প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক দিয়গনেস তাঁর দর্শন ও দর্শন-সম্বলিত জীবন যাপন নিয়ে সৎ ছিলেন। তিনি সিনিকদের পতি মহাত্মা এন্থিস্থিনিসকেও অতিক্রম করেছিলেন বলে জানা যায়। দিয়গনেস নির্লোভ নির্মোহ জীবন যাপন করতেন। তিনি থাকতেন একটা জালার ভেতর মতান্তরে পিপার ভেতর যেখানে অনেক কুকুরও থাকত তাঁর প্রতিবেশী হিসাবে। কুকুরদের সাথে রুটি ভাগাভাগি করে খেতেন তিনি। একটা রুটি রাখার থলে থাকত আর পানি রাখার জন্য একটা বোতল। এই হচ্ছে তাঁর জীবন যাপন। তিনি সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ত্যাগ করেছিলেন। মানুষের বানানো সব কিছুকে তছনছ করতে বলতেন। তাঁর জ্ঞানের পরিধি এবং সুনাম এত দূর গিয়েছিল যে স্বয়ং সম্রাট আলেকজান্দার একদিন খায়েস করলেন তাঁকে দেখতে যাবেন। যেই কথা সেই কাজ।
ভোরে দিয়গনেস পিপার মুখে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। সম্রাট এসে দাড়ালেন পিপার মুখে । সম্রাট নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলেন তিনি তাঁর জন্য কিছু করতে পারেন কিনা। আর দিয়গনেস তারদিকে তাকিয়ে সুর্যের দিকে ইশারা করে বললেন – রোদ পোহাতে দাও (সরে দাড়াও, তোমাকে আমার দরকার নাই)। পরবর্তীতে সিনিকাল দর্শনটা খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়। নতুন নতুন ধরনের সিনিক্যাল মতবাদের উদ্ভব হয়। শেষে এটা বুর্জোয়া অসুখে পরিণত হয়। অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক কোন ব্যাপার সম্পর্কে মাথা না ঘামানো। তবে দিয়গনেসের মতটা ছিল অনেকটা বৌদ্ধিক। নিজেকে সবকিছু থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া। পরে অসত্দিত্ববাদিদের দর্শনেও সিনিক প্রভাব দেখা যায়। আলবেয়ার কামুর আউড সাইডার উপন্যাসের নায়ক যে তার মায়ের মৃত্যুতে নির্বিকার থাকে। ধর্ম আইন সবকিছু সম্পর্কে যে প্রশ্ন তোলে। এখনো আধুনিক মানুষদের একটা বড় অংশ সিনিক্যাল জীবন যাপন করে। তবে আমার মনে হয় এখানেও একটা যৌক্তিকতা আছে। দেশের সবচাইতে মেধাহীন গবেটরাই রাষ্টের নায়ক হয়, যেখানে আইন নাই, জ্ঞানীদের শাসন কার্যে অংশগ্রহণ নাই। সক্রাতেসের বিক্রিত মতেই যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র চলে সেখানে সিনিক্যাল কমপ্লেক্স থাকবেই। সিনিক্যাল কমপ্লেক্স একধরণের হতাশা। একজন চৈতন্য সমৃদ্ধ মানুষই কেবল সিনিক হতে পারে। তবে একটা সিনিকাল জীবন গবেট রাষ্ট্রও চাপিয়ে দিতে পারে মানুষের ওপর। প্রথম বিশ্বে মানুষ পুজিবাদের পূর্ণ বিকাশ এবং ভোগবাদী জীবনের কারণেই সিনিক হতে পারে। যেটাকে আমি ইতিমধ্যে বুর্জোয়াদের অসুখ বলে আখ্যায়িত করেছি। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকেনা। যদিও রাষ্ট্রীয় ভাবেই অধিকসংখ্যক মানুষকে কর্মহীন করে রাখা হয় এখানে। অভাব আর ঘুমানো। কর্মহীন জীবন। এভাবে তৃতীয়বিশ্বে জীবটা থেমে থাকে। কিন্তু বুদ্ধিজীবি শ্রেণী যারা গবেটদের শাসন পছন্দ করেনা কিংবা মেনে নেয়না তারা কি করতে পারে। পাশ ফিরে শোয়। তাদের কিছুই করার থাকেনা তৃতীয় বিশ্বে। কিন্তু আসলেই তারা সিনিকদের মত জীবন যাপন করতে পারেনা। সে কখনোই ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেনা। কেননা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যে ধরনের প্রতিহিংসা, পেশা তদোপরি মর্জি নির্ভর শাসন কানুন। তা কাওকে সিনিক হবার সুযোগ দেয়না। কারণ একটা ভুল মামলায় পিতা জড়িয়ে যাওয়ার দরুন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সনত্দানের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তার জীবন প্রবাহিত হতে পারে সম্পূর্ণ অর্থহীন ভাবে। কোর্টে কাচারিতে সে দালাল মুৎসুদ্দীদের মাসত্দান পুলিশ আর দূষিত রাজনীতির ভেতর তার জীবন হয়ে উঠতে পারে দুর্বিষহ। একজনকে গুলি করতে গিয়ে গুলি লেগে যেতে পারে অন্যজনের মাথায়। অথবা এনকাউন্টারে মারা যেতে পারে একই নামের ভিন্ন একব্যাক্তি। এভাবে মানুষের জীবনকে তৃতীয় বিশ্বে গবেট রাষ্ট্র সমুহ নিয়ন্ত্রন করে থাকে। এভাবেই বুদ্ধিজীবি থেকে শুরু করে সর্ব শ্রেণীর মানুষ তাদের সম্ভাবনা সমুহকে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে। এই জন্য সিনিক্যাল হয়ে উঠতে পারার ভেতর বোঝা যায় মানুষ স্বাধীন কিনা। তৃতীয় বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতাকে আমি তাই সিনিক্যাল কমপ্লেক্স বলি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
রায়হান রশিদ - ১০ আগস্ট ২০০৯ (১:৫৮ অপরাহ্ণ)
বেশ আগ্রহোদ্দীপক একটা বিতর্ক হতে পারে ডায়োজেনিস, cynicism এবং তৃতীয় বিশ্বের “স্বাধীন” মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে।