[ব্লগ নিয়ে কোন একটা উন্নত নাসিকার মঞ্চ থেকে শিরোনামের তীরটা নিক্ষিপ্ত হতে দেখেই এই আপাতঃ জ্ঞানী লেখাটির সূত্রপাত।] লেখক দুই ধরনের। একদল লেখেন নিজের জন্য। আরেকদল লেখেন পাঠকের জন্য। আরো শুদ্ধ করে বলতে গেলে, যখন নিজের জন্য লেখেন তখন লেখকের উন্মেষকাল। এই সময়ের লেখাগুলি একজন লেখকের শ্রেষ্ঠ লেখা। এই সময়ে লেখকের ভেতর পাঠকের চিন্তা থাকে না, বাজারের চাহিদা থাকে না, কাটতির টেনশান থাকে না, প্রকাশকের চাপ থাকে না। লেখালেখি থাকে উন্মুক্ত। ভেতর থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাস কিংবা উচ্ছ্বাসগুলোকে শব্দের গাঁথুনিতে প্রকাশ করার চমৎকার একটা প্রয়াস থাকে এই সময়টাতে। যখন অন্যের জন্য, বাজারের জন্য, পাঠকের জন্য, পত্রিকার জন্য লেখেন, তখন লেখকের পরিণতকাল হলেও তাঁর আদি আন্তরিকতা আর বোধের প্রকাশ প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে। তাই যে কোন লেখকের পরিণত বয়সের লেখার চেয়ে কাঁচা বয়সের লেখার মধ্যে রসের যোগান বেশী। কাঁচা হাতের লেখাও পাঠসুন্দর থাকে। হুমায়ুন আহমেদের 'নন্দিত নরকে' কিংবা 'শঙ্খনীল কারাগার' একটা উদাহরণ হতে পারে। আজকাল অনেকেই লেখে। প্রযুক্তির সুলভতার কারণে লেখালেখির পরিমাণ অনেক বেশী যার মধ্যে ব্লগ অন্যতম একটি মাধ্যম। ব্লগ লেখে কারা? বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে ব্লগ জিনিসটাই অপরিচিত। কেবল ইন্টারনেট ও পত্রিকার সাথে যুক্ত মানুষেরর একাংশই ব্লগ সম্পর্কে জ্ঞাত। যাদের প্রায় সবাই অতি তরুণ। গত দুবছরে অন্ততঃ ২০টা নতুন কমিউনিটি ব্লগ এসেছে। মতাদর্শের ভিত্তিতে ব্লগগুলি একেকটা পাড়ায় বিভক্ত। আবার প্রত্যেক ব্লগেরই কিছু না কিছু আবাসিক লেখক থাকেন যাঁরা ওই ব্লগেই লেখেন। এটা একটা নেশাও বটে। লেখালেখি ছাড়াও আড্ডা দেবার জনপ্রিয় একটা আয়না একেকটি ব্লগ কমিউনিটি। বাংলা ব্লগের বয়স তিন বছরের সামান্য উপরে। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের কাছে ব্লগ এখনো তেমন গুরত্ব না পেলেও এই ব্লগ থেকেই এমন কিছু লেখক উঠে এসেছেন যাঁদের রচনাশৈলী রীতিমত ঈর্ষণীয়। নাম বলে বিব্রত করবো না, কিন্তু কয়েকটা প্রধান ব্লগ মিলে অন্ততঃ বিশজন ব্লগারের লেখার মানকে আমি জীবিত যে কোন প্রতিষ্ঠিত লেখকের সাথে তুল্য বলে মনে করি। কিন্তু বয়সে তরুণ বলেই এখনো তাঁদের কাজের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। তাঁদের অনেকের কোন বইই বের হয়নি। তাঁদের প্রত্যেকের লেখার তাড়না স্বতঃপ্রণোদিত। এই তারুণ্যটাই তাঁদের মূল শক্তি। তাঁদের হাতে আলোর মশাল তুলে দিয়েছে বলে কমিউনিটি ব্লগগুলোর কাছে জাতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।…
লেখক দুই ধরনের। একদল লেখেন নিজের জন্য। আরেকদল লেখেন পাঠকের জন্য। [..]