আজো বুকটা ভারী হয়ে আছে। ২০০৪ থেকে ২০০৯, হয়তো অনন্তকাল ধরে, এই আঘাত আমরা ভুলতে পারব না, আমরা যারা লেখক বা লেখক হতে চাই, আমাদের ওপর এই আঘাত, এই আঘাতের প্রতীক হয়ে হুমায়ুন আজাদ, প্রতিদিন আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলতার হিংস্রতার কথা মনে করিয়ে দেবে। সফদর হাশমি যেমন ভারতে আমাদের দেশে হুমায়ুন আজাদ, আমরা ভুলতে পারব না, ভুললেই শেষ হয়ে যাব, বুকটা ভারী হয়ে আছে, প্রকাশ অক্ষম, কিন্তু সাবধান, শুধুই সাবধান। আমরা আজ ২০০৮-এর নির্বাচনের পর যে সময় কাটাচ্ছি, তাতে নিরাপদ বোধ করলে চরম ভুল করব। তাই ১২ আগস্ট-কে আমাদের আরো ব্যাপক পরিসরে পালন করা উচিত, লেখকদের ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’র মতো একটি আন্দোলনের কথা ভাবা উচিত, আরো ঐক্যবদ্ধ শক্তিই পারে লেখকদের আরো স্বাধীন করতে, তসলিমা নাসরিন-ও দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে বাহিরে পড়ে আছেন, কিন্তু কেন এমন হবে? ১২ আগস্ট ‘লেখক দিবস’ হয়ে উঠুক, এবং একে ঘিরে লেখকদের সম্মিলন আন্দোলন সম্ভব হোক, এখনই হোক, না হলে বাংলাদেশে লেখকদের ভবিষ্যৎ আরো ভয়ংকর বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

২০ comments

  1. মাসুদ করিম - ১২ আগস্ট ২০০৯ (৯:৪১ পূর্বাহ্ণ)

    প্রথম আলোতে মৌলি আজাদ লিখেছেন : কবির জন্য, কবিতার জন্য

  2. বিনয়ভূষণ ধর - ১২ আগস্ট ২০০৯ (১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    মাসুদ করিম,
    আপনার লেখাটা পড়ে অনেক আশাবাদী হতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু “ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি”-র আন্দোলনের কথা আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যার পরিনতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকেছিলো শুধুমাত্র রাজনীতিকরনের কারনে। আমিও চাই লেখকদের জন্যে একটি “লেখক দিবস” তৈরী হোক কিন্তু তা যেন অবশ্যই রাজনীতিমুক্তভাবে হয়।
    পোস্টখানার জন্যে অনেক ধন্যবাদ!

    • nizam udin - ১৯ আগস্ট ২০০৯ (৮:৩৯ অপরাহ্ণ)

      gh-da-nir andolon’e kaar rajniti prokot hoye uthechilo?amra j dekhi tokhon 1994’er 26 august’e chattragram’er laaldighi, kinba dhaka’r mounchey tupidari r mujibcoatsari!!!

  3. রায়হান রশিদ - ১৩ আগস্ট ২০০৯ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)

    @ মাসুদ ভাই #১,
    পোস্টের শিরোনামটা খুব পছন্দ হয়েছে। চিন্তার ওপর “আঘাত” সত্যিই সব আঘাতের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী। লেখকদের ব্যাপারে আপনাকে (‘না মাসুদ ভাই, তার মৃত্যু হয়নি’) দুটো প্রশ্ন করি, কিছুটা বিদঘুটে শোনাবে হয়তো। পত্র-পত্রিকার কলাম আর ব্লগ কি একজন চিন্তাশীল লেখকের জন্য ক্ষতিকর? কিংবা এসব মাধ্যমে লেখা কি একজন লেখকের মুক্ত/সৎ চিন্তার পথে বিপত্তি তৈরী করে?

    @ বিনয়ভূষণ ধর #২,

    আমিও চাই লেখকদের জন্যে একটি “লেখক দিবস” তৈরী হোক কিন্তু তা যেন অবশ্যই রাজনীতিমুক্তভাবে হয়।

    ‘রাজনীতিমুক্ত’ হওয়া কি আসলে সম্ভব?

    • মাসুদ করিম - ১৬ আগস্ট ২০০৯ (৩:৫৯ অপরাহ্ণ)

      পত্রপত্রিকার কলাম আর ব্লগ কেন চিন্তাশীল লেখকের জন্য খারাপ হবে, যখন সারা পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষেরা কলামে ও ব্লগে তাদের চিন্তাভাবনার কথা লিখছেন এবং প্রচুর পাঠক তা পড়ছেন। নন-ফিকশন লেখার বেশির ভাগই তো এখন কলাম আর ব্লগেই প্রকাশিত। আর মুক্ত/সৎ চিন্তার পথে বিপত্তি তৈরি হয় না শুধু একজনের : তিনি যিনি লেখেন না।

  4. মোহাম্মদ মুনিম - ১৫ আগস্ট ২০০৯ (১২:২০ পূর্বাহ্ণ)

    জেএমবি মফস্বলের একজন লেখককে জবাই করে হত্যা করেছিল, হুমায়ুন আজাদ একজন বিখ্যাত লেখক হওয়াতে আক্রমনের পরে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলেন। মফস্বলের লেখকটি অসহায়ভাবে প্রান দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে রাজনৈ্তিক সমালোচনা মোটামুটি সহ্য করা হলেও ইসলামের সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করা হয়না। এখন ইউরোপে বা আমেরিকাতে বসবাসরত লেখকরাও (বিশেষত মুসলিম লেখকরা) ইসলামের কোন critical analysis স্বনামে লিখতে ভয় পান। Ibn Warraq ছদ্মনামের একজন পাকিস্তানি মুসলিম অনেক বছর ধরে বেনামে লিখছেন, যিনি এখনো তাঁর চেহারা জনসমক্ষে দেখাতে অনিচ্ছুক। আশা করা যায় বাংলা ব্লগের উত্থান এই অবস্থার পরিবর্তনে ভুমিকা রাখবে।

  5. মাসুদ করিম - ১২ আগস্ট ২০১০ (২:৪৩ অপরাহ্ণ)

    আরো এক বছর গেল আমাদের হুমাযুন আজাদকে ছাড়া।

    ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ ছিল তাঁর লেখা সর্বশেষ উপন্যাস। সর্বশেষ এ উপন্যাসটি সর্বনাশ ঘটিয়েছিল এক মহলের। সহ্য করতে না পেরে মাঠ গরম করে তোলে ‘মাওলানা’ হিসেবে পরিচিত, আসলে যুদ্ধাপরাধী সাঈদী। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া যেদিন থেকে ‘প-কিস্তানি’ সহযোগী জামায়াতকে বৈধ করেন, সেদিন থেকেই সাঈদীর উত্থান এবং গত আমলে তার রূপ ছিল ভয়াবহ। বাংলার এ মহান পুরুষকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে ক্ষান্ত হন। এভাবে একজন শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠের অধ্যাপকের জীবনাবসান ঘটানো হয়। সৃজনশীল লেখক ও শিল্পী কেউই প্রথাগত নয়, বন্দি নয়, তিনিও মুক্ত হতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা ছিল তাঁর ধর্ম। তাঁর রক্তের বিনিময়ে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে যে-জাগরণ ও গণ-আন্দোলন ঘটেছিল, তা রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা বিশ্বে তোলপাড় হয়েছিল। বুঝতে পারেনি সেই যাযাবররা। কলমের কাছে চাপাতি বন্দি।

    অনন্য আজাদ লিখেছেন কথাগুলো, আজকের কালের কণ্ঠে, বিস্তারিত পড়ুন এখানে

  6. মাসুদ করিম - ১৩ আগস্ট ২০১০ (১১:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    ইউটিউবে হুমায়ুন আজাদ কে নিয়ে ইটিভির নিউজক্লিপ

  7. মাসুদ করিম - ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ)

    চট্টগ্রামের শিক্ষিত মানুষের কাছে চট্টগ্রাম কলেজ গৌরবের, আমার কাছে চট্টগ্রাম কলেজ এক জঘন্য অবরুদ্ধ বিকৃত শিক্ষাঙ্গন, শিবির এখানে আছে প্রায় আড়াই দশক, এই কলেজের মেইন গেইট ‘A K’ আইয়ু্ব খানের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে পাকিস্তান আমলে আইয়ুবপ্রেমী উৎসাহী এক মিস্ত্রির বানানো, আমাদের সময় আমরা একবার এই গেইট ভেঙ্গে ফেলে আমাদের তোলা টাকায় একটা নতুন গেইট বানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম, সেই পরিকল্পনার শুরুতেই পানি ঢেলেছেন আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী কিছু শিক্ষক, আমাদের বলে দিয়েছিলেন ‘শিবির’-এর চোখের সামনে এরকম ঘটনা কেউ ঘটাতে পারবে না, হ্যাঁ — আমরাও পারিনি, মূলত পারার পথেই যেতে পারিনি। সেই চট্টগ্রাম কলেজে আইয়ুব খানি ক্রিয়াকাণ্ডই চলছে। সম্প্রতি এই ক্রিয়াকাণ্ডের সাথে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষও যোগ দিয়েছেন

    ভাষার মাসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলেজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বুকলেটে স্থান পায় হুমায়ুন আজাদের ‘বাঙলা ভাষা : তোমার মুখের দিকে’ শিরোনামের কবিতা। ভাষার মাসে এমন একটি কবিতা স্থান দেওয়ায় অবশ্যই আয়োজকরা ধন্যবাদ পেতে পারেন। কিন্তু সেখানেও আঘাত এসেছে। ভাষা-সংক্রান্ত এই কবিতাটি মুদ্রিত হওয়ার পরও সেখানে স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে; যাতে শিক্ষার্থীরা হুমায়ুন আজাদের সেই কবিতা পড়া থেকে বঞ্চিত হয়। এর পেছনে ছাত্রশিবিরের মদদ আছে বলে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা কি অমূলক? হুমায়ুন আজাদের কবিতায় এভাবে স্টিকার লাগানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে যা উপস্থাপিত হয়েছে, তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। কলেজের অধ্যক্ষ দেশের বড় বড় কবির কবিতা না ছাপিয়ে হুমায়ুন আজাদের কবিতা ছাপা হওয়া ঠিক হয়নি বলে যে উক্তি করেছেন, এটিও কবিকে হেয় করার শামিল এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে গা বাঁচিয়ে চলার উপায় বলে মনে করতে হবে। অধ্যক্ষ বড় আর ছোট কবি পরিমাপের কোন পদ্ধতি বিবেচনায় এনে এহেন মন্তব্য করেছেন, তা-ও প্রশ্নের মুখে।

    আজ সেই ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালের এইদিনে বাংলা একাডেমী বইমেলা থেকে ফিরবার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করার জন্য জঙ্গি আঘাত হানা নয়। আর আজ কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয়তে পড়ছি এবার স্টিকার দিয়ে তার কবিতা ঢেকে দেয়া হচ্ছে — লেখককে খুন করার আঘাতের পর এবার লেখকের কবিতার উপর আঘাত — তার চেয়েও বড় আঘাত ওই অধ্যক্ষের সাফাই ‘ছোট কবি’র কবিতা কেন? — এমনোভাব শুধু এই অধ্যক্ষের নয়, অধ্যক্ষের তো এখানে শিবিরের ভয় কাজ করেছে, এমনোভাব আমাদের পাঠক ও লেখকদের অনেকেরও যারা সবসময় হুমায়ুন আজাদকে ‘কোমল’ ফ্যাসিজমে প্রত্যাখ্যান করেন।

  8. মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০১১ (২:২২ অপরাহ্ণ)

    ১২ আগস্ট স্মরণে মৌলি আজাদ লিখছেন

    জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি, রাড়িখালের পুকুর, মেঠোপথ, কড়িফুল, শীতের শিশির, গ্রীষ্মের রোদ, বর্ষার প্লাবন, ফাল্গুনের সবুজ পাতার সৌন্দর্য বারবার বাবার বিভিন্ন লেখায় এসেছে। বাবা রাড়িখাল গ্রামে ছিলেন মাত্র ১৫ বছর। কিন্তু এই ১৫ বছর সময়কালকে আমি দেখেছি তিনি কখনও ভুলতে পারেননি। মাঝে মাঝে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম তাঁর জীবনের কোন সময়টা সুখকর ছিল? অন্যরা হলে হয়তো বলতেন জীবনের মাঝ বয়সের কথা, কারণ এ সময়ই মানুষের জীবনের বেশিরভাগ সাফল্য এসে ধরা দেয়। কিন্তু বাবা বারবার বলতেন রাড়িখালের মাত্র পনের বছর জীবনযাপনই ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুখকর অধ্যায়।

    তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে থেকে শিক্ষা নিলেও তিনি রাড়িখাল গ্রামের শিক্ষক প্রয়াত বিষ্ণুপদ সেন ও প্রয়াত হোসেন স্যারকে কখনও ভুলতে পারননি, কারণ এ দুজন শিক্ষকই তাঁকে প্রথার বাইরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি সব সময় সমাজসংস্কৃতির যে কোনো প্রথাগত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে কথা বলতেন। লেখালেখির স্বার্থে তিনি তাঁর পিতৃপ্রদত্ত হুমায়ুন কবীর নামটিও ঝেড়ে ফেলতে দ্বিধা করেননি। সব কিছুতে প্রথাবিরোধী হলেও সংসার জীবনটা তিনি কাটিয়েছেন একরকম প্রথাবদ্ধভাবেই। সেই সকাল ৮টায় ঘুম থেকে ওঠা, প্রাতঃরাশ সারা, টেলিফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভক্ত ও সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করা, নিজের লেখালেখিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকা, রুটিন মাফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া আর বিকেলবেলা আজিজ মার্কেট/সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তরুণ ভক্তদের সাথে যুক্তিতর্কই ছিলো তাঁর বেঁচে থাকা জীবনের রুটিন। সংসারের কাজও করতেন আনন্দের সাথে, প্রথাবিরোধী হবার সুবাদে সংসারকে ফাঁকি দিতে তাকে দেখিনি। খুব বেশি সাদাসিধে জীবনযাপনকেই পছন্দ করতেন। বৈষয়িক চিন্তাভাবনা জীবনে কখনও ঠাঁই তিনি দেননি। তোষামোদি করে উপরে ওঠার ধাত তাঁর ছিল না। সহ্য করতে পারতেন না ধর্মীয় উগ্রতা ও নারীর স্বাধীনতাহীনতা।

    সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, বিজ্ঞান ও রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ের উপরে ছিল তাঁর বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার। কিভাবে যে তিনি এত বই পড়তেন তা ভেবে অবাক হতাম। আমাদেরকেও বিভিন্ন রকম বই পড়তে বলতেন, পড়তাম আর বইয়ের মূল্য যে কি তা অনুধাবন করতাম। তিনি আমার বাবা না হলে হয়তো বইয়ের প্রতি আমার আজ এত ঝোঁক হত না। তিনি খুব বেশি ভ্রমণ পিয়াসী ছিলেন না মোটেই। তাঁর ভ্রমণ বলতে ছিল কেবল- রাড়িখাল গ্রামে ভ্রমণ। রাড়িখালকে তিনি খুব পছন্দ করতেন, সেই রকমই পছন্দ করতেন বাংলা একাডেমীর বইমেলাকে। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটাই তিনি যারপরনাই উপভোগ করতেন। বই, বইমেলা আর শিক্ষকতাই ছিল তাঁর জীবনের সব। তাঁকে আমি কখনও রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি করতে দেখিনি।

    তিনি ২০০৪ সালে সে সময়কার ক্রান্তিকালের সমাজ চিত্র লিখেন তাঁর ‘পাকসার জমিন সাদবাদ’ নামক বইয়ে। আর তাঁর জন্য নির্মমভাবে ২০০৪ এর ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাএকাডেমীর বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে তিনি মৌলবাদীদের হাতে চরমভাবে আক্রান্ত হন এবং সেই আঘাতের পরিক্রমায় ১২ আগস্ট জার্মানীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

    ২০১১ সালের ১২ আগস্ট আমার বাবা প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে তাঁকে জানাই সালাম। ভাবি আজ তিনি বেঁচে থাকলে ২০১১ সালের এই মুক্ত পরিবেশে তিনি বহু কালজয়ী লেখা লিখতে পারতেন, অগনিত পাঠক আজ যেমন তাঁর লেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনি বেঁচে থাকলে তারা আজ তাঁর লেখা থেকে বঞ্চিত হতো না। বাবার হত্যাপ্রচেষ্টার মামলাটি এখনও চলছে। আশা রাখি, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে আর দেশ হবে এক সৎ মেধাবী লেখকের হত্যা প্রচেষ্টার বিচার করে ভারমুক্ত। কারণ আমরাতো এরকম বাংলাদেশই চেয়েছিলাম।

    বিস্তারিত পড়ুন : আমার বাবার জীবনদর্শন

  9. মাসুদ করিম - ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৬:১১ অপরাহ্ণ)

    সেই ভয়াবহ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪এর খবর ‘ডেইলি স্টার’এ

  10. রেজাউল করিম সুমন - ১২ আগস্ট ২০১২ (৮:৫২ অপরাহ্ণ)

    মুক্তমনায় অভিজিৎ রায়ের পুরোনো স্মৃতিচারণ :‘স্মৃতিতে হুমায়ুন আজাদ’ [লিংক]

  11. মাসুদ করিম - ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৪:৪৫ অপরাহ্ণ)

    হুমায়ুন আজাদ হত্যায় অভিযুক্ত পাঁচ জঙ্গি

    লেখক ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

    সোমবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া জিন্নাহ এ অভিযোগ গঠন করেন।

    আসামিরা হলেন- মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেল। এরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

    মামলার বাদী ও হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

    এ মামলায় নূর মোহাম্মদ শামীম পলাতক। বাকি চারজন এদিন আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে নিজেদের পক্ষে শুনানি করেন।

    তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় আসামির তালিকা থেকে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বাদ দিয়ে গত ১৪ মে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

    শুরুতে হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও এই সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়।

    ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাংলা একাডেমীর উল্টো দিকের রাস্তায় হুমায়ুন আজাদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।

    কয়েক মাসের চিকিৎসার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

    মামলাটিকে হত্যামামলা হিসেবে রূপান্তরিত করার কারণ হিসেবে অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাক্ষ্য প্রমাণ, চিকিৎসা প্রতিবেদন, জার্মানি থেকে পাঠানো মৃত্যু সনদ, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও শবদেহ পরীক্ষার (অটোপসি) প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, হামলার শিকার হওয়ার পর হুমায়ুন আজাদ হাইপার টেনশন রোগে আক্রান্ত হন। আসামিদের আক্রমণের ফল হিসেবেই এই লেখক মারা যান।

    হুমায়ুন আজাদ নিজেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলার পেছনে মৌলবাদী সংগঠন এবং দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জড়িত থাকার ইংগিত দেন সাংবাদিকদের কাছে।

    এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

    গত বছরের ২২ মে এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলাতে অভিযুক্ত।

  12. মাসুদ করিম - ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ (১:১০ অপরাহ্ণ)

  13. মাসুদ করিম - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (২:১৯ অপরাহ্ণ)

    হুমায়ুন আজাদ হত্যা: দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবরোধের খাড়া

    হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার ১১ বছর পূর্ণ হতে চললেও এখনো বিচার পায়নি তার পরিবার ও ভক্তরা। বিচার কাজ অনেকটা এগোলেও বিরোধী জোটের অবরোধে ফের মাঝখানে আটকে গেছে।

    গত এক মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ চালিয়ে আসা বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।

    তার ওপর হামলার জন্য নিজেই মৌলবাদী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

    ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার চলছে।

    এ আদালতের পেশকার ফয়েজ আহমেদ জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০টি আলোচিত মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলাও রয়েছে।

    তারপরও মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের উপস্থিতির অভাবে ঝুলে যাচ্ছে বিচার কাজ।

    গত ১৪ জানুয়ারি থেকে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন দিন রাষ্ট্রপক্ষের ১৯ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন বিচারক। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, হাকিম, চিকিৎসককে আদালতে আনতে গত ১২ নভেম্বর জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

    এরইমধ্যে গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবরোধ ডাকেন। নিরাপত্তার কারণে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে না আনতে পারায় গত এক মাসে তিন দফা পিছিয়ে যায় মামলার শুনানি।

    রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী হাজির থাকলেও গত ১৪ জানুয়ারির পর ৫ ও ১১ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী আসামিদের সামনে সাক্ষ্য নেওয়ার নিয়ম থাকায় তা পিছিয়ে যায়।

    এ আদালতের বিচারক রুহুল আমীন আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন রেখেছেন।

    রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ বি এম বশির উদ্দিন মিঞা ও বিপুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, এ মামলার বিচার অনেক দূর এগিয়েছে।রাষ্ট্রপক্ষে ৫৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়েছে।

    “কিন্তু মামলা প্রমাণে অতি গুরুত্বপূর্ন চার থেকে পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া এখোনো বাকি রয়েছে। অবরোধ না থাকলে কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামিদের নিয়ে আসা সম্ভব হত এবং মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলতি মাসেই শেষ করা যেত।”

    এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেল।

    এরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। আসামিদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে সাবু, মিনহাজ, সালেহীন পলাতক রয়েছেন।

    মামলার আসামিদের মধ্যে জেএমবির শূরা সদস্য আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ কারাগারে আছেন। শুনানি চলাকালে তাদেরই আদালতে হাজির করা হয়ে থাকে।

    পলাতক তিন আসামির মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক এবং সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিনকে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে পুলিশ ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। আর নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু শুরু থেকেই পলাতক।

    তাদের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচার কাজ চলছে। মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তির ৩০২ ধারা থাকায় পলাতক আসামি মিনহাজ ও সালেহীনের পক্ষে রাষ্ট্রের খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

    ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাংলা একাডেমীর উল্টো পাশের ফুটপাতে হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।
    তার ওপর হামলার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। কয়েক সপ্তাহ আন্দোলনের এক পর্যায়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ, যাতে আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েক শিক্ষার্থী।

    হুমায়ুন আজাদের ওপর চরমপন্থী ইসলামী জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

    কয়েক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ওই বছর ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

    প্রথমে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়।

    ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেএমবির ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন হয়।

    হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে আসামি করা হলেও পরে তাকে বাদ দেয়া হয়।

  14. মাসুদ করিম - ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (৭:১৭ অপরাহ্ণ)

    উত্তর নেই ‘স্তম্ভিত’ পুলিশের কাছে

    চারপাশে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার পরও বাঙালির সংস্কৃতি ও মননের প্রতীক একুশে বইমেলা থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মতো একইরকম ‘জঙ্গি কায়দায়’ লেখক অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশও স্তম্ভিত।

    বৃহস্পতিবার রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে যে স্থানটিতে অভিজিতের ওপর হামলা হয়, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই ছোটবেলা কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই লেখকের। তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অজয় রায় এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছেন ‘উগ্র জঙ্গিবাদীদের’।

    পুলিশও জঙ্গিবাদীদের দিকে আঙুল তুলেছে, কিন্তু শাহবাগ থানা থেকে মাত্র আড়াইশ গজ দূরত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে কীভাবে তারা একই কায়দায় বার বার হামলা করছে তার কোনে সদুত্তর পুলিশ কর্তাদের কথায় মেলেনি।

    ঢাকার পুলিশ কামিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জঙ্গিরা কতোটা ডেসপারেট হতে পারে তার প্রমাণ দিয়েছে গতকাল। পাশেই থানা, বইমেলার প্রবেশমুখে পুলিশ, সবগুলো প্রবেশপথে পুলিশ… এরপরও এখানে একটা ঘটনা ঘটিয়ে গেছে তারা।”

    বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে আহত করা হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে।

    ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অভিজিতের। বন্যার চিকিৎসা চলছে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।

    গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আসার পর প্রতিদিনই বইমেলায় যাওয়া আসা করছিলেন অভিজিত। বৃহস্পতিবার রাতে যে জায়গায় তার ওপর হামলা হয়, ওই পথ দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বইমেলায় যায়, চলাফেরা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

    ঘটনাস্থল থেকে টিএসসি মোড় আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথের দূরত্ব ২৫ গজ। টিএসসি মোড়ে মেলার জন্য ব্যারিকেড দিয়ে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসই পাহারায় রয়েছে পুলিশ।

    এছাড়া দুইশ গজ দূরে শাহবাগ থানা। শাহবাগ মোড়, বইমেলা পেরিয়ে দোয়েল চত্বর, ফুলার রোডের মোড়, নীলক্ষেতসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশমুখে রয়েছে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা।

    তারপরও কীভাবে এরকম একটি হত্যাকাণ্ড ঘটল, হামলাকারীরা কীভাবে কাজ শেষে নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেল, হত্যাকাণ্ডের পর একদিন পার হতে চললেও পুলিশ কেন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারল না- এসব প্রশ্নের জবাব নেই শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের কাছে।

    তিনি বলেন, “আনসার বাংলা সেভেন নামের একটি গ্রুপ টুইটারে এ হত্যাকাণ্ডকে নিজেদের বিজয় বলেছে। আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, জঙ্গিরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।”

    ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম নামে এক ফুল বিক্রেতার বরাত দিয়ে ওসি বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দুজন। এর মধ্যে একজনের গায়ে ছিল সাদা শার্ট, অন্যজন কোট পরে ছিল। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মতো। মুখে দাড়ি ছিল কি না সেলিম তা জানাতে পারেননি।

    “তারা এক থেকে দুই মিনিট সময় নিয়েছে। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে। কাছেই দাঁড়ানো সেলিম চিৎকার করে উঠলে হামলাকারীরা তাড়া করে। প্রাণভয়ে সেলিম সেখান থেকে দৌড়ে সরে যায়।

    অভিজিৎ ও বন্যার ওপর হামলার পর রাতে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা দুই হামলাকারীকে দুই দিকে যেতে দেখেছেন। এরমধ্যে একজন যায় সোহরাওয়ার্দীর দিকে, অন্যজন মিলন চত্বরের দিকে।

    অভিজিতের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও বলেছেন, অভিজিতের মাথায় ‘অত্যন্ত দক্ষ হাতে হিংস্রভাবে’ ধারালো অস্ত্রের তিনটি কোপ দেওয়া হয়েছিল, যাতে বোঝা যায় কোথায় আঘাত করলে মৃত্যু হবে সে সম্পর্কে পুরো ধারণা খুনির ছিল।

    শাহবাগ মোড় থেকে জাতীয় জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা অনুষদ, ছবির হাট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, টিএসসি, এরপর বাংলা একাডেমী এবং বইমেলা চত্বর- এই পুরো এলাকা ঢাকা শহর ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি মননের কেন্দ্রবিন্দু। এখানেই প্রতি ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা ঘিরে লেখক, পাঠক, সংস্কৃতিকর্মী ও মুক্তমনাদের মিলন মেলা বসে।

    ২০০৪ সালের এইদিনে অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখক হুমায়ুন আজাদকেও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় এই টিএসসি এলাকায়।

    টিএসসি ভবন থেকে মাত্র শ’ খানেক গজ দূরে ফুটপাতের ওপর ফেলে কোপানো হয় তাকে, যে ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

    সেই বইমেলার মাসে সেই তারিখের একদিন আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হলেন অভিজিত যিনি সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর লেখালেখি করে আসছিলেন নিয়মিত। এ জন্য তাকে হুমকিও পেতে হয়েছে।

    একই স্থানে আবারও একজন লেখক হামলার শিকার হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বইমেলার প্রকাশক, লেখক, পাঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যেও।

    অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “দেশের কোনো জায়গায় এখন কোনো সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা আছে? এই বইমেলা প্রাঙ্গণে হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য যেভাবে আহত করা হয়েছিল, তারপর থেকে আমরা লেখক-শিল্পী সমাজ তো আর নিরাপত্তা বোধ নিয়ে চলতে পারছি না। মৃত্যু মাথায় নিয়ে এরকম জায়গায় কত দিন বাস করব আমরা?”

    তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “বলেন কেন আমি বই মেলায় যেতে পারি না? কেন মামুন (মুনতাসির মামুন) বইমেলায় গেলে এক দঙ্গল ছাত্রকে নিরাপত্তা বলয় হিসাবে নিয়ে যায়? ২০১৩ সালে অভিজিতের বাবা অজয় রায়কে মৌলবাদীরা নাস্তিক-মুরতাদ ঘোষণা দিয়েছিল। আর অভিজিতের ওপর তো বেশ কয়েকবার থ্রেট করেছে।”

    মোবাইল ও অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জঙ্গিদের তৎপরতার ওপর নজর রাখলে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী সহজেই তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারে বলে মনে করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদ সুমন বলেন, “এরপর কে? আমি, নয়তো আপনি। আমরা তো কেউ আর নিরাপদ না। চাপমুক্ত থেকে বইমেলায় ঘুরব, সেই স্বস্তি তো নেই। ”

    দশ বছর পেরিয়ে গেলেও হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টার বিচার হয়নি বলেই অভিজিৎ রায় আজ খুন হলেন বলে মন্তব্য করেন শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান।

    কিন্তু পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এ অভিযোগ মানতে রাজি নন শাহবাগের ওসি।

    তিনি বলেন, “পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। পুলিশ সবসময়ই সাধ্যমত চেষ্টা করে থাকে। তারা সবসময়ই চায়, যেন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”

    পুলিশের নিরাপত্তায় দুর্বলতার কথা মানতে চাননি পুলিশ কামিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও। তবে পুলিশের নাকের ডগায় আবারও একই ঘরনের হামলায় তারাও যে স্তম্ভিত, তা তার কথাতেও স্পষ্ট।

    তিনি বলেন, হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার রাজিব আর অভিজিত হত্যার ঘটনা ‘একই সূত্রে গাঁথা’।

    “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটা জঙ্গিদের কাজ। এতো কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও যে তারা এটা করেছে তাতে প্রমাণ হয় তারা কতোটা ডেসপারেট।”

    জঙ্গিদের নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার ইংগিত দেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই জঙ্গি আখড়া থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

    “যারা চাকু ছুরি নিয়ে হত্যা করতে এসেছিল তারা কেউ বাইরে থেকে আসেনি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক।”

  15. মাসুদ করিম - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (৯:৪৮ অপরাহ্ণ)

  16. মাসুদ করিম - ১ জানুয়ারি ২০১৯ (৯:৩০ অপরাহ্ণ)

  17. মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৯ (৯:০০ পূর্বাহ্ণ)

    হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার ‘শেষ পর্যায়ে’

    দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা লেখক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলা বিচারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

    সোমবার আলোচিত এ মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১৭ জুন দিন ঠিক করে দিয়েছেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীন।

    এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি বিপুল দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ মামলার বিচার অবশেষে শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করে দেবে। আশা করছি, শিগগিরই এ মামলার রায় হবে।”

    এ মামলার দুই আসামি জেএমবির শূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক এবং আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদের আত্মপক্ষ শুনানি সোমবার শেষ হয়। দুই আসামিই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

    ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাতে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুপপাতে আক্রান্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ, যিনি তার লেখার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি পেয়ে আসছিলেন। একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করা হয়।

    বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। কয়েক সপ্তাহ আন্দোলনের এক পর্যায়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ, আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

    চরমপন্থী ইসলামী জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদের ওপর ওই হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

    কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ওই বছর ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

    হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর সেই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

    সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

    মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেলকে সেখানে আসামি করা হয়।

    ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

    আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আটক রয়েছেন। নূর মোহাম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

    সালাহউদ্দিন সালেহীন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফেজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

    হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে এ মামলার আসামি করা হলেও পরে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.