Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
প্রাচীনকালপরবর্তী কাব্য
(শেষার্ধ)
লাতিনটা পড়া মোটেই কঠিন নয়। ইংরেজি অনুবাদটি যে লয়ে পড়ছেন লাতিনটা পড়ার সময় ঠিক সেই লয় বজায় রাখুন। ‘y’ অক্ষরটির উচ্চারণ [i], কাজেই অন্ত্যমিল একেবারে নিখুঁত এমনকি প্রথম স্তবকেই। এই ভাবগম্ভীর স্তোত্রটির লাতিন টেক্সটটিকে ভাষা বিষয়ক একটা ছোট্ট অনুশীলনের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাক। আয়রনসের অনুবাদ পুরোপুরি আক্ষরিক নয়, কারণ তাহলে তিনি প্রয়োজনীয় অন্ত্যমিল তৈরি করতে পারতেন না, বা, প্রতিটি চরণে সঠিক সংখ্যক দল (syllable)-এর সমাবেশ ঘটাতে পারতেন না।
Dies irae, dies illasolvet saeclum in favillateste David cum Sibylla. Quantus tremor est futurusquando iudex est venturuscuncta stricte discussurus. Tuba, mirum spargens sonumper sepulchra regionum, coget omnes ante thronum.
Day of wrath and doom impending, David’s word with Sibyl’s blending! Heaven and earth in ashes ending! O what fear man’s bosom rendeth When from heaven the judge descendeth. On whose sentence all dependeth! Wondrous sound the trumpet flingeth,Through earth’s sepulchres it ringeth, All before the throne it bringeth.
মোটের ওপর টেক্সটটা শব্দ ধরে ধরে অনুবাদ করা হয়েছে। যদিও শব্দক্রমে তফাত ঘটেছে, যেমন প্রথম চরণে, যেখানে লাতিন ভাষা ‘illia’-র মতো একটি ডেমন্সট্রেটিভ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে একটি বিশেষ্যর আগে বা পরে; কিন্তু ইংরেজিতে কেবল ‘that day’ – এই শব্দক্রমটিই সম্ভব। একইভাবে, ৭ সংখ্যক চরণে ইংরেজি ভাষা বিশেষ্য ‘sonum’ (sound), এবং বিশেষণ ‘mirum’ (wonderful)-কে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না, যেটা কিনা লাতিন দিয়েছিল।
টেক্সটির অনেক শব্দই চিনে নেয়া যায় ইংরেজি এবং / বা ফরাসি থেকে। ‘Saeculum’-এর আক্ষরিক অর্থ ‘a lifetime’ (এক জীবনকাল) বা ‘a generation’ (একটি প্রজন্ম), এবং সেটাই আধুনিক ফরাসি শব্দ ‘siècle’ (শতাব্দী)-এর উৎস। এখানে যা বোঝানো হয়েছে তা হলো খোদ সময়, যা কিনা গোটা বিশ্বের সঙ্গেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে শেষ বিচারের সময় ভেরী বাজলে। অন্যভাবে বলতে গেলে, সময় বা কাল বিশ্বের সমার্থক, যা কিনা খৃষ্টীয় লাতিনে একটি সাধারণ মোটিফ, এবং আমাদের ধার করা শব্দ ‘secular’-এ (মানে, পার্থিব, অ-ধর্ম সম্বন্ধীয়, যেমনটা আমরা ‘secular authorities’ বলতে বোঝাই) যা প্রতিফলিত। ‘sonum’ (নমিনেটিভ-এ যা ‘sonus’) আমরা অনেক ইংরেজি শব্দেই দেখব, যেমন, ‘resonance’-এ, যার আদি মানে ‘echo’ বা প্রতিধ্বনি, dissonance (যখন শব্দের সংঘর্ষ ঘটে)-এ, ‘sonata’-য় (এক ধরনের সঙ্গীত যা এসেছে লাতিন ক্রিয়াপদ ‘sonare’, মানে, শব্দ করা, – বা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে), আর ‘consonant’-এ, (যার আক্ষরিক মানে, কিছুর সঙ্গে ধ্বনিত হওয়া, যেহেতু ব্যঞ্জনবর্ণগুলোকে স্বরবর্ণের সঙ্গে যুক্ত ধ্বনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়)। অন্যান্য প্রতিবেশের চাইতে গির্জায়, বিশেষ করে ক্যাথলিক গির্জায় সক্রিয়ভাবে বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল লাতিন, আর সে ভাষায় লেখা খৃষ্টীয় কবিতাগুলোই স্থায়িত্ব পেয়েছিল সবচাইতে বেশি। গোড়ার দিককার গির্জা সঙ্গীতে অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে লাতিন টেক্সটের পটভূমি। লাতিন ধ্বনি কেমন তা জানার একটা উপায় হলো বাখের মাস (mass) আর কোরাল সংগীত শোনা। কিন্তু মধ্যযুগীয় লাতিন কাব্য যে কেবল ধর্মীয়-ই ছিল তা নয়। এমনকি সে-সময়েও প্রার্থনা আর ঈশ্বরের বিচার ছাড়াও আরো অনেক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাত তারা, যেমন বসন্ত ও প্রেম। প্রাচীনকালেই এসব বিষয় নিয়ে অনেক কাব্য রচিত হয়েছে, কিন্তু মধ্যযুগের গোড়ার দিকে খুব কম কবি-ই এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। দ্বাদশ শতক থেকে যুগধর্মে বদল ঘটে, এবং লোকে নানান ভাষায় প্রেমের কবিতা লিখতে ও গাইতে শুরু করে, গোড়ার দিকে বিশেষ করে প্রোভেঁসাল, জার্মান আর ফরাসি ভাষায়। প্রোভেন্সে লোকে ত্রুবাদুর কাব্য আর জার্মানিতে মিনেসাং (Minnesang – জার্মানীতে দ্বাদশ শতকে বিকশিত হওয়া এবং চতুর্দশ শতক অব্দি চলা গান রচনার একটি ঐতিহ্য) নিয়ে আলোচনা করে। ঠিক একই সময় লোকে প্রেমের কবিতা, মদ্যপানের কবিতা, প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা এবং সব ধরনের অ-ধর্মীয় কবিতা লিখতে শুরু করে লাতিনে। অবশ্যই সেটা হুট করে হয়নি, কারণ যারা লাতিন জানতো তাদের প্রত্যেকেই অন্তত একটি করে কথ্য ভাষাও জানতো, এবং অনেক লেখকই নানান ভাষায় লিখতে পারতেন। রচিত হয়েছিল এমনকি মিশ্র কবিতাও যার খানিকটা লাতিনে লেখা, খানিকটা জার্মান বা ফরাসিতে। এই সময়টিই ছিল আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাগুলোতে লেখা কাব্যের প্রথম স্বর্ণালী যুগ। তারপরেও এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে লাতিন কবিতাগুলো ছিল জাতীয় ভাষাগুলোতে লেখা কবিতার অনুকরণ। গোড়ার দিকে বরং এর উল্টোটাই হয়ে থাকতে পারে। লাতিন কাব্য এবং কাব্যনির্মাণ শৈলী ছিল নতুন ভাষার পথিকৃৎদের আদর্শ। ধীরে ধীরে নতুন ভাষাসমূহে রচিত কাব্য এসব আদর্শ থেকে সরে যায়। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের এই নতুন ধরনের কাব্যের রচয়িতারা বেশিরভাগ-ই ছিলেন শিক্ষার্থী; এক বিদ্যালয় থেকে আরেক বিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়াবার একটা প্রবণতা ছিল তাদের, বিশেষ করে যদি পড়াশোনা তেমন ভালো না হতো, অথবা যদি তারা কোথাও পড়ার খরচ না মেটাতো। এসব কাব্যের অনেকটাই টিকে গেছে, কিন্তু সেগুলোর বেশির ভাগেরই রচয়িতার নাম জানা যায় না, আর অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো লিখিত রয়েছে রচনা সংকলনের বিশদ পাণ্ডুলিপিতে। এই পাণ্ডুলিপিগুলোর একটি রীতিমত বিখ্যাত। আদতে সেটা রাখা ছিল জার্মানির মিউনিখের দক্ষিণে অবস্থিত বেনেডিক্টবিউরেন (Benediktbeuren)-এর একটি মঠে, আর তাই এই সংগ্রহটিকে বলা হয় ‘কারমিনা বুরানা’ (Carmina Burana) বা ‘বেনেডিক্টবিউরেন থেকে পাওয়া সঙ্গীত’। এই সংগ্রহটি বিশেষ করে এ-জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে সুরস্রষ্টা কার্ল অর্ফ (Carl Orff) বেশ কিছু লাতিন আর জার্মান কবিতায় সুর সংযোজন করে একটি দুর্দান্ত কোরাল সঙ্গীত সম্ভার সৃষ্টি করেছেন যা ঠিক ওই ‘কারমিনা বুরানা’ নামেই পরিচিত। তিনি যেসব কবিতা এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তার একটি বসন্ত এবং প্রেমের স্তুতিমূলক একটি স্তোত্র যা শুরু হয়েছে এভাবে :
Ecce gratum et optatum ver reducit gaudia: purpuratum floret pratum sol serenat omnia Behold, the pleasant and longed-for spring brings back joy: the meadow blossoms with violet flowers, the sun makes everything bright.
ওপরের আক্ষরিক অনুবাদের সঙ্গে লাতিনের সুর ও ছন্দ কিছুটা রক্ষা করার উদ্দ্যেশ্য নিয়ে করা খানিকটা কম আক্ষরিক কিন্তু তারপরেও যথেষ্ট বিশ্বস্ত তর্জমাটির তুলনা করে দেখুন:
Welcome, season, with good reason spring restores our old delight: violets grow by the hedgerow sunshine renders all things bright.
আধুনিক একজন কবির কাছে এসব ছন্দ কিছুটা গতানুগতিক মনে হতে পারে বটে, কিন্তু সেটা অনুবাদকের দোষ নয়, যিনি কিনা মূলের কাব্যিক কলাকৌশল অনুকরণের কাজটি বেশ কৃতিত্বের সঙ্গেই করেছেন। বরং, এই ধরনের কাব্য রচনার শত শত বছর পর সব অন্ত্যমিলই ব্যবহৃত হয়ে গেছে এবং ছন্দগুলোকে এখন বড়ই সাদামাটা বলে মনে হয়। কিন্তু এসব কবিতা যখন প্রথম লিখিত হয়েছিল আঙ্গিকগুলো ছিল টাটকা, অচেনা, আর মাদকতা পূর্ণ, এক বিংশ বর্ষীয় শিক্ষার্থীর কাছে বসন্ত যেমন মনে হয় ঠিক তেমনি।
(পরবর্তী অধ্যায় : এবেলার্ড ও ইলোইযা)
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৩৮ | জি এইচ হাবীব