পত্রিকায় দেখলাম আজ স্টিফেন র্যাপ (Stephen J Rapp) ঢাকা আসছেন আবার। বাংলাদেশে পঞ্চম বারের মতো এই সফর তার। আরও একবার অবশ্য তিনি না এসে তার সহকারীকে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায়। সেই বার পাঠাবার সময় ট্রাইবুনাল এবং সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছিলেন – ‘তার এই সহকারীকেও যেন তার মতো করেই সম্মান এবং একসেস দেয়া হয়’। স্টিফেনের পরিচয় হল, তিনি বারাক ওবামা নিযুক্ত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত। বরাবরকার মতো এবারও ঢাকা আসছেন তিনি আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল মানসম্মত কি না তার “মূল্যায়ন” করতে! না, তার কোন সফরই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সফর ছিল না। বরং, তিনি আসামী পক্ষ আয়োজিত সমস্ত হাই-প্রোফাইল লবিইং মিটিং-সেমিনারগুলোরই নিয়মিত আলোচক এবং অতিথি! বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশেষ দূতের আগ্রহের কোন সীমা পরিসীমা নেই। গাজাসহ পৃথিবীর বহু স্থানে ঠিক এই মুহুর্তেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকার্যও পরিচালিত হচ্ছে বহু দেশে। কিন্তু আর কোন দেশের বা ট্রাইবুনালের ব্যাপারে এই রাষ্ট্রদূতের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।
সুপারিশের ঢংয়ে স্টিফেন আমাদের ট্রাইবুনাল এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। তার কথাগুলো আবার জাঁদরেল কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বেদবাক্য ধরে নিয়ে প্রচারও করেছে। International Crimes Strategy Forum (আইসিএসএফ) মনে করে না তার কথাগুলো সঠিক। বিভিন্ন সময় আইসিএসএফ তার এইসব “বেদবাক্য” সমুহের প্রতিবাদ করেছে, বিশদ অবস্থানপত্রও প্রকাশ করে তা পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সে সমস্ত ফোরামে। এর কিছু সুফলও হয়তো পাওয়া গেছে, কারণ, অতীতের সমালোচনার অনেকগুলো পয়েন্টই পূনরাবৃত্তি করা বাদ দিয়েছেন স্টিফেন সাহেব নিজেই।
নিচের এই লিন্কে স্টিফেন র্যাপ এর মন্তব্যের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে আইসিএসএফ এর অবস্থানপত্রে:
http://bit.ly/1pT79vZ
সংযুক্তিসহ আইসিএসএফ এর পুরো অবস্থানপত্রটির পিডিএফ ডাউনলোড করা যাবে এই লিন্ক থেকে:
http://bit.ly/UW8v0i
মিডিয়ার সাথে যুক্ত সকল বন্ধুর প্রতি একটি বিশেষ আবেদন:
আমরা লক্ষ করেছি প্রতিবারই স্টিফেন র্যাপ এর মতো মানুষেরা যখন বাংলাদেশে এসে ট্রাইবুনালের সম্বন্ধে কিছু বলে যান, তা বিনা প্রশ্নে বিশাল হেডলাইন করা হয়, যেন সেটাই আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রথম ও শেষ কথা। এই হেডলাইনগুলো বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে মানুষের পারসেপশন তৈরীতে একটা নেতিবাচক ধারণা রাখে। আমরা আরও লক্ষ করেছি, এই মানুষগুলো যখন সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে তাদেরকে কোন কঠিন প্রশ্ন করা হয় না বা চ্যালেঞ্জ করা হয় না ধারণাগত বা তথ্যগত বিষয়গুলো নিয়ে। পরে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতেও এই বিদেশীদের এক তরফা ফতোয়াগুলোই প্রতিফলিত হয় ও প্রাধান্য পায়। মিডিয়া নিশ্চয়ই তার নিরপেক্ষতা আর অবজেকটিভিটি বজায় রাখবে। কিন্তু কেউ এসে অন্যায্য কথা বলে যাবে আর আমাদের মিডিয়া সেটা বশংবদভাবে টুকে নিয়ে আসবে আর এক তরফা প্রতিবেদন ছাপাবে সেটাও কাম্য না। তাই মিডিয়ার সাথে যুক্ত আমাদের সকল বন্ধুর প্রতি একান্ত আবেদন থাকবে – প্লিজ এই মহারথীদের সংবাদ সম্মেলনগুলোতে একটু প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন (উপরে দেয়া আইসিএসএফ এর অবস্থানপত্রের এই লিন্কে স্টিফেনের গতানুগতিক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দেয়া আছে যা কাজে লাগবে বলে আমরা বিশ্বাস করি)। আর প্রতিবেদন লিখবার সময় প্লিজ স্টিফেনদের এই কথাগুলোর বিপরীতে দেশের প্রগতিশীল মানুষদের কয়েকজনের (দেশে তেমন বহু মানুষ আছেন) অন্তত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া/মন্তব্য নেয়ার কথাটা বিবেচনায় রাখবেন, যাতে করে ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে অন্যায্য সমালোচনাগুলোর একটিও এতো সহজে ছাড় না পায়।
ট্রাইবুনালের এই বিচার প্রক্রিয়ার পাশে আমরাই যদি প্রত্যয় নিয়ে না দাঁড়াই, আমরা দেশের মানুষরাই যদি এর অন্যায্য সমালোচনাগুলোকে চ্যালেঞ্জ না করি, তাহলে কে সেটা করবে বলতে পারেন?
রায়হান রশিদ
জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
S.H.Nazmus Sakib - ৫ আগস্ট ২০১৪ (৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
বাংলাদেশ হল মেরুদণ্ডহীনদের দেশ।তাই এই রেপ বারবার এদেশের আভন্তরিন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার সাহস পায়,যা পায়না অন্য কােন দেশে।হীনমন্য সরকার বারবার কেন এই লোকটাকে ভিসা দিয়ে এদেশের আভনতরীণ ব্যাপারে হসতক্ষেপের সুযােগ দিচেছ?
রায়হান রশিদ - ৭ আগস্ট ২০১৪ (৭:৩৭ অপরাহ্ণ)
দু’একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদ দিলে, আমাদের সরকারগুলো এই আমেরিকা-তোষণ চক্রের বাইরে আর যেতে পারলো না। র্যাপ সাহেবের এজেন্ডা শুরু থেকেই স্পষ্ট। তিনি চান না জামায়াতের বিচার হোক, বা দলটি কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। সেটা উনার এবারকার সফরে আরও স্পষ্ট হয়েছে। পত্রিকাগুলো তার শুরুর দিককার কিছু পিঠ চাপড়ানো কথা বার্তা শুনে একটু বেশীই আপ্লুত হয়ে পড়েছিল। আশা করি তাদেরও ভুল ভেঙ্গেছে শেষ পর্যন্ত!