শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয়েছে পর্যন্ত ঘটনাক্রমের ধারাবাহিক বৃত্তান্ত। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক আইনের বিধান নিয়ে আলোচনা। [..]

বাংলাদেশে কোন ব্যাক্তিকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার সবচেয়ে সহজ উপায় তাকে নাস্তিক আখ্যা দেয়া। সহজ কোথায় নাস্তিক তারাই যারা কোন স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং পরকালে বিশ্বাসী না। ইতিহাস বলে মুক্তচিন্তার বিকাশ রোধ করতেই মৌলবাদী তথা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বারবার ধর্মান্ধতার আশ্রয় নেয়। ভাষা আন্দোলনের সময় তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিধর্মীদের ভাষা বলেছে, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের ইসলামের শত্রু বলেছে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কারনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আমাদের বুদ্ধিজীবিদের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধে পাকিস্তান আমলের আইন বহাল রেখেছে সরকার, যুক্ত করা হয়েছে দমন-পীড়নের নতুন আইন। সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে সংবিধানে এসেছে পাকিস্তানি আদলে রাষ্ট্রধর্মের বিধান। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরোধে শাসকগোষ্ঠী মৌলবাদের দিকেই ঝুঁকেছে বারবার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে অটল শহিদ জননী জাহানারা ইমামকেও  নাস্তিক বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদের পাশাপাশি কোরাণের বরাত দিয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধকারী বিচারকদের বলা হয়েছে 'মুরতাদ', অনেকের মাথার দাম হাঁকা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। এই সবকিছুকেই কি বাংলাদেশের রাষ্ট্র  ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয় নি? ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আর জামাত শিবিরের নিষিদ্ধের দাবিতে যখন তরুন প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন গড়ে তলে, লাখো মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সেই উচ্চারণকে জামাত শিবির নাস্তিকদের আখড়া বলে প্রচার করবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও ঠিক তাই।  প্রতিবাদ মুখর মানুষ বিস্মিত হয়নি, খুঁজেছে নতুন পথ, আন্দোলনের নতুন কৌশল। শাহবাগের আন্দোলন দানা বেঁধেছিল মুলত বিভিন্ন বাংলা ব্লগ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, টুইটারে - ব্লগার, সেচ্ছাসেবক, কর্মী ও গবেষকদের অক্লান্ত লেখালেখি ও আলাপচারিতার সুত্র ধরে। জামাত শিবির আর তার পক্ষের শক্তিও তথ্যপ্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার পূর্ণমাত্রায় অপব্যাবহার করেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে নানা মিথ্যা ও ভুল তথ্য উপস্থাপন, আইনের অপ-ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছিলো তারা। শাহবাগ আন্দোলন  শুরুর আগেই ১৩ জানুয়ারি হামলা হয়েছিল ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এর ওপর। আন্দোলন চলাকালীন ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়া ব্লগার রাজীব হায়দারকে। তারপরই সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে  ছড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন উস্কানীমুলক লেখা, জামাত শিবির সমর্থকরা নামে বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে হুমকি দিতে থাকে ব্লগারদের। তাদের নাম তালিকা ছড়িয়ে দেয়া হয় নাস্তিক বলে। মূলতঃ  যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের  দাবিতে সোচ্চার ব্লগারদেরকেই লক্ষ্য নির্বাচন করে জামাত শিবির। অনেকের নাম ব্যাবহার করে নতুন নতুন ব্লগ আইডি তৈরি করে ধর্মকে কটুক্তি করে লেখা পোস্ট করা হয়। 'নাস্তিক' এবং 'ব্লগার' এ দুটি শব্দ সমার্থক হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে রাজনৈতিক…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.