দুইজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল গত ১৬ আগস্ট। এ চ্যালেঞ্জের মীমাংসা হাইকোর্টে কীভাবে হতো, তা আমাদের আপাতত অজানাই রয়ে গেল রিট আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়াতে। ২২ আগস্ট সকাল বেলা দুই দিনের শুনানির পর হঠাৎ করেই ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, যাকে না কি জামায়াতে ইসলামী তাদের এই আইনি যুদ্ধের প্রধান প্রতিরক্ষা কাউন্সেল নিয়োগ করেছেন, তিনি আবেদন করে বসলেন রিট আবেদনটি ফেরৎ নিতে। এ পর্যায়ে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি উঠানো হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন। আবদুর রাজ্জাক অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, রুল জারি করার বিষয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় রিটটি ফেরৎ নেয়ার জন্যে আদালতে আবেদন করা হয়। রিপোর্টারদের সামনে আবদুর রাজ্জাক যাই বলুন, এটি স্পষ্ট যে বিপত্তি ঘটতে পারে বলেই তারা একটি অজুহাত দাঁড় করিয়ে পিছিয়ে গেছেন এবং সুবিধাজনক সময়ে এরপর আবারও কোনও একদিন কোনও এক বেঞ্চে এই রিট আবেদন আবারও তোলা হবে।
কি জামায়াতে ইসলামী, কি বিএনপি,- মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার নিয়ে অপপ্রচারে এসব দলের কোনওটিই পিছিয়ে নেই। কিন্তু আইনি যুদ্ধ ঘোষণা করে সেখান থেকে যুদ্ধাপরাধী চক্রের এই পিছিয়ে আসার মানে, সত্যিকার অর্থে তাদের ওই চ্যালেঞ্জের কোনও অর্থ নেই, কোনও যৌক্তিকতাও নেই। কিন্তু তারপরও তারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার পণ করে বসে আছে, কেননা তাদের প্রকৃত লক্ষ্য পাকিস্তান রাষ্ট্রটির আদলে বাংলাদেশকে দাড় করিয়ে রাখা, আর ওই কাজে তাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা যুদ্ধাপরাধীরাই। অথচ পাকিস্তানের মতো হয়ে কোনও রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, বিকশিত হতে পারে না, জনগণের মঙ্গল করতে পারে না- পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটিই যার সবচেয়ে বড় সাক্ষী। আইনী তৎপরতার পাশাপাশি তারা তাই খুলে বসেছে অসংখ্য অপপ্রচারের দোকান।
এই অপপ্রচারের একটি সামান্য উদাহরণ হল, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচার থেকে যুদ্ধাপরাধ বিচারকে আলাদা করে দেখা, একটিকে আরেকটির বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর আপ্রাণ অপচেষ্টা। এই কথাটা যে কোনও আইন-বিশেষজ্ঞই জানেন এবং বোঝেন, যুদ্ধাপরাধ অথবা যুদ্ধাপরাধীর বিচার কথাটি ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যাপকতাকে পুরোপুরি ধারণ করা সম্ভব নয়। ওই ব্যাপকতা ধারণ করার জন্যে তাই ব্যবহার করা হয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রত্যয়টিকে। কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যেহেতু যুদ্ধাপরাধীরাই করে থাকেন, সে কারণে সাধারণভাবে তাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেই অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই ব্যাপারে সরকারের জ্ঞানচক্ষু খুলতে বেশ দেরি হয় এবং এ বছরের ১৯ মার্চ বিষয়টি আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জনসমক্ষে আনেন। ১৮ মার্চ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তুতিসংক্রান্ত এক বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের নয়, মানবতাবিরোধীদের বিচার হবে’ (আমার দেশ, ১৯ মার্চ, ২০১০)।
যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী রাজনৈতিক চক্রটি যেন এই কথাটির জন্যেই অপেক্ষা করছিল- ঝাপিয়ে পড়ল তারা একাট্টা হয়ে। আইনমন্ত্রী কীভাবে কথাটি বলেছিলেন, জানা নেই আমাদের- কিন্তু আমার দেশ-এ লেখা হলো, আইনমন্ত্রী নাকি বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব নয়, বিচার করা হবে যুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের।’ বলা হলো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেই না কি তিনি এই মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা বলছেন। তথ্য হিসেবে একটি কথা অনেকেরই জানা আছে হয়তো, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রত্যয়টি আইনমন্ত্রী প্রথম ব্যবহার করেন এ ঘটনারও তিন মাস আগে– ১৩ ডিসেম্বর ২০০৯-এ। এখানে সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমরা কারও বিচার করব না। একাত্তরে যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদেরই বিচার হবে। কাদের হবে, কাদের হবে না- তা সরকার ঠিক করবে না। কেবল বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তা নিশ্চিত হবে। এইভাবে ধোয়াশা ছড়ানো হলো- যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব নয়, এবং সরকারও সেটি চান না। পরদিন আমার দেশ আরও বড় করে বিষয়টি সম্পর্কে ধোয়াশাচ্ছন্নতা তৈরি করার অপচেষ্টা চালালো, বিভিন্ন আইনজ্ঞদের ভাষ্য দিয়ে প্রণীত হলো আরেক রিপোর্ট ‘যুদ্ধাপরাধ না মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এ বিতর্ক (আমার দেশ, ২০ মার্চ, ২০১০)। বলা হলো, সরকারের মধ্যেই এ ব্যাপারে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এইসব রিপোর্টের প্রকৃত উদ্দেশ্য আর কয়েকদিন পরেই বোঝা গেল। আমরা দেখলাম, বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হলো, যুদ্ধাপরাধ বিচারের কথা বলে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের কথা বলছে (প্রথম আলো, তিন এপ্রিল, ২০১০)। বলা হতে লাগল, সরকার কখনো বলছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের কথা, কখনো বলছে যুদ্ধাপরাধ বিচারের কথা- আসলে এসবই বলছে রাজনৈতিক কারণে, কিন্তু শেষমেষ সরকার কোনওটাই করবে না। ভদ্রলোক সিরাজুর রহমান আবার হাহাকার করতে শুরু করলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবের ক্ষমা ঘোষণার কোনো দাম নেই বলে!
অবশ্য, দেলোয়ার বাবাজিরা একথাও বলতে লাগলেন, তারাও চান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হোক! ‘এ কি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে’- আমরা বাক্যহারা হয়ে গেলাম। আর তারা রেকর্ড বাজিয়েই চললেন; যেমন, এই কয়েক সপ্তাহ আগে আবারও আমার দেশ পত্রিকার এক উপসম্পাদকীয়তে এরকম একজন আবারও পুরানো রেকর্ড বাজিয়েছেন নতুন করে, ‘সরকার তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই করছে না! করছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। এ ব্যাপারে সরকারের নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি শক্তিশালী হলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে উৎসাহী নয় কেন?’
আসলে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মধ্যে সম্পর্ক আর পার্থক্য আমরা এই জাতীয় মানুষগুলোর মাথায় কখনোই ঢুকাতে পারব না, কেননা তারা সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে আছেন যে বুঝতে পারবেন না। সাধারণভাবে আমাদের মতো মানুষরা যেসব অপরাধকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে, আইনজ্ঞদের একাডেমিক আলোচনায় এবং বিচারিক পরিভাষায় সেসব অপরাধকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, তবে এক বাক্যে সেগুলিকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ (International Crimes) হিসেবেই বর্ণনা করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং এসব বিচার করতে গিয়ে, বিচারকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থানীয় করতে গিয়ে এভাবেই অপরাপর দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে একেকটি দেশ নিজেদের দেশের অভিজ্ঞতা ও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ নতুন আইন প্রণয়ন করেছে এবং তাদের প্রণীত আইনটি আবার ভবিষ্যতের জন্যে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও যে আইন নিয়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করতে চলেছে, তা যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইনগত ক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশেরই দূর অতীতের দিকে ফিরে তাকানো যাক।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদিকে যখন গণহত্যার তদন্ত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্যে বুদ্ধিজীবীরা সংবাদপত্রে বিবৃতি দিচ্ছিলেন, অন্যদিকে তখন একাডেমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন জার্নাল ও পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধে এসব অপরাধকেই ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রথম গ্রন্থাকারে লেখেন বোধকরি ভারতের বিএন মেহরিশ। ‘ওয়ার ক্রাইমস অ্যান্ড জেনোসাইড: দ্য ট্রায়াল অব পাকিস্তানি ওয়ার ক্রিমিন্যালস’ নামে ১৯৭২ সালে দিল্লীর ওরিয়েন্টাল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত মেহরিশ-এর বইটির ভূমিকার প্রথম প্যারাতে শতাব্দীর সবচেয়ে জঘন্য মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা বর্ষণ, বিভিন্ন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের গ্যাস চেম্বারে মানুষ হত্যা এবং ভিয়েতনামের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করার পর জানানো হয়েছে, এসবের চেয়েও জঘন্য পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ। সামরিক জান্তা বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যে যে-সব জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, বিশ্বইতিহাসে তার কোনও তুলনা নেই বলে জানান লেখক। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় আরও পরিস্কারভাবে লেখা হয়েছে,
There can be no doubt that some of the acts perpetrated by the west pakistani troops against the civilian bengali population of Bangla Desh fall under the rubric of ”crimes against humanity”. Such crimes formed part of the international inquiry by the Nuremberg Military Tribunals set up by the victorious four powers -the USA, USSR, Britain and France–to punish the officers of the Axis armed forces at the end of the Second World War in 1945.
প্রকৃতার্থে, যুদ্ধাপরাধ হিসেবে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তাদের সাধারণভাবে শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধকালীন অপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিভক্ত করা হলেও এমনকি একাডেমিক ক্ষেত্রেও এসব অপরাধকে গড়পড়তাভাবে কখনো যুদ্ধাপরাধ, কখনো আবার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
এ বইয়ের ভূমিকাতেই দেখছি লেখা হয়েছে, ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের মাটিতেই কি পাকিস্তানি আর কি তাদের দালাল সহযোগী সকলেরই বিচার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারায় সেই বিচার কি না শুরু হচ্ছে ২০১০ সালের জুলাই মাসে- ৩৭ বছর পরে। তাও ভালো শুরু হচ্ছে।
ভারতের এক লেখক ১৯৭২ সালেই যুদ্ধাপরাধগুলির মধ্যে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ খুঁজে পেয়েছেন শুনে অনেকের ভ্রু কুঁচকাতে পারে; আমরা তাই বরং ব্রিটিশ মুল্লুকের আরেক বিশেষজ্ঞের কথা বলি। তিনি নিয়াল ম্যাকডারমোট কিউসি- যুক্তরাজ্যের সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ সালে ছিলেন দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট-এর সেক্রেটারি জেনারেল (বাংলায় সাধারণ সম্পাদক না বলাই ভালো- কেননা এখন এক পদের মানুষ আছেন বাংলাদেশে, যারা সেক্রেটারি জেনারেল বললেই বেশি স্বস্তি পান এবং জাতীয়তাবাদী জোশ অনুভব করেন)। নিয়াল ম্যাকডারমোট কিউসি ১৯৭২ সালে যুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং ফিরে গিয়ে প্রথমে ১৯৭২ সালের ১৬ আগস্ট এ-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেকশন অব ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর সামনে। পরের বছর ১৯৭৩ সালে তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারসংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে উপস্থাপিত ওই নিবন্ধটি ইন্টারন্যাশনাল ল’ইয়ার জার্নালে প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘ক্রাইমস এগেইনস্ট হিউম্যানিটি ইন বাংলাদেশ’ (বর্ষ সাত, সংখ্যা দুই ১৯৭৩)।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে দেখানো সম্ভব, সামগ্রিক টার্ম হিসেবে আইনজ্ঞদের ব্যবহৃত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’-ই আমাদের মতো মানুষদের কাছে বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন প্রকারে ঘুরে ফিরে আসে; নিজেদের বলার সুবিধার্থে, বোঝার ও বোঝানোর সুবিধার্থে আমরা তাকে নানা ভাবে বর্ণনা করি। কিন্তু স্বল্প পরিচিতি সত্বেও তা মর্মবস্তুর দিক থেকে, সামগ্রিক টার্মের দিক থেকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ রয়ে যায়। কিন্তু এ নিয়ে বিচারের কাজ যত এগুবে, সরকার, বিরোধী দল, সাধারণ মানুষ এবং যুদ্ধাপরাধী চক্র সবাই জানতে পারবেন, এসবই আসলে আন্তর্জাতিক অপরাধ। আর এ-সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের জন্যে যে আইন রয়েছে, তার নামও তাই International Crimes (Tribunals) Act 1973, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন। দেশের চলমান পরিস্থিতি এ আইনকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে, এ আইন নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে আমরা ততই পরিচিত হবো আন্তর্জাতিক অপরাধগুলির সঙ্গে, সেগুলির বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের বিচার আর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের মধ্যে দেয়াল তোলার কাজে যারা আদাজল খেয়ে নেমেছেন, তারা কানে তুলো দিয়েছেন, পিঠে কুলো বেধেছেন। কোনওভাবেই তাই তাদের এসব বোঝানো সম্ভব নয়। তবে না বোঝার ভান করলেও তারা বোঝে, মানুষ তাদের এইসব কথা গিলতে চাইছে না। তাই তারা একেকদিন একেক অপপ্রচারের গলি খুঁজে বের করছে। অক্লান্তভাবে অপপ্রচার করে চলে চলেছে। শেয়ালের মতো দল বেধে হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া করছে, ৪০ বছর পর যুদ্ধাপরাধ বিচারের কথা বলা মানে জাতিকে বিভক্ত করা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ আইন আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়… ইত্যাদি ইত্যাদি।
(অসমাপ্ত)
অবিশ্রুত
সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: যুদ্ধাপরাধী বিচারের রাজনীতি ২ » International Crimes Strategy Forums