Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
এবেলার্ড ও ইলোইযা
প্যারিস পা রাখা সবচাইতে উজ্জ্বল ছাত্র ও কবি ছিলেন পেত্রাস এবেলার্দাস (Petrus Abelardus)। অন্তত এভাবেই নিজের নাম লিখতেন তিনি লাতিনে। ইংরেজিতে তাঁকে স্রেফ এবেলার্ড বলে ডাকা হয়। তাঁর জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পাই আমরা তাঁরই নিজের লেখার মাধ্যমে, বিশেষ করে ‘Historia calamitatum’ (History of calamities – দুর্বিপাকের ইতিহাস) নামের এক আত্মজৈবনিক রচনার সাহায্যে; এটি তিনি লিখেছিলেন যখন তাঁর বয়স পঞ্চাশের একটু ওপরে তখন। এর চাইতে ভালো নাম আর হতে পারত না বইটির, কারণ দুঃখ-কষ্ট আর বিপর্যয় তাঁর নিজের জীবনে নেহাত কম ঘটেনি। জন্ম তাঁর ১০৭৯ খৃষ্টাব্দে, এখন যে এলাকাটি ব্রিটানি নামে পরিচিত, সেখানে, পশ্চিম ফ্রান্সের লয় (Loir) নদীর মুখের কাছে। তিনি যে খুবই প্রতিভাসম্পন্ন সেটা বেশ ছোটবেলা থেকেই বোঝা গিয়েছিল। প্যারিস তখন জ্ঞানার্জনের একটি কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে শুরু করেছে, এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে এবেলার্ড সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। এটা বুঝতে তাঁর তেমন সময় লাগেনি যে যুক্তিবিদ্যায় তিনি সেখানের সবচাইতে বিখ্যাত শিক্ষক এবং ক্যাথীড্রাল স্কুলের প্রধান মানুষটির চাইতে ঢের ভালো। অচিরেই দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হলো এবং সিন নদীর বাম তীরে আজ যেখানে নতর-দেমটি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে অবস্থিত ক্যাথীড্রাল স্কুলটির ঠিক কয়েকশ মিটার দূরেই এবেলার্ড নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন।
অসাধারণ এক শিক্ষক ছিলেন এবেলার্ড: জ্ঞানসম্পন্ন, মনোরম, অনুপ্রেরণাদায়ী। তাঁর কথা শোনার জন্য দলে দলে হাজির হতো শিক্ষার্থীরা এবং একের পর এক সাফল্য অর্জন করছিলেন এবেলার্ড। তিরিশ বছর বয়েসে ক্যাথীড্রাল বিদ্যায়তনের প্রধান পদে বৃত হন তিনি, ফলে প্যারিস শহরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান তৈরি হয় তাঁর। আর ঠিক এই সময়, যখন তিনি তাঁর পেশার একেবারে শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করছেন তখন-ই তাঁর জীবনের সবচাইতে বড় আর কঠোর বিপর্যয়টি ঘটল : প্রেমে পড়লেন তিনি।
এক তরুণীকে দেখলেন তিনি। এবেলার্ড বলছেন : ‘per faciem non erat ínfima, per abundántiam litterárum erat suprema’ – ‘সৌন্দর্যে সে ছিল না শেষ, ছিল জ্ঞানে প্রথম’। ঠিক করলেন, তাকে তাঁর প্রেমে পড়তে প্রলুব্ধ করবেন তিনি। আর এ কাজটিতেও সফল হলেন তিনি। তরুণীটি থাকত তার পিতৃব্যের বাসাতে; সেখানে একটা ঘর ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা করলেন তিনি। তারপর বাকিটা জলবৎ তরলং। তবে কিনা, এবেলার্ড যেমনটি ভেবেছিলেন, সব কিছু ঠিক ঠিক তেমনটি ঘটল না। এমন নয় যে তাঁর পরিকল্পনায় ইলোইযা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, বরং তার উল্টো। এবেলার্ড যেমন পরিকল্পনা করেছিলেন ব্যাপারটা তার চাইতে ঢের গুরুতর হয়ে পড়ল। প্রবলভাবে প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়লেন তাঁরা; পরস্পরের প্রতি, তাঁদের প্রেমের প্রতি হয়ে পড়লেন অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ। জীবনে এই প্রথমবারের মতো নিজের অধ্যয়ন ও নিজের শিক্ষকতাকে উপেক্ষা করলেন এবেলার্ড, এবং তার বদলে সময় কাটালেন প্রেমের কবিতা লিখে যেগুলো কিনা খুব খ্যাতি অর্জন করল, ছড়িয়ে পড়ল অনেকের মাঝে। দুঃখের কথা সেগুলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছোয়নি। সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত তাঁদের এই প্রেমের কথা জেনে গেল লোকজন, এবং শেষ পর্যন্ত তা-ই ঘটল যা ঘটা ছিল অবশ্যম্ভাবী: এমনকি হেলোইযার পিতৃব্য সহজ-সরল হুবার্ট-ও টের পেয়ে গেলেন কি ঘটছে। জটিল হয়ে উঠল পরিস্থিতি। হুবার্ট জোর দিয়ে বললেন যে দুজনকে বিয়ে করতে হবে, বিশেষ করে ইলোইযা যেহেতু সন্তানসম্ভবা। কিন্তু এবেলার্ড তো যাজকবৃত্তিতে বৃত, বিয়ে করলে তাঁর বৃত্তির এখানেই সম্পূর্ণ পরিসমাপ্তি ঘটবে। কি করবেন বুঝতে না পেরে মাস সাতেক তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পার করে দিলেন। শেষ পর্যন্ত গোপনে বিয়ে করলেন তিনি, যদিও পরে সেই বিয়ের কথা স্বীকার করলেন না। ফলে ফুলবার্ট আর তাঁর আত্মীয় স্বজন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুলেন যে এবেলার্ড আগাগোড়াই ধোঁকা দিতে চেয়েছেন ইলোইযাকে, এবং প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর হলেন তাঁরা। এক রাতে তাঁর ঘরে জোর করে ঢুকে তাঁকে খোজা করে দিলেন তাঁরা।
এবার কিন্তু সন্ন্যাসী হবেন বলেই মনস্থির করলেন এবেলার্ড। আক্রান্ত হওয়ার অল্প কিছু দিন পর সন্ত- দেনিস মঠে দীক্ষা নিলেন তিনি, আর ইলোইযাকেও তাই করতে বললেন, যিনি কিনা কাজটি সম্পাদন করলেন Argenteuil কনভেন্টে, যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন তাঁকে ফেরাতে চাইলেন: মাত্রই তো উনিশ বছর বয়েস তাঁর। কিন্তু ইলোইযা তাতে বিচলিত হলেন না, বরং পম্পেই-এর স্ত্রী আত্মঘাতী হওয়ার ঠিক আগে যেকথা বলেছিলেন বলে মনে করা হয় তাই উচ্চারণ করলেন প্রাচীন কবি লুকান-এর কবিতা থেকে: ‘Cur ímpia nupsi, si míserum factura fui?’ ‘তাঁকে যদি অসুখীই করবো তাহলে ঈশ্বরের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করলাম কেন আমি?’ এবেলার্ড লিখছেন, এই কথাগুলো উচ্চারণ করে ইলোইসা ত্বরিত পায়ে বেদীর দিকে এগিয়ে গেলেন, বিশপের কাছ থেকে যাজিকার অবগুণ্ঠনটি গ্রহণ করলেন, এবং তারপর শপথবাক্য পাঠ করলেন। এবেলার্ড এবং ইলোইযার প্রেম কাহিনীর দৃশ্যত এখানেই সমাপ্তি। শারীরিক প্রেম আর সম্ভবপর ছিল না এবং বাকি জীবন তাঁরা তাঁদের শপথাবদ্ধই ছিলেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের সবচাইতে চিত্তাকর্ষক অংশটি কিন্তু এখনো বলা বাকি রয়ে গেল।
পরবর্তী অংশ : এবেলার্ড ও ইলোইযা (শেষার্ধ)
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৩৯ | জি এইচ হাবীব