মার্চে শোকের মাতম আর ডিসেম্বরে বিজয়ের বাজনা_ এ-ই তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ উদযাপন। সেই স্মরণের তালিকায় সব কিছু আসে, আসে না কেবল সেইসব নারীদের কথা, যাদের শোকের শরিক রাষ্ট্র হয়নি। তাদের বিজয় আজো আসেনি। বিজয়হীনা সেই নারীদের আমরা বীর ডাকি না, ডাকি ‘বীরাঙ্গনা’ বলে। ‘বীরাঙ্গনা’ মানে বীরের অঙ্গনা, বীরের নারী। বীরত্বের যে পুরুষতান্ত্রিক সংজ্ঞা তাতে কেবল পুরুষেরই অধিকার। নারীর কোটায় কেবল বীরের অঙ্গনা হবার ছাড় ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা নারী আর ধর্ষণ-নির্যাতন আর গণহত্যার শিকার লক্ষ লক্ষ নারীদের কেন এক দাগে পুরুষের পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে? স্বাধীনতা অর্জনে যদি তাদেরও বিরাট ত্যাগ ও অবদান থেকে থাকে, তবে কেন তাদের কেবল ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবের মধ্যে আটকে থাকতে হবে? এটা কি বীরের সম্মান না অধঃস্তনের প্রতি করুণা ও অবজ্ঞা? একাত্তরের সব থেকে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্থ নারীরা। তাদের ঘরে থাকা সহজ ছিল না, পালানো ছিল আরো কঠিন। যুদ্ধে যেতে চাওয়াও যখন প্রায় অসম্ভব ছিল, তখনও যুদ্ধে সামিল হয়েছেন এমন নারী বিরল নয়। অথচ সত্তরের ডিসেম্বরে ছাত্রীদের কাঁধে ডামি বন্দুক দিয়ে কুচকাওয়াজ করানো হলেও যুদ্ধের সময় মেয়েদের নিয়ে আলাদা কোনো বাহিনী গঠন কিংবা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। অথচ ধর্ষিতার সারিতে তারা, গণহত্যার মোট সংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশও তারা। শাহীন আফরোজের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মেয়েরা তাদের চোখের সামনে স্বজনদের খুন হতে দেখে প্রতিশোধ স্পৃহায় যুদ্ধে নেমেছিল। অথচ আজো মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিকের প্রতিচ্ছবি কেবলই পুরুষেরই দখলে। জাতীয়তাবাদ কি তবে পুরুষের মতাদর্শ? আজ এতদিন পর পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে ঘৃণায় কথার আগ্নেয়গিরি জ্বালানো বরং সহজ; কিন্তু কঠিন সেসব নারীদের কথা বলা; স্বাধীনতার দাম যাদের সবচেয়ে বেশি মূল্যে শুধতে হয়েছিল। সরকারি হিসাবে আড়াই লাখ এবং কোনো কোনো গবেষকের মতে প্রায় চার লাখ নারী একাত্তরে ধর্ষিত হয়েছিলেন। ৮ থেকে ৮৭ বছর বয়সের। একবার নয়, একদিনের জন্য নয়_ বারবার অনেক দিন ধরে অমানবিক পরিবেশে আটক থেকে। আত্মহত্যা করারও উপায় ছিল না। মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছিল, যাতে সিলিংয়ে ঝুলে পড়তে না পারে। ‘ধর্ষণ’ শব্দটি তাদের নিপীড়নের ভয়াবহতার পুরোটা প্রকাশের জন্য যথেষ্ঠ নয়। আমরা পুরুষরা সেই নিপীড়নের শিকার হতে পারি না বলে হয়তো পুরুষালি ভাষায় তা প্রকাশ করাও কঠিন। মার্চ থেকে ডিসেম্বর…
'প্রসাদ সিংহ পরিকল্পিত' মাসিক উল্টোরথ পত্রিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শৈশবে―প্রয়াত মাতামহের (মুন্সেফ আদালতের সরকারি উকিল) দলিলপত্রভর্তি স্থূলকায় আলমারি লুঠ করে পেয়েছিলাম আরও অনেক বইয়ের সঙ্গে উল্টোরথ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ); ছোট মামা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই পত্রিকা আমার বহু দুপুরের অবকাশরঞ্জিনী হয়ে ছিল। [...]
'প্রসাদ সিংহ পরিকল্পিত' মাসিক উল্টোরথ পত্রিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শৈশবে―প্রয়াত মাতামহের (মুন্সেফ আদালতের সরকারি উকিল) দলিলপত্রভর্তি স্থূলকায় আলমারি লুঠ করে পেয়েছিলাম আরও অনেক বইয়ের সঙ্গে উল্টোরথ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ); ছোট মামা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই পত্রিকা আমার বহু দুপুরের অবকাশরঞ্জিনী হয়ে ছিল। কণিষ্ক (রাম বসু) ও বরেন গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসদুটির (যে যার অজ্ঞাতবাসে ও বনের খেলা) কথা আমার আমৃত্যু মনে থাকবে। পরবর্তীকালে আরও বাইশটি সংখ্যা সংগ্রহ করেছি পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে; ধূসর কাগজে ছাপা কাটা-কাটা চেহারার অক্ষরগুলো আমাকে মোহগ্রস্ত করে রাখে এখনও। মূলত চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা হলেও উল্টোরথ-এর বড় অংশ জুড়ে থাকত গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, সাক্ষাৎকার ও রম্যরচনা; আর যা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষক―'মেলব্যাগ'। নিয়মিত এ-বিভাগে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতো। একটি পূজা সংখ্যায় (১৮৯৯ শকাব্দ) ঘোষণা করা হয়েছিল যে শ্রেষ্ঠ প্রশ্নকর্তাকে ২৫.০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সাধারণত প্রশ্নের তুলনায় উত্তরগুলো সংক্ষিপ্ততর হলেও বুদ্ধিদীপ্তি ও সরসতায় উপভোগ্য হয়ে উঠত। উত্তরদাতা ছিলেন মিসেস প্রসাদ সিংহ ও প্রসাদ সিংহ স্বয়ং; কোনও-কোনও সংখ্যায় অবতার কিংবা শ্রীপঞ্চাননকেও দেখা গেছে, আবার কয়েকটি সংখ্যায় নামই ছাপা নেই কারও। মার্চ ১৯৭২ সংখ্যায় (বর্ষ ২১, সংখ্যা ১, চৈত্র ১৮৯৪ শকাব্দ) প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানা যাচ্ছে : উল্টোরথ-এর মুদ্রাকর, প্রকাশক ও সম্পাদকের নাম মনোজ দত্ত; পত্রিকার ঠিকানা―দি ম্যাগাজিন্স্ প্রাইভেট লিমিটেড, ১২৪/বি, বিবেকানন্দ রোড, কলকাতা-৬। একই প্রকাশনালয় থেকে পাশাপাশি বেরোত একই আদলের আরেকটি মাসিক পত্রিকা : সিনেমাজগৎ। 'মেলব্যাগ' সেখানেও নিয়মিত বিভাগগুলোর একটি। পত্রিকাদুটির প্রকাশতারিখ উল্লেখিত হতো শকাব্দে (যার সঙ্গে ৭৮ যোগ করলে খ্রিস্টীয় সন মিলবে)। 'মেলব্যাগ'-সূত্রে জানতে পারি, 'উল্টোরথ' নামের প্রবর্তক প্রসাদ সিংহ এবং এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে। আমার সংগৃহীত সর্বশেষ সংখ্যাটি (বর্ষ ৩৬, সংখ্যা ৯, বৈশাখ ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ) একটু ব্যতিক্রমী (আকার : ১০.২৫" x ৮"; অন্যান্য সংখ্যার আকার : ৮.২৫" x ৫.২৫")―শকাব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে বঙ্গাব্দ এবং অন্তত এই প্রথমবারের মতো প্রারম্ভিক আখ্যাপত্র দেখতে পাচ্ছি, তাতে লেখা : প্রধান সম্পাদক―শক্তিপদ রাজগুরু, সম্পাদক―ডি. পি. আগরওয়াল, সহযোগী সম্পাদক―শ্যামল বসু। পালটে গেছে কার্যালয়ের ঠিকানাও : ১ বি রাজা সুবোধমল্লিক স্কোয়ার, কলিকাতা-৭০০০১৩। 'পাত্র পাত্রী' বা 'আপনার প্রশ্ন ও আপনার ভাগ্য' শিরোনামে নতুন বিভাগ…
ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব চায়না-য় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত সাম্প্রতিক কালের বৃহত্তম শিল্প-প্রদর্শনী। গণচীনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে চীনের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত মূর্ত হয়ে উঠেছে শিল্পীদের চিত্রকর্মে ও ভাস্কর্যে [...]
তুষারে ছাওয়া দুর্গম বিস্তীর্ণ প্রান্তর পেরিয়ে এগিয়ে চলছে লাল ফৌজ বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে। কিংবা বন্দুক হাতে বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে শত্রু সেনার শিবিরে। দাউ দাউ করে জ্বলছে যেন বিপ্লবের আগুন। অথবা চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বে অগণিত মুক্তিকামী মানুষের মিছিল। এই ছিল দৃশ্যপট, অর্থাৎ ঊনপঞ্চাশের চীন বিপ্লবের পরে চীনা চিত্রকলার চেহারাটা এইরকমই ছিল। বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত শিল্পীরা। মানুষের ছবি আঁকতে হবে, ক্যানভাসে উঠে আসবে সমাজবাস্তবতার চিত্র। বিপ্লবের রক্তিম সূর্যের আভা দিগন্ত জুড়ে, যুদ্ধে যুদ্ধে ক্যানভাস রঞ্জিত – প্রতিরোধের ছবি, শৌর্য বীর্য আর বীরত্বগাথার ছবি। তবে ১৯৪৯ থেকে ২০০৯ এই ষাট বছরে চীনের বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে, হোয়াং নদীতে বিস্তর জল গড়িয়েছে, আর চীন তার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে পৃথিবীর প্রধানতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একসময় কমিউনিস্ট চীনে শিল্প সংস্কৃতি ছিল শুধু প্রপাগান্ডার হাতিয়ার, শুধুই প্রতিফলিত হতো সমাজবাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ক্যানভাস জুড়ে ছিল শুধু লাল ফৌজের বীরত্বগাথা। তবে ২০০৯ সালের প্রেক্ষাপট যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন – বেইজিং এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের প্রধানতম আধুনিক শিল্পের কলাকেন্দ্রে। কেউ কেউ বলছেন, চীন এখন সমকালীন শিল্পের এক অভূতপূর্ব কেন্দ্র। বেইজিং এখন নিউইয়র্ক, পারী আর তোকিওর কাতারে। শিল্পীরা বিস্তর আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক ধারার নানামুখী শিল্পকর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। বিশ্বব্যাপী বড় বড় শিল্প-আয়োজনগুলোতে চীনাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। চীনা শিল্পীদের দিনও পালটে গেছে। বেশ উচ্চমূল্যে বিকোচ্ছে তাঁদের শিল্পকর্ম। তাঁদের কৃচ্ছ্রতাসাধনের দিন শেষ। দামি গাড়ি, বিশালাকৃতির স্টুডিও – এগুলিই যেন তাঁদের বিলাসী জীবনের অনুষঙ্গ। তবে সাম্প্রতিক এক ইতিহাস-প্রদর্শনীতে চীন যেন ফিরে গেছে সেই সময়ে, সেই বিপ্লবের যুগে। যেন অনেকটা পিছনের দিকে ফিরে তাকানো একবার। গণচীনের ষাট বছর পূর্তিতে নানা কর্মকাণ্ডে মুখরিত বেইজিং শহর; সর্বক্ষেত্রেই বিশেষ আয়োজন চোখে পড়ার মতো। এই উপলক্ষে সরকারি প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছে বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ‘দি ফাউন্ডিং অব এ রিপাবলিক’। বিপ্লবের সব মহানায়কের উপর ভিত্তি করে এই ছবির কাহিনি; মাও সে তুং, চৌ এন লাই, চিয়াং কাই শেক – সবাই এই ছবির চরিত্র। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হংকং-এর দুই মহাতারকা জ্যাকি চান এবং জেট লি প্রথমবারের মতো এই ধরনের ছবিতে অভিনয় করলেন। আর চারুকলার বিষয়ে যে-বড় আয়োজন করা হয়েছিল, তার খবর দিল আমার পিএইচ.ডি. ক্লাসের সহপাঠী ছাও ওয়ে। ছাও ওয়ে সেন্ট্রাল…
ইসলামের নামে ইসলামের প্রতি ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা কে করেছে? আপনারাই করেছেন নিজামী। অজস্র মনগড়া "শরিয়া আইন" বানিয়ে নিয়েছেন আপনারা ইসলামের নামে নিজেদের গা বাঁচাতে, এমনকি নিজেদের যুদ্ধাপরাধকে জায়েজ করা আইনও। তরুণরা পড়ে না - কিছু তরুণ আপনাদের বিশ্বাস করে সমর্থন করে। ওই তরুণরা একদিন জানবে কি নিষ্ঠুরভাবে ওদের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে ওদের আপনারা ঠকিয়েছেন [...]
(তওবা করলে গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের শাস্তি হবে না - শরিয়া আইন) নিজামী গং বরাবরই বলেন - জাতিকে নাকি বিভক্ত করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী-বিচারের বাতাস বইবার সাথে সাথে তাঁরা ওটা যত্রতত্র উচ্চকন্ঠে বলে বেড়াচ্ছেন। জাতির ঐক্যের খাতিরে নাকি গণহত্যা-গণধর্ষণের মত ভয়ঙ্কর অপরাধের বিচার শিকেয় তুলে রাখা দরকার। লক্ষ ধর্ষিতাদের সাথে ও লক্ষ নিহতদের কোটি কোটি স্বজনদের সাথে গণহত্যাকারী ও গণধর্ষণকারীদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা নাকি খুবই দরকার। জনাব নিজামী, কিছু স্পষ্ট কথা আপনার মাথায় না ঢুকুক কানে ঢালা প্রয়োজন। নষ্ট রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আর জাতির হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া’র মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। আজ বিপদে পড়ে ঐক্যের কথা বলছেন, জাতিকে বিভক্ত কে করেছে রক্তরেখায়? আপনাদের আর জাতির মাঝখানে লক্ষ লাশ লক্ষ ধর্ষিতার হিমালয় কে তুলেছে? আপনারাই তুলেছেন, আমরা নই। সে হিমালয় আজো দাঁড়িয়ে আছে রক্তস্বাক্ষরে। পরাক্রমশালী বিদেশী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সেই জীবন-মরণ যুদ্ধে আপনারা আমাদের সাথে ঐক্য করলে আমাদের শক্তি আর মনোবল অনেক বাড়তো। কিন্তু আপনারা বাংলায় জন্মে বাঙ্গালীর সঙ্গে ঐক্য না করে বাঙ্গালীরই বিরুদ্ধে খোলাখুলি জিহাদ ঘোষণা করলেন, অস্ত্র ধরলেন। জাতির ওপরে বিদেশীদের গণহত্যা-গণধর্ষণে শরিক হওয়াকে ইবাদত মনে করলেন এবং প্রাণপনে সে ‘‘ইবাদত’’ করলেন-ও। আপনাদের সক্রিয় সমর্থন নাপাক পিশাচদের শক্তি ও মনোবল অনেক বাড়িয়েছিল, আপনাদের সাহায্য না পেলে অনেক বাঙ্গালী বেঁচে যেত অনেক বাঙ্গালিনী ধর্ষিতা হতো না। এতসবের পর কিভাবে আমরা আপনাদের সাথে ঐক্য করি? আটত্রিশ বছর কেটে গেছে আপনারা সে অপরাধের জন্য আল্লা-রসুলের কাছে আর নিপীড়িতদের কাছে ক্ষমা তো চানইনি বরং সগর্বে বলেছেন - ‘‘একাত্তরে আমরা ভুল করিনি’’। করেছেন। মিসটেক নয়, ব্লান্ডার করেছেন। ভুল-ও করেছেন, অপরাধও করেছেন। কেন করেছেন জাতি জানে। ঐক্য যে করবেন, করবেন-টা কার সাথে? এ জাতি কখন আপনার নিজের জাতি ছিল? কখনোই না। এ জাতির সংস্কৃতি কবে আপনার সংস্কৃতি ছিল? কখনোই না। এ জাতির মরমীয়া ইসলাম কবে আপনাদের ইসলাম ছিল? কখনোই না। জাতির হাজার বছরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যে ঘুন ধরিয়ে ইসলামের হিংস্র ব্যাখ্যা আমদানী কে করেছে? আপনারাই করেছেন। তাই আপনারা যতনা বাঙ্গালী হয়েছেন তার চেয়ে বেশী হয়েছেন পাকিস্তানি। যতনা মুসলমান হয়েছেন তার চেয়ে বেশী হয়েছেন আরবী। তাই আগ্রহ আর উল্লাসের সাথে নিজের আত্মপরিচয়কে, স্বজাতির রক্ত আর নারীর সম্ভ্রমকে বিদেশীর পায়ে…
জগৎজ্যোতি দাস মুক্তিযুদ্ধের শহীদ। সব শহীদই বীর, বীরশ্রেষ্ঠ। জন্ম হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে। ১৯৭১ সালে বয়স হয়েছিল ২২। [...]
আতোয়াঁ দ্য সা-এক্সুপেরির দ্য লিটল প্রিন্স বইয়ের গল্পে আছে -- ভিন গ্রহের বাসিন্দা ছোট রাজকুমার নিজ গ্রহে চলে যাওয়ার সময় পৃথিবীবাসী বন্ধুকে এই বলে আশ্বস্ত করে গিয়েছিলেন যে, রাতেরবেলায় আকাশের দিকে তাকিয়ে সে যখন রাজকুমারের তারাটি খুঁজবে, তখন তিনি নিজ তারায় বসে হাসবেন। তার মনে হবে যেন, সব তারাই হাসছে। সব দুঃখ তখন সে ভুলে যাবে (সময় সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়)। আর সুখী হবে এই ভেবে যে, সে একদিন রাজকুমারকে ভালোবেসেছিল। রাজকুমার আরও বলেছিলেন, সবারই একটি করে তারা আছে। আমিও তা বিশ্বাস করতে চাই; এবং এই ভেবে সুখী হতে চাই যে, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ আকাশের তারা হয়ে আছেন। তাতে আছেন জগৎজ্যোতিও। জগৎজ্যোতি দাস মুক্তিযুদ্ধের শহীদ। সব শহীদই বীর, বীরশ্রেষ্ঠ। জন্ম হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে। ১৯৭১ সালে বয়স হয়েছিল ২২। তার হয়ে ওঠার বয়ান নিষ্প্রয়োজন। কেননা, মুক্তিযোদ্ধাদের সিংহভাগই দরিদ্রজনের সন্তান। আর জগৎজ্যোতিও এর ব্যতিক্রম নন। সুনামগঞ্জ কলেজে ছাত্র থাকাকালে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য শিলংয়ে প্রেরিত ১১৪ জনের প্রথম দলটিতে মনোনয়ন পান জগৎজ্যোতি। ৩২ দিনের কোর্স সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত করেন। শেখেন যুদ্ধ ও অন্তর্ঘাতের নানা কৌশল। প্রশিক্ষণ শেষে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের হেড কোয়ার্টারে এলে ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত একটি দলের নেতৃত্ব তিনি পান, যে দলটি পরে 'দাস-পার্টি' নামে পরিচিত হয়েছিল। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা এবং নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের কিছু এলাকা ছিল টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীন। এসব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে সড়কপথে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠলে পাকিস্তানিরা জলপথ ব্যবহার শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে শত্রুদের জলযান ধ্বংসের দায়িত্ব পায় 'দাস-পার্টি'; এবং কুশিয়ারা নদীতে তারা কার্গো-নৌযানের একটি বহর অ্যামবুশ করে ডুবিয়ে দেয়। জগৎজ্যোতি পানিতে ডোবানো খুঁটিতে বাঁধা দড়িতে মাইন ঝুলিয়ে নৌযান ধ্বংসের একটি নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং ক্রমাগত গানবোট ও কার্গো-ভেসেল ডোবাতে থাকেন। দাস-পার্টির অসংখ্য সফল অপারেশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য -- বানিয়াচং থানা দখল, পাহাড়পুরে হানাদার অ্যামবুশ, বদরপুরে ব্রিজ ধ্বংস, জামালগঞ্জ থেকে পাক সৈন্য ও রাজাকার বিতাড়ন এবং গোটা এলাকা মুক্তকরণ, তাহিরপুর আক্রমণ, খালিয়াজুড়ি থানায় হামলা, রানীগঞ্জ ও কাদিরপুর অভিযান, দিরাই ও শালল্গা বিনাযুদ্ধে দখল ইত্যাদি। বিপজ্জনক ও রক্তক্ষয়ী এসব অভিযানে সাফল্য ছিল উদ্ভাবন দক্ষতানির্ভর। এভাবেই জগৎজ্যোতি নিজেকে পুনর্নির্মাণ করেছেন, দক্ষ যোদ্ধা হয়ে উঠেছেন, শত্রুর…