ছোট ছোট কোমলমতি শিশু বালিকারা মাথায় ঝুটি বেঁধে, কেউ-বা বেণী দুলিয়ে কাঁধে বা হাতে ব্যাগ নিয়ে তাদের প্রিয় স্কুলপ্রাঙ্গণে যায়। এটা চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ত এলাকা নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয় ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার দৃশ্য। স্কুল দুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ঐতিহ্যবাহী স্কুল দুটির উপর সম্প্রতি শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে চট্টগ্রামের নির্বাচিত হ্যাট্রিক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। [...]

ছোট ছোট কোমলমতি শিশু বালিকারা মাথায় ঝুটি বেঁধে, কেউ-বা বেণী দুলিয়ে কাঁধে বা হাতে ব্যাগ নিয়ে তাদের প্রিয় স্কুলপ্রাঙ্গণে যায়। এটা চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ত এলাকা নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয় ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার দৃশ্য। স্কুল দুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ঐতিহ্যবাহী স্কুল দুটির উপর সম্প্রতি শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে চট্টগ্রামের নির্বাচিত হ্যাট্রিক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিকে শিক্ষাঙ্গন হিসেবে না দেখে বাণিজ্যিকভাবে দেখতে শুরু করেছেন। এখানেই তিনি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন। যতদূর জানা গেছে, এখানে সিটি কর্পোরেশনের ১৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে একটি নকশা জমা দেয়া হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু সেই নকশায় ৬টি ত্রুটি দেখিয়ে অনুমোদন না দিয়ে তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির সাথে আলাপ করে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে যা জানা গেল তার জন্য সাধারণ সচেতন নাগরিক সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ভবনে কোমলমতি বালিকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হবে, তা ভাবা যায় এ সভ্য সমাজে? বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভেতরে কি শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে খোলামাঠে ছোটাছুটি আর কানামাছি খেলতে পারবে? শিক্ষকরাও কি পারবেন সঠিকভাবে শিক্ষাদান করতে? অথচ চট্টগ্রামের নগরপিতা মহিউদ্দিন চৌধুরী তাই করাতে চাইছেন! কিন্তু কেন? -- এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ কথা ঠিক যে, মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজের সুপরিকল্পনায় ও সদিচ্ছায় সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নগর জুড়ে বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ, এমনকী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তিনি পরিচালনাও করেছেন সুষ্ঠুভাবে। এর পাশাপাশি গরিব ও সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বেশকিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও মাতৃসদন স্থাপন করেও তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। যার সুফল ভোগ করছে চট্টগ্রামবাসী। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এত সুচারুভাবে করতে পেরেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। অন্য নগরীর মেয়রগণ এসব ক্ষেত্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে অনেক সময় পরামর্শ নিয়েছেন বলেও শুনেছি। এসব সেবামূলক কর্মকাণ্ডের…

স্কুল পর্যায়ে বাংলাদেশে কত রকম শিক্ষাপদ্ধতি চালু আছে? আমার জানা মতে সাধারণ বাংলা স্কুল, সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, সাধারণ কিন্ডারগার্টেন, গ্রামার স্কুল ইত্যাদি নানান রকম শিক্ষাপদ্ধতি বিদ্যমান। শিশুর প্রথম বিদ্যাপীঠ হিসেবে শ্রেণীভেদে এর মাঝ থেকে যে-কোনো একটাকে বেছে নিতে হয় অভিভাবককে। স্কুল পছন্দ করতে গিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আর্থিক কারণ ছাড়াও পছন্দ অপছন্দের বিভিন্ন কারণ কাজ করে থাকে। অনেকে ব্যাপক ভুল ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয়। ইংরেজি-স্কুল-পছন্দ অভিভাবক চায় বাচ্চাকে দ্রুত ইংরেজিবিদ্যায় পারদর্শী করে তুলতে, যাতে সহজে তার লন্ডন-আমেরিকা গমন ঘটে। মাদ্রাসা-পছন্দ অভিভাবক চায় বাচ্চাকে বেহেশতের চাবি হিসেবে তৈরি করতে, যাতে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সে বেহেশত দর্শনে যেতে পারে। ইত্যাকার কারণে আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় একটা তোগলকি অবস্থা বিরাজ করছে। একেক স্কুল একেক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছে পূর্ণ গণতান্ত্রিক সুযোগ নিয়ে। কিন্তু একটা দেশের মূল শিক্ষাব্যবস্থায় এতটা 'গনতন্ত্র' কি সহনীয়? ইংরেজি শিক্ষার নামে ৪ বছর বয়সি একটা বাচ্চার হাতে ৫ কেজি ওজনের বই তুলে দেবার যুক্তিটা কী? ৪ বছরের একটা বাচ্চাকে বিদ্যাসাগর বানিয়ে ফেলার প্রচেষ্টা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? মাদ্রাসা শিক্ষায় ধর্মের নামে একটা বাচ্চা ছেলেকে পৃথিবী যাবতীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করার মানে কী? শিক্ষাকেই জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। অথচ সেই মেরুদণ্ডের যত্নের জন্য যা যা করা দরকার তা কি করেছে আমাদের কোনো সরকার? এদেশে ইংরেজি বা আরবি স্কুলের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? বিদ্যমান সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়গুলোকে কতকাল অবহেলিত ফেলে রাখা হবে? যে-অঙ্কের টাকা ইংরেজি বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যয় করা হয় তা দিয়ে সাধারণ বাংলা স্কুলগুলোর মান উন্নয়ন করা যায় না কি? সাধারণ বাংলা স্কুলে পড়লে সন্তান মানুষ হবে না, এই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ই-বা কী? বাংলাদেশের মানুষের জন্য  আসলে কী রকম শিক্ষাপদ্ধতি প্রয়োজন?

আবুধাবীতে যদি হতে পারে, হতে পারে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় যদি চোখে স্বপ্ন থাকে। স্কুল যদি হতে পারে, হতে পারে যে কোন বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান যদি চোখে স্বপ্ন থাকে। তখন যদি হতে পারে, হতে পারে এখনও - এবং সর্বদা সর্বত্র [...]

(সংক্ষেপিত - এর চেয়ে সংক্ষেপ করলে নষ্ট হয়ে যাবে - পুরোটা পাওয়া যাবে আমার বই ‘‘বাংলার কথা কই’’-তে।) *************************************************** আবুধাবীতে যদি হতে পারে, হতে পারে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় যদি চোখে স্বপ্ন থাকে। স্কুল যদি হতে পারে, হতে পারে যে কোন বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান যদি চোখে স্বপ্ন থাকে। তখন যদি হতে পারে, হতে পারে এখনও - এবং সর্বদা সর্বত্র। ************************************************** তিরিশ বছর আগের আবুধাবী। আজকের মত দীপাম্বিতা সৌধশ্রেণী সংকলিতা নয়, ছোট ছোট কুঁড়েঘরে ঢাকা শহরে কয়েকটা মাত্র দালান। দুই কামরার এক ব্যাচেলর মেসে একদিন সান্ধ্য আড্ডা জমেছে তুমুল। ধড়াম করে দরজা খুলে ঢুকল কেউ, ধড়াম করে দরজা বন্ধ করল। রুদ্ধশ্বাসে দু’চোখ তার আতংকে বিস্ফারিত। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে সে। সন্ধ্যার আধো-অন্ধকারে রাস্তা পার হতে গিয়ে কানের কাছ দিয়ে সাঁই করে বেরিয়ে গেছে মাইক্রোবাস, একটু এদিক ওদিক হলেই মাথা ফেটে যেত। তারপর আড্ডায় এই রকম কথা হল। ‘‘জাপানী স্কুলের মাইক্রোবাস, নাম লেখা আছে গায়ে। স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছিল বাসায় পৌঁছে দিতে’’। ‘‘বৃটিশ অ্যামেরিকান সবাই নিজেদের স্কুল বানিয়েছে এখানে, নিজস্ব মাইক্রোবাসে বাচ্চাদের আনা-নেওয়া করে’’। ‘‘কিন্তু আমাদের বাংলাদেশীদের স্কুল নেই’’। ‘‘আমাদের বাংলাদেশীদের স্কুল নেই কেন?’’ ‘‘আমাদেরও স্কুল চাই’’। ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, - আমাদেরও স্কুল চাই …… ’’। সারা রাত ধরে মরুতামসের আকাশে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকল নামহীন কিছু কিশোরের স্বপ্ন- ‘‘আমাদেরও স্কুল চাই’’। সারারাত ধরে গুরুত্বপুর্ণ সভা করল আকাশের গ্রহ-তারা ফিসফিস করে, তারপর অলক্ষ্যে কোথাও কিছু একটা সিদ্ধান্ত হল। পরদিন সেই ছেলেগুলো তাদের স্বপ্ন গিয়ে হাজির জালাল ভাইয়ের বাসায়। সিলেটের সুদর্শন যুবক, পাওয়ার হাউসের ইঞ্জিনিয়ার। কি? না - আমাদেরও স্কুল চাই। মন দিয়ে তিনি শুনলেন কথাগুলো, যেন দিব্যচোখে দেখলেন এবং স্পর্শ করলেন স্বপ্নটা। তার কিছুদিন পর সদলবলে সবাই গিয়ে পড়লেন গোলাম রহমানের অফিসে, স্কুল প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেবার জন্য। কিছু লোক থাকে যাদের বয়স অনুমান করা অসম্ভব। ছিপছিপে এ বুড়ো এ বয়েসেও রূপবান সরস, যেন আঙ্গুর থেকে কিসমিস হয়েছেন। সিলেটের লোক, পুর্ব পাকিস্তান সরকারের চীফ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। রিটায়ার করতেই বাঙালী ধনকুবের জহুরুল ইসলাম তাঁকে হাইজ্যাক এনে বসিয়ে দিয়েছে তার আবুধাবীর বিখ্যাত কনষ্ট্রাকশন কোম্পানি বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের কর্ণধার হিসেবে। কিন্তু এই কর্ণধার বলতে গেলেতাদের কর্ণ…

বরিশালের এক বিদগ্ধজন ও মনস্বী শিক্ষক তাঁর নয়-দশজন ছাত্রীর সামনে আমাকে বসিয়ে দিয়ে বললেন, ওদের কিছু বলুন। আমি অভিভূত ও উৎফুল্ল, কত দিন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। শিক্ষকতা ছেড়ে বিদেশে চাকরিতে থাকাকালে বারবার স্বপ্নে দেখেছি, ক্লাস নিতে গিয়ে শ্রেণীকক্ষ খুঁজে পাচ্ছি না কিংবা পেলেও সেটা শূন্য। কিন্তু কী বলা যায় এদের? সবাই দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী, অনিশ্চিত উচ্চশিক্ষার আশা-নিরাশায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুকদের সংকট বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। কেননা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার ফল মেধাবিচারের কোনো নিখুঁত বা নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড নয়। (more…)

আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডের গ্রামীণ রূপায়ণে গিয়ে নতুন আসা পাঞ্জাবি-ফতুয়া দেখছিলাম, আমার মতো আরো বেশ কিছু নারী-পুরুষ পছন্দের কাপড়টি নেড়েচেড়ে দেখছেন। তিনজন বিক্রয়কর্মীর সবাই ব্যস্ত। এসময় বছর পঁচিশেক বয়সের একটা হিজড়া সবাইকে ডিঙিয়ে কাউন্টারের সামনে গিয়ে বলল, 'দে, টেকা দে, ঈদের বখশিস।' (more…)

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.