গতকাল ছিল ৪ নভেম্বর। আমাদের সংবিধান দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও এলো, প্রায় নিরবেই চলেও গেল দিনটি। ব্যাপকভাবে বিস্মৃত, রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত এই একটি দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছিল। এর পর দিনটির কথা আমরা প্রায় সবাই একরকম ভুলেই গিয়েছি, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনটিকে উদযাপনের কথা আমাদের কারোই মনে থাকে না!
স্বাধীনতা সংগ্রাম, এতো আত্মত্যাগ, এতো রক্তপাত – সে তো ‘সংবিধান’ নামের এই দলিলটি হাতে পাওয়ার জন্যই। যে দলিলটির মাধ্যমে স্বাধীন জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজস্ব সীমানায় নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। আমাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার (right to self-determination) এর মূর্ত প্রতিফলন এই দলিল।
এই দিনটির তাৎপর্য্য অন্য যে কোনো দিন উদযাপনের চেয়ে কোনো অংশে কম না। বরং আমার বিবেচনায় এই দিনটির তাৎপর্য্য আমাদের অন্য আর সব রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত দিনের চেয়ে হয়তো বেশীই। কারণ, এই দিনটির সঠিক উদযাপন – প্রতি বছর আমাদের মনে করিয়ে দিতে পারে এই সংবিধানের শরীরে ধারণ করা সবচেয়ে জরুরী কথাগুলো। যেখানে আরও অনেক বিষয়ের পাশাপাশি বলা রয়েছে:
– স্বাধীনতার সংগ্রাম, আর তা অর্জনের পথে আমাদের জনগণের ঐতিহাসিক ত্যাগ স্বীকারের কথা।
– এই ভূখন্ডের মানুষদের মৌলিক অধিকারগুলোর কথা।
– আমাদের রাষ্ট্রটি কি কি মৌল নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে বা হওয়া উচিত, সেই স্বপ্ন আর উপলদ্ধিগুলোর কথা।
– যারা এই দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতায় থেকে শাসন করবেন, তাদের দায়বদ্ধতা আর জবাবদিহিতার কথা।
– সারা বিশ্বের দরবারে আমরা কি কি নীতির ভিত্তিতে নিজেদের তুলে ধরবো সেকথা।
– আমাদের অতীত, ঐতিহ্যের প্রতি এই রাষ্ট্রের এবং সম্মিলিতভাবে আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে সেকথা।
সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল – এই সংবিধান হল সেই দলিল যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা। যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে – এই সংবিধান হল ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ [অনুচ্ছেদ ৭(২)]। বলা আছে – ‘এই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’। বলা আছে – শুধু এই জনগণের হয়েই এই সংবিধানের সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রয়োগ কার্যকর হবে [অনুচ্ছেদ ৭(১)]।
এই কথাগুলোই আমরা ভুলে যাই, বা ভুলে যেতে বসেছি। আর আমাদের এই ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেয় যারা নেবার।
এজন্যই সর্বস্তরে দিনটির উদযাপন জরুরী। রাষ্ট্র বা ক্ষমতাসীনরা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনটি উদযাপন নাও করে, আমাদের অন্তত করা উচিত। কারণ এই দিনটি আমাদেরই দিন। আমরা মানে জনগণ।
(ফেসবুক স্ট্যাটাস লিন্ক)
*সহ-ব্লগার মাসুদ করিম দিনটির কথা মনে করিয়ে দিলেন টুইটারে। অশেষ কৃতজ্ঞতা সে জন্য।

রায়হান রশিদ
জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।
হাবিবুর রহমানের ‘বাংলাদেশের তারিখ’ খুলে দেখি ওই একই দিন এটাও ঘোষণা করা হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে সংবিধান চালু হবে এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা হল ৭ মার্চ ১৯৭৩এ বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাও এদিন দেয়া হয়। গণপ্রজাতন্ত্রের জন্য এমন তাৎপর্যের দিন আমরা ভুলে বসে আছি। আরো একটি অসাধারণ তথ্য পেলাম ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭২এ বঙ্গভবনে সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পুনরায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল।
বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত বাংলাদেশ সংবিধান প্রথম সম্মাননা স্মারক ২০১৫ প্রাপ্তি উপলক্ষে গত ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২২/ ১৮ নভেম্বর ২০১৫ বুধবার ‘আমাদের সংবিধান, স্বাধীনতার লক্ষ্য এবং চার দশকের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক স্বাগত ভাষণ দেন কামাল হোসেন (ডক্টর, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, প্রাক্তন আইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ সংবিধান (১৯৭২) রচনা ও প্রণয়ন কমিটির সভাপতি)। এ বক্তব্যে (বক্তব্যটি বুকলেট আকারে বাঙলার পাঠশালা থেকে প্রকাশিত হয়েছে) কামাল হোসেন বলেছেন : কিন্তু বিচ্যুতির ফলে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সৌভাগ্যবান যে জনগণের লাগাতার প্রচেষ্টা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংকট নিরসনে সমর্থ হয়েছি। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের ঐকমত্যকে কার্যকর করা হয়। সেটা কিভাবে কার্যকর করা হয়েছে, তা… বাকিটুকু পড়ুন »
জাতীয় জীবনে ৪ নভেম্বর আমরা, বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্রীয় বা জাতীয়ভাবে কতোগুলো দিবস পালন করি। এর মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ শে মার্চ জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস, ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস, ১৫ই অগাস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস অন্যতম। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয় হয়েছে ৭ই মার্চ-কে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে পালন করার। এছাড়াও জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘোষিত বিভিন্ন দিবসসহ জাতীয়ভাবে নারী দিবস, যুব দিবস, সমবায় দিবস সহ বিভিন্ন দিবস পালন করা হয়। আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ৪ নভেম্বর কেটে যায় নিরবে-কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া। ৪ নভেম্বর… বাকিটুকু পড়ুন »
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ: প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ অ্যাক্টিভিস্টদের মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশনে সংসদে শোনানো জাতির পিতার ভাষণ থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন দুইজন অ্যাক্টিভিস্ট। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ প্রসঙ্গে কিছু অংশ বাদ দিয়ে সংসদে শোনানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। সংসদে প্রচার করা ভাষণে বঙ্গবন্ধুর মূল বক্তৃতার কিছু অংশ যে বাদ পড়েছে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও তা স্বীকার করেছেন। তবে তার ভাষ্য, সংসদ ওই ভাষণ সম্পাদনা করেনি, বেতার থেকে পাওয়া ভাষণটি হুবহু প্রচার করা হয়েছে। অন্যদিকে বেতার বলছে, আর্কাইভে যেভাবে আছে, সেই ভাষণটিই সংসদকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন করে কিছু করা হয়নি। তাহলে জাতির… বাকিটুকু পড়ুন »