ছোট ছোট কোমলমতি শিশু বালিকারা মাথায় ঝুটি বেঁধে, কেউ-বা বেণী দুলিয়ে কাঁধে বা হাতে ব্যাগ নিয়ে তাদের প্রিয় স্কুলপ্রাঙ্গণে যায়। এটা চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ত এলাকা নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয় ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার দৃশ্য। স্কুল দুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ঐতিহ্যবাহী স্কুল দুটির উপর সম্প্রতি শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে চট্টগ্রামের নির্বাচিত হ্যাট্রিক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিকে শিক্ষাঙ্গন হিসেবে না দেখে বাণিজ্যিকভাবে দেখতে শুরু করেছেন। এখানেই তিনি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন। যতদূর জানা গেছে, এখানে সিটি কর্পোরেশনের ১৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে একটি নকশা জমা দেয়া হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু সেই নকশায় ৬টি ত্রুটি দেখিয়ে অনুমোদন না দিয়ে তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির সাথে আলাপ করে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে যা জানা গেল তার জন্য সাধারণ সচেতন নাগরিক সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ভবনে কোমলমতি বালিকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হবে, তা ভাবা যায় এ সভ্য সমাজে? বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভেতরে কি শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে খোলামাঠে ছোটাছুটি আর কানামাছি খেলতে পারবে? শিক্ষকরাও কি পারবেন সঠিকভাবে শিক্ষাদান করতে?
অথচ চট্টগ্রামের নগরপিতা মহিউদ্দিন চৌধুরী তাই করাতে চাইছেন! কিন্তু কেন? — এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ কথা ঠিক যে, মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজের সুপরিকল্পনায় ও সদিচ্ছায় সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নগর জুড়ে বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ, এমনকী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তিনি পরিচালনাও করেছেন সুষ্ঠুভাবে। এর পাশাপাশি গরিব ও সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বেশকিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও মাতৃসদন স্থাপন করেও তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। যার সুফল ভোগ করছে চট্টগ্রামবাসী। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এত সুচারুভাবে করতে পেরেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। অন্য নগরীর মেয়রগণ এসব ক্ষেত্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে অনেক সময় পরামর্শ নিয়েছেন বলেও শুনেছি। এসব সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য স্বাভাবিকভাবেই নগরপিতা হিসেবে তিনি নন্দিত, প্রশংসিত, অভিনন্দিত হয়েছেন। তাঁর শত্রু রাও এ ব্যাপারে তাঁর প্রশংসা না করেননি পারেননি।
কিন্তু তৃতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের এই পোড়-খাওয়া, একসময়কার জনপ্রিয় ও মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে-যাওয়া মানুষটির কী হলো? তিনি কেন, কার বা কাদের প্ররোচনায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ৮২ বছরের পুরোনো প্রাচীনতম এ স্কুল দুটি ভেঙে সেখানে আকাশচুম্বী বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন? তাঁর সেই বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের মধ্যেই কিনা তিনি ছাত্রীদের জন্য “আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পাঠদানের” (তাঁর ভাষায়) ব্যবস্থা করতে চান !
ব্রিটিশ সামাজ্যবাদী আমলে ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের প্রধান নায়ক বিপ্লবী মাস্টারদা সুর্যসেনের অন্যতম যোগ্য সহযোদ্ধা ছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতা মাস্টারদার বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে একদিকে ব্রিটিশ রাজকে খেদানোর সংগ্রামে নেমেছিলেন, অন্যদিকে এই অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে তিনি নারীশিক্ষার মাধ্যমে দেশের নারীসমাজকে জাগানোর ব্রত নিয়েছিলেন। এ দায়িত্ব পালনকালেই তিনি মাস্টারদার নির্দেশে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে দুঃসাহসিক হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিজেই পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে তিনি আত্মাহুতি দেন। প্রীতিলতার স্মৃতিধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা কে না স্বীকার করবে?!
আমরা কি জাতি হিসেবে এতটাই অকৃতজ্ঞ, অপরিণামদর্শী, অবিবেচক আর বিস্মৃতিপ্রবণ যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতির গৌরবময় অধ্যায়কে ‘অর্থ’ বা ‘বাণিজ্য’র কাছে বিকিয়ে দেব? না, এখনো বোধয় অতটা পচন ধরেনি আমাদের মনে ও মগজে। না হলে গত ক’দিন ধরে চট্টগ্রামের অন্তত কিছু সচেতন বোদ্ধা নাগরিক হ্যাট্রিক মেয়রের এ ধরনের বাণিজ্যলোভী মনোবৃত্তির প্রতিবাদ করতেন না। প্রায় শতবর্ষী ‘তরুণ’ বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী অসুস্থ শরীর নিয়ে (প্রচণ্ড মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে) সেই শিক্ষায়তনের প্রাঙ্গণে ছুটে যেতেন না প্রতীক অনশন আর প্রতিবাদ জানাতে! বেশ ক’জন সচেতন প্রতিবাদী তরুণ সংস্কৃতিকর্মী, সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীও তাঁদের প্রতিবাদ আর ক্ষোভ জানাতে ছুটে গেছেন সেখানে। এর পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী চট্টগ্রামের বেশ ক’জন বুদ্ধিজীবী একটি বিবৃতি দিয়ে মেয়রকে এই ন্যাক্কারজনক আগ্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যাঁর উদ্দেশে এত সব কিছু তিনি যেন বধির হয়ে আছেন এখনো!
স্কুলের জায়গায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের খবরটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর বেশ ক’দিন তো হয়ে গেল — অন্তত ১০ দিনের বেশি হয়েছে। কিন্তু গভীর দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় এই যে, সুসংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে সুশীল সমাজ বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নগরপিতাকে তাঁর ‘বাণিজ্যিক পরিকল্পনা’ থেকে সরিয়ে আনা বা বিরত রাখার জন্য তেমন কোনো কার্যকর নিতে পদক্ষেপ এখনো। আশা করি আমাদের সমাজের শ্রদ্ধেয় নাগরিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সর্বসাধারণকে হতাশ করবেন না।
২
পাঠকদের সদয় অবগতির জন্য অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দুটির ব্যাপারে সর্বশেষ অবস্থা (৩১ জানুয়ারি ২০০৯ দুপুর পর্যন্ত) সংবাদ আকারে তুলে ধরছি :
চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ৮২ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুল ক্যাম্পাসে সিটি কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন মাস্টারদা সুর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। তাঁর সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ অংশগ্রহণ করেন। নিজের সহযোদ্ধা প্রীতিলতার স্মৃতিধন্য বিদ্যালয় রক্ষায় আন্দোলনের ডাক দেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এই মহান যোদ্ধা। তাঁর সাথে অনশনে অংশগ্রহণ করেন শহীদজায়া বিশিষ্ট লেখিকা বেগম মুশতারী শফি।
উল্লেখ্য, সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য যে নকশাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল তা সিডিএ পরিকল্পনাবিদগণ অনুমোদন করেননি। প্রসঙ্গত, গত ২০০৮ সালের ২৮ মার্চ স্কুল ক্যাম্পাসে পাঁচতলা প্রীতিলতা ভবন নির্মাণের জন্য একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি প্রীতিলতার স্মৃতি রক্ষার্থে ভবনটি নির্মাণের জন্য দ্রুত ৬ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব একনেক কমিটিতে অনুমোদনের পর অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমানে তা শিক্ষা-সচিবের দপ্তরে রয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটি আবেদন করলেই উক্ত টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে। উল্লিখিত ভবন নির্মাণ নকশাটি সিডিএ কর্তৃক অনুমোদিত। কিন্তু মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী উক্ত অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করে উল্টো জনমত উপেক্ষা করে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি ২০০৯) অনুষ্ঠিত প্রতীকী অনশন সমাবেশে বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী বলেন,
ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভবনে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী ক্যাম্পাসে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে প্রতিরোধ করা হবে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন শিক্ষা মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণকে যদি যুক্তিযুক্ত মনে করেন তাহলে আমার বলার কিছুই নাই।
তিনি এই অনশন ধর্মঘটের মাধ্যমে স্কুল ভবনে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ সিটি কর্পোরেশনের একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর কুদৃষ্টি পড়েছে। আমরা যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে এই অন্যায় প্রচেষ্টা প্রতিহত করব। সহযোদ্ধা প্রীতিলতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অপর্ণাচরণ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯৩২ সালে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা থাকা অবস্থায় প্রীতিলতা মাস্টারদা সুর্য সেনের নির্দেশে আত্মগোপনে গিয়ে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। সেই বীরত্বপূর্ণ ব্রিটিশবিরোধী যুদ্ধে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার শহীদ হন। মহান সেই বিপ্লবীর স্মৃতিধন্য বালিকা বিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার চক্রান্ত প্রতিহত করতে তিনি চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবন্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ প্রকল্প সম্পর্কে চট্টগ্রামের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী গণদাবিকে উপেক্ষা করে বলেন,
এই উদ্যোগকে কেউ কেউ ঈর্ষাবশতঃ বাধাগ্রস্ত করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে কল্পনাপ্রসূত ও মনগড়া বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষা-বান্ধব আধুনিক বলয় নির্মাণের এই মহতী উদ্যোগকে যাঁরা ভিন্ন চোখে দেখেন, তাঁরা শিক্ষা ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দেশ-বিদেশে প্রশংসিত ও স্বীকৃত সাফল্যকে নস্যাৎ করার জন্য ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন — যা শিক্ষানুরাগী মহলের কাম্য নয়। তাই আমি দৃঢ়তার সাথে জানাতে চাই, অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুলের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাবান্ধব বহুতল ভবন ও কমপ্লেক্স নির্মিত হবেই।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নকশার অনুমোদন না দিলেও সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে ভবন নিমার্ণের জন্য ‘এম আমিন অ্যান্ড সন্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোনোপ্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছে। সিডিএ-র মতে, শহীদ মিনার সংলগ্ন ব্যস্ততম আমতল মোড়ে কখনোই বহুতল বাণিজ্যিক ভবন হতে পারে না। এ কারণেই সিডিএ সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত নকশা অনুমোদন দেয়নি। সিডিএ-র উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন,
নগর পরিকল্পনার কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই আমতলা এলাকার এ স্থানে হাইরাইজ বিল্ডিং হতে পারে না। এছাড়া ঐ এলাকায় দুটি বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন,
আমতল মোড়ে সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত নকশার স্থানটিতে রয়েছে একটি আইল্যান্ড। এটির তিনপাশেই রাস্তা রয়েছে। এজন্য নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখানে কোনো ভবন হতে পারে না। এছাড়া অনেক আগে থেকেই স্কুল ভবন দুটি রয়েছে। সে-বিবেচনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ভবন বাড়াতে চাইলে তা বিবেচনা করা যায়। কিন্তু নতুন করে কোনো হাইরাইজ ভবন নয়।
পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর আমতল এলাকায় দুটি স্কুল ভবন ভেঙে একটি ১৬ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য সিডিএ বরাবরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু নকশায় ছয়টি ত্রুটি দেখিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নকশা ফেরত পাঠানো হয়। নকশায় ভবনের নিচতলায় পার্কিং স্পেস, দ্বিতীয় তলায় মার্কেট, তৃতীয় তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসেম্বলি হল এবং ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটির শ্রেণীকক্ষ হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্কুল ভবন ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাসুদ্দোহা বলেন, একটি ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন চেয়ে সিডিএ-তে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে সিডিএ-র আপত্তির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে উল্ল্লেখ করেছেন। একইসাথে স্কুল ও মার্কেট রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত নকশায় দুটিই সম্পূর্ণ পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের নির্দেশ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দুটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ প্রসঙ্গে সিডিএ-র চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আখতার উদ্দিন বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনেই যে-কোনো ধরনের ভবন তৈরি করতে হবে। জনগণের দাবি, এ দুটি পুরোপুরি স্কুলই থাকুক। একইসাথে মার্কেট ও স্কুল থাকা কখনোই উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুল ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সহ বিভিন্ন সংগঠন। এজন্য তারা মানববন্ধন, মিছিল সমাবেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ছাত্র ইউনিয়ন স্কুল ভবন ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এবং মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েছে। সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাভেদুর রহমান চৌধুরী জানান, যে-কোনা মূল্যেই স্কুল দুটি ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণকে রুখে দেয়া হবে। তিনি বলেন, এর প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন সহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও সিটি কর্পোরেশনের এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
শনিবার ( ৩১ জানুয়ারি) সকালে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মানস নন্দী, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মোরশেদুল আলম, বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস, গণ সংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমী বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সংগঠক ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য, শিক্ষিকা ফৌজিয়া শফি, তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ধ্রুব জ্যেতি হোর, সাংবাদিক সমরেশ বৈদ্য, আলীউর রাহমান, হামিদ উল্লাহ, অনিন্দ্য টিটো, এমরান হোসাইন, জুবায়ের সিকদার, ইকবাল সিদ্দিকী, রাজেশ চক্রবর্তী, উজ্জ্বল ধর, নিপুল কুমার দে, আরিচ আহমেদ শাহ, আবদুর রহিম, শাহরিয়ার, দ্বৈপায়ন বড়ুয়া রনি, প্রজেশ চক্রবর্তী প্রমুখ।
শহীদজায়া মুশতারী শফি তাঁর বক্তব্যে বলেন,
বেশ কিছুদিন থেকে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে একটি দুঃসংবাদ দেখছি। চট্টগ্রামের বুকের মাঝখানে স্থাপিত অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত ৮ দশক ধরে এদেশের মানুষ গঠনের কাজ হচ্ছে। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের যে-পাঁয়তারা করা হচ্ছে তা চট্টগ্রামবাসী প্রতিহত করবে। সিটি মেয়র চারিদিকে শুধু বাণিজ্য বাণিজ্য আর বাণিজ্য দেখছেন। মেয়রের আর কত বাণিজ্য দরকার? বাণিজ্যিক ভবনের উপর কোমলমতি বালিকাদের স্কুল হলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে। শিক্ষার পরিবেশ বলতে কিছুই থাকবে না। মেয়র কি চান ছাত্রীদের অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিক?
৩
পাঠকদের অবগতির জন্য বাধ্য হয়েই পুরোনো ঘটনার বিবরণ দিতে হলো। চট্টগ্রামবাসী নিশ্চয়ই বিস্মৃত হয়ে যাননি যে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (২৯ ডিসেম্বর ২০০৮) নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায় থেকে অভ্যন্তরীণ দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নাম পাঠাতে বলেছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কাছে। তখন চট্টগ্রাম মহানগরীর মোমিন রোডের প্রিয়া কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের প্রদত্ত ভোটের ব্যালেট বাক্স নিয়ে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী অজ্ঞাত স্থানে চলে গিয়ে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়েছিলেন বলে তাঁর দলের নেতারাই অভিযোগ করেছেন। তাঁদের এই অভিযোগ সেই সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মেয়র। গত সংসদ নির্বাচনে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট নন এমন কাউকে কাউকে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার জন্য মেয়র এক ধরনের ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ও করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না।
প্রসঙ্গত স্বনামধন্য এই নগরপিতার আর একটি বিতর্কিত ভূমিকার কথা উল্লেখ না করে পারছি না। অল্প কয়েক বছর আগে নগরীর ও. আর. নিজাম রোডস্থ গোলপাহাড় মোড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘পশুরক্ষক সমিতি’-র মালিকানাধীন প্রায় ৪০ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি জাল দলিল তৈরি করে সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে ও কর্পোরেশনকে ব্যবহার করে দখলের অপচেষ্টা করেছিলেন তিনি। তখন বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী (যিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ সহ বিভিন্ন সংগঠনের সম্মাননা পদকে ভূষিত হয়েছেন) সম্পর্কে নানা ধরনের অশ্রাব্য কটূক্তি করতেও নগরপিতা দ্বিধা করেননি! কিন্তু সচেতন জনতার প্রতিরোধ ও আইনি লড়াইয়ের কারণে চট্টগ্রামের ‘প্রতিবাদী রাজনীতিবিদ’ মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী দখলদারী ও আগ্রাসী অবস্থান থেকে পশ্চাৎপসরণে বাধ্য হয়েছিলেন।
তাহলে আবারও কি চট্টগ্রামের এক সময়কার ‘অবিসংবাদিত জনপ্রিয় নেতা’ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঐতিহ্যবাহী অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় দুটি নিয়ে একই ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাইছেন? বিগত ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েই কিন্তু এই প্রতিবাদী, জনদরদী, চট্টগ্রামদরদী, কথিত আপোসহীন রাজনীতিক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের স্বার্থ ও তাঁর ভাষায় “বাংলাদেশের স্বার্থ-বিরোধী” এসএসএ টার্মিনাল চট্টগ্রামে স্থাপন করতে দেননি। শুধু চট্টগ্রামবাসীই নয়, দেশের অধিকাংশ নাগরিক তখন তাঁর এই আন্দোলনকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল রাজপথে ও আদালতে। সেই সংগ্রামকে নিজেদের সংগ্রাম মনে করে তাঁর সংগ্রামের সাথী হয়েছিল। কিন্তু সেই জননেতা এখন কেন এমনতরো আচরণ শুরু করলেন? তিনি কি এখন শিক্ষার চেয়ে ‘বাণিজ্য’কে বেশি প্রাধান্য দিতে শুরু করেছেন? কার বা কোন্ গোষ্ঠীর প্ররোচনায়, না কি নিজের ক্ষমতার দম্ভে তিনি এ আচরণ করছেন? বড় জানতে ইচ্ছে করে।
আশা করি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী এবং দিনবদলের সরকারের উপদেষ্টারা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিকে বাঁচানোর আশু উদ্যোগ নেবেন। সেই সাথে মেয়র মহোদয়ও জনমতকে উপেক্ষা করবেন না — এই প্রত্যাশাই করি কায়মনোবাক্যে। পাশাপাশি এ প্রত্যাশাও করি যে, নগরপিতার আশপাশে যেসব তোষামোদকারী রয়েছে, যারা তাঁর জনপ্রিয়তাকে অপব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তাদের তিনি প্রশ্রয় দেবেন না এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৭ comments
মুক্তাঙ্গন - ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১১:২৬ অপরাহ্ণ)
আপডেট: প্রথম আলো রিপোর্ট। (পিডিএফ কপি এখানে)
আরিফুর রহমান - ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১:০৬ পূর্বাহ্ণ)
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ত্বরিৎ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন শোনা গেল।
ভালো।
রওনা দেয়া বুলডোজার কি এখন ফিরে যাবে খোঁয়ারে?
নীড় সন্ধানী - ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (২:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
এ হলো অতি-জনপ্রিয়তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হবার পর থেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতিভ্রম ঘটেছে। তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে মানসিক সুস্থতার অভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
আমাকে প্রতিদিন ভোরে এই স্কুলের পাশ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়। যদিও স্কুলের ব্যাপারটা আমি ঠিক জানি না কেন কীভাবে তাঁর মাথায় ঢুকলো। বর্তমানে স্কুলের পরিবেশটা ভয়ানক খারাপ হয়ে গেছে চারপাশের প্রকট বাণিজ্যিকীকরণে। এমনিতেই স্কুলের অবস্থান ১০০% বাণিজ্যিক এলাকায়। ছাত্রীদেরকে স্কুলে যেতে হয় বিশ্রী রকমের যানজটের উপর দিয়ে জীবনের হুমকি নিয়ে। স্কুলের লাগোয়া দেয়াল ঘেঁষে ময়লার পাহাড় জমে থাকে দিনের পর দিন।
একটা স্কুলের গায়ের উপর এরকম ভয়ানক ময়লার পাহাড় — ভাবতেই গা গুলিয়ে ওঠে। এই স্কুলের পাশে ময়লা আবর্জনার পাহাড় রেখে সিটি কর্পোরেশানের ঝাড়ুদারকে যখন দেখি ২০০ গজ দূরে নিউমার্কেটের সামনে পরিষ্কার রাস্তায় ধুলো সাফ করছে তখন স্কুলের প্রতি কর্পোরেশানের দায়িত্বহীনতার পরিচয় পেতে মোটেও অসুবিধা হয় না। সেই স্কুলের জায়গা দিয়ে যখন সিটি কর্পোরেশান বাণিজ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমি মোটেই অবাক হই না।
মাসুদ করিম - ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৮:২১ পূর্বাহ্ণ)
গত কয়েক বছরের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন অসংশোধনযোগ্য নেতা ও ন্যাক্কারজনক মেয়রে পরিণত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সবার আগে আওয়ামী লীগেরই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত: তাঁকে সরাসরি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা উচিত। আর সরকারের উচিত তাঁর মেয়র মেয়াদের বাকি দুবছর তাকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা। আওয়ামী লীগ ও সরকারের এই কঠোর অবস্থান অন্যান্য মেয়র ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের যে কোনো জনবিরোধী বাণিজ্যিক ও সামাজিক কার্যকলাপে (যদিও এসব কর্মকাণ্ডকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবেই তাঁরা সবসময় তুলে ধরেন) জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কবার্তার মতো কাজ করবে।
কল্পতরু - ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
লোকটার (মহিউদ্দিন) মগজে পচন ধরেছিল বেশ আগেই। কয়েক বছর আগে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি দিয়ে তার প্রতিদ্বন্ধী মেয়র প্রার্থীর বাড়ির গেটে এক ট্রাক ময়লা ফেলার নির্দেশ দেয়াই ছিল তার প্রমাণ। প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার এমন কুৎসিত ও বিকৃত রুচির উদাহরণ বিশ্বে বিরল।
তার সাম্প্রতিক কাজকর্ম দেখে মনে পড়ছে বেশ আগে পড়া “দ্য পেট্রিয়ট” নামক একটি কবিতা, যে কবিতায় বলা হয়েছে এক দেশ প্রেমিকের কথা, যাকে জনগণ পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে তাদের নেতা হিসেবে বরণ করে নেয় কিন্তু কয়েক বছর পর দেখা যায়, তাকেই সেই জনগণই জুতার মালা পরিয়ে চরম হেনস্তা করে নগর থেকে বের করে দিচ্ছে। একসময় পেয়েছিল ফুলের মালা আর আজ …? নেতা থাকাকালীন কয়েক বছরের জনবিরোধী কর্মকান্ডই ছিল তার এহেন অপমানজনক পরিণতির কারণ।
এই মহিউদ্দিনকে আমিও চিনি। তারও পরিণতি এমন হওয়ারই পথে। তার মুখে অশ্লীল বাক্যালাপ ছাড়া কথা শোনা বিরল ঘটনা, অর্থলোলুপ ব্যক্তি হিসেবে এখন নামও কামিয়েছে ভালই। সংসদ নির্বাচন ২০০৮ এ মনোনয়ন নিয়ে এমন কানাঘুষাও চট্টগ্রাম নগরের মানুষ করছে।
সৈকত আচার্য - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:২৬ পূর্বাহ্ণ)
@ সমরেশ বৈদ্যঃ
এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ মেয়র সাহেব হাতে নিলেন, কিন্ত স্কুলের ছাত্রীরা বা অভিভাবকগণ কিছুই জানতে পারলেন না, শিক্ষকরা জানলেন না, সচেতন নাগরিক সমাজ বা তার প্রতিনিধিবর্গ কেউই জানলেন না, এটা অবাক করার মতো বিষয়। যতটুকু জানি এ বিষয়ে ছাত্রী, অভিভাবক বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ কিংবা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি কারো সাথেই তেমন কোন মত বিনিময় সভা, বা মতামত জানার মতো কোন উদ্যোগ সিটি কর্পোরেশন নেয়নি।
এই আন্দোলনে যারা শামিল হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই চট্রগ্রামের বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত ছিলেন, আছেন। কিন্ত তারপরও মনে হয়েছে, একটা খুব গুরুত্বপূর্ন পক্ষের অনুপস্থিতি এই আন্দোলনে আছে। তাহলো, ছাত্রী-শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রকাশ্য অনুপস্থিতি। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
মাসুদ করিম - ৪ মে ২০১০ (৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
লিন্ক : লালদীঘিতে সুইমিংপুল! প্রথম আলো।। নগর-দর্পণ : চট্টগ্রাম।। বিশ্বজিৎ চৌধুরী।।
হ্যাঁ, একটার পর একটা সমস্যা তৈরি করাই এখন চট্টগ্রামের মেয়রের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মুকুটের এই নতুন পালক — লালদীঘির জলাশয়কে সুইমিং পুলে রূপান্তর — ঠিকই এমন এক উন্নয়নমূলক কাজ যার সাথে মিল আছে স্কুলকে মার্কেট-স্কুলে রূপান্তরের তার প্রাক্তন অপচেষ্টার। তিনি যখন এতই রূপান্তরবাদী হয়ে উঠেছেন, তাহলে সবার আগে নিজের রূপান্তর ঘটিয়ে একজন সত্যিকারের মেয়র ও জননেতায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রচেষ্টাই তো হত সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। আমাদের সবুজ মেয়র কেন এমন অবুঝ মেয়র হয়ে উঠেছেন, কে জানে? নাকি তিনিও ঝাঁঝরা হয়ে গেছেন লোভের ক্যান্সারে?