চার চেতন-চিন্তায় অত দূরত্ব থাকার পরও বিশেষত অ্যানির মৃত্যুই কি ডারউইন আর এমাকে দিয়েছিল নিবিড়তর সখ্য? শুধু প্রতিকূল এক দ্বন্দ্ব-বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই কি ডারউইন চেয়েছিলেন, দিনের পর দিন ধরে সযত্নে লেখা বইটি তাঁর মৃত্যুর পর ছাপা হোক, যাতে নশ্বর তাঁকে এইসব ধকল আর সহ্য করতে না হয়? [...]

(পূর্বাংশ পড়তে হলে এখানে দেখুন) চার চেতন-চিন্তায় অত দূরত্ব থাকার পরও বিশেষত অ্যানির মৃত্যুই কি ডারউইন আর এমাকে দিয়েছিল নিবিড়তর সখ্য? শুধু প্রতিকূল এক দ্বন্দ্ব-বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই কি ডারউইন চেয়েছিলেন, দিনের পর দিন ধরে সযত্নে লেখা বইটি তাঁর মৃত্যুর পর ছাপা হোক, যাতে নশ্বর তাঁকে এইসব ধকল আর সহ্য করতে না হয়? নাকি তখন এমার মানসিক কথাও চিন্তা করেছিলেন তিনি? দুই দশক ধরে একসঙ্গে তাঁরা ভাগাভাগি করেছেন অসুস্থতা, আত্মসংশয় আর পারিবারিক সব বেদনা। আর তাই একথা এমার চেয়ে ভালো করে আর কে জানত যে, ডারউইন কী গভীর সততার মধ্যে দিয়েই উপনীত হয়েছেন ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বের বিপরীত ওই সিদ্ধান্তে? ইতিহাস বলছে, প্রকৃতির আরসব সৃষ্টির মতো মানুষও একটি সৃষ্টিমাত্র,-এ-সত্যে পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে ডারউইন নিজের জন্যে যে-ঝুঁকি ও বিপদাশঙ্কা তৈরি করেন, সেই ঝুঁকি ও শঙ্কাপূর্ণ সময়ে তাঁর পাশে থাকাই শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে উঠেছিল নিষ্ঠাবতী আস্তিক এমার কাছে। আর ডারউইন নিজেও তো জানতেন সেই ঝুঁকির কথা। কালো আলখাল্লা-পরা পুরোহিতরা, যারা ছিল ডারউইনের ভাষায় ‘কালো শুয়োর’,-তিনি জানতেন প্রতিবাদ আসবে তাদের কাছ থেকে। বিশেষত তিনি নিশ্চিত ছিলেন, জীববিদ্যার অধ্যাপক দ্য রেভারেণ্ড অ্যাডাম সেজউইক এর প্রতিবাদ অবশ্যই করবেন। অন্যদিকে, এই সেজউইক-ই হয়ে উঠেছিলেন এমার শেষ ভরসা। ডারউইনের বই পড়ে তিনি কী বলেন, তা জানার জন্যে উদগ্রীব হয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর কি মনে হয়েছিল, সেজউইক ডারউইনের পাশে দাঁড়াবেন? অথবা এমন কোনো যুক্তি দাঁড় করাবেন, যাতে ডারউইন তাঁর আন্তরিক সততা দিয়ে যে-সত্যের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, তা থেকে আবারও ফিরে আসবেন পুরোনো সত্যের কাছে? সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনে বিজ্ঞান আর ধর্মকে একই পাল্লায় তুলে বিচার-বিবেচনার এক অস্বাভাবিক চর্চা শুরু হয়, যার অবশিষ্ট পৃথিবীতে এখনও দেখি আমরা। এখনও অনেকেই মনে করেন, বিজ্ঞান ও ধর্মে কোনো তফাত নেই; মনে করেন, বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। এখন যেমন, তখনও অনেকে মনে করতেন, এ-দুয়ের সম্মিলনের মধ্যে দিয়ে সম্ভব মানুষ ও জগতের মুক্তি। তখন, সেজউইক ছিলেন সেই সম্মিলনের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধি। বিজ্ঞান ও ধর্মকে তাঁরা বিন্যস্ত করেছিলেন শ্রমবিভাজনের ছকে। তাই যাঁরা প্রকৃতি নিয়ে অধ্যয়ন করতেন, তাঁদের তাঁরা ঈশ্বরপাঠের বাণী শোনাতেন। এই পাঠের অন-র্গত ছিল ঈশ্বরের অস্তিত্ব, মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং জগতের সকল সৃষ্টির ওপর…

আমাদের মনে হয় এই আলোচনাটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করা দরকার। আলোচনাটা মডারেটর গ্রুপে প্রথম শুরু হয়েছিল। কিন্তু এর সামষ্টিক গুরুত্ব বিবেচনায় এখন তা পোস্ট আকারেও তুলে দেয়া হল সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সহজ করার লক্ষ্যে [...]

আমাদের মনে হয় এই আলোচনাটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করা দরকার। আলোচনাটা মডারেটর গ্রুপে প্রথম শুরু হয়েছিল। কিন্তু এর সামষ্টিক গুরুত্ব বিবেচনায় এখন তা পোস্ট আকারেও তুলে দেয়া হল সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সহজ করার লক্ষ্যে। 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া' বলে বলে আমরা সবসময় গলা শুকিয়ে ফেলি। কিন্তু ব্লগ বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া ঠিক কি অর্থে এবং কিভাবে 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট' সে বিষয়টা মনে হয় আমাদের নিজেদের একটু ঝালিয়ে নেয়ার সময় এসেছে এখন। সে অনুযায়ী লেখালিখির ধরণ এবং কনটেন্টের বিতর্কিত বিষয়গুলোতেও আলোকপাতের এখনি সময়। যে লেখা মূল ধারার পত্রপত্রিকায় বিনা প্রশ্নে ছাপানোযোগ্য তা যদি বিনা প্রশ্নে ব্লগেও ছাপানোর যোগ্য হয়, তাহলে বুঝতে হবে ব্লগ প্লাটফর্ম হিসেবে আমাদের নিজেদের ভূমিকা আরেকটু গভীরভাবে পুনঃর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। ১) 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট' মানে কি সম্পাদক অমুক কিংবা সম্পাদক তমুক এর কাটাছেঁড়া থেকে মুক্তিলাভ? ২) নাকি কর্পোরেট পূঁজির বিপরীতে বিনা (কিংবা সামান্য) খরচে ওভারহেড কমিয়ে ব্লগ চালানো? ৩) ব্লগ কি just another online magazine/platform গোছের কিছু? ৪) নাকি আঞ্চলিক ভাষায় লিখলেই তা "ইন্ডিপেন্ডেন্ট" হয়ে যায়? ৫) ব্লগ কি যেমন খুশি তেমন লেখার খাতা? এখানে ব্যক্তিগত খেয়াল এবং 'খুশি'ই কি মূল বলে বিবেচ্য নাকি বৃহত্তর কোন লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী কমিটমেন্ট থাকা দরকার তাতে? ৬) ব্লগে লেখা কি কেবল সময় কাটানো? বিনোদন? ব্লগ কি কেবলই 'কথা'? নাকি ব্লগে লেখাও একটা সিরিয়াস 'কাজ'? যদি কাজ বলে ধরে নিই একে, তবে কি হওয়া উচিত এর ধরণ এবং প্রকাশ ভঙ্গী? এই বিষয়গুলো আমাদের ভাবা দরকার। পৃথিবীর আর সব প্রান্তের প্রধান প্রধান ব্লগ প্লাটফর্মগুলো যখন মূল ধারার মিডিয়ার সাথে সমান্তরালে পাল্লা দিয়ে চলেছে, তখন আমাদের বাংলা ব্লগগুলো এখনো উপরিতলের কিছু বিতর্ক (যেমন: ভাষার ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে) নিয়েই বেশী ব্যস্ত। এখনো mediocrity থেকেই উত্তীর্ণ হতে পারছি না আমরা ব্লগ হিসেবে; সমাজ বা পরিপার্শ্ব পাল্টানো তো অনেক দূরবর্তী বিষয়। পরিপার্শ্বকে সফলভাবে বদলে দেয়ার মতো কিংবা নিদেন পক্ষে নাড়া দেবার মতো জোরই আমাদের তৈরী হয়নি এখনো। এভাবে এগোতে থাকলে তা হয়তো কোন দিনই হবে না বলে আমাদের আশংকা। সবার মতামত পেলে ভাল হয়। ধন্যবাদ।

একুশে বক্তৃতা ২০০০-এ সব্যসাচী লেখক ও হালের সব্যসাচী সুন্দরী নির্বাচক গুণী কথাশিল্পী সৈয়দ শামসুল হক ভাষাকে জাতির অন্যতম স্বদেশ হিসেবে দেখেছিলেন। বাক্যটি খুব মনে ধরেছিল। তার এমনতর দৃষ্টিভঙ্গীর পেছনে প্রেরণা কী ছিল এখন আর স্পষ্ট মনে পড়ে না। লেখাটা দীর্ঘদিন ধরে আরো অনেক পত্রিকার সাথে রেখে দিয়েছিলাম। এখনো এসব লেখা আরো অনেক ছেঁড়া পৃষ্ঠার মতো নানা সময়ে হাতে উঠে আসে আর আমাকে মুহূর্ত কয়েকের জন্য ভাবনার জগতে নিয়ে যাবার আয়োজন করে। লেখাটার কথা মনে পড়লো আজ রাতে "বিশদ বাঙলা"র অফহোয়াইট আলোর ওমে বসে হালের তরুণ কবি ও কথাশিল্পী এবাদুর রহমান এর সাথে আলাপচারিতার সময়। একটানা প্রায় দুই ঘন্টা অনর্গল কথা বলে যাওয়ার ক্ষমতা বোধকরি সবার থাকে না। প্রথম অংশটা আমি সম্ভবত ধরতে পারিনি। যে অংশটা আমি পরিষ্কার ধরতে পেরেছিলাম সেটা তার "পূর্ব বাঙলার ভাষা"র সূত্র ধরে। যেসব কথা উনি শোনালেন তার সারমর্ম সঠিকভাবে ধরতে পেরেছি কিনা নিশ্চিত নই। কারণ নানা জায়গা থেকে একটা বিষয়কে ফোকাস করার একটা বাতিক ছিল বক্তার। তার উপর খানিকটা আমলাতান্ত্রিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরগুলা সাজিয়ে শ্রোতাদের সামনে থ্রো করছিল। এটা তর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্রোচ হয়ে উঠে অনেক সময়। আর শ্রোতাদের জ্ঞানকাণ্ডের উপর এক ধরণের প্রিঅ্যাজাম্পশান থাকায় তার কোনো কথাই ঠিকঠাক মতো ধরা যাচ্ছিল না। ফলত দুয়েকটা ভাল প্রশ্নের বাইরে তার বলাটাই সার হল। কে কি নিয়ে গেল জানি না। আমি ফিরলাম একরাশ অগ্রহায়ণের পেলব শীত শরীরে নিয়ে। তার 'পূর্ব বাঙলার ভাষা' নিয়ে যা আমি এতদিন ধরে পাঠ করে জমা করেছি তার সাথে বক্তার আজকের বক্তব্য খানিকটা প্যারাডক্স তৈরী করে বলে মনে হল। তার সেই বহিখানার দুইটা প্রোগ্রামের কথা এক সাক্ষাতকারে জেনেছিলাম। তার ধারণা প্রচলিত ভাষা পুঁজি নির্ধারিত। তার কাজ হচ্ছে, এই পুঁজি নির্ধারিত ভাষার বিপরীতে একটা পাল্টা ন্যারেটিভ তৈরী করা। এই কাজটা করবেন তিনি এক ধরণের প্রতি দর্শন তৈরী করে। কী সেটা? খুব সরল ভাষায় বাকা আঙুলে ঘি না তুলে সেটা করা হবে সোজা আঙুলে। একঘেয়ে রিপোর্টধর্মী ভাষাশৈলীর বাইরে যেযে এমন কিছু করা যাতে যা সরাসরি উপস্থাপিত হবে না। পাঠককে খুব গদো গদো গদ্যে কোনো কিছু দিলে সে আর আর রিঅ্যাক্ট করবে না। তাকে বের করে…

কাদামাটি নোনাজল চাষবাস এই তিনের সমন্বয়ে জীবনযাপন করা বাঙালি যখন অস্ত্র হাতে তুলে জীবন বাজী রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন সারা বিশ্ব অবাক তাকিয়ে ছিল! নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়ী জাতির যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল মাত্র চার বছরের মধ্যে তা ধুলোয় মিশে যায়। সপরিবারে জাতির জনককে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। স্তম্ভিত বিশ্বকে, পুরো বাঙালি জাতিকে আরো স্তম্ভিত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা পুরস্কৃত হন। দেশে-বিদেশে তাদের পুরস্কৃতও করা হয়। এক জঘন্য ইনডেমনিটি আদেশ জারি করে সেই আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই এই জাতির যে শিশুটি জন্মেছে সেও বড় হয়ে জেনেছে এই আমাদের দেশ! যেখানে জাতির জনককে হত্যা করার পরও জাতি সেই খুনিদের বিচার করতে পারেনি! এটা যে এই জাতির জন্য কতটা গ্লানির আর কতটা কষ্টের তা বাইরের কেউ আমাদের মত উপলব্ধি করতে পারবেন না। সেই থেকে আমরা কেবলই অসহায় নিরূপায় প্রহর গুনে চলেছি। নিজেদের অর্জিত স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের সেই স্বর্নজ্জল দিনগুলো স্মরণ করেছি এবং এমনই একটি দিনের প্রতীক্ষায় থেকেছি। রায়ে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল। রায় ঘোষণার পর ১১ বছরেও তা কার্যকর হয়নি। নিয়মরীতি অনুসরণের পরামর্শ অথবা বিচারপতিদের বিব্রতবোধের কারণে কিছুটা বিলম্বের পরও ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন এবং বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বিভক্ত রায় দেন। সে রায়ে বিচারপতি রুহুল আমিন ১০ জনের এবং বিচারপতি খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই অনুমোদন করেছিলেন। এর নিষ্পত্তি করে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারপতি ফজলুল করিমের দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে মোট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন পাওয়া যায়। তারপর আবার এই বিচার কাজ থেমে যায়। বলা ভাল- থামিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে আমরা আবার আশায় বুক বাঁধি- এবার নিশ্চই বঙ্গবন্ধুর খুনী কুখ্যাত সেই জাতির কলঙ্কগুলোর বিচার সম্পন্ন হবে। এত কিছুর পরও খুনিরা থেমে থাকেনি। আজকের এই রায় ঘোষণার আগে তাদের দোসররা একের পর এক নাশকতা ঘটাতে চেয়েছে, পরিস্থিতি ওলটপালট করে আবার এই রায়কে থামিয়ে দিতে চেয়েছে। ২১টি বছর ধরে এই বিচার এবং রায় নিয়ে এদেশের মানুষের উৎকণ্ঠায় কেটেছে। যে বিচার শেষ করা…

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের দিকে না গিয়ে একটা কমিটি করে যাদের কাজ হলো নির্দিষ্ট দুটি কমিশন রিপোর্ট ও একটি অকার্যকর শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা। কমিটির কাজের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিলো প্রথমদিকে। তা কেটে গেলেও সেখানে নতুন কিছু কথার জন্ম হয়েছে [...]

আদর্শের নিরিখে হতাশা শিক্ষার সংজ্ঞা নিয়ে চিন্তুকদের মধ্যে সবচেয়ে দ্বিধার মধ্যে ছিলেন বোধহয় পাওলো ফ্রেইরি। বিশেষ করে রুশোর শিক্ষাদর্শন প্রথমদিকে তাঁকে বেশ প্রভাবিত করেছিলো। এই দ্বিধার একটা কারণ হতে পারে, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতির সাথে শিক্ষাকে পরিপূর্ণ অর্থে মেলানো খুবই কষ্টকর, যদিও রুশো বিশ্বাস করতেন মানুষ চাইলে সব শিক্ষা প্রকৃতির কাছ থেকেই পেতে পারে। আবার সমাজকাঠামো, রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়া কিংবা এ ধরনের ফেনোমেননগুলো থাকলে প্রকৃতির কাছ থেকে ঠিক সরলভাবে শিক্ষা আশা করা যায় না। প্রাকৃতিক বিষয়গুলো ঠিক যতোটা সহজ-সরল বলে রুশোর কাছে প্রতিভাত হয়েছিলো, বিষয়গুলো আসলে ততোটা একরৈখিক নয়। তার ওপর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাভেদে শিক্ষা ও তার পরবর্তী গন্তব্য কখনোই এক হয় না। ফলে ফ্রেইরি একটা সময় পার করে রুশোর শিক্ষাদর্শন-বিশ্বাস থেকে সরে এসেছিলেন। শিক্ষা নিয়ে এই ডিসকোর্সগুলো খুব আলোচিত হয়েছিলো বিশেষ করে সত্তরের দশকে। এই সময়ে আবার 'সবার জন্য শিক্ষা' জাতীয় ধারণাগুলো সবেমাত্র দানা বাধতে শুরু করেছে। সে সময়ই যে প্রশ্নটি নিয়ে শিক্ষাচিন্তুকরা দ্বিধায় পড়েন, সেটি হলো— শিক্ষা কেন? দেখা গেলো, এবং কোথাও কোথাও স্বীকারও করে নেওয়া হলো— এর সরল সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয় এবং এর প্রয়োজন নেই। যেহেতু বর্তমান পৃথিবী রাষ্ট্রকাঠামো-নির্ভর, সুতরাং রাষ্ট্রই নিজ অবস্থাভেদে এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে। ফ্রেইরি তখন বলেছিলেন— রাষ্ট্র পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে শিক্ষার গন্তব্যে পৌঁছানো মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হবে, আর এ ধরনের রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে পক্ষপাত দেখানো। না হলে রাষ্ট্রের পক্ষেও টিকে থাকা সম্ভব নয়। কথা হলো, রাষ্ট্র কার প্রতি পক্ষপাত দেখায়? স্বাভাবিক উত্তর হচ্ছে— অর্থ যেদিকে, রাষ্ট্র্ও সেদিকেই। তাহলে গরীব, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত কিংবা প্রান্তিক মানুষের শিক্ষার কী হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই কিন্তু ফ্রেইরির পেডাগজি অব দ্যা অপ্রেসড। ২. আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন শিক্ষানীতির কথা ছিলো। ক্ষমতায় আসার পর তারা পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের দিকে না গিয়ে একটা কমিটি করে যাদের কাজ হলো নির্দিষ্ট দুটি কমিশন রিপোর্ট ও একটি অকার্যকর শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা, বলা ভালো সেটিকে আপডেট করা। কমিটি তাদের কাজ করেছে, যদিও কাজের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিলো প্রথমদিকে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চূড়ান্ত খসড়া) ওয়েবে প্রকাশের পর অনেকের সে আপত্তি কেটে গেলেও সেখানে আরও নতুন কিছু…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.