লোকে বলত, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য অস্ত যায় না। মৃত্যু ঘটেছে সেই প্রবাদের। সাম্রাজ্য হারানোর পর ব্রিটিশ শাসকরা সারা পৃথিবীকে দেখাতে থাকে তাদের সংসদীয় গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক আভিজাত্য। বিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের মডেল হয়ে ওঠে দেশটি। স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া পুরনো সব উপনিবেশগুলি নিয়ে তারা গড়ে তোলে কমনওয়েলথ। গণতন্ত্রের দীক্ষা নিতে উদগ্রীব কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলি গণতান্ত্রিক হয়ে উঠতে না পারলেও ব্রিটেন ঠিকই হয়ে ওঠে অভিজাত গণতান্ত্রিক পুরোহিত। কিন্তু এবার সেই আভিজাত্যেও টান পড়েছে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভয়ানক এক কালো ছায়া পড়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট-এর উপরে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ জুড়ে ব্রিটেনের দৈনিকগুলির প্রথম পাতা থেকে শুরু করে ভেতরের বেশ কয়েকটি পাতা দখলে ছিল সরকারী ও বেসরকারী সাংসদদের আর্থিক অনিয়মের বিভিন্ন কীর্তিকাণ্ডের খবরে। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের নামও ছিল সেই তালিকায়। অবশ্য আগেভাগেই বিলের অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে আর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি নাম কাটান সেই তালিকা থেকে। কিন্তু তালিকা থেকে নাম কাটাতে পারেননি জ্যাক স্ট্র, হ্যাজেল ব্লেয়ার্স, অ্যালিয়েস্টার ডার্লিং, জেফ হুন, মার্গারেট বেকেট, স্পীকার মাইকেল মার্টিন, ইমিগ্রেশান মিনিস্টার ফিল ওলাস, মার্গারেট মোরান, পর্যটন মন্ত্রী বারবারা ফোলেট, ফিল হোপ প্রমুখ। মানুষের চোখ কপালে ওঠে, অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে, যখন জানা যায়, বিচারবিষয়ক মন্ত্রী শাহিদ মালিকও আইনকানুনের ও নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে তাঁর দ্বিতীয় বাসভবনের বিপরীতে গত তিন বছরে ৬৬,০০০ পাউন্ড তুলেছেন! সংসদের আর কারও পক্ষেই না কি সম্ভব হয়নি এত বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। এ ঘটনার রেশ ধরে মন্ত্রীসভা থেকে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হয় শাহিদ মালিককে। অবশ্য শাহিদ মালিককে বিদায় করার আগে প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন আরও একজনকে বিদায় করেন সংসদীয় লেবার পার্টি থেকে। তিনি লেবারের প্রাক্তন পরিবেশ মন্ত্রী এলিয়ট মর্লে। নির্বাচনী এলাকার বাসভবনটির মর্গেজ শোধ করার জন্যে তিনি ১৬,৮০০ পাউন্ড দাবি করেছিলেন, তাও সমস্ত ঋণ শোধ হবার ২০ মাস পরে। এতো ছিল সরকারি দলের অবস্থা। বিরোধী দলের দশাও খুব ভালো নয়। ডেভিড ক্যামেরুনের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক ও সংসদীয় উপদেষ্টা ছিলেন এ্যান্ড্রু ম্যাকেই। এক অর্থে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে গেছে। ম্যাকির প্রতি ক্যামেরুনের যত টানই থাকুক, দলকে এবং বিরোধী দলীয় প্রধানের পদকে প্রশ্নমুক্ত রাখার প্রয়োজনে ম্যাকিকে তিনি ত্যাগ করেছেন। আর তাই পদত্যাগ করতে হয়েছে অ্যান্ড্রু ম্যাকেইকেও। মাত্র একটি বাসভবনের…
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ফারুক চৌধুরীর এ লেখাটি আলোচনার জন্য নির্বাচন করা হল। প্রশ্ন হল, পাকিস্তানে সোয়াত উপত্যকার ঘটনাবলী বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের রাজনৈতিক আকাশে মেঘ জমার কোন আগাম ইঙ্গিত দিচ্ছে কি? (more…)
‘ধান সাধারণত ৭০ দিন পানিতে ভিজাইয়া রাখা হয়।’ অনেক আগে এসএসসির এক পরীক্ষার্থী এই অবিশ্বাস্য ধানের রচনা লিখেছিল। কেবল এই রচনার অবিশ্বাস্যতার গুণে নয়, এসএসসি পরীক্ষার্থীর নির্বুদ্ধিচর্চার সংবাদ হিসেবে রচনাটি পরীক্ষক শিক্ষকের মারফতে প্রকাশ পেয়েছিল সংবাদপত্রে। এবার আরেকটি বাক্য শুনুন। ‘যুগে যুগে কিছু মহামানবের আবির্ভাব হয়। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উদ্দিন তেমনি এক মহামানব, আব্রাহাম লিংকনের মতো একজন মহামানব। (আমাদের সময়, ১৮ বৈশাখ ১৪১৬/ ১ মে ২০০৯)।' এই অবিশ্বাস্য বাক্যটি বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের কণ্ঠ দিয়ে। তিনি অবশ্য এসএসসি পরীক্ষার্থী নন, ডক্টরেট ডিগ্রি পর্যন্ত অর্জন করেছেন। তাই তাঁর মুখনিঃসৃত এ বাক্যকে নিবুর্দ্ধিচর্চার উদাহরণ বলি কী করে? বরং বলা যেতে পারে, এটি তৈলমর্দনচর্চার একটি অন্যতম উদাহরণ। সেনাপ্রধান তখন তাঁর সামনেই বসেছিলেন, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভূমিকম্পকালীন অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য সংগৃহীত যন্ত্রপাতি হস্তান্তর উপলক্ষে চট্টগ্রামের আর্মি এম্বারসেশন ইউনিটে একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তারা। প্রশংসা করার এমন সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়? অতএব তিনি প্রশংসা করেছেন মুক্তস্বরে। তবে পত্রিকার পাতায় যে কথাটা ছাপা হতে পারে, তা বোধহয় তাঁর মাথায় ছিল না। তাই এখন পত্রিকায় তাঁকে প্রতিবাদপত্র পাঠাতে হচ্ছে, যাতে তিনি লিখছেন, ‘আমি এরকম কোনও কথা বলিনি’ (আমাদের সময়, ২০ বৈশাখ ১৪১৬)। রাজ্জাক সাহেবকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাঁর এই কথার মধ্যে দিয়ে সবার জন্যে নতুন এক দুর্যোগই নিয়ে এসেছেন। দিনবদলের জন্যে যাদের বাংলাদেশের জনগণ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে মাত্র চার মাস আগে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের কথার ওজন যদি এরকম হয়, তা হলে জনগণের জন্যে আরও বড় দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। অনেকে অবশ্য এখনও আশাবাদী, তারা এখনও বলছেন, সরকার তো কেবল ১০০ দিন পার করলো, আরও একটু সময় ধৈর্য ধরতে হবে...। তা কথাটাকে মিথ্যা বলি কী করে? সত্যিই তো, মাত্র ১০০ দিন অথবা মাস চারেক আগে সরকার ক্ষমতায় এসেছেন; আর আমাদের এই রাষ্ট্রে কত যে ধুলাবালি জমেছে সেটা তো মাত্র একটা উদাহরণ থেকেই বোঝা যায়,- মাত্র ৩৮ বছরে দেশটির সংবিধানে এক ডজনের বেশি সংশোধনী এসেছে, গণতন্ত্র দিতে এতই তত্পর ছিলেন আমাদের বিভিন্ন সরকার! এইসব ‘গণতান্ত্রিক সংশোধনী’র সূত্র যে-ভার জমেছে তা সরানো…
চরদখল করে গডফাদার।[...]
যেন নদীর ভাঙাগড়া। জমিভিটা যায় মানুষের, চরদখল করে গডফাদার।
(গত পর্বের পর) পদত্যাগের কারণ সংসদীয় কমিটিতে তলব? সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তলবের কারণেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের পদ থেকে লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধূরী পদত্যাগ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর। সূত্র জানায়, গত এক এপ্রিল অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য পরবর্তী বৈঠকে হাসান মশহুদ চৌধূরীকে তলব করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে নোটিস দিয়ে তলবের কথা বলা হয়। এ খবর জানার পর এবং সরকারের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েনসহ একাধিক কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন হাসান মশহুদ। অসহযোগিতাও অন্যতম কারণ? সরকারের চাপ ও অসহযোগিতার কারণেই চলে যেতে হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীকে। দুদক-এর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, ইদানীং সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতাই করা হচ্ছিল না তাকে। জানা গেছে, এই অসহযোগিতার অংশ হিসেবে দুদক-এর মতামতের তোয়াক্কা না করেই দু’ কর্মকর্তার নিয়োগ আদেশ বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দু’জনকে দুদক-এর ঊর্ধ্বতন দু’টি পদে নিয়োগ দেয়। এ কারণে এক কর্মকর্তাকে কোন দায়িত্বও দেয়নি দুদক। এছাড়াও দুদক-এর মতামত না নিয়ে পরিচালক পদে আরও কয়েকটি নিয়োগ দেয় সরকার। সর্বশেষ দুদক-এর সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে গঠিত কমিটির বৈঠক নিয়ে সরকারের সঙ্গে হাসান মশহুদ চৌধুরীর সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। দুদক-এর সচিবের সভাপতিত্বে পদোন্নতি বিষয়ক কমিটির এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। পদোন্নতি কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে ওই দিন সরকারি এক সদস্য বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় তা স্থগিত করে পরদিন ৩০ মার্চ করার সিদ্ধান্ত হয়। পরের দিনও ওই সদস্যকে পাঠানো হয়নি বৈঠকে। পরে চেয়ারম্যান খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইঙ্গিতেই তাকে বৈঠকে যেতে বারণ করা হয়। এরপরই পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন হাসান মশহুদ চৌধুরী। এর একদিন পরই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এছাড়া আরও কিছু বিষয়েও কেবিনেট থেকে দুদককে অসহযোগিতা করা হয়। যেমন, দুদকের জনবল কাঠামো অনুমোদন করেনি সরকার। মামলা পরিচালনায় এটর্নি জেনারেলের অফিস থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছিল…