উল্টোরথ-এর 'মেলব্যাগ'-এ মেশানো থাকত কৌতুকের মিছরি আর মিসেস প্রসাদ সিংহ ছিলেন মিছরির বয়াম। [...]

[প্রথম পর্ব] উল্টোরথ-এর 'মেলব্যাগ'-এ মেশানো থাকত কৌতুকের মিছরি আর মিসেস প্রসাদ সিংহ ছিলেন মিছরির বয়াম। মাঝেমধ্যে প্রসাদ সিংহ উত্তর পরিবেশন করলেও মিসেস প্রসাদ সিংহেরই জনপ্রিয়তা ছিল সর্বাধিক, নীচের দুটি চিঠি তার প্রমাণ : কল্যাণী ভট্টাচার্য (আটীয়াবাড়ী বাগান) : আপনার উত্তর খুব ভাল লাগে। একমাত্র আপনার উত্তর পড়বার জন্যই আমি প্রতি মাসে উল্টোরথ রাখি। আশা করি, আপনি মেলব্যাগ ছেড়ে যাবেন না। -- তিনকাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। এখন কোন চুলোয় যাব বল। (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ, পৃ. ২৩) তাপস মুখার্জী (নদীয়া) : উল্টোরথে আপনার সুন্দর উত্তর পড়ে খুব অবাক হয়ে যাই। সেই জন্য আপনাকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা। ছোটভাইয়ের অভিনন্দন গ্রহণ করবেন কি? -- নিশ্চয়। (বর্ষ ২১, সংখ্যা ১, চৈত্র ১৮৯৪ শকাব্দ, পৃ. ২৭) কিছু-কিছু বিষয়ে (যেমন : ধর্ম-বর্ণ) পাঠকদের কৌতূহল মেটানো হয়েছে অত্যন্ত সরল উত্তরে, আবার কখনও-কখনও দেখছি শ্লেষ-বক্রোক্তির টান। মিসেস প্রসাদ সিংহের একটি উত্তর : শিপ্রা দাশ (গৌহাটি) : রাকেশ রোশন হিন্দু, না মুসলমান? -- হিন্দু। (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১১, মাঘ ১৮৯৩ শকাব্দ, পৃ. ২২৫) এর আগে প্রায় একই প্রসঙ্গে প্রসাদ সিংহ উত্তর দিয়েছেন : মনোমোহন সরকার (গৌরীপুর) : বাংলায় কি সিডিউল্ড কাস্ট শিল্পী আছেন? -- এসব প্রশ্ন থাক। জাত নিয়ে আজ আর কেউ মাথা ঘামায় না। -- বিশেষ করে কলকাতায়। (বর্ষ ১৩, সংখ্যা ৪, মাঘ ১৮৮৬ শকাব্দ, পৃ. ২৩১) ষাট-সত্তরের দশকে বাংলা ছবির সঙ্গে সাহিত্যের যোগ যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল, উল্টোরথ-এর নিয়মিত বিভাগ 'বরণীয় সাহিত্যের স্মরণীয় চিত্ররূপ' বা 'সাহিত্যের চিত্ররূপ' দেখলেই তা বোঝা যায়। এ-ব্যাপারে পাঠকদের সাগ্রহ পরামর্শও লক্ষণীয়, যেমন প্রসাদ সিংহের প্রতি এক পাঠকের চিঠি : এস. টি. ডি (রঘুনাথপুর) : প্রসাদদা, গত বৎসর পূজা সংখ্যা 'বেতারজগৎ'-এ প্রকাশিত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের 'মহাবিহার' গল্পটি চিত্রায়িত হলে খুব ভালো হবে এবং চলবেও। আমার হয়ে আপনি পরিচালক অজয় করকে অনুরোধ জানাবেন ছবিটি চিত্রায়িত করবার জন্য? -- আপনার অনুরোধ জানালুম। (বর্ষ ১৩, সংখ্যা ৪, মাঘ ১৮৮৬ শকাব্দ, পৃ. ২২৫) 'মেলব্যাগ' থেকে একগুচ্ছ চিঠি বেছে নিয়ে তুলে দেওয়া হলো (উত্তরদাতা : মিসেস প্রসাদ সিংহ) : ১ স্বপন ব্যানার্জী (লামডিং) : বহুরূপ যাঁর তাঁকে বলা হয় বহুরূপী। পাঁচটি মুখ যাঁর তাঁকে…

জহির রায়হান তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্যকে গ্রন্থিত করেছিলেন মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে। জীবন ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিভ্রমণের স্থান আর শিল্প ছিল সেই পরিভ্রমণ উদ্ভাসনের দীর্ঘ পথ। জীবন ও শিল্পের পরিভ্রমণ ও উদ্ভাসন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল আরও এক দীর্ঘ পথের বাকে, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্প অর্থময় হতে পারে না। তিনি তাই স্বাধীকার আন্দোলনের দীর্ঘতর পথ ধরে হাঁটতে থাকেন। তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক ও অভিন্ন হয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। [...]

জহির রায়হান তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্যকে গ্রন্থিত করেছিলেন মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে। জীবন ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিভ্রমণের স্থান আর শিল্প ছিল সেই পরিভ্রমণ উদ্ভাসনের দীর্ঘ পথ। জীবন ও শিল্পের পরিভ্রমণ ও উদ্ভাসন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল আরও এক দীর্ঘ পথের বাকে, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্প অর্থময় হতে পারে না। তিনি তাই স্বাধীকার আন্দোলনের দীর্ঘতর পথ ধরে হাঁটতে থাকেন। তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক ও অভিন্ন হয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। দীর্ঘতর ওই পথ তাঁর জীবনকে হ্রস করে দিয়েছে - কেননা মুক্তির জন্যে মানুষকে মূল্য দিতে হয়। জহিরকেও দিতে হয়েছে, তিনি নিরুদ্দেশে গেছেন, পরে উদ্ঘাটিত হয়েছে তিনি শহীদ হয়েছেন। জীবন তাঁর হারিয়ে গেছে, কিন্তু শিল্প তাঁর এখনও উজ্জল আলো ছড়াচ্ছে; কেননা মুক্তির নিরবধি সংগ্রাম এক পরম শৈল্পিকতা, ওই শৈল্পিকতায় জহির রায়হান এক হয়ে গেছেন, লীন হয়ে আছে তাঁর জীবন ও শিল্প। প্রায়-উপনিবেশিক এক শাসন যে পূর্ববাংলায় জীবন ও শিল্পের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে রেখেছে জহির রায়হান তা জেনেছিলেন নিজের জীবনের মধ্যে দিয়ে। সিনেমাতে তাঁর প্রথম ফুটপ্রিন্ট ছিল ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ১৯৫৭ সালে ছবিটিতে সহকারী পরিচালকের কাজ করেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিচালক হয়ে ওঠেন, ১৯৬১ সালে নির্মাণ করেন ‘কখনো আসেনি’, ১৯৬২ তে ‘সোনার কাজল’ আর ১৯৬৩তে ‘কাচের দেয়াল’। কিন্তু পরপর তিনটি চলচ্চিত্রই অসফল হয় বাণিজ্যের দৌড়প্রতিযোগিতায়। সমাজের অবকাঠামো তার কাঠামোর উপযোগী মনস্তত্ব তৈরি করে চলে, মারাত্মক সেই মনস্তত্ব ষাটের দশকে তো বটেই, এখনও আমাদের প্রতিনিয়ত হিতোপদেশ দেয় - জীবন এত কষ্টের, সিনেমা, নাটক আর গল্প উপন্যাস যদি আমাদের একটু হাসাতেই না পারে, তা হলে কি দরকার ওসবের? অতএব জহিরকে একপা এগুনোর জন্যে দু’পা পেছাতে হলো। মুখ ফেরাতে হলো বাণিজ্যিক ছবির দিকে। ভাষা আন্দোলন গভীরতর ছাপ ফেলেছিল তার ওপরে। তিনি তাই পরিকল্পনা করেছিলেন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের একটি রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাণের। ততদিনে বাণিজ্যিক ছবির কল্যাণে তিনি প্রযোজক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সামর্থ্য এলেও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তাঁকে তাই রূপকাশ্রয়ী হয়ে নির্মাণ করতে হলো ‘জীবন থেকে নেয়া’। পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্পের অবনমিত চেহারার সঙ্গে প্রতিনিয়ত এভাবেই মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু সেই যে স্পেন দেশের এক…

বড় রাজনীতিবিদ না হলে এ দেশে অনেক কৃতী মানুষের জন্ম বা মৃত্যুতিথি অনেক সময় অগোচরে আসে, আর অগোচরেই চলে যায়। কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীও তাই নীরবে এল, নীরবেই চলে গেল। গতকাল, অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর কথা মনে হলে যমুনার কালো ঘোলা জলের কথা মনে আসে। সেবারও জানুয়ারির শুরুতে ভীষণ শীত পড়েছিল দেশে। সেই শীতের মধ্যে কফিনে শায়িত লেখকের সঙ্গে আমিও উঠে পড়ি গাড়িতে। গাড়ি মানে অ্যাম্বুলেন্সে। সেটি যাবে বগুড়ায়, লেখকের জন্মস্থানে। তখনো যমুনা সেতু হয়নি, আরিচা দিয়েই ফেরি পারাপার হতো। সন্ধ্যার মুখে ফেরি ছাড়ে। নদীপথে দুই-আড়াই ঘণ্টা লাগে ওপারের নগরবাড়ি ঘাটে পৌঁছাতে। অন্ধকার হয়ে এলে একসময় উঠে ফেরির একদম ওপরের বসার জায়গাটায়। সেখানে তখন এক প্রান্তে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোট ভাই অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস একা বসে চরাচরের দিকে তাকিয়ে আছেন। এক পাশে ফেরির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াই। নদীর ওপরের আবছা দৃশ্যপটে শোক, স্মৃতি আর অচেনা নানান অনুভূতি যেন কুয়াশার মধ্যে রূপ পাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্ধকারের দিকে বেশিণ তাকিয়ে থাকা যায় না বলে, কিংবা শোকে মানুষের মাথা সর্বদা নিচু হয়ে আসে বলে আমিও নিচে নদীর বয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ফেরির আলোর কিছুটা আভা নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে আলোড়ন তুলে বাংলা ভাষার এক প্রতিভাধর লেখকের লাশ বহন করে ফেরিটি চলেছে। অন্ধকারে কালো দেখানো সেই পানির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ একটি কথা ঝিলিক দিয়ে উঠল মনে: উত্তরের সন্তান ইলিয়াস সেই খানে ফিরে যাচ্ছেন, যার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা-বাঙালি আর করতোয়া নামের তিনটি নদী। যমুনা দিয়ে গেলে বাঙালি নদীতে মেশা যায়, বাঙালি দিয়ে গিয়ে পড়া যায় সেই কাতলাহারের বিলে_খোয়াবনামা-র জগতে। সেই কাৎলাহারের বিল, যার পাশে বসে পোড়াদহের মেলা, যেখানে একদা আখড়া গেড়েছিল ফকির মজনু শাহর আর ভবানী পাঠকের ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বেশুমার ঘোড়সওয়ারেরা। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত স্লোক আর গাঁথায় ভরপুর যমুনা তীরের জেলে-মাঝি-চাষাভুষা মানুষের জীবনকে আশ্রয় করেই বেড়ে উঠেছে ইলিয়াসের মহাকাব্যিক উপন্যাস খোয়াবনামা। এই সেই যমুনা, তাঁর চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের গ্রামীণ চরিত্ররা যার বুক থেকে ঘোড়ার খুরধ্বনি শুনতে পায়। কী অদ্ভুত কাকতাল, সেই যমুনা বেয়ে বেয়েই কবর পেতে ফিরে চলেছেন জন্মের আশ্রয়ে। সেদিন তাঁর লাশের পাশে…

'প্রসাদ সিংহ পরিকল্পিত' মাসিক উল্টোরথ পত্রিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শৈশবে―প্রয়াত মাতামহের (মুন্সেফ আদালতের সরকারি উকিল) দলিলপত্রভর্তি স্থূলকায় আলমারি লুঠ করে পেয়েছিলাম আরও অনেক বইয়ের সঙ্গে উল্টোরথ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ); ছোট মামা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই পত্রিকা আমার বহু দুপুরের অবকাশরঞ্জিনী হয়ে ছিল। [...]

'প্রসাদ সিংহ পরিকল্পিত' মাসিক উল্টোরথ পত্রিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শৈশবে―প্রয়াত মাতামহের (মুন্সেফ আদালতের সরকারি উকিল) দলিলপত্রভর্তি স্থূলকায় আলমারি লুঠ করে পেয়েছিলাম আরও অনেক বইয়ের সঙ্গে উল্টোরথ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ); ছোট মামা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই পত্রিকা আমার বহু দুপুরের অবকাশরঞ্জিনী হয়ে ছিল। কণিষ্ক (রাম বসু) ও বরেন গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসদুটির (যে যার অজ্ঞাতবাসে ও বনের খেলা) কথা আমার আমৃত্যু মনে থাকবে। পরবর্তীকালে আরও বাইশটি সংখ্যা সংগ্রহ করেছি পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে; ধূসর কাগজে ছাপা কাটা-কাটা চেহারার অক্ষরগুলো আমাকে মোহগ্রস্ত করে রাখে এখনও। মূলত চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা হলেও উল্টোরথ-এর বড় অংশ জুড়ে থাকত গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, সাক্ষাৎকার ও রম্যরচনা; আর যা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষক―'মেলব্যাগ'। নিয়মিত এ-বিভাগে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতো। একটি পূজা সংখ্যায় (১৮৯৯ শকাব্দ) ঘোষণা করা হয়েছিল যে শ্রেষ্ঠ প্রশ্নকর্তাকে ২৫.০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সাধারণত প্রশ্নের তুলনায় উত্তরগুলো সংক্ষিপ্ততর হলেও বুদ্ধিদীপ্তি ও সরসতায় উপভোগ্য হয়ে উঠত। উত্তরদাতা ছিলেন মিসেস প্রসাদ সিংহ ও প্রসাদ সিংহ স্বয়ং; কোনও-কোনও সংখ্যায় অবতার কিংবা শ্রীপঞ্চাননকেও দেখা গেছে, আবার কয়েকটি সংখ্যায় নামই ছাপা নেই কারও। মার্চ ১৯৭২ সংখ্যায় (বর্ষ ২১, সংখ্যা ১, চৈত্র ১৮৯৪ শকাব্দ) প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানা যাচ্ছে : উল্টোরথ-এর মুদ্রাকর, প্রকাশক ও সম্পাদকের নাম মনোজ দত্ত; পত্রিকার ঠিকানা―দি ম্যাগাজিন্‌স্ প্রাইভেট লিমিটেড, ১২৪/বি, বিবেকানন্দ রোড, কলকাতা-৬। একই প্রকাশনালয় থেকে পাশাপাশি বেরোত একই আদলের আরেকটি মাসিক পত্রিকা : সিনেমাজগৎ। 'মেলব্যাগ' সেখানেও নিয়মিত বিভাগগুলোর একটি। পত্রিকাদুটির প্রকাশতারিখ উল্লেখিত হতো শকাব্দে (যার সঙ্গে ৭৮ যোগ করলে খ্রিস্টীয় সন মিলবে)। 'মেলব্যাগ'-সূত্রে জানতে পারি, 'উল্টোরথ' নামের প্রবর্তক প্রসাদ সিংহ এবং এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে। আমার সংগৃহীত সর্বশেষ সংখ্যাটি (বর্ষ ৩৬, সংখ্যা ৯, বৈশাখ ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ) একটু ব্যতিক্রমী (আকার : ১০.২৫‌" x ৮"; অন্যান্য সংখ্যার আকার : ৮.২৫" x ৫.২৫")―শকাব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে বঙ্গাব্দ এবং অন্তত এই প্রথমবারের মতো প্রারম্ভিক আখ্যাপত্র দেখতে পাচ্ছি, তাতে লেখা : প্রধান সম্পাদক―শক্তিপদ রাজগুরু, সম্পাদক―ডি. পি. আগরওয়াল, সহযোগী সম্পাদক―শ্যামল বসু। পালটে গেছে কার্যালয়ের ঠিকানাও : ১ বি রাজা সুবোধমল্লিক স্কোয়ার, কলিকাতা-৭০০০১৩। 'পাত্র পাত্রী' বা 'আপনার প্রশ্ন ও আপনার ভাগ্য' শিরোনামে নতুন বিভাগ…

একুশে বক্তৃতা ২০০০-এ সব্যসাচী লেখক ও হালের সব্যসাচী সুন্দরী নির্বাচক গুণী কথাশিল্পী সৈয়দ শামসুল হক ভাষাকে জাতির অন্যতম স্বদেশ হিসেবে দেখেছিলেন। বাক্যটি খুব মনে ধরেছিল। তার এমনতর দৃষ্টিভঙ্গীর পেছনে প্রেরণা কী ছিল এখন আর স্পষ্ট মনে পড়ে না। লেখাটা দীর্ঘদিন ধরে আরো অনেক পত্রিকার সাথে রেখে দিয়েছিলাম। এখনো এসব লেখা আরো অনেক ছেঁড়া পৃষ্ঠার মতো নানা সময়ে হাতে উঠে আসে আর আমাকে মুহূর্ত কয়েকের জন্য ভাবনার জগতে নিয়ে যাবার আয়োজন করে। লেখাটার কথা মনে পড়লো আজ রাতে "বিশদ বাঙলা"র অফহোয়াইট আলোর ওমে বসে হালের তরুণ কবি ও কথাশিল্পী এবাদুর রহমান এর সাথে আলাপচারিতার সময়। একটানা প্রায় দুই ঘন্টা অনর্গল কথা বলে যাওয়ার ক্ষমতা বোধকরি সবার থাকে না। প্রথম অংশটা আমি সম্ভবত ধরতে পারিনি। যে অংশটা আমি পরিষ্কার ধরতে পেরেছিলাম সেটা তার "পূর্ব বাঙলার ভাষা"র সূত্র ধরে। যেসব কথা উনি শোনালেন তার সারমর্ম সঠিকভাবে ধরতে পেরেছি কিনা নিশ্চিত নই। কারণ নানা জায়গা থেকে একটা বিষয়কে ফোকাস করার একটা বাতিক ছিল বক্তার। তার উপর খানিকটা আমলাতান্ত্রিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরগুলা সাজিয়ে শ্রোতাদের সামনে থ্রো করছিল। এটা তর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্রোচ হয়ে উঠে অনেক সময়। আর শ্রোতাদের জ্ঞানকাণ্ডের উপর এক ধরণের প্রিঅ্যাজাম্পশান থাকায় তার কোনো কথাই ঠিকঠাক মতো ধরা যাচ্ছিল না। ফলত দুয়েকটা ভাল প্রশ্নের বাইরে তার বলাটাই সার হল। কে কি নিয়ে গেল জানি না। আমি ফিরলাম একরাশ অগ্রহায়ণের পেলব শীত শরীরে নিয়ে। তার 'পূর্ব বাঙলার ভাষা' নিয়ে যা আমি এতদিন ধরে পাঠ করে জমা করেছি তার সাথে বক্তার আজকের বক্তব্য খানিকটা প্যারাডক্স তৈরী করে বলে মনে হল। তার সেই বহিখানার দুইটা প্রোগ্রামের কথা এক সাক্ষাতকারে জেনেছিলাম। তার ধারণা প্রচলিত ভাষা পুঁজি নির্ধারিত। তার কাজ হচ্ছে, এই পুঁজি নির্ধারিত ভাষার বিপরীতে একটা পাল্টা ন্যারেটিভ তৈরী করা। এই কাজটা করবেন তিনি এক ধরণের প্রতি দর্শন তৈরী করে। কী সেটা? খুব সরল ভাষায় বাকা আঙুলে ঘি না তুলে সেটা করা হবে সোজা আঙুলে। একঘেয়ে রিপোর্টধর্মী ভাষাশৈলীর বাইরে যেযে এমন কিছু করা যাতে যা সরাসরি উপস্থাপিত হবে না। পাঠককে খুব গদো গদো গদ্যে কোনো কিছু দিলে সে আর আর রিঅ্যাক্ট করবে না। তাকে বের করে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.