এই সংবিধান হল সেই দলিল যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা। কথাটা আমরা ভুলে যাই, বা ভুলে যেতে বসেছি। আর আমাদের এই ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেয় যারা নেবার। এজন্যই সর্বস্তরে সংবিধান দিবস উদযাপন জরুরী। ক্ষমতাসীনরা না করলেও আমাদের অন্তত করা উচিত। কারণ এই দিনটি আমাদেরই দিন। আমরা মানে জনগণ।

গতকাল ছিল ৪ নভেম্বর। আমাদের সংবিধান দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও এলো, প্রায় নিরবেই চলেও গেল দিনটি। ব্যাপকভাবে বিস্মৃত, রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত এই একটি দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছিল। এর পর দিনটির কথা আমরা প্রায় সবাই একরকম ভুলেই গিয়েছি, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনটিকে উদযাপনের কথা আমাদের কারোই মনে থাকে না! স্বাধীনতা সংগ্রাম, এতো আত্মত্যাগ, এতো রক্তপাত - সে তো 'সংবিধান' নামের এই দলিলটি হাতে পাওয়ার জন্যই। যে দলিলটির মাধ্যমে স্বাধীন জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজস্ব সীমানায় নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। আমাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার (right to self-determination) এর মূর্ত প্রতিফলন এই দলিল। এই দিনটির তাৎপর্য্য অন্য যে কোনো দিন উদযাপনের চেয়ে কোনো অংশে কম না। বরং আমার বিবেচনায় এই দিনটির তাৎপর্য্য আমাদের অন্য আর সব রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত দিনের চেয়ে হয়তো বেশীই। কারণ, এই দিনটির সঠিক উদযাপন - প্রতি বছর আমাদের মনে করিয়ে দিতে পারে এই সংবিধানের শরীরে ধারণ করা সবচেয়ে জরুরী কথাগুলো। যেখানে আরও অনেক বিষয়ের পাশাপাশি বলা রয়েছে: - স্বাধীনতার সংগ্রাম, আর তা অর্জনের পথে আমাদের জনগণের ঐতিহাসিক ত্যাগ স্বীকারের কথা। - এই ভূখন্ডের মানুষদের মৌলিক অধিকারগুলোর কথা। - আমাদের রাষ্ট্রটি কি কি মৌল নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে বা হওয়া উচিত, সেই স্বপ্ন আর উপলদ্ধিগুলোর কথা। - যারা এই দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতায় থেকে শাসন করবেন, তাদের দায়বদ্ধতা আর জবাবদিহিতার কথা। - সারা বিশ্বের দরবারে আমরা কি কি নীতির ভিত্তিতে নিজেদের তুলে ধরবো সেকথা। - আমাদের অতীত, ঐতিহ্যের প্রতি এই রাষ্ট্রের এবং সম্মিলিতভাবে আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে সেকথা। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল - এই সংবিধান হল সেই দলিল যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা। যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে - এই সংবিধান হল 'জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি' [অনুচ্ছেদ ৭(২)]। বলা আছে - 'এই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ'। বলা আছে - শুধু এই জনগণের হয়েই এই সংবিধানের সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রয়োগ কার্যকর হবে [অনুচ্ছেদ ৭(১)]। এই কথাগুলোই আমরা ভুলে যাই, বা ভুলে যেতে বসেছি। আর আমাদের এই ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেয় যারা নেবার। এজন্যই সর্বস্তরে দিনটির উদযাপন…

  অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর ১৯৭১ সালের অপকর্ম নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন লিখবেন সাহসী সাংবাদিক। সেই লেখার কারণে আক্রমণের শিকার হবেন তিনি, তার অঙ্গহানি ঘটবে। সে অন্যায়ের না হবে তদন্ত, না হবে বিচার! দেশে পাঁচ পাঁচটা বছর ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলতে থাকবে। রাঘব বোয়াল রাজাকার থেকে শুরু করে অলিগলির ছিঁচকে রাজাকার দু'একজনেরও বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, রীতিমতো দেশ আর দুনিয়া কাঁপিয়ে। সেখানে কারও হবে ফাঁসী, কারও হবে জেল। কিন্তু সেই একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে নিয়ে না আলোচনা হবে মিডিয়ায়, না খোলা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তের কোনো ফাইল। এবং এমনটাই হতে থাকবে। কারণ, ততোদিনে সেই চিহ্নিত অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর এমনকি সামাজিক আত্মীয়তার বন্ধন তৈরী হয়ে গেছে রাজনৈতিক সরকারের কেন্দ্রীয় বলয়ের প্রভাবশালীদের সাথে! সেই খুঁটির জোরে রাজাকার সাহেব মহাসমারোহে ঢাক ঢোল পিটিয়ে দেশে আসবেন, পাঁচ তারা হোটেলে তার সম্বর্ধনা হবে, তাকে নিয়ে আলোচনা হবে, কিছু কুলাঙ্গার নির্বোধও জুটে যাবে তার গুনগান গাইবার! ১৪ বছর আগে সেই যে এক সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছিলেন - তার পর আর কিছু ঘটেনি, ঘটবে না। কারণ, তার উপর সব দায় চাপিয়ে দিয়ে আমরাও একটা পুরো জাতি ততোদিনে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে চলে গেছি। সেই সাংবাদিককেই অগত্যা এবারও আবার কলম তুলে নিতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ একটাও মানুষের মতো মানুষ নেই কোথাও প্রতিবাদ করবার মতো। লিখবার জন্য শুধু সেই সাংবাদিকের জীবনই আবার নতুন করে বিপন্ন হবে, সরাসরি জীবননাশের হুমকি ঝুলবে তার সামনে। যেন এর মাধ্যমে এই বার্তাটুকু সবার কাছে পৌঁছে দেয়া - প্রভাবশালী সরকারী আত্মীয় যে সব যুদ্ধাপরাধী - তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখিয়েছো - তাহলে তুমি তো মরবেই, তোমার পরিবারকেও বাঁচতে দেয়া হবে না। আর হুমকিদাতাদের স্রেফ মর্জির কারণে দৈবাত যদি এখনো বেঁচেও থাকো, তাহলেও মৃত্যুর খাঁড়া তোমার মাথার উপর ঝুলতে থাকবে সবসময় - সেটা নিয়েই জীবনযাপন করতে হবে তোমাকে এবং তোমাদের মতো আর সবাইকে! এসব যখন চলতে থাকবে তখন সামাজিক নেটওয়ার্কে, ফেসবুকে - আমাদের দিবারাত্র বকবক করার মতো বিষয়ের কোনো অভাব পড়বে না। শুধু এই ইস্যুতে কাজ করবার মতো সময় হবে না আমাদের বেশীর ভাগেরই। এখানে "আমরা" মানে তারা যারা নিজেদের তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক ইত্যাদি বলে দাবী…

পুরো অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সভা কক্ষের আবেগ, উদ্দীপনা, আর উপস্থিত সবার প্রত্যয় নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজের প্রকাশ-ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রবলভাবে অনুভব করলাম। তাই মনে হল, পুরো ছয়শো মানুষ যেখানে একই আবেগ আর প্রত্যয়ে এক সূত্রে গাঁথা ছিল গোটা সন্ধ্যা জুড়ে, সেখানে নিজের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়ার কথা আলাদাভাবে বলার কিছু তো নেই আসলে! তাই হিলটনের সেই সভাকক্ষে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বক্তৃতা চলাকালীন টুইটারে তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়াগুলো ব্যক্ত করছিলেন সেখান থেকে কিছু স্ক্রিনশট তুলে ধরছি

গত ২ জুলাই লন্ডনে ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত এ বছরের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। হাই-প্রোফাইল এ বক্তৃতানুষ্ঠানের এ বছরের নির্ধারিত বক্তা রাফিদা (বন্যা) আহমেদ। অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং উদ্দীপনাময় সে বক্তৃতা স্পর্শ করেছে উপস্থিত ছয় শতাধিক মানুষকে। তারা সবাই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজির হয়েছিলেন এই সন্ধ্যায় বন্যা আহমেদের বক্তব্য শোনার জন্য। এদের বেশীরভাগই সেক্যুলার-মানবতাবাদী, যার যার ক্ষেত্রে আন্দোলনের সংগঠক, কর্মী। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপের মূলধারার মিডিয়ার সাথে যুক্ত সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, সম্পাদকরা। অভিজ্ঞতাটা নিয়ে লেখার কথা ভাবছিলাম আমিও। কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সভা কক্ষের আবেগ, উদ্দীপনা, আর উপস্থিত সবার প্রত্যয় নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজের প্রকাশ-ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রবলভাবে অনুভব করলাম। তাই মনে হল, পুরো ছয়শো মানুষ যেখানে একই আবেগ আর প্রত্যয়ে এক সূত্রে গাঁথা ছিল গোটা সন্ধ্যা জুড়ে, সেখানে নিজের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়ার কথা আলাদাভাবে বলার কিছু তো নেই আসলে! তাই হিলটনের সেই সভাকক্ষে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বক্তৃতা চলাকালীন টুইটারে তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়াগুলো ব্যক্ত করছিলেন সেখান থেকে কিছু স্ক্রিনশট তুলে ধরছি এই এ্যালবামে। এই অনুষ্ঠান সম্বন্ধে, কিংবা উপস্থিত সবার প্রতিক্রিয়া জানতে টুইটারে হ্যাশটা্যাগ #BHAVoltaire খোঁজ করলে আরও জানতে পারবেন। [এই লিন্কে বন্যা আহমেদের পুরো বক্তৃতাটিই পাবেন] যদিও অত্যন্ত তাৎপর্যহীন, তবুও একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যার কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা থাকায় এখানে উল্লেখ করছি। বন্যা আহমেদের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ নিয়ে লেখক তসলিমা নাসরিন কিছু অদ্ভুত মন্তব্য করেছেন (এই এ্যালবামের শেষে দেখুন)। ‘অদ্ভুত’ বললাম এ কারণে যে – তার এই মন্তব্যগুলোর হেতু বা উদ্দেশ্য আমার কাছে একেবারেই স্পষ্ট নয়। সত্যি বলতে কি সেটা উদঘাটনেরও তেমন আগ্রহ বোধ করছি না। বন্যা আহমেদ তার বক্তৃতায় হেসেছেন কেন তা নিয়ে তসলিমা নাসরিন অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আরও অসন্তুষ্ট হয়েছেন যে বক্তৃতায় বন্যা আহমেদ যথেষ্ট ‘রাগ’ এবং ‘ফুঁসে ওঠা’ প্রকাশ করেননি! অভিজিৎ বিষয়ে বন্যা আহমেদের প্রকাশভঙ্গী মনঃপূত না হওয়ায় তা নিয়েও তসলিমা নাসরিনের ‘একটুখানি অস্বস্তি’ হয়েছে বলে তিনি লিখেছেন! তসলিমা নাসরিন সেদিন হিলটনের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। আমি ছিলাম, আরও ছিলো ছয় শতাধিক মানুষ, যারা তাদের প্রতিক্রিয়া/অনুভুতি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্ত করেছেন। এই এ্যালবামের টুইটগুলো পড়লে তসলিমা নাসরিন নিশ্চয়ই তার ভুল উপলদ্ধি করবেন। সভাকক্ষে উপস্থিত কারোই মনে হয়নি যে অভিজিৎ রায়কে কিংবা বাংলাদেশের তাবত…

যুক্তিবাদী বিশ্বদৃষ্টির সাথে অন্ধ বিশ্বাসপ্রবণদের দ্বন্দ্বের সর্বশেষ শহিদ অভিজিৎ রায়। অভিজিৎদের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর হয়ে চলেছে কয়েক দশক ধরে। অথচ বাংলাদেশের কথা ছিল তার সবটুকু শক্তি দিয়ে সেক্যুলার মুক্তচিন্তার পরিবেশ গড়ে তোলার [. . .]

এক. আমেরিকা-প্রবাসী ড. অভিজিৎ রায় (জন্ম ১৯৭১) এবার বাংলাদেশে এসেছিলেন অমর একুশের বইমেলায় যোগ দিতে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামপন্থী আততায়ীরা তাঁকে বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আততায়ীদের আক্রমণে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, যিনি নিজেও একজন ব্লগার এবং লেখিকা; ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ (২০০৭) গ্রন্থটি তাঁরই। কাছাকাছি স্থানেই এই ফেব্রুয়ারি মাসেই এক দশক আগে (২০০৪) মুক্তচিন্তার আরেক পথিকৃৎ অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের উপরও ঠিক এভাবেই আক্রমণ করেছিল ইসলামপন্থী জঙ্গিরা। ছোটবেলা থেকে অভিজিতের বেড়ে ওঠা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। বিদেশে ডক্টরেট করতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ তাঁর পড়াশোনা। সে বুয়েট ক্যাম্পাসও অদূরেই। আমেরিকায় একটি কোম্পানিতে কর্মরত প্রকৌশলী অভিজিৎ। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি অভিজিৎ শুধু লিখেছেন। প্রচুর লিখেছেন। ব্লগ থেকে শুরু করে গবেষণা নিবন্ধ, মতামত কলাম থেকে শুরু করে বই। একক এবং দ্বৈত প্রকাশনা মিলিয়ে ড. অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত বইগুলো হলো: ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫), ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ (২০০৭), ‘স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’ (২০০৮), ‘সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ (২০১০), ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ (২০১১), ‘ভালোবাসা কারে কয়’ (২০১২), ‘বিশ্বাস ও দর্শন’ (২০১২), ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ (২০১৪) এবং ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে’(২০১৫)। অভিজিৎ রায়ের পিতা পদার্থবিজ্ঞানের পণ্ডিত অধ্যাপক অজয় রায়, বর্তমানে অবসরে। তরুণ বয়সে অজয় রায় নিজে সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এর পর সারা জীবন জ্ঞান সাধনা, এবং শিক্ষকতার মহান ব্রত নিয়ে মানুষ গড়ার পাশাপাশি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেছেন প্রগতিশীল-সেক্যুলার-বৈষম্যহীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার কাজে। তাই, সন্তানহারা পিতার কাছেও এই দেশটির জবাবদিহিতার মুহূর্ত এটা। দুই. অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে পুরো দেশ এখনও স্তম্ভিত। সামাজিক মিডিয়াসহ পুরো বাংলা ব্লগমণ্ডল প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে, অভিজিৎ রায়ের লেখাগুলো সর্বশক্তিতে পুনঃপ্রচারে নেমেছে অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে, আর দেশের বাইরে লন্ডন, টরন্টো, নিউইয়র্ক, বার্লিন, সিডনি-তে মানব-বন্ধন থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রতিবাদ সমাবেশ হয়ে গেছে গত কয়েক দিনে। অনলাইন আর অফলাইন এর প্রতিবাদে বারবার হ্যাশট্যাগে উঠে এসেছে: 'JeSuisAvijit', 'আমিই অভিজিৎ', 'আমরা অভিজিৎ'। সুষ্ঠু তদন্ত আর বিচারের পাশাপশি মুক্তচিন্তার অনুসারীদের নিরাপত্তার দাবিই এ মুহূর্তে মুখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অভিজিৎ রায়ের স্মৃতিস্তম্ভ দাবি নিয়েও এগিয়ে এসেছে সেক্টর কমান্ডার'স ফোরাম। ইতিমধ্যে হত্যার উস্কানিদাতা এক জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। তদন্ত চলছে। আমেরিকা থেকে এফবিআই-এর একটি তদন্ত…

একে বলে - ভিকটিমের উপর দোষ চাপিয়ে অপরাধীর পক্ষে কার্যত সাফাই গাওয়া, অপরাধী আর তার ভিকটিমকে একই পাল্লায় মাপা। যাতে একসময় তাদের মধ্যে আর কোন পার্থক্য খুঁজে না পাওয়া যায়। তাতে বিচারের দাবীটি হাল্কা হয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও পোক্ত হয়। চারপাশের ছোটবড় আততায়ী পরিবেষ্টিত এই হল আমাদের সময়!

ছবির এই লোকটার চেহারা দেখে রাখুন। কথাগুলোও খুব মন দিয়ে লক্ষ করুন। এর নাম মুকেশ। চিনছেন না? তাহলে আসুন চিনিয়ে দিচ্ছি। দিল্লীর সে মেয়েটার কথা মনে আছে? ২৩ বছরের জ্যোতি? হ্যাঁ, সেই জ্যোতি যাকে দিল্লীর বাসে এক রাতে এই মুকেশসহ আরও পাঁচ জন ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। হত্যাকারীরা সবাই ধরা পড়েছিল। আপনি হয়তো ভাবছেন এর পর মুকেশরা নিশ্চয়ই তাদের কৃৎকর্মের বিভৎসতা বুঝতে পেরে অনুশোচনায় কাতর। আপনার ধারণা ভুল। মুকেশদের কখনো অনুশোচনা হয় না। যে কারণে এখনও মুকেশরা দম্ভ ভরে বলতে পারে - "ধর্ষক পুরুষের চেয়েও ধর্ষিতা নারীটির দায় বেশী,... কারণ তার পোশাক-আশাক ঠিক ছিল না,... কারণ সে রাত বিরেতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল,... তার উচিতই হয়নি প্রতিরোধের চেষ্টা করা" ইত্যাদি। [লিন্ক ১; লিংক ২]. যদি ভাবেন এই চিন্তাপদ্ধতি শুধু মুকেশ আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের, তাহলে বিরাট ভুল করবেন আপনি। চার পাশের যে নিপাট মডারেট ভদ্রলোকদের দেখছেন, তাদেরও বেশীরভাগ আসলে ওভাবেই চিন্তা করে। তফাত একটাই - মুকেশরা কর্মে বীর, এরা ফ্যান্টাসীতে। আর এদের মধ্যেও যারা একটু হাবা ধরণের, তারা ফ্যান্টাসীর কথাটা ভুস করে জনসমক্ষে বলে বসে। আর যাদের মাথায় ঘিলু একটু বেশী তারা এক ধরণের দার্শনিকতার ছাঁচে আড়ে আড়ে তাদের এপলজিস্ট যুক্তিগুলো তুলে ধরে (যেমন: 'ক নিন্দনীয় কিন্তু/তবে খ এরও উচিত হয়নি ...')। একে বলে - ভিকটিমের উপর দোষ চাপিয়ে অপরাধীর পক্ষে কার্যত সাফাই গাওয়া, অপরাধী আর তার ভিকটিমকে একই পাল্লায় মাপা। যাতে করে একসময় এ দু'য়ের মধ্যে আর কোন পার্থক্য খুঁজে না পাওয়া যায়। তাতে বিচারের দাবীটি হাল্কা হয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও পোক্ত হয়। এদিকে এক সপ্তাহও পার হয়নি অভিজিৎ রায় খুন হয়েছেন। জীবনে তিনি কোনদিন কারও পাকা ধানে মই দিয়েছেন এমন শুনিনি। শুধু প্রান্তিক বিভিন্ন বিষয়ে নিজের উপলদ্ধিগুলো তুলে ধরতেন। সে সব নিয়ে লিখবার জন্যই প্রাণ দিতে হল তাকে। ইতোমধ্যেই বুদ্ধিমানগণ ঠিক উপরের ঐ মুকেশ আর তার বুদ্ধিমান এপলজিস্টদের মতো করেই ঘ্যানঘ্যানে তানে সুর ধরেছে - 'অভিজিৎ এর মৃত্যু অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়, কিন্তু/তবে এটাও বুঝতে হবে ও ছিল নাস্তিক, ওর লেখা ধার্মিক এর দিলে বেজায় চোট দিতো রোজ'। আর ঘ্যানঘ্যানে এই তান প্রতিবারই শেষ হয় সাধারণত এই জাতীয় বাক্য দিয়ে -…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.