তাহেরের গোপন বিচার ও ‘শ্রদ্ধাবনত’ মওদুদ

অবশেষে আমরা ধন্য হলাম, ধন্য হলো বাঙালি জাতি- কারণ কর্নেল তাহের মার্কসিস্ট হলেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শ্রদ্ধা করেন তাকে। তবে যত শ্রদ্ধাই থাক, তাহেরের গোপন বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে তার কিছু যায় আসে না- অকপটে তিনি বলেছেন আদালতের কাছে। যে-মানুষটিকে শ্রদ্ধা করেন, তার মৃত্যুকে মওদুদ আহমদ আসলে তা হলে কী চোখে দেখেন?...

অবশেষে আমরা ধন্য হলাম, ধন্য হলো বাঙালি জাতি- কারণ কর্নেল তাহের মার্কসিস্ট হলেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শ্রদ্ধা করেন তাকে। তবে যত শ্রদ্ধাই থাক, তাহেরের গোপন বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে তার কিছু যায় আসে না- অকপটে তিনি বলেছেন আদালতের কাছে। যে-মানুষটিকে শ্রদ্ধা করেন, তার মৃত্যুকে মওদুদ আহমদ আসলে তা হলে কী চোখে দেখেন? আমরা জানতাম, মানুষ মানুষকে যান্ত্রিকভাবে শ্রদ্ধা করে না, মানুষ তো রক্ত ও মাংসের, তার শ্রদ্ধার সঙ্গে তাই আবেগও জড়িয়ে থাকে, সেই আবেগের তোড়ে মানুষ নিজের অবস্থানও আচানক পাল্টে ফেলে, যেমন দেখেছি আমরা সোমেন চন্দের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর একেবারেই বিপরীত ধারার সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুকে আবেগদীপ্ত কবিতা লিখে ফেলতে- কিন্তু অনুভূতিশূন্যভাবেও যে কাউকে শ্রদ্ধা করা যায়, মওদুদ আমাদের সেই অনুশীলন দিয়েছেন কয়েকদিন আগে আদালতে দাঁড়িয়ে।
মওদুদ আহমদ জানেন এবং বলেও থাকেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে আইনের শাসন না থাকলে কোনও রাষ্ট্র বা সমাজই এগিয়ে যেতে পারে না। এই বিবৃতির অনিবার্য সম্প্রসারিত ভাষ্য হলো, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধার ওপর নির্ভর করে না। বিচার বিভাগ ও আইনকে তুচ্ছ করে তাহেরকে গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালে দাঁড় করিয়ে আইনের শাসনকে উপহাস করার কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন কুখ্যাত সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান। তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্যে দিয়ে সেই উপহাসকে তিনি উন্নীত করেন অশ্লীল অট্টহাসির পর্যায়ে। পরে এই কুখ্যাত মানুষটি নির্বাচন দিয়েছেন, সামরিক শাসন তুলে নিয়েছেন, কিন্তু এসবই করেছেন সামরিকতন্ত্রের তত্বাবধানে সমমনোভাবাপণ্ন শ্রেণি-অংশটিকে গুছিয়ে নিয়ে, ওই শ্রেণি-অংশের উপযোগী রাজনৈতিক দল গঠনের পরে। জিয়াউর রহমানের স্তাবকেরা তাকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে প্রচার করে, মওদুদও সেই স্তাবকদের একজন- কিন্তু যে-কুখ্যাত মানুষটি গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কর্নের তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নামে হত্যা করেছিলেন, হত্যা করেছিলেন আরও অনেক সামরিক কর্মকর্তাও সাধারণ সৈনিকদের, তার পক্ষে গণতান্ত্রিক হওয়া কতটুকু সম্্‌ভব? ব্যারিস্টার মওদুদ কি জানেন না, বোঝেন না, কর্নেল তাহেরের বিচারকার্যকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক আবরণও খুলে পড়বে নতুন করে? আর মানুষ দেখবে, হিংস্র, কুৎসিত ও বীভৎস সেই একনায়ককে- যার নির্দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে কারাগারের অভ্যন্তরে, যার সময়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে গুলি চালিয়ে মানুষজনকে হত্যা করা হয়েছে, যাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের জেনারেল ইন দ্য লেবেরিন্থ-এর কুখ্যাত সেই সেনাশাসকের মতো গায়ে বেসামরিক শাসনের পোশাক চড়ানোর পরও একটির পর একটি সামরিক অভ্যুত্থান দমন করার মধ্যে দিয়ে। জিয়াউর রহমানের জীবন ও বেঁচে থাকাটা নির্ভর করছিল কতটা শৈল্পিক নিষ্ঠুরতা ও গোপনীয়তার সঙ্গে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানকে দমন করতে পারবেন, তার ওপরে। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি শৈল্পিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। এই মৃত্যু যত অনাকাঙ্ক্ষিত ও যত নিষ্ঠুরই হোক না কেন, তাকে অন্তত শহীদান বলা যায় না। কিন্তু কুখ্যাত শাসক জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর গোয়েবলসীয় কায়দায় তাকে শহীদ বলতে বলতে শহীদ শব্দটিকে জিয়াউর রহমানের নামাংশে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন নিষ্ঠুর সময় আসে যখন এমন সব নারকীয় ঘটনা ঘটে যে অনেক শব্দের অর্থ পাল্টে যায়- যেমন, রাজাকার, আলবদর ইত্যাদি শব্দের অর্থ পাল্টে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে, যেমন মীর জাফর শব্দের অর্থ পাল্টে গেছে ভারতবর্ষের ইতিহাসে, যেমন রাসপুটিন শব্দটি মানবস্বভাবের একটি বিশেষ ধরণনির্দেশক হয়ে উঠেছে বিশ্বমনস্তত্বের ইতিহাসে। শহীদ শব্দটির এই অপব্যবহার অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতের বাংলা অভিধান ত্যক্তবিরক্ত হয়ে এর শব্দার্থ করবে ‘সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত কুখ্যাত সামরিক জান্তা।’
এ হেন এক কুখ্যাত সামরিক জান্তার অনুসারী ব্যারিস্টার মওদুদ, যিনি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচার জন্যে ধন্য করেছিলেন আর এক কুখ্যাত ও কুলাঙ্গার সামরিক জান্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিপরিষদকে, যে-পাত্রে রাখা যায় সেই পাত্রেরই আকার ধারণ করা ছাড়াও তার বিশেষ আরেকটি গুণ হলো, দশ-দশটি বই লিখেছেন তিনি। আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিক বই-ই পড়েন না, বই লেখা তো অনেক দূরের ব্যাপার। ইদানিং গণমাধ্যম প্রসারিত হওয়ায় তাদের তাই উপকারই হয়েছে। তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙেই সংবাদপত্রে কিংবা টিভিতে অন্য কোনও নেতার খবর ও ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারপর ঘরে বসেই রিপোর্টারদের ডেকে পাঠিয়ে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে থাকেন। আর রিপোর্টারদেরও বিষয়বস্তুর অভাব, আবার অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গেলে খাটুনি অনেক, অতএব তারাও এরকম সব ফাঙ্গাসপড়া রাজনীতিকদের উত্তেজিত করে তুলে উত্তেজক সব কথাবার্তা ছাপিয়ে বা প্রচার করে আলোচনার পাদপ্রদীপে আসার চেষ্টা চালান। কিন্তু রিপোর্টারদের কি সাধ্যি আছে যে ব্যারিস্টার মওদুদকে কেবল বলা-কওয়াতেই সীমিত রাখবেন? তিনি হলেন ব্লেড- ব্লেড দুদিকেই কাটে- মওদুদ রিপোর্টারদের সামনেও বলতে পারেন, কাগজেকলমেও লিখতে পারেন। তাঁর লেখা সেরকমই একটি বই হলো ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলাপমেন্ট। তাহের হত্যা মামলার শুনানীর সময় আদালতে ঠাঁই পেয়েছে সে-বই, কেননা তাতে তিনি লিখেছেন, জিয়াউর রহমান তাঁর কাছে বলেছিলেন, পাকিস্তানফেরতা সামরিক কর্মকর্তাদের চাপে নাকি জিয়াউর রহমান তাহেরকে ফাঁসি দিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমানের অতীত ইতিহাস অবশ্য বলে, পাকিস্তানঘেঁষা বিবিধ চাপের মধ্যে থাকতেই ভালোবাসতেন তিনি। সানন্দেই এরকম বিভিন্ন চাপ সহ্য করতেন তিনি। উচ্চপদস্থ পাকিস্তানি কর্মকর্তার ‘চাপে’ অকুতোভয় জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে সোয়াত থেকে পাকিস্তান থেকে আসা সামরিক সরঞ্জাম নামানোর জন্যে রওনা হয়েছিলেন, তারপর ভাগ্যের ফেরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও সেনাপতি ওসমানীকে বার বার ক্রুদ্ধ করে তুলেছেন নানা কাজের মধ্যে দিয়ে, তিন-তিনবার ওসমানী বহিষ্ড়্গারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধ জিয়াউর রহমানের সামনে পাকিস্তানি চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার বিরাট এক সুযোগ এনে দিয়েছিল, কিন্তু জিয়াউর রহমানের পাকিস্তানি মন তাতে সায় দেয়নি। এক মুহূর্তের জন্যেও জিয়ার পাকিস্তানি মন শান্তি পায়নি একাত্তর থেকে পচাত্তর অবধি- তার অতৃপ্ত পাকিস্তানি মন প্রথম শান্তি পায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ভোরে, দ্বিতীয় দফায় শান্তি পায় ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ভোরে।
ব্যারিস্টার মওদুদ তাহেরের প্রশংসা করেছেন, আবার তারপরই বলেছেন, ‘কর্নেল তাহেরের বিচার বৈধ বা অবৈধ যাই হোক, একটি ট্রাইবুøনাল গঠন করে তার বিচার হয়েছিল। অন্যদিকে সিরাজ সিকদারকে কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই হত্যা করা হয়েছিল।’ তার মানে, মওদুদ কি বোঝাতে চান, ট্রাইবুøনাল গঠন করে বিচার করলেই সব বৈধ হয়ে যায়? বাংলাদেশে আইনসঙ্গতভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠিত এবং জনগণের রায়ে নির্বাচিত সংসদ থেকে অনুমোদিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের পরও সেটিকে ‘রাজনৈতিকউদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ‘আইনবহির্ভূত’ ইত্যাদি বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন মওদুদ আর তার যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক সঙ্গীরা। ভাড়াটে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যে-অধ্যাদেশের আওতায় বিচার করা হবে, তা আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়। এরকম সব কর্মকাণ্ডের বাজনাদার ব্যারিস্টার মওদুদ কোন মুখে বলেন, ‘বৈধ বা অবৈধ যাই হোক, একটি ট্রাইবুøনাল গঠন করে তার বিচার হয়েছিল’?
আর সিরাজ সিকদার! তার নামও কি মানায় মওদুদের মুখে?
সিরাজ সিকদারের জন্যে এটি একটি বিরাট দুভার্গ্যই বটে- তিনি এখন বস্তাপঁচা ডানপন্থী রাজনীতিকদের পথিকৃৎ উদাহরণ। প্রতি বছর তার জন্মমৃত্যু দিবসগুলিতে ডানপন্থীরা যত মায়াকান্না আর আস্ফালনই দেখাক না কেন, সেসবের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটানো নয় এমনকি সিরাজ সিকদার হত্যার বিচার করাও নয়। বিএনপির নেতা তারেক রহমান তার পিতা জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যেমন মনে করেন, ‘তার হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে কি দেশের উন্নয়ন ঘটবে? তা হলে হয়তো এ বিচার করা যেতো।’, সিরাজ সিকদার হত্যার বিচার সম্পর্কে বিএনপি যে এর চেয়ে উন্নত কোনও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেবেন না, তা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত মনে পড়ছে, এরশাদপতনের পর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার প্রচুর তৈলসহযোগে কল্কে পাওয়ার এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন মজহার এই চেষ্টার অংশ হিসেবে। এই মুহূর্তে সাক্ষাৎকারটি হাতের কাছে নেই বলে উদ্ধৃতি দিতে পারছি না-তবে ওই সাক্ষাৎকারটিতে কি হাসিনা কি মজহার উভয়েই আলোচনা করেছিলেন সিরাজ সিকদার হত্যার ঘটনাটিকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এরকম ঘটনা ঘটানো সম্ভব ছিল কি না ইত্যাদি নিয়ে।
১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যুদ্ধপরবর্তীকালে একটি রাষ্ট্র-সমাজকে যে-সব আদর্শ ও বাস্তবতার সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার উদাহরণ সেসব রাজনৈতিক হত্যা। উদাহরণ রাজনৈতিক অদূরদর্শিতারও এবং অবশ্যই এখনও আমাদের অনেকের পরিবারকে সেসব হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি শোকাচ্ছন্ন করে রেখেছে। আওয়ামী লীগ সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে মুক্ত নয়, যেমন মুক্ত নয় বিরোধী প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলিও। মওদুদ আহমদরা এমনভাবে কথা বলেন যে মনে হয়, আমরা সেসব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলি ভুলে গেছি; মওদুদ আহমদরা এমনভাবে কথা বলেন যে মনে হয়, ওইসব হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে পরবর্তী শাসনামলগুলির হত্যাকাণ্ডগুলিকেও বৈধ করা যায়! বাস্তবতা হলো, হত্যাকাণ্ডগুলির বিচার নয়, বরং সেগুলি নিয়ে রাজনীতি করতেই তারা ভালোবাসেন, ভালোবাসেন জল ঘোলা করতে। যেমন, ব্যারিস্টার মওদুদ আদালতকে বলেছেন, পত্রিকাগুলি তার কথা ঠিকভাবে লেখেনি, আদালতকে তিনি অনুরোধ করেছেন পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু আদালত তাকে লিখিত আবেদন করার আহ্বান জানাতেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন, বলেছেন, চিন্তা করে দেখবেন। সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ড নিয়েও মওদুদ আহমদ যাই বলুন না কেন, মামলা করার আগে অনন্ত চিন্তারাজ্যে নিমগ্ন হয়ে যাবেন।
মওদুদ আহমদরা যাই মনে করুন না কেন, গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালে তাহেরসহ তার অপরাপর সঙ্গীদের বিচার বৈধ ছিল কি না- হাইকোর্টের এই বিচারপ্রক্রিয়া মানুষের সামনে জিয়াউর রহমানের মুখোশটিও খুলে ফেলবে। তাহেরের মতো মহাপ্রাণ আবারও জেগে উঠবে। প্রমাণিত হবে, জিয়াউর রহমান একটি কুখ্যাত, দুর্গন্ধযুক্ত নেংটি ইঁদুর ছাড়া আর কিছু নন। কুখ্যাত নেংটি ইঁদুররা গোপনে, গৃহের সকল মানুষের অনুপস্থিতির সুযোগে গৃহের সবকিছু কেটেকুটে তছনছ করে, সারা ঘরে তোষক-বালিশের তুলো ছড়ায়। জিয়াউর রহমানও তাই করেছিলেন তার শাসনামলে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের ছদ্দাবরণে-একদলীয় বাকশাল থেকে বহুদলীয় শাসনের নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একনায়কতান্ত্রিকতার জগত, সেখানে তিনি ইচ্ছেমতো কাটাকাটি করেছেন গণতন্ত্রকে, খাল কেটে কুমীর এনেছেন, নদীশাসন করেছেন, রাস্তার গাছপালা কেটে সৌন্দর্য ও পরিবেশ দুটোই নষ্ট করেছেন, যাত্রীচলাচলের সুবিধার নামে মিনিবাস এনে যাত্রীপরিবহনের বারোটা বাজিয়েছেন, নদী থামিয়ে সড়ক নির্মাণ করে রেলপথকে ধ্বংস করেছেন, শিক্ষা ও সংস্ড়্গৃতিতে ধর্মান্ধতা ঢুকিয়েছেন, ভোগ্যপণ্যের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে চেয়েছেন মানুষের সূক্ষ্ন-সুরুচিকর আনন্দ অন্বেষণের প্রচেষ্টাকে। মানুষের জীবনকে সস্তা করে তুলেছেন তিনি। ১৯৭৫ আগেও মানুষের জীবন সস্তা ছিল, কিন্তু এত আদর্শহীন ছিল না। তিনি মানুষকে আদর্শহীন করে রেখে গেছেন। আদর্শহীন সেই প্রজন্ম এখন আমাদের সামনে, যাদের পথিকৃৎ তারেক ও কোকো।
তাহের, সত্য বটে, অতীতের বিষয়- কিন্তু সত্যিই কি নিছক অতীত? এই দেশে, যেখানে মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিকদের কারণে বার বার সামরিক শাসন এসেছে, যেখানে আস্তানা গেড়েছে স্বৈরতান্ত্রিক ষড়যন্ত্রকারী ও স্বপ্নবাজ দুর্বৃত্তরা, তাহেরের মতো মেরুদণ্ড উচু করে দাড়ানো মানুষ, জনগণগামী মানুষ, স্বাপ্নিক এক মানুষ কি সেখানে কখনো অতীত হতে পারে? তা ছাড়া সময় আমাদের অতীতের মুখোমুখি দাঁড় করায়, কেননা রাষ্ট্র-সমাজ-রাজনীতির দুষ্টচক্র না চাইলেও ইতিহাস ও সময় সবসময়েই চায় অতীতকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে, প্রাপ্য সম্মান দিতে। তাই আবারও আমরা মুখোমুখি হয়েছি সেই ভয়াবহ অতীতের, যে-অতীতে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল এক দেশপ্রেমিককে। কুখ্যাত জিয়াউর রহমান এ রাষ্ট্রকে কী স্বৈরতন্ত্র, অপশাসন, গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রহীনতার পঙ্কিলে নিমজ্জিত করে রেখে গেছেন, দেশপ্রেমিক তাহেরের উদ্‌ভাসন জগতের সামনে সেই ভয়াবহ সত্য তুলে ধরবে।

অবিশ্রুত

সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!

৮ comments

  1. সৈকত আচার্য - ২৯ জানুয়ারি ২০১১ (১১:০৩ পূর্বাহ্ণ)

    অবিশ্রুত লিখছেনঃ

    জিয়াউর রহমানের অতীত ইতিহাস অবশ্য বলে, পাকিস্তানঘেঁষা বিবিধ চাপের মধ্যে থাকতেই ভালোবাসতেন তিনি। সানন্দেই এরকম বিভিন্ন চাপ সহ্য করতেন তিনি। উচ্চপদস্থ পাকিস্তানি কর্মকর্তার ‘চাপে’ অকুতোভয় জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে সোয়াত থেকে পাকিস্তান থেকে আসা সামরিক সরঞ্জাম নামানোর জন্যে রওনা হয়েছিলেন, তারপর ভাগ্যের ফেরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও সেনাপতি ওসমানীকে বার বার ক্রুদ্ধ করে তুলেছেন নানা কাজের মধ্যে দিয়ে, তিন-তিনবার ওসমানী বহিষ্ড়্গারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানকে।

    এই সত্যগুলো আজকের দিনে জানা থাকা দরকার আমাদের। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়েছেন জিয়াউর রহমান (দেখুনঃ পঞ্চম সংশোধনী মামলা) এবং তার অদ্ভুত কায়দায় গড়ে তোলা রাজনৈতিক দল যেখানে হতাশ চৈনিক পথ ভ্রষ্ট বাম থেকে শুরু করে উগ্রডান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা বিরোধীরা ঠাঁই নিয়েছিলেন। ‘৭৫ এর পর থেকে এই শক্তি একে একে সংবিধান, রাষ্ট্র ক্ষমতা এবং তার খোল নলচে সব কিছু পাল্টানোর ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠে। একটি অভূতপূর্ব স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা একটি জাতির অসাম্প্রদায়িকতার মূল চেতনার ভিত্তি ধরে নাড়া দেন জিয়াউর রহমান, মোশতাক গং এবং উগ্র ধর্মীয়গোষ্টীগুলো যাদের শিরোমণি ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামাত সহ রাজাকার আলবদর শকুন চক্র। ঘাতক গোলাম আজমকে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করা থেকে শুরু করে পাকিস্তান পন্থা এবং উগ্র ডান পন্থাকে রাজনীতির মাঠে দুধ কলা দিয়ে পুষেছেন জিয়াউর রহমান। ফলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ধারায় চালিত করা এই ব্যক্তিটির মুখোশ উন্মোচন হওয়া খুব জরুরী।

    নির্ভীক কর্নেল তাহেরের প্রতিটি শিরায়-ধমনীতে ছিল চে গুয়েভারার মত স্বপ্ন দেখার বিপ্লবী সাহস এবং স্পর্ধা। মৃত্যুকে ভগতসিংহ, এবং সূর্যসেনরা যেভাবে আলিংগন করার দুঃসাহসিক স্পর্ধা দেখিয়েছেন কর্নেল তাহের ছিলেন এদেশে তাদেরই একজন অত্যন্ত যোগ্য উত্তরসূরী যিনি ভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছিলেন মাত্র। দেশ কালে এরা ভিন্ন কিন্ত চিন্তায় এক এবং সম্পূর্ন অভিন্ন। উদ্দেশ্য এদের সব কালেই এক। এরা সম্পূর্ন ভিন্ন ধাতুতে গড়া ক্ষণজণ্মা মহাপ্রান। তাহের দেশের প্রতি ভালোবাসার অন্য রকম টানে সামরিক পোশাক গায়ে চড়িয়েছিলেন। চাকরীর প্রয়োজনে নয় কিন্ত। তাহেরের বুকে ছিল দেশের জন্য সমাজের জন্য এমন এক ভালোবাসা, যার খুব বেশী তুলনা ছিল না। একজন দরিদ্র মওদুদ তাহের বিষয়ক আলোচনায় অতি নিম্নশ্রনীর একজন কীট, তাহের বেঁচে থাকলে এই মওদুদদের দেখার দুর্ভাগ্য হয়তো জাতির হতো না। তাহেররা বেঁচে নেই বলেই হয়তো নর্দমার এই কীটেরা সবখানেই জায়গায় অজায়গায় বারবণিতার মতো আসন পাতেন এবং সব বিষয়েই কিছু একটা বলতে ভালোবাসেন এবং কখনো কখনো ভুল ভাবে সম্মানিত হয়ে যান। মেধাহীন-মেরুদণ্ডহীন কিছু মানুষের কাছে।

    তাহেরের জীবনের বিশেষ ঘটনা বহুল অংশগুলো নিয়ে তাঁরই অনুজের অসাধারন একটি লেখা এটি…।
    এই লেখাটি পড়ার আহবান রইলো সবার প্রতি।

  2. মাসুদ করিম - ২৯ জানুয়ারি ২০১১ (৪:২৬ অপরাহ্ণ)

    সূর্যসেনের মতো বাংলাদেশের ইতিহাসে তাহেরের নাম চিরদিনের জন্য মুদ্রিত হয়ে গেছে। অসফল হলেও তারা মহান হৃদয়ের মানুষ, তারা মৃত্যুঞ্জয়ী, লাখ লাখ সফল মানুষের চেয়ে এই অসফলরাই আমাদের হৃদয়ে আলোর জোগান দেয়।

    আর সফল নেংটি ইঁদুরদের (জিয়া, এরশাদ) কথা তো লেখক বলেছেনই। আর এই নেংটি ইঁদুরেরও চেলা যারা — তারা যতই বই লিখুন আর আইনবিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেদের জাহির করুন না কেন, ওই তাদের চেম্বারে যারা পরবর্তীতে বসবে তারা ওদের মনে রাখবে কি না আমার সন্দেহ আছে।

  3. মাসুদ করিম - ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১:৩৪ অপরাহ্ণ)

    এটা ঠিক মন্তব্য নয় মিসরের ৩০ বছরের ধিক্কৃত স্বৈরাচারী সরকারের বর্তমান গণবিক্ষোভ দমনের ন্যাক্কারজনক কার্যকলাপে মওদুদ বিষয়ক একটা ঘটনা মনে পড়ল — একে টীকা বলা যেতে পারে। ১৯৯০ সালের ০২ ডিসেম্বর বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে মওদুদ বলেছিলেন

    সরকার কিছুতেই নতিস্বীকার করবে না। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের সময় নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের যে দাবি করছে তা অসাংবিধানিক দাবি।

    অবশ্য এর একদিন পরই ০৪ ডিসেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের চাপে এরশাদ উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদকে সরিয়ে দিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন। আর তারপর এই সাহাবুদ্দিন আহমেদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেই এরশাদ পদত্যাগ করেন।

    জানি না, মিসরের গণতন্ত্রের আকাঙক্ষায় কী ঘটবে। এর মধ্যে মুবারক এরশাদের মতোই আরেক বিশ্ববেহায়ায় পরিণত হয়েছেন। এবং সেথানে মওদুদের ভূমিকায় উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে আছেন আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা ওমর সুলাইমান। আমরা তার মওদুদের মত পরিণতি আশা করি এবং মিশরের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সাফল্য কামনা করে একজন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে মুবারকের ক্ষমতা হস্তান্তর কামনা করি। আর সেসাথে এটাও বলতে চাই এরশাদ-মুবারকদের পাশাপাশি সমান ঘৃণায় যেন মওদুদ-সুলাইমানদের নাম উচ্চারিত হয়।

  4. অবিশ্রুত - ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    ত্রিশ বছর ধরে অপেক্ষা করছিলেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ-তাহেরের গোপন বিচার একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ, একদিন নিশ্চয়ই এ অপরাধের বিচার হবে-এই প্রত্যাশা নিয়ে। বলেছেন তিনি, জিয়া একক সিদ্ধান্তে এই রাষ্ট্রীয় অপরাধ সংঘটিত করে, যা তাকে জানিয়েছেন জিয়ার ঘনিষ্ট দুই কর্মকর্তা :

    প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ বলেছেন, জিয়া এককভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্নেল (অব.) আবু তাহেরকে তথাকথিত বিচারের মুখোমুখি করার এবং ফাঁসিতে ঝোলানোর। জিয়ার ঘনিষ্ঠ দুই কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে তাহেরের বিচার কেবল বিরাট ভুলই নয় বরং রাষ্ট্রীয় অপরাধও বটে। আর তিন দশক ধরে বয়ে বেড়ানো এই রাষ্ট্রীয় অপরাধের সুষ্ঠু সমাপ্তি হতে পারে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে। সেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আদালতের।

    বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার লরেন্স লিফশুলজের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্র পক্ষ। বক্তব্যে লিফশুলজ তাহেরের বিচারকে বর্ণনা করেছেন কারা অন্তরালের গোপন বিচার হিসেবে। তাহেরের ফাঁসি কার্যকর ছিল ন্যায় বিচারের নামে অপবিচারেরই নামান্তর। তিনি বলেন, আদালতের এই অনুরোধের জন্য আমি ৩০ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। এটাকে আমি মনে করছি আমার জীবনের পাওয়া অন্যতম সম্মান হিসেবে। অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এডভোকেট এমকে রহমান এফিডেভিট আকারে এ বক্তব্য আদালতে দাখিল করেন।

    লিফশুলজ বলেন, কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে ঘটে যখন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক বৈধতা ছিল না। ফলে বিচারের নামে তাহের হত্যাকাণ্ডে সংবিধান অবমাননা ও মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে। সামরিক শাসনামলে খুব ন্যক্কারজনকভাবে এ ঘটনাটি ঘটেছে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিশেষ সামরিক আদালত-১-এর আইনগত ভিত্তি কি ছিল? এই ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার করা হয়েছে তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া হয়েছিল কি? বিচার কার্যক্রম শুরু হবার আগে তাদের আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কি? এই ট্রাইব্যুনালের কি ধরনের সাংবিধানিক ও নৈতিক বৈধতা রয়েছে যারা মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা দিতে পারে? কর্নেল ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বাধীন এই ট্রাইব্যুনালকে ক্যাঙ্গারু কোর্টের সঙ্গে তুলনা করে লিফশুলজ বলেন, পূর্বনির্ধারিত ও সাজানো মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেছে। এসব প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং জবাব দেয়ার সময় এখনই। আরো বলা যায়, বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত ও বর্ণিত প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারের ধারা বিবেচনায় এসব প্রশ্নের আইনি সমাধান দরকার। আমি সুপ্রিম কোর্টে যেসব বক্তব্য ও তথ্য দেবো সেগুলো হয়ত উল্লেখিত প্রশ্নের জবাব পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

    তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের জুন মাসে আমি ঢাকায় আসি। তখন সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল মঞ্জুর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭৪ সালে নয়া দিল্লীতে। তখন তিনি ভারতে বাংলাদেশের সামরিক এ্যাটাশে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একজন জুনিয়র সেনা অফিসার হিসেবে মঞ্জুর কিভাবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন সেসব দুর্ধর্ষ ঘটনার বর্ণনা আমি তার কাছ থেকে জানতে আগ্রহী ছিলাম। মঞ্জুর তাহের তার দুই সহকর্মী আবু তাহের ও মেজর জিয়াউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান থেকে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশে আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পান। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় এসে আমি জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ ব্যক্ত করলে তিনি একজন লোক পাঠিয়ে ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদর দপ্তরে রাতে যাবার ব্যবস্থা করেন। রাত নয়টায় আমি সেখানে পৌঁছি এবং তিন ঘণ্টা অবস্থান করি। মঞ্জুরের সঙ্গে আমার আলাপচারিতায় ছয় মাস ধরে কারাঅন্তরীণ কর্নেল আবু তাহেরের বিষয়ে বেশি কথা হয়। মঞ্জুর আমাকে জানান তাহেরকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় একাকী বন্দিজীবন যাপন করতে হচ্ছে। এরপর আমি কতদিন বাংলাদেশে অবস্থান করব তা জানতে চায় জেনারেল মঞ্জুর। আমি তাকে জানাই জুনের শেষ দিকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাব। মঞ্জুর আমাকে আপাতত বাংলাদেশে থাকার অনুরোধ করেন এবং আশংকা করেন যে, তাহেরের বিচার করা হবে। মঞ্জুর ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সিনিয়র সেনা অফিসাররা তখন জিয়াকে একাজ থেকে বিরত রাখার জন্যে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মঞ্জুর নিশ্চিত ছিলেন না যে, তাহেরের বিরুদ্ধে তথাকথিত বিচারকার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে কিনা? মঞ্জুর আমাকে জানালেন যে, সেনাবাহিনীর ভেতরে স্বাধীনতা বিরোধী অংশের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েই চলছে। তিনি জোর দিয়ে বললেন যে, আমার (লিফশুলজ) এখন ঢাকায় থাকা খুব দরকার। যদি তাহেরের কোন বিচার হয় তা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রিপোর্ট করা উচিত। তখন তাকে খুব উদ্বিগ্ন ও শংকিত মনে হচ্ছিল। তাই আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিই ।

    লিফশুলজ বলেন, এরপর জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। ঢাকায় তখন ক্রমশই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছিল। আমি তখন জেনারেল জিয়ার সাক্ষাৎকার নেয়ার চেষ্টা করি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমাকে প্রশ্নমালা দিতে বলেন। এ তালিকায় ফারাক্কা বাঁধসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো থাকতে হবে। আমি লিখিত প্রশ্নমালা দিই এবং সে সঙ্গে সাতই নভেম্বরের ঘটনাবলী ও তাহেরের গ্রেফতার সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন জুড়ে দিই। এই সাতই নভেম্বরে কর্নেল তাহের জিয়ার জীবন রক্ষা করেছিলেন এবং তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন। যারা জিয়াকে মুক্ত করে আনেন আর তাদেরকেই এখন আটক করে রাখা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জিয়া আমাকে কোন সাক্ষাৎকার দেননি। এতে আমি বিস্মিত হইনি। কারণ, জিয়া কোন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাননি।

    তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে ঢাকায় এক বিয়োগান্তক অপরাধ সংঘটিত হয়। এ মামলার স্বল্প প্রত্যক্ষদর্শীদের আমি একজন। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুন আমি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারাগারের অন্তরালে সেদিন তাহের ও তার সঙ্গীদের কথিত বিচার শুরু হয়েছিলো। যখন সকালে আমি সেখানে গিয়েছিলাম সেনাবাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে উপস্থিত ছিলো যেন তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বিচার চলাকালে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কয়েকদিন পর আমাকে জোর করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিচার সম্পন্ন হওয়ার কয়েক মাস পর জেনারেল মঞ্জুর আমাকে একটি বার্তা পাঠান যে, তিনি তাহেরের বিচার ও ফাঁসি ঠেকাতে চেষ্টা করেও সফল হননি। যদিও সেনাবাহিনীতে পদমর্যাদার দিক থেকে তিনি ছিলেন তিন নাম্বার অবস্থানে। তখন আমি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজে থাকতাম। সেনাবাহিনীর তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকেও তিনি অসহায় ও ক্ষমতাহীন ছিলেন। যারা তাহেরের মৃত্যু চেয়েছিলো তারা সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী হিসেবে মঞ্জুরকে চিহ্নিত করে। মঞ্জুর নিশ্চিত ছিলেন জিয়া ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাহেরকে এই তথাকথিত বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। জিয়ার ঘনিষ্ঠ দুই কর্মকর্তা আমাকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছিলেন।

    তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৭৬ সালে যা ঘটেছে তাকে কি বিচারকাজ বলা যায়? ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্বেই ফাঁসির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিচারের নামে জোরপূর্বক এক সাজানো নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। কারণ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ একবারই গঠিত হয়েছিলো। তারা আর কোন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। বাস্তবে এই ট্রাইব্যুনাল ছিলো অবৈধ ও অসাংবিধানিক একটি আদালত। যার উদ্দেশ্য ছিলো বিচারের নামে হত্যাকাণ্ড ঘটানো।

    লিফশুলজ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আশা করা যায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অতীতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অবাধ, মুক্ত পরিবেশে ট্রাইব্যুনালের দেয়া তাহেরের দণ্ড পর্যালোচনা করে দেখবে। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার নীতি বিবেচনা করা হবে। তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল-১-এ যা উপেক্ষিত ছিল।

    লিফশুলজ বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি আগেই নির্ধারিত ও সাজানো ট্রাইব্যুনালে তাহেরের ফাঁসির রায় বাতিলের যথেষ্ট কারণ ও যুক্তি রয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে তাহেরের বিচার কেবল বিরাট ভুলই নয় বরং রাষ্ট্রীয় অপরাধও বটে। এমন অপরাধের প্রতিকার রাষ্ট্রের সেই প্রতিষ্ঠানই করতে পারে যার ঐতিহাসিকভাবে অতীতের অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে। আধুনিক যুগে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকায় এমনটি ঘটেছে। বাংলাদেশে একমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান হলো সুপ্রিম কোর্ট, যারা এ কাজটি করতে পারে বলে লিফশুলজ মনে করেন।

    তিনি বলেন, তাহেরের সঙ্গে যাদের বিচার করা হয়েছে তাদেরকে পর্যাপ্ত আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের মৌলিক অধিকার লংঘিত হয়েছে। বিচারটি অবৈধ উপায়ে হয়েছে এবং অবৈধ উপায়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তা সম্পন্ন হয়েছে। যে বিচারের কোন আইনগত ভিত্তি ছিল না। বিচারটি আইনসম্মতভাবে গঠিত কোন আদালতে হয়নি। এটি হয়েছে কারাগারের অভ্যন্তরে। যেখানে সংবাদ মাধ্যমকে বাইরে রাখা হয়েছে। যাতে এই অবিচারের কারণে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশিত না হয়। সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া এবং দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কল্পনা করা যায় তাহেরের অন্তিম বক্তব্য যদি পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতো তাহলে জনগণ কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতো? মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার যিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অসামান্য অবদানের জন্য বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন, তার এমন তথাকথিত গোপন বিচার কিভাবে আইনসম্মত বলা যাবে?

    লিফশুলজ বলেন, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে এক বড় ধরনের নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আপনারা (আদালত) যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন না কেন তার একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য থাকবে। আমার বিবেচনায় তাহেরের এই মামলার একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে। এই রিট মামলার আবেদনকারীরা বহু বছর ধরে এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই দীর্ঘ পথযাত্রায় বহু নারী-পুরুষ দুঃসহ বিস্মৃতিপ্রবণ হয়ে গেছেন। মানব ইতিহাসে এমন দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার পর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা বড় দায়িত্ব। আজ যারা ন্যায়বিচারের জন্য দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তারা আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ও তাদের প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা প্রাপ্য। তিন দশকের পথ চলার সুষ্ঠু সমাপ্তি হতে পারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে। আর সেই দায়িত্ব আদালতের।

    তাহেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ তথ্য নতুন নয়। নতুন করে যা ঘটছে, তা হলো,দেশের আদালতে বিষয়টি উঠে এসেছে-যে বিচার গোপনে হয়েছিল, এবার আদালতই দেখাবে, সেই গোপনীয়তার যৌক্তিকতা কোথায় ছিল, আদৌ ছিল কি না, কেন গোপনীয়তার আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস মিথ্যার থাকে না,যে-সব মিথ্যার ওপর ভর করে জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে, তার সবই একে একে ধ্বসে পড়বে।

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৩ মার্চ ২০১১ (৭:০৮ পূর্বাহ্ণ)

      কর্নেল তাহেরের প্রহসনমূলক গোপন বিচার অবৈধ : হাইকোর্টের রায়

      
      তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ
      প্রথম আলো, ২৩ মার্চ ২০১১

      ১৯৭৬ সালে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, তাহেরসহ অন্যদের বিচার ছিল লোক দেখানো ও প্রহসনের নাটক। এটা কোনো বিচার হয়নি। তাই বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার-প্রক্রিয়া ও সাজা ছিল অবৈধ। বিচার ও সাজা বাতিল করা হলো।

      গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত অভিমতে বলেছেন, ওই বিচার প্রথম থেকেই অবৈধ, আর পুরো বিচারটি ছিল একটি বিয়োগান্ত নাটক ও বানানো বিচার।

      বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি দেওয়ার ঘটনা ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড। ওই বিচার ও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। একই সঙ্গে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি কথিত ওই সামরিক আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

      কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ও অন্যদের রিটের ওপর শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণা করলেন।

      ঘটনার বর্ণনা করে রায়ে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের ১৪ জুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৭ জুলাই তাহেরকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু তাহেরকে যে আইনে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সে আইনে ওই সময় মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান ছিল না। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ’৭৬-এর ৩১ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়। তাই আইনগতভাবে ওই দণ্ড ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই আদালতের বিচারক আবদুল আলী ও অন্যরা বলেছেন, বিচারের সময় তাঁদের সামনে কোনো কাগজ বা নথিপত্র ছিল না। এ ছাড়া আসামিরা জানতেন না যে তাঁদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাঁদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোনো আইনজীবীও দেওয়া হয়নি। এসব বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল ও এর কার্যক্রম ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই বিচার সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার পরিপন্থী।

      এজলাসের ঘড়িতে বেলা পৌনে ১১টা। এজলাসে আসেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ। সঙ্গে ছিলেন জাসদের সভাপতি ও রিট আবেদনকারী হাসানুল হক ইনুসহ অন্যরা। এরপর আসেন কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ছেলে আবু কায়সারসহ পরিবারের সদস্যরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহ্বুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ্দীন মালিক ও তৌহিদুল ইসলাম। রায় দেওয়ার আগে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, শাহ্দীন মালিক ও অ্যামিকাস কিউরি আক্তার ইমাম ও আবদুল মতিন খসরু শুনানিতে অংশ নেন। বেলা একটা থেকে রায় দেওয়া শুরু হয়, শেষ হয় একটা ২৭ মিনিটে। তখন এজলাসে পিনপতন নীরবতা। এ সময় আদালতকক্ষে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

      ঠান্ডা মাথায় হত্যা: তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি ছিল ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড। ওই বিচার ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্যজনক হলো, জিয়া আজ আর জীবিত নেই। তবে ওই বিচারে জড়িত ও সহযোগী অন্তত একজন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল আলী এখনো জীবিত আছেন। ওপরের নির্দেশে ও প্রয়োজনের তাগিদে ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে এমন যুক্তি খাটে না। আবদুল আলীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়েরের কথাও বলেন আদালত।

      জিয়া জড়িত: রায়ে লিফশুলজ ও অন্যদের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে। যদিও বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা এ মামলার বিচার্য বিষয় নয়। ওই সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক ইতিহাস ও সত্যের খাতিরে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এটা খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তা যাচাই করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হলো। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়।

      তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডে স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জয় বাংলা স্লোগান মুছে ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের স্থান রেসকোর্স ময়দানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিণত করেন এবং সেখানে শিশুপার্ক স্থাপন করেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতাবিরোধী কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানকে দেন মন্ত্রীর পদ। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সেনা কর্মকর্তাদের উচ্চপদে আসীন করেন তিনি।

      তাহেরকে শহীদের মর্যাদা: ইতিহাস ও বিভিন্ন নথিপত্র থেকে ওই প্রহসনের বিচার এবং দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত তাহেরসহ অন্যদের নাম বাদ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, তাহেরসহ অন্যরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষোভের শিকার ছিলেন বলেই মৃত্যুবরণ ও কারাবরণ করেছিলেন। তাঁরা জিয়ার স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পাশে না থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাহেরকে দেশদ্রোহের অভিযোগ মুছে দিয়ে মহান দেশপ্রেমিক হিসেবে চিহ্নিত করে শহীদের মর্যাদা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো। কথিত বিচারের মুখোমুখি হাসানুল হক ইনু, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জিয়াউদ্দিনসহ অন্যদের দেশপ্রেমিক হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার কথাও রায়ে বলা হয়।

      আর্থিক ক্ষতিপূরণ বিবেচনা: রায়ে আদালত তাহেরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেন, ওই সময় সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অনেকেই সেনা কর্মকর্তা এবং সরকারি চাকরিতে ছিলেন। কিন্তু গোপন বিচারের কারণে তাঁদের সাজা হয় এবং অনেকে চাকরিচ্যুত হন। যাঁদের সাজা হয়েছিল, তাঁদের পেনশনসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়।

      শেষ পর্যায়ে: রায়ের শেষ পর্যায়ে আদালত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছায় লিফশুলজ বক্তব্য দিতে এসেছেন। সরকারের নয়, আদালতের আহ্বানে তিনি এসেছেন। এ নিয়ে রাজনীতিকেরা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটা অনভিপ্রেত। আদালত সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিচারাধীন বিষয় সম্পর্কে না জেনে এরূপ মন্তব্য সমীচীন নয়।

      প্রতিক্রিয়া: রায়ের একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে, এ আশা প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহ্বুবে আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দুক চিরদিন কারও হাতে থাকে না। একদিন না একদিন তা চলে যায়। এতে তাঁর সংঘটিত অবৈধ কর্মকাণ্ড মুছে যায় না, তা বিচারের আওতায় আসে। তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁকে কোনো দিন ফিরে পাওয়া যাবে না। তাঁর অবদান ও স্মৃতির প্রতি এই শ্রদ্ধা তাঁর পরিবারের জন্য সান্ত্বনা।

      তাহেরের পক্ষে করা রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, আদালত তাহেরের গোপন বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার ও দণ্ড কার্যকর অবৈধ ঘোষণা করেছেন। দেরিতে হলেও সব সময় সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বেআইনি হত্যাকাণ্ড যেকোনো মোড়কেই হোক না কেন, সেটা উন্মোচিত হবেই। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অন্যায় কোনো সমাজই কখনো মেনে নিতে পারে না। এ সত্যটি ৩৫ বছর পর হলেও প্রমাণিত হয়েছে।

      ফিরে দেখা: তাহেরসহ ১৭ জনকে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কর্নেল তাহেরের ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের এবং সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট আদালত তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শুরুতে ওই সময় গোপন বিচারের মুখোমুখি অন্য ছয় ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেন। এই ছয় ব্যক্তি হলেন হাসানুল হক ইনু, রবিউল আলম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদ।

      রিটের শুনানিকালে ১৪ মার্চ মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ, এর আগে ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এম শওকত আলী, বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মহিবুল হক, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফজলুর রহমানও আদালতে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম। তাহেরের সঙ্গে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি কয়েকজনও আদালতে বক্তব্য দেন। চূড়ান্ত শুনানিতে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, এম জহির, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আক্তার ইমাম, এ এফ এম মেসবাউদ্দিন, আবদুল মতিন খসরু, জেড আই খান পান্না ও এম আই ফারুকীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে রাখা হয়।

      একনজরে কর্নেল তাহের
      কর্নেল আবু তাহের ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর ভারতের আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে।
      শিক্ষা: শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পাস শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন ১৯৬০ সালে। ওই বছর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

      মুক্তিযুদ্ধ: মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে কর্নেল তাহের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। ১১ নম্বর সেক্টরের তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। জামালপুরে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালনার সময় আহত হন। পরবর্তী সময়ে ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান।

      রাজনীতি: সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তিনি সিপাহি-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন।

      গ্রেপ্তার ও মৃত্যু: ১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর ফাঁসি হয়। (সূত্র: বাংলাপিডিয়া)

  5. মোহাম্মদ মুনিম - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের অংশ (সপ্তম খন্ড) হিসাবে প্রকাশিত তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অসংখ্য সরকারী বিজ্ঞপ্তি, সামরিক ঘোষণাতে মেজর জিয়ার নাম একটিবারের জন্যও আসেনি। মেজর জিয়ার বহুল আলোচিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণা যা শুনে নাকি সারা দেশ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারকে একবিন্দুও বিচলিত করলো না, ব্যাপারটা খানিকটা অবাক করার মতই। চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক এক প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা তাঁর এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জিয়াউর রহমানের বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ করার পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে, সেটা হচ্ছে অসংখ্য নিরস্ত্র অবাঙ্গালী হত্যা। অবাংগালী নারীদের নিয়ে হারেম খোলার কথাও সেই মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করেছেন। আমোদ ফুর্তির শেষে এই নারীদের গুলি করে হত্যা করা হয়। এক নারীর কয়েক মাসের সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কথাও সেই মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেছেন যে জিয়ার পক্ষের সৈনিকেরা ৭১ এ তাদের ‘দুরাবস্থা’র জন্য প্রায়শঃ ছাত্রদের দায়ী করতো।
    নিজেকে ক্ষমতায় রাখার জন্য তুচ্ছ কারণে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা ছাড়াও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে irreversible ভাবে দুষিত করেছেন। দেশের রাজনীতিতে ইসলাম ঢুকিয়েছেন, রাজাকারদের দেশে এনেছেন, ছাত্ররাজনীতিতে দুর্নীতি ঢুকিয়েছেন। আজকের বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ যুবকের কাছে রাজনীতি মানে টুঙ্গিপাড়ার কোন কিশোরের ১২ বছর বয়সে মিছিলে জোগদান নয়, কর্মচারীদের দাবী আদায়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কৃত হওয়া নয়, রাজনীতি মানে হচ্ছে ‘দেশ গড়া’। সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে করতে ফাঁকতালে ক্ষমতা নিয়ে রাজনীতিবিদদের জেলে পুরে ফেলে, খাল কেটে বা পাবলিক কে আলু খাওয়া শিখানোটাই আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে আসল রাজনীতি।

  6. সায়েম চৌধুরী - ৪ মার্চ ২০১১ (১০:১৩ অপরাহ্ণ)

    কর্ণেল তাহের আজও আমাদের বিপ্লবের স্বপ্ন দেখায়। বাংলাদেশের অনেক তরুণ তাহেরের অসম্পূর্ণ বিপ্লব সফল করতে বদ্ধপরিকর।

  7. মাসুদ করিম - ১০ এপ্রিল ২০১১ (৬:৪৯ অপরাহ্ণ)

    ১৯৭৫ সালে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত সিপাহী বিপ্লবে ইন্ধন দানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ডাচ নাগরিক ডঃ পিটার কাস্টার। গোপন সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের বিচারকে হাইকোর্ট সম্প্রতি অবৈধ ঘোষণা করার পর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন পিটার কাস্টারের ইন্ধনেই কর্নেল তাহের বিপ্লবের নামে শত শত সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন। আর এই অপরাধেই তাহেরের মৃত্যুদন্ড হয়।

    উল্লেখ্য, ’৭৫ সালে বিপ্লবে ইন্ধনের অভিযোগে ড. পিটার কাস্টার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন।
    মির্জা ফখরুলের এই মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে বাংলানিউজ ডঃ পিটার কাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতিক্রিয়ায় ড. কাস্টার বলেন, ‘এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকলে তা হবে সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। আমাকে জড়িয়ে বিএনপি’র এমন অভিযোগের খবরে আমি খুবই মনক্ষুন্ন হলাম।’

    বিস্তারিত পড়ুন : মির্জা ফখরুলের মন্তব্য অবাস্তব, অগ্রহণযোগ্য: পিটার কাস্টার

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.