়া যাচ্ছিলেন তবলার শিক্ষকতার কাজে, সাতকানিয়ার রানীরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় আরো চার জনের সঙ্গে প্রাণ হারালেন।
আমাদের রাস্তাগুলোতে, দিনের পর দিন, প্রাণ হারানো যেন খুবই নিয়মিত ঘটনা হয়ে পড়েছে। আমি বিষন্ন হয়েছি রায়গোপালদার জন্য, তো তার পরমুহূর্তেই আপনি হাহাকার করে উঠেছেন আর কারো জন্য। যে পরিমাণ যোগাযোগ অব্যবস্থাপনা, গাড়ির তুলনায় সড়কের যা অভাব, বেপরোয়া গাড়িচালকদের দৌরাত্ম্য—সব মিলিয়ে একে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলবার কোনো কারণ কি আর আছে?
জানি না আর কতকাল অকালে এভাবে প্রিয়জন হারানোর বেদনা সইতে হবে। আমরা হয়তো যতো জন্মাই ততো মরি। কী যে জন্ম আমাদের! এদেশে কী বিকট জীবন যাপন আমাদের, অপঘাত দুর্ঘটনায় এ এক মহাদুর্যোগ। কোথায় জন্মালাম, হতাশা ছাড়া এ জীবন আমাদের কিছুই দিতে পারে না…
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৪ comments
রায়হান রশিদ - ৩০ জুলাই ২০০৯ (৩:৩১ পূর্বাহ্ণ)
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর দেশে কত জনের প্রাণ কিংবা অঙ্গহানি ঘটে তার কি কোন সরকারী বা বেসরকারী হিসেব আছে? জানা নেই।
বরাবরকার মত রায়গোপালদার অকাল মৃত্যুর খবরটা আপনার পোস্টে পড়েও মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে মনের মধ্যে। একদিকে অপরাধবোধ, অন্যদিকে স্বস্তিবোধ। অপরাধবোধ জীবিত বেঁচে ফেরা বেঁচে থাকা মানুষের; স্বস্তিবোধ নিজের হাত পা আত্মীয় বন্ধুজন ঘটনার শিকার নয় বলে। সত্যিই কিছু বলার নেই, সমবেদনা অর্থহীন। আপনি ভাল থাকুন মাসুদ ভাই।
মোহাম্মদ মুনিম - ৩১ জুলাই ২০০৯ (৪:৪১ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ ভাইয়ের লেখাটি পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, রায়গোপালদার সাথে কখনো পরিচয় হয়নি। তবে তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার যে পথে বসেছেন, সেটি আন্দাজ করছি।
বুয়েটে পড়ার সময় জেনেছিলাম, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০০০ লোকের প্রানহানি ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়, দশ বছরে এই সংখ্যাটি আরও বাড়ার কথা। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে প্রতি বছর রাস্তায় ৪০০০০ প্রানহানি ঘটে। জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে মূত্যুর হার কম হলেও, যুক্তরাস্ট্রের ২০ কোটি যান্ত্রিক যানের সাথে বাংলাদেশের মোটে ২০ লাখ যান্ত্রিক যানের তুলনা করলে বোঝা যায় আমরা কতটা অনিরাপদ। আফ্রিকার কিছু লাগামছাড়া দেশ বাদ দিলে, বাংলাদেশের সড়ক পৃথিবীর সবচেয়ে অনিরাপদ। আমাদের অসহায়তার আরেকটি কারন হচ্ছে ৬০ ভাগের বেশী দুর্ঘটনার (এবং সম্ভবত ৮০ ভাগের বেশী প্রানহানির) কারন বাস, মিনিবাস বা ট্রাক। যুক্তরাস্ট্রে ৫ ভাগেরও কম দুর্ঘটনার (এবং ১০ ভাগেরও কম প্রানহানি) কারন ট্রাক। বাসের কারনে দুর্ঘটনা এবং প্রানহানি ১ ভাগেরও কম। রায়গোপালদা যখন কোন বাসে ভ্রমন করেন বা বাসের আঘাতে মারা যান, তাঁর জীবনের পুরো দায় বাস মালিকের। রায়গোপালদাকে ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু তাঁর পরিবারের আর্থিক দায় বাস মালিকের। এই দায়ের কারনেই, যুক্তরাস্ট্রে বাস বা ট্রাক ঘটিত মৃত্যু এত কম। মার্কিন ট্রাক এবং বাস চালকেরা এমন কিছু ফেরেস্তা নন, কিন্তু কোন দুর্ঘটনা ঘটালে আইনি জটিলতা, অর্থদন্ড, বীমা সংক্রান্ত জরিমানা এবং কারাদন্ডের ভয়েই তাঁরা সাবধানে গাড়ি চালান।
গারমেন্টস ব্যবসার কল্যানে এখন অনেক ট্রাক মালিকই শত শত ট্রাকের মালিক, সাতকানিয়া রুটের লক্কড় যক্কড় মার্কা বাসের মালিকেরাও অর্থবান। যাত্রীবীমার ব্যাপারে নিশ্চই আইন আছে, তাঁর কোন প্রয়োগ নেই বোঝাই যায়। সাতকানিয়া রুটে ৬ লেনের সড়ক আর অত্যাধুনিক EMS রাতারাতি করা যাবে না, কিন্তু দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আইনগুলোর প্রয়োগ করেই অনেক জ়ীবন বাঁচানো সম্ভব।
রেজাউল করিম সুমন - ২ আগস্ট ২০০৯ (১২:০৩ অপরাহ্ণ)
রায়গোপালদার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। তবে তিনি ছিলেন আমাদের পরিচিত গণ্ডির মানুষ। দুর্ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ই প্রথম তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনি দুলাল দাশগুপ্তর মুখে; মাত্র দু’দিন আগেই না কি দুজনের কথা হয়েছে! খানিক পরে চিত্রকর ও সেতারশিল্পী সঞ্জীব দত্তর কাছ থেকে জানা যায় যে ঠিক আগের দিনই দুজন একসঙ্গে বাজিয়েছিলেন! … কিন্তু আর কখনোই রায়গোপালদা কারো সঙ্গেই বাজাবেন না!
২
শহর এলাকায় ট্যাম্পো, রাইডার, রেঞ্জার সহ যে-সব যানবাহনে আমাদের প্রতিদিনই চড়তে হয়, তার প্রায় সব ক’টাই অনিরাপদ। ট্যাম্পো নামের গর্জনশীল, অপরিসর, অসুবিধাজনক ও দুর্ঘটনাপ্রবণ শকটটিকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না? এ ধরনের শকট-কে শহর এলাকা থেকে হটিয়ে মফস্বলে বা গ্রামের দিকে পাঠিয়ে দেয়াকেও কোনো সমাধান বলে মনে করা যায় না। `রেঞ্জার’ রাস্তায় নামার অল্পদিনের মধ্যেই লোকমুখে `ডেঞ্জার’ নামে পরিচিত পেয়েছিল। … এসবের তুলনায় শহর এলাকার বাস বরং অনেক নিরাপদ। কিন্তু বাসচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় বাস-যাত্রাও সবসময়ে নিরাপদ থাকে না। অথচ এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত আমাদের চোখে পড়েনি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শহর এলাকার বাসরুট পুনর্বিন্যাস ও বর্ধিতকরণের ফলে (অন্তত চট্টগ্রাম শহরে, অন্য জায়গার খবর আমার জানা নেই) যাত্রীসাধারণের যে সুবিধাই হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে যে, রাতারাতি সব গাড়িকেই-কে `কাউন্টার সার্ভিস’-এ রূপান্তরিত করে `সিটিং সার্ভিস’ প্রবর্তনের প্রহসনের ও ভাড়া বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে যাত্রীদের অবশ্যম্ভাবী ও সংগত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় সে-সময়ে প্রতিটি বাসস্টপে/কাউন্টারে যে ৩ জন করে পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল। বাস মালিক সমিতি বা এ-জাতীয় সংগঠনগুলোর অধিক মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য তথা যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে দেয়ার জন্য পুলিশ নিয়োগ করা যায়, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় না এখানে! সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে …
৩
মুনিমের মন্তব্যের সূত্র ধরে জানতে ইচ্ছে করছে, বাংলাদেশের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আইনগুলো কী কী? কখনোই এ-সবের প্রয়োগ দেখি না কেন?
বিনয়ভূষণ ধর - ৮ আগস্ট ২০০৯ (৯:২৭ পূর্বাহ্ণ)
কি বলবো! কি করবো আমরা! বলুনতো ? আমাদের কি সত্যিকারঅর্থে এ সকল ব্যপারে কিছু বলার বা করার নেই! মাসুদ করিমের পোষ্টখানা পড়ে মনটা খুব…খুব খারাপ হয়ে গেল।।……
মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০০৯ (৯:০০ পূর্বাহ্ণ)
সরকারের সামান্য চেষ্টায় ২৫% সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকানো সম্ভব।
১৯৯৯-২০০৭ পর্যন্ত দেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ৪০ হাজার, মারা গেছে ৩৬ হাজার, আহত ৩৬ হাজার। প্রায় সব সড়ক দুর্ঘটনায় মালিক ও চালককে বাঁচাতে ‘ব্রেইক ফেল’-কে কারণ দেখিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ ও বিআরটিএ। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ৪ হাজার লোক। আরো পড়ুন।
মাসুদ করিম - ১৬ আগস্ট ২০০৯ (৪:৩৬ অপরাহ্ণ)
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় চালকের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ট্রাফিক-ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করতে হবে।
মাসুদ করিম - ১৮ আগস্ট ২০০৯ (৯:০৩ পূর্বাহ্ণ)
যতগুলো কারণে মানুষ মারা যায়, ২০৩০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে উঠবে সেগুলোর মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম ঘাতক।
মাসুদ করিম - ১৮ আগস্ট ২০০৯ (৪:৫০ অপরাহ্ণ)
প্রথম আলোর এই লেখাটির সূত্র:
১. বিশ্ব স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০০৩-পৃষ্টা ৯৫ থেকে ১০০।
২. রোড সেফটি।
মোহাম্মদ মুনিম - ১০ জুন ২০১০ (৭:০০ পূর্বাহ্ণ)
দুর্ঘটনার তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে বুয়েটের কর্মশালা
দৈনিক প্রথম আলো জুন ১০, ২০১০
মাসুদ করিম - ১২ জুলাই ২০১১ (৬:১৫ অপরাহ্ণ)
গতকাল এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে গেল মিরসরাইয়ে। এক সাথে খেলা দেখে ট্রাকে করে ফিরছিল কিশোর ফুটবলার ও তাদের কিশোর সমর্থকরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি গভীর ডোবায় পড়ে গেলে সেখানেই ৫৩ জন কিশোরের মৃত্যু ঘটে আহতদের মধ্যে আজ আরো পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী বিশেষ শোক সম্পাদকীয়তে লিখছে
মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনায় নিহত কিশোরদের স্বজনদের আর্তনাদ। লিন্ক এখানে।
মাসুদ করিম - ১৮ জুলাই ২০১১ (১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
তাৎক্ষণিক রিপোর্টে সবাই ডোবাটিকে গভীর বললেও ডোবাটির গভীরতা ছিল মাত্র ৪ ফুট। কিন্তু ডোবাটি বেশ দীর্ঘ এবং প্রস্থে ২০-২৫ ফুট — এই দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ এবং খোলা ট্রাক আর ক্ষুদে খেলোয়াড় সমর্থক — সব মিলেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
মাসুদ করিম - ১৩ আগস্ট ২০১১ (১:২৫ অপরাহ্ণ)
এই মাত্র পাওয়া খবর সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ মারা গেছেন। খবরের লিন্ক : সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদ।
মাসুদ করিম - ১৪ আগস্ট ২০১১ (১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
তার মর্মান্তিক মৃত্যুর অনেকক্ষণ পর, বাসায় গিয়ে সন্ধ্যায় টিভিতে তার পূর্ণঅবয়ব দেখার পর আমি বুঝতে পারলাম কাকে হারিয়েছি, the Real News network-এর সাইট অনিয়মিতভাবে সার্চ করার অভ্যাস আমার কয়েক বছরের সেসূত্রে কোনো কোনো ভিডিও ক্লিপে MUNIER-কে দেখেছি — কিন্তু তিনি যে বাঙালি, তিনি যে আমাদের দেশের এক গুণী সংবাদ সম্প্রচার কর্মী তা আমার গতকালের আগে জানা ছিল না। এই দুর্বিসহ ভার আমি নিতে পারছি না — গতকাল থেকে বিমর্ষতা আমার আর কাটছে না। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মানুষ হারালেই বুক ভার হয়ে যায় আর এতো গুণী মানুষ — আমি কোনোভাবেই নিজেকে ধাতস্থ করতে পারছি না।
কিছু মানুষ থাকে প্রতিশ্রুত নেপথ্যের মানুষ — তাজউদ্দিন আহমেদের হত্যাকাণ্ডে যেমন বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রতিশ্রুত নেপথ্যের মানুষকে আমরা হারিয়েছিলাম — আজ আবার মিশুক মুনীরকে হারিয়ে আমার মনে হচ্ছে বাংলার প্রতিশ্রুত নেপথ্যের আরেক বড় মানুষকে আমরা বড় মর্মান্তিকভাবে হারালাম।
মাসুদ করিম - ৩০ নভেম্বর ২০১৪ (৯:১৫ পূর্বাহ্ণ)
সকালে পত্রিকা খুলেই দুঃসংবাদ, সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা হারিয়েছি দেশের শীর্ষ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বাংলা ইংরেজিতে সমান দক্ষ সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরীকে।