
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
বড় রাজনীতিবিদ না হলে এ দেশে অনেক কৃতী মানুষের জন্ম বা মৃত্যুতিথি অনেক সময় অগোচরে আসে, আর অগোচরেই চলে যায়। কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীও তাই নীরবে এল, নীরবেই চলে গেল। গতকাল, অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
তাঁর মৃত্যুর কথা মনে হলে যমুনার কালো ঘোলা জলের কথা মনে আসে। সেবারও জানুয়ারির শুরুতে ভীষণ শীত পড়েছিল দেশে। সেই শীতের মধ্যে কফিনে শায়িত লেখকের সঙ্গে আমিও উঠে পড়ি গাড়িতে। গাড়ি মানে অ্যাম্বুলেন্সে। সেটি যাবে বগুড়ায়, লেখকের জন্মস্থানে। তখনো যমুনা সেতু হয়নি, আরিচা দিয়েই ফেরি পারাপার হতো। সন্ধ্যার মুখে ফেরি ছাড়ে। নদীপথে দুই-আড়াই ঘণ্টা লাগে ওপারের নগরবাড়ি ঘাটে পৌঁছাতে।
অন্ধকার হয়ে এলে একসময় উঠে ফেরির একদম ওপরের বসার জায়গাটায়। সেখানে তখন এক প্রান্তে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোট ভাই অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস একা বসে চরাচরের দিকে তাকিয়ে আছেন। এক পাশে ফেরির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াই। নদীর ওপরের আবছা দৃশ্যপটে শোক, স্মৃতি আর অচেনা নানান অনুভূতি যেন কুয়াশার মধ্যে রূপ পাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্ধকারের দিকে বেশিণ তাকিয়ে থাকা যায় না বলে, কিংবা শোকে মানুষের মাথা সর্বদা নিচু হয়ে আসে বলে আমিও নিচে নদীর বয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ফেরির আলোর কিছুটা আভা নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে আলোড়ন তুলে বাংলা ভাষার এক প্রতিভাধর লেখকের লাশ বহন করে ফেরিটি চলেছে। অন্ধকারে কালো দেখানো সেই পানির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ একটি কথা ঝিলিক দিয়ে উঠল মনে: উত্তরের সন্তান ইলিয়াস সেই খানে ফিরে যাচ্ছেন, যার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা-বাঙালি আর করতোয়া নামের তিনটি নদী। যমুনা দিয়ে গেলে বাঙালি নদীতে মেশা যায়, বাঙালি দিয়ে গিয়ে পড়া যায় সেই কাতলাহারের বিলে_খোয়াবনামা-র জগতে। সেই কাৎলাহারের বিল, যার পাশে বসে পোড়াদহের মেলা, যেখানে একদা আখড়া গেড়েছিল ফকির মজনু শাহর আর ভবানী পাঠকের ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বেশুমার ঘোড়সওয়ারেরা। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত স্লোক আর গাঁথায় ভরপুর যমুনা তীরের জেলে-মাঝি-চাষাভুষা মানুষের জীবনকে আশ্রয় করেই বেড়ে উঠেছে ইলিয়াসের মহাকাব্যিক উপন্যাস খোয়াবনামা। এই সেই যমুনা, তাঁর চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের গ্রামীণ চরিত্ররা যার বুক থেকে ঘোড়ার খুরধ্বনি শুনতে পায়। কী অদ্ভুত কাকতাল, সেই যমুনা বেয়ে বেয়েই কবর পেতে ফিরে চলেছেন জন্মের আশ্রয়ে।
সেদিন তাঁর লাশের পাশে বসে মনে হয়েছিল, তাঁর এই ফেরার সঙ্গে সাহিত্যিক হিসেবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সৃষ্টির ল্েযর একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুখ-স্বপ্ন-দুঃখ-হতাশা-সংগ্রাম আর আপোসে গড়া আটপৌরে জীবনের সম্পর্কটি ধরতে চেয়েছেন তিনি তাঁর উপন্যাস দুটিতে। বাংলাদেশের নিজস্ব রাজনৈতিক ও মানবিক বাস্তবতার মানচিত্র আঁকতে চেয়েছেন তাঁর সাহিত্যে। ুদ্র, তুচ্ছ মানুষের জীবনের শক্তি ও সৌন্দর্য যে অপার সম্ভাবনা ধরে, তাকে তিনি সাহিত্যের মধ্যে নির্মোহভাবে ফলিয়ে দেখান। তাঁর চিলেকোঠার সেপাই তাই একদিকে ঢাকা শহর, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের যমুনা পারের সমাজে একাত্তরের পূর্বপ্রস্তুতির আভাসগুলো চিনিয়ে দেয়। তাঁর খোয়াবনামা একদিকে তেভাগা আন্দোলন, আর আরেক দিকে পাকিস্তান আন্দোলনের মাঝখানে পড়ে গ্রামীণ জীবনস্পন্দনের দাগগুলো কাহিনির আদলে এঁকে দেখায়।
নিুবর্গীয় অবহেলিত মানুষের জীবনে প্রেম, আশা, উৎপাদন ও সংগ্রামের লীলা চলে। সেই লীলায় লীলায়িত মানুষ মিথ, বিশ্বাস, উপকথা আর গালগল্পের মধ্য দিয়ে যেকোনো বীরের নয়, নায়কের নয়; আসলে নিজেদেরই কথা বলে। বিদেশি সাহিত্য পড়া চোখে, বহুকাল ইংরেজের শাসনে থাকা আধুনিকতার বোধে, খামাখা বাঙালি বনাম মুসলমানিত্বের বিতর্কের ঘোরে এই সত্য ভুলে যাওয়া হয়েছিল। বাজারি সাহিত্যের উৎপাত এড়িয়ে, নিজেকে নিয়ে মেতে থাকার মধ্যবিত্তসুলভ ভাবালুতার দোষ কাটিয়ে সেই ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রবাহিত ইতিহাসে বাংলাদেশের মূল জীবনধারাটি শনাক্ত করেন। সেই জীবন নিুবর্গীয় মানুষের জীবন। খোয়াবনামার তমিজ-ফুলজান আর চিলেকোঠার সেপাই-য়ের হাড্ডি খিজির-চেংটুরা সেই জীবনধারারই প্রতিনিধি। হীনম্মন্যতায় ভোগার রোগ না থাকলে মানতে হবে, এ দুটি উপন্যাস নিবিড়ভাবে দেশিয়, কিন্তু একইসঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
আরেকভাবে দেখলে, স্বপ্নের পাকিস্তান যে অচিরেই মাটির সানকির মতো বাঙালি মুসলিম কৃষকের মাটিতেই গুঁড়িয়ে গেল তার আখ্যান খোয়াবনামা। আবার চিলেকোঠার সেপাই-য়ের পুরান ঢাকার হাড্ডি খিজির কিংবা যমুনা পারের লড়াকু চেংটুরা জানিয়ে দেয়, সামনে যে লড়াই আসছে সেখানে নিুবর্গের মানুষের মুক্তির আশা ভদ্রলোক মধ্যবিত্তদের জাতীয়তাবাদে পূরণ হওয়ার নয়। লড়াই হয়েছিল, কিন্তু মুক্তি আসেনি। দ্বিতীয় স্বপ্নভঙ্গের সেই আখ্যান হয়তো আমরা পেতে পারতাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লিখতে চাওয়া উপন্যাসটিতে। দুর্ভাগ্য যে, তার আগেই ক্যানসার এসে তাঁকে থামিয়ে দিল।
তাঁর পাঁচটি গল্পগ্রন্থ:অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উতপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল-এর গল্পগুলোর চরিত্ররাও যেন আমরাই। এই মধ্যবিত্ত ‘আমরা’ আর পেছনে পড়ে থাকা গ্রামের ‘আমরা’ তাঁর গল্পে মায়া-দয়াহীনভাবে ধরা পড়ে জীবনের ক্ষুদ্রতা, কপটতা এবং অসহায়ত্ব আর বৃত্ত ভাঙার জেদের মধ্যে। গল্পগুলো কাঁদায় না, চটিয়ে দেয়। মনকে অবশ না করে জাগিয়ে দেয় এবং বিষণ্ন করে। সত্তর ও আশির দশকের বিুব্ধ সময়জুড়ে তিনি উপন্যাসের দেশে ফেরার নকশা আঁকছেন, প্রবন্ধে খুঁজে দেখছেন সংস্কৃতির সেতুটা যে ভেঙে গেল, তাকে জোড়া লাগাবার কী উপায়? প্রবন্ধগুলো শেখায়, নিছক আর্ট করায় বাহাদুরির কিছু নেই। জনগণের জীবনধারার নিজস্ব গতি-দুর্গতির হিসাব বাদ রেখে যত কেতাবই ঘাঁটা হোক, তা অসার। ডায়রিতে লেখেন, ‘এ রকম ইতর মধ্যবিত্ত বোধ হয় দুনিয়ার আর কোনো দেশে নেই, এখানে রাজনীতি মানে প্রতারণা আর হারামিপনা, ন্যূনতম মর্যাদাবোধ থাকলে এখানে রাজনীতি করা অসম্ভব। দেশের মানুষ সম্বন্ধে ভাসাভাসা ধারণা নিয়ে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে ঘেউ ঘেউ করা হলো এখানকার বুদ্ধিজীবীদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা। বিজ্ঞানে ডিগ্রি পাওয়া মানুষ এখানে ব্যবসা করে ধর্ম নিয়ে। টাকার লোভে, সামাজিক প্রতিষ্ঠার লোভে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পারে না হেন কম্ম নেই। ভালো লাগে না…। দিনে দিনে অসহ্য হয়ে উঠছে এখানকার পরিবেশ…।’ এমন যার মনোভাব, দলে-বলে ভারী হয়ে তাকে সহজেই উপেক্ষা করা যায়। আমাদের বিধ্বস্ত সমাজের ওপর সরের মতো ভেসে ওঠা কর্তাব্যক্তিরা সেই কাজটি করতে মোটেই শরমিন্দা হননি। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুদিবসে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি তাই প্রতিবাদ হিসেবেই গণ্য হোক।
নিজের মতো করে প্রতি বছর ৪ জানুয়ারি শোকস্তব্ধ হই। তেমন কোনো একটি বাক্যও আজো তাকে নিয়ে লিখতে পারলাম না। শুধু জানি বাংলা ভাষার এক মহৎ শিল্পী, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম কথাকার ইলিয়াস, আর কিছু নয়, কোনোদিন যদি একটা বাক্যও বের হয় বড় ভয়ে ভয়ে বের হবে, কোনো একটা বাক্য, তাও লিখব ইলিয়াসকে নিয়ে, কখন? কে জানে?
dhonyobad dite chai na,faruk wasif apnake.bhule jaoa ekti diner kotha mone korie debar jonno.r je manushtir kotha likhechen,shey manushtike kebol ekjon shyahittik hishebey noy,ekjon prokrito shot manush hishebe o sroddhya kortam.
makhe majhey dekha hoe jeto science laboratory mor e,darie achen tempu te chorben bole,proshno korle uttar petam,uthi karon tempu te nanarokom manush dekha jai.r KHOABNAMA jokhon JANAKANTHA patrikai ber hocche,tokhon tar anubhutir kotha jiggeshe korai uttar diechilen,mone hocche er choritra ra shob bahadur hoe uthche,shamle rakha jacche na.
কবীর সুমনের একটি গানের কলি মনে পড়ছে: … আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গদ্য পড়ে লিখছি আমার গান। মনে পড়ছে মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শ্রদ্ধাশুভেচ্ছাপ্লুত পত্রবিনিময়ের কথাও। ইলিয়াসের কথা উঠলে অনেকেই তাঁকে ‘লেখকের লেখক’ ব’লে অভিহিত করেন — এ-অভিধা নিয়ে কূটতর্কে না গিয়েও বোঝা যায় যে লেখার অসামান্যতায় ইলিয়াস — যিনি গৌণ প্রচার-উল্লম্ফন থেকেও ছিলেন সচেতনভাবে দূরবর্তী — সর্বত্র সমীহ আদায় ক’রে নিতে পেরেছিলেন মাত্র ৫৩ বছরের আয়ুষ্কালেই। ফারুক ওয়াসিফকে অনেক ধন্যবাদ, এই মরমী স্মৃতিতর্পণের জন্য। আমরা ফারুকের লেখা ইলিয়াস-প্রাসঙ্গিক আরও দু’টি পরিশ্রমী ও আলোকবিস্তারী প্রবন্ধ প’ড়ে নিতে পারি এ-আলোচনার সুবাদে: ‘বাংলা উপন্যাসের নাম-সাকিন ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সিলসিলা’ (২১ জুন ২০০৮) ও… বাকিটুকু পড়ুন »
ঠিক ধরেছেন মুয়িন, আসলে এটা আগামি কাল প্রথম আলোয় প্রকাশের জন্য লেখা। বিলম্বে মনে করিয়ে দেওয়ায় তাদের মনে পড়েছে। তাও আবার খোলা কলম পাতায় ফিচার হিসেবে।
সালটা সম্ভবত ১৯৯৮/৯৯। আজিজ থেকে ইলিয়াসের তিন খণ্ডের রচনাসমগ্র কিনে বাসায় ফিরছি। বাসে বসে ছোটগল্পের সংকলনটা (সম্ভবত ১ম খণ্ড) হাতে নিলাম। প্রথম গল্প থেকেই, ওঃ কপাল, প্রথম গল্পটি থেকেই আমার মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদিতা, পিচ্ছিলতা-প্রবণতা, ন্যক্কারজনক মানসিকতা, ওঃ, এমন তীব্রভাবে আঘাত করে চললো তো চললোই পুরো যাত্রাপথ জুড়ে, অথচ ছাড়তেও পারি না। দুষ্ট ঘায়ে হাত বুলিয়ে পাওয়া মর্ষকামী ভালোলাগা যেন আমাকে নগ্ন হতে, নিজের কাছে নিজেকে ছোট হতে, আশিরপদনখ ন্যাংটো হতে দেখতে বড়ই ভালোবাসলো, আর সেই থেকে আজও দ্বিতীয়বার হয়তো গল্পগুলো পড়ার সাহস বা সময় করে ওঠা হয় নি। অথচ, ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় যখন ধারাবাহিকভাবে পড়ছি ‘খোয়াবনামা’ যেন চলে যাচ্ছি অন্য এক ঘোরের… বাকিটুকু পড়ুন »
লেখাটি ঢাকা নিউজ এ ছাপালাম
কোনো কোনো মৃত্যু মানুষকে সঙ্কুচিত/হতবিহ্বল/ আবেগাপ্লুত করে ফেলে। তবে ইলিয়াসের মৃত্যুকে নানাভাবে যাচাই-বাছাই করার স্কোপ আছে। আমার কেন জানি মনে হয়, ইলিয়াসের মৃত্যু এই সময়ে তাকে হিরোর মর্যাদা দিচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে, সেই হিরোর জাত-পাত বের করা মুশকিল। তিনি এখন ভালো লেখকের মর্যাদাটাই পাচ্ছেন। তাকে এখানে এভাবে দেখতে গেলে যা হয় আর-কী, তার লড়াই, তার সংগ্রাম, তার আপোষহীনতাতে আর মনে পড়ে না। আমি একেবারে নিশ্চয়ই করে বলতে পারি, যারা তাকে এখন পূজা করতে চান, তাদের অন্তত ৫০% শেখ মুজিব নিয়ে তার মূল্যায়ন; মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, মসনদপিপাসু রাজনীতিবিদদের নিয়ে তার এনালাইসিসকে মনে রাখলে, তার দিক থেকে ওইসব পূজারিসকল তাদের মুখ ফিরিয়ে নিবেন। আমার… বাকিটুকু পড়ুন »
ইলিয়াসের পাইপঃ দেশ ছাড়বার আগে, আশি’র দশকের শেষ ৫ বছর ঢা, বি-তে আমার ব্যক্তিগত নৈরাজ্যিক এবং বাংলাদেশের গড়পরতা গুমোট অরাজকতার ভেতর আ, ইলিয়াসের সাথে এক মহাশ্চর্য ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। আমার আলুথালু অবস্থাতে ঢাকা কলেজে ইলিয়াসের সহকর্মিরা চমকে উঠলেও; ওর লেখক শিবিরিও কমরেডরা এড়িয়ে গেলেও; ওর বাসাতে, কলেজের অফিস ঘরে আমার একটা হুটহাট ঢুকে যাবার অধিকার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বড় ভাই’র এই অনানুষ্ঠানিকতা ছোট ভাই খালিকুজ্জামানের ভেতর একেবারেই অনুপস্থিতঃ মনে পড়ছে আমার অনুবাদ করা ওলে সোয়িঙ্কার বইটার যখন কেন্দ্রিয় জাদুঘরে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল, তখন আ, ইলিয়াসের কথামতো সদ্য পশ্চিম ফেরা খালিকুজ্জামানের সাথে দেখা করতে জ,বি’তে গিয়েছিলাম। ঐ অনুবাদটির এবং প্রযোজনাটির অনেকে… বাকিটুকু পড়ুন »
ফারুক ওয়াসিফকে অনেক ধন্যবাদ এরকম চমৎকার একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্যে…
আমার মতে আকতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর লেখা “খোয়াবনামা” বিম্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি অনবদ্য সংযোজন…
তাঁর অন্যান্য লেখাগুলোও সাহিত্যমান বিচারে এককথায় ‘অসাধারন…
ফারুককে ধন্যবাদ দেই, আমার একজন প্রিয় লেখককে নিয়ে এমন লেখার জন্য। ইলিয়াস ভাইকে নিয়ে অনেক বছরের বহু স্মৃতিকথা জমা হয়ে আছে…এমন কী এই সেদিন হঠাৎ একটি পুরনো কাগজে পড়া ইলিয়াস ভাইয়ের নেওয়া মহাশ্বেতা দেবীর অসমাপ্ত সাক্ষাৎকারটি পর্যন্ত।
…একদিন সব লিখে ফেলবো নিশ্চয়ই। আর যতদিন তা না হচ্ছে, ইলিয়াসের ভূত আমাকে তাড়া করেই যাবে, সেই হা…হা হাসি, ধূমায়িত পাইপ হাতে, কালো রঙের পুরু ফ্রেমের চশমা চোখে–আমাদের ইলিয়াস ভাই। …
লেখক বলেছেন,
কসমোপলিটন ঢাকার রাক্ষুসে কর্পোরেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাস্বার্থ তদারকির পত্রপত্রিকাচ্যানেলমিডিয়াগুলো ঈশ্বরকে শয়তান কিম্বা শয়তানকে ঈশ্বর বানায়ে দ্যায়ার ক্ষমতা রাখে। হরদম দিচ্ছেও। যুগপত ঢাকাই মিডিয়ার স্নেহধন্য এবং একইসঙ্গে লড়িয়ে প্রতিবাদী তারকাগণ আজকাল মিডিয়াকে আমজমতার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম (দৈনিকে লিখে আমপাঠকের সাথে যোগাযোগ) হিসেবে ব্যবহার করেন জেনে ভালো লাগলো। ধর্মেও থাকা আবার জিরাফেও থাকার (এবং এভাবে ‘লড়াইটা’কেও জারি রাখা) মতো এইসব তাজ্জব দ্বীন-ই-এলাহি তরিকা যদি ইলিয়াস শিখতে পারতেন তাহলে কতই না ভালো হতো। বেচারার খোয়াবনামা ঢাকাই মিডিয়াতে মাঝপথে গিয়ে নিষিদ্ধ হত না।
গত ১০ বছরে বড় মিডিয়ায় ইলিয়াস নিয়ে আমার ধারণা অন্তত ২০ টি লেখা এসেছে। আউল-ফাউল যা-ই লিখি এর দশটিই আমার। গত বছরে তার আগের বছরে এবং এ বছরে দুর্ভাগ্য যে আমার ছাড়া ইলিয়াসকে নিয়ে আর কোনো লেখা তার মৃত্যু বা জন্মবার্ষিকীতে প্রকাশিত হয় না। তাহলে আপনি বলছেন, এগুলোর কোনো দরকার ছিল না। ছোট্ট এই ফোড়নের দীর্ঘ উত্তর দিতে পারলে ভাল হতো। তবে সেটা আপনার কথার বদলা হিসেবে নয় কর্পোরেট মিডিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাগুলোর এমবেডেড বাস্তবতায় সিস্টেমের বিরুদ্ধের কর্মীরা কীভাবে কাজ করবেন না গর্তে মুখ বুজে থাকবেন সেই বিষয়ে লেখাই সমীচিন হতো। আমার সমালোচনাটা আপনি কোন অবস্থান থেকে করছেন জানলে কথা বলতে… বাকিটুকু পড়ুন »
লেখক বলেছেন, লিটল ম্যাগ এর কথা যদি বলেন, তাহলে নাকউচু কিন্তু অকার্যকর এসব চলতে পারে তাতে আপত্তি নাই, তবে তা দিয়ে নিজের অহং ছাড়া আর কিছু চরিতার্থ হয় মনে হয় না। সেই ষাট থেকে এ পর্যন্ত এর ফল কী? কী প্রসব করেছে তারা? যারা লেখক হয়েছেন তারা তা হয়েছেন নিজের শ্রমে। এর বাইরে অল্টারনেটিভ মিডিয়া কই? এই কথাগুলো একেবারেই বস্তাপচা এবং বহুলবলিত-চর্বিতচর্বণ। প্রায় সব প্রাক্তন লেখক এবং বর্তমান মিডিয়াকেরাণীগণ এ বুলি তোতাপাখির মত আওড়ান। আপনিও এমন পুরনো কথা বলবেন, আশা করিনি। সেই ষাট থেকে এ পর্যন্ত যারা কিছুটা ফলিয়েছেন তারা কেউই প্রবল মিডিয়ার খাঁচায় ঢুকে ফলাননি। সমকালীন সময়েও যাঁরা কমবেশি… বাকিটুকু পড়ুন »
যাদের নাই তারা হারিয়ে গেছেন বা না খেয়ে মরেছেন। দেন না আমাকে একটি বিপ্লবী চাকরি, যাতে বাবা-মা-স্ত্রী পরিবার নিয়ে বাচতে পারি। অথবা বানান না একটা পত্রিকা, যা অন্তত কয়েক হাজার মানুষ পড়বে। @ ডোবারব্যাং ফারুক ওয়াসিফের সব প্রশ্নের তো উত্তর দিলেন কিন্তু উপরের এই ভয়ংকর পরিপ্রেক্ষিতের বিষয়ে তো কিছুই বললেন না। হ্যাঁ, আমাদের বাংলদেশে একজন লেখকের বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। লিটল ম্যাগ, ব্লগ এসব পয়সা দেয় না — কারণ তার নিজেরই কোনো আয় রোজগার নেই লেখককে কী দেবে? পত্রিকা পয়সা দেয়, সেখানে চাকুরি করে অন্তত জীবনধারনটা তো করা যায়। ইলিয়াসই বা লিখে কী পেয়েছিলেন? অথচ লেখার মতো এমন অভিনিবেশঘন কাজ… বাকিটুকু পড়ুন »
>>> ডোবার ব্যাং ১. এই কথাগুলো একেবারেই বস্তাপচা এবং বহুলবলিত-চর্বিতচর্বণ। প্রায় সব প্রাক্তন লেখক এবং বর্তমান মিডিয়াকেরাণীগণ এ বুলি তোতাপাখির মত আওড়ান। আপনিও এমন পুরনো কথা বলবেন, আশা করিনি। কথাগুলি আপনি বলেছেন বিদ্যমান লিটল ম্যাগ চর্চার পক্ষে। পক্ষে থাকুন, কিন্তু কোনো কিছুকেই পরম বা স্থায়ী ধরে নেবেন না। বাংলাদেশের লিটল ম্যাহ চর্চা ষাট দশকে হাংরি-বিট ইত্যাদির সংগে পশ্চিমের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরের আত্মমগ্ন ও দেশ-কাল-মানুষ বিমুখ অস্তিত্ববাদ নিয়ে মেতে থেকেছে। ষাটের গণসংগ্রাম তাদের স্পর্শ করেনি। সত্তরের দশকে যখন রাষ্ট্র ও সমাজে উথাল-পাথাল হচ্ছে তখন তারা নাই হয়ে যায়। আশির সেনাশাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় তারা কবিতা কল্পনালতার অধীন থেকেছে। এ কারণে বলছি… বাকিটুকু পড়ুন »
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর # ১৪.১.১ – তবে আপনি স্বনামে প্রকাশিত হোন, তাহলে শুভেচ্ছাটাও হয়ত সরাসরিই জানানো যাবে। ফারুক ওয়াসিফ # ১৪.১.২ – আপনি উদ্দেশ্য লুকাননি, নাম লুকিয়েছেন। প্রিয় ফারুক ওয়াসিফ এবং কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, আলোচনাটা অত্যন্ত উপভোগ্য হচ্ছে এবং সে ধন্যবাদ এই পোস্টের লেখকসহ সকল মন্তব্যকারীর প্রাপ্য। আমার এই মন্তব্য অবশ্য অন্য একটি বিষয় নিয়ে, সবিনয়ে করছি, আপনাদের বিবেচনার জন্য। আপনাদের দু’জনের মন্তব্যেই মন্তব্যকারী ‘ডোবার ব্যাং’ এর প্রকৃত পরিচয় নিয়ে এক ধরণের সুক্ষ আক্রমণ (নাকি নির্দোষ অনুসন্ধিৎসা) রয়েছে, তার আসল পরিচয় জানার চেষ্টা রয়েছে। এই প্রবণতাটিকে অত্যন্ত ক্ষতিকর মনে করি। আর লেখাই বাহুল্য, এ ধরণের ‘অনুসন্ধিৎসা’ ব্লগের স্বীকৃত চর্চা এবং নীতিগুলোর সাথে… বাকিটুকু পড়ুন »
লেখক বলেছেন, পত্রিকায় চাকরি করবেন কিন্তু লিখবেন না, এ তো অদ্ভুত বালখিল্য! লাইনটা খেয়াল করুন, পত্রিকায় ‘লেখা’ নিয়ে বলা হয়নি। বলা হয়েছে পত্রিকায় লিখে ‘আমপাঠকের সাথে জনসংযোগ’ নিয়ে। লেখক বলেছেন, পেটিবুর্জোয়া চিন্তাগুলো এভাবেই অর্ধেক পথে দম হারিয়ে ফেলে। যেখানে যতটা পারা যায় ব্যবহার করা দরকার। দরকার নিজেদের এনজিও খাড়া করা। এই কাজ যদি সত্তর দশকে হতো, তাহলে সাম্রাজ্যবাদের মাঠকর্মী না হয়ে দেশজ সমর্থনে কিছু প্রতিষ্ঠান দাড়াতো গণস্বাস্থ্য কিম্বা সে সময়ের আরো কয়েকটা এনজিও তো (তাদের কাগজপত্রে) এসব কথা বলেই শুরু করেছিলো। দাঁড়িয়েছেও। তাতে কি লাভ হয়েছে? ইদানিং বাজারে আসা ‘লোকজ ইন্সটিটিউট’ কি ‘বিনির্মান আন্দোলন’ টাইপের এনজিওগুলোর কাগজপত্রেও তো এই কিসিমের… বাকিটুকু পড়ুন »
আমার যা বলার বলেছি, পত্রিকায় সংবাদ ছাপানো বা প্রেসরিলিজো একধরনের সংযোগ, এতে আপত্তির কী থাকতে পারে আমি বুঝছি না। যাহোক, লেখা ফেলে মন্তব্য নিয়ে আমি আর এগতে চাই না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আজ তেভাগা দিবস, আগে খেয়াল করিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মৃত্যুদিনের সাথে তেভাগা দিবসের এই সমাপতন।
[…] [8] শ্রদ্ধাঞ্জলি নয় এই স্মরণ বরং প্রতিবাদ হিসাবেই গণ্য হোক, ফারুক ওয়াসিফ (৪ জানুয়ারি ২০১০), http://muktangon.blog/faruk-wasif/5808 […]
[…] [10] শ্রদ্ধাঞ্জলি নয় এই স্মরণ বরং প্রতিবাদ হিসাবেই গণ্য হোক, ফারুক ওয়াসিফ (৪ জানুয়ারি ২০১০), http://muktangon.blog/faruk-wasif/5808 […]