বলা হয়ে থাকে, স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত পথে না এগুনোর একটি অন্যতম কারণ, মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ‘ভুল বোঝাবুঝি।’

বলা হয়ে থাকে, স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত পথে না এগুনোর একটি অন্যতম কারণ, মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ‘ভুল বোঝাবুঝি।’ বিশেষ করে সুশীল বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে অহরহ এই ‘ভুল বোঝাবুঝি’র কথা এতভাবে বলা হয় যে, ইতিমধ্যে তা যেন প্রস্তরীভূত সত্যে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ঘটনার সমাবেশ এমনভাবে ঘটানো হয় যাতে পাঠক কিংবা শ্রোতারা নিজ দায়িত্বেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, আসলে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণেই শেষ অব্দি তাঁদের সম্পর্ক এমন করুণ পরিণতি পায়। ব্যাপারটি দাঁড়ায় এরকম, বঙ্গবন্ধু নিজেই এক ট্র্যাজিক হিরো, কিন্তু তাঁর সেই ট্র্যাজেডি তাজউদ্দীনকেও গ্রাস করে বঙ্গবন্ধুরই কারণে! কিন্তু সত্যিই কি তাই? সংশয় নিয়েই বলি, এ ব্যাপারে অন্তত আমার সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন আলাপ-পঠন-অনুসন্ধানে এই সংশয় আরো জোরদার হয়েছে। জোর দিয়েই বলা যায়, বিভিন্ন মিসিং লিংক থাকলেও মুজিবের সঙ্গে তাজউদ্দীনের দূরত্ব দেখা দেয়ার বেশ কিছু ধারালো যুক্তিসংগত দিক আমাদের সামনে ঘোরাফেরা করছে। যদিও সুশীল বুদ্ধিজীবী-গবেষকগণ এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে মনে হয়। এরকম কিছু দিক সম্পর্কেই এ লেখায় আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করছি, এগুলো সম্পর্কে সকলে মতামত দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ হতে ও সংশয় কাটিয়ে উঠে নতুন কোনো সংশয় ও প্রত্যাশার দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবেন। ব্লগ বলেই আমি চেষ্টা করছি, সংক্ষেপে ধারণাগুলো তুলে ধরতে, যাতে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি : তাজউদ্দীন আহমদের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নয়, বরং একবার পিছে ফিরে দেখা যাক, পূর্ব বাংলাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে পরিণত করার স্থির লক্ষ্যে সত্যিই কারা সাংগঠনিকভাবে দীর্ঘ দিন ধৈর্য ধরে কাজ করে গেছেন। কেননা তাত্ত্বিকভাবে ঘরোয়া পরিবেশে সমমনাদের মধ্যে কিংবা পার্টিফোরামে কথা বলা, কথার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলা, হঠাৎ করে প্রকাশ্যে ‘আচ্ছালামু আলাইকুম’ বলা কিংবা ‘স্বাধীনতা চাই’ বলে ওঠা এক ব্যাপার, আর বছরের পর বছর ধরে নিরন্তরভাবে এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো আরেক ব্যাপার। এতে কোনো সংশয় নেই, অনেকেই স্বাধীনতার প্রত্যাশা করতেন; কিন্তু স্বাধীনতার লক্ষ্য স্থির করে ধৈর্য ধরে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েছেন বোধকরি মাত্র তিনজন ব্যক্তি : শেখ মুজিবুর রহমান, সিরাজুল আলম খান এবং সিরাজ শিকদার। এদের মধ্যে একপর্বে…

|| এবেলার্ড ও ইলোইযা (শেষার্ধ) || যে ঘটনাগুলোর কথা আমরা এই মাত্র বললাম সেগুলো ঘটেছিল ১১১৭ থেকে ১১১৯ খৃষ্টাব্দের মধ্যে, যখন এবেলার্ডের বয়স আটত্রিশ, ইলোইযার আঠারো কি উনিশ। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর এবেলার্ড ও ইলোইযা (শেষার্ধ) যে ঘটনাগুলোর কথা আমরা এই মাত্র বললাম সেগুলো ঘটেছিল ১১১৭ থেকে ১১১৯ খৃষ্টাব্দের মধ্যে, যখন এবেলার্ডের বয়স আটত্রিশ, ইলোইযার আঠারো কি উনিশ। এর প্রায় পনেরো বছর পর, খুব সম্ভব ১১৩৪ খৃষ্টাব্দে এবেলার্ড তাঁর ‘Historia calamitamum’ রচনা করেন, যখন তাঁর বয়স পঞ্চান্ন। এই বইতে তিনি বিগত পনেরো বছরে তাঁর জীবনের ঘটনাবলীর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যা কিনা তাঁর সারা জীবনের মতোই ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরিপূর্ণ। সেসময় তিনি একটি মঠের মোহান্ত বা মহাধ্যক্ষ ছিলেন, আর ইলোইযা একটি কনভেন্টের মঠাধ্যক্ষা। তাঁদের জীবনের সেই সময়ের লেখা বেশ কিছু পত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। সেগুলোর প্রথমটি এবেলার্ডকে লেখা ইলোইযার চিঠি, আর তাতে তিনি বলছেন যে ঘটনাক্রমে তাঁর হাতে এবালার্ডের ‘Historia calamitamum’ এসে পড়ে এবং সেটা পাঠান্তে তিনি তাঁকে চিঠি না লিখে পারেননি। এরপর এবেলার্ড ইলোইযাকে চিঠিটার জবাব দেন, তারপর ইলোইযা এবেলার্ডকে, এইভাবে চলতে থাকে। পৃথিবীর সাহিত্যের ইতিহাসে এই ইলোইযা-এবেলার্ড পত্রাবলী সবচাইতে বহুল পঠিত ও আলোচিতগুলোর অন্যতম, বিশেষ করে প্রথম চিঠি দুটো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে রেখেছে পাঠকদের। এই পত্র দুটোর শুরুতে তিনি এবেলার্ডের প্রতি তাঁর প্রেমকে ব্যাখ্যা করেছেন: ‘te semper, ut ómnibus patet, immoderato amóre complexa sum’ – ‘সব সময়ই আমি তোমাকে নিঃসঙ্কোচ প্রেমের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে চেয়েছি, যা সবাই জানে।’ বেশিরভাগ সময়েই তিনি এবেলার্ডকে ‘unice’ বা ‘ আমার একমাত্র’ বলে সম্বোধন করেছেন। এবেলার্ড যা কিছু করেন, যা কিছু ভাবেন তা অন্য সব কিছুর চাইতে ভালো; তাঁর প্রতিভা আর জ্ঞান রাজা-বাদশা বা সম্রাটদের চাইতেও ঢের বেশি; তিনি সবার চাইতে সুন্দর, অন্য যে কারো চাইতে ভালো গাইতে আর লিখতে পারেন, বিবাহিত-অবিবাহিত সব নারী তাঁকে পছন্দ করেন। ইলোইযা যা কিছু করেছেন সব এবেলার্ডের প্রতি ভালোবাসার কারণেই করেছেন, অন্য কোনো কারণে নয়। আর সেটা বিশেষ করে প্রযোজ্য কনভেন্টে তাঁর যোগ দেবার ক্ষেত্রে। ‘Tua me ad religiónis hábitum iússio, non divina traxit diléctio’ – ‘তোমার আদেশ ছিল তাই আমি কনভেন্টে যোগ দিয়েছিলাম, ঈশ্বরকে ভালোবেসে যোগ দিইনি।’ ফলে, তিনি আরো…

পিটার কাস্টারসের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, যে দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সব কিছু তিনি ছেড়ে এসেছিলেন। জেনারেল জিয়া ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে প্রহসনের বিচার শুরু করে কর্নেল তাহেরসহ অনেকের বিরুদ্ধে। পিটার কাস্টার্সকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হল। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হল তাঁর বিরুদ্ধে।

  কাটা বেঁছে কই মাছ খাওয়া আমাদের বাঙালিদের জন্যও সহজ কাজ নয়। এই ৬৬ বছর বয়সে কই মাছের দোপেয়াজা খেতে গিয়ে তা আবার মনে হলো। মন চলে গেল ৪১ বছর আগে, যখন আমার বয়সী পিটার কাস্টারসের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ঢাকার একেবারে সাধারণ একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাব আমরা। পিটারই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছেন। ভাত আর কই মাছের ঝোল তিনিই অর্ডার করেছেন। ‘কাটা বেঁছে আপনি খেতে পারবেন?’ পিটারের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হলো। ‘চিন্তা নাই, ভালই পারি।’ অবাক হয়ে লক্ষ্য করি কি নিপুণ হাতে কাটা বেঁছে পিটার বাঙালির ভাত-মাছ খেলেন গভীর পরিতৃপ্তি নিয়ে। ‘পেট ঠিক থাকবে তো?’ আবারো পিটারের মুখে হাসি। ‘বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে এত ঘুরেছি, কত রকমের খাবার খেয়েছি। এখন আর সমস্যা হয় না। আপনাদের একটা প্রবাদ আছে না, “শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়।” আমারও সয়ে গেছে। কই মাছ আমার খুব প্রিয়।’ সমবয়সী আমরা বন্ধুর মতই ছিলাম। তারপরও আমাকে আপনি বলতেন পিটার। যতদূর মনে আছে, সবাইকে আপনি বলতেন। গায়ে সুতির পাজাম-পাঞ্জাবি পায়ে সাধারণ চপ্পল। এমন পোশাকেই দেখা যেত পিটারকে। ফর্সা পা মশার কামড়ে লাল হয়ে আছে। ‘ঘরে মশারি টানান না?’ ‘দেখুন গ্রামের গরিব মানুষের মশারি কিনবার সামর্থ্য নেই। আর আপনাদের দেশে মশার কামড়ে এখন আর ম্যালেরিয়া হয় না। তাই মশারি ব্যবহার করি না।’ পিটারের কথা শুনে স্তম্ভিত হই। বর্ষার পানিতে ভিজে ভিজে তাঁর খোলা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। পিটার দেখেছেন ক্ষেতে-খামারে কাঁদা মাটিতে কাজ করা গ্রামের গরিবদের পায়ে এমন ঘা। ‘সস্তা কোন ওষুধ নেই এই ঘা সারাতে?’ পিটারের এ প্রশ্নের উত্তরে জানাই পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলিয়ে লাগালে সারতে পারে। তুত ডলে দিলেও কাজ হয়। তবে তা তো সব সময় পাওয়া যায় না। দিনকয় পরে তাঁর সাথে দেখা। ফর্সা পা রঙিন হয়ে আছে। উজ্জ্বল হাঁসি পিটারের মুখে। ‘দারুণ কাজে লেগেছে আপনার পরামর্শ। পারমাঙ্গানেটের রং লেগে থাকলেও ঘা ভাল হয়ে গেছে। ঠিক করেছি, এবার গ্রামে যাবার সময় পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট কিনে নিয়ে যাব। গরীবদের খুব কাজে লাগবে।’ গত ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে নিজ দেশ হল্যান্ডের লেইডেনে তার বাড়িতে পিটার কাস্টারস ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে কতবার বসেছি তাঁর উপর কিছু লিখবো বলে।…

|| এবেলার্ড ও ইলোইযা || প্যারিস পা রাখা সবচাইতে উজ্জ্বল ছাত্র ও কবি ছিলেন পেত্রাস এবেলার্দাস (Petrus Abelardus)। অন্তত এভাবেই নিজের নাম লিখতেন তিনি লাতিনে। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর এবেলার্ড ও ইলোইযা   প্যারিস পা রাখা সবচাইতে উজ্জ্বল ছাত্র ও কবি ছিলেন পেত্রাস এবেলার্দাস (Petrus Abelardus)। অন্তত এভাবেই নিজের নাম লিখতেন তিনি লাতিনে। ইংরেজিতে তাঁকে স্রেফ এবেলার্ড বলে ডাকা হয়। তাঁর জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পাই আমরা তাঁরই নিজের লেখার মাধ্যমে, বিশেষ করে ‘Historia calamitatum’ (History of calamities – দুর্বিপাকের ইতিহাস) নামের এক আত্মজৈবনিক রচনার সাহায্যে; এটি তিনি লিখেছিলেন যখন তাঁর বয়স পঞ্চাশের একটু ওপরে তখন। এর চাইতে ভালো নাম আর হতে পারত না বইটির, কারণ দুঃখ-কষ্ট আর বিপর্যয় তাঁর নিজের জীবনে নেহাত কম ঘটেনি। জন্ম তাঁর ১০৭৯ খৃষ্টাব্দে, এখন যে এলাকাটি ব্রিটানি নামে পরিচিত, সেখানে, পশ্চিম ফ্রান্সের লয় (Loir) নদীর মুখের কাছে। তিনি যে খুবই প্রতিভাসম্পন্ন সেটা বেশ ছোটবেলা থেকেই বোঝা গিয়েছিল। প্যারিস তখন জ্ঞানার্জনের একটি কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে শুরু করেছে, এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে এবেলার্ড সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। এটা বুঝতে তাঁর তেমন সময় লাগেনি যে যুক্তিবিদ্যায় তিনি সেখানের সবচাইতে বিখ্যাত শিক্ষক এবং ক্যাথীড্রাল স্কুলের প্রধান মানুষটির চাইতে ঢের ভালো। অচিরেই দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হলো এবং সিন নদীর বাম তীরে আজ যেখানে নতর-দেমটি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে অবস্থিত ক্যাথীড্রাল স্কুলটির ঠিক কয়েকশ মিটার দূরেই এবেলার্ড নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। অসাধারণ এক শিক্ষক ছিলেন এবেলার্ড: জ্ঞানসম্পন্ন, মনোরম, অনুপ্রেরণাদায়ী। তাঁর কথা শোনার জন্য দলে দলে হাজির হতো শিক্ষার্থীরা এবং একের পর এক সাফল্য অর্জন করছিলেন এবেলার্ড। তিরিশ বছর বয়েসে ক্যাথীড্রাল বিদ্যায়তনের প্রধান পদে বৃত হন তিনি, ফলে প্যারিস শহরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান তৈরি হয় তাঁর। আর ঠিক এই সময়, যখন তিনি তাঁর পেশার একেবারে শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করছেন তখন-ই তাঁর জীবনের সবচাইতে বড় আর কঠোর বিপর্যয়টি ঘটল : প্রেমে পড়লেন তিনি। এক তরুণীকে দেখলেন তিনি। এবেলার্ড বলছেন : ‘per faciem non erat ínfima, per abundántiam litterárum erat suprema’ –  ‘সৌন্দর্যে সে ছিল না শেষ, ছিল জ্ঞানে প্রথম’। ঠিক করলেন, তাকে তাঁর প্রেমে পড়তে প্রলুব্ধ করবেন তিনি। আর এ কাজটিতেও সফল…

|| প্রাচীনকালপরবর্তী কাব্য (শেষার্ধ) || অন্যান্য প্রতিবেশের চাইতে গির্জায়, বিশেষ করে ক্যাথলিক গির্জায় সক্রিয়ভাবে বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল লাতিন, আর সে ভাষায় লেখা খৃষ্টীয় কবিতাগুলোই স্থায়িত্ব পেয়েছিল সবচাইতে বেশি। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর প্রাচীনকালপরবর্তী কাব্য (শেষার্ধ)   লাতিনটা পড়া মোটেই কঠিন নয়। ইংরেজি অনুবাদটি যে লয়ে পড়ছেন লাতিনটা পড়ার সময় ঠিক সেই লয় বজায় রাখুন। ‘y’ অক্ষরটির উচ্চারণ [i], কাজেই অন্ত্যমিল একেবারে নিখুঁত এমনকি প্রথম স্তবকেই। এই ভাবগম্ভীর স্তোত্রটির লাতিন টেক্সটটিকে ভাষা বিষয়ক একটা ছোট্ট অনুশীলনের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাক। আয়রনসের অনুবাদ পুরোপুরি আক্ষরিক নয়, কারণ তাহলে তিনি প্রয়োজনীয় অন্ত্যমিল তৈরি করতে পারতেন না, বা, প্রতিটি চরণে সঠিক সংখ্যক দল (syllable)-এর সমাবেশ ঘটাতে পারতেন না। Dies irae, dies illasolvet saeclum in favillateste David cum Sibylla. Quantus tremor est futurusquando iudex est venturuscuncta stricte discussurus. Tuba, mirum spargens sonumper sepulchra regionum, coget omnes ante thronum. Day of wrath and doom impending, David’s word with Sibyl’s blending! Heaven and earth in ashes ending! O what fear man’s bosom rendeth When from heaven the judge descendeth. On whose sentence all dependeth! Wondrous sound the trumpet flingeth,Through earth’s sepulchres it ringeth, All before the throne it bringeth. মোটের ওপর টেক্সটটা শব্দ ধরে ধরে অনুবাদ করা হয়েছে। যদিও শব্দক্রমে তফাত ঘটেছে, যেমন প্রথম চরণে, যেখানে লাতিন ভাষা ‘illia’-র মতো একটি ডেমন্সট্রেটিভ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে একটি বিশেষ্যর আগে বা পরে; কিন্তু ইংরেজিতে কেবল ‘that day’ – এই শব্দক্রমটিই সম্ভব। একইভাবে, ৭ সংখ্যক চরণে ইংরেজি ভাষা বিশেষ্য ‘sonum’ (sound), এবং বিশেষণ ‘mirum’ (wonderful)-কে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না, যেটা কিনা লাতিন দিয়েছিল। টেক্সটির অনেক শব্দই চিনে নেয়া যায় ইংরেজি এবং / বা ফরাসি থেকে। ‘Saeculum’-এর আক্ষরিক অর্থ ‘a lifetime’ (এক জীবনকাল) বা ‘a generation’ (একটি প্রজন্ম), এবং সেটাই আধুনিক ফরাসি শব্দ ‘siècle’ (শতাব্দী)-এর উৎস। এখানে যা বোঝানো হয়েছে তা হলো খোদ সময়, যা কিনা গোটা বিশ্বের সঙ্গেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে শেষ বিচারের সময় ভেরী বাজলে। অন্যভাবে বলতে গেলে, সময় বা কাল বিশ্বের সমার্থক, যা কিনা খৃষ্টীয় লাতিনে একটি সাধারণ মোটিফ, এবং আমাদের ধার করা শব্দ ‘secular’-এ (মানে, পার্থিব, অ-ধর্ম সম্বন্ধীয়, যেমনটা আমরা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.