আদর্শের নিরিখে হতাশা
শিক্ষার সংজ্ঞা নিয়ে চিন্তুকদের মধ্যে সবচেয়ে দ্বিধার মধ্যে ছিলেন বোধহয় পাওলো ফ্রেইরি। বিশেষ করে রুশোর শিক্ষাদর্শন প্রথমদিকে তাঁকে বেশ প্রভাবিত করেছিলো। এই দ্বিধার একটা কারণ হতে পারে, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতির সাথে শিক্ষাকে পরিপূর্ণ অর্থে মেলানো খুবই কষ্টকর, যদিও রুশো বিশ্বাস করতেন মানুষ চাইলে সব শিক্ষা প্রকৃতির কাছ থেকেই পেতে পারে। আবার সমাজকাঠামো, রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়া কিংবা এ ধরনের ফেনোমেননগুলো থাকলে প্রকৃতির কাছ থেকে ঠিক সরলভাবে শিক্ষা আশা করা যায় না। প্রাকৃতিক বিষয়গুলো ঠিক যতোটা সহজ-সরল বলে রুশোর কাছে প্রতিভাত হয়েছিলো, বিষয়গুলো আসলে ততোটা একরৈখিক নয়। তার ওপর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাভেদে শিক্ষা ও তার পরবর্তী গন্তব্য কখনোই এক হয় না। ফলে ফ্রেইরি একটা সময় পার করে রুশোর শিক্ষাদর্শন-বিশ্বাস থেকে সরে এসেছিলেন।
শিক্ষা নিয়ে এই ডিসকোর্সগুলো খুব আলোচিত হয়েছিলো বিশেষ করে সত্তরের দশকে। এই সময়ে আবার ‘সবার জন্য শিক্ষা’ জাতীয় ধারণাগুলো সবেমাত্র দানা বাধতে শুরু করেছে। সে সময়ই যে প্রশ্নটি নিয়ে শিক্ষাচিন্তুকরা দ্বিধায় পড়েন, সেটি হলো— শিক্ষা কেন? দেখা গেলো, এবং কোথাও কোথাও স্বীকারও করে নেওয়া হলো— এর সরল সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয় এবং এর প্রয়োজন নেই। যেহেতু বর্তমান পৃথিবী রাষ্ট্রকাঠামো-নির্ভর, সুতরাং রাষ্ট্রই নিজ অবস্থাভেদে এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে। ফ্রেইরি তখন বলেছিলেন— রাষ্ট্র পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে শিক্ষার গন্তব্যে পৌঁছানো মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হবে, আর এ ধরনের রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে পক্ষপাত দেখানো। না হলে রাষ্ট্রের পক্ষেও টিকে থাকা সম্ভব নয়।
কথা হলো, রাষ্ট্র কার প্রতি পক্ষপাত দেখায়? স্বাভাবিক উত্তর হচ্ছে— অর্থ যেদিকে, রাষ্ট্র্ও সেদিকেই। তাহলে গরীব, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত কিংবা প্রান্তিক মানুষের শিক্ষার কী হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই কিন্তু ফ্রেইরির পেডাগজি অব দ্যা অপ্রেসড।
২.
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন শিক্ষানীতির কথা ছিলো। ক্ষমতায় আসার পর তারা পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের দিকে না গিয়ে একটা কমিটি করে যাদের কাজ হলো নির্দিষ্ট দুটি কমিশন রিপোর্ট ও একটি অকার্যকর শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা, বলা ভালো সেটিকে আপডেট করা। কমিটি তাদের কাজ করেছে, যদিও কাজের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিলো প্রথমদিকে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চূড়ান্ত খসড়া) ওয়েবে প্রকাশের পর অনেকের সে আপত্তি কেটে গেলেও সেখানে আরও নতুন কিছু কথার জন্ম হয়েছে।
৩.
শিক্ষানীতিটি হাতে নিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম, কোন ধরনের আদর্শমানের নিরিখে রাষ্ট্র শিক্ষাকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চায়। এই ভাবনার সাথে আসলে সত্তরের দশকের শিক্ষাভাবনা মিলে যায়। কারণ এই মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর পরবর্তী অনেক গন্তব্যকে সহজেই চিনিয়ে দেয়। জীবনের মাঝামাঝি সময়ে পাওলো ফ্রেইরি ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই কাজ করছিলেন। তিনি বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর শিক্ষা-ভাবনা পড়ে ওই দেশগুলোর গন্তব্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন। কারণটা জানা— আজকের শিক্ষানীতিই ঠিক করবে আগামী দিনে জাতি হিসেবে আমরা কোথায় থাকতে চাই। সুতরাং এই প্রশ্নটি এবং এরকম আরও কিছু প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের শিক্ষানীতিতে যে মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর থাকার কথা, সেটি না থাকায় আবারও ফ্রেইরিকে উল্টেপাল্টে দেখলাম; ওই সময়ের আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর আলোকে বর্তমান সময়ের শিক্ষাটাকে আবারও ঝালিয়ে নিয়ে দেখলাম— এ সময়ে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এতে যতো দিন যাচ্ছে, শিক্ষার চেয়ে ‘স্কিল’-এর গুরুত্বটা বেশি করে বেড়ে যাচ্ছে। আর শিক্ষার প্রথম আনুষ্ঠানিক ভিত্তি যখন প্রাথমিক শিক্ষা, তখন সেই চ্যাপ্টারটা উল্টিয়ে দেখা গেলো প্রশ্ন আসলে অনেক, কিছু উত্তর আছে, কিছু নেই। ফলে তত্ত্ব, আদর্শ কিংবা সে অনুযায়ী চাহিদার কথা বাদ দিয়ে দেশের নিরেট বর্তমান বাস্তবতাকে পুঁজি করে শিক্ষানীতি পড়তে বসি।
সুতরাং, যেহেতু এই শিক্ষানীতি মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রসম্পর্কিত আদর্শমান নিয়ে কথা বলার চেয়ে এর ব্যবস্থাপনা দিকটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে বেশি, তাই আদর্শের নিরিখে হতাশা নিয়ে ব্যবস্থাপনার নিরিখে নীতিটি উল্টেপাল্টে দেখি। তাই এ বিষয়ে, এই স্কেলে কিংবা এই মানদণ্ডে কথাবার্তা শেষ।
প্রাথমিক শিক্ষায় আশা
প্রাথমিক শিক্ষা কেন?— আপাতদৃষ্টিতে সহজ এ প্রশ্নের উত্তর জটিল হতে পারে। কারণ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা কেন দেওয়া হবে এবং জনগণের পক্ষ থেকেই বা এই শিক্ষা কেন নেওয়া হবে— প্রশ্নদুটোর উত্তর নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও মূলনীতি, রাষ্ট্র ও জনগণের চাহিদা, সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বৃহত্তর আঙ্গিকে টিকে থাকা, পারিপার্শ্বিকতা, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ গন্তব্য ইত্যাদি নানা প্রপঞ্চের ওপর। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আদর্শের সাথে সাধারণত ‘সামাজিক আদর্শ’কে মেলানো হয় না। তাতে রাষ্ট্রের ঝামেলা বাড়ে যে ঝামেলায় রাষ্ট্র যেতে চায় না। তাছাড়া রাষ্ট্র জনগণকে কতোটা শিক্ষাপ্রদানের ক্ষমতা রাখে তাও একটি বড় ফ্যাক্টর। কোনো রাষ্ট্র প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে মাধ্যমিক শিক্ষার উপযোগী করে তুলতে পারে, কোনো রাষ্ট্র মৌলিক ও প্রাথমিক শিক্ষার দ্বারা জনগণের মধ্যে শিক্ষার ভিত সৃষ্টি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিতে পারে, আবার কোনো রাষ্ট্র প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যাতে তারা অন্তত স্বনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ, প্রণোদনা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান কী?— প্রশ্নটির উত্তর থাকার কথা শিক্ষা বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র শিক্ষানীতিতে। স্বাধীনতার পর গঠিত প্রতিটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন বা কমিটি প্রতিবেদন প্রদান করলেও ক্ষমতার পালাবদল বা অন্য কোনো কারণে শিক্ষানীতি হিসেবে সেগুলো আলোর মুখ দেখে নি, যদিও শিক্ষানীতির ধারণা এদেশে নতুন নয়। আদর্শের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দোদুল্যমানতা, শিক্ষানীতি প্রণয়নে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের চিন্তাচেতনার পার্থক্য এবং উন্নত শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার বিষয়টি একমাত্র বিষয় না হওয়ায় পূর্বতন শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ এগোয় নি। ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হকের নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন প্রদানের পর তৎকালীন সরকার আরেকটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি শামসুল হক কমিশন প্রণীত রিপোর্টের আলোকে আরেকটি ছোট এবং খণ্ডিত প্রতিবেদন তৈরি করে যা ২০০০ সালে জাতীয় সংসদে আলোচনার পর জাতীয় নীতি হিসেবে গৃহীত হয়। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র শিক্ষা বিষয়ক নীতি যা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত, কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর তা আর বাস্তবায়িত হয় নি। সুতরাং সেগুলো থেকে উপযুক্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নি।
বর্তমান খসড়া শিক্ষানীতিটিই বোধহয় সর্বপ্রথম এ উত্তর দিচ্ছে যে— বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় জনগণকে স্বনির্ভরশীল করার পাশাপাশি পরবর্তী স্তরের উপযোগী করে তোলার সব প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকবে। সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষা কেন— খসড়া শিক্ষানীতিতে এ প্রশ্নের উত্তরের আংশিক প্রতিফলন থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
২.
খসড়া শিক্ষানীতিটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি (positive approach) যা পুরো প্রতিবেদনে নানাভাবে প্রতিফলিত। দেশের বিদ্যমান নানা সমস্যার ওপর আলোকপাত করে সে অনুসারে শিক্ষার গতিপথ নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি জনসম্পদের নৈতিক দিক উন্নয়নের প্রচেষ্টার কথা রয়েছে সেখানে। ভূমিকাতে বলা হয়েছে— দেশে দেশে উন্নত তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ লক্ষ বেকার কিন্তু উদ্যোগী তরুণের সামনে উপার্জনের পথ খুলে দিয়েছে। এ দেশের তরুণদের জন্য শিক্ষা-প্রশিক্ষণের এবং তথ্য, প্রযুক্তি ও পুঁজির ব্যবস্থা জরুরী। এ দেশের তরুণ সমাজের একাংশ আর্থ-সামাজিক কারণে হতাশাচ্ছন্ন হয়ে বিপথগামী হচ্ছে, মাদকাসক্তি ও সন্ত্রাসের পথ ধরছে। তাদের জন্য একটি সুস্থ ও সম্ভাবনাময় পরিবেশ তৈরী করা জরুরী। বাংলাদেশের কর্মক্ষম সাধারণ মানুষের অনেকেই উপার্জনের আশায় বিদেশ যেতে চায়। এদের প্রয়োজন শিক্ষার এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাহিদা রয়েছে এমন দক্ষতা অর্জনের। এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এসবই বিবেচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি অন্তর্ভুক্তি ও দক্ষতা সৃষ্টির পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত নিরক্ষরতা দূর এবং সকলের জন্য মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ওপরও আলোকপাত করেছে। তাছাড়া প্রতিবেদন নিজের নীতিতে চিরকাল অবিচল না থেকে সময় ও অবস্থা বিবেচনায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে শিক্ষানীতিকে পর্যালোচনার মাধ্যমে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে, যা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দৃঢ়তার কাঠামোকে (rigidity) প্রত্যাখ্যান করে প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। প্রসঙ্গত, দেশে নানা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় স্থায়ী কমিশন থাকলেও শিক্ষার জন্য স্থায়ী কমিশন নেই (সবকিছু ঠিক থাকলে অবশ্য স্থায়ী কমিশনের প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু সবকিছু কেন, শিক্ষাব্যবস্থায় দেশের অধিকাংশ বিষয়ই ঠিক নেই)। শিক্ষার জন্য স্থায়ী কমিশন গঠন করা হলে এ কাজটি তারাই করতে পারতো।
৩.
খসড়া শিক্ষানীতি প্রাথমিক শিক্ষার ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। শিক্ষাকে ব্যাপকভিত্তিক করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সামনের কাতারে স্থান দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো বিবেচনায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা যতোটুকু গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ততোটুকু গুরুত্ব কখনোই পায় নি। বরং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে পেছনেই রাখা হয়েছে— সুযোগসুবিধা ও মানসিকতা উভয় দিক দিয়ে। ফলে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা সেখানে গেছে, যারা প্রথম পছন্দ সাধারণ শিক্ষায় কোনো কারণে টিকতে পারে নি। অথচ সাধারণ শিক্ষার সমান্তরালে শক্তিশালী ও দক্ষতামূলক ক্ষেত্র হিসেবে এটিকে গড়ে তোলার দরকার ছিলো। এ প্রতিবেদনে বিষয়টি যথাযথভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
৪.
একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত হলো প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর আগে প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের প্রাথমিক স্তরের জন্য তৈরি করার বিষয়টি বাংলাদেশের শিক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্ব পেয়েছে। এই প্রতিফলন দেখা গেছে খসড়া শিক্ষানীতিতেও। শিশুর বয়স পাঁচ পেরুলেই তাকে এক বছর মেয়াদী প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশের বর্তমান শিক্ষাকাঠামোতে এটির বাস্তবায়ন আপাতকঠিন হলেও প্রতি বছর নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোলে কয়েক বছরের মধ্যে সব শিশুর জন্য প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। শিশুদের মধ্যে প্রবল বিদ্যালয়ভীতি ও বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণহীনতা রয়েছে। অনেক শিশু বিদ্যালয়ভীতি বা বিদ্যালয় অপছন্দ করার কারণে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায় না বা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে। প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা যেনো এ সমস্যা দূর করতে পারে— সেটিই এর প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত। প্রতিবেদনে যেভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার সময় ধর্মীয়জ্ঞান, অক্ষরজ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। এ স্তরে খেলাধুলা ও অন্যান্য আনন্দদায়ক কাজের মাধ্যমে শিশুকে পরোক্ষভাবে অক্ষরজ্ঞান দেওয়া ও বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণীয় করে তোলার বাইরে অন্য কর্মকাণ্ড শিশুর জন্য বাড়তি চাপ হতে পারে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার বিষয়টিও অপ্রয়োজনীয়। শিক্ষার নানা স্তরে শিশুকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া যেখানে সম্ভব, সেখানে প্রাকপ্রাথমিক স্তরে এ শিক্ষা শিশুর মানসিক বয়স, মানসিকতা ও ধারণক্ষমতা অনুসারে কতোটা যুক্তিযুক্ত তা ভাবা দরকার।
৫.
প্রাথমিক শিক্ষার নানা বিষয়ে কমিটি ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে, যা আগেই বলা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যকার বিরাজমান প্রকট বৈষম্য দূর করা। সাধারণভাবে ননরেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ি মাদ্রাসাসমূহ নানা সুযোগসুবিধার দিক দিয়ে অন্য ধরনের বিদ্যালয়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। লেখাপড়ার দিক দিয়েও সেগুলোর মান কিছুটা খারাপ। বিদ্যালয়গুলোর মধ্যকার সুযোগসুবিধার পার্থক্য দূর করতে পারলে বা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারলে তা সরাসরি মানের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
তবে বর্তমানে প্রচলিত দশ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো থেকে শুরু করে মৌলিক বিষয়গুলোতে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি অভিন্ন করার বিষয়টি বেশ জটিল হতে পারে। কাঠামোগত দিক দিয়ে দেশে বর্তমানে দশ ধরনের বিদ্যালয় চালু থাকলেও শিক্ষাক্রমের দিক দিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে মোটাদাগে চার ভাগে ভাগ করা যায়— ১. এনসিটিবির শিক্ষাক্রম অনুসারে পরিচালিত বিদ্যালয়, ২. মাদ্রাসা, ৩. ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় এবং ৪. উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়। মাদ্রাসার নিজস্ব শিক্ষাক্রম ও ইংরেজি মাধ্যমের আলাদা পাঠ্যপুস্তক রয়েছে। উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়গুলো এনসিটিবির শিক্ষাক্রম অনুসরণ করলেও অনেকক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব পাঠ্যপুস্তক রয়েছে। সুতরাং এ চার ধারাকে কীভাবে একত্র করা যায়, সেটি আরও ব্যাপক ভাবনার বিষয়। তবে প্রতিবেদনে যেভাবে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নম্বরবিন্যাস করা হয়েছে, তাতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০০ নম্বর পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে কাঠামো অভিন্ন থাকছে কিনা, তাও ভাবা দরকার। অন্যদিকে উপানুষ্ঠানিক বা ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে কী থাকবে, তা স্পষ্ট নয়।
প্রত্যেক ধরনের বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে অতিরিক্ত বিষয় চালুর কথা বলা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে শিশুদের বয়স ও ধারণক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়ে সেগুলো চালু করবে তার দিকনির্দেশনা শিক্ষানীতিতে থাকা দরকার।
৬.
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে দুটি বিষয় রেখেছে— বাংলাদেশ স্টাডিজ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ। অর্থাৎ বর্তমানের পরিবেশ পরিচিতি (সমাজ বা বিজ্ঞান) বিষয়টি থাকছে না। বাংলাদেশ স্টাডিজের বিষয়টি যোগ করা একটি চমৎকার ব্যাপার, কিন্তু সেখানে পরিবেশ পরিচিতির অন্তর্গত সমাজের নানা বিষয় বাদ পড়বে কিনা তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ স্টাডিজ নামটিও মানানসই মনে হচ্ছে না— বদলে বাংলাদেশ পাঠ বা এরকম কিছু রাখা যেতে পারে। এদিকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত চাপ হয়ে যায় কিনা বা এ বয়সের শিশুর উপযোগী কিনা, তাও নতুন করে ভাবা দরকার। সেক্ষেত্রে বিষয়টি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে চালু করলেই বোধহয় ভালো হয়।
৭.
অত্যন্ত চমৎকার একটি বাক্য এসছে শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে— …প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং রাষ্ট্রকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যবস্থা রাষ্ট্র যেহেতু মোটামুটি করতে পেরেছে, বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার দায়িত্ব বহনে রাষ্ট্র সক্ষম হওয়ার কথা। তবে প্রচলিত শিক্ষাখরচের বাইরেও শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের শিক্ষার পেছনে নানা ধরনের খরচ করতে হয়, যার একটি প্রাইভেট টিউশনির পেছনে। বিদ্যালয় থেকে যথাযথভাবে শিক্ষা না পাওয়ার কারণেই শিক্ষার্থীদের গৃহশিক্ষকের কাছে যেতে হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যথাযথ ব্যবস্থাপনার দ্বারা রাষ্ট্র এ ধরনের খরচ বন্ধ করতে পারলেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন যথাযথভাবে হবে বলে ধরা যায়। অন্যথায় কাগজকলমের হিসাবের বাইরেও নানা ধরনের খরচ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও কাঙ্ক্ষিত আউটপুটকে ব্যাহত করতে পারে। তবে নানা কারণে রাষ্ট্র এখনও হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত সব শিশুকে শিক্ষার মূল ধারায় প্রবেশ করাতে সক্ষম হয় নি। যতোদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এ সক্ষমতা অর্জন না করবে, ততোদিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষাপ্রদান প্রক্রিয়াও চলমান থাকবে বা থাকা উচিত। এক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর ভর্তিকৃত শিশুর নয় শতাংশ ভর্তি হয় এনজিও-পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোতে। রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান পালন করেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় এসব বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারিত্ব এখনও গুরুত্বপূর্ণ। এ অংশীদারিত্ব রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করছে না।
৮.
প্রতিবেদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বর্ধিত করা। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ বাড়ানো জরুরি। কীভাবে তা করা হবে— সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। দেখা যাচ্ছে, আগামী নয় বছরে ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে অবকাঠামোগত ও পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষকের বিষয়টিই মুখ্য। এটি করতে হলে বর্তমানে থাকা মাদ্রাসাসহ প্রায় এক লাখ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রচুর শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি হবে এক এলাহী কাণ্ড। সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে পরিকল্পিতভাবে ও গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করা হয়, সেদিকে জোর দেওয়া দরকার। বাস্তবায়নের ধাপগুলো এমনভাবে সম্পন্ন করতে হবে যেন একটি ধাপের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করা হয়। তাছাড়া শুধু অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা দিলেই হবে না, সেটির গুণগত মান নিশ্চিত করাও জরুরি— বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর কথা মনে রাখা দরকার।
৯.
প্রতিবেদনে মানসম্পন্ন ইংরেজি লিখন-কথনের লক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম শুরু থেকেই গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণী থেকেই ইংরেজি বাধ্যতামূলক। কিন্তু যে পদ্ধতিতে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে, সেটি কতোটুকু কার্যকর— তা ইতোমধ্যে সবার জানা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পরও অনেকে ঠিকমতো ইংরেজি লিখতে বা বলতে পারে না। সে অবস্থায় আবারও শুরু থেকে ইংরেজি শেখানোর বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রাথমিক স্তরে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখা আদৌ প্রয়োজনীয় কিনা, বা এভাবে আদৌ কার্যকর ইংরেজি শেখা যায় কিনা— বিষয়টি গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। প্রতিবেদনে আদিবাসিদের নিজস্ব ভাষায় পড়ালেখার কথা বলা হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়বে নাকি ইংরেজি, তা স্পষ্ট নয়। বাস্তবতার কারণে যদি বাংলা পড়তে হয়, তাহলে প্রাথমিক স্তরে আদিবাসি শিশুদের তিন-তিনটি ভাষার মোকাবিলা করতে হবে— প্রতিবেদন প্রণেতারা এ বিষয়টি আশা করি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন। বলা দরকার, এখানে ইংরেজিকে শুধু একটি ভাষা হিসেবেই দেখা হয় না, বিদ্যালয়ে এটি একটি সাবজেক্ট বা বিষয়ও বটে। যদি ইংরেজিকে শুধু আলাদা একটি ভাষা হিসেবে দেখা হতো, তাহলে সম্ভবত ইংরেজি ভাষা শেখার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতো। সাবজেক্ট বা বিষয় হিসেবে দেখার ফলে ভাষার অংশটুকু অনেকাংশেই গুরুত্ব কম পাচ্ছে।
১০.
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোনো আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন না থাকা এবং তৃতীয় শ্রেণী থেকে অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চালুর সুপারিশ প্রশংসনীয়। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে যদি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে অর্ধেক নম্বর দেয়া হয় এবং বার্ষিক পরীক্ষায় বাকি অর্ধেকের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু ছাড়াও শিক্ষার্থীর নানা কর্মকাণ্ড যেমন— বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম, নেতৃত্বের দক্ষতা কিংবা চারিত্রিক দৃঢ়তার বিষয়গুলোও ধারাবাহিক মূল্যায়নে আসা উচিত। সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করা না হলে এ থেকে যথাযথ ফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
১১.
বাংলাদেশে এতো কম সময়ে, মাত্র চার মাসে শিক্ষানীতি প্রণয়নে এটাই রেকর্ড। এ সময়ে কমিটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ৫৬টি সংস্থা বা সংগঠনের প্রতিনিধি ও ছয় বিভাগে সব স্তরের ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করে। স্বল্পসময়ে এতো কাজের প্রতিফলন দেখা গেছে শিক্ষানীতির খসড়ায়। নানা জায়গায় বানান ভুলসহ বাক্যবিন্যাসেও অসঙ্গতি দেখা গেছে। বিশেষ করে যে দুটি কমিশন রিপোর্টকে ‘বিশেষভাবে বিবেচনায়’ নেওয়া হয়েছে, তার একটি কমিশনের নাম পুরো প্রতিবেদনে এসেছে ভুলভাবে। খসড়াতে বারবার কুদরত-ই-খুদা কমিশন শব্দটির উল্লেখ রয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে কুদরাত-এ-খুদা কমিশন হবে। কমিটির কাছ থেকে এ ধরনের ভুল আশা করা যায় না।
১২.
সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনেক কিছুই আলোচনা করা যায় না। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ অনেক ইতিবাচক স্বপ্ন দেখিয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে দেশের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ— উভয় মেয়াদে কার্যকরী ফল বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস। তবে পরিকল্পনা করা ও পরিকল্পনাকে যথাযথ ও সুচারুভাবে কাজে রূপান্তরিত করা— দুটো ভিন্ন বিষয়। আন্তরিকতা দিয়ে কমিটি শিক্ষানীতি প্রতিবেদন তৈরি করে দিলেও সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। এই বাস্তবায়নের কাজে কোথাও যেনো গুণগতমানের প্রশ্নে আপোষ না করা হয়, লেখার শেষে সে আহ্বান থাকবে।

সমাজতন্ত্র সম্পর্কে মোহ আছে, তবে সমাজের তান্ত্রিকদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই।
শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। আর মাঝে মাঝে ভাবি- আমরা ‘শিক্ষিত’ মানুষরা কতোই না ‘কু-শিক্ষিত।’
