অবশেষে আমরা ধন্য হলাম, ধন্য হলো বাঙালি জাতি- কারণ কর্নেল তাহের মার্কসিস্ট হলেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শ্রদ্ধা করেন তাকে। তবে যত শ্রদ্ধাই থাক, তাহেরের গোপন বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে তার কিছু যায় আসে না- অকপটে তিনি বলেছেন আদালতের কাছে। যে-মানুষটিকে শ্রদ্ধা করেন, তার মৃত্যুকে মওদুদ আহমদ আসলে তা হলে কী চোখে দেখেন?...

অবশেষে আমরা ধন্য হলাম, ধন্য হলো বাঙালি জাতি- কারণ কর্নেল তাহের মার্কসিস্ট হলেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শ্রদ্ধা করেন তাকে। তবে যত শ্রদ্ধাই থাক, তাহেরের গোপন বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে তার কিছু যায় আসে না- অকপটে তিনি বলেছেন আদালতের কাছে। যে-মানুষটিকে শ্রদ্ধা করেন, তার মৃত্যুকে মওদুদ আহমদ আসলে তা হলে কী চোখে দেখেন? আমরা জানতাম, মানুষ মানুষকে যান্ত্রিকভাবে শ্রদ্ধা করে না, মানুষ তো রক্ত ও মাংসের, তার শ্রদ্ধার সঙ্গে তাই আবেগও জড়িয়ে থাকে, সেই আবেগের তোড়ে মানুষ নিজের অবস্থানও আচানক পাল্টে ফেলে, যেমন দেখেছি আমরা সোমেন চন্দের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর একেবারেই বিপরীত ধারার সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুকে আবেগদীপ্ত কবিতা লিখে ফেলতে- কিন্তু অনুভূতিশূন্যভাবেও যে কাউকে শ্রদ্ধা করা যায়, মওদুদ আমাদের সেই অনুশীলন দিয়েছেন কয়েকদিন আগে আদালতে দাঁড়িয়ে। মওদুদ আহমদ জানেন এবং বলেও থাকেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে আইনের শাসন না থাকলে কোনও রাষ্ট্র বা সমাজই এগিয়ে যেতে পারে না। এই বিবৃতির অনিবার্য সম্প্রসারিত ভাষ্য হলো, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধার ওপর নির্ভর করে না। বিচার বিভাগ ও আইনকে তুচ্ছ করে তাহেরকে গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালে দাঁড় করিয়ে আইনের শাসনকে উপহাস করার কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন কুখ্যাত সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান। তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্যে দিয়ে সেই উপহাসকে তিনি উন্নীত করেন অশ্লীল অট্টহাসির পর্যায়ে। পরে এই কুখ্যাত মানুষটি নির্বাচন দিয়েছেন, সামরিক শাসন তুলে নিয়েছেন, কিন্তু এসবই করেছেন সামরিকতন্ত্রের তত্বাবধানে সমমনোভাবাপণ্ন শ্রেণি-অংশটিকে গুছিয়ে নিয়ে, ওই শ্রেণি-অংশের উপযোগী রাজনৈতিক দল গঠনের পরে। জিয়াউর রহমানের স্তাবকেরা তাকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে প্রচার করে, মওদুদও সেই স্তাবকদের একজন- কিন্তু যে-কুখ্যাত মানুষটি গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কর্নের তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নামে হত্যা করেছিলেন, হত্যা করেছিলেন আরও অনেক সামরিক কর্মকর্তাও সাধারণ সৈনিকদের, তার পক্ষে গণতান্ত্রিক হওয়া কতটুকু সম্্‌ভব? ব্যারিস্টার মওদুদ কি জানেন না, বোঝেন না, কর্নেল তাহেরের বিচারকার্যকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক আবরণও খুলে পড়বে নতুন করে? আর মানুষ দেখবে, হিংস্র, কুৎসিত ও বীভৎস সেই একনায়ককে- যার নির্দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে কারাগারের অভ্যন্তরে, যার সময়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে গুলি চালিয়ে মানুষজনকে হত্যা করা হয়েছে, যাকে বেঁচে…

প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো।...

প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো। রাষ্ট্র মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক যুগের দিকে রওনা হলো। ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স-এর প্রতিটি বাক্য রাষ্ট্রশাসকদের শিক্ষা দিলো, রাজনীতি নৈতিকতার নয়, বরং নৈতিকতাই রাজনীতির অধীন। ম্যাকিয়াভেলি বললেন, রাজনীতির সঙ্গে নৈতিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা জানতে পারলাম রাষ্ট্র মানে নৈতিকতা নয়, রাষ্ট্র মানে রাজনৈতিকতা। হুবহু মনে নেই, তবে ওই দ্য প্রিন্সের কোনও কোনও বাক্য এখনও আবছা মনে আছে। যেমন, একটি বাক্য ছিল এরকম : A son can bear with equanimity the loss of his father, but the loss of his inheritance may drive him to despair. দ্য প্রিন্সের ওই কথাগুলিই বার বার মনে পড়ছে খালেদা জিয়া ‘বাস্তুহারা’ হবার পর থেকে। ম্যাকিয়াভেলি কি জানতেন, প্রায় ৫০০ বছর পরও পৃথিবীতে এমন কোনও রাষ্ট্র থাকবে, যেটির ক্ষেত্রে তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে অর্জিত ধারণাটি খাপে খাপে মিলে যাবে? ২. এ কথা বলা সত্যের অপলাপ হবে, জিয়াউর রহমানকে হারানোর পর খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানদের চোখে জল আসেনি। নিশ্চয়ই এসেছিল। কিন্তু তা তত দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠেনি। হতে পারে, মিডিয়ার দশহাত তখনো দশদিককে গ্রাস করেনি। তাই তাদের কান্নামাখা মু্খও আমাদের বার বার দেখার সুযোগ হয়নি। তারা কেঁদেছেন এবং জিয়াউর রহমানকে মনে রেখেছেন, জিয়াউর রহমান নামটিকে ব্যবহারের বস্তুতে পরিণত করেছেন। এই নামটি তাদের এত কিছু দিয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। জিয়াউর রহমান তাতে উজ্জল হননি, কিন্তু আপোষহীন নেত্রী আর যুবরাজ ক্ষমতায় সজ্জিত হয়েছেন। এ জন্যে তাদের জিয়াউর রহমানের কাছে যত ঋণই থাক না কেন, জিয়াউর রহমানের হন্তারকের অনুসন্ধান তারা কখনো করেননি। একজন…

দুইজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল গত ১৬ আগস্ট। এ চ্যালেঞ্জের মীমাংসা হাইকোর্টে কীভাবে হতো, তা আমাদের আপাতত অজানাই রয়ে গেল রিট আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়াতে। এটি স্পষ্ট যে বিপত্তি ঘটতে পারে বলেই তারা একটি অজুহাত দাঁড় করিয়ে পিছিয়ে গেছেন এবং সুবিধাজনক সময়ে এরপর আবারও কোনও একদিন কোনও এক বেঞ্চে এই রিট আবেদন আবারও তোলা হবে। কি জামায়াতে ইসলামী, কি বিএনপি,- মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার নিয়ে অপপ্রচারে কেউই পিছিয়ে নেই। কিন্তু আইনি যুদ্ধ ঘোষণা করে সেখান থেকে তাদের এই পিছিয়ে আসার মানে, সত্যিকার অর্থে তাদের ওই চ্যালেঞ্জের কোনও অর্থ নেই, কোনও যৌক্তিকতাও নেই।

দুইজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল গত ১৬ আগস্ট। এ চ্যালেঞ্জের মীমাংসা হাইকোর্টে কীভাবে হতো, তা আমাদের আপাতত অজানাই রয়ে গেল রিট আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়াতে। ২২ আগস্ট সকাল বেলা দুই দিনের শুনানির পর হঠাৎ করেই ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, যাকে না কি জামায়াতে ইসলামী তাদের এই আইনি যুদ্ধের প্রধান প্রতিরক্ষা কাউন্সেল নিয়োগ করেছেন, তিনি আবেদন করে বসলেন রিট আবেদনটি ফেরৎ নিতে। এ পর্যায়ে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি উঠানো হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন। আবদুর রাজ্জাক অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, রুল জারি করার বিষয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় রিটটি ফেরৎ নেয়ার জন্যে আদালতে আবেদন করা হয়। রিপোর্টারদের সামনে আবদুর রাজ্জাক যাই বলুন, এটি স্পষ্ট যে বিপত্তি ঘটতে পারে বলেই তারা একটি অজুহাত দাঁড় করিয়ে পিছিয়ে গেছেন এবং সুবিধাজনক সময়ে এরপর আবারও কোনও একদিন কোনও এক বেঞ্চে এই রিট আবেদন আবারও তোলা হবে। কি জামায়াতে ইসলামী, কি বিএনপি,- মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার নিয়ে অপপ্রচারে এসব দলের কোনওটিই পিছিয়ে নেই। কিন্তু আইনি যুদ্ধ ঘোষণা করে সেখান থেকে যুদ্ধাপরাধী চক্রের এই পিছিয়ে আসার মানে, সত্যিকার অর্থে তাদের ওই চ্যালেঞ্জের কোনও অর্থ নেই, কোনও যৌক্তিকতাও নেই। কিন্তু তারপরও তারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার পণ করে বসে আছে, কেননা তাদের প্রকৃত লক্ষ্য পাকিস্তান রাষ্ট্রটির আদলে বাংলাদেশকে দাড় করিয়ে রাখা, আর ওই কাজে তাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা যুদ্ধাপরাধীরাই। অথচ পাকিস্তানের মতো হয়ে কোনও রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, বিকশিত হতে পারে না, জনগণের মঙ্গল করতে পারে না- পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটিই যার সবচেয়ে বড় সাক্ষী। আইনী তৎপরতার পাশাপাশি তারা তাই খুলে বসেছে অসংখ্য অপপ্রচারের দোকান। এই অপপ্রচারের একটি সামান্য উদাহরণ হল, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচার থেকে যুদ্ধাপরাধ বিচারকে আলাদা করে দেখা, একটিকে আরেকটির বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর আপ্রাণ অপচেষ্টা। এই কথাটা যে কোনও আইন-বিশেষজ্ঞই জানেন এবং বোঝেন, যুদ্ধাপরাধ অথবা যুদ্ধাপরাধীর বিচার কথাটি ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যাপকতাকে পুরোপুরি ধারণ করা সম্ভব নয়। ওই ব্যাপকতা ধারণ করার জন্যে তাই ব্যবহার করা হয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রত্যয়টিকে। কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যেহেতু যুদ্ধাপরাধীরাই করে থাকেন, সে কারণে সাধারণভাবে…

বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার চালানোর পর শেষ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে গতকাল বাংলাদেশেই ফিরে আসতে হয়েছে। অনেক আগে থেকেই যেমনটি আমাদের অনেকে ধারণা করছিলেন, ঘটনা ঠিক সেরকমই ঘটেছে- দু’জন যুদ্ধাপরাধীর (যারা একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীরও গুরুত্বপূর্ণ নেতা) পক্ষ থেকে গতকাল ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী এ দু’জন হলো যথাক্রমে জামায়াতে ইসলামীর কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লা।[...]

বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার চালানোর পর শেষ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে গতকাল বাংলাদেশেই ফিরে আসতে হয়েছে। অনেক আগে থেকেই যেমনটি আমাদের অনেকে ধারণা করছিলেন, ঘটনা ঠিক সেরকমই ঘটেছে- দু’জন যুদ্ধাপরাধীর (যারা একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীরও গুরুত্বপূর্ণ নেতা) পক্ষ থেকে গতকাল ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী এ দু’জন হলো যথাক্রমে জামায়াতে ইসলামীর কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লা। তাদের হয়ে আজ ১৭ আগস্ট হাইকোর্টে রিট আবেদনটি পরিচালনা করবেন বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। একই সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অঘোষিত মুখপত্র ‘আমার দেশ’-এ আজ প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এক চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধী বিচারকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে ১৯৭৩-এর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্টকে পরিবর্তন করতে হবে। এই ১৯৭৩-এর অ্যাক্টকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি বছরখানেক সময় ধরে এমনভাবে প্রচার চালিয়েছে যে, কারো কারো কাছে মনে হতে পারে, এ অ্যাক্ট বোধহয় ধরে-বেধে মানুষকে প্রহসনের বিচার করার আইন। পাশাপাশি, বাংলাদেশে বিশেষ বিশেষ ধারা অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকার বিষয়টিকেও এ সময়ে ব্যাপক নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। চূড়ান্ত শাস্তি হিসেবে অনেকেরই মৃত্যুদণ্ডের বিধানটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে, কিন্তু বিষয়টিকে রদ করার জোর প্রচারণা এমন এক সময় চালানো হচ্ছে, যখন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রত্যাশা করছি; চূড়ান্ত শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধানটির বিরুদ্ধে প্রচারণার আড়ালে আসলে চেষ্টা চলছে ১৯৭৩-এর এই অ্যাক্টটি সম্পর্কেই জনমনে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার। যাই হোক, আমার মনে হয় না যে আমাদের সবাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চিঠি পড়ে কিংবা যুদ্ধাপরাধী দু’জনের রিট আবেদন দেখে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের মতো আবেগপ্রবণ হয়ে উঠবেন, বলবেন যে, ৩৯ বছর আগে কোথায় ছিল আপনাদের মানবাধিকার? আমি যে-টুকু বুঝি এবং আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের সপক্ষে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন, যে-সব ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচারের জন্যে অপেক্ষা করছেন তারাও এটা বোঝেন যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের এসব দিকগুলির চুলচেরা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পেশাদারি বিশ্লেষণ ও যুক্তিবিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। পল্টনের ময়দানে, জনসভার মঞ্চে কিংবা পথসভায় দাঁড়িয়ে সেটি করা…

জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে[....]

এক. জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে, দলের কর্মীদের প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরোক্ষে ওরকম এক নির্দেশই রেখে গেছে। ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটর পত্রিকার সঙ্গে ওই আলাপচারিতায় কামারুজ্জামান বলেছে, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্যে তারা আইনি পন্থাই অবলম্বন করবে, তবে সরকার যদি তাদের হয়রানি করে তা হলে বলা যায় না, তরুণ অনুসারীরা চরমপন্থা বেছে নিতে পারে। কামরুজ্জামান আরও বলেছে, এরকম স্পর্শকাতর ইস্যুতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এমনও হতে পারে যে, এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। অবশ্য ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটরের কাছে কামারুজ্জামান এরকম আশঙ্কা প্রকাশের অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ আন্ডারগ্রাউন্ডের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জেএমবির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক খুবই সুস্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা খুনি হওয়ার দীক্ষা নিয়েছিল; আর উত্তরসূরি শিবিরপ্রজন্মের জন্যে তারা রগকাটার প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয় জেনে উন্মুক্ত করেছিল জেএমবি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের কোনও কোনও নেতা যতই শিবিরপ্রজন্মকে ছবক দিন না কেন, তোমরা তো বাবা যুদ্ধাপরাধী নও, তোমরা কেন, এইসব যুদ্ধাপরাধীদের দায় নিতে যাবে- এসবই বিফলে যাবে; কেননা যুদ্ধাপরাধীরা তাদের মতো করেই প্রস্তুত করেছে তাদের পরবর্তী বাহিনীকে। কামারুজ্জামানের এই কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চান, তাদের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। কামারুজ্জামান গ্রেফতারের আগে ঘোষণা দিয়ে গেল, আচানক হামলা হবে, একাত্তরের মতোই; আবারও আমাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিভাবান দেশপ্রেমিক মানুষগুলিকে রাতের অন্ধকারে অথবা দিনের আলোতেই গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করা হবে, যুদ্ধাপরাধী পালের গোদাগুলিতে বাঁচানোর জন্যে তাদের চেলারা মাটির নিচে চলে গেলেও যতটুকু করা সম্ভব সব টুকুই করবে। তাই এদের যদি আমরা থামাতে চাই, আমাদেরও সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। শান্তির ললিত বাণী কখনো কখনো ব্যর্থ পরিহাস হয়ে ওঠে, আমাদের বোধহয় আমরা অচিরেই সেরকম এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মুখে জামায়াতে ইসলামী যতই বলুক না কেন- যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে, আসলে সবচেয়ে বেশি রাজনীতি তারাই করেছে, তাই সব রকম রাজনৈতিক প্রস্তুতিই তাদের নেয়া হয়ে গেছে। এমনকি ভূ-গর্ভে গিয়ে রাজনীতি করার মতো যাবতীয় প্রস্তুতিও…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.