চেনা মানুষ অচেনা হয়ে উঠলে যে দুঃসহ কষ্ট আমরা পাই, চেনা মানুষের মুখোশ চিরে আরেক মানুষ বেরিয়ে পড়লে আমরা যেমন যন্ত্রণায় ছটফট করি — সেইরকম একটা অনুভূতি নিয়ে আমি নিশ্চিত পৃথিবীর সকল প্রান্তের বাঙালীরা আজকে রাতে এবং এরপর আরো অনেক রাতে ঘুমোতে যাবে। [...]

হা হন্ত তথাপি জন্ম-বিটপী ক্রোড়ে মনো ধাবতি... ১. চেনা মানুষ অচেনা হয়ে উঠলে যে দুঃসহ কষ্ট আমরা পাই, চেনা মানুষের মুখোশ চিরে আরেক মানুষ বেরিয়ে পড়লে আমরা যেমন যন্ত্রণায় ছটফট করি -- সেইরকম একটা অনুভূতি নিয়ে আমি নিশ্চিত পৃথিবীর সকল প্রান্তের বাঙালীরা আজকে রাতে এবং এরপর আরো অনেক রাতে ঘুমোতে যাবে। আমরা বাংলাদেশকে আর চিনতে পারছি না। অথচ, এই মৃতমানুষের কনভয়, এই জীবিতমানুষের শোকমিছিল এই মৃ্ত্যু উপত্যকাই আমার দেশ। দীর্ঘদিন তাই ছিল -- কেন ভুলে ছিলাম? কেন ভ্রমে ছিলাম? আমাদের চোখের সামনেই কি আমাদের ভাগ্যান্বেষণরত পরিচিত মানুষরা পত্রিকায় মৃতমানুষের সংখ্যা বাড়ায়নি? লঞ্চডুবি হয়ে, গুলি খেয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মরে ফুলে পড়ে থেকেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসার অভাবে সাহায্যের অভাবে কাতরে কাতরে মরে গেছে। আর একদল বোকা মানুষ একদল পাগল তাদের খালিহাতে এই মানুষগুলিকে বাঁচাবার চেষ্টায় নিজেদের প্রাণ দিয়েছে। কখনো আমরা তাদের নাম ভুলে গেছি। কখনো তাদের বীরশ্রেষ্ঠ ডেকেছি। দেয়ালে টাঙানো বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি প্রণিধানযোগে দেখলেই আপনি বাংলাদেশের স্বরূপ দেখতে পাবেন -- এই মানুষগুলির কারো চেহারা/প্রফাইল ‘সিগনিফিক্যান্ট’ না, ঝাপসা মুখ, ভিড়ের একজনের মতো অভিব্যক্তি -- আমাদের ছোট্ট দেশটার ইনসিগনিফিক্যান্ট মানুষগুলিই আমাদের বীর। আমাদের নেতারা কোনোদিন বীর ছিল না, যোদ্ধা ছিল না, স্বার্থত্যাগী ছিল না। মানুষের মৃত্যু তাদের বিচলিত করেনি, মৃত্যু মানে হয় জয়ের তুরুপের তাস, অথবা পরাজয়ের ধ্বনি। আমাদের নেতারা কোনোদিন সামাজিক মানুষ যেমন করে কাছের মানুষের মৃত্যুকে গ্রহণ করে, যে বেদনায়, তা ধারণ করেনি। ফলে বাংলাদেশের শ্রমজীবি মানুষ অকাতরে মরবার খবরে কেবল সাধারণ মানুষই ছুটে যাবে -- নেতারা নানাভাবে নিজের পাপক্ষালনের চেষ্টা করবে (আগের দল ক্ষমতায় থাকতেও এমন ঘটেছে, যারা করেছে তারা আমাদের কেউ না) এবং রাষ্ট্রনায়ক/নায়িকা ভান করবেন তাঁরা এখনো তাঁদের দলের নেতা, দেশের দায় তাঁদের নেই -- এতে অবাক হবার কিছু নেই। তাহলে এমন যাতনা কেন? সাভারের গার্মেন্টসে যে মানুষগুলি এমন করে মরে গেল, তাদের নিরন্তর সংগ্রাম ছিল বেঁচে থাকার, জীবনের দিনগুলিকে অল্প দামে বেচে দিয়ে জীবনযাপনের জন্যে অসামান্য সেই সংগ্রাম।আমি জেনেছি, অনেক শ্রমিক উদ্ধার পেয়ে বিকলাঙ্গ-জীবন যাপনের চেয়ে সেই জগদ্দলের তলায় সমাধিস্থ হতে চেয়েছেন -- যেন কোনোভাবে তাঁদের মৃত্যু অন্ততঃ একটা আর্থিক মূল্য পায়। এই তো বাংলাদেশ। নেতানেত্রীরা…

█ আসছে ২৮ এপ্রিল ২০১৩ বিকেল ৩টায় "আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম" এর উদ্যোগে শহীদ আলতাব আলী পার্ক (লন্ডন) এ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির মহাসমাবেশ সফল করুন। █ আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম এর এই লিফলেটটি প্রচার করুন [..]

(যুক্তরাজ্য 'আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম' এর লিফলেট) █ আসছে ২৮ এপ্রিল ২০১৩ বিকেল ৩টায় "আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম" এর উদ্যোগে শহীদ আলতাব আলী পার্ক (লন্ডন) এ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির মহাসমাবেশ সফল করুন। █ আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম এর এই লিফলেটটি প্রচার করুন ঃ- ======================================= বন্ধুরা, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন প্রদান এবং প্রবাসে তার সপক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে আই সি টি সাপোর্ট ফোরাম গড়ে ওঠে। যুক্তরাজ্যে ৩৩টি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। এই ফোরামে বর্তমানে ৭৫ টি সংগঠন যুক্ত আছে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ১৯৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত দেয়। জনগণের এই দাবিকে ধারণ করে নির্বাচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দীর্ঘ বিচারহীনতার নিরসন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক এই বিচারকার্য শুরু করে। দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম শুরু থেকেই এই বিচারের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিলো অতন্দ্র প্রহরীর মতো। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়ে বেশির ভাগ অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও যখন উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হলো না, তখন তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে দেশ এবং বিদেশের আপামর বাঙালি শাহবাগ গণজাগরণের পতাকাতলে একত্রিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, বিচারের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, ১৯৭১ এর মূল চেতনা ফিরিয়ে আনা, এবং জামাত-শিবির এবং তাদের দোসরদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বয়কট করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গণমানুষের এই জাগরণ। অদৃশ্যপূর্ব এই প্রতিবাদে মিছিলের সারি কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে এবং তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ৪২ বছরেও কেউ দেখেনি। আপনারা লক্ষ করেছেন, এই বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর দেশে এবং বিদেশে জামাত-শিবির চক্র, তাদের দেশি-বিদেশি ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী, এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার এই ন্যায়সংগত বিচারকে নস্যাৎ করার জন্য জঘন্য মিথ্যাচার চালিয়ে গেছে। তারা কেবল এই মিথ্যাচার-অপপ্রচার চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। গেল বছরের অক্টোবর থেকে জামাত-শিবির চক্র পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং সার্বভৌমত্ব নস্যাত করতে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক নাশকতা শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত নাশকতামূলক এই সব কর্মকান্ড ছিলো অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঠিক যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে তাদের কৃত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ,…

প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের উত্থান এ দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিভিত্তিক অপতৎপরতা তারই একটি প্রতিক্রিয়া -- আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গণতন্ত্রবিরোধী সামন্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবশেষের শেষ মরণকামড়। [...]

প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের উত্থান এ দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিভিত্তিক অপতৎপরতা তারই একটি প্রতিক্রিয়া -- আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গণতন্ত্রবিরোধী সামন্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবশেষের শেষ মরণকামড়। শাহবাগে তরুণরা সমবেত হয়েছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের দাবিতে সংযুক্ত হয়েছে, ব্লগারদের মুক্তির ও বাকস্বাধীনতার দাবি। এক কথায়, তরুণদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে এমন-এমন দাবি যার বাস্তবায়ন আসলে বুর্জোয়া-গণতন্ত্রীদেরই করতে হয় এবং যার বাস্তবায়ন না ঘটলে সামন্ত সংস্কৃতি ও স্বৈরতান্ত্রিকতার অবশেষ রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতিকে বার বার আক্রান্ত করে থাকে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি (কেন পারেনি, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ)। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি, গণতান্ত্রিক শাসন বার বার ব্যাহত হয়েছে, নারীমুক্তি ঘটেনি, ব্যক্তি তার বাকস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়নি। অনিবার্য কারণেই তরুণরা পূরণ করতে চায় অসম্পন্ন বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাসমূহ। তরুণদের এ আন্দোলনকে কি সরকার কি বিরোধী দল কেউই স্বাভাবিকভাবে নেয়নি, নেয়ার প্রশ্নই আসে না। কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল উভয়েই বিশেষ করে এই পরিস্থিতিকে নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং তাদের ওই প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতাকে। হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের কাছেই কাম্য হয়ে উঠেছিল, কেননা চিহ্নিত রাজনৈতিক অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে তাদের কারো পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না খেলা এগিয়ে নেয়া। তাদের দরকার হয়ে পড়েছিল অরাজনৈতিক নতুন এক মৌলবাদী শক্তি, যাদের অরাজনৈতিকতা সাময়িকভাবে হলেও একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করবে এবং বিভ্রান্তির ঘুর্ণাবর্তে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতাকে হত্যা করা যাবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেও মন্থর এবং চাই কি ছকবন্দিও করে ফেলা যাবে। এই খেলায় বিএনপির পুরোধা খালেদা জিয়া ও তার অনুসারীরা তরুণদের গায়ে সেঁটে দিয়েছেন ‘নাস্তিকতা’র ছাপ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চাইছেন কিংবা যারা চাইছেন না তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী যেমন আছেন, তেমনি এমন অনেকেও আছেন যারা ধর্ম ছাড়াই সামাজিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। মূল প্রশ্নটি এখানে নাস্তিক-আস্তিকের নয়, মূল প্রশ্ন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ও সুবিচার পাওয়ার। কিন্তু খালেদা জিয়া বিষয়টি আস্তিক-নাস্তিকের ইস্যুতে পরিণত করে আন্দোলনকারীদের সামাজিকভাবেই…

শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয়েছে পর্যন্ত ঘটনাক্রমের ধারাবাহিক বৃত্তান্ত। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক আইনের বিধান নিয়ে আলোচনা। [..]

বাংলাদেশে কোন ব্যাক্তিকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার সবচেয়ে সহজ উপায় তাকে নাস্তিক আখ্যা দেয়া। সহজ কোথায় নাস্তিক তারাই যারা কোন স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং পরকালে বিশ্বাসী না। ইতিহাস বলে মুক্তচিন্তার বিকাশ রোধ করতেই মৌলবাদী তথা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বারবার ধর্মান্ধতার আশ্রয় নেয়। ভাষা আন্দোলনের সময় তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিধর্মীদের ভাষা বলেছে, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের ইসলামের শত্রু বলেছে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কারনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আমাদের বুদ্ধিজীবিদের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধে পাকিস্তান আমলের আইন বহাল রেখেছে সরকার, যুক্ত করা হয়েছে দমন-পীড়নের নতুন আইন। সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে সংবিধানে এসেছে পাকিস্তানি আদলে রাষ্ট্রধর্মের বিধান। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরোধে শাসকগোষ্ঠী মৌলবাদের দিকেই ঝুঁকেছে বারবার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে অটল শহিদ জননী জাহানারা ইমামকেও  নাস্তিক বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদের পাশাপাশি কোরাণের বরাত দিয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধকারী বিচারকদের বলা হয়েছে 'মুরতাদ', অনেকের মাথার দাম হাঁকা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। এই সবকিছুকেই কি বাংলাদেশের রাষ্ট্র  ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয় নি? ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আর জামাত শিবিরের নিষিদ্ধের দাবিতে যখন তরুন প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন গড়ে তলে, লাখো মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সেই উচ্চারণকে জামাত শিবির নাস্তিকদের আখড়া বলে প্রচার করবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও ঠিক তাই।  প্রতিবাদ মুখর মানুষ বিস্মিত হয়নি, খুঁজেছে নতুন পথ, আন্দোলনের নতুন কৌশল। শাহবাগের আন্দোলন দানা বেঁধেছিল মুলত বিভিন্ন বাংলা ব্লগ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, টুইটারে - ব্লগার, সেচ্ছাসেবক, কর্মী ও গবেষকদের অক্লান্ত লেখালেখি ও আলাপচারিতার সুত্র ধরে। জামাত শিবির আর তার পক্ষের শক্তিও তথ্যপ্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার পূর্ণমাত্রায় অপব্যাবহার করেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে নানা মিথ্যা ও ভুল তথ্য উপস্থাপন, আইনের অপ-ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছিলো তারা। শাহবাগ আন্দোলন  শুরুর আগেই ১৩ জানুয়ারি হামলা হয়েছিল ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এর ওপর। আন্দোলন চলাকালীন ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়া ব্লগার রাজীব হায়দারকে। তারপরই সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে  ছড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন উস্কানীমুলক লেখা, জামাত শিবির সমর্থকরা নামে বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে হুমকি দিতে থাকে ব্লগারদের। তাদের নাম তালিকা ছড়িয়ে দেয়া হয় নাস্তিক বলে। মূলতঃ  যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের  দাবিতে সোচ্চার ব্লগারদেরকেই লক্ষ্য নির্বাচন করে জামাত শিবির। অনেকের নাম ব্যাবহার করে নতুন নতুন ব্লগ আইডি তৈরি করে ধর্মকে কটুক্তি করে লেখা পোস্ট করা হয়। 'নাস্তিক' এবং 'ব্লগার' এ দুটি শব্দ সমার্থক হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে রাজনৈতিক…

আজকে যে প্রক্রিয়ায় জামায়াতিদের ফেইসবুক ব্লগ নিষিদ্ধ করতে বলা হচ্ছে, কালকে তো সেই একই প্রক্রিয়ায় আমার ফেইসবুক ব্লগও সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে। তাই আমি প্রথমেই জানান দিয়ে রাখি, নির্বাহী আদেশ, কিংবা মত প্রকাশের অধিকার নিষিদ্ধ করবার দাবি আমার নাই। তবে এই যে রুমী স্কোয়াড আওয়াজ তুলেছে, জামায়াত শিবিরকে নিয়ে আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দেবে না তারা, নিজেরাই তাদের বাপারে সিদ্ধান্ত নেবে — এটা ভীষণ আশাবাদী হবার মতো দিক। আমি এই স্পিরিটের প্রতি আমার নিরঙ্কুশ সমর্থন জানাচ্ছি। [...]

এবার কিন্তু ফেঁসে গেছে আওয়ামী লীগ। সত্যিই ফেঁসে গেছে। তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কিন্তু ধরেই নিয়েছিলো; তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তরুণ প্রজন্মের সূর্যসন্তান যারা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিদার যেসব ছেলেমেয়ে দেশব্যাপী শাহবাগ বানিয়ে তুলেছে, সেই তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নরম নরম কর্মসূচিই দিতে থাকবে। সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে চলবে। সবমিলে এদের সবাইকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’জনিত নির্বাচনী ইস্যুর মধ্যে গিলে খাওয়া যাবে। মোটকথা, দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চের সব তরুণদের নিজেদের ভোটের রাজনীতির অঙ্গীভূত করবার স্বপ্ন দেখেছিলো আওয়ামী-নেতৃত্বাধীন জোট। ব্যাপারটা এমন; সরকার আন্তজাতিক চাপ-ঠাপ দেখবে, দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক অবস্থা দেখবে, ভোটের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ দেখবে আর সেই মাফিক সিদ্ধান্ত নেবে; ওদিকে শাহবাগ-সহ দেশব্যপী যারা জড়ো হয়েছে, তারা সরকারের সাথেই তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পারপাজ সার্ভ করবে। এমনটাই চেয়েছিলো তো সরকার। কে না জানে, যুদ্ধাপরাধীরা সরকারের এখনকার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের একমাত্র রাজনৈতিক হাতিয়ার, যুদ্ধাপরাধীদের কাঙ্ক্ষিত বিচারটা এইখানে আওয়ামী লীগের কাছে ভোটের রাজনীতির থেকে বেশি কিছু নয়। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থাকা হাজারো তরুণতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিংবা জামায়াত নিষিদ্ধকরণের দাবিকে নিছক ভোট উৎরাবার হাতিয়ার হিসেবে দেখে না। এটা সত্যিইতো তাদের প্রাণের দাবি। সে-কারণেই আবির্ভাব রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের। সে-কারণেই আমার ফেইসবুক বন্ধু স্টেটাস লেখেন: নির্বাচনের আগে `যুদ্ধাপরাধ‘ নামে একটি সেনসেশনাল প্রোডাক্ট বাজারে ছেড়েছে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ, তবে রুমী স্কোয়াডের জন্য সুবিধা করতে পারছে না। জয় শাহবাগ, জয় বাংলা!-- সাঈফ ইবনে রফিক একটা বিভেদ তবে শুরু হয়েছে এবার সত্যিই। শুরু হয়েছে এমন না। প্রকট হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভেদ আগে থেকেই ছিলো। সেটা হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াতি রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাণের দাবির সাথে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে রাজনীতির বিভেদ। এই বিভেদই দৃশ্যমান হয়ে রুমি স্কোয়াডের আমরণ অনশনের নামে হাজির হয়েছে দৃশ্যপটে। রুমী স্কোয়াডের সোজা কথা, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত-নিষিদ্ধের হিসেব-নিকেশ করার সুযোগ তারা দেবে না সরকারকে, জামায়াতকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এটাই তাদের দাবি। নইলে তারা অনশন করেই মরে যাবে! এখানে রাজনীতির নামগন্ধও নেই। এখানে ভোট জেতা-হারার হিসেব-নিকেশও নেই। এখানে আছে পরিচ্ছন্ন আবেগ। মানবতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আপাত-মানবিক এক আবেগ। এই আবেগের তাৎপর্য যাই হোক না কেন, এই আবেগের গুরুত্ব বিশাল। এই আবেগ সোজা কথায় ঘোষণা করেছে, সরকারকে আর…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.