এ বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকায় লক্ষাধিক সফেদ পাঞ্জাবিওয়ালার যে-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, তা কবি শামসুর রাহমানের ‘সফেদ পাঞ্জাবী’ কবিতার মূল সুরকে ছিন্নভিন্ন করে এবং ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করে যেন একটি সফেদ সন্ত্রাসের রুপ পরিগ্রহ করেছিল। সমস্ত বাংলাদেশ শুধু তাকিয়ে দেখলো আর ভাবলো, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? [...]

কবি শামসুর রাহমানের একটি বিখ্যাত কবিতা আছে, নাম ‘সফেদ পাঞ্জাবী’। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর উপর লেখা কবিতাটি। কবিতাটিতে শামসুর রাহমান অবিসংবাদিত এই জননেতার মনুমেন্টাল চরিত্রটি তুলে ধরেছেন। উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে একজন অসাম্প্রদায়িক মাওলানার মানবপ্রেমের গাথা কবি এখানে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। বাম চেতনার প্রতিভূ এই কমিউনিস্ট মাওলানা সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং এই আদর্শে লক্ষ কোটি বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তবে এ বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকায় লক্ষাধিক সফেদ পাঞ্জাবিওয়ালার যে-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, তা কবি শামসুর রাহমানের ‘সফেদ পাঞ্জাবী’ কবিতার মূল সুরকে ছিন্নভিন্ন করে এবং ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করে যেন একটি সফেদ সন্ত্রাসের রুপ পরিগ্রহ করেছিল। সমস্ত বাংলাদেশ শুধু তাকিয়ে দেখলো আর ভাবলো, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো আমাদের চেনাজানা ভূবনের বাইরে থেকে পঙ্গপালের মতো একদল লোক আমাদেরকে তাদের রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে আবার তাদের ডেরায় ফিরে গেল। হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠন ছিল আয়োজক এই সফেদ সন্ত্রাসের। তারা ‘ইসলাম গেল’ ধুয়া তুলে মুক্তচিন্তার আদর্শে বিশ্বাসী ব্লগারদের ফাঁসি চাইলো, নারীদের অবরোধবাসিনী করা সহ নানা অবমাননাকর বক্তব্য দিলো এবং সেই সাথে একজন নারী সাংবাদিককে বেধড়ক পেটালো। নারীর বিরুদ্ধে তারা কত কী যে করতে পারে তার একটা নমুনা প্রদর্শন করে গেলো। আর সবশেষে জাতিকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করে গেলো — যা এই বাংলাদেশকে মধ্যযুগীয় তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর ঘৃণিত বাসনার প্রতিফলন। এই ১৩ দফা দাবির মধ্য দিয়ে নারীদের অপমান করা হয়েছে, মুক্তচিন্তাকারী মানুষদের অপমান করা হয়েছে, শিল্পীদের অপমান করা হয়েছে, অন্যধর্মের সংস্কৃতিকে অপমান করা হয়েছে এবং সর্বো্পরি প্রকৃ্ত ইসলামের চেতনাকেও ধুলায় লুণ্ঠিত করা করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের এই মধ্যযুগীয় চিন্তাচেতনা বাস্তবায়নের নীল নকশার খসড়া। আমার জানামতে অনেক বিবেকবান মানুষই তাদের আস্ফালন আর টিভির পর্দায় দেখতে চায়নি, ঘৃণাভরে টিভির সুইচ অফ করে দিয়েছে। বিশেষ করে নারী সমাজ ফুঁসে উঠেছে তাদের এই সফেদ সন্ত্রাসে। তবে আশার কথা এই হুঙ্কারে কেউ গুটিয়ে যায়নি। বরং তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যেদিন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে হেফাজতের সন্ত্রাসীরা আক্রমণের পায়তারা করছিলো সেদিন আমি দেখেছি মধ্যবয়সী নারীদেরকেও লাঠি হাতে তুলে নিতে। নারীরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে…

প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের উত্থান এ দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিভিত্তিক অপতৎপরতা তারই একটি প্রতিক্রিয়া -- আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গণতন্ত্রবিরোধী সামন্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবশেষের শেষ মরণকামড়। [...]

প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের উত্থান এ দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিভিত্তিক অপতৎপরতা তারই একটি প্রতিক্রিয়া -- আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গণতন্ত্রবিরোধী সামন্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবশেষের শেষ মরণকামড়। শাহবাগে তরুণরা সমবেত হয়েছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের দাবিতে সংযুক্ত হয়েছে, ব্লগারদের মুক্তির ও বাকস্বাধীনতার দাবি। এক কথায়, তরুণদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে এমন-এমন দাবি যার বাস্তবায়ন আসলে বুর্জোয়া-গণতন্ত্রীদেরই করতে হয় এবং যার বাস্তবায়ন না ঘটলে সামন্ত সংস্কৃতি ও স্বৈরতান্ত্রিকতার অবশেষ রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতিকে বার বার আক্রান্ত করে থাকে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি (কেন পারেনি, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ)। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি, গণতান্ত্রিক শাসন বার বার ব্যাহত হয়েছে, নারীমুক্তি ঘটেনি, ব্যক্তি তার বাকস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়নি। অনিবার্য কারণেই তরুণরা পূরণ করতে চায় অসম্পন্ন বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাসমূহ। তরুণদের এ আন্দোলনকে কি সরকার কি বিরোধী দল কেউই স্বাভাবিকভাবে নেয়নি, নেয়ার প্রশ্নই আসে না। কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল উভয়েই বিশেষ করে এই পরিস্থিতিকে নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং তাদের ওই প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতাকে। হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের কাছেই কাম্য হয়ে উঠেছিল, কেননা চিহ্নিত রাজনৈতিক অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে তাদের কারো পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না খেলা এগিয়ে নেয়া। তাদের দরকার হয়ে পড়েছিল অরাজনৈতিক নতুন এক মৌলবাদী শক্তি, যাদের অরাজনৈতিকতা সাময়িকভাবে হলেও একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করবে এবং বিভ্রান্তির ঘুর্ণাবর্তে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতাকে হত্যা করা যাবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেও মন্থর এবং চাই কি ছকবন্দিও করে ফেলা যাবে। এই খেলায় বিএনপির পুরোধা খালেদা জিয়া ও তার অনুসারীরা তরুণদের গায়ে সেঁটে দিয়েছেন ‘নাস্তিকতা’র ছাপ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চাইছেন কিংবা যারা চাইছেন না তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী যেমন আছেন, তেমনি এমন অনেকেও আছেন যারা ধর্ম ছাড়াই সামাজিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। মূল প্রশ্নটি এখানে নাস্তিক-আস্তিকের নয়, মূল প্রশ্ন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ও সুবিচার পাওয়ার। কিন্তু খালেদা জিয়া বিষয়টি আস্তিক-নাস্তিকের ইস্যুতে পরিণত করে আন্দোলনকারীদের সামাজিকভাবেই…

ধর্মদ্রোহিতার অজুহাতে আটক চারজন ব্লগারের মুক্তির দাবীতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ: বাড়ছে। হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান্য মৌলবাদী দলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে এবং এর পরদিন আসিফ মহিউদ্দীনকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে মতপ্রকাশের উপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী বিভিন্ন সংগঠন। [...]

ধর্মদ্রোহিতার অজুহাতে আটক চারজন ব্লগারের মুক্তির দাবীতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ: বাড়ছে। হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান্য মৌলবাদী দলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে এবং এর পরদিন আসিফ মহিউদ্দীনকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে মতপ্রকাশের উপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী বিভিন্ন সংগঠন। ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এণ্ড এথিকাল ইউনিয়ন’ (IHEU) আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তচিন্তক এবং মানবতাবাদীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি যুক্তিবাদী, সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক, মানবতাবাদী এবং মুক্তমনাদের জন্য একধরণের ‘আম্ব্রেলা অর্গানাইজেশন’ হিসেবে কাজ করে । সারা পৃথিবী জুড়ে ধর্মের প্রভাবমুক্ত শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত আই.এইচ.ই.ইউ পর পর দুটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। এপ্রিলের চার তারিখে দেওয়া প্রথম বিবরণে তারা খুব কঠোরভাবে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছে। দীর্ঘ বিবৃতিতে তারা সুস্পষ্টভাবে বলেছে বর্তমান সরকার ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে মৌলবাদীদের পাতা ফাঁদে হাঁটছে। মৌলবাদীদের বানানো ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা সরকারীভাবে গ্রহণ এবং পত্রিকায় প্রকাশেরও সমালোচনা করেছে তারা। আই.এইচ.ই.ইউর প্রেসিডেন্ট তার বার্তায় উল্লেখ করেছেন, এই নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে সরকারী ধরপাকড় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আই.এইচ.ই.ইউ দ্বিতীয় আরেকটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে এপ্রিল মাসের নয় তারিখে। ‘Call to action: Defend the bloggers of Bangladesh’ শিরোনামের এ বিবৃতিতে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তকদের উপর আগ্রাসনের প্রতিরোধ করার আহবান জানিয়েছে সংগঠনের সদস্যদের। নির্দেশ দিয়েছে প্রতিবাদ করার, সেটা র‍্যালি করে হতে পারে, অন লাইন ক্যাম্পেইন করে হতে পারে, কিংবা হতে পারে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে। তারা কর্মসূচী শুরু করেছে ইতোমধ্যেই। ‘এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (AAI) মুক্তচিন্তকদের আরেকটি খুব বড় সংগঠন। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি আটককৃত ব্লগারদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে। এথিস্ট অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট কার্লোস ডিয়াজ স্বাক্ষরিত বক্তব্যে তারা ব্লগারদের মুক্তির ব্যাপারে যে কোন সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নিজেরা উদ্যোগী হয়ে আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছে। সে পত্রে তারা বলেছে: প্রিয় অ্যাম্বাসেডর কাদের, আমি এ চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ এবং আসিফ মহিউদ্দীন নামের চারজন ব্লগারকে গ্রেফতারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিগত ফেব্রুয়ারি…

যারা মাদ্রাসায় যায়, তারা কি খায়, কি পরে, কি শেখে, তারা বড়হুজুরের হাতে ধর্ষিত হয় কি না, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, তাদের শিক্ষাশেষে গন্তব্য কি এই নিয়ে কেন আমরা ভাবিনি? কেন সরকার ভাবেনাই? মহল্লার একেকটা বাড়ি থেকে একেকদিন খাওয়া পাঠানো হবে, এইরকম হিসাব করে আমরা একটা বিশাল হুজুরশ্রেণী তৈরি করেছি, এই পরান্নপুষ্ট-অশিক্ষিত-পরনির্ভরশীল জাতটা তৈরির আগে আমরা কেউ কেন ভেবে দেখলাম না? [...]

এই লেখার শুরুতেই জানিয়ে দিই, যীশুর এক গালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেয়ার বিধান মানবার মন নিয়ে এটি লেখা নয়। যে আপনাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতে মারতে আসে, তাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতেই প্রতিহত করতে হয়, সেটা জেনেই এটা লেখা। যদি আপনি জানেন আপনাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা দিয়ে প্রতিহত করা হবে, তাহলে আপনার লাঠি/সড়কি/রাম-দা ধরবার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে, অথবা আগেই ভেবে রাখতে হবে, লাঠি/সড়কি/রাম-দা দ্বারা আক্রান্ত হলে আপনার কাছে তার প্রতিবিধান কি। এইসব আগেই স্বীকার করে নিয়ে আমি কেবল এইটুকু নিয়ে আজকে লিখতে বসেছি, যে, প্রতিবিধান আপনি ভেবে রাখবেন বটে, সেইসাথে আপনাকে এও ভাবতে হবে আপনাকে এই লোকগুলি লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতে মারতে আসছে কেন? এই অসম্ভব ঘৃণার উৎস কি। এর চর্চ্চা কোথায় এবং কতদিনের? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে কোনো সভ্য দেশে দ্বিমত থাকার কথা নয়, উচিতও নয়। কিন্তু যে মানুষগুলি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেখেনাই, যারা এখনও ভাতকে ভাত আর মা’কে মা ডাকে, বাসায় গিয়ে বাংলাদেশের কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমায়, সে কেন জামাত-শিবির করে, কেন সে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিপক্ষে এমন নাছোড়? কেন সে অন্য আর সকল মানুষকে কাফের এবং দিকভ্রান্ত ভাবতে শিখেছে? নারীকে এমন বৈরী চোখে দেখা তাকে কে শিখিয়েছে? মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষাখাতের বিপুল অর্থ ব্যয় হয় বলে আমি জানি। আন্তনগর মহাসড়কগুলিতে কয়েক হাত পর পর আপনি আজকে মাদ্রাসা খুঁজে পাবেন।এই শিক্ষাব্যবস্থায় দেশ-জাতি-জাতীয়তাবাদ-জাতীয় সংগীত ইত্যাদি সমন্বিত আছে কি না এটা না দেখে কেন এই শিক্ষাব্যবস্থাকে নিজের ইচ্ছামতন চলতে দেয়া হয়েছে? যারা মাদ্রাসায় যায়, তারা কি খায়, কি পরে, কি শেখে, তারা বড়হুজুরের হাতে ধর্ষিত হয় কি না, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, তাদের শিক্ষাশেষে গন্তব্য কি এই নিয়ে কেন আমরা ভাবিনি? কেন সরকার ভাবেনাই? মহল্লার একেকটা বাড়ি থেকে একেকদিন খাওয়া পাঠানো হবে, এইরকম হিসাব করে আমরা একটা বিশাল হুজুরশ্রেণী তৈরি করেছি, এই পরান্নপুষ্ট-অশিক্ষিত-পরনির্ভরশীল জাতটা তৈরির আগে আমরা কেউ কেন ভেবে দেখলাম না? যে নিজের ভাষাতেই একটা ‘আউট-বুক’ পড়ে দেখেনাই, জ্ঞানলাভ করতে সুদূর চীনদেশ যাওয়া দূরে থাক, তালাবের ঐ পাড়ের মক্তব অব্দি যে কেবল যেয়ে দেখেছে, তার কাছে আমরা কেন ধর্মশিক্ষার জন্যে-বালামুসিবত কাটানোর জন্যে-দুঃস্বপ্নের অর্থ জানবার জন্যে যাই? আমরা স্কুল-কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সময়, হরলাল রায়ের রচনাবলী পড়বার সময়, টেস্টপেপার সলভ করার…

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে আইসিএসএফ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, কিছু মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সাধনের উদ্দেশ্যে, এবং সামাজিক সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সোচ্চার ও তৎপর। ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামের আড়ালে জামায়াত ইসলামী সহ এই দুষ্টচক্র সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মহান স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও নারী জাগরণের উন্মেষ রোধে কাজ করে যাচ্ছে। [...]

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে আইসিএসএফ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, কিছু মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সাধনের উদ্দেশ্যে, এবং সামাজিক সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সোচ্চার ও তৎপর। ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামের আড়ালে জামায়াত ইসলামী সহ এই দুষ্টচক্র সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মহান স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও নারী জাগরণের উন্মেষ রোধে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আরো লক্ষ করছি যে, সরকার এসব ধর্মীয় চরমপন্থী গোষ্ঠীকে সঠিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমরা হেজাফতে ইসলাম সহ এই জাতীয় দলগুলোর তথাকথিত লংমার্চ এবং হরতাল কর্মসূচির নামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিথযশা নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও শাহবাগ গণজাগরণমঞ্চে অবস্থানরত তরুণদের উপর সুপরিকল্পিত হামলা ও আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটি মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নগ্ন আক্রমণ। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকালীন সময়ে যখন আপামর জনসাধারণ ১৯৭১-এ সংঘটিত যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধ, সেই সময়ে একটি চিহ্নিত মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে এ-ধরনের হিংসাত্মক আক্রমণ আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত করবে। আমরা জানি, এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে জনাব শাহরিয়ার কবির এবং অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মতো ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা অনন্যসাধারণ। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশরত অবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের উপর এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশের উপর হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের আক্রমণ প্রমাণ করে যে উগ্র মৌলবাদী শক্তির কাছ থেকে আমরা কেউই নিরাপদ নই। এই আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উপর বলেই আইসিএসএফ মনে করে। দ্বিতীয়ত, পেশাগত দায়িত্বে নিয়োজিত নারী সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ আমাদের উদার, প্রগতিশীল, এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে এ-ধরনের মধ্যযুগীয় নৃশংসতা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। সাহসী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন সহ সকল সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা বাংলাদেশে মুক্তভাবে তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, আইসিএসএফ এই প্রত্যাশা করে। এই ঘৃণ্য আক্রমণ চলতে দেওয়া নারীমুক্তি ও একটি সুষম সমাজের বিকাশে অন্তরায়। বাংলাদেশের নারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্র এ-দেশকে একটি পশ্চাৎমুখী সমাজব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করব আগামী দিনগুলিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুরুষ ও নারীর সমঅধিকারের ভিত্তিতে একটি সুষম সমাজের বিনির্মাণে বাধা প্রদানকারী কুচক্রীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে। সেইসঙ্গে আমরা ঘটনার সময়ে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.