আদর্শের নিরিখে হতাশা শিক্ষার সংজ্ঞা নিয়ে চিন্তুকদের মধ্যে সবচেয়ে দ্বিধার মধ্যে ছিলেন বোধহয় পাওলো ফ্রেইরি। বিশেষ করে রুশোর শিক্ষাদর্শন প্রথমদিকে তাঁকে বেশ প্রভাবিত করেছিলো। এই দ্বিধার একটা কারণ হতে পারে, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতির সাথে শিক্ষাকে পরিপূর্ণ অর্থে মেলানো খুবই কষ্টকর, যদিও রুশো বিশ্বাস করতেন মানুষ চাইলে সব শিক্ষা প্রকৃতির কাছ থেকেই পেতে পারে। আবার সমাজকাঠামো, রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়া কিংবা এ ধরনের ফেনোমেননগুলো থাকলে প্রকৃতির কাছ থেকে ঠিক সরলভাবে শিক্ষা আশা করা যায় না। প্রাকৃতিক বিষয়গুলো ঠিক যতোটা সহজ-সরল বলে রুশোর কাছে প্রতিভাত হয়েছিলো, বিষয়গুলো আসলে ততোটা একরৈখিক নয়। তার ওপর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাভেদে শিক্ষা ও তার পরবর্তী গন্তব্য কখনোই এক হয় না। ফলে ফ্রেইরি একটা সময় পার করে রুশোর শিক্ষাদর্শন-বিশ্বাস থেকে সরে এসেছিলেন। শিক্ষা নিয়ে এই ডিসকোর্সগুলো খুব আলোচিত হয়েছিলো বিশেষ করে সত্তরের দশকে। এই সময়ে আবার 'সবার জন্য শিক্ষা' জাতীয় ধারণাগুলো সবেমাত্র দানা বাধতে শুরু করেছে। সে সময়ই যে প্রশ্নটি নিয়ে শিক্ষাচিন্তুকরা দ্বিধায় পড়েন, সেটি হলো— শিক্ষা কেন? দেখা গেলো, এবং কোথাও কোথাও স্বীকারও করে নেওয়া হলো— এর সরল সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয় এবং এর প্রয়োজন নেই। যেহেতু বর্তমান পৃথিবী রাষ্ট্রকাঠামো-নির্ভর, সুতরাং রাষ্ট্রই নিজ অবস্থাভেদে এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে। ফ্রেইরি তখন বলেছিলেন— রাষ্ট্র পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে শিক্ষার গন্তব্যে পৌঁছানো মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হবে, আর এ ধরনের রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে পক্ষপাত দেখানো। না হলে রাষ্ট্রের পক্ষেও টিকে থাকা সম্ভব নয়। কথা হলো, রাষ্ট্র কার প্রতি পক্ষপাত দেখায়? স্বাভাবিক উত্তর হচ্ছে— অর্থ যেদিকে, রাষ্ট্র্ও সেদিকেই। তাহলে গরীব, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত কিংবা প্রান্তিক মানুষের শিক্ষার কী হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই কিন্তু ফ্রেইরির পেডাগজি অব দ্যা অপ্রেসড। ২. আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন শিক্ষানীতির কথা ছিলো। ক্ষমতায় আসার পর তারা পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের দিকে না গিয়ে একটা কমিটি করে যাদের কাজ হলো নির্দিষ্ট দুটি কমিশন রিপোর্ট ও একটি অকার্যকর শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা, বলা ভালো সেটিকে আপডেট করা। কমিটি তাদের কাজ করেছে, যদিও কাজের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিলো প্রথমদিকে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চূড়ান্ত খসড়া) ওয়েবে প্রকাশের পর অনেকের সে আপত্তি কেটে গেলেও সেখানে আরও নতুন কিছু…
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের দিকে না গিয়ে একটা কমিটি করে যাদের কাজ হলো নির্দিষ্ট দুটি কমিশন রিপোর্ট ও একটি অকার্যকর শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা। কমিটির কাজের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিলো প্রথমদিকে। তা কেটে গেলেও সেখানে নতুন কিছু কথার জন্ম হয়েছে [...]