যতবার কাউকে কোথাও মুক্তচিন্তার জন্য লড়াইয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখবো - ততোবার আপনার কথা মনে পড়বে। আপনার সন্তানটির জন্য যে মুক্ত স্বাধীন ভুখন্ডের স্বপ্ন আপনি দেখতেন সেই ভুখন্ডে আজকে দীর্ঘ এক অন্ধকার রাত নেমেছে। কিন্তু এই প্রবল অন্ধকারেও আলোর যাত্রীদের পথ চলা থামবে না। কথা দিচ্ছি অভিজিৎদা।

অভিজিৎদা, আপনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের সূত্র যে লেখাগুলো, তার একটির শিরোনাম ছিল এটি। লেখালেখি, আইসিএসএফ, আর বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (বিসিবিএ) এর প্রতিদিনকার কাজের সূত্র ধরে আপনার সাথে আলাপ হতো। কত দিনের কত না স্মৃতি! মাত্র চার দিন আগেও আলাপ করেছি আমরা ফেসবুকে। কথা হচ্ছিল প্রগতিশীল আন্দোলনের ভবিষ্যত আর আমাদের কর্মসূচী নিয়ে। রাজীবকে যেদিন মেরে ফেললো এই একই হিংস্র মৌলবাদীর দল, তখনও কি আপনি জানতেন যে একদিন এই একই পরিণতি আপনারও হতে পারে? জানলে কি আরেকটু সাবধান হতেন? লেখালিখি থামিয়ে দিতেন কি অভিজিৎ দা? আমার কেন যেন মনে হয় আপনি থামতেন না। সব জেনে বুঝে তারপরও লিখে যেতেন। মনে পড়ছে - একদিন আপনিই লিখেছিলেন - 'ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি।' লিখেছিলেন, পরাজয় নিশ্চিত জানলে - 'এরা সব সময়ই ... শেষ কামড় দিতে চেষ্টা করে...এগুলো আলামত... তাদের অন্তিম সময় সমাগত।... বিজয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী'। ১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, মুনীর চৌধুরীরাও জানতেন। জানতেন - ওরা তাদের বাঁচতে দেবে না। তারপরেও তাঁরা তাদের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। লড়াই চালিয়ে গেছেন - আমাদের জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। রাজীবের মৃত্যুর পর যখন তথাকথিত প্রগতিশীলদের অনেকেই ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, আপনাকে দেখেছি সরব থাকতে। প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন যখন মৌলবাদীদের হুমকির মুখে 'রকমারি' নামের ব্যবসাদার প্রতিষ্ঠানটি একের পর এক মুক্তচিন্তার মানুষদের বইগুলো নামিয়ে ফেলছিল। মৃত্যুর হুমকি এসেছে আপনার কাছে বহুবার। তারপরও এক চুলের জন্যও ওদের জায়গা ছেড়ে দেননি আপনি। চার দিন আগে আপনার সাথে শেষ আলাপে বিদায় নেয়ার আগে আপনি বলেছিলেন - 'একটু গুছিয়ে নিন, আড্ডা হবে শিগগিরই।' নিশ্চয়ই আড্ডা হবে। প্রতীক্ষায় আছি অভিজিৎদা। জানি এটা কল্পনা। কিন্তু এও জানি - যতবার স্কাইপে বসবো, যতবার ফেসবুকের ফিডের দিকে তাকাবো, যতবার কাউকে কোথাও মুক্তচিন্তার জন্য লড়াইয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখবো - ততোবার আপনার কথা মনে পড়বে, আমাদের সেই না-হওয়া আড্ডাটার কথা মনে পড়বে। আপনার সন্তানটির জন্য যে মুক্ত স্বাধীন ভুখন্ডের স্বপ্ন আপনি দেখতেন সেই ভুখন্ডে আজকে দীর্ঘ এক অন্ধকার রাত নেমেছে। কিন্তু এই প্রবল অন্ধকারেও আলোর যাত্রীদের পথ চলা থামবে না। কথা দিচ্ছি…

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাজি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল যখন শুরু হয়, প্রায় কাছাকাছি সময়ে জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যও টোকিও ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। সেই বিচার সভায় বাঙালী একজন বিচারপতিও ছিলেন, নাম জাস্টিস রাধাবিনোদ পাল; কুষ্টিয়ায় জন্ম তাঁর। হিরোশিমা-নাগাসাকি ইস্যু এবং অন্য আরও কয়েকটি ঘটনার জন্য তিনি মনে করতেন নাজি-জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের বহু মানুষেরও বিচার হওয়া উচিত ছিল। [. . .]

আজ হিরোশিমা দিবস। ৬৯ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই দিনে আমেরিকানরা জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমা ফেলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল একটা পুরো জনপদ। তার কিছু দিন পর নাগাসাকি শহরেও একই আক্রমণের পুনরাবৃত্তি করা হয়। নির্বিচার এই হত্যাযজ্ঞ নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক অপরাধের আওতায় পড়ে, নানান অজুহাতে যার কোনো বিচার হয়নি। যে-কোনো বিচারহীনতাই মানুষের এই সভ্যতাকে পিছিয়ে দেয়; হিরোশিমা-নাগাসাকি তার ব্যতিক্রম হবে কেন? আমরা যখন চার দশক আগে ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার চাই, তা তো এই বোধ থেকেই চাই। বিচার যে একেবারেই হয়নি তা কিন্তু নয়। বিচার হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাজি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল যখন শুরু হয়, প্রায় কাছাকাছি সময়ে জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যও টোকিও ট্রায়াল শুরু হয়েছিল (http://bit.ly/1p9Z7Cq)। সেই বিচার সভায় বাঙালী একজন বিচারপতিও ছিলেন, নাম জাস্টিস রাধাবিনোদ পাল (১৮৮৬–১৯৬৭); কুষ্টিয়ায় জন্ম তাঁর (http://bit.ly/1qWCmEP)। হিরোশিমা-নাগাসাকি ইস্যু এবং অন্য আরও কয়েকটি ঘটনার জন্য তিনি মনে করতেন নাজি-জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের বহু মানুষেরও বিচার হওয়া উচিত ছিল। তিনি মনে করতেন বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যদি সত্যিই মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে তেমনভাবেই তা করা উচিত ছিল। এই কথাগুলো নির্ভীক এই বিচারক টোকিও ট্রায়ালে তার বিশ্ববিখ্যাত সে রায়েও উল্লেখ করেছিলেন, এমনকি বাকি বিচারকদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেই। তাঁর এই অবস্থানের জন্য জাস্টিস রাধাবিনোদ পাল ব্যাপক সমালোচিতও হয়েছিলেন সে-সময়। অনেক বিতর্কও হয়েছে তাঁকে নিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেরকার বিশ্ব পরিস্থিতিতে, সহকর্মী সব জাঁদরেল বিচারকদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার এই নির্ভীক চর্চা কোনো সহজ কাজ ছিল না। কয়েক দশক লেগেছে রাধাবিনোদ পালের এই বিচারিক সততার দেশ-কাল নিরপেক্ষ যথার্থ মূল্যায়ন হতে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির নিরসনে যে নির্ভীক নামগুলো আজকাল আমরা স্মরণ করি, তাঁদের মধ্যে জাস্টিস রাধাবিনোদ পালের নাম অন্যতম। কোনো দিন যদি জাপানের কিয়োতো শহরে যান কেউ, তাহলে সেখানকার ‘কিয়োতো রিয়োজেন গোকুকু’ মন্দিরটিতে ঘুরে আসতে ভুলবেন না। এই পুরো সমাধি এবং মন্দির চত্বরটিই জাপানের শ্রেষ্ঠতম মহানায়কদের সম্মানে এবং স্মরণে (http://bit.ly/1tWebqk)। সেখানে আমাদের জাস্টিস রাধাবিনোদ পালের সম্মানে একটি মনুমেন্ট রয়েছে। কয়েক মুহূর্ত ব্যয় করে এই অসাধারণ মানুষটিকে সম্মান জানিয়ে আসবেন অবশ্যই।

মিডিয়া নিশ্চয়ই তার নিরপেক্ষতা আর অবজেকটিভিটি বজায় রাখবে। কেউ এসে অন্যায্য কথা বলে যাবে আর আমাদের মিডিয়া সেটা বশংবদভাবে টুকে নিয়ে আসবে আর এক তরফা প্রতিবেদন ছাপাবে সেটাও কাম্য না।

পত্রিকায় দেখলাম আজ স্টিফেন র‌্যাপ (Stephen J Rapp) ঢাকা আসছেন আবার। বাংলাদেশে পঞ্চম বারের মতো এই সফর তার। আরও একবার অবশ্য তিনি না এসে তার সহকারীকে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায়। সেই বার পাঠাবার সময় ট্রাইবুনাল এবং সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছিলেন - 'তার এই সহকারীকেও যেন তার মতো করেই সম্মান এবং একসেস দেয়া হয়'। স্টিফেনের পরিচয় হল, তিনি বারাক ওবামা নিযুক্ত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত। বরাবরকার মতো এবারও ঢাকা আসছেন তিনি আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল মানসম্মত কি না তার "মূল্যায়ন" করতে! না, তার কোন সফরই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সফর ছিল না। বরং, তিনি আসামী পক্ষ আয়োজিত সমস্ত হাই-প্রোফাইল লবিইং মিটিং-সেমিনারগুলোরই নিয়মিত আলোচক এবং অতিথি! বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশেষ দূতের আগ্রহের কোন সীমা পরিসীমা নেই। গাজাসহ পৃথিবীর বহু স্থানে ঠিক এই মুহুর্তেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকার্যও পরিচালিত হচ্ছে বহু দেশে। কিন্তু আর কোন দেশের বা ট্রাইবুনালের ব্যাপারে এই রাষ্ট্রদূতের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। সুপারিশের ঢংয়ে স্টিফেন আমাদের ট্রাইবুনাল এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। তার কথাগুলো আবার জাঁদরেল কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বেদবাক্য ধরে নিয়ে প্রচারও করেছে। International Crimes Strategy Forum (আইসিএসএফ) মনে করে না তার কথাগুলো সঠিক। বিভিন্ন সময় আইসিএসএফ তার এইসব "বেদবাক্য" সমুহের প্রতিবাদ করেছে, বিশদ অবস্থানপত্রও প্রকাশ করে তা পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সে সমস্ত ফোরামে। এর কিছু সুফলও হয়তো পাওয়া গেছে, কারণ, অতীতের সমালোচনার অনেকগুলো পয়েন্টই পূনরাবৃত্তি করা বাদ দিয়েছেন স্টিফেন সাহেব নিজেই। নিচের এই লিন্কে স্টিফেন র্যাপ এর মন্তব্যের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে আইসিএসএফ এর অবস্থানপত্রে: http://bit.ly/1pT79vZ সংযুক্তিসহ আইসিএসএফ এর পুরো অবস্থানপত্রটির পিডিএফ ডাউনলোড করা যাবে এই লিন্ক থেকে: http://bit.ly/UW8v0i মিডিয়ার সাথে যুক্ত সকল বন্ধুর প্রতি একটি বিশেষ আবেদন: আমরা লক্ষ করেছি প্রতিবারই স্টিফেন র্যাপ এর মতো মানুষেরা যখন বাংলাদেশে এসে ট্রাইবুনালের সম্বন্ধে কিছু বলে যান, তা বিনা প্রশ্নে বিশাল হেডলাইন করা হয়, যেন সেটাই আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রথম ও শেষ কথা। এই হেডলাইনগুলো বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে মানুষের পারসেপশন তৈরীতে একটা নেতিবাচক ধারণা রাখে। আমরা আরও লক্ষ করেছি, এই মানুষগুলো যখন সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে তাদেরকে কোন কঠিন প্রশ্ন…

ঘুরে দাঁড়াতে কি লাগে? সম্মেলনের তৃতীয় দিন, ১২ জুন ২০১৪। সময় বিকেল ৫টা। ডেলিগেটদের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবার মুহূর্ত। আজকে ছিল শতাধিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের আলোচনায় বসবার দিন। তাই এই মুহূর্তটাকেই যৌথভাবে আইসিএসএফ (International Crimes Strategy Forum) এবং Komola Collective-এর পক্ষ থেকে আমরা নির্ধারণ করেছিলাম প্রতিবাদ সমাবেশের 'জিরো আওয়ার' হিসেবে [. . .]

ঘুরে দাঁড়াতে কি লাগে? সম্মেলনের তৃতীয় দিন, ১২ জুন ২০১৪। সময় বিকেল ৫টা। ডেলিগেটদের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবার মুহূর্ত। আজকে ছিল শতাধিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের আলোচনায় বসবার দিন। তাই এই মুহূর্তটাকেই যৌথভাবে আইসিএসএফ (International Crimes Strategy Forum) এবং Komola Collective-এর পক্ষ থেকে আমরা নির্ধারণ করেছিলাম প্রতিবাদ সমাবেশের 'জিরো আওয়ার' হিসেবে (বিস্তারিত ইভেন্ট: http://bit.ly/1oRjCD3)। যাতে করে ডেলিগেটরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় একাংশের হলেও নজরে আসে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই নাগরিক প্রতিবাদটুকু। কারণ, এরই মধ্যে আমরা জেনে গেছি সম্মেলনের ক্লোজড সেশনগুলোতেও বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হালে এতোটুকু পানি পায়নি গত দুই দিন। প্রচণ্ড ট্রাফিকের সাথে ধস্তাধস্তি করে অক্সফোর্ড থেকে লন্ডন পর্যন্ত ড্রাইভে আজকেও প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে গেল। কাছাকাছি এসে লক্ষ করলাম সম্মেলনের কেন্দ্রস্থল আজকে অনেকটাই যেন আলাদা। গত দু'দিনও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেশ কড়াকড়ি ছিল, কিন্তু আজকের সমাপনী মুহূর্তের নিরাপত্তা বেষ্টনী গত দু'দিনকেও ছাড়িয়ে গেছে। রীতিমতো এয়ারপোর্টের মতো নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুই দফার মেটাল ডিটেক্টর আর বডি সার্চ। ট্রে-র ওপর ব্যাগ মোবাইল ঘড়ি ওয়ালেট রাখো রে, বেল্ট খোলো রে, জুতোর সোল পরীক্ষা করো রে ইত্যাদি ইত্যাদি। চারপাশে দুটি ভিন্ন সংস্থার কঠোর-দর্শন সিকিউরিটির লোকজন, তার উপর যেদিকেই তাকাই দেখি শুধু পুলিশ আর পুলিশ! মন্ত্রী-ডেলিগেটদের ঘরে ফেরার মুহূর্তটাকে নির্বিঘ্ন করার কতোই না আয়োজন! সত্যিই চিন্তায় পড়ার মতো সমস্যা আমাদের সামনে। সমাবেশ করবো কিভাবে তাহলে? কিন্তু এর মধ্যেই দেখি সাহসী মুখে একে একে জড়ো হচ্ছেন সবাই। একদিন আগেই ফোন করেছিল হৈমন্তী। নিজের পরিচয়টুকু দিয়ে জানতে চেয়েছিল কিভাবে যুক্ত হতে পারে? আমি দিনক্ষণ জানিয়েছিলাম। সবার আগে কালো শাড়ি পরে নির্ধারিত সমাবেশস্থলে ও হাজির। ওকে দেশ থেকে এই সমাবেশের কথা জানিয়েছেন মেঘনাদি (মেঘনা গুহঠাকুরতা); আর মেঘনাদিকে জরুরি আবেদন পাঠিয়েছিলেন শিপ্রাদি (শিপ্রা বসু)। উল্লেখ না করলেই নয় -- গত চার দিন ধরে শিপ্রাদির সাথে প্রায় সার্বক্ষণিকভাবেই ফেসবুকে যোগাযোগ হচ্ছিল। পরিচিত সব মানবাধিকার কর্মী আর নারীবাদী সহযোদ্ধাদের কারও সাথে যোগাযোগ করতে বাকি রাখেননি তিনি এই বৈশ্বিক সম্মেলনের হালচাল শুনে। (শিপ্রাদির মতো আরও একজন হাজির না থেকেও হাজির ছিলেন আমাদের সাথে, সেটা না উল্লেখ করলেই নয়। গত কয়েক দিন বেলজিয়াম থেকে জিয়া ভাই সকাল-বিকাল উৎকণ্ঠিতভাবে স্ট্যাটাস রিপোর্ট গ্রহণ করে গেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন।)…

ফারাবী নামধারী অনলাইনের এক ইতর শ্রেণির জঙ্গি সম্প্রতি "রকমারি.কম" নামের একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটের ওপর ফতোয়া জারি করেছে। সেই সাইটের তালিকায় অভিজিৎ রায়, রায়হান আবীরের মতো লেখকদের বই থাকায় সাইটের মালিকদের হুমকিসহ তাঁদের কার্যালয় আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে এই জঙ্গি। [...]

৪৫১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। রে ব্রাডবারি-র এই নামের উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছিলাম — এই তাপমাত্রায় নাকি বই পোড়ে। পৃথিবীতে বই পোড়ানোর মচ্ছব নতুন না। সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু। ব্যাবিলনীয়রা পুড়িয়েছে, এথেনীয়রা পুড়িয়েছে, রোমানরা পুড়িয়েছে। এমনকি গত শতকে নাজি জার্মানিতে রীতিমতো বনফায়ার করে বই পোড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীও পিছিয়ে ছিল না। তাদের বোমারু বিমানগুলো টার্গেট হিসেবে প্রায়ই খুঁজে নিতো জার্মানির লাইব্রেরিগুলোকে। পঞ্চাশের অন্ধকার দশকে ম্যাকার্থিজমের বিশুদ্ধি অভিযানে আমেরিকান মননকে কমিউনিজমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যও বই পোড়ানো হয়েছে। বই পোড়ানো ছাড়াও সেনসরশিপের আরও বহু রকম চেহারা দেখেছি আমরা। সেখানে যোগ হয়েছে আরও নতুন কয়েকটি পন্থা। ফারাবী নামধারী অনলাইনের এক ইতর শ্রেণির জঙ্গি সম্প্রতি 'রকমারি ডট কম' নামের একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটের ওপর ফতোয়া জারি করেছে। সেই সাইটের তালিকায় অভিজিৎ রায়, রায়হান আবীরের মতো লেখকদের বই থাকায় সাইটের মালিকদের হুমকিসহ তাঁদের কার্যালয় আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে এই জঙ্গি। এই লেখকদের অপরাধ — তাঁরা নাস্তিক্যবাদী, তাঁরা বিজ্ঞান এবং প্রান্তিক দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিরিয়াস লেখালিখি করেন। হুমকি দেয়া হয়েছে — অচিরেই এইসব নাস্তিক্যবাদী চিন্তার প্রচার বন্ধ না করা হলে সাইটের সাথে যুক্তদেরও ব্লগার রাজীব হায়দারের মতোই ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। হুমকি শুনে সাইটটির মালিক পক্ষ নতজানু তোষণ নীতির পথ ধরেছেন; তাঁদের পক্ষ থেকে হুমকি প্রদানকারীকে একরকম ক্ষমাপ্রার্থনা করেই আশ্বাস দেয়া হয়েছে — এমনটি আর কখনো হবে না। এ নিয়ে গত কয়েক ঘণ্টা ধরেই অনলাইনের ফোরামগুলো উত্তপ্ত। আহত প্রগতিশীলরা কেউ কেউ সাইটটির মালিক পক্ষের কাপুরুষতার সমালোচনা করছেন, কেউ হুমকি দিচ্ছেন সাইটটিতে নিজের একাউন্ট বাতিল করবার, কেউ সাইটটি বর্জনের ডাক দিচ্ছেন, চরম উদাস এবং রণদীপম বসুর মতো কেউ কেউ আবার প্রতিবাদ হিসেবে নিজেদের বইও সে সাইটের তালিকা থেকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। 'রকমারি ডট কম' দেখা হল। প্রবল ক্ষমতাধর রথী-মহারথীদেরও একসময় দেখা হয়ে গেছে। কখনো জঙ্গি অপশক্তি কখনো সরকারের সাথে 'মত প্রকাশ' ইস্যুতে আপোস করতে কেউ তাঁরা কারো চেয়ে কম ছিলেন না। জলপাই শাসনামলে সুশীল চিন্তার কাণ্ডারী মহান ডেইলি স্টার পত্রিকা তার নির্যাতিত সাংবাদিক তাসনীম খলিলের পাশে দ্বিধাহীনভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে আমার মনে হয়েছে। বরং পত্রিকাটিকে দেখেছি উল্টো একের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.