প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো।...

প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো। রাষ্ট্র মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক যুগের দিকে রওনা হলো। ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স-এর প্রতিটি বাক্য রাষ্ট্রশাসকদের শিক্ষা দিলো, রাজনীতি নৈতিকতার নয়, বরং নৈতিকতাই রাজনীতির অধীন। ম্যাকিয়াভেলি বললেন, রাজনীতির সঙ্গে নৈতিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা জানতে পারলাম রাষ্ট্র মানে নৈতিকতা নয়, রাষ্ট্র মানে রাজনৈতিকতা। হুবহু মনে নেই, তবে ওই দ্য প্রিন্সের কোনও কোনও বাক্য এখনও আবছা মনে আছে। যেমন, একটি বাক্য ছিল এরকম : A son can bear with equanimity the loss of his father, but the loss of his inheritance may drive him to despair. দ্য প্রিন্সের ওই কথাগুলিই বার বার মনে পড়ছে খালেদা জিয়া ‘বাস্তুহারা’ হবার পর থেকে। ম্যাকিয়াভেলি কি জানতেন, প্রায় ৫০০ বছর পরও পৃথিবীতে এমন কোনও রাষ্ট্র থাকবে, যেটির ক্ষেত্রে তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে অর্জিত ধারণাটি খাপে খাপে মিলে যাবে? ২. এ কথা বলা সত্যের অপলাপ হবে, জিয়াউর রহমানকে হারানোর পর খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানদের চোখে জল আসেনি। নিশ্চয়ই এসেছিল। কিন্তু তা তত দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠেনি। হতে পারে, মিডিয়ার দশহাত তখনো দশদিককে গ্রাস করেনি। তাই তাদের কান্নামাখা মু্খও আমাদের বার বার দেখার সুযোগ হয়নি। তারা কেঁদেছেন এবং জিয়াউর রহমানকে মনে রেখেছেন, জিয়াউর রহমান নামটিকে ব্যবহারের বস্তুতে পরিণত করেছেন। এই নামটি তাদের এত কিছু দিয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। জিয়াউর রহমান তাতে উজ্জল হননি, কিন্তু আপোষহীন নেত্রী আর যুবরাজ ক্ষমতায় সজ্জিত হয়েছেন। এ জন্যে তাদের জিয়াউর রহমানের কাছে যত ঋণই থাক না কেন, জিয়াউর রহমানের হন্তারকের অনুসন্ধান তারা কখনো করেননি। একজন…

আমাদের মধ্যে এমন ছেলেমেয়ে বোধহয় খুব কমই আছে, আশি আর নব্বইয়ের দশকে যারা গণতন্ত্রের জন্যে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেনি। হয়তো আমাদের অনেকেই কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না; কিন্তু তারপরও আমাদের একটি সংগঠন ছিল : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি অন্যতম দাবি ছিল : একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। এই শিক্ষানীতি কেমন হবে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্কও ছিল। ড. কুদরত-ই খুদার শিক্ষানীতি নিয়েও ভিন্নমত ছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু তারপরও মোটা দাগে আমরা চেয়েছিলাম এমন এক শিক্ষানীতি যা প্রাথমিক স্তর থেকেই একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন ঘটাবে। এই শিক্ষানীতির আকাঙ্ক্ষায় আমাদের অনেকে রাজপথেই শহীদ হয়েছেন, আমরা আমাদের সঙ্গীর লাশ কাঁধে বয়েছি, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও শপথ আরও তীব্রতর হয়েছে। একসময় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের প্রথানুগত শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও পূরিত হয়নি। এসবই পুরানো কাসুন্দি। কিন্তু কী করব বলুন? লোককথা বলে, অতৃপ্তি নিয়ে মৃত্যু ঘটলে মানুষ ভূত হয়ে যায়; অতৃপ্তি নিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন ফুরিয়ে গেছে, আমরা বেঁচে আছি ভূতের মতো। এবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। ওই শিক্ষানীতি ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে, যাতে সবাই মতামত দিতে পারেন। সত্যি কথা বলতে গেলে, দেখি-দেখি করেও তা দেখা হয়নি। এবং দেখার আগেই এখন পত্রপত্রিকা থেকে জানতে পারছি, মৌলবাদীরা বলছে, এই শিক্ষানীতি নীতি নাকি মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। এই শিক্ষানীতি নাকি শিশুদের ধর্মশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে, নৈতিকতাহীন করে তুলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আশি আর নব্বইয়ের দশকে বছরের পর বছর আমরা শ্লোগান দিয়েছি, ‘একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু কর’, ‘সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চালু কর’। শিক্ষাঙ্গনে পাত্তা না পেলেও এই মৌলবাদীরা তখন আন্দোলনের নামে বড় বড় দলগুলির পিছু-পিছু ছুটোছুটি করেছে আর আমাদের সঙ্গীদের সময়-সুযোগমতো হত্যা করেছে, হাতপায়ের রগ কেটে দিয়েছে, ড্রিলিং মেশিন দিয়ে শরীর ফুটো করেছে। একবার আমি ভার্সিটিতে দেখেছিলাম, পেয়ারাওয়ালার কাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে এক শিবির কর্মী সেটি টুকরো করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আর তার সঙ্গী তাকে বলছে, ‘এই পেয়ারা ঠিকমতো কাটতে পারিস না, কম্যুনিস্টদের কাটবি কেমন করে?’ এখন এই মৌলবাদীরাই…

লেফটেনেন্ট জেনারেল গোলাম জিলানি খান, এক বিখ্যাত পাকিস্তানি সেনা ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৭১-১৯৭৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ১৯৭৭-এ তাঁর বাংলাদেশ সফরের কিছু দিন পরই সেবছরের নভেম্বরে জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করলেন ডিএফআই [..]

লেফটেনেন্ট জেনারেল গোলাম জিলানি খান, এক বিখ্যাত পাকিস্তানি সেনা ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৭১-১৯৭৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ১৯৭৭-এ তার বাংলাদেশ সফরের কিছু দিন পরই সেবছরের নভেম্বরে জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করলেন ডিএফআই ( ডিরেক্টরেট অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), যার নাম পরে কিছুটা পরিবর্তন করে রাখা হয় ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। প্রাথমিকভাবে এই সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সব অফিসারের প্রশিক্ষণ হতো আইএসআই-এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে, এবং এখনো পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের ট্রেনিং হয় পাকিস্তান, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে। এর পুরো মডেলটাই পাকিস্তানি আইএসআই দ্বারা প্রবর্তিত এবং আইএসআই-এর মতোই ডিজিএফআই-ও জন্মের পর থেকেই দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক সংগঠন। জন্মের পরপরই তাদের প্রধান কাজ ছিল জিয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা এবং উনিশশ আটাত্তরেই তারা সফলভাবে কাজটি সম্পন্ন করে, এবং শুরু হয় বিএনপির পদযাত্রা। এরপর জিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এরশাদের আগমনে তার জন্যও যখন দরকার হয় একটি রাজনৈতিক দল তখনই তাদের হাতে তৈরি হয় দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু ডিজিএফআই সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে ২০০৭-২০০৮ আর্মি শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এসময়ে ওদের মাইনাস টু থিওরি, আসলে ছিল কৌশলে হাসিনাকে ধ্বংস করা, যেপথে ২১ আগস্টে বোমা হামলা, সেপথেই সামরিক গোয়েন্দা চাপে হাসিনাকে অর্ধমৃত করা, বোমায় যে কান গেছে, সেকানের চিকিৎসা তাকে পেতে হয়েছে অর্ধেক প্রাণ বন্ধক রেখে। তাই হাসিনা এখন অর্ধেক লোকচক্ষুর অন্তরালে, আর রাজনৈতিক দাবিহীন এই গণতন্ত্র, বলতে পারি আমাদের রাজনীতি মৃত, তবুও বাস্তবকে কিছুটা ভুলে বলছি অর্ধমৃত। আমাদের রাজনীতির পথ চলা কঠিন করতেই যাদের জন্ম, তারা এই বত্রিশ বছরে অনেক শক্তিশালী হয়েছে, তাদের হাতে গড়া দুটি দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি আছে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, সিন্ডিকেটের সুতোও তারেক জিয়ার হাত থেকে তারা কেড়ে নিতে পেরেছে, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে আবদ্ধ করতে পেরেছে, আর পাকিস্তান আছে এদের অন্তরে বাইরে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমার এখন চাইছে ডিজিএফআই-য়ের ওপর নিজের নিজের কিছু কর্তৃত্ব। অন্তরের পাকিস্তানকে কিছু করতে পারুক না পারুক বাইরের পাকিস্তানকে যদি কিছুটা মুছে ফেলা যায়—এই হলো ভারতের লক্ষ্য। পূর্ব দিগন্তের সূর্য চাইলে সব ভারতের হলে তো হবে না, চীনেরও তো অনেক কিছু হতে হবে, তাই…

এই বিজয় দিবসে যখন আমাদের অনেকেরই মনে পড়ছে, গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদরা একাত্তরে কে কোথায় ছিলেন, তখন আমরা কি পারি সেই তালিকায় আরও একটি নাম জুড়তে? আমরা কি পারি খোঁজ করতে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ ও বিবিধ বামদলের সঙ্গে মহাজোট গঠনকারী জাতীয় পার্টির নেতা এবং স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা, জনগণের আন্দোলনে পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন কোথায় ছিলেন? [...]

এই বিজয় দিবসে যখন আমাদের অনেকেরই মনে পড়ছে, গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদরা একাত্তরে কে কোথায় ছিলেন, তখন আমরা কি পারি সেই তালিকায় আরও একটি নাম জুড়তে? আমরা কি পারি খোঁজ করতে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ ও বিবিধ বামদলের সঙ্গে মহাজোট গঠনকারী জাতীয় পার্টির নেতা এবং স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা, জনগণের আন্দোলনে পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন কোথায় ছিলেন? কাগজপত্র বলে, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে ছিলেন। কিন্তু এমন নয় যে, বাংলাদেশের আরও অনেক সামরিক কর্মকর্তাদের মতো তিনি বন্দী ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর সময় তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধে যোগ না দিয়ে তিনি এপ্রিলের প্রথম দিকে পাকিস্তানে পাড়ি জমান। সেপ্টেম্বর মাসে আবারও বাংলাদেশে আসেন তিনি, অসুস্থ বাবাকে দেখতে। তাহের কিংবা খালেদের মতো পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার মনোবাসনা এরশাদের স্বপ্নেও জাগেনি। পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্যে খুবই সক্রিয় ছিলেন ওই সময়ে হুসেইন এরশাদ,- এতই সক্রিয় যে মুক্তিযুদ্ধের তুঙ্গ মুহূর্তে যখন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কমান্ড মরণপণ লড়াই শুরু করেছে, তখন এরশাদের অধিনায়কত্বে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল পাকিস্তানের হয়ে পাল্টা আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। পরে পাকিস্তান যখন ১৯৭২ সালে আটকে পড়া বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের বিচার করার জন্যে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তখন এরশাদকে নিযুক্ত করা হয় সেটির চেয়ারম্যান হিসেবে। কতজন নিরীহ বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন তাঁর ট্রাইব্যুনাল থেকে? কতজনকে মগজ ধোলাই করা হয়েছে ওই সময়ে? আমাদের জানা নেই সেই তথ্য। তবে পরে বাংলাদেশ আটকে পড়া সামরিক কর্মকর্তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলে এরশাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কী এক অদৃশ্য কারণে এই এরশাদও আটকে পড়া সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তারপর চতুর এরশাদ বঙ্গভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে যান তখনকার প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াউদ্দিন মিয়া ভোলাকে নিয়ে। ভোলা মিয়া তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শেখ মুজিবের পা ধরে চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্যে আবেদন জানাতে থাকেন। আর ভোলা মিয়াও শেখ মুজিবকে বলেন, 'আমার ভাগনের চাকরিটা না থাকলে ¯^vaxbZv যুদ্ধ করে কী লাভ হলো!' অতএব ভোলা মিয়ার যাতে একটু লাভ হয় শেখ মুজিব সেই ব্যবস্থা করেন, তাঁর মহানুভবতার কারণে এই…

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন মিডিয়া বিগত কয়েক বছরের আপ্রাণ চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে কুশল বিনিময়ের আয়োজন করতে পেরেছেন। অবশ্য এই আয়োজনের মূল কৃতিত্ব ঠিক সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে দেয়া যায় না। বলতে গেলে, গত আঠারো বছর থেকে আমরা দেখে আসছি, পৃথিবীর একটি বিশেষ দেশে, একটি বিশেষ বাহিনীর বিশেষ একটি দিনে বিশেষ একটি ঘটনা ঘটে; আর সেই বিশেষ ঘটনাটি হলো, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সশস্ত্র দিবসে সেনাকুঞ্জে দেশটির দুই রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া পাশাপাশি বসেন, কখনও কথা বলেন, কখনও আবার কথা বলেন না। কথা যখন বলেন না তখন তারা সামনের দিকে এত মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকেন যে মনে হয় শেক্সপিয়রের কোনও নাটক দেখতে বসেছেন।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন মিডিয়া বিগত কয়েক বছরের আপ্রাণ চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে কুশল বিনিময়ের আয়োজন করতে পেরেছেন। অবশ্য এই আয়োজনের মূল কৃতিত্ব ঠিক সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে দেয়া যায় না। বলতে গেলে, গত আঠারো বছর থেকে আমরা দেখে আসছি, পৃথিবীর একটি বিশেষ দেশে, একটি বিশেষ বাহিনীর বিশেষ একটি দিনে বিশেষ একটি ঘটনা ঘটে; আর সেই বিশেষ ঘটনাটি হলো, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সশস্ত্র দিবসে সেনাকুঞ্জে দেশটির দুই রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া পাশাপাশি বসেন, কখনও কথা বলেন, কখনও আবার কথা বলেন না। কথা যখন বলেন না তখন তারা সামনের দিকে এত মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকেন যে মনে হয় শেক্সপিয়রের কোনও নাটক দেখতে বসেছেন। দু'এক বছর অবশ্য এই ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটেছে, কেউ হয়তো বিশেষ কোনও কারণে ওই অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি, কারও যাবার পথে হয়তো বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়েছে; কিন্তু সেগুলো উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। শক্তি অনেক কিছুর ধাত্রী হিসেবে কাজ করে থাকে; শক্তিমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই যে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার এই কুশলবিনিময়ের ধাত্রী হিসেবে কাজ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই এটি একটি বড় ঘটনা, আর তা কেবল সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার সাফল্যের অর্থে নয়, রাজনৈতিক অর্থেও।ক্ষমতা নেয়ার প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন; উদ্দেশ্যটি হলো, যে-দলই আগামী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সরকার গঠন করুন না কেন, তাকে সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যু বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বিরোধী দল সে-ক্ষেত্রে তেমন কোনও তীব্র বাগড়া বসাতে পারবে না। আর এই ইস্যু বাস্তবায়নের কাজটি যাতে আরও নিপূণভাবে করা যায়, সেজন্যে তারা জাতীয় সরকার প্রসঙ্গটিকেও বার বার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। ২০০১ সালের আগে একই উদ্দেশ্য (দলনির্বিশেষে সুনির্দিষ্ট কর্পোরেট স্বার্থ বাস্তবায়ন) নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রীয়-স্বার্থের তথা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্রতিনিধি জিমি কার্টার। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর নির্বাচিত চারদলীয় সরকারের পক্ষে একমাত্র আদমজী পাটকলকে বিক্রি করার কাজটি ছাড়া আর কোনও বড় কর্পোরেট স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এবার তাই আরও আটঘাট বেধে নেমেছে কর্পোরেট শক্তি। প্রায় দুই বছর ধরে তারা প্রধান রাজনৈতিক দলদুটিকে এ-উদ্দেশ্যে ঘোলাজলে হাবুডুবু খাইয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.