প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের উত্থান এ দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিভিত্তিক অপতৎপরতা তারই একটি প্রতিক্রিয়া -- আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গণতন্ত্রবিরোধী সামন্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবশেষের শেষ মরণকামড়। [...]

প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের উত্থান এ দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিভিত্তিক অপতৎপরতা তারই একটি প্রতিক্রিয়া — আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গণতন্ত্রবিরোধী সামন্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবশেষের শেষ মরণকামড়। শাহবাগে তরুণরা সমবেত হয়েছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের দাবিতে সংযুক্ত হয়েছে, ব্লগারদের মুক্তির ও বাকস্বাধীনতার দাবি। এক কথায়, তরুণদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে এমন-এমন দাবি যার বাস্তবায়ন আসলে বুর্জোয়া-গণতন্ত্রীদেরই করতে হয় এবং যার বাস্তবায়ন না ঘটলে সামন্ত সংস্কৃতি ও স্বৈরতান্ত্রিকতার অবশেষ রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতিকে বার বার আক্রান্ত করে থাকে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি (কেন পারেনি, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ)। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি, গণতান্ত্রিক শাসন বার বার ব্যাহত হয়েছে, নারীমুক্তি ঘটেনি, ব্যক্তি তার বাকস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়নি। অনিবার্য কারণেই তরুণরা পূরণ করতে চায় অসম্পন্ন বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাসমূহ।

581886_10151542846794257_1784917645_n

তরুণদের এ আন্দোলনকে কি সরকার কি বিরোধী দল কেউই স্বাভাবিকভাবে নেয়নি, নেয়ার প্রশ্নই আসে না। কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল উভয়েই বিশেষ করে এই পরিস্থিতিকে নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং তাদের ওই প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতাকে। হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের কাছেই কাম্য হয়ে উঠেছিল, কেননা চিহ্নিত রাজনৈতিক অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে তাদের কারো পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না খেলা এগিয়ে নেয়া। তাদের দরকার হয়ে পড়েছিল অরাজনৈতিক নতুন এক মৌলবাদী শক্তি, যাদের অরাজনৈতিকতা সাময়িকভাবে হলেও একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করবে এবং বিভ্রান্তির ঘুর্ণাবর্তে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতাকে হত্যা করা যাবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেও মন্থর এবং চাই কি ছকবন্দিও করে ফেলা যাবে। এই খেলায় বিএনপির পুরোধা খালেদা জিয়া ও তার অনুসারীরা তরুণদের গায়ে সেঁটে দিয়েছেন ‘নাস্তিকতা’র ছাপ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চাইছেন কিংবা যারা চাইছেন না তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী যেমন আছেন, তেমনি এমন অনেকেও আছেন যারা ধর্ম ছাড়াই সামাজিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। মূল প্রশ্নটি এখানে নাস্তিক-আস্তিকের নয়, মূল প্রশ্ন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ও সুবিচার পাওয়ার। কিন্তু খালেদা জিয়া বিষয়টি আস্তিক-নাস্তিকের ইস্যুতে পরিণত করে আন্দোলনকারীদের সামাজিকভাবেই কেবল বিচ্ছিন্ন করতে চান নি, মানুষের বাকস্বাধীনতাকেও সংকুচিত করার পথ তৈরি করে দিয়েছেন। সরকারও বিষয়টিকে লুফে নিয়েছেন এবং এমন সব আইন প্রণয়নের আয়োজন সম্পন্ন করে চলেছেন, যা মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার পরিধি সংকুচিত করে ফেলছে, যা বাংলা ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির ওপর সরকারবিরোধী কথা বলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিনামার জুজু দেখিয়ে এখন আওয়ামী লীগ সরকার ব্লগে বা আন্তর্জালের মুক্তচিন্তার জগতে হস্তক্ষেপ করার উপযোগী আইনকানুন প্রণয়নের কাজে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।

অথচ আন্তর্জালকে কমবেশি ব্যবহার করেন, এমন সবাই জানেন, গত কয়েক বছর ধরে নীরবে হলেও ব্লগগুলিকে কেন্দ্র করে আমাদের তরুণদের চিন্তার জগতে ও সামাজিক জীবনে রাজনৈতিক চেতনার বিচ্ছুরণ ঘটেছে। শিক্ষাঙ্গনগুলিতে যখন ছাত্ররাজনীতি অলিখিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, ছাত্রসংগঠনগুলো সন্ত্রাসী ক্যাডারদের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপে ছাত্র সংসদগুলির নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্যে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে, তখন এই ব্লগসাইটগুলি শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি-দর্শন-সমাজ-সংস্কৃতি-মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়নের ও মতবিনিময়ের ধারা বিকশিত হয়েছে। এটি সত্য, ব্লগে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ এই বিতর্কের ক্ষেত্রে অনাকাাক্সিক্ষত ও অমার্জিত ভাষা প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে অসহিষ্ণুতা ও যুক্তিহীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, অনেকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে সামাজিক মাধ্যমগুলির অপব্যবহার করেছেনÑকিন্তু পাশাপাশি এ-ও সত্য, এসবের মধ্যে দিয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে ঝড় উঠেছে, শান্তিপূর্ণভাবে তরুণদের পক্ষে স্বাধীনভাবে একটি রাজনৈতিক, আদর্শিক ও দার্শনিক অবস্থান গ্রহণ সম্ভবপর হয়েছে। এইভাবে তরুণদের অভ্যুদয়ের একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শর্ত এই অভ্যুদয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিল এবং অবশেষে তারই বহ্নুৎসব ঘটেছে শাহবাগের মধ্যে দিয়ে। তরুণরা আমাদের মনে ফিরিয়ে এনেছে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করার আকাঙ্ক্ষা, ফিরিয়ে এনেছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা।

মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই এসেছে এই তরুণরা, কিন্তু তারা যেসব দাবি তুলেছে শ্রেণিআন্দোলনের স্বার্থ ও সম্ভাবনাও জড়িয়ে রয়েছে সেসবের সঙ্গে। গণতন্ত্রের বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গড়পড়তা স্বপ্ন আমাদের বুর্জোয়া শ্রেণির সরকার ও দলগুলো দেখিয়ে থাকে, এমনকি সেই স্বপ্নের সফলতাও নির্ভর করে রাষ্ট্রের সেক্যুলার চরিত্রের ওপরে। তরুণদের এই আন্দোলন সেক্যুলার রাষ্ট্রীয় চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

জামায়াতে ইসলামী কিংবা এ ধরণের দলগুলি যে শাহবাগের উত্থানের বিরোধিতা করবে, সেটি তো লেখাই বাহুল্য। পরে আমরা দেখেছি, তাদের ওই বিরোধিতার সঙ্গে বিএনপিও কোরাস ধরেছে। তারা এই সত্যটি ভুলে গেছে, যে-জিয়াউর রহমান একসময় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংবিধানে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করেছিলেন, ধর্মবাদী রাজনীতির ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে সেই জিয়াউর রহমানই ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে বিএনপির কর্মশালায় বলেছিলেন, ‘‘কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনওই রাজনীতি করা যেতে পারে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছে যারা আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতে চেষ্টা করেন, আমরা বারবার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ধর্মকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ (সূত্র : তারেক রহমান : অপেক্ষায় বাংলাদেশ/ এমাজউদ্দিন আহমেদ, মাজেদুল ইসলাম, শওকত মাহমুদ ও আবদুল হাই শিকদার সম্পাদিত, প্রকাশক: জিয়া ফাউন্ডেশন, ২০১০, পৃষ্ঠা ৩৮৯)।

ফরাসি বিপ্লবের সময় আমরা দেখেছি, নিপীড়িত হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের একটি বড় অংশ সামন্তসংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হওয়ায় চার্চের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। জামায়াত-বিএনপিও তাদের অপরাজনীতি চরিতার্থ করতে এ দেশের জনগণের পশ্চাৎপদতাকে, কুসংস্কারাচ্ছন্নতাকে পুঁজি করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার পর দেশের কোনও কোনও জায়গায় ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ‘বিধর্মী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা প্রকারান্তরে তাদের উন্মূল করার সুদূরপ্রসারী ছক এঁটেছে। চাঁদের মধ্যে সাঈদীকে দেখতে পাওয়ার অপপ্রচার চালিয়েছে তারা জনগণের মধ্যে, নিরীহ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলার জন্যে তারা মিথ্যাচার করেছে মোটেল তৈরি করা হলে এলাকায় ‘বেলেল্লাপণা’ দেখা দেবে। এরকম অসংখ্য অপপ্রচার মধ্যে দিয়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, রক্তপাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে- যার দায় জামায়াতে ইসলামী তো বটেই, এমনকি বিএনপিও এড়াতে পারবে না। কিন্তু এসবও যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন কথিত ‘রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন’ হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছে। আর তারা শ্লোগান দিচ্ছে, ‘মাওলানা শফির বাংলায়, মুরতাদের ঠাঁই নাই’। যাদের সঙ্গে তাদের মতে কোনও মিল নেই, তাদের তারা মুরতাদ বলছে, মুরতাদ বানাচ্ছে।

বিএনপি থেকে শুরু করে হেফাজতে ইসলাম যা করছে, তা প্রকারান্তরে এ দেশের জনগণকে একটি প্রশ্নের দিকে ঠেলে দিয়েছে; আর তা হলো, মানুষ কি যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের পক্ষে থাকবে, না কি বিচার চাওয়ার অপরাধে ‘নাস্তিক’ অপবাদ কাঁধে নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে? অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যা করছে, তা আন্দোলনকারীদের এই প্রশ্নের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তারা কি মুক্তচিন্তার সপক্ষেও দাঁড়াবে না কি কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলেই সন্তুষ্ট থাকবে। আর এসব প্রশ্নের উত্তরও আমরা ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছি- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেই তারুণ্যের এ উত্থান সীমিত থাকবে না। বাংলাদেশে তারুণ্যের মূল স্রোত আগামী দিনগুলোতে ‘নাস্তিকতা’র অপবাদ কাঁধে নিয়ে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি মুক্তচিন্তার অনুশীলনের লক্ষ্যে পথ চলা অব্যাহত রাখবে। কেননা তারা জানে, ধর্ম যার যার আর রাষ্ট্র সবার। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে তাদের এখন সেইসব ফাঁদ পেরুতে হবে, তাদের শক্তির অপচয় ঘটানোর জন্যে যেসব ফাঁদ পাতা হয়েছে। এইসব ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দু’টি ফাঁদ হলো মৃত্যুর ফাঁদ আর অপপ্রচারের ফাঁদ। ব্রুনো, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, ইবনে সিনা থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলাম, কাজী আবদুল ওদুদ, বেগম রোকেয়া, আরজ আলী মাতুব্বরসহ বিভিন্ন মুক্তচিন্তাচর্চাকারীকে এই ফাঁদে ফেলে ঘায়েল করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু পরে তারা ইতিহাসে ও মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন স্বমহিমায় — কেননা মানুষকে শেষ পর্যন্ত সত্যের কাছেই ফিরে আসতে হয়।

হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবি অগ্রাহ্য করায় আমাদের প্রতি মারমুখো হতে পারে, অপরাধী সাব্যস্ত করতে পারে, নির্যাতন চালিয়ে রক্তাক্ত করতে পারে — যেমন ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে সাংবাদিক নাদিয়াকে। কিন্তু জনগণ ও ইতিহাস আমাদের নিশ্চয়ই মুক্তি দেবেÑকেননা বিভ্রান্তির জালে মানুষকে বেশি দিন আটকে রাখা যায় না, সত্যের কাছে ফিরতে হয় মিথ্যাবাদীকেও।

ঢাকা, ২৮ চৈত্র ১৪১৯/ ১১ এপ্রিল ২০১৩

ইমতিয়ার শামীম

আপনারে এই জানা আমার ফুরাবে না...

৩ comments

  1. সুমিমা ইয়াসমিন - ২২ এপ্রিল ২০১৩ (৯:২৬ অপরাহ্ণ)

    যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে যারা আন্দোলন করছে, তাদের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ‘নাস্তিক’ বিতর্ক আর হেফাজতের ইসলামের ‘১৩ দফা’ তৈরি করা হয়েছে।
    শেষ পর্যন্ত সত্যর জয় হবেই।

  2. মাসুদ করিম - ২৩ এপ্রিল ২০১৩ (২:৩৭ পূর্বাহ্ণ)

    সবার আগে প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে বুর্জোয়া আছে কি না? বাংলাদেশে এই জটিল অবস্থাটা অনেক দিনের। শিল্পে উল্লেখযোগ্য দেশীয় বিনিয়োগ, আর্থিক পুঁজি ও ব্যবসায়ের (Finance Capital) নিবিড় প্রসার এবং ইনক্লুসিভ সাফল্য, দোর্দণ্ড কৃষি এবং ভোগ্যপণ্যের শক্তিশালী উৎপাদন ও বিক্রি — এসবকিছুর পরও বাংলাদেশে ঠিক বুর্জোয়া নেই। ঢাকা এবং খুব কষ্টেসৃষ্টে চট্টগ্রাম এই হল আমাদের নগরায়ন, এই সীমিত নগরায়নে বুর্জোয়া আসবে কোত্থেকে? এবং বুর্জোয়ার সাথে শুধু অর্থবিত্তের সম্পর্ক নয় এক সদাসঞ্চরণশীল নগরজীবনেরও সম্পর্ক। আমাদের এখানে অর্থবিত্তের দিক থেকে এখন এক বড় সুপ্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী আছে যা সংখ্যায় মোটামুটি ৫কোটির মতো হবে — কিন্তু এদের বেশিরভাগেরই নেই নাগরিক সঞ্চরণশীলতা। আমাদের অর্থবিত্তে এলিট শ্রেণীও এখন সংখ্যায় কোটি স্পর্শ করবে এরাও নাগরিক সঞ্চরণশীলতায় একবারেই দরিদ্র। গভীর অর্থে বাংলাদেশের কোথাও কোনো আরবান সংস্কৃতির দৃশ্যমান সমষ্টি দেখা যায় না। তাই এখানে বুর্জোয়া ধর্মনিরপেক্ষ উত্থান নেই।

    তাহলে বাংলাদেশে কী আছে? যাদের দিকে আশা নিয়ে ‘ইন্টার ফেইথ’ সহিষ্ণুতা দাবি করা যায়? আছে, চাষাভুষোর শিকড় থেকে বেরিয়ে আসা বহুবিধ পেশায় নিয়োজিত কর্মচঞ্চল আর্থিকভাবে স্বচ্ছল/নাতিসচ্ছল বিরাট সহজিয়া বুদ্ধিদীপ্ত জনসমষ্টি — এরা নগরে শহরে মফস্বলে গ্রামে বসবাস করে, এরা সংস্কৃতিতে গভীর নয়, কিন্তু লৌকিকতা ও কাণ্ডজ্ঞানে সরস, এরা ধর্ম পালনে-অপালনে একটা সহনীয় মাত্রায় থেকে গোপন নিষিদ্ধ পানাহারেও সমান সামঞ্জস্য বিধান করে চলে, এরা রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তাতেও যথেষ্ট উদার। এরাই মূলত গণজাগরণের শক্তি এবং এরা সমানেই যাবে — এতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার সেসাথে আছে বাংলাদেশের অত্যন্ত কর্মমুখর শ্রমজীবি নারী ও পুরুষ যাদের জীবনের সহজবোধ ও কর্মস্পৃহা বাংলাদেশের মূল চালিকা শক্তি। আমি বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি এভাবেই দেখি, এবং খুবই বিশ্বাস করি বাংলাদেশ মৌলবাদের ঝুঁকিতে টালমাটাল হয়েও ‘ইন্টার ফেইথ’ সহিষ্ণুতার বৃহত্তর স্পেসে নিজেকে তুলে ধরে হয়ে উঠবে — সত্যিই হয়ে উঠবে এক আকাঙ্ক্ষিত জনপদ।

  3. অদিতি কবির - ১৪ জুন ২০১৩ (৮:২৪ পূর্বাহ্ণ)

    পলিটিক্স যারাই করুক না কেন, জনমত মেনে নেবার মত মানসিকতা কারই নেই।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.