বাংলাদেশে কোন ব্যাক্তিকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার সবচেয়ে সহজ উপায় তাকে নাস্তিক আখ্যা দেয়া। সহজ কোথায় নাস্তিক তারাই যারা কোন স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং পরকালে বিশ্বাসী না। ইতিহাস বলে মুক্তচিন্তার বিকাশ রোধ করতেই মৌলবাদী তথা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বারবার ধর্মান্ধতার আশ্রয় নেয়। ভাষা আন্দোলনের সময় তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিধর্মীদের ভাষা বলেছে, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের ইসলামের শত্রু বলেছে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কারনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আমাদের বুদ্ধিজীবিদের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধে পাকিস্তান আমলের আইন বহাল রেখেছে সরকার, যুক্ত করা হয়েছে দমন-পীড়নের নতুন আইন। সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে সংবিধানে এসেছে পাকিস্তানি আদলে রাষ্ট্রধর্মের বিধান। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরোধে শাসকগোষ্ঠী মৌলবাদের দিকেই ঝুঁকেছে বারবার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে অটল শহিদ জননী জাহানারা ইমামকেও নাস্তিক বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদের পাশাপাশি কোরাণের বরাত দিয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধকারী বিচারকদের বলা হয়েছে ‘মুরতাদ’, অনেকের মাথার দাম হাঁকা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। এই সবকিছুকেই কি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয় নি?
৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আর জামাত শিবিরের নিষিদ্ধের দাবিতে যখন তরুন প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন গড়ে তলে, লাখো মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সেই উচ্চারণকে জামাত শিবির নাস্তিকদের আখড়া বলে প্রচার করবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও ঠিক তাই। প্রতিবাদ মুখর মানুষ বিস্মিত হয়নি, খুঁজেছে নতুন পথ, আন্দোলনের নতুন কৌশল। শাহবাগের আন্দোলন দানা বেঁধেছিল মুলত বিভিন্ন বাংলা ব্লগ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, টুইটারে – ব্লগার, সেচ্ছাসেবক, কর্মী ও গবেষকদের অক্লান্ত লেখালেখি ও আলাপচারিতার সুত্র ধরে। জামাত শিবির আর তার পক্ষের শক্তিও তথ্যপ্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার পূর্ণমাত্রায় অপব্যাবহার করেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে নানা মিথ্যা ও ভুল তথ্য উপস্থাপন, আইনের অপ-ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছিলো তারা। শাহবাগ আন্দোলন শুরুর আগেই ১৩ জানুয়ারি হামলা হয়েছিল ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এর ওপর। আন্দোলন চলাকালীন ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়া ব্লগার রাজীব হায়দারকে। তারপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন উস্কানীমুলক লেখা, জামাত শিবির সমর্থকরা নামে বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে হুমকি দিতে থাকে ব্লগারদের। তাদের নাম তালিকা ছড়িয়ে দেয়া হয় নাস্তিক বলে। মূলতঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ব্লগারদেরকেই লক্ষ্য নির্বাচন করে জামাত শিবির। অনেকের নাম ব্যাবহার করে নতুন নতুন ব্লগ আইডি তৈরি করে ধর্মকে কটুক্তি করে লেখা পোস্ট করা হয়। ‘নাস্তিক’ এবং ‘ব্লগার’ এ দুটি শব্দ সমার্থক হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মুখে মুখে। অনেক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন বিচারের দাবিকে স্তিমিত করতেই এই আস্তিকতা-নাস্তিকতা বিতর্কের সৃষ্টি, যা বাংলাদেশের রাজনীতির একটি প্রাচীন কৌশল। গণজাগরণ মঞ্চে উচ্চারিত হয় ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তার পুরো দল নিয়ে মাঠে নামেন শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। ২২ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, জুমার নামাজের পর পুরো দেশে গনজাগরণ মঞ্চে হামলা, সিলেটে শহীদ মিনার ভাঙ্গা, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা, সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ নাশকতায় তার সম্পৃক্ততা ও উস্কানীর প্রমাণ পাওয়া যায়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের, সংগ্রামের ও ভালবাসার সমস্ত প্রতীকের প্রতি এই অন্ধ আক্রোশ বিস্মিত করে বিচারের দাবিতে সোচ্চার মানুষকে। মাহমুদুর রহমানের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবি করে গনজাগরণ মঞ্চ। সরকার বাহাদুর চুপ থাকে। এরই মাঝে জামাতকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে নিজেদের পুরোনো অবস্থান আরও স্পষ্ট করে বিএনপি। শাহবাগের গনজাগরণ মঞ্চের তরুণদের ‘নাস্তিক’, ‘বিভ্রান্ত’ এবং ‘নষ্ট’ বলেন বিরোধীদলীয় নেতা। সামরিক সৈরশাসক সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদও শাহবাগ আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী আলেমদের কাছ থেকেও যুদ্ধাপরাধ, নাস্তিকতা, শাহবাগ, জামাতের রাজনীতি প্রসঙ্গে নানান রকম বিবৃতি আসতে থাকে। মতাদর্শের সাথে সাথে ধর্মীয় ব্যাখ্যা পাশ ফিরতে থাকে বারবার।
এরই মধ্যে মঞ্চের আওয়ামী ও বাম ছাত্র সংগঠন এর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, নানান বিতর্ক ওঠে মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে নিয়ে। মঞ্চ থেকে বলা হয় বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ যার যার প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় পেছনে ফেলে মূল দুটি দাবিতে এক হয়েছেন: যুদ্ধাপরাধীদের সাজা এবং জামাতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, দেশে-বিদেশে আন্দোলনের ব্যাপ্তি এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে সব শ্রেণী পেশার মানুষের একাত্মতা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে জন দাবীর এক অনন্য প্রকাশ, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংস রাজনীতিতে এক উজ্জল ব্যতিক্রম। জনতার রাজনীতিকে, শক্তির উত্থানকে মোকাবেলা করতে সবচেয়ে সহজলভ্য আর পরীক্ষিত অস্ত্র নাস্তিকতাই সমাদৃত হলো।
আস্তিকতা নাস্তিকতা বিতর্কের তুঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কিছু দু’দিক রক্ষা করা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন কোনো গণ মাধ্যম ধর্মকে অবমাননা করে কারো লেখা বা উক্তি প্রচার বা প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে তিনি বলেন কমিউনিটি ব্লগগুলো যদি এমন তথ্য, লেখা বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয় যা সামাজিক অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করে, তাহলে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকার ব্লগ নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। অতীতে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে তিনি এও বলেছিলেন যে কিছু কিছু গোষ্ঠী এদেরকে ইসলাম বিরোধী বলে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা ভিত্তিহীন (http://newagebd.com/detail.php?date=2013-02-21&nid=40784#.UWLRJDfPvDd)। কিন্তু সরকারকে প্রতিক্রিয়াশীলতা ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থানের কারণে চিহ্নিত গণমাধ্যম বা সংবাদকর্মীদের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অনেক ব্লগারদের নাম করে এমন কি মসজিদে মসজিদে বিলি হতে থাকে ধর্মবিরোধী লেখা। প্রচার, প্রসার বা উদ্ভাবন কোনটিতেই বাধা দেয়নি সরকার।
এবার ‘রঙ্গমঞ্চে’ প্রবেশ করে হেফাজত-এ-ইসলাম নামে প্রায় নামগোত্রহীন, মূলত চট্টগ্রামকেন্দ্রিক একটি ‘ইসলামী’ সংগঠন। দাবি করা হয় এদের সাংগঠনিক শক্তি দেশের বিভিন্ন আলেম এবং কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক। তাদের মূল দাবি নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি। শাহবাগ আন্দোলনের মূল মঞ্চের যখন ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম সফরের পালা, তখন একই জায়গায় পাল্টা সমাবেশ ডাকে হেফাজত। জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে দিলে তলোওয়ার নিয়ে বসে থাকার হুমকি দেয় তারা। সরকার জারি করে ১৪৪ ধারা, গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বকে মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এই ঘটনা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সন্ত্রাসমূলক কিছু ঘোষণার কাছে সরকারের নতি স্বীকারের কেবল শুরু।
সভা, সমাবেশ, বক্তৃতা-বিবৃতি এসবের মধ্যে হেফাজত-এ-ইসলাম সারা দেশ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছয় এপ্রিল লং মার্চ এর ঘোষণা দেয়। জোরে সোরে বিবৃত হয় তাদের তের দফা দাবি। যেখানে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি থেকে শুরু করে ভাস্কর্য সরানো, জনজীবনে নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা, কাদিয়ানীদের প্রকাশনা বন্ধ করা সহ এমন সব দাবী আছে যার সাথে জামাত-এ-ইসলাম এর গঠনতন্ত্রের পার্থক্য করা মুশকিল। একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত সংগঠনের সংবিধানবিরোধী দাবীর মুখেও সরকার নানাভাবে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেষ্টা করে। বারবার ব্লগারদেরদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া, বিচার, আইন পরিবর্তনের আশ্বাস দেয়া হয়। ১৮৪ জন ব্লগারের শাস্তি চেয়ে নাম তালিকা ধরিয়ে দেয় হেফাজত। বিভিন্ন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে প্রশাসন। ব্লগারদের অনুসরণ, জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে।
২৬ মার্চ জামাতে ইসলাম নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি গণজাগরণ মঞ্চের আল্টিমেটাম অপূর্ণ থাকায় শহীদ রুমি স্কোয়াডের ছয় তরুণ আমরণ অনশন শুরু করেন। ছয় দিনের মাথায় অনশনকারীর সংখ্যা যখন ২৬ তখন মন্ত্রীর সংহতি ও দাবি না মানলে পদত্যাগের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করেন তরুনরা। এই তরুণরা ঘরে ফিরতে না ফিরতেই সরকার তার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়ে নেয়। নাহ! জামাত বা হেফাজতের বিরুদ্ধে নয়! তবে কি তাদের পক্ষে? রাতের অন্ধকারে ডিবি গ্রেপ্তার করে তিনজন ব্লগারকে। পরদিন তাদেরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোডেমসহ পেশাদার অপরাধীর মত মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। এমনকি হাতে হাত কড়াও পরানো হয় ছবি তোলার সময়। ধর্মান্ধদের সন্তুষ্ট করতে সরকারের কি অদ্ভুত প্রহসন। এই ব্লগারদের লেখা যারা নিয়মিত পড়েন তাদের সবারই মত এদের লেখনি ছিল যুদ্ধাপরাধের বিপক্ষে, মুক্তচিন্তার পক্ষে। বিস্ময়ের আরও বিষয় বাকি ছিল তাদের জন্য। খুব কাছাকাছি সময়ে আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলার অভিযোগে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হল, একই সাথে গ্রেপ্তার করা হলো তাকেও। অথচ তিনি অভিযোগ করেছিলেন তার নামে ভুয়া ব্লগ একাউন্ট করে ধর্মবিরোধী লেখা ছড়ানোর, সেই একাউন্টে নানা অসঙ্গতি ছিল স্পষ্ট এবং সবার জানা। তারপরও কেন এই গ্রেপ্তার?
যাদের সন্তুষ্ট করতে সরকারের এত আয়োজন তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিল দাবী ১৮৪ জনের গ্রেপ্তার ও বিচার, তের দফা পূরণ …এত অল্পতে তুষ্ট নয় তারা। বলা হলো ৬ এপ্রিল এর লং মার্চে বাধা দিলে সরকারকে নাস্তিক ঘোষণা করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান মোট ১১ জন ব্লগারকে চিন্হিত করেছে সরকার, আরো ৭ জনকে ধরা হবে শীঘ্রই। আস্তিকতার দৌড়ে গণজাগরণ মঞ্চ জোরপূর্বক বন্ধের মতামতও দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল এলো। চলেও গেল। হরতাল, অবরোধের পরও ব্যাপক জনসমাগম হয়েছে লংমার্চে। অংশগ্রহনকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন ব্লগ কি বা ব্লগাররা কিভাবে ধর্ম অবমাননা করেছেন তা তারা জানেননা, হুজুরের কথা শুনে এসেছেন। তাদের কিছু কিছু মন্তব্য অনলাইন এ হাসির খোরাক যুগিয়েছে অনেককে। কিন্তু এই অজ্ঞতা কি ঠাট্টার চেয়েও বেশি উদ্বেগের নয়? একজনের ধর্মবোধকে পুজি করে যখন আরেকজনে কণ্ঠ রোধ করা হয়, বিষয়টি আর হাস্য পরিহাসের থাকেনা। থেকে দিন জুড়ে শর্তভঙ্গ করে রাজনৈতক বক্তব্য, রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য, ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এমনকি রাতের বেলা গণজাগরণ মঞ্চ দখলের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। সমাবেশ থেকে ফেরার সময় কিছু কর্মী তিন দিক থেকে হামলার চেষ্টা করেছে গণজাগরণ মঞ্চে। একজন নারী সাংবাদিককে সমাবেশস্থলে উপস্থিত থাকার কারণে লাঞ্চিত করা হয়েছে, কটুক্তির শিকার হয়েছেন একাধিক নারী সাংবাদিক। সবশেষে ১৩ দফা পূরণ না হলে ৫ মে ঢাকা ঘেরাও আর গণজাগরণ মঞ্চ দখলের হুমকি দিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন হেফাজত কর্মীরা। নিজেদের জামাতের সাথে সম্পর্কহীন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করে আসছিল সংগঠনটি। ৬ এপ্রিল যত এগিয়ে আসতে থাকে ততই বিভন্ন প্রমাণ মিলতে থাকে জামাত ও হেফাজতের সংশ্লিষ্টতার। লং মার্চ এ নৈতিক সমর্থনের পর মঞ্চে সংহতি জানায় বিএনপি। খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা হয়েছে এরশাদ ও বিএনপির পক্ষ থেকে। লং মার্চের আগে ও পরে বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে সমর্থন জানিয়েছে জামাত। সরকার বলেছে তের দফা বিবেচনা করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর হেফাজতকে আশ্রয়, প্রশ্রয়, সমর্থন সবকিছু মিলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পচনের একটা আনুষ্ঠানিক রূপ আমরা দেখেছি তিন ব্লগারের গেফ্তারের পর আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। আইনমন্ত্রী বলেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ সংশোধন করে ‘ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত’ করার শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডের বিধান করা হবে। এছাড়াও বলা হয়েছে দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় শাস্তি বাড়ানোর কথা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার অভিযোগ বিচারে সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করবে, সেজন্য বিচারক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এখানে মনে রাখা ভালো ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রথম সাইবার ট্রাইবুনাল স্থাপন করা হয় এবং সেক্ষেত্রেও মোবাইল ফোন ও ফেসবুকের কারণে সংঘটিত অপরাধের ওপর জোর দেয়া হয়।
প্রথমেই যে প্রশ্নটি মনে আসে, কথা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন নিয়ে, তার প্রয়োগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন চলছে … তথ্যমন্ত্রী কোথায়? উপস্থিত দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে হাসানুল হক ইনুর আগের বক্তব্যের এত অমিল কেন?
আপাতত আরও কিছু বিষয় দেখে নেই আমরা:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এর যে ৫৭ ধারার সংশোধনের কথা বলছে সরকার সেই ধারাটি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ২০১০ সালে রুল নিশি জারি করেছেন হাই কোর্ট বিভাগ। ফেব্রুয়ারী ২০১২ তে আদালত আদেশ দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃতদের যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাংবাদিকদের সামনে হাজির না করে। দন্ডবিধির ৫৪ ধারায় যেভাবে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা উচ্চতর আদালতে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলার রায়ের নির্দেশনার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। তাহলে উগ্র ধর্মবাদীদের মদদ দিতে গিয়ে আদালতের কতগুলো আদেশ, আইনের কতগুলো বিধান লঙ্ঘন করেছে সরকার? কেন? কার স্বার্থে?
সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে সরকার কি তবে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে? ধর্মান্ধদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোটের রাজনীতির পুরোনো খেলা আর অন্যদিকে ভিন্নমত ভিন্নকন্ঠ রুদ্ধ করে দেয়া?
আসুন তাহলে একটু দেখে নেই লীগ সরকারের আমলে অনলাইন মাধ্যমে কতবার খড়গ নেমেছে?
১। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনা সদস্যদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় ইউটিউব বন্ধ করা হয়
২। মে, ২০১০ সালে মহানবীকে নিয়ে কার্টুন ও রাজনীতিবিদদের (মতান্তরে প্রধানমন্ত্রীকে) নিয়ে ব্যঙ্গ চিত্র থাকার কথা বলে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়। যদিও বিটিআরসি-র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ জানানো হয়নি।
৩। অগাস্ট ২০১২ তে সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা করে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্যবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে আদালতে তলব করা হয়।
৪। ২০১২ সালেই ধর্ম অবমাননার কথা বলে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচটি ফেসবুক পেজ ও একটি অজানা ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা দেন হাই কোর্ট বিভাগ। এসম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
৫। ‘ইনোসেনস অব মুসলিম নামে’ ধর্ম অবমাননাকারী কথিত একটি ‘মুভি’ লিংক থাকার কারণে আবার ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয় দীর্ঘ সময়ের জন্য।
৬। কমিউনিটি ব্লগ ও ইন্টারনেটে অন্যান্য প্রকাশনা নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকার ‘অনলাইন মিডিয়া রেগুলেশন’ এর খসড়া করে। সেখানে এমন সব শর্ত ছিল যা প্রয়োগ করলে ইন্টারনেট এ সাধারণ মানুষের পক্ষে তথ্য প্রকাশ ও ব্লগ এ অংশ নেয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রতিবাদের মুখে খসড়া চূড়ান্ত করা থেকে পিছু হঠে সরকার। প্রশ্ন জাগছে যে কাজটি আইন প্রনয়নের মাধ্যমে তখন করা যায়নি, সে কাজটিই কি আজ ধর্মান্ধতার সুযোগ নিয়ে বৈধ করতে চাইছে না সরকার? জবাবদিহিতাহীন আটক , গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভীতি ছড়িয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশে নিরুৎসাহিত করছে না মানুষকে?
ইন্টারনেট এ নিয়ন্ত্রণ আরোপে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীতিনির্ধারকদের কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, ক্ষেত্রবিশেষে নিয়ন্ত্রণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ‘অনলাইন মিডিয়া রেগুলেশনের’ খসড়ার ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় – সাইবার ‘ল এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ই-কমার্স, কপিরাইট এসব দিকে অগ্রসরতা বিবেচনা না করে সরকার কেবল ধর্ম আর ভাবমূর্তির প্রশ্নেই ঘুরপাক খেয়েছে।
যে ৫৭ ধারার সংশোধন নিয়ে এত কথা, আসলে কি বলা আছে সেখানে?
৫৭। ইলেক্ট্রনিক ফর্মে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দন্ড| ১) কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছকৃতভাবে ওয়েবসাইট এ বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা, অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে ইহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।
এই অপরাধের শাস্তি কি? অনধিক ১০ বছরের কারাদন্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকার অর্থদন্ড। এছাড়াও এই একই কারণগুলোর জন্য ধারা ৪৬ এ বিটিআরসি কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কম্পিউটার রিসোর্সের মাধ্যমে তথ্য সম্প্রচারে বাধা দেয়ার নির্দেশ দিতে পারে।
প্রশ্ন
এক: ‘পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদধ হইতে পারেন’ এই শব্দগুলোর কি কোনো গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা আছে?
দুইঃ ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের মানদন্ড কি?
তিনঃ রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সংজ্ঞা কি?
চার: সব ধরনের কাজের জন্য একই শাস্তির বিধান কেন?
পাঁচ: বিচারকের জন্য নির্দেশনা কোথায়?
ছয়: যদি একই কাজ ছাপার মাধ্যমে করা হয় তাহলে দন্ডবিধিতে শাস্তি কেবল দুই বছর, বৈষম্য হয়ে গেলো না?
সাত: যখন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ফাঁসির দাবি করা হয়, সেটা জন দাবীর একটি অভিব্যক্তি এবং জাগরণ মঞ্চ থেকে বারবার বলা হয়েছে ট্রাইবুনালের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না আন্দোলন শুরু হয়েছিল অভিযোগ প্রমাণের পরও কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায়। সরকার বলেছে এ দাবি হঠকারী অথচ অভিযোগ প্রমাণের আগেই সরকার বারবার বলছে ব্লগারদের শাস্তি হবে দশ বছরের কারাদন্ড ও এক কোটি টাকা অর্থদন্ড। আইন প্রণেতারা যদি সাধারণের চেয়েও সাধারণ হন তবে রাজনীতি কি ভ্রান্ত পথেই চলবে না?
এবার আসুন আইনটি আবার একটু দেখি।
সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে, অনলাইনে অসত্য তথ্য প্রকাশ করে জামাত শিবির কি বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি? যেসব যুধ্ধাপ্রাধীরা একাত্তরে পুরো বাংলায় তান্ডব ছড়িয়েছে, নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, লুট করেছে, পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, একাত্তরের পর যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য একটিবার ক্ষমা চায় নি, বারংবার নিজেদের পাকিস্তানপন্থী অবস্থান কে ধর্মের নামে রক্ষা করতে চেষ্টা করেছে, ৭১ থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের মেধাবী মানুষদের নির্বিচার হত্যা করে আসছে, তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে, অনলাইন এ প্রচার চালিয়ে তারা কি বিচার প্রার্থী প্রতিটি মানুষএর অনুভুতিকে আঘাত করেনি?
তারা কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিকে নিয়ে দিনের পর দিন কুত্সা রটিয়ে মানুষকে উস্কে দেয় নি?
তারা কি গণজাগরণ মঞ্চে প্রতিকী ফাঁসি দিতে গিয়ে মারা গেছে বলে জীবিত মানুষের ছবি এডিট করে বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়ার জন্য একটি সংবাদপত্রের লোগো দিয়ে ছড়িয়ে দেয় নি?
বিচারের দাবিতে ঘর ছেড়ে আসা, দিন ভর খেটে ক্লান্ত দেহে বিচারের দাবিতে রাত ভোর করা প্রতিবাদী মুখ নিয়ে কি তারা আপত্তিকর, মিথ্যা ও অশ্লীল তথ্য প্রচার করেনি? আন্দোলনে সংহতি জানানো সব তরুণ-তরুনীদের ব্যস্যা-গাজাখোর বলে প্রচার করে নি?শাহবাগে অশালীন আচরণ হচ্ছে এরকম মিথ্যা ছবি কি তারা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় নি?
ছাত্রলীগ কর্মীরা মহিলা পুলিশকে ধর্ষণ করেছে এরকম বানোয়াট ছবি কি তারা প্রচার করেনি ?
তারা কি কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনকে সাঈদীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন বলে প্রচার করে নি ?
তারা কি ব্লগারদের হত্যার হুমকি দেয় নি?
তারা কি শাহবাগ আন্দোলন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা সমস্ত কিছুকে নাস্তিকদের তৈরী বলে প্রচার করে নি?
তবে কে অপরাধী কে নিরপরাধ?
কোন কারনে আমার ব্লগ বন্ধ হয় আর ‘বাশের কেল্লা’, ‘ইসলামী ছাত্রী শিবির’ আর ‘কাফির জালিম কাঁপছে খিলাফত আসছে’ এই ফেসবুক পেজগুলো টিকে থাকে? এসব পেজে অনেক পোস্ট দেখে সরকারকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয় ধর্মানুভুতি কি শুধু একটি ধর্মের মানুষের জন্য সংরক্ষিত অধিকার?
কেন বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন ফাঁস ও প্রচারের বিরুদ্ধে এখনো কোন কার্যকর ভুমিকা নেই সরকারের?
কেন রামুতে বৌদ্ধমন্দির ধংসের পেছনে কথিত ফেসবুক পোস্টের হোতাদের ধরা হয় নি?
কেন আসিফ মহিউদ্দিন অভিযোগ করেও নিজেই গ্রেফতার হন? যারা ভুয়া একাউন্ট তৈরি করে তাদের কেন সনাক্ত করা হয়না?
কেন আমার দেশ এবং অন্যান্য পত্রিকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি?
কেন ইউটিউবে ভিডিও দেখে, স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে যারা ধর্মীয় উস্কানী তৈরী করছে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছেনা?
এরই মধ্যে পত্রিকায় এসেছে শিবির কর্মীরা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে ভাংচুর করে। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটির ভিত্তিতে দেশের মোবাইল সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কি তথ্য চেয়েছে সরকার, কোন কমিটি গঠন করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম সাইবার ট্রাইবুনাল এর সামনে কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনে কোন ধারায় মামলা করেছে সরকার?
না। করে নি। কারণ যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, যারা মুক্ত চিন্তার চর্চা করে তাদের বিনাশেই শাসকের জয়। যারা ধর্মান্ধ তাদের তোষণ করলে ভোট সুনিশ্চিত, এমনি ধারণা শাসকদের। তাই তো সব প্রতিক্রয়াশীল আর তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি আজ একই কাতারে দাঁড়িয়ে। দেখে শুনে তাই লালন এর সেই চিরায়ত সুরই মনে পড়ে:
“সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না
জাত গেল জাত গেল বলে
এ কি আজব কারখানা”
রোকেয়া চৌধুরী
Rokeya Chowdhury has a keen interest in human rights issues and most of her work is dedicated to concerns over human rights. Rokeya completed her LL.B. (Hons.) in 2009 and LL.M. in 2011 from the Faculty of Law, University of Dhaka. She has also completed LL.M. Thesis Program from the Institute of Comparative Law, McGill University in 2013. Rokeya's research areas involve women rights, indigenous rights, child rights, international crimes, media and information technology law and comparative law. Her latest research work in McGill University was interdisciplinary inasmuch as it involved law, anthropology and political science in the context of land and resource alienation in the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh. Her most recent works involve "fatwa" instigated violence and right to veil/unveil in Bangladesh. Rokeya holds a teaching position in Northern University Bangladesh. She has also worked with South Asian Institute of Advanced Legal and Human Rights Studies (SAILS) and Dr, Kamal Hossain and Associates.
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৪ comments
নুর নবী দুলাল - ৯ এপ্রিল ২০১৩ (৯:১৫ অপরাহ্ণ)
চমৎকার একটি লেখা। শেয়ার দিলাম।
Hasan A Chowdhury - ৯ এপ্রিল ২০১৩ (৯:৫৯ অপরাহ্ণ)
আইনি অনেক ব্যাখ্যা জানা হল। বিশেষ করে আমার দেশ পত্রিকার বিষয়টি খটমট, সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা, কারণ আইনি না রাজনৈতিক?
রায়হান রশিদ - ১৩ এপ্রিল ২০১৩ (৮:০০ পূর্বাহ্ণ)
কিছু বলার বাকি নেই, সবই রোকেয়া লিখে ফেলেছে। সব কথার শেষ কথা হল – কেমন দেশ আমরা চাই সেটাই এখন আমাদের স্থির করতে হবে। শাহবাগের জন্য তো বটেই, শাহবাগ পরবর্তী বাংলাদেশের জন্যও। আর সঠিক পথ সচরাচর সহজ পথ হয় না, তাই সহজতর বিকল্প পথের মাশুল কিন্তু সবাইকেই একদিন না একদিন দিতে হয়।
ধন্যবাদ এই পোস্টটির জন্য।
নবরস মুন্সি - ২০ মে ২০১৩ (১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
সামনে যা পায় তাই খেয়ে ফেলে, মতিঝিলের গাছ হোক, কারো একটা স্ট্যাটাস হোক, এরা সব খেয়ে ফেলে, এরা জামাত, এদেরকে আমরা পুষি, এরা আমাদের সবার ভেতরের খাদক, ভেতরের খাদকটাকে গলা টিপে ধরুন, বাইরের জামাতটাকে নিষিদ্ধ করতে কাজ করুন, তা যদি না করেন, তাহলে পোষেন জামাত পোষেন আর বেহাত হয়ে যান।