ধর্মদ্রোহিতার অজুহাতে আটক চারজন ব্লগারের মুক্তির দাবীতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ: বাড়ছে। হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান্য মৌলবাদী দলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে এবং এর পরদিন আসিফ মহিউদ্দীনকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে মতপ্রকাশের উপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী বিভিন্ন সংগঠন।
‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এণ্ড এথিকাল ইউনিয়ন’ (IHEU) আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তচিন্তক এবং মানবতাবাদীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি যুক্তিবাদী, সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক, মানবতাবাদী এবং মুক্তমনাদের জন্য একধরণের ‘আম্ব্রেলা অর্গানাইজেশন’ হিসেবে কাজ করে । সারা পৃথিবী জুড়ে ধর্মের প্রভাবমুক্ত শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত আই.এইচ.ই.ইউ পর পর দুটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। এপ্রিলের চার তারিখে দেওয়া প্রথম বিবরণে তারা খুব কঠোরভাবে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছে। দীর্ঘ বিবৃতিতে তারা সুস্পষ্টভাবে বলেছে বর্তমান সরকার ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে মৌলবাদীদের পাতা ফাঁদে হাঁটছে। মৌলবাদীদের বানানো ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা সরকারীভাবে গ্রহণ এবং পত্রিকায় প্রকাশেরও সমালোচনা করেছে তারা। আই.এইচ.ই.ইউর প্রেসিডেন্ট তার বার্তায় উল্লেখ করেছেন, এই নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে সরকারী ধরপাকড় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আই.এইচ.ই.ইউ দ্বিতীয় আরেকটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে এপ্রিল মাসের নয় তারিখে। ‘Call to action: Defend the bloggers of Bangladesh’ শিরোনামের এ বিবৃতিতে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তকদের উপর আগ্রাসনের প্রতিরোধ করার আহবান জানিয়েছে সংগঠনের সদস্যদের। নির্দেশ দিয়েছে প্রতিবাদ করার, সেটা র্যালি করে হতে পারে, অন লাইন ক্যাম্পেইন করে হতে পারে, কিংবা হতে পারে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে। তারা কর্মসূচী শুরু করেছে ইতোমধ্যেই।
‘এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (AAI) মুক্তচিন্তকদের আরেকটি খুব বড় সংগঠন। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি আটককৃত ব্লগারদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে। এথিস্ট অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট কার্লোস ডিয়াজ স্বাক্ষরিত বক্তব্যে তারা ব্লগারদের মুক্তির ব্যাপারে যে কোন সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নিজেরা উদ্যোগী হয়ে আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছে। সে পত্রে তারা বলেছে:
প্রিয় অ্যাম্বাসেডর কাদের,
আমি এ চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ এবং আসিফ মহিউদ্দীন নামের চারজন ব্লগারকে গ্রেফতারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিগত
ফেব্রুয়ারি মাসে আহমেদ রাজীব হায়দার নামে আরেকজন ব্লগারকে হত্যা এবং তার পরবর্তী এ চারজন ব্লগারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশা করছি আপনি অবগত।
বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ছেলেগুলোকে ধরা হয়েছে কেবল ধর্মে অবিশ্বাসের অজুহাতে – এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না। আপনি তাদের সাথে একমত হোন আর না হোন, তারা আপনার দেশের নাগরিক, এবং মানব সন্তান। কেউ তাদের সাথে একমত হোক আর না হোক, তারা নিজস্ব মত প্রকাশের ব্যাপারে নুন্যতম মানবাধিকার আশা করে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। আমি অনুরোধ করছি, ব্লগারদের তাৎক্ষনিক মুক্তির ব্যাপারে আপনি উদ্যোগী হবেন, এবং নিশ্চয়তা দেবেন যে আপনার দেশের নাগরিক – তা তিনি ধার্মিক হোন আর না হোন, যেন নির্ভয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে।
‘এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনালস’-এর এ চিঠি এবং স্টেটমেট একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে, সেগুলো তাদের ওয়েব সাইটে রাখা আছে। তাদের সদস্যদেরও এ ধরণের চিঠি এম্বাসেডরের কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
একই ধরণের চিঠি লেখা হয়েছে আরেকটি বৃহৎ মুক্তচিন্তা-কেন্দ্রিক সং গঠন ‘সেন্টার ফর এনকোয়েরি’ থেকেও। প্রয়াত দার্শনিক এবং লেখক পল কার্জের পরিচালনায় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তার পর থেকেই এটি সমাজে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার দূর করে সমাজে বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণা প্রসারের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সাথে কাজ করা অন্য দুটো সহ-সংগঠন হল ‘কমিটি ফর স্কেপটিকাল এনকোয়েরি’ যারা পৃথিবীর যাবতীয় অলৌকিক এবং পারলৌকিক দাবীর সত্যতা অনুসন্ধান করে, এবং অন্যটি হল ‘কাউন্সিল ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজম’ যারা পৃথিবীতে মানবতাবাদ প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে। তারা সম্প্রতি আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে বাংলাদেশের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এপ্রিল মাসের এগারো তারিখে তাদের পক্ষ থেকে আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে:
প্রিয় সেক্রেটারি কেরি এবং পররাষ্ট্র অধিদপ্তর,
আমরা ধর্ম এবং বিশ্বাস থেকে মুক্তির অধিকার এবং মত প্রকাশের অধিকারের জন্য, বিশেষতঃ ধর্মনিরপেক্ষ এবং ভিন্নমত জ্ঞাপনকারী ব্যক্তি বর্গের জন্য কাজ করে যাওয়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর এনকয়েরি’র (CFI) এর পক্ষ থেকে আপনাকে লিখছি।
সিএফআই ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার উপর আগ্রাসন সংক্রান্ত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আপনি সম্ভবত: অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই দেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পেনাল কোডের ২৯৫এ ধারা অনুযায়ী ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাতের’ অজুহাতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম.কে আলমগীর পুনরায় সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাদের তালিকায় আরো সাতজন ব্লগার আছেন যাদের অচিরেই ধরা হবে। আজকেও একজন পত্রিকার সাংবাদিককে ধরা হয়েছে তালিকাভুক্ত ব্লগারদের লেখা বক্তব্য উদ্ধৃত করার অপরাধে। ইতোমধ্যে দেশের রাজধানীর রাস্তায় হাজার হাজার উগ্রপন্থী ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মিছিল করেছে ব্লাসফেমি আইন বাস্তবায়ন এবং আরো ব্লগার গ্রেপ্তারের দাবীতে। তারা বলেছে ২৫ শে এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবী মেনে নেয়া না হলে তারা আরো বড় ধরনের সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করবে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার সম্বলিত আর্টিকেল ১৮ এবং আর্টিকেল ১৯ অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করা একটি দেশ। এই অঙ্গীকারনামা দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে ধর্ম, বিশ্বাস এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় নিশ্চয়তা প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের কেবল নতুন ব্লাসফেমি আইন প্রত্যাখ্যান করাই উচিত নয়, সেই সাথে ধর্মানুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনগুলোও বাতিল করা প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন ধর্মীয় ধারনার সমালোচনা করার জন্য ব্লগারদের উপর নিগ্রহের সমাপ্তি ।
আমরা পররাষ্ট্র অধিদপ্তরকে সসম্মানে অনুরোধ করছি তারা যেন এই ব্যাপারটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশে বাধ্য থাকে।
‘ফ্রি সোসাইটি ইন্সটিটিউট অব সাউথ আফ্রিকা’র পক্ষ থেকে দক্ষিণ আমেরিকার বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে একই ধরণের চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা ধর্মীয় সমালোচনা করার অধিকার সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছে, এবং ব্লগারদের তালিকা এবং হেনস্থা করার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
একই ধরনের শঙ্কা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ‘রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার’, ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’ এবং ‘গ্লোবাল ভয়েস এডভোকেসি’ গ্রুপ থেকেও। এর মধ্যে রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার আলাদা করে আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ‘Blogger Asif Mohiuddin arrested over “blasphemous” blog posts’ শিরোনামে। সেখানে তার উপর আগে মৌলবাদীরা যেভাবে আঘাত করেছে এবং পরে সরকারি চাপে যেভাবে তার ব্লগ ব্যান করা হয়েছে তার সমালোচনা সহ রাজীব হায়দার হত্যার উল্লেখ আছে। একই বিবৃতিতে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজ সহ সকল ব্লগারদের মুক্তি দাবী করা হয়েছে। ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’ এর শিরোনাম ছিল – ‘Four bloggers arrested amid crackdown in Bangladesh’। ‘গ্লোবাল ভয়েস এডভোকেসি’ গ্রুপের শিরোনাম ছিল –‘Bangladesh: Global Voices Condemns Assault on Bloggers’। ৬ই এপ্রিল প্রকাশিত এ বিবৃতিতে সংস্থাটি ব্লগারদের হেনস্থা করার তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের সংবিধানেই ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান’ এবং ‘বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা’ [আর্টিকেল ৩৯ (১,২)]–এর উল্লেখ রয়েছে। বিবৃতিতে এটাও উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশ ২০০০ সালে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারনামায় (আর্টিকেল ১৮)তে সাক্ষর করেছিল।
বিভিন্ন সংগঠনের বাইরে বহু মুক্তচিন্তক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের ব্লগারদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন তাঁর ‘Solidarity with atheists of Bangladesh’ শিরোনামের ব্লগের [http://freethoughtblogs.com/pharyngula/] মাধ্যমে। ইউনিভার্সিটি অব মিনিসোটা মরিসের এই অধ্যাপক আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন একজন জীববিজ্ঞানী। রিচার্ড ডকিন্স, জেরি কোয়েন প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত জীববিজ্ঞানীদের সাথে একই কাতারে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। তিনি বাংলাদেশের আটককৃত ব্লগারদের জন্য উদ্বেগ-প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, অর্ধ-গোলার্ধ দূরে অবস্থিত ছোট্ট দেশটিকে স্মরণ করে ‘বি’ [বি ফর বাংলাদেশ] আদ্যাক্ষরযুক্ত লোগো ব্যবহার করেছেন তাঁর ব্লগে। এই ‘বি’ আদ্যাক্ষরযুক্ত লোগো ব্যবহার করে ব্লগ লেখায় অনুপ্রাণিত করার ব্যাপারটি প্রথমে প্রকাশ করেছিলেন ‘ইয়ং এথিস্টস সার্ভাইভাল গাইড’ গ্রন্থের লেখক এবং ‘ফ্রেন্ডলি এথিস্ট’ ব্লগ সাইটের পরিচালক হেমন্ত মেহতা।
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও নারীবাদী সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন তাঁর ব্লগে (http://freethoughtblogs.com/taslima/) বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশে ব্লগারদের উপর সাম্প্রতিক নিগ্রহ শুরু হবার পর থেকেই। বাংলাদেশে নাস্তিকেরা কীভাবে নিপীড়িত হচ্ছে তার উপর বেশ কিছু ব্লগপোস্ট দিয়েছেন তিনি।
মরিয়ম নামাজী আরেকজন বিখ্যাত অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট। ইরানীয় বংশোদ্দভুত এই সাহসী নারী ২০০৫ সালে ‘সেকুলারিস্ট অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁর অ্যাক্টিভিজমের কারণে। তিনি বাংলাদেশের ব্লগারদের আটকের পর থেকেই ব্লগ লিখে চলেছেন তাঁর উদ্বেগ জানিয়ে। এপ্রিলের দুই তারিখে লেখা একটি ব্লগের শিরোনাম: ‘Stop threats and murder of atheist bloggers in Bangladesh’ । তিনি আরেকটি ব্লগপোস্টে সবাইকে আগামী ২৫ এপ্রিল ২০১৩ বাংলাদেশের ব্লগারদের স্মরণে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ব্লগার -সমর্থন দিবস (international day to defend Bangladesh’s bloggers) হিসেবে গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন।
বহির্বিশ্বের মিডিয়া এবং সংবাদপত্রগুলোতেও বাংলাদেশের ব্যাপারে নেতিবাচক সংবাদ এসেছে ব্লগারদের উপর ধরপাকড় চালানোর পর। সিএনএন, বিবিসি, হাফিংটনপোস্ট, স্লেট সহ বহু মিডিয়ায় মুক্তচিন্তকদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সরকারের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ এবং পোস্ট এসেছে। ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে পিটিশনও হয়েছে বেশ কিছু ব্যক্তি এবং সংঘের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট আমেরিকার অ্যাম্বেসেডরকে পদক্ষেপ চেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তাদের পিটিশনে। বোঝাই যাচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশঃ বাড়ছে। অনেকেই ধারণা করছেন সরকার যদি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করেন,যদি ব্লগারদের বাকস্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে মুক্তি না দেন, তবে তা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির জন্য শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না।
বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশের ব্লগাররাও নানা ধরণের কর্মসূচী পালন করছেন। ব্লগারদের গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রখ্যাত ব্লগসাইটগুলো ব্ল্যাক আউটে চলে যায় বিগত ৪ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে। চারদিন ব্যাপী ব্ল্যাক আউট কর্মসূচী পালন করেছিল আদিবাসী বাংলা ব্লগ, আমারব্লগ, আমরাবন্ধু, ইস্টিশন, উন্মোচন, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, চতুর্মাত্রিক, নাগরিকব্লগ, নকশাব্লগ, প্রজন্মব্লগ, প্রযুক্তিবার্তা, বিজ্ঞানস্কুলব্লগ, মুক্তমনা, মুক্তাঙ্গন, মুক্তচিন্তাব্লগ, সচলায়তন, সরব, স্বাধীনবাংলাস্টেশন এবং শৈলী সহ বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্লগসাইটগুলো। এভাবেই ধর্মঘটে থাকাকালীন এক সময়ে জন্ম নেয় বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (BCBA) [www.banglablogalliance.org]। এই নবগঠিত ‘বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স’-এর মাধ্যমে ব্লগগুলো চারদিন পর ব্ল্যাক-আউট থেকে ফিরলেও তারা আটককৃত ব্লগারদের মুক্তির জন্য সার্বক্ষণিক ভাবে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করছে। তারা ব্লগ এবং ব্লগারদের বাক-স্বাধীনতার উপরে যে কোন ধরনের হামলার উপরে একসাথে কাজ করবে বলে শপথ করেছে। প্রত্যেক ব্লগ সাইটের উপরের দিকে ব্যানারে শোভা পাচ্ছে — ‘অবিলম্বে আটক ব্লগারদের সসম্মানে মুক্তি দিতে হবে’ শ্লোগান। পাশাপাশি তাঁরা ব্লগে ব্লগারদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অবস্থান নিশ্চিত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অবস্থান চির অটুট রাখা সহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে । তাদের লড়াই যেমন চলবে রাজপথে, তেমনি চলবে ব্লগের পাতাতেও; স্বাধীন থাকবে বাংলা ব্লগ। চলবে ব্লগারদের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩ comments
মাসুদ করিম - ১৫ এপ্রিল ২০১৩ (১:৫৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৭ এপ্রিল ২০১৩ (৯:৫২ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৭ এপ্রিল ২০১৩ (৭:২৮ অপরাহ্ণ)