আমাদের সাধারণ বুদ্ধির মধ্যবিত্ত নিরাপত্তা-বোধের মুখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো (অথবা অভয় দেখানো) একটি কৃশকায়, খর্বকায় মানুষের বেশ একটা জম্পেশ বড় মাপের দীঘল জীবন চোখের সামনে খাপ খোলে, বিশ্বাস হয় না সব কথা -- কখনো কষ্ট হয়, কখনো ঈর্ষা হয়, কখনো বাকরুদ্ধ ভালবাসায় ভরে যায় মন।লিখেছেন কোনো এক কাবুলিওয়ালার কাছে বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ঋণের সুদের মাসিক বকেয়া মেটানোর তাগিদে । লিখতে কি ভালো লাগে মশাই? আমি তো লিখে খাই, খেয়ে লিখি -- ইত্যাকার হাস্য-উর্দ্রেককারী টিপ্পনি, অথচ হেসে উড়িয়ে দেবার জো নেই এই সব আপাত বুদবুদের মত নিঃসংকোচ কথাকে । [...]

শিবরাম বা শিব্রাম চক্রবর্তীর বেজায় মিষ্টির আসক্তি । বিশেষ করে রাবড়ি বা রসগোল্লা জাতীয় রসের মিষ্টি । এর সঙ্গে তার একান্ত উপাদেয় রসে টইটম্বুর লেখার কোনো যোগাযোগ বোধহয় --- টক ঝাল মিষ্টি তেতো কষায়, যেকোনো অভিজ্ঞতাকে মধুর প্রলেপ দিয়ে, আগাগোড়া সুমিষ্ট লেখনীর রসে জারিয়ে রসনা ও মনের খোরাক করে তোলা কম কথা নয় । বইখানা পড়ে একটু প্রসন্ন আশ্চর্য-ভাবাপন্ন মুগ্ধতায় আপ্লুত আছি । এবার বিদিত থেকে আনা, শিব্রামের ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা, তাঁর অদ্বিতীয় আত্মজীবনীর প্রথম ভাগ । কথার পিঠে কথার খেলা, শব্দের লোফালুফি, বিনা লাফালাফিতেই তিনি যেভাবে ব্যবহার করে থাকেন, তাতে তাঁকে king অফ puns বলাই যায় অনায়াসে -- সেই পানাভ্যাসে আমরাও আসক্ত, আরক্ত না হয়ে পারছি না দেখা যায়! তাঁর এই অনুপ্রাসিক শব্দের অক্লেশ, অহর্নিশ জাগলিং, জিমন্যাস্টিকস-এর জেল্লায় আমাদের কিশোর-পাঠে হর্ষবর্ধন গোবর্ধনের পার্টনারশিপ আমাদের রাম-হাসি বা শিবরাম-হাসি সাপ্লাই করেছিল নিশ্চয়ই । কিন্তু তাঁর জীবনকাহিনী আমার পড়া অন্য জীবনকাহিনী থেকে বিসদৃশ ভাবে আলাদা । কেন? তাই ব্যক্ত করার দুর্বল চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছি। শুরুতেই শিবরাম বলে নিয়েছেন তাঁর শৈশব ছিল ঈশ্বর-পীড়িত । মা বাবা দুজনই অসাধারণ দুটি মানুষ কিন্তু তাঁর । পরে বুঝতে পারি তাঁর Bohemian জীবনের বীজ ওই বাবার বৈরাগী পদ্ব্রাজক ভাব, আর মার নিরাসক্ত আত্মশক্তির মধ্যেই বোধ হয় । চাঁচোলের এক রাজ-পরিবারেই তাঁর জন্ম -- সম্পর্কের কাকা ছিলেন রাজা, কিন্তু রাজ-জোটক ছিল না তাঁর কপালে । বাবা ছোট বেলায় সংসার-ত্যাগী সন্ন্যাসী হয়ে ছিলেন, পরে এসে বিয়ে করেন তাঁর মা-কে । দুজনই সাদাসিধে মানুষ, গন্য মান্য ছিলেন, কিন্তু মনে হয় কোনো উন্নাসিকতার মধ্যে ছিলেন না । মা-ই ছিলেন শিব্রামের গুরু, বন্ধু, সবই । তাঁর কাছেই তিনি যা কিছু সার শিখেছেন । তার পর তার সঙ্গে জারিয়ে নিয়েছেন জীবনের অভিজ্ঞতা । ওই বাড়ির পাশেই প্রতিবেশীর কন্যা রিনির সঙ্গে শিব্রামের বন্ধুত্ব এবং বাল্যপ্রেম । একেবারেই মধুর, বাল্যকাল থেকে বয়ঃসন্ধির টলটলে আবেগে ভরা । সবচেয়ে সুন্দর হলো, এই প্রেমে আপাত ভাবে কোনো অপরিচয়ের আড়াল, কোনো রহস্য ছিল না । পুরোটা স্বচ্ছ ও অবারিত । রিনিকে নিয়েই সেসময় শিব্রামের জগত আবর্তিত । কিন্তু রিনিরা সপরিবারে কলকাতায় চলে যায়। রিনির মা ভেবেছিলেন সেখানে রিনিদের বিয়ের…

বইটি পড়ে ইস্তক শৈশবে বিচরণ করছি । দক্ষিণের বারান্দা । লেখক, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি, মোহনলাল গঙ্গোপাদ্যায় । একজন আত্মীয়াকে দিয়েছিলাম পড়তে, বললেন, শিশুদের জন্যে লেখা মনে হলো । একটু অবাক হলাম । শৈশবের কথা লিখলেই সেটা কি শিশুদের? নাকি আমরা বুড়ো হয়ে শৈশবে ফিরতে ভুলে গেছি! অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় সকলকার মত, ক্ষীরের পুতুল, বুড়ো আংলা, রাজকাহিনী বা নালক পড়ে, ছোট বয়েসেই । আমার বুড়ো প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ আমাকে মার্জনা করুন, কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা কিশোর-সাহিত্যের শতদল সম্পূর্ণ বিকশিত হয়েছে বলে মনে হয় | কিশোরদের মন ধরতে তিনি বেশি সক্ষম, অন্য তত্কালীন লেখকের চেয়ে । তারপর আরো লেখক এসে তুলি ধরেছেন, শব্দ দিয়ে ছবি এঁকেছেন, তবে গোড়ার কাজটা অনেকটাই তাঁর। ভাষার স্বচ্ছতা, সাম্পান-ঋজুতা, মিষ্টি স্বকীয়তা, বৈঠকী ইনফরমাল চাল, শব্দ দিয়ে ছবি আঁকা, এই সব নিয়ে কৈশোরক স্রোতস্বিনী থেকে সর্বহৃদয়-গ্রাহ্য সমুদ্রে পৌঁছেছেন অবন ঠাকুর । তাঁর সেই প্রিয় পাঁচ নম্বর বাড়ি, (জোড়াসাঁকোর পাশের বাড়ি) তাঁর জীবন নিয়ে কৌতুহল ছিল খুব । বইটি anecdotes এ ভরা, কিন্তু তার ভেতর থেকে সম্পূর্ণ মানুষটাকে চোখের সামনে পেতে একটুও অসুবিধে হয় না । স্মৃতিমেদুর বাড়িটি তাঁদের, যেদিন বিক্রি করে দিয়ে চলে যেতে হলো, সেইদিন সেই ঘটনায় অনুরণিত হয়ে নাতি মোহনলাল তার গভীর ও অমূল্য স্মৃতির খনি থেকে তাঁর শৈশব কৈশোর ও প্রথম তারুণ্য বিজড়িত সেই বাড়িটি, এবং বাড়িতে যাঁরা ছিলেন সেই তিন ভাই - অবনীন্দ্র, সমরেন্দ্র ও গগনেন্দ্রর স্মৃতিময় খনিজ উদ্ধার করেছেন । রীতিমত ঝরঝরে স্ফটিক-গদ্যে । শৈশবে কি কি করেছিলেন, তাই শুধু দেখা হয় না, শৈশব বিকশিত হতে হলে কেমন মানুষের দরকার আশেপাশে, তারও একটা ছোটখাটো দৃষ্টান্ত বোধ হয় পাওয়া যায়। অবনীন্দ্রনাথ যে অবনীন্দ্রনাথ, এ কথা ভুলে গিয়েই পাঠকের বেশি আনন্দ; নাতির সঙ্গে 'স্বপ্ন-মোড়কে' স্বপ্ন লিখে হাতেলেখা একটি পত্রিকা চালু করতে উত্সাহ দিচ্ছেন, নিজে লিখছেন, পাথর কোড়াচ্ছেন, যাত্রা পালা লিখছেন, যাত্রায় সবাইকে ঢুকিয়ে নিয়ে উত্সাহ দিচ্ছেন, বাগানে জাপানি মালিকে দিয়ে বনসাই করাচ্ছেন, ভাঙ্গা পাথরবাটি দিয়ে চমত্কার ভাস্কর্য বানিয়ে ফেলছেন, আরব্য রজনীর গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে ছবি আঁকছেন, বাগানে বিদেশী পাখি আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছেন, তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন -- যেন তারা পাঁচ নম্বরের বাগান আলো করে থাকে, লবন…

অমিতাভ ঘোষের সাক্ষাত্কার শুনছিলাম । সম্প্রতি তাঁর 'এম্পায়ার ট্রিলজি' উপন্যাসের প্রথমটি পড়েছি । অমিতাভ ঘোষের সঙ্গে পাঠক হিসেবে আমাদের পরিচয় বেশ কিছু দিনের, আর নির্দ্বিধায় বুঝতে পারি, এই বইটি আমাদের এই লেখককে আবার নতুন করে চিনতে, শ্রদ্ধা করতে শেখায় । এমন কি লেখকের বিপুল প্রতিভার উপযুক্ত আধার যেন এই বই-এর 'প্যানোরমিক' ক্যানভাসে পাই। ইতিহাসের পাতা খুলে যায় তাঁর লেখায় | ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অজানা, অদেখা, অলব্ধ ছবি চোখের সামনে খাপ খুলে উপস্থিত হয় । বিষয়টি বেশ ছড়ানো । আইবিস -- একটি ব্রিটিশ বেনিয়া জাহাজ ; এর গতিপথ ধরে, বিচিত্র মানুষের জীবনের জঙ্গমতা জড়িয়ে, উত্তুঙ্গ জীবনের তাপে, চাপে, ভঙ্গুরতায়, এক চলমান, বিস্ফারিত চালচিত্র । যার সুতো ধরে রাখে ভারতকে ব্যবহার করে, ব্রিটিশদের ঊনবিংশ শতকের আফিম ও শ্রম ব্যবসা । আইবিস কে কেন্দ্র করে লিখিত এই উপন্যাসে তিনটি ভাগ দেখা যায় - ১) স্থলে ২) নদীপথে এবং ৩) সমুদ্রে । মূল বিষয়টি যদিও নাম থেকেই আমরা আগে জেনে নিয়েছি; অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বদৌলতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার পায় -- এবং খুব দ্রুত, চীনে আফিম ব্যবসা শুরু করে। ভারতেই শুরু হয় সেই আফিম চাষ । এই আফিমের মুনাফা তত্কালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ১৫% বা তার বেশি ছিল -- উপন্যাসের বাইরেও এই সম্পর্কে যত্সামান্য পড়াশুনো করেই তা বুঝতে পারা যায় । বিষয়টি যেহেতু ইতিহাস-পাঠ্যপুস্তকে কখনো উঠে আসেনি, অমিতাভ ঘোষ ব্যাপারটিকে (তাঁর অন্যান্য বই এর মতই) গভীর ও উপর্যুপরি অনুসন্ধান করে তুলে এনেছেন কঠিন বাস্তবের রেখায় । আফিমের এই ব্যবসায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যে লাভ করছিল, তা একক ভাবে আর অন্য কোনো ব্যবসা থেকে করতে পারেনি । বিনিময়ে তারা চীনের রেশম, রুপো, আর চা আমদানী করছিল । কিন্তু এই অবাধ মুনাফায় বাধ সাধছিলো চীন - বলা উচিত সাধারণ মানুষ । নেশা হিসেবে এই ভয়ংকর জিনিসটির আমদানী কিন্তু স্বয়ং ব্রিটেনে খুব সন্তর্পনে, খেয়ালের সঙ্গে, সীমাবদ্ধতা রেখে করা হত। কিন্তু উপমহাদেশে আফিমের ব্যবহার ও প্রচার ছিল অবাধ। ওষুধ হিসেবে বা চিকিত্সা শাস্ত্রের বাইরে এর ব্যবহার সাধারণ মানুষের চেতনার ওপর এক ভয়াল থাবার মত এসে পড়েছিল। আফিম শ্রমিকদের জীবন ছিল দুর্বিষহ। গল্পে এক জায়গায় এই কারখানার যুতসই বর্ণনা…

চলচ্চিত্র সমাজের কথা বলে। আসলে কোন চলচ্চিত্রই সমাজ ও সময়ের বাস্তবতাকে সচেতন বা অবচেতনভাবে উপেক্ষা করতে পারে না। বলা যায়, চলচ্চিত্র এমন একটি শিল্প মাধ্যম যার সৃজনশীল বা বিনোদন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সময়ের ভাবনা, সংকট, দর্শন, ধর্ম, সীমাবদ্ধতা, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট যেন অন্তর্নিহিত থাকে। আর তাই, এই আলোচনার প্রয়োজনীয়তা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায় এর কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ এর সার্থক চলচ্চিত্রায়ন করেন সত্যজিৎ রায় ১৯৫৫ সালে। জানা মতে, উপন্যাসের সময়কাল ১৯৩০ এর দিকে এবং বিভূতি বাবু সেই সময়ের বাংলার প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের জীবন-সংগ্রামের এক অনন্য চিত্রায়ন তুলে ধরেন তার উপন্যাসে; যা অনুধাবন পূর্বক সত্যজিৎ রায় সেই মানুষদের বিশ্ব দর্শক এর কাছে নিয়ে এলেন। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এই মুহূর্তে’র উদ্দেশ্য নয়। এমনকি বিভূতি বাবু’র উপন্যাস ও সত্যজিৎ বাবু’র চলচ্চিত্রায়নের কোনো তুলনামূলক উপস্থাপনা করাও লক্ষ্য নয়। এই চলচ্চিত্র আমাদের অনেকের দেখা এবং না’দেখা কারো প্রতি অনুরোধ - সত্বর বাংলা চলচ্চিত্রের এই অতি আবশ্যক শিল্পকর্মটি যেন দেখে নেবার সুযোগ হয়। আমি সরাসরি চলে আসি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে, যিনি আপাত অর্থে (যে সময়ের কথা সত্যজিৎ রায় তুলে এনেছেন সেই সময়ে) সমাজে অবহেলিত, মনোযোগহীন একজন মানুষ। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের এই চরিত্রটি হলেন ‘ইন্দিরা ঠাকুরণ’। সম্পর্কে তিনি দুর্গা-অপু’র পিসী, অর্থাৎ হরিহরের বোন। সিনেমায় আমরা স্পষ্ট পাই না, তিনি কি হরিহরের আপন বোন নাকি দূর সম্পর্কীয়। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি শেষ সময়ে নিজের ভিটে’তে মরতে এসেছেন তাতে আমরা ধরে নিতে পারি, তিনি হরিহরের নিকট বোন-ই। উপন্যাসে বিষয়টি কিভাবে আছে তা ভাবতে চাইছিনা। আমরা মূল চলচ্চিত্রের সাথে ভাবনায় সম্পৃক্ত থাকতে চাই। ইন্দিরা ঠাকুরণ ও দুর্গা ‘ইন্দিরা ঠাকুরণে'র অবস্থানটি একটু বুঝে নেই - অতিশয় বৃদ্ধা এই মহিলা বিধবা - স্বামী,সন্তানহীন। পিতৃপ্রদত্ত ভিটেতে একটি ঘরে ভাই-এর ইচ্ছায় তাঁর একমাত্র আশ্রয়। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক কয়েকদিন থাকার ব্যবস্থা থাকলে এই ভাইয়ের আশ্রয় ব্যতীত তাঁর খুব বেশী কোথাও যাবার উপায় নেই। ভাইয়ের সন্তানরা তাঁর কাছে নিজের সন্তানের তুল্য। তাঁর এই ভালবাসা থেকেই আমরা দেখি, বৃদ্ধা পিসীর জন্য ছোটবেলা থেকে দুর্গার দারুন দুর্বলতা। বাগানে কুড়িয়ে পাওয়া ফল-ফলাদি এনে জমা করে পিসীর ভাঁড়ারে। একারণে পিসীও ভাইঝি’র কোনো দোষ মেনে…

আলোক-সম্পাতের জায়গায়ও বোধ করি খামতি দেখা যায় | Mood কে ফুটিয়ে তলার জন্য যে ধরনের আলোর প্রয়োজন, তা যেন ছবিটি দেখাতে পারেনা | এই ক্ষেত্রে বেশির ভাগই outdoor shooting — তাই সময় এবং নিসর্গের বৈচিত্র আছে. ভোর, সন্ধ্যেবেলা, বর্ষা, ইত্যাদি বিভিন্ন পটভূমি আসলেও সেই পটভূমি জীবন্ত হয়ে ওঠে না | অথচ যে গল্পটি বলা হচ্ছে, তা প্রায় সম্পূর্ণই প্রকৃতিনির্ভর এবং অবশ্যই বিশেষ ভাবে নদীকেন্দ্রিক | [...]

প্রায়-অসাধারণ স্ক্রিপ্ট, কিছু কিছু জায়গায় ঝকমকে পরিচালনা, কিছু কঠিণ ও অত্যন্ত তীব্র মুহূর্ত সৃষ্টি করা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ছবি নদীর নাম মধুমতী  | পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল| বাংলাদেশ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি যতই আর্দ্র ও আশাবাদী হোক না কেন, চলচ্চিত্রে আমরা যে পিছিয়ে আছি, এই দুঃখ আমি কোনো সহজ আপ্ত-বাক্যে ভুলতে পারিনা | পিছিয়ে থাকার কারণ বহুবিধ থাকতে পারে, তবে কিছু আবশ্যক কারণ সম্ভবত শব্দ-কারিগরী ও সঙ্গীত পরিচালনার জায়গায় খামতি, অন্তত, এই ছবি দেখে সেই কথাই মনে হয় | সত্যজিত রায়র পথের পাঁচালি-র সঙ্গে কোনো ছবির তুলনা করা উচিত হয়ত হবে না, কারণ সম্ভবত তা এক ধরণের বাড়াবাড়ি বলেই গণ্য হবে | কিন্তু তা না করলেও, আমরা মনে রাখতে চাইব, পথের পাঁচালিকেই আমরা আমাদের মানদন্ড মনে করি | কারিগরী শৈলীর অপ্রতুলতার মধ্যেই সেই ছবি আত্ম-প্রকাশ করেছিল প্রায় আধা-শতাব্দী আগে | কারিগরী যে চলচ্চিত্রের মান নির্ধারণ করেনা, এটি বোধহয় সে কথারই প্রমাণ | Charlie Chaplin এর ছবি গুলিও সেই মতন -- আজকের দিনে ব্যবহার হয় না এমন অনেক কারিগরী ব্যবহার করে, যে মানের ছবি নির্মণ করেছেন তিনি, তা অনুকরণ করাও কঠিন | পৃথিবীতে যে চলচ্চিত্র তৈরী হয়, তার মধ্যে সেরা ছবিগুলির সঙ্গে মিলিয়ে দেখার মত ছবি তৈরী হয়েছে বাংলা ভাষায় | যে শিল্পময়তা এসব ছবিতে আমরা লক্ষ্য করি, সেই স্তরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকেও দেখতে চাইব আমরা | তাই সহজে সন্তুষ্ট না হতে পারা, এক অর্থে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও শ্রদ্ধারই নামান্তর | Material বা কাহিনীর বিষয়বস্তুর দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধ যে কত শক্তিশালী, তা বলাই বাহুল্য | কথক বা narrator হিসেবে পরিচালক বেশ পরিচ্ছন্ন ভাবে, সুনির্দিষ্ট ভাবে, বাড়তি ভাবাবেগ বর্জন করে সংক্ষিপ্ত ও সহজ সংলাপ ব্যবহার করেছেন | এই গুণ সত্যজিত রায়র ছবিতে আমরা বারবার দেখি | বাংলাদেশের নাট্য-জগতে এহেন ভালো সংলাপের কোনো অভাব দেখা যায় না | অথচ, বাংলাদেশের সিনেমায় যার অভাব বলে আমরা জানি | গল্পের শুরু শেখ মুজিবের ৭ মার্চএর ভাষণের দিকে | শেষ অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে | এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের হাতে তার সত-পিতা (মুসলিম লীগ করেন এবং পারে এক হিন্দু শিক্ষাবিদকে খুন করার পর তাঁর কন্যাকে অপহরণ করেন)-র মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে |…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.