প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো।...

প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো। রাষ্ট্র মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক যুগের দিকে রওনা হলো। ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স-এর প্রতিটি বাক্য রাষ্ট্রশাসকদের শিক্ষা দিলো, রাজনীতি নৈতিকতার নয়, বরং নৈতিকতাই রাজনীতির অধীন। ম্যাকিয়াভেলি বললেন, রাজনীতির সঙ্গে নৈতিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা জানতে পারলাম রাষ্ট্র মানে নৈতিকতা নয়, রাষ্ট্র মানে রাজনৈতিকতা। হুবহু মনে নেই, তবে ওই দ্য প্রিন্সের কোনও কোনও বাক্য এখনও আবছা মনে আছে। যেমন, একটি বাক্য ছিল এরকম : A son can bear with equanimity the loss of his father, but the loss of his inheritance may drive him to despair.
দ্য প্রিন্সের ওই কথাগুলিই বার বার মনে পড়ছে খালেদা জিয়া ‘বাস্তুহারা’ হবার পর থেকে।
ম্যাকিয়াভেলি কি জানতেন, প্রায় ৫০০ বছর পরও পৃথিবীতে এমন কোনও রাষ্ট্র থাকবে, যেটির ক্ষেত্রে তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে অর্জিত ধারণাটি খাপে খাপে মিলে যাবে?

২.
এ কথা বলা সত্যের অপলাপ হবে, জিয়াউর রহমানকে হারানোর পর খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানদের চোখে জল আসেনি। নিশ্চয়ই এসেছিল। কিন্তু তা তত দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠেনি। হতে পারে, মিডিয়ার দশহাত তখনো দশদিককে গ্রাস করেনি। তাই তাদের কান্নামাখা মু্খও আমাদের বার বার দেখার সুযোগ হয়নি। তারা কেঁদেছেন এবং জিয়াউর রহমানকে মনে রেখেছেন, জিয়াউর রহমান নামটিকে ব্যবহারের বস্তুতে পরিণত করেছেন। এই নামটি তাদের এত কিছু দিয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। জিয়াউর রহমান তাতে উজ্জল হননি, কিন্তু আপোষহীন নেত্রী আর যুবরাজ ক্ষমতায় সজ্জিত হয়েছেন। এ জন্যে তাদের জিয়াউর রহমানের কাছে যত ঋণই থাক না কেন, জিয়াউর রহমানের হন্তারকের অনুসন্ধান তারা কখনো করেননি। একজন রাজনীতিকের কাছে জনগণ কান্না প্রত্যাশা করে না, কিন্তু ম্যাকিয়াভেলির কথাকে তুচ্ছ করে রাজনীতিক শেখ হাসিনা রাজনীতিতে আসার প্রথম দিন থেকেই এদেশের জনগণের সামনে বার বার কাঁদতে কাঁদতে আহাজারি করেছেন, ‘আমি আমার বাবা-মা হত্যার বিচার চাই; আমার শিশুভাই রাসেল হত্যার বিচার চাই’। কিন্তু রাজনৈতিক খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের মুখে জিয়া হত্যার বিচারের দাবির কথা যারা শুনেছে, তাদের বিরল সৌভাগ্যের অধিকারীই বলতে হবে। বরং এই কিছুদিন আগে, লন্ডনের ফ্রি বাংলা সাপ্তাহিক ‘বাংলা টাইমস’-এর সুবাদে জানা গেছে, প্রবাসী বিএনপি নেতাদের নিয়ে তারেক রহমান যে বৈঠক করেছেন, সেখানে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘জিয়া হত্যার বিচার করে তাকে যদি ফিরিয়ে আনা যেত, এবং দেশের উন্নয়ন হতো তা হলে এ বিচারে আগানো যুক্তিযুক্ত ছিল।’
অতএব খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানরা কোনওদিন কোনও জনসভায় কিংবা বৈঠকে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি!
এইভাবে তারা পারিবারিক বন্ধনের একটি প্যাটার্ন যেমন তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনি তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক বোঝাপড়ারও একটি প্যাটার্ন। তাদের কেউ ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স পড়েছেন কি না জানা নেই আমাদের, তবে এটুকু বুঝতে পারি, ম্যাকিয়াভেলির দর্শনই তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার গন্তব্য- রাজনীতি ও নৈতিকতার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার চাওয়ার মানে তো শুধু হত্যাকারীর বিচার চাওয়া নয়, বরং সামরিক বাহিনীর চরিত্র ও গন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা। সামরিক শাসনের বিরোধিতা করা যায়, কিন্তু সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের বিরোধিতা ও বিচার করা যায় না, করা উচিতও না- ক্যান্টনমেন্টের গহ্‌বর থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং খালেদা জিয়া নানা ভাবে এই বক্তব্য পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে।
ফলত আমরা দেখেছি, জিয়াপরিবার জিয়াকে হারানোর বেদনা সহ্য করেছেন, কিন্তু সম্পদ হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারেননি। খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে কেঁদেছেন। অবশ্য হজ্জফেরৎ আমানুল্লাহ আমান বলেছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেশের জনগণও কেঁদেছেন এবং শুধু তাই নয়, হজে যাওয়া হাজার হাজার মুসুল্লীও কেঁদেছেন- কেঁদে কেঁদে তারা আল্লার কাছে প্রার্থনা করেছেন জুলুমবাজ এ সরকারের হাত থেকে আমাদের মুক্তি দাও
এত হাজার হাজার মানুষ যেখানে কাঁদছে, শোকাহত বিএনপির পক্ষে সেখানে হরতাল ডাকা খুবই স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী পরিণতি ভোগ করতে হবে বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকারকে বিএনপি নেতারা তার তালিকাও দিতে শুরু করেছেন। বাড়ি নিয়ে খালেদা জিয়া এবং বিএনপি এতই শোকাহত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন যে ঈদে বাড়ি ফেরার জন্যে প্রস্তুতি নেয়া লাখ লাখ মানুষের কথা তাদের মনে ছিল না- হরতালের পর তাদের হুশ ফিরল এবং ঈদের পরপরই আবারও হরতালকর্মসূচির গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতারা আমাদের আশ্বস্ত করলেন, ‘সরকার হরতালের গুজব ছড়াচ্ছে।’ কিন্তু তার পর-পরই আমরা জানতে পারলাম, আবারও হরতাল আসছে। তবে এবার আর বাড়ির কথা নয়, এবার তারা সতর্ককণ্ঠে বললে জনগণের এখন অনেক সমস্যা- এসব সমস্যা দূর করার জন্যেই হরতাল ডাকা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন থেকে বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত জনগণ ও দেশের অন্তহীন সমস্যা দেখেও খালেদা জিয়ারা হরতাল দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু বাড়ি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখে তারা অন্তহীন সমস্যা দেখতে শুরু করলেন।
ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্সের শুরুর দিকেই একটি কথা আছে : A prince never lacks legitimate reasons to break his promise. আমাদের দেশের রাজনীতিকরাও অনায়াসে তাদের নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন, এবং সেসবের পক্ষে নির্বোধের মতো যুক্তিও দাঁড় করাতে পারেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শতবর্ষ পরে পঠিত হবেন কি না তা নিয়ে আবেগান্বিত হয়ে কবিতা লিখেছিলেন। ম্যাকিয়াভেলি তার দ্য প্রিন্স কে পড়বে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তাও করেননি, বইটিই ছাপা হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে। অথচ পাঁচশ বছর পরেও তাঁর আলোয় আলোকিত হতে দেখছি আমরা আমাদের রাজনীতিকদের!

৩.
খালেদা জিয়া যখন ঈদের দিন বিকেলে ইস্কাটন গার্ডেনে বসে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন আর নিজেকে বাস্তুহারা বলছিলেন, তখন কি তার মনে একবারও এই প্রশ্ন জেগেছে যে বাস্তুহারা আসলে কাকে বলে? বাংলাদেশে বাস্তুহারা কারা?
এই বাস্তুহারারা ঈদের দিন কীভাবে বাড়ি ফিরেছেন, কর্পোরেট-সংবাদপত্রের চোখ বাঁচিয়ে তার খানিকটা তুলে ধরেছেন সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ প্রথম আলোয়। তার কাছে খালেদা জিয়াকে অবশ্য দুঃখিনী রানীই মনে হয়েছে, মনে হয়েছে দুয়োরানী, মনে হয়েছে তার চরিত্র হনন করা হয়েছে। তিনি এ-ও লিখেছেন, এই প্রথম তিনি (অর্থাৎ খালেদা জিয়া) টের পেলেন, জনগণের ঊর্ধ্বে অন্য কারও আশ্রয় তাঁর আর নেই! আমরা জানি না, খালেদা জিয়া তা সত্যিই টের পেয়েছেন কি-না। তিনি আন্দোলনের জন্যে যে-পথ ধরেছেন, তা থেকে ওরকম সিদ্ধান্ত নেয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য। তবে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক এবি এম মুসাকেও দেখছি, একই রকম কথা লিখতে : বেগম জিয়াকে যেভাবেই হোক, ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আনা তাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। দেশনেত্রীকে সরকার দেশের মানুষের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এ-দুটি লেখা যে-সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে সেই প্রথম আলোর সংবাদ থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া নিজে থেকেই। প্রথম আলোর সেই খবর অনুযায়ী, ১, ৪, ৯ এবং ১০ নভেম্বর ছোট-বড় অর্ধ শতাধিক কার্টন, কয়েকটি বড় ব্যাগ, বড় স্টিলের ট্রাঙ্ক ইত্যাদি ওই বাসা থেকে সরানো হয়েছে। এ খবর সত্যি হলে, খালেদা জিয়া সত্যিই দারুণ একটি নাটক করেছেন; বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরানোর পর ঠিক বের হ্ওয়ার দিন ঘরে না যাওয়ার জন্যে ঘরে দরজা দেয়ার নাটক সে-হিসাবে সত্যিই উপভোগ্য। আবার সরকার সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে যে-ভাবে সারা বাসভবন ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখিয়েছেন, তা-ও আরেক উপভোগ্য নাটক। সাংবাদিক মশিউল আলমের কলাম থেকে আমরা জানতে পারছি, আইএসপিআর এখন আওয়ামীপ্রীতির খোলস পরে কত রকম বিচিত্র খেল দেখাচ্ছে! এরকম একটি গৃহপালিত আইএসপিআর দেখে আওয়ামী নেতারা বেশ গদগদে আহ্লাদে গলে পড়ছেন। গলতে গলতে তারা যে অচিরেই মাটি আর মেঝেতে গড়াগড়ি খাবেন তা তারা টেরও পাচ্ছেন না। সে যাই হোক, এ কথা তো ঠিক, খালেদা জিয়াকে বাড়িহারা, ঘরহারাদের মতো করে ঈদের জন্যে বাড়ি ফিরতে হয়নি। সহানুভূতিশীল অনেকে অবশ্য শহীদ মইনুল রোডের বাসায় খালেদা জিয়ার বহুদিনের সঞ্চিত স্মৃতির কথা বলছেন। কিন্তু সঞ্চিত স্মৃতিই যদি বাড়ি ধরে রাখার প্রধান যুক্তি হয়, তা হলে আমরা দেখব, বাংলাদেশের সরকারি কোয়ার্টার, বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার সবই বহু স্মৃতির আধার- কিন্তু ওইসব বাসায় বসবাসকারী কেউই পারেন না সেসব ফ্ল্যাট বা বাসা আমৃত্যু ধরে রাখতে। হাসান আজিজুল হকদের মতো ব্যক্তিরা কি পেরেছেন তাদের ২০/৩০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত ফ্ল্যাটে থাকতে? নাকি তা ছেড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে আসতে হয়েছে? আমাদের সময়-জাতীয় পত্রিকাগুলি এখন লিখছে, সেখানে না কি জাদুঘর করার স্বপ্ন ছিল। খালেদা জিয়া বাড়ি না হারালে এই স্বপ্নের কথা আমরা কোনওদিনই জানতে পারতাম না।
এই ‘বাস্তুহারা খালেদা জিয়া’ বিগত সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতাপূর্ণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে জানান দিয়েছিলেন, তার আয়ের উৎস হলো ‘বাড়িভাড়া দেয়া’। বাড়িভাড়া দেয়ার মতো তার সেই বাড়িটি হলো, ৩১ কাঠার ওপর বিস্তৃত গুলশানের বাড়ি। খালেদা জিয়া তার ওই বাড়ি থেকে ভাড়া বাদ যে-আয় দেখিয়েছিলেন, কেবল তার জন্যেই তাকে এক বছরে আয়কর দিতে হয়েছিল তখন প্রায় ১৬ লাখ টাকা। জানি না, স্বাভাবিক সরকার ফিরে আসার কারণে তিনি আবারও আয়কর দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন কি না। কিন্তু এই কথাটি কি কেউ বুঝিয়ে দেবেন আমাকে, যিনি বাড়িভাড়া থেকে আয় বাবদ বছরে ১৬ লাখ টাকা আয়কর দেন, তিনি বাস্তুহারা হন কেমন করে?
বাড়িটি জিয়া পরিবার পেয়েছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে, অবৈধভাবে। ১৯৮১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরপরই জিয়া পরিবারকে দু’টি বাড়ি দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। একটি বাড়ি দেয়া হয় ৩১ কাঠার ওপর গুলশানে। অন্যটি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে গেলে ডিওএইচএস-এ দেয়াই উচিত ছিল। কিন্তু জিয়া হত্যার বিচারের নামে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করে আর ফাঁসি দিয়েও এরশাদ তার গা থেকে জিয়া হত্যার গন্ধ মুছতে পারছিলেন না। অতএব তিনি ১৯১১ সালের সেনা আইন লঙ্ঘন করলেন। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসাও বরাদ্দ দিলেন। এ ছাড়া দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার মাকেও ৪৬ একর জুড়ে বিস্তৃত মাতাসাগরসহ কিছু জমি লিজ দিয়েছিলেন এরশাদ – যে-লিজের চার লাখ টাকা আর শোধ করা হয়নি। এরশাদ জিয়া পরিবারকে এতসব সুবিধা দিয়েছিলেন, কেননা তিনি চেয়েছিলেন, ক্যান্টনমেন্টের বাসায় থেকে খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না। সাপও মরবে, লাঠিও বাঁচবে। কিন্তু এরশাদ একবারও চিন্তা করেননি, তিনি যেমন ১৯১১ সালের সেনা আইন লঙ্ঘন করে বাসভবনটি দিয়ে দিচ্ছেন, খালেদা জিয়াও তেমনি সেনাভবনের নিয়ম উপেক্ষা করে রাজনীতি করতে পারেন। খালেদা ক্যান্টনমেন্টে থেকে রাজনীতি করতে পেরেছেন,- কেননা তিনি জিয়া হত্যার বিচার চাননি, তিনি সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, তিনি বরং এরকম ধারণার জন্ম দিয়ে চলেছিলেন- বিএনপিই তো আছে, সামরিক বাহিনীর কী দরকার সামরিক শাসনের বদনাম ঘাড়ে টেনে নেয়ার! এইভাবে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের সবচেয়ে রেজিমেন্টেড ফোর্সটির মধ্যে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন।
কিন্তু কেবল আন্তর্জাতিক বিশ্বপরিস্থিতিই নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইচ্ছাই নয়, খালেদা জিয়ার জোট সরকারের শাসনামল জুড়ে দুর্নীতি-অনিয়ম-জোর যার মুল্লুক তার কায়দার শাসনও খালেদা জিয়ার সেনাভিত্তিতে ফাটল ধরিয়েছে। বহু সামরিক শাসনের জল খাওয়া সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন চান সামরিক বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিকতা ও পেশাদারিত্বকে অন্যভাবে বিবেচনা করতে। তারা হয়তো কর্নেল তাহেরের মতো বিপ্লবাত্মক চিন্তা করেন না, কিন্তু সামরিকতন্ত্রের এঁদোডোবাতেও গড়াগড়ি খেতে চান না। সামরিক জান্তা জিয়ার জনপ্রিয়তা, সামরিক শাসনের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া বিএনপির জনপ্রিয়তা তাই সামরিক বাহিনীর ওপর জিয়া পরিবারের ও বিএনপির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে যথেষ্ট ছিল না। অনেক ঘাটের জল খেয়ে খালেদা জিয়া এখন এই সত্যের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি এই সত্যকে এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না, খানিকটা উপলব্ধি করলেও মেনে নিতে পারছেন না। এর ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, তিনি এখন সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানগুলিতে যাওয়া বাদ দিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর থেকে দূরত্বে থাকার পরও বিগত বছরগুলোয় শেখ হাসিনা যে-কাজ করেননি, খালেদা জিয়া সেই কাজ করে বসেছেন তার বহুল কথিত আপোষহীন ভাবমূর্তির জোরে। আমাদের অনেকের আবার এ-কারণে মনে হচ্ছে, তিনি বোধহয় জনগণের কাছে নেমে এসেছেন!

৪.
অনেকে বলছেন, এও এক প্রতিহিংসাপরায়ণতা- গণভবন নিতে পারেননি বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আয়োজন। যারা এটি বলছেন, তারা কেউই মনে করছেন না ২০০১ সালের অক্টোবর মাসের পর বাংলাদেশে কী ঘটেছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ তার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। আবার উল্টো এ-ও হতে পারে, আওয়ামী লীগে ছিঁচকে মাস্তানই বেশি, তাই তারা ম্যাকিয়াভেলির বাণীকে ধারণ করেছে এবং ২০০১ পরবর্তী হত্যা-ধর্ষণ-লুণ্ঠনের কথা ভুলে গিয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদিতে মেতে উঠেছে। কারণ যাই হোক না কেন, আমাদের জন্যে এটি একটি সৌভাগ্য, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে যে-ধরণের প্রতিহিংসাজনিত খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের খবর আমরা পেতাম, এবার ঠিক সে ধরণের খবর আমাদের পেতে হয়নি। তবে তার বদলে আমরা যে-সব খবর পেয়েছি এবং পাচ্ছি, তাতে প্রতিহিংসা না থাকলেও রয়েছে উন্মত্ততা, বিকৃতি, লোভ, লুটেরার হিংস্রতা, দুর্বৃত্তের পাশবিকতা।
খালেদা জিয়া ‘বাস্তুহারা’হওয়ার আগে থেকেই আমাদের সেইসব উন্মত্ততা, বিকৃতি, লোভ ও লুটেরার হিংস্রতার খতিয়ান দেখাতে শুরু করেছেন। আর এখন তার দেশের সমস্যার কথা মনে হচ্ছে। যদিও বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষমতায় গেলে কী কী করবে, তার একটি তালিকা হতে পারে এরকম : ১. তারা বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামের সামনে জিয়ার প্রতিকৃতি স্থাপন করবে এবং বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামকে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর বানাবে, ২. সুধা সদনকে জিয়া জাদুঘর বানানো হবে; ৩. খালেদা জিয়া তাও টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মোছার সময় পেয়েছেন, কিন্তু শেখ হাসিনাদের সেটুকু সময়ও দেয়া হবে না; ৪. শেখ হাসিনাদের ১৫ আগস্টের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে (এর সরলসোজা অর্থ হলো, ১৯৭৫-এর আগস্টে যে ভুল হয়েছিল, ভবিষ্যতে সে-ভুল হবে না, একযোগে বাংলাদেশে, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে ও ফিনল্যান্ডে অবস্থানরত শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করা হবে!); ৪. সুধা সদন নামের এই প্রাসাদটির ভেতরে ও বাইরে কী আছে– তা আইএসপিআর-এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের অবহিত করা হবে; ৫. ড. ওয়াজেদের মতো সাধারণ সরকারি চাকুরে কী করে সুধা সদন নির্মাণ করেছেন তার তদন্ত হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এইসব কথাবার্তা অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার খুব গ্রাহ্যের মধ্যে নিচ্ছেন বলে মনে হয় না। ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার যে স্বপ্ন জনগণকে আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়েছিল, সম্প্রতি সেই স্বপ্নের উল্টো রূপ জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। বাসভবন নিয়ে এই টানাহেঁচড়ায় সে-সংবাদ এখন মাঠে মারা গেছে। অতএব তারা বেশ স্বস্তেই আছেন। তা ছাড়া তারা এখন সামরিক উপপ্রধানের বাসভবনে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর। যদিও ১৯১১ সালের সেনা আইন অনুযায়ী, এ ধরণের স্থাপনা নির্মাণও সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার তালবেলেমরা এই বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ঢাকঢোল বাজিয়েই চলেছেন।
অথচ যারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতে চান, তাদের তো এতদিনে অন্তত জানার বা বোঝার কথা, সামরিকতন্ত্র খুবই নোংরা ও ভয়াবহ এক শক্তি- নিজেকে পুতপবিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সে সামরিক জান্তাকেও ঝেড়ে ফেলতে দ্বিধা করে না। সামরিকতন্ত্র নিজের প্রয়োজনে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানকে ঝেড়ে ফেলেছে, নিজেকে রক্ষার প্রয়োজনে এরশাদকেও ছুঁড়ে ফেলে সাধু সেজেছে, অন্তরালে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালনা করে নিজেদের ভাবমূর্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ বেশ আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে এ হেন সামরিকতন্ত্রের উদ্গাতা সামরিক বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভেবে। আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছরের শাসনামলে বেসামরিক প্রশাসনে (জনপ্রশাসনে) কমবেশি ১২২ জন অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এরকম সামরিক কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৮৮। সামান্য এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার আসলে সামরিক বাহিনীর একটি অংশকে সুবিধাভোগী করে তুলে নিজেদের নিরাপদ মনে করার আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্যান্টনমেন্ট-এর বাড়ি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার জন্যে এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা– যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সামরিক বাহিনীপ্রধান হারুন উর রশিদ, যিনি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অবসর নেয়ার পর বেশ সুবোধ বালকের মতো রাষ্ট্রদূতের পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। এরা সংবাদ সম্মেলনে গুনে গুনে কথা বলেছেন, তারপর লিখিত বক্তব্যের খামে এক হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেছেন রিপোর্টারদের। আর এই ঘুষ দেয়ার কাজটি যাতে নির্বিঘ্নে করা যায়, বোধকরি সেজন্যেই এই সংবাদ সম্মেলনে আমার দেশসহ কয়েকটি পত্রিকার রিপোর্টারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সামরিক কর্মকর্তারা এখন বলার চেষ্টা করছেন, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি… এটা মিডলেভেলের কর্মকর্তাদের কাজ… ইত্যাদি ইত্যাদি।
অন্যদিকে খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠান বর্জন করলেও এটি বলা ভুল হবে না যে, বিএনপি ও তিনি নানাভাবে চেষ্টা করছেন সামরিক বাহিনীর আস্থা অর্জন করতে। আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা অর্জন করতে। কেননা খালেদা জিয়া ও বিএনপি ভালো করেই জানেন, বিএনপির মতো সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয় আন্দোলন করে এগিয়ে যাওয়া। বিএনপি হত্যা-ক্যু ভালো বোঝে, গ্রেনেড হামলা ভালো বোঝে, সামরিক আদালতে ফাঁসি দেয়া ভালো বোঝে, চৈনিক বামপন্থীদের কীভাবে নিজেদের ভাবশিষ্যে রূপান্তরিত করা যাবে সেটিও জানে, কিন্তু আন্দোলন করা জানে না। বিএনপি এতদিন সামরিক বাহিনীকে বুঝিয়ে এসেছে, আওয়ামী লীগ সামরিক বাহিনীর ভালো চায় না, চায় না বলেই রক্ষী বাহিনী করেছিল- সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বহুদিন এই কথা বিশ্বাস করেছেন এবং এখনো নিশ্চয়ই অনেকে এ কথা বিশ্বাস করেন। চূড়ান্ত অর্থে বলতে গেলে,খালেদা জিয়ার লক্ষ্য এই বিশ্বাসীদের দিয়ে আসলে একটি গৃহপালিত সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। খালেদা জিয়ার এক মুখপাত্র এখন বিশিষ্ট এক সাংবাদিক প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন; আরেক মুখপাত্র এক যুদ্ধাপরাধী, তিনি নানাভাবে উস্কানোর চেষ্টা করছেন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের। লক্ষ্য পরিষ্কার, গৃহপালিত সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে যখন সামরিক শাসন আসার কথা শোনা যাচ্ছিল, তখনও খালেদা জিয়া ভেবেছিলেন একটি গৃহপালিত সামরিক সরকারই আসবে। কিন্তু সেরকম ঘটেনি।
এখন, সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানগুলি বর্জন করার মধ্যে দিয়ে খালেদা জিয়া হয়তো এই বার্তা দিতে চাইছেন, তারা জনগণের কাতারে নেমে এসেছেন এবং এইভাবে সামরিকতন্ত্রের নৈকট্যে যাওয়ার নিভৃত সাধনাকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে। বাস্তবতা হলো,২০০৯ সালে কাউন্সিল উপলক্ষে বিএনপি যে ওয়েবসাইট তৈরি করেছিল, সেখানে পরিষ্কারভাবেই লেখা ছিল, বিএনপি হলো রক্ষণশীলতা, কর্পোরেটবাদিতা, জাতীয়তাবাদ, সামরিকতন্ত্র, নৈরাজ্যবাদবিরোধী, সাম্যবাদবিরোধী উপাদানের সমন্বয়ে একেবারেই মধ্যপন্থার নীতি অনুসরণকারী একটি দল। তাদের দলীয় ওয়েবসাইটেও লেখা আছে একই কথা। সেখানে উপরি হিসেবে আরও ঘোষণা করা হয়েছে যে, এটি ব্যবসায়ী, সামরিক কর্মকর্তা এবং রক্ষণশীলদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়!
যে দল ব্যবসায়ী, সামরিক কর্মকর্তা ও রক্ষণশীলদের কাছে প্রিয় হওয়ার সুবাদে নিজেকে ধন্য মনে করে, সে দলের কাছ থেকে জনগণের আর কিইবা পাওয়ার আছে!
সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠান বর্জন করার মধ্যে দিয়ে তাই সেনাবাহিনীর সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানদের বিচ্ছেদ হওয়া বুঝায় না, জনগণের মধ্যে নেমে আসা বুঝায় না। যদি তারা বিচ্ছেদের বার্তাই পৌঁছে দিতে চান, তা হলে বিএনপির উচিত জনগণের কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে এই দাবি করা- সামরিক শাসন আনার পথ সাংবিধানিকভাবে রুদ্ধ করা হোক। পিলখানা হত্যার ঘটনার বিচার ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি তাদের দাবি জানানো উচিত, রাজধানীর বুক থেকে জনস্বার্থে ক্যান্টনমেন্ট ও বিডিআরনিবাস তুলে দেয়া হোক। তাদের বলা উচিত, রূপগঞ্জের ঘটনার জন্যে দায়ী সামরিক কর্মকর্তাদেরও বিচার করা হোক, ঠিক যেভাবে বিচার করা হয়েছে ব্যারিস্টার তাপস হত্যাপ্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সামরিক কর্মকর্তাদের। পৃথিবীতে এমন দেশ নিশ্চয়ই বিরল যেখানে রাজধানীর বুকে ক্যান্টনমেন্ট আছে। ঢাকা নগর উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদদের অনেকে অনেক আগে থেকেই পিলখানা ও ক্যান্টনমেন্টকে গার্মেন্টস ও ট্যানারি শিল্পের মতো ঢাকা মহানগরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছেন। কিন্তু গার্মেন্টস ও ট্যানারি যেমন, ঠিক তেমনি পিলখানা ও ক্যান্টনমেন্টও বহাল তবিয়তেই রাজধানীর বুকে বুক টান করে টিকে আছে।
কিন্তু আমরা জানি, বিএনপি সেরকম কিছুই বলবে না। কেননা বিএনপি আসলে চাইছে একটি গৃহপালিত সামরিক সরকার। সেটিই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান সম্পর্কে কঠোর বিরোধিতা দেখানোর মধ্যে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে নীরব সুসম্পর্ক লুকাতে সক্ষম হয়েছিল তারা। এখন সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার মধ্যে দিয়েও খালেদা জিয়া সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের সকল চিহ্ন লুকানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গৃহপালিত সামরিক সরকার এলে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন ফিরে পাওয়া যাবে, যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়া যাবে, সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারের নাম তো নস্যি- বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামের নাম পাল্টে ফেলা যাবে, কালো টাকা শাদা করার জন্যে যে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছিল, তা সুদে-আসলে-চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করে নেয়া যাবে, কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হলো গরীবের ঘোড়া রোগ- ওই রোগটা দমন করা যাবে, কৃষকের ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া রুদ্ধ করা যাবে, আবারও খাম্বার খুঁটির ব্যবসা করা যাবে।
অবশ্য তাতে যানজট কমবে না ঢাকা শহরের, বিদ্যুৎ সমস্যাও দূর হবে না সারা দেশের- দেশের ও জনগণের সমস্যা দূর করার জন্যে প্রয়োজন হয় হরতালের; সরকারের না। সরকারের প্রয়োজন হয় জনগণ ও দেশ শাসন করবার জন্যে, তারা সেই দায়িত্ব পালন করলেই যথেষ্ট! বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো জনগণের সমস্যা দূর করার,জনগণের সমস্যা দূর করার স্বার্থে হরতাল করার দায়িত্ব তখন নতুন বিরোধী দলের কাধে বর্তাবে!
ম্যাকিয়াভেলির তত্ত্ব এরা ভালই রপ্ত করেছেন : A prince never lacks legitimate reasons to break his promise.

অবিশ্রুত

সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!

৯ comments

  1. নীড় সন্ধানী - ২৯ নভেম্বর ২০১০ (৯:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    চমৎকার ভারসাম্যপূর্ন একটা আলোচনা। তবে যে দুর্ভাগ্য থেকে এদেশের রাজনীতি বেরিয়ে আসতে পারছে না তা হলো, যখন যে দলই ক্ষমতায় থাক, যতই জনগনের ভোটে নির্বাচিত হোক, যতই গণতান্ত্রিক দল হোক, তাদেরকে নির্বাচনের আগে পরে হাসি কাশি দিয়ে ক্যান্টনমেন্টের সুদৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। হরতালে যদি ক্যান্টনমেন্টের কাজকর্মে কোন ব্যাঘাত ঘটাতো, তাহলে এদেশে জীবনেও হরতালের ডাক দিত না কেউ।

  2. অবিশ্রুত - ২৯ নভেম্বর ২০১০ (৭:২৩ অপরাহ্ণ)

    বাড়ি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে হেরে গেছেন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে সর্বশেষ সংবাদ এসেছে বিডি নিউজ ডট কমে। এতে বলা হয়েছে:

    ঢাকা, নভেম্বর ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ির দখল নিয়ে আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবেই হারলেন খালেদা জিয়া।

    বাড়ি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের আবেদন সোমবার খারিজ করেছে আপিল বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে।

    বাড়িছাড়া নিয়ে আদালত অবমাননার যে আবেদনটি বিএনপি চেয়ারপারসন করেছেন, তা অবশ্য আমলে নিয়েছে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ। তবে বাড়িটি ফিরিয়ে দেওয়ার যে আবেদন ছিলো, তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

    কঠোর নিরাপত্তা, আর উত্তেজনার মধ্যে সোমবার আপিল বিভাগে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল সড়কের ওই বাড়ি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার চারটি আবেদনের শুনানি হয়, এর মধ্যে তিনটিই তার বিপক্ষে গেছে। আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি হয়েছে।

    আপিল বিভাগের আদেশের পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। অন্যদিকে আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা।

    প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদাকে ১৯৮১ সালে দেওয়া মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটির ইজারা অনিয়মের কারণে দেখিয়ে বর্তমান সরকার বাতিল করে।

    এরপর এ বছরের এপ্রিলে খালেদাকে ওই বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেয় সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস বোর্ড। এর বিরুদ্ধে খালেদা রিট আবেদন করলে গত ১২ অক্টোবর হাইকোর্টে খালেদার বিপক্ষে রায় দেয়।

    বেআইনিভাবে ওই বাড়ি ইজারা দেওয়া হয়েছিলো জানিয়ে হাইকোর্ট বাড়ি ছাড়তে খালেদাকে এক মাস সময় দেয়। একমাস পর গত ১৩ নভেম্বর খালি করা হয় ওই বাড়ি।

    তবে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা আপিলের আবেদন করলেও শুনানিতে স্থগিতাদেশের আবেদন পরিচালনা না করায় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি।

    বাড়িছাড়া হওয়ার পর গত ২৩ নভেম্বর আদালত অবমাননা ও বাড়ি ফিরে পেতে আরো দুটি আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

    হাইকোর্টের রায় স্থগিত আবেদন, ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন, ওই বাড়ি থেকে ‘উচ্ছেদের মাধ্যমে’ আদালত অবমাননার আবেদন এবং বাড়িটি আগের অবস্থায় ফেরত চেয়ে করা আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিলো সোমবার।

    প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার বেলা ১১টার দিকে আপিল আবেদন খারিজের আদেশ দেয়। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এর শুনানি শুরু হয়।

    বাড়ি থেকে ‘উচ্ছেদের মাধ্যমে’ আদালত অবমাননার আবেদনটির ওপর দুপুর ১২টার দিকে শুনানি শুরু হয়। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

    আপিল আবেদন সম্পর্কিত আদেশে আদালত বলে, “আদালতের বার বার তাগাদা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার কৌঁসুলি আদালতে ৯০ মিনিট সময় নিয়ে লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর শুনানি করেননি। তাই লিভ টু আপিল আবেদন ও বাড়ির দখল ফিরিয়ে দেওয়ার বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করা হলো। তবে আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর আজই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।”

    শুনানিতে অংশ নিতে সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। খালেদার পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহাবুব হোসেন, টিএইচ খান ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

    শুনানির সময় আদালত কক্ষে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়।

    আদেশে আদালত বলে, “গত ১০ নভেম্বর টিএইচ খানের মুলতবি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিষয়টি শুনানির জন্য নির্ধারিত ছিলো। লিভ টু আপিল আবেদন, বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার আবেদন আজ তিন নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।”

    “টিএইচ খান শুনানির শুরুতেই আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর প্রথম শুনানি গ্রহণ করার জন্য প্রার্থনা করেন। যেহেতু আজ লিভ টু আপিল আবেদন শুনানির জন্য নির্ধারিত এবং অন্য আবেদনগুলো এই আবেদন থেকে উদ্ভূত; তাই লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর প্রথম শুনানি হবে। পরে অন্য আবেদনগুলোর শুনানি হবে।

    “কিন্তু টিএইচ খান বার বার আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর প্রথম শুনানি হওয়ার প্রার্থনা করেন। যদিও আজ প্রকৃতপক্ষে লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর শুনানির জন্য নির্ধারিত।”

    আদালত বলে, “আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি, তিনটি বিষয়েই একের পর এক শুনানি ও নিষ্পত্তি করা হবে। তাকে আরো আশ্বস্ত করেছি, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও মওদুদ আহমদকে তাদের বক্তব্য দিতে দেওয়া হবে। তিনি (টিএইচ খান) সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হওয়ায় তিনিই প্রথম শুনানি করবেন। এটাই আদালতের শত বছরের রেওয়াজ।”

    আদালত আদেশে আরো বলে, “এ পর্যায়ে তিনি (টিএইচ খান) প্রথমে লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানি মুলতবি প্রার্থনা করেন। তারপর বলেন, তার মক্কেলের কাছ থেকে আরো নির্দেশনার প্রয়োজন।”

    আদালত বলে, “১০ নভেম্বর তার (টিএইচ খান) আবেদনে তিনি বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তারপরও আদালত বললে তিনি শুনানি করতে পারেন। কিন্তু হাইকোর্টে রফিক-উল-হক ও মওদুদ আহমদ তাকে সহায়তা করেছেন। রফিক-উল-হক বিদেশে থাকায় তিনি শুনানি মুলতবির আবেদন করেছিলেন। শুনানি মুলতবিও হলো। আজ শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত ছিলো।”

    আদালত বলে, “আমরা জ্যেষ্ঠ এই (টিএইচ খান) আইনজীবীকে ৯০ মিনিট বার বার লিভ টু আপিল উপস্থাপন করতে বলেছি। কিন্তু তিনি আবেদন উপস্থাপন করতে প্রত্যাখ্যান করেন।

    “তাকে আশ্বস্ত করে বলেছি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সব আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি করা হবে। তারপর তিনি (টিএইচ খান) বলেছেন, তার মক্কেলের কাছ থেকে আরো নির্দেশনা দরকার।

    “তাকে আশ্বস্ত করেছি, আজ শুনানির জন্য নির্ধারিত। তিনি শুনানি শুরু করুন। তার (মক্কেলের) নির্দেশনা দরকার হলে তা নিতে পারবেন। কিন্তু তিনি শুনানি না করে ৯০ মিনিট সময় নিয়েছেন। তাই লিভ টু আপিল আবেদন ও বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার আবেদন উপস্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করা হলো।”

    আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত বার বার বলা সত্ত্বেও ৯০ মিনিট সময় নিয়ে লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর কোনো শুনানি করেননি। সেই বিবেচনায় আদালত লিভ টু আপিল আবেদন ও বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।”

    একটি মামলা দায়ের করে শুনানি না করে ৯০ মিনিট কালক্ষেপণ করাকে নজিরবিহীন হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।

    এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আবেদনের সারবত্তা নেই বলেই হয়তো তারা শুনানি করেননি। বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু করার জন্য তারা এটি করেছে।”

    তিনি বলেন, “যেহেতু খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে মামলা উপস্থাপন করেননি। তাই লিভ টু আপিল আবেদন, হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন এবং বাধ্যতামূলক নিষেধজ্ঞার আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছে।”

    আদালত কক্ষে আইনজীবীদের হট্টগোলের প্রসঙ্গে মাহবুবে আলম বলেন, “বিএনপি সমর্থক কিছু আইনজীবী হাইকোর্টেও এ ধরনের আচরণ করেছিলো। তারাই আপিল বিভাগে আদালতের শিষ্টাচার ভঙ্গ করেছে।”

    খালেদার আইজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, “টিএইচ খান ও রফিক-উল-হক লিভ টু আপিল আবেদনটি আদালত কার্যসূচি থেকে বাদ দিতে বলেছেন। কারণ, খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ জন্য লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর পরে শুনানি হলেও চলে। আদালত কোনো বক্তব্যই গ্রহণ করেনি। শুনানি ছাড়াই আবেদন দুটি অপ্রত্যাশিতভাবে খারিজ করে দিয়েছে।”

    কি রাজনৈতিক কি নৈতিক উভয় বিবেচনাতেই ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে খালেদা জিয়ার অবস্থান এতদিন প্রশ্নসাপেক্ষ ছিল। আদালতের রায় সেই প্রশ্নের মীমাংসা করে দিয়েছে। বিএনপি নিজেই একসময় আদালতে এর চূড়ান্ত ফয়সালা দাবি করেছিল। তাতে হেরে যাওয়ার বিষয়টি সবদিক থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকলে তারা রাজনৈতিকভাবে এর মীমাংসা দাবি করেছিল, যার প্রকৃত অর্থ আসলে, বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার জাতীয় মীমাংসা দাবি করা। বিএনপির জন্যে এখন একটাই পথ খোলা আছে, তা হলো বিচার বিভাগকে তারা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে থাকবে; এবং তারা সে পথেই এগুচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না, এভাবে তারা তাদের নিজেদেরই মৃত্যুকূপ খনন করছে।

  3. Pingback: Tweets that mention মুক্তাঙ্গন | চাই গৃহপালিত সামরিক সরকার | অবিশ্রুত -- Topsy.com

  4. মাসুদ করিম - ২ ডিসেম্বর ২০১০ (১০:০৯ পূর্বাহ্ণ)

    টিভি খুব কম দেখি এবং টিভি সংবাদ আরো কম, তাই একদম জানা ছিল না যে খালেদা জিয়া ইদের সময় নিজেকে ‘বাস্তুহারা’ বলেছেন। জানলাম পরে শেখর দত্তের কলাম থেকে। এবং তিনি খালেদা জিয়া বাস্তুহারা কি না সেপ্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন, আমাদের জাতীয় নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের বাস্তুহারা ছিলেন মণি সিংহ, সেই বাস্তুহারা নেতাকে স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব বেলাল কলোনিতে (এখন যেখানে নজরুল একাডেমী) একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছিলেন, যেফ্ল্যাটের বরাদ্দ সামরিক শাসক জিয়া রাষ্ট্রপতি হবার পর বাতিল করেছিলেন।

    আরো কিছু প্রশ্ন করেছেন ও সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শেখর দত্ত তার এই কলামে, পড়ুন : ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে বিএনপিকে কিছু প্রশ্ন

    • অবিশ্রুত - ৩ ডিসেম্বর ২০১০ (৫:১১ পূর্বাহ্ণ)

      সবশেষ খবর অনুযায়ী, ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এত দ্রুত সরকার এই কাজটি শুরু করলেন যে, অন্তত আমি নিজে বিস্মিত। এ ধরণের উদ্যোগের পেছনে অনেক সময় বহুল আলোচিত তৃতীয় পক্ষ ভূমিকা ভূমিকা রাখে, এ উদ্যোগও এর ব্যতিক্রম নয় বলে মনে হচ্ছে। সেখানে যে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কথা বার বার প্রচার করা হচ্ছে, তাও তো সঙ্গত নয়। এ কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি কেন, পিলখানায় নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের আত্মীযস্বজনরা সামরিক কর্মকর্তা নন, তারা বেসামরিক ব্যক্তি- সেনানিবাসের মধ্যে তাদের জন্যে আবাস গড়ার এ পরিকল্পনা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়।
      সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, গত কয়েকদিন ধরে বিচার বিভাগে যে ধরণের ঘটনা ঘটছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। কিন্তু সবাই মনে হয় কানে তুলো দিয়ে বসে আছেন, এমনকি যারা ঘটনা ঘটাচ্ছেন তারাও। তারা কোনও কিছু বুঝতে পারছেন না, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আর জেনেশুনেই যদি তারা এসব করে থাকেন, তা হলে এ পরিস্থিতিকে আতঙ্কজনক বলাটা বোধহয় কমই হবে।

  5. রায়হান রশিদ - ৭ ডিসেম্বর ২০১০ (১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    ক্যান্টনমেন্ট দলকে নাকি দল ক্যান্টনমেন্টকে – কে যে কখন কার পালনকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে মাঝে মাঝে তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই ভাবছিলাম শিরোনামে ‘গৃহপালিত সামরিক সরকার’ এর পরিবর্তে ‘গৃহপালিত রাজনৈতিক দল’ বললে কেমন হতো!

    • অবিশ্রুত - ১০ ডিসেম্বর ২০১০ (৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ)

      সেরকম যে চিন্তা করিনি, তা কিন্তু নয়। কিন্তু শিরোনাম ঠিক করার সময় হয়তো খানিকটা স্যাটায়ার করার প্রবণতা জেগে উঠেছিল। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগ মনে হয় না এখনো এমন কোনও বেয়ারাপণা করেনি যে সামরিক বাহিনী এখনই গৃহপালিত দলের সন্ধানে বেরুবে। বরং একটু সুলুকসন্ধান করলেই দেখা যে, আওয়ামী লীগ বেশ ভালোই সন্তুষ্ট রেখেছে সামরিক বাহিনীকে। আসলে, গৃহপালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ক্ষমতার কেন্দ্রগুলির দূরত্ব ও বিরোধকে আওয়ামী লীগ বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে এবং এখনও এই দূরত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুন্সীয়ানা দেখিয়ে চলেছে। তখন আপাতদৃষ্টিতে জেনারেল মইন উ আহমেদ প্রতাপশালী হলেও, ক্ষমতার কেন্দ্র সেনাবাহিনীতে মইন, মাসুদ, বারীদের মধ্যে নানাভাবে বিভক্ত ছিল বলেই মনে হয়। ফলে দেখা গেছে, একদিকে জেনারেল ইব্রাহিম রাজনীতির দোকান খুলছেন, আবার অন্যদিকে কোরেশী সাহেবও নতুন দোকান খুলছেন, ওদিকে একটি অংশ আবার চেষ্টা চালাচ্ছে বড় দুই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংস্কারবাদীদের দাঁড় করানোর, অন্য অংশ আবার হয়তো চেয়েছে সবকিছুকে ঝেড়ে ফেলে ড. ইউনূসকে দিয়ে রাজনৈতিক দল দাঁড় করাতে। এরকম বিভিন্নমুখী তৎপরতার কারণে সামরিক বাহিনীকে দিয়ে সুশীল সমাজ যেমন তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, ঠিক তেমনি সামরিক বাহিনীও নিজস্ব কোনও এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেনি। ফল হিসেবে তাদের রাজনৈতিক দলগুলির কাছেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ এখনো এমন কিছু করেনি, যা সামরিক বাহিনীকে রুষ্ট করতে পারে, বরং সামরিক বাহিনীর ভূমিকা জনগণের বিরুদ্ধে গেলেও রুপগঞ্জে আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি, আওয়ামী লীগ বেসামরিক প্রশাসনে প্রচুর সামরিক কর্মকর্তাদের টেনে আনছে-ঠিক যেভাবে এরশাদ টেনে এনেছিলেন-এইভাবে সামরিক কর্মকর্তাদের আওয়ামী সরকার পরিতুষ্ট করে চলেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে সামরিক কর্মকর্তারা যে-সব অপকর্ম করেছেন, সেসবের বিচারও যে আওয়ামী লীগ করবে না, তা অনেকটাই নিশ্চিত। অতএব সামরিক বাহিনীর বোধহয় এই মুহূর্তে কোনও গৃহপালিত রাজনৈতিক দল খুঁজবার প্রয়োজন নেই।

  6. অবিশ্রুত - ১২ ডিসেম্বর ২০১০ (১২:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    পরিস্থিতির একটু উন্নতি ঘটেছে। কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এবার আইএসপিআর-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সংসদে তিনি খালেদা জিয়া অবস্থানকালে ওই বাসায় কী কী ছিল তার একটি বিবরণ দিয়েছেন। ওদিকে বিএনপি নেতারাও তাদের প্রতিজ্ঞাগ্রহণ এখনো অব্যাহত রেখেছেন :

    ক্ষমতায় গিয়েই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেব
    বিএনপি নেতারা বললেন
    ০০ ইত্তেফাক রিপোর্ট
    গতকাল কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ৯০-এর সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‘স্বৈরাচার পতন দিবস বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরদিনই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। কোন আইন-আদালতের তোয়াক্কা করা হবে না। সাবেক ডাকসুর ভিপি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউলস্নাহ আমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবীর রিজভী, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া এমপি প্রমুখ।
    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন গণতন্ত্রকে হত্যার মহা উৎসব চলছে। উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার চোখের অশ্রু কি আপনাদের লেলিহান শিখা হতে পারে না? খালেদা জিয়া আমাদের মায়ের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আজ আক্রান্ত। তাকে মুক্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদলসহ বিএনপি নেতাদের রাজপথে থাকার কোন বিকল্প নেই।
    শামছুজ্জামান দুদু বলেন, একটি বাড়ি ভেঙ্গেছেন। এর বদলে কত বাড়ি ভাঙ্গা হবে তার হিসাব নেই। যেদিন ক্ষমতার বদল হবে সেদিন একটা বুলডোজার দিয়ে একটা একটা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙ্গা হবে। কোন আইন-আদালতের তোয়াক্কা করা হবে না। আমানউলস্নাহ আমান বলেন, এ সরকারকে হঠাতে প্রয়োজনে আবার নব্বইয়ের মতো গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে ।

    • অবিশ্রুত - ২২ ডিসেম্বর ২০১০ (৮:৫৫ অপরাহ্ণ)

      জনৈক ব্যক্তির একটি প্রশ্ন সবার সঙ্গে শেয়ার না করে পারছি না :

      ওই বাড়িতে এত কিছু ছিল, কিন্তু একরত্তি সোনাও পাওয়া গেল না-এটি কীভাবে সম্ভব? খালেদা জিয়া ও তার পরিবারবর্গ কি স্বর্ণবিদ্বেষী, না কি স্বর্ণসকল আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল? নাকি সৈনিক ভায়েরা পটাপট যার-যার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছেন?

      কেউ কি বলতে পারেন স্বর্ণবৃত্তান্ত?

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.