বড় রাজনীতিবিদ না হলে এ দেশে অনেক কৃতী মানুষের জন্ম বা মৃত্যুতিথি অনেক সময় অগোচরে আসে, আর অগোচরেই চলে যায়। কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীও তাই নীরবে এল, নীরবেই চলে গেল। গতকাল, অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
তাঁর মৃত্যুর কথা মনে হলে যমুনার কালো ঘোলা জলের কথা মনে আসে। সেবারও জানুয়ারির শুরুতে ভীষণ শীত পড়েছিল দেশে। সেই শীতের মধ্যে কফিনে শায়িত লেখকের সঙ্গে আমিও উঠে পড়ি গাড়িতে। গাড়ি মানে অ্যাম্বুলেন্সে। সেটি যাবে বগুড়ায়, লেখকের জন্মস্থানে। তখনো যমুনা সেতু হয়নি, আরিচা দিয়েই ফেরি পারাপার হতো। সন্ধ্যার মুখে ফেরি ছাড়ে। নদীপথে দুই-আড়াই ঘণ্টা লাগে ওপারের নগরবাড়ি ঘাটে পৌঁছাতে।
অন্ধকার হয়ে এলে একসময় উঠে ফেরির একদম ওপরের বসার জায়গাটায়। সেখানে তখন এক প্রান্তে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোট ভাই অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস একা বসে চরাচরের দিকে তাকিয়ে আছেন। এক পাশে ফেরির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াই। নদীর ওপরের আবছা দৃশ্যপটে শোক, স্মৃতি আর অচেনা নানান অনুভূতি যেন কুয়াশার মধ্যে রূপ পাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্ধকারের দিকে বেশিণ তাকিয়ে থাকা যায় না বলে, কিংবা শোকে মানুষের মাথা সর্বদা নিচু হয়ে আসে বলে আমিও নিচে নদীর বয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ফেরির আলোর কিছুটা আভা নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে আলোড়ন তুলে বাংলা ভাষার এক প্রতিভাধর লেখকের লাশ বহন করে ফেরিটি চলেছে। অন্ধকারে কালো দেখানো সেই পানির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ একটি কথা ঝিলিক দিয়ে উঠল মনে: উত্তরের সন্তান ইলিয়াস সেই খানে ফিরে যাচ্ছেন, যার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা-বাঙালি আর করতোয়া নামের তিনটি নদী। যমুনা দিয়ে গেলে বাঙালি নদীতে মেশা যায়, বাঙালি দিয়ে গিয়ে পড়া যায় সেই কাতলাহারের বিলে_খোয়াবনামা-র জগতে। সেই কাৎলাহারের বিল, যার পাশে বসে পোড়াদহের মেলা, যেখানে একদা আখড়া গেড়েছিল ফকির মজনু শাহর আর ভবানী পাঠকের ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বেশুমার ঘোড়সওয়ারেরা। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত স্লোক আর গাঁথায় ভরপুর যমুনা তীরের জেলে-মাঝি-চাষাভুষা মানুষের জীবনকে আশ্রয় করেই বেড়ে উঠেছে ইলিয়াসের মহাকাব্যিক উপন্যাস খোয়াবনামা। এই সেই যমুনা, তাঁর চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের গ্রামীণ চরিত্ররা যার বুক থেকে ঘোড়ার খুরধ্বনি শুনতে পায়। কী অদ্ভুত কাকতাল, সেই যমুনা বেয়ে বেয়েই কবর পেতে ফিরে চলেছেন জন্মের আশ্রয়ে।
সেদিন তাঁর লাশের পাশে বসে মনে হয়েছিল, তাঁর এই ফেরার সঙ্গে সাহিত্যিক হিসেবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সৃষ্টির ল্েযর একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুখ-স্বপ্ন-দুঃখ-হতাশা-সংগ্রাম আর আপোসে গড়া আটপৌরে জীবনের সম্পর্কটি ধরতে চেয়েছেন তিনি তাঁর উপন্যাস দুটিতে। বাংলাদেশের নিজস্ব রাজনৈতিক ও মানবিক বাস্তবতার মানচিত্র আঁকতে চেয়েছেন তাঁর সাহিত্যে। ুদ্র, তুচ্ছ মানুষের জীবনের শক্তি ও সৌন্দর্য যে অপার সম্ভাবনা ধরে, তাকে তিনি সাহিত্যের মধ্যে নির্মোহভাবে ফলিয়ে দেখান। তাঁর চিলেকোঠার সেপাই তাই একদিকে ঢাকা শহর, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের যমুনা পারের সমাজে একাত্তরের পূর্বপ্রস্তুতির আভাসগুলো চিনিয়ে দেয়। তাঁর খোয়াবনামা একদিকে তেভাগা আন্দোলন, আর আরেক দিকে পাকিস্তান আন্দোলনের মাঝখানে পড়ে গ্রামীণ জীবনস্পন্দনের দাগগুলো কাহিনির আদলে এঁকে দেখায়।
নিুবর্গীয় অবহেলিত মানুষের জীবনে প্রেম, আশা, উৎপাদন ও সংগ্রামের লীলা চলে। সেই লীলায় লীলায়িত মানুষ মিথ, বিশ্বাস, উপকথা আর গালগল্পের মধ্য দিয়ে যেকোনো বীরের নয়, নায়কের নয়; আসলে নিজেদেরই কথা বলে। বিদেশি সাহিত্য পড়া চোখে, বহুকাল ইংরেজের শাসনে থাকা আধুনিকতার বোধে, খামাখা বাঙালি বনাম মুসলমানিত্বের বিতর্কের ঘোরে এই সত্য ভুলে যাওয়া হয়েছিল। বাজারি সাহিত্যের উৎপাত এড়িয়ে, নিজেকে নিয়ে মেতে থাকার মধ্যবিত্তসুলভ ভাবালুতার দোষ কাটিয়ে সেই ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রবাহিত ইতিহাসে বাংলাদেশের মূল জীবনধারাটি শনাক্ত করেন। সেই জীবন নিুবর্গীয় মানুষের জীবন। খোয়াবনামার তমিজ-ফুলজান আর চিলেকোঠার সেপাই-য়ের হাড্ডি খিজির-চেংটুরা সেই জীবনধারারই প্রতিনিধি। হীনম্মন্যতায় ভোগার রোগ না থাকলে মানতে হবে, এ দুটি উপন্যাস নিবিড়ভাবে দেশিয়, কিন্তু একইসঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
আরেকভাবে দেখলে, স্বপ্নের পাকিস্তান যে অচিরেই মাটির সানকির মতো বাঙালি মুসলিম কৃষকের মাটিতেই গুঁড়িয়ে গেল তার আখ্যান খোয়াবনামা। আবার চিলেকোঠার সেপাই-য়ের পুরান ঢাকার হাড্ডি খিজির কিংবা যমুনা পারের লড়াকু চেংটুরা জানিয়ে দেয়, সামনে যে লড়াই আসছে সেখানে নিুবর্গের মানুষের মুক্তির আশা ভদ্রলোক মধ্যবিত্তদের জাতীয়তাবাদে পূরণ হওয়ার নয়। লড়াই হয়েছিল, কিন্তু মুক্তি আসেনি। দ্বিতীয় স্বপ্নভঙ্গের সেই আখ্যান হয়তো আমরা পেতে পারতাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লিখতে চাওয়া উপন্যাসটিতে। দুর্ভাগ্য যে, তার আগেই ক্যানসার এসে তাঁকে থামিয়ে দিল।
তাঁর পাঁচটি গল্পগ্রন্থ:অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উতপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল-এর গল্পগুলোর চরিত্ররাও যেন আমরাই। এই মধ্যবিত্ত ‘আমরা’ আর পেছনে পড়ে থাকা গ্রামের ‘আমরা’ তাঁর গল্পে মায়া-দয়াহীনভাবে ধরা পড়ে জীবনের ক্ষুদ্রতা, কপটতা এবং অসহায়ত্ব আর বৃত্ত ভাঙার জেদের মধ্যে। গল্পগুলো কাঁদায় না, চটিয়ে দেয়। মনকে অবশ না করে জাগিয়ে দেয় এবং বিষণ্ন করে। সত্তর ও আশির দশকের বিুব্ধ সময়জুড়ে তিনি উপন্যাসের দেশে ফেরার নকশা আঁকছেন, প্রবন্ধে খুঁজে দেখছেন সংস্কৃতির সেতুটা যে ভেঙে গেল, তাকে জোড়া লাগাবার কী উপায়? প্রবন্ধগুলো শেখায়, নিছক আর্ট করায় বাহাদুরির কিছু নেই। জনগণের জীবনধারার নিজস্ব গতি-দুর্গতির হিসাব বাদ রেখে যত কেতাবই ঘাঁটা হোক, তা অসার। ডায়রিতে লেখেন, ‘এ রকম ইতর মধ্যবিত্ত বোধ হয় দুনিয়ার আর কোনো দেশে নেই, এখানে রাজনীতি মানে প্রতারণা আর হারামিপনা, ন্যূনতম মর্যাদাবোধ থাকলে এখানে রাজনীতি করা অসম্ভব। দেশের মানুষ সম্বন্ধে ভাসাভাসা ধারণা নিয়ে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে ঘেউ ঘেউ করা হলো এখানকার বুদ্ধিজীবীদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা। বিজ্ঞানে ডিগ্রি পাওয়া মানুষ এখানে ব্যবসা করে ধর্ম নিয়ে। টাকার লোভে, সামাজিক প্রতিষ্ঠার লোভে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পারে না হেন কম্ম নেই। ভালো লাগে না…। দিনে দিনে অসহ্য হয়ে উঠছে এখানকার পরিবেশ…।’ এমন যার মনোভাব, দলে-বলে ভারী হয়ে তাকে সহজেই উপেক্ষা করা যায়। আমাদের বিধ্বস্ত সমাজের ওপর সরের মতো ভেসে ওঠা কর্তাব্যক্তিরা সেই কাজটি করতে মোটেই শরমিন্দা হননি। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুদিবসে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি তাই প্রতিবাদ হিসেবেই গণ্য হোক।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫০ comments
মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১০ (৯:২৫ অপরাহ্ণ)
নিজের মতো করে প্রতি বছর ৪ জানুয়ারি শোকস্তব্ধ হই। তেমন কোনো একটি বাক্যও আজো তাকে নিয়ে লিখতে পারলাম না। শুধু জানি বাংলা ভাষার এক মহৎ শিল্পী, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম কথাকার ইলিয়াস, আর কিছু নয়, কোনোদিন যদি একটা বাক্যও বের হয় বড় ভয়ে ভয়ে বের হবে, কোনো একটা বাক্য, তাও লিখব ইলিয়াসকে নিয়ে, কখন? কে জানে?
ফারুক ওয়াসিফ - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১০:১৭ অপরাহ্ণ)
ইলিয়াস নিয়ে উচ্ছ্বাস যত হয়, গভীর আলোচনা উদঘাটন তত হয় না। তাই নেমে পড়তে বাধা কী? আলোচনা যত বাড়ে তত ভাল। তাতে দেখার এলাকাও বাড়ে।
tareq ahmed - ৪ জানুয়ারি ২০১০ (১০:২২ অপরাহ্ণ)
dhonyobad dite chai na,faruk wasif apnake.bhule jaoa ekti diner kotha mone korie debar jonno.r je manushtir kotha likhechen,shey manushtike kebol ekjon shyahittik hishebey noy,ekjon prokrito shot manush hishebe o sroddhya kortam.
makhe majhey dekha hoe jeto science laboratory mor e,darie achen tempu te chorben bole,proshno korle uttar petam,uthi karon tempu te nanarokom manush dekha jai.r KHOABNAMA jokhon JANAKANTHA patrikai ber hocche,tokhon tar anubhutir kotha jiggeshe korai uttar diechilen,mone hocche er choritra ra shob bahadur hoe uthche,shamle rakha jacche na.
ফারুক ওয়াসিফ - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১০:২০ অপরাহ্ণ)
আপনার টুকরা টুকরা স্মৃতিগুলো জানতে ইচ্ছে করছে, একদম ব্যক্তিগত কারণে। কখনো লিখবেন?
মুয়িন পার্ভেজ - ৪ জানুয়ারি ২০১০ (১০:৪৬ অপরাহ্ণ)
কবীর সুমনের একটি গানের কলি মনে পড়ছে:
মনে পড়ছে মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শ্রদ্ধাশুভেচ্ছাপ্লুত পত্রবিনিময়ের কথাও। ইলিয়াসের কথা উঠলে অনেকেই তাঁকে ‘লেখকের লেখক’ ব’লে অভিহিত করেন — এ-অভিধা নিয়ে কূটতর্কে না গিয়েও বোঝা যায় যে লেখার অসামান্যতায় ইলিয়াস — যিনি গৌণ প্রচার-উল্লম্ফন থেকেও ছিলেন সচেতনভাবে দূরবর্তী — সর্বত্র সমীহ আদায় ক’রে নিতে পেরেছিলেন মাত্র ৫৩ বছরের আয়ুষ্কালেই। ফারুক ওয়াসিফকে অনেক ধন্যবাদ, এই মরমী স্মৃতিতর্পণের জন্য। আমরা ফারুকের লেখা ইলিয়াস-প্রাসঙ্গিক আরও দু’টি পরিশ্রমী ও আলোকবিস্তারী প্রবন্ধ প’ড়ে নিতে পারি এ-আলোচনার সুবাদে: ‘বাংলা উপন্যাসের নাম-সাকিন ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সিলসিলা’ (২১ জুন ২০০৮) ও ‘বাংলা উপন্যাসের ডিকলোনাইজেশন ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ (২২ জুন ২০০৮)।
২
এ-বাক্যে একটু খটকা লেগে যায়। লেখাটি আজই (৪ জানুয়ারি) প্রকাশিত, তাই ‘গতকাল’ শব্দটি বিভ্রান্তিকর মনে হল।
ইমতিয়ার - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৭:১৭ পূর্বাহ্ণ)
আপনার দেয়া লিংক দু’টির সঙ্গে ফারুক ওয়াসিফের এই ‘প্রতিবাদ’ পাশাপাশি পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে, তাৎক্ষণিকভাবে স্মরণ করতে গিয়ে বোধহয় তাঁর প্রতি খানিকটা অবিচারই করা হলো। ফারুক আগের দু লেখার সূত্র ধরে নতুন একটি সিরিয়াস পর্ব আমাদের দিতে পারতেন। অথবা এটিকেও যদি সম্পূর্ণ স্মৃতিধর্মী করে তুলতেন, তা হলেও হয়তো এটি অন্যরকম পরিণতি পেত। অবশ্য যিনি লেখেন, তিনি নিশ্চয়ই তাঁর গন্তব্য ধরেই লেখেন। আমরা শুধু অতৃপ্তি অথবা ভালো লাগা বা না-লাগার কথাই বলতে পারি।
ইলিয়াসের সঙ্গে আমার কোনও স্মৃতি নেই বললেই চলে (অবশ্য অন্য কারও সঙ্গেও নেই); কিন্তু একজন মানুষের সৃষ্টিশীলতা যখন আগ্রহের বিষয় হিসেবে দেখা দেয়, তখন অনিবার্যভাবেই তিনি যে-সব স্মৃতি ও অতীত তৈরি করেন, যে-বর্তমানের মধ্যে দিয়ে এগুতে থাকেন সেসব নিয়েও আগ্রহ তৈরি হয়। তাই এ-ধরণের লেখার প্রতি আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতার কথা লেখাই বাহুল্য। এই সূত্রে মনে পড়ছে, ইলিয়াসের মৃত্যুর পর মামুন হুসাইনের লেখা ‘মানুষের মৃত্যু হলে’ ফিকশনটির কথা। ইলিয়াস সম্পর্কে আমাদের অনুভূতিকে এ লেখা এক অনাস্বাদিত প্রান্তরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
২.
এই ফাকেঁ বলি, ইলিয়াস শক্তিমান, কিন্তু তাঁর সেই শক্তিমত্তাকে উপলব্ধি করার জন্যে আমাদের তাঁর ছোটগল্পের পাশাপাশি উপন্যাসগুলিকেও নিয়ে আসতে হয়। বড় মাপের লেখার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ছোটগল্পের প্রতি ইলিয়াস নিজের অজান্তেই অবিচার করে গেলেন। যদিও তিনি ছিলেন ছোটগল্প-অন্ত প্রাণ। কিন্তু হাসান আজিজুল হককে যেমন আমরা কেবলমাত্র ছোটগল্পের জন্যেই চিনি ও মনে করি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের আর তেমনটি হয়ে ওঠা হলো না। প্রসঙ্গত মনে করছি, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সাপ্তাহিক বিচিত্রা একটি উদ্যোগ নেয় সেটির লেখালেখি বিভাগে ‘বাংলা ছোটগল্প কি মরে যাচ্ছে?’ নামে প্রতি সপ্তাহে একটি সিরিজভাষ্য প্রকাশের। সেটির জন্যে আরও কয়েকজন কথাসাহিত্যিকের পাশাপাশি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও গুরুত্বপূর্ণ অভিমত দিয়েছিলেন। ছোটগল্পকে উপন্যাসের চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্যেও, সঙ্গতভাবেই, তিনি বিভিন্ন সময় উদ্যোগী থেকেছেন। কিন্তু তাঁর নিজের উপন্যাসের ভাষা ও বুনোনই শেষ পর্যন্ত এত শক্তিশালী হয়ে দেখা দিল যে, এখন তাঁকে স্মরণ করতে গেলে আমরা নিজেদের অজান্তেই ‘চিলেকোঠার সেপাই’ আর ‘খোয়াবনামা’র শক্তিমত্তার নিচে গিয়ে দাঁড়াই।
৩.
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পাশাপাশি আজ স্মরণ করছি আমাদের আরও এক শক্তিমান গদ্যশিল্পী সুচরিত চৌধুরীকেও। তাঁর মৃত্যুদিনটি ছিল গত পাঁচ জানুয়ারি। এইসব নাম – একেকটি নাম – কত যে শক্তিমান, কতভাবে যে আমাদের শক্তি দেয় বেঁচে থাকার!
ফারুক ওয়াসিফ - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৩:২৬ অপরাহ্ণ)
কথাটি আমার আগেই বলবার দরকার ছিল যে, এই সাংবাদিকতা ধরেনর লেখাটি লেখা হয়েছিল সাংবাদিকতার প্রয়োজেনই। প্রথম আলো-র খোলা কলম পাতাটি মূলত রাজনীতি নির্ভর। সেখানে এক কোণায় প্রতিদিন হাবিজাবি পুতুপুতু ফিচার ধরনের লেখা দেওয়া হয়। তো, আমি আর জায়গা না পেয়ে সেখানেই চেপে বসলাম। আর দৈনিকে লিখবার সময় আমি সাধারণত আমপাঠকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করে যাই। ফলে ইলিয়াস নিয়ে কোনো উদঘাটনের চিন্তা আমার ছিল না। মোটামুটি একজন যেন তাঁর সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে, এটাই নিয়ত ছিল। এর বেশি কিছু না।
২.
হুমম, তাকে হয়তো অনেক বেশি উপন্যাসিকের পরিচয়েই চেনা হচ্ছে। এটা বোধহয় উপন্যাস প্রকরণটির শক্তি ও আকর্ষণের জন্যই। ইলিয়াস নিয়ে অনেক বছর আগে মুক্তকণ্ঠের খোলা জানালায় ইলিয়াসের খোয়াবনামা: কৃষক চৈতন্যের রূপান্তর নামে একটি লেখা লিখেছিলাম। সেটা আর আমার কাছে নাই। ওখান থেকে শুরু করে তাঁর উপন্যাসের নন্দন ও অন্যান্য বিশুদ্ধ সাহিত্যিক বিষয়াদি নিয়ে লিখবার বাসনা ছিল। কিন্তু সময়াভাব আর অগোছালোপনার জন্য আর হলো না। তবে এ নিয়ে আস্ত একটা লেখা শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাব না।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
ফারুক ওয়াসিফ - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১২:২৯ পূর্বাহ্ণ)
ঠিক ধরেছেন মুয়িন, আসলে এটা আগামি কাল প্রথম আলোয় প্রকাশের জন্য লেখা। বিলম্বে মনে করিয়ে দেওয়ায় তাদের মনে পড়েছে। তাও আবার খোলা কলম পাতায় ফিচার হিসেবে।
bloodycivillian - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৫৫ অপরাহ্ণ)
সালটা সম্ভবত ১৯৯৮/৯৯। আজিজ থেকে ইলিয়াসের তিন খণ্ডের রচনাসমগ্র কিনে বাসায় ফিরছি। বাসে বসে ছোটগল্পের সংকলনটা (সম্ভবত ১ম খণ্ড) হাতে নিলাম।
প্রথম গল্প থেকেই, ওঃ কপাল, প্রথম গল্পটি থেকেই আমার মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদিতা, পিচ্ছিলতা-প্রবণতা, ন্যক্কারজনক মানসিকতা, ওঃ, এমন তীব্রভাবে আঘাত করে চললো তো চললোই পুরো যাত্রাপথ জুড়ে, অথচ ছাড়তেও পারি না। দুষ্ট ঘায়ে হাত বুলিয়ে পাওয়া মর্ষকামী ভালোলাগা যেন আমাকে নগ্ন হতে, নিজের কাছে নিজেকে ছোট হতে, আশিরপদনখ ন্যাংটো হতে দেখতে বড়ই ভালোবাসলো, আর সেই থেকে আজও দ্বিতীয়বার হয়তো গল্পগুলো পড়ার সাহস বা সময় করে ওঠা হয় নি।
অথচ, ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় যখন ধারাবাহিকভাবে পড়ছি ‘খোয়াবনামা’ যেন চলে যাচ্ছি অন্য এক ঘোরের ভেতরে, পড়ছি পাগলের মতো এক নিঃশ্বাসে, মাতালের মতো আকণ্ঠ পানে নিমগ্ন হয়ে, কারণ সে চিরতৃষিত ছিল, যেমন পড়েছিলাম আর একটি অনুবাদগ্রন্থ, মানবেন্দ্র-এর স্তানিসোয়াভ লেম-এর `মুখোশ ও মৃগয়া’ নামে যুগ্ম-নভেলা। দ্বিতীয়বারে পঠনে অবশ্য অন্য অর্থে উপন্যাসটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, সমালোচকেরা সেখানটায় সমাজবাস্তবতা ও ইতিহাস-সচেতনতা নিয়ে যা বলেন, তার কিছুটা উপলদ্ধি করছি, কিছুটা না-ও, কিছুটা অন্যকিছু। মহৎ সাহিত্য বোধহয় এরকমই হয়, কিছু তার বুঝি, আবার কিছু পাই অনুভবে।
ইলিয়াস-কে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোটা নিজের দায় মোটেও হালকা করে না, যদি নিজে কিছুই না করি, মনে হয় এরকম গড়পড়তা শ্রদ্ধা-জানানো তিনিও পাত্তা দিতেন কি-না। তবে, নিজের কাছে এমনকি লজ্জা পেতেও ভুলে যাই তাঁর মৃত্যুদিন ভুলে গেলে, গণমাধ্যমেও শীতল উদাসীনতা দেখাই, কারণ আমরাই সেই ঘৃণ্য মধ্যবিত্ত যাদের ইলিয়াস আচ্ছা করে রগড়েছেন তাঁর সাহিত্যকৃতির সর্বাঙ্গে।
প্রতিশোধ নিচ্ছি ইলিয়াস, আপাতত অবহেলায়।
পুঃ ধন্যবাদ নয় ফারুক, ওটা ছোট করে কখনো কখনো।
ফারুক ওয়াসিফ - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১০:২৫ অপরাহ্ণ)
আসলেই বাঙালি মধ্যবিত্তের কাকের ঘরে ইলিয়াসদের মতো কোকিলরা কেমনে যে বেড়ে ওঠেন! যেমন ছিলেন সুকুমার রায়।
রফিকুল ইসলাম পথিক - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (২:৫২ অপরাহ্ণ)
লেখাটি ঢাকা নিউজ এ ছাপালাম
ফারুক ওয়াসিফ - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১০:২৫ অপরাহ্ণ)
আপনার ভরসায় তুলে দিলাম। 🙂
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৩৭ অপরাহ্ণ)
কোনো কোনো মৃত্যু মানুষকে সঙ্কুচিত/হতবিহ্বল/ আবেগাপ্লুত করে ফেলে। তবে ইলিয়াসের মৃত্যুকে নানাভাবে যাচাই-বাছাই করার স্কোপ আছে। আমার কেন জানি মনে হয়, ইলিয়াসের মৃত্যু এই সময়ে তাকে হিরোর মর্যাদা দিচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে, সেই হিরোর জাত-পাত বের করা মুশকিল। তিনি এখন ভালো লেখকের মর্যাদাটাই পাচ্ছেন। তাকে এখানে এভাবে দেখতে গেলে যা হয় আর-কী, তার লড়াই, তার সংগ্রাম, তার আপোষহীনতাতে আর মনে পড়ে না। আমি একেবারে নিশ্চয়ই করে বলতে পারি, যারা তাকে এখন পূজা করতে চান, তাদের অন্তত ৫০% শেখ মুজিব নিয়ে তার মূল্যায়ন; মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, মসনদপিপাসু রাজনীতিবিদদের নিয়ে তার এনালাইসিসকে মনে রাখলে, তার দিক থেকে ওইসব পূজারিসকল তাদের মুখ ফিরিয়ে নিবেন।
আমার যেটুকু মনে হয়, তার সাহিত্যকর্ম আর লড়াই-সংগ্রামকে নিত্য চর্চা করেই তার প্রতি যথার্থ ভালোবাসাটা জানানো যাবে।
ফারুক ওয়াসিফ - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (১০:৩০ অপরাহ্ণ)
এই কথাটা বলা খুবই দরকার ছিল। পূজারিদের পূজা সবসময় কাম্য সত্যের প্রতি, যে সত্য আরামপ্রদ সেই সত্য মধুর মতো, পিপড়ের মতো তাতে পূজারিদের ভিড়। ইলিয়াসের রাজনীতির সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে তা নয়, কিন্তু তার সাহিত্যকর্মের ভতের যে জগতবোধ ও দিশা তাকে এড়িয়ে ইলিয়াসকে পাওয়া কঠিন।
মাসুদ করিম - ৭ জানুয়ারি ২০১০ (৫:০১ অপরাহ্ণ)
আর কেউ কেউ তো বলেন, মার্কসবাদী দ্বন্দ্বতত্ত্ব, ইতিহাস মননের বিবর্তন, শ্রেণীসংগ্রাম, শ্রেনীগত নীতির সংগ্রাম — এসবের ধারও ধারেন নি আখতারুজ্জামান। তখন কি আরো কিছু লোক তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন?
সাহিত্যের ও সাহিত্যিকের মূল্যায়ন আমাদের মতো সাধারণ পাঠকের কাছে মোটেই রাজনীতি নির্ভর নয়।
আর আপসহীনতায়ও ইলিয়াস প্রশ্নবিদ্ধ, তার আনন্দ পুরষ্কার গ্রহণ, আমরা তো জানি মোটেই আপসহীনতার পরিচয় নয়।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৭ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৫১ অপরাহ্ণ)
আপনার এমনতর অপরিপক্ব কথাবার্তার কী উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না। তাকে মার্কসবাদী বা শ্রেণীদ্বন্দ্বের কাণ্ডারী প্রমাণ করার এমন কী দরকার হয়ে পড়ল! তিনি তার সামগ্রিক জীবনপ্রণালী আর সংস্কৃতির ভাঙাসেতু-এর মতো মননশীল কাজ আর সৃজনশীল কর্মও কম রেখে যাননি। তার এই সমস্ত কাজ আর লেখক শিবিরের সাথে তার কাজের ধরনই তাকে চেনার জন্য যথেষ্ট নয়?
তার আপসহীনতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল- ঠিক আছে, তা মেনে নেয়া গেল। কিন্তু তখন তার শারীরিক অবস্থা কেমন ছিল তাও আমাদের বিবেচনায় নেয়া দরকার। আমার বিশ্বাস হচ্ছে, জীবনের প্রতি অপার ভালোবাসা থেকেই জীবনের পাল্টা-ঝুকিঁ তিনি নিয়েছিলেন। আনন্দ বাজারের মতো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তার অসহায়তার সুযোগ ভালো মতোই নিতে পেরেছিল। আরেকটা বিষয় আমার জানতে ইচ্ছা করে, তখন রাষ্ট্র তার প্রতি কেমন আচরণ করেছিল- এমন একজন শিল্পীর চিকিৎসার ভারও কি এই প্রতিষ্ঠানটি বহন করতে পারেনি? সংগঠন লেখক শিবিরের আচরণ কি তখন তার প্রতি যথার্থ ছিল? এ ব্যাপারে এই সংগঠনের অ্যাকচুয়েল ভূমিকা সম্পর্কে কেউ কি কিছু জানাতে পারবেন?
ইলিয়াসের প্রতি আপনার ভালোবাসা যদি এতই নিবিড় হয়ে থাকে, তাহলে ৭.২-এর মন্তব্যটি এভাবে করে ফেলতে পারলেন? এক টোকাতেই আপনার উপরোক্ত আবেগ একেবারে ধসে পড়ল- টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত আর কাকে বলে!!!
চয়ন খায়রুল হাবিব - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৩৪ অপরাহ্ণ)
ইলিয়াসের পাইপঃ
দেশ ছাড়বার আগে, আশি’র দশকের শেষ ৫ বছর ঢা, বি-তে আমার ব্যক্তিগত নৈরাজ্যিক এবং বাংলাদেশের গড়পরতা গুমোট অরাজকতার ভেতর আ, ইলিয়াসের সাথে এক মহাশ্চর্য ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল।
আমার আলুথালু অবস্থাতে ঢাকা কলেজে ইলিয়াসের সহকর্মিরা চমকে উঠলেও; ওর লেখক শিবিরিও কমরেডরা এড়িয়ে গেলেও; ওর বাসাতে, কলেজের অফিস ঘরে আমার একটা হুটহাট ঢুকে যাবার অধিকার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বড় ভাই’র এই অনানুষ্ঠানিকতা ছোট ভাই খালিকুজ্জামানের ভেতর একেবারেই অনুপস্থিতঃ
মনে পড়ছে আমার অনুবাদ করা ওলে সোয়িঙ্কার বইটার যখন কেন্দ্রিয় জাদুঘরে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল, তখন আ, ইলিয়াসের কথামতো সদ্য পশ্চিম ফেরা খালিকুজ্জামানের সাথে দেখা করতে জ,বি’তে গিয়েছিলাম। ঐ অনুবাদটির এবং প্রযোজনাটির অনেকে প্রশংসা করলেও, খালিকুজ্জামান খুবই নেতিবাচক রিভিউ করেছিলেন, যা আ, ইলিয়াসকে বিব্রত করবার পাশাপাশি আমাকে বেশ মুষড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এতে আ, ইলিয়াসের সাথে জমাটি আসরে কোন আড় তৈরি হয় নি।
মনে আছে নব্বই থেকে যখন আমি ঢাকা, লন্ডন, বৃন্দাবন আর মনোঘর পর্বে কঠিন নিরামিশাষি সময় কাটাচ্ছি, তখন রাঙ্গামাটির দিকে গেলেই লন্ডন ফেরবার পথে ইলিয়াসের সাথে দেখা করতাম আর ওর হাতে তুলে দিতাম চাকমা সুহৃদ’দের দেয়া স্যলাইন টিউবে ভরা দোচোয়ানি। আমার একসময়ের বন্ধু নির্জন(বদরুদ্দদিন আলমগির) প্রমুখেরা এই ঘনিষ্ঠতাটি তেমন বুঝে উঠতে পারেনি। কাজল’ও( শাহনেওয়াজ) একেবারেই ইলিয়াসের কাছাকাছি যেতে পারে নি। মানে তখনো কাজল এখনকার মতো ফেসবুক তারকা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এদের দুজনের দেখা হওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমরা ইলিয়াসের ওপরে ইলিয়াসের মেজাজেই কিছু চরিত্রায়ন পেতাম। আর এখন চৈনিক মার্ক্সিস্ট ও জ়েহাদবাদিদের যেয়ে সম্মিলন ঘটেছে অনলাইনে, আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাতেও সুদুরপ্রসারি ফাটল ধরানো যেত।
ইলিয়াস নিজে অধ্যাপক হলেও, ওকে নিয়ে অধ্যাপনাসুলভ কাজ হয় বেশি কষালো হয়ে ওঠে; নয়ত বেশ টলটলে হয়ে পড়ে। শ্রেণী সংগ্রামের দ্বিমাত্রিকতায়, ইলিয়াসের ত্রিমাত্রিক কুট্টি-খান্দান খান খান হয়ে হারিয়ে যায়।
এই দ্বিমাত্রিক দর্পনের নিগড়ে ইলিয়াস কেন নিজেকে সপেছিল, তা আমাকে বিস্মিত করে, ব্যথিত করে। মানে এই লেখকতো সত্যেন সেনের চেয়ে অনেক, অনেক উঁচু মানের; এরত বিরলপ্রজ হবার বা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিক্ষনে বিচার পাবার কথা নয়। কিন্তু ওর সাথে দুরত্ব তৈরি হয়ে যায় শামসুর রাহমানের; ওর সাথে দেখা হয় না মুস্তফা আনোয়ারের। চিনের দেয়াল যে দুর্ভেদ্য নয় তাতো হংকং, ম্যকাওয়ের পাশাপাশি অবস্থানেই বোঝা যায়। ভাগ্যিস দুর্ভেদ্য নয়। মতবাদের হিনমন্যতায়, নিজের হারানো হৃদস্পন্দনের খোজেই কি ইলিয়াস আমাকে প্রশ্রয় দিতেন?
বাংলাদেশের তীব্র অস্থিরতাকে ধারন করবার ক্ষমতা ছিল ইলিয়াসের। কিন্তু নান্দনিকতায় ও বেছে নিয়েছিল বদরুদ্দিন ওমরদের নির্দেশনা। সংস্কৃতি, অপসংস্কৃতির সিমা সরহদ্দে ও বলি দিয়েছিল নিজের প্রান স্পন্দন। আর এখানেই ইলিয়াস নিজেকে বামন করে ফেলেছিল।
আমি পাঠক হিশেবে অবশ্যই ওর কাছ থেকে পেয়েছি ভিন্ন ধরনের প্রকরন। কিন্তু তা ছাড়িয়ে যাবার ক্ষমতা ওর ছিল। ছাড়িয়ে যাবার পর, ছুড়ে ফেলা শব্দগুলোকে ফিরিয়ে এনে চরিত্রদের আরো সংহত করাই আমার কাছে মহৎ গদ্যের শর্ত। দাবা খেলার চাল যতই বেশুমার হোক তা কেবলই চাল।এখানে ইলিয়াসকে আমার দাবার চৌশট্টি ঘরের চেয়ে অনেক বেশি বিবর্তিত মনে হয়। কিন্তু তারপরেও ‘চিলেকোঠার সিপাই’য়ের এই ব্যপ্তি আমার কাছে শব্দের অধ্যাপনাসুলভ অতি-উৎপাদনশিলতা মনে হয়। চমকের পর, জ্যামিতির পর, দাবা খেলার পর আমি ইলিয়াসে অবসন্ন হয়ে পড়ি।
তবে এটাও দেখতে হবে যে এতরকম জ্যামিতি, ভাষার এতরকম অন্তর্গত চালিয়াতিতে পারংগম না হলে একজন লেখকের পক্ষে চিরকালিন মহিমায় সমর্পিত হওয়াও দুস্কর। যা ইলিয়াসের কাজ নিঃসন্দেহে অর্জন করেছে।
একটানে, খুব একটা না ভেবে চিন্তেই লিখলাম। এক্ষন মনে পড়লো ওর পাইপে ভরে টোবাকো সেবন। আমি একবার বেশ তেরিয়া হয়েই বলেছিলামঃ পাইপে তামাক পাতা না ভরে, শুস্ক মঞ্জরি ভরে সেবন করুন, গাঁজ়াতে আর যাই হোক ক্যান্সারের ঝক্কি নাই।
অনেক দূর থেকে যখন ওর পা; কেটে ফেলবার খবর পেয়েছিলাম, হাভানা তামাকের বিশেষ এক দোকানের সামনে বেশ একটু বেসামাল অবস্থায় হেসে ফেলেছিলাম হো হো করে। কারন জানতামঃ শেষ মুহুর্তে; ঐ পারে কি নিয়ে যেতে চায় জানতে চাইলে ও বলবেঃ পাইপটা!
কিল্লার মোড়ে ধানকাট্টির সাথে বাখরখানি’র নাস্তাপানি সেরে ইলিয়াস হেটে যায়; নির্দ্বন্দ-নিসংগতায়।
চয়ন খায়রুল হাবিব
ব্রিটানি
৪-০১-২০১০
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৫ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৪৩ অপরাহ্ণ)
আপনি নিজেই স্বীকার করে নিলেন, একটানে, খুব একটা না ভেবেই এটি লিখেছেন। তবু ইলিয়াসের সাথে আপনার সহজ-সম্পর্কের এক চমৎকার আবহ টের পেলাম।
উপরোক্ত বিষয়টি একটু ক্লিয়ার করবেন কি? মনে হচ্ছে, কাজলের প্রতি একধরনের অভিমান আপনার আছে; ’তাহলে আমরা ইলিয়াসের ওপরে ইলিয়াসের মেজাজেই কিছু চরিত্রায়ন পেতাম’- এ কথার মানে কী?
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নির্জন আমার সহোদর ছোটভাই হওয়াতে ইলিয়াসের সাথে তার রাজনৈতিক বন্ধুত্ব সম্পর্কে আমি নিজেও জানি এবং কখনও কখনও তা প্রত্যক্ষও করেছি।
choyon khairul habib - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৬:১৫ পূর্বাহ্ণ)
কামরুজ্জামান, একটানে লেখাতে প্রক্ষিপ্ত ব্যাপার থাকতেই পারে। পরে পড়ে আমার নির্জনের নামটা প্রক্ষিপ্ত মনে হয়েছে।তবে কাজল’কে নিয়ে লাইনগুলো নয়। আমি অনেক দিন ধরেই আশির দশকের আবহে ইলিয়াস, কাজলের একটা তুলনামুলক আলোচনা করতে চাইছিলাম। প্রথম লেখাটাকেই নিচের লিঙ্ক-এ বিস্তৃত করেছি।আপনার “মনে হওয়াটা’ ঠিক না। ‘প্রতিবাদ’ এর ঝক্মারি বাদে ফারুকের লেখাটা আমার ভাল লেগেছে। আমার লেখাটা সেটার প্রতিক্রিয়া বা বিস্তার নয়। নির্জনকে ভালবাসা জানাবেন। ভাল থাকবেন। চয়ন।
http://peelkhanaroad.blogspot.com/2010/01/blog-post.html
বিপ্লব রহমান - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৪৫ অপরাহ্ণ)
চয়ন ভাই, আপনার মন্তব্যটিও খুব ভালো। মুক্তাঙ্গনে ইলিয়াসকে নিয়ে লেখার অনুরোধ থাকলো। এ বিষয়ে আপনার লেখাটি আরো দীর্ঘ হতে পারতো। ….ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৭ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
আপনার লেখায় লাফালাফির ধরন দেখে মনে হয়, আপনি কোনো সিদ্ধান্তেই বেশিক্ষণ স্থির থাকতে পারেন না। আপনার লেখায় নির্জন নামটি লিখেই আপনি বুঝে নিলেন, এটি প্রক্ষিপ্ত হয়েছে? আবার বন্ধুর নামটিও অবলীলায় ভুল লিখলেন, বদরুদ্দিন আলমগির নয়- ওর নাম বদরুজ্জামান আলমগীর। আপনি যখন ফাকেঁ ফাকেঁ ইলিয়াসের সাথে দেখা করতেন, তখন নির্জন লেখক শিবিরের নাট্য সম্পাদক হওয়াতে প্রায় প্রতিদিনই ইলিয়াসের সাথে দীর্ঘসময় কাটাত।
আর ইলিয়াস সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথার জবাব তো ফারুক ওয়াসিফ একেবারে যথার্থভাবেই দিয়েছেন।
আচ্ছা, আপনিই তো সেই লোক যিনি কাজল শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে আপনার ‘ফ্রি একুশ‘ নামের ব্লগ লোপাট করে দেয়ার অভিযোগ করে ওর ঘনিস্ঠ প্রায় সবাইকেই ইমেইল করেছিলেন? ইমেইল পাওয়া এড্রেসধারীদের ভিতর আমিও ছিলাম। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না, এত উলট-পালট ঘটনার সাথে আপনি জড়িত হচ্ছেন কেন? আসলে আপনি কী করতে চাচ্ছেন?!
ফারুক ওয়াসিফ - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৪৯ অপরাহ্ণ)
ব্যক্তিগত প্রসঙ্গগুলো আপনার, তা আপনারই থাক। তবে আপনার অস্থিরভাবে লেখা কথাগুলো আমাকে কিঞ্চিত অস্থির করে তুলেছে। সেটাই বরং জানাই,
বুঝলাম। ইলিয়াস তাঁর মার্কসবাদে আস্থাজনিত হীনম্মন্যতার প্রতিষেধক হিসেবে আপনাকে পেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিমাত্রিকতা বাইরের সেই অনুপস্থিত তৃতীয় মাত্রাটি কি, জানলাম না।
আপনি বদরুদ্দীন উমরের বইপত্র তেমন পড়েননি মনে হয়, (বিরোধিতা করতে হলে অন্তত পড়তে হয়। আর পড়লে নামের বানানটা অন্তত ঠিকঠাক লিখতেন)। পড়লে কোন জাদুবলে উমর সাহেব ইলিয়াসের মতো স্বাধীনচেতা, আÍসচেতন ও জেদি লোকটিকে ‘বামন’ বানিয়ে রাখলেন, তার একটা ব্যাখ্যা আমাদের দিতে পারতেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লেখক শিবিরের সহসভাপতি মায় সভাপতি পর্যন্ত ছিলেন, বেশ ক’বছর। সেটা কি তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক নাবালকতা, নাকি জীবনটাকে বিশেষ ভাবে দেখার ফল ও তার প্রতিক্রিয়া? তিনি ভুলও করতে পারেন, কিন্তু এরকম একজন লোকের জীবনের বড় একটি অংশকে এক টানে বাতিল করাটা ইলিয়াসকে নয়, আপনার জাজমেন্টের সীমাবদ্ধতাকেই প্রকাশ করে। একারণে বলছি যে, আপনি ইলিয়াস, তাঁর ভাইসহ একপাল মানুষকে কেবলই ‘জাজ’ করে ভার্ডিক্ট দিয়েছেন। তাতে কোনো দোষ নাই, কিন্তু মামলার শুনানিটা না জানলে আমরা কনভিন্সড হবো কেন? নিছক জাজমেন্ট এ জাতীয় আলোচনায় বিবমিষা ধরিয়ে দেয়।
একই দার্শনিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী লোকদের সাহিত্যবৃত্তি আর রাজনৈতিক সংগঠকবৃত্তির মধ্যে পদ্ধতিগত টেনশনটা থাকে_ থাকতে পারে, সে প্রসঙ্গ আপনি আনেননি। আপনি টেনেছেন ইলিয়াস কীভাবে মার্ক্সিস্ট রইলেন বা হলেন, তা নিয়ে আপনার চোখা বীতরাগের কথা। বিরোধটা কোথায়, তা ইলিয়াসের কী তি করেছে সেটা আপনার কাছে জানবার দাবি রইল।
বামপন্থি এবং বামবিরোধী অনেকেই দেখেছি, ইলিয়াস নিজেকে মার্কসবাদী মনে করেন বা বামপন্থিদের সঙ্গে কাজ করেন বলে আহাদে থাকেন বা নাক সিঁটকান। এরা উভয়েই একযোগে ইলিয়াসের সাহিত্যে শ্রেণী সংগ্রামের স্থূল সিম্পটম খুঁজতে যান, চান কোনো মহত পরিণতি এবং বলাবাহুল্য হতাশ হন। এই হতাশা তাঁদের হাতে ধরা মাপকাঠির অব্যর্থতা সম্পর্কে সন্দিহান করে না, বরং লেখকদের বিষয়েই তাঁরা বে-ইমান হয়ে যান আস্থা হারান। আরেকদল সেখানে ব্যক্তিমনের নিরবলম্ব মেটাফিজিক্স ঢোঁড়েন আর খোয়াবনামায় পোস্টমডার্নিজম হাতড়ান। সামগ্রিকভাবে ইলিয়াসের যে একটা ‘হয়ে ওঠা’ আছে, এবং তিনি যে প্রচলিত সমাজবাস্তবতার ভারি পাথর বয়ে বয়ে হাঁটা কিংবা রোমান্টিক জগতচেতনার মোমের পাখনার উড়ালের বাইরে যেতে চেয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতার আস্বাদন আর হয়ে ওঠে না।
আপনার মন্তব্যের স্ববিরোধিতা এখানেই শেষ নয়। আপনি ইলিয়াসকে মহান করেছেন আবার তার লেখা আপনাকে অবসন্নও করে। কীভাবে সম্ভব? এসব কথা বলছি, জাজমেন্ট হাজির করার এই আক্রমণাত্মক উচ্চম্মন্য ধরনের সঙ্গে একাত্ম হতে পারলাম না বলে।
শুভেচ্ছা।
বিনয়ভূষণ ধর - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (১:৩৯ অপরাহ্ণ)
ফারুক ওয়াসিফকে অনেক ধন্যবাদ এরকম চমৎকার একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্যে…
আমার মতে আকতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর লেখা “খোয়াবনামা” বিম্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি অনবদ্য সংযোজন…
তাঁর অন্যান্য লেখাগুলোও সাহিত্যমান বিচারে এককথায় ‘অসাধারন…
ফারুক ওয়াসিফ - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৫১ অপরাহ্ণ)
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল।
বিনয়ভূষণ ধর - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৩৬ অপরাহ্ণ)
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল আপনার প্রতি…
বিপ্লব রহমান - ৬ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৩৮ অপরাহ্ণ)
ফারুককে ধন্যবাদ দেই, আমার একজন প্রিয় লেখককে নিয়ে এমন লেখার জন্য। ইলিয়াস ভাইকে নিয়ে অনেক বছরের বহু স্মৃতিকথা জমা হয়ে আছে…এমন কী এই সেদিন হঠাৎ একটি পুরনো কাগজে পড়া ইলিয়াস ভাইয়ের নেওয়া মহাশ্বেতা দেবীর অসমাপ্ত সাক্ষাৎকারটি পর্যন্ত।
…একদিন সব লিখে ফেলবো নিশ্চয়ই। আর যতদিন তা না হচ্ছে, ইলিয়াসের ভূত আমাকে তাড়া করেই যাবে, সেই হা…হা হাসি, ধূমায়িত পাইপ হাতে, কালো রঙের পুরু ফ্রেমের চশমা চোখে–আমাদের ইলিয়াস ভাই। …
ডোবারব্যাং - ৮ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৩০ পূর্বাহ্ণ)
লেখক বলেছেন,
কসমোপলিটন ঢাকার রাক্ষুসে কর্পোরেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাস্বার্থ তদারকির পত্রপত্রিকাচ্যানেলমিডিয়াগুলো ঈশ্বরকে শয়তান কিম্বা শয়তানকে ঈশ্বর বানায়ে দ্যায়ার ক্ষমতা রাখে। হরদম দিচ্ছেও। যুগপত ঢাকাই মিডিয়ার স্নেহধন্য এবং একইসঙ্গে লড়িয়ে প্রতিবাদী তারকাগণ আজকাল মিডিয়াকে আমজমতার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম (দৈনিকে লিখে আমপাঠকের সাথে যোগাযোগ) হিসেবে ব্যবহার করেন জেনে ভালো লাগলো। ধর্মেও থাকা আবার জিরাফেও থাকার (এবং এভাবে ‘লড়াইটা’কেও জারি রাখা) মতো এইসব তাজ্জব দ্বীন-ই-এলাহি তরিকা যদি ইলিয়াস শিখতে পারতেন তাহলে কতই না ভালো হতো। বেচারার খোয়াবনামা ঢাকাই মিডিয়াতে মাঝপথে গিয়ে নিষিদ্ধ হত না।
ফারুক ওয়াসিফ - ৮ জানুয়ারি ২০১০ (১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
গত ১০ বছরে বড় মিডিয়ায় ইলিয়াস নিয়ে আমার ধারণা অন্তত ২০ টি লেখা এসেছে। আউল-ফাউল যা-ই লিখি এর দশটিই আমার। গত বছরে তার আগের বছরে এবং এ বছরে দুর্ভাগ্য যে আমার ছাড়া ইলিয়াসকে নিয়ে আর কোনো লেখা তার মৃত্যু বা জন্মবার্ষিকীতে প্রকাশিত হয় না। তাহলে আপনি বলছেন, এগুলোর কোনো দরকার ছিল না।
ছোট্ট এই ফোড়নের দীর্ঘ উত্তর দিতে পারলে ভাল হতো। তবে সেটা আপনার কথার বদলা হিসেবে নয় কর্পোরেট মিডিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাগুলোর এমবেডেড বাস্তবতায় সিস্টেমের বিরুদ্ধের কর্মীরা কীভাবে কাজ করবেন না গর্তে মুখ বুজে থাকবেন সেই বিষয়ে লেখাই সমীচিন হতো।
আমার সমালোচনাটা আপনি কোন অবস্থান থেকে করছেন জানলে কথা বলতে সুবিধা হতো। লিটল ম্যাগ এর কথা যদি বলেন, তাহলে নাকউচু কিন্তু অকার্যকর এসব চলতে পারে তাতে আপত্তি নাই, তবে তা দিয়ে নিজের অহং ছাড়া আর কিছু চরিতার্থ হয় মনে হয় না। সেই ষাট থেকে এ পর্যন্ত এর ফল কী? কী প্রসব করেছে তারা? যারা লেখক হয়েছেন তারা তা হয়েছেন নিজের শ্রমে।
এর বাইরে অল্টারনেটিভ মিডিয়া কই? অতএব লেখা-জানানো বন্ধ করে বসে থাকা ভাল। আমি মনে করি, যদি বুর্জোয়া মিডিয়ায় অজস্র বাম বা প্রতিবাদী চেতনার কর্মী থাকতো, তৈরি হতো তাদের বেশ কিছু লেখক, তাহলে ফালতু বয়ানগুলোর পাশাপাশি মানুষ অন্য ভাষ্যটি কিছুটা পেত।
ইলিয়াসের দুটো উপন্যাসই ধারাবাহিকভাবে দুটো জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। চিলেকোঠার সেপাই বন্ধ করে দিলেও আমার ধারণা ইলিয়াস পরের বার অন্য কোথাও স্পেস পেলে লিখতেন, কারণ এটা উপায়হীন কৌশল।
দুনিয়ার কোনো দেশে এ জাতীয় লড়াইহীন অহংকারী প্রতিষ্ঠানবিরোধীতা বা বামপন্থা নাই। এখানে আছে। এখানে তারা কোনো এক সকালে ঘুম ভেঙ্গে বিপ্লব করবার খায়েশ রাখেন, পাল্টা প্রতিষ্ঠান বানানো, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার তাদের প্রয়োজন নাই। মার্কস দৈনিকে লিখেছেন, আনু মুহাম্মদরা একসঙ্গে দুই ফ্রন্টেই উপস্থিত আছেন। সেটা তার সংগ্রামী সামর্থ্যেরই প্রকাশ মনে করি।
জরুরি অবস্থার সময় নুরুল কবীর, আনু মুহাম্মদরা যে ভিন্নমত জারি রেখেছিলেন তাতে মহাবিপ্লব হয়ে যায় নাই, কিন্তু পাল্টা স্বরকে জারি রাখার জরুরি কাজটি এই অন্ধকার সময়ে কিছুটা হয়েছিল।
আমার জরুরি অবস্থার আমলনামা : বাংলাদেশে সিভিকো-মিলিটারি-কর্পোরেট গণতন্ত্র বইয়ের অধিকাংশ লেখা সেসময় বুর্জোয়া মিডিয়াতেই প্রকাশিত হয়েছিল। আমি মনে করি, এর সামান্য হলেও দাম আছে।
আপিন স্লেষ করে তারকা বলেছেন। সেটা কিন্ত সেই ছাত্র অবস্থা থেকে তীব্র করুণ বাস্তবতায় দাড়িয়েও নিজের কাজ ও বলাকে বিক্রি না করার প্রতিদিনের চেষ্টা। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বামপন্থি নেতারা সবাই এসেছেন সম্পত্তিবান শ্রেণী থেকে। আমার সে উপায় নাই। যাদের নাই তারা হারিয়ে গেছেন বা না খেয়ে মরেছেন। দেন না আমাকে একটি বিপ্লবী চাকরি, যাতে বাবা-মা-স্ত্রী পরিবার নিয়ে বাচতে পারি। অথবা বানান না একটা পত্রিকা, যা অন্তত কয়েক হাজার মানুষ পড়বে। তা পারবেন না। অথবা লিখেন না বিপ্লবী কয়েকটি লেখা, যা মানুষ না মানুক অন্তত বুঝবে। কিংবা আমার কোনো একটি লেখা থেকে দেখান না, কীভাবে আপোস করেছি। আপনারা সেই মাপের মহান, যারা হাত ধরবেন না, ল্যাং মারবেন। আর পড়ে যাওয়া লোকটি যদি সব বন্ধ করে দিয়ে বিলীন হয়ে যায়, তখন খুজবেন নতুন খোঁচাটা কাকে দেওয়া যায়। পারলে বাঘ হন, ফেউ হয়েন না।
তবে আমি সত্যিই খুশি যে, আপিন বাংলাদেশের মিডিয়ার রাজনীতি ধরতে পারেন। সেটা একা একা না বুঝে স্বনামে আর দশজনকে জানান। ডোবার ব্যাং হয়ে আর কতকাল কাদা ঘাটবেন।
ডোবারব্যাং - ৮ জানুয়ারি ২০১০ (৭:০৯ অপরাহ্ণ)
লেখক বলেছেন,
এই কথাগুলো একেবারেই বস্তাপচা এবং বহুলবলিত-চর্বিতচর্বণ। প্রায় সব প্রাক্তন লেখক এবং বর্তমান মিডিয়াকেরাণীগণ এ বুলি তোতাপাখির মত আওড়ান। আপনিও এমন পুরনো কথা বলবেন, আশা করিনি। সেই ষাট থেকে এ পর্যন্ত যারা কিছুটা ফলিয়েছেন তারা কেউই প্রবল মিডিয়ার খাঁচায় ঢুকে ফলাননি। সমকালীন সময়েও যাঁরা কমবেশি ভালো লিখছেন, সবাই মোটাদাগে রাক্ষুসে মিডিয়ার আওতার বাইরের লোক। দেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিন কিম্বা ওয়েবকেন্দ্রিক ব্লগ বা লেখক ফোরামগুলোতেই তারা সক্রিয় (আপনার মত মানুষ অল্টারনেটিভ মিডিয়া দেখছেন না, এটা অদ্ভুত। এগুলোর সবগুলোই তো অত্যন্ত শক্তিশালী আর সম্ভাবনাময় অল্টারনেটিভ মিডিয়া)। এদের কারুরই তো আমার নাক উঁচু মনে হয় না। বড় মিডিয়াগুলোই বরং নাক উচু। ওসবে কতিপয় মিডিওকারের খ্যাতিপ্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কিছু চরিতার্থ হয় মনে হয় না। কী প্রসব করেছে তারা?
প্রবল মিডিয়াগুলো বরং সম্ভাবনাময় লেখকদের ধরে ধরে মধ্যমানের কেরাণী বানায়। রাইসু কিম্বা কামু কিম্বা গালিব কিম্বা আরো অনেকে এসবের করুণ উদাহরণ। আর তরুণদের মধ্যে যাঁরা মৃদুমন্দ আত্মরক্ষা করতে পারছেন (যেমন মজনু কিম্বা রাশেদ কিম্বা আপনি স্বয়ং ফারুক ওয়াসিফ) তারা সেটা পারছেন মূলত তাঁদের নিজেদের শ্রমে কিম্বা অতিরিক্ত যোগ্যতাবশত। এখানে রাক্ষুসে মিডিয়ার কোনো কৃতিত্ব নেই।
লেখক বলেছেন,
সবিনয়ে একমত।
লেখক বলেছেন,
(সম্ভবত) সমকালে আমরা কেউ কাউকে ল্যাং মারছি না। ফিজিক্যালি সেটা সম্ভব না। কারণ ল্যাং মারতে গেলে কাউকে না কাউকে ছুটন্ত (নিদেনপক্ষে হাঁটন্ত) থাকতে হয়। বর্তমানকালে আমরা সবাই আসলে একই জায়গায় পড়ে আছি। (প্রায়) স্থবির। (প্রায়) অবিকশিত। চেষ্টা হয়ত সবাই কমবেশি করছি। কিন্তু পেটফাঁপা-আত্মতুষ্টি বাদ দিলে, করুণ বাস্তবতা হলো, যেই দামে কেনা (প্রায়) সেই দামেই বিক্রি।
তুচ্ছাতিতুচ্ছ এক পাঠকের ভুলত্রুটিবেয়াদবিঅজ্ঞতা ক্ষমা করার মত উদারতা আপনার আছে, এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। অকৃত্তিম শুভেচ্ছা।
মাসুদ করিম - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (৯:২৬ পূর্বাহ্ণ)
@ ডোবারব্যাং
ফারুক ওয়াসিফের সব প্রশ্নের তো উত্তর দিলেন কিন্তু উপরের এই ভয়ংকর পরিপ্রেক্ষিতের বিষয়ে তো কিছুই বললেন না। হ্যাঁ, আমাদের বাংলদেশে একজন লেখকের বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। লিটল ম্যাগ, ব্লগ এসব পয়সা দেয় না — কারণ তার নিজেরই কোনো আয় রোজগার নেই লেখককে কী দেবে? পত্রিকা পয়সা দেয়, সেখানে চাকুরি করে অন্তত জীবনধারনটা তো করা যায়। ইলিয়াসই বা লিখে কী পেয়েছিলেন? অথচ লেখার মতো এমন অভিনিবেশঘন কাজ আর কয়টা আছে ? অন্য কাজ করে লেখালেখি করা খুবই কষ্টের, ঘুমের সময় কেড়ে নিতে হয়, প্রয়োজনীয় পারিবারিক কাজ অবহেলা করতে হয়, কখনো কখনো যে কাজ লেখক জীবনধারনের জন্য করছেন সেখানে ফাঁকি দিতে হয়। এসব কিছু কিন্তু বিবেকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে বিবেকের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করতে হয়। ফলে আমার কাছে আপসটাপস দিয়ে লেখক বিচার মোটেই কাজের কথা নয়। কেউ আপসহীন এই বাহবা সত্যিই মূল্যহীন। জীবিকার অধিকার সম্ভবত লেখকের নেই, আবার লেখকের খুব দরকার আমাদের : কী জটিল করুণ আমাদের লেখকের জীবন!
ডোবারব্যাং - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৪৭ অপরাহ্ণ)
@মাসুদ করিম, শুভেচ্ছা।
এটা তথ্য হিসেবে শতভাগ সঠিক নয়। এখনও সিপিবি কি বাসদ কি অন্যান্য বাম রাজনৈতিক দলগুলোতে শত শত নেতাকর্মী পুরোমাত্রায় সক্রিয় আছেন; যাঁদের নাই অথচ তাঁরা হারিয়ে যাননি। (অবশ্য শাহবাগ কি পরিবাগ কি বাংলামটরের কানাগলিতে কাকে হাগা ফুটপাত জয় করা নাগরিক শিকখ্যাত গ্যানিরা এদেরকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। প্রচুর মুটা মুটা বই পড়ে তারা বুঝে ফেলেছেন যে এরা আসলে পুরাই মূর্খ বিভ্রান্ত ধান্দাবাজ নিস্ফল ও অহেতুক।)
হ্যাঁ এটা তো মানতেই হবে। আজকে যদি আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা কেউ পত্রিকায় কি এনজিওতে চাকরি করব না; সেট তো অবিবেচনাপ্রসূত ও হাস্যকর হবে। সেটা বলা হচ্ছেও না। মূল বিষয়টা অন্যত্র। পত্রিকায় চাকরি করা এক বিষয় আর পত্রিকায় লিখে আমপাঠকের সাথে জনসংযোগ অন্য বিষয়। এনজিতে চাকরি করা এক বিষয় আর সমাজ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নিজেই একটা এনজিও খুলে কোটিপতি বনে যাওয়া অন্য বিষয়।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (১:৪৪ অপরাহ্ণ)
উপরের কথা কয়টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। তবে আপনি স্বনামে প্রকাশিত হোন, তাহলে শুভেচ্ছাটাও হয়ত সরাসরিই জানানো যাবে।
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (১:২৬ পূর্বাহ্ণ)
যাক, আশ্বস্ত হলাম। আপনি আমাদেরই মানে, বামপন্থিদেরই আলাতো-ফালাতো কোনো ভাই হবেন, বন্ধুও নিশ্চয়ই। মার্কস লিখেছিলেন, কমিউনিস্টরা নিজেদের উদ্দেশ্য গোপন রাখতে ঘৃণা বোধ করে। আপনি উদ্দেশ্য লুকাননি, নাম লুকিয়েছেন। লেনিন লিখেছিলেন, যে উত্তরাধিকার পরিত্যাগ করি। আমাদেরও সময় এসেছে বাংলাদেশের কায়েম হয়ে থাকা বাম নেতাদের অধিকাংশকেই পরিত্যাগ করা। সেটা বামপন্থি তরুণ কর্মীদের সাবলকত্বের লক্ষণ হতে পারে। এই ধারার নবায়ন করা আজ জরুরি প্রয়োজন। সেটার জন্য নতুন পার্টি খোলার থেকে যার যার দলের ভেতর থেকেই একদিকে সুবিধাবাদ আরেকদিকে ভক্তিবাদকে প্রশ্ন করা চাই। একেবারে শূণ্য থেকে শুরু করার তাকদ থাকা চাই। নইলে পরের বার আরেকটা মেনন পয়দা হতে পারে, আর বামপন্থিরা পরিণত হতে পারে বিপ্লবের লাশের মুর্দাফরাস।
খেয়াল করে দেখেছেন, গত এক দশকে বামপন্থিরা কোনো ফ্যাক্টর ছিল না। কিন্তু তেল-গ্যাস আন্দোলনের সুবাদে এখন তাদের একটি চাওয়া অন্তত মানুষ জানে ও কিছুটা সমর্থন করে। এটা কিন্তু এই পার্টিগুলোর সচেতন প্রয়াসে হয় নাই, তাদের বাইরের ব্যক্তি আনু মুহাম্মদ, প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ আর কিছু ছোটো বাম দলের তাগাদায় হয়েছে। কিন্তু এতে সব দলের কর্মীরা উদ্দীপ্ত হওয়ায় একে এখন নেতাদেরও অস্বীকার করা কঠিন।
পত্রিকায় চাকরি করবেন কিন্তু লিখবেন না, এ তো অদ্ভুত বালখিল্য! যতদিন আমাদের পত্রিকা হবে না, ততদিন কি যতটা পাওয়া যায়, ততটা মানুষের কাছে জানাবার চেষ্টা করবো না? পত্রিকায় না লিখে কি দেওয়ালে লিখব? পেটিবুর্জোয়া চিন্তাগুলো এভাবেই অর্ধেক পথে দম হারিয়ে ফেলে। যেখানে যতটা পারা যায় ব্যবহার করা দরকার। দরকার নিজেদের এনজিও খাড়া করা। এই কাজ যদি সত্তর দশকে হতো, তাহলে সাম্রাজ্যবাদের মাঠকর্মী না হয়ে দেশজ সমর্থনে কিছু প্রতিষ্ঠান দাড়াতো, যেটা ভারতে আছে ল্যাটিন আমেরিকায় আছে। তাতে একটা আমব্রেলা দাড়াতো এবং সেটা আখেরে পার্টির হাতকে প্রসারিতই করতো। বিশুদ্ধ চর্চা যেখানে পারেন করেন, কিন্তু রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে এমনকি সেনাবাহিনীর ভেতরেও কাজ থাকা দরকার, লোক থাকা দরকার। বিপ্লব পিকনিক পার্টি নয়, কোনো একদিন হৈচৈ করে কোথাও গিয়ে লম্ফঝম্ফ করা গেল। গ্রামসির ভাসায়, সমাজের ভেতর পাল্টা হেজিমনি, ট্রেন্চ দখলে, এক পা এক পা করে বৃত্ত বড় করার বিষয়।
যিনি যেই পার্টি করছেন করুন, শ্রদ্ধা করি। অবশিষ্ঠ বামপন্থা ক্ষমতাদখলের লক্ষ্যকে তিরোহিত করলেও গণতান্দ্রিক লড়াইয়ে তারাই এখনো হাতের পাচ। তবে বাসদ বা সিপিবি না করেও কেউ তার অঙ্গীকার পূরণ করতে পারে, তারও থাকতে পারে সংগ্রামের নিজস্ব জমায়েত।
তা, ভাইজান, কথা হচ্ছিল ইলিয়াস নিয়ে, সে বিষয়ে মনে হয় আপনার কোনো আগ্রহ নাই। আপনার আগ্রহ যত্রতত্র, তা যত্রতত্র আপনি বিরাজিত থাকুন। শুভেচ্ছা।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৩২ পূর্বাহ্ণ)
এখানেই জীবিকা আর পেশার প্রশ্নটি চলে আসে- পত্রিকায় কাজ করাটা আপনার জীবিকা হতে পারে, কিন্তু আপনি যখন ব্যক্তি, সমাজ বা মানুষের পক্ষে সৃজনশীল বা মননশীল কাজ করবেন তখন সেই পত্রিকা আপনার সহায়ক কিনা, তা কিন্তু ভেবে দেখার বিষয়। এখানে নিজেকে রক্তাক্ত করার একটা ব্যাপারও হয়ত সৃষ্টি হতে পারে। ধরা যাক, দেশি চাল ৬০ টাকা করার পক্ষে ওই পত্রিকা একটা সেমিনারই করে ফেলছে, আপনাকে ওই অনুষ্ঠানের মডারেটরের দায়িত্ব দেয়া হলো, তখন আপনি কী করনে? পত্রিকাওয়ালা তো আপনার মেধা নিয়ে বাণিজ্য করতেই পারে। এটাই তো ওদের কাজেরও অংশ।
আবার এমনও দেখা গেছে, আপনি কোনো সাময়িকীতে কোনো লেখা দিলেন, ওরা তাদের মতো করে সম্পাদনার ছুরি চালালো! আমার কথা হচ্ছে, আমার কথাগুলো অনেক মানুষের কাছে যাওয়া দরকার। তাহলে আমি তো চাইবই লেখাটি বড়ো কাগজে যাক। এখন সেই কাগজ যদি আমার কাজকে এতটুকু মূল্যায়ন না-করতে চাই, তাহলে কেন সেখানে লেখাটা দিতে হবে?
আর লিটল ম্যাগ. যে ষাট দশক বা তারপরে সামাজিক কাজ-কর্মে বা সৃজনশীলতায় তেমন কিছু করেনি তা কিন্তু নয়। এখনও বেশ কিছু লিটল ম্যাগ. আছে যারা নানাবিধ প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার পাশাপাশি প্রগতিশীলতার পক্ষে কাজ করছে। এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিতে এর প্রভাবও ব্যাপক। পত্রিকাওয়ালারা সাধারণত তাদের পাঠকের বাড়তি মনোরঞ্জনের অংশ হিসাবে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা করছে। সিরিয়াস একটা ছোটকাগজ কি তা করে???
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৬:২৬ অপরাহ্ণ)
সংবাদ মাধ্যম এবং তার উপজাত সাহিত্যচর্চা কখনোই নিবিষ্ট সাহিত্যপত্রিকার বিকল্প নয়, বরঙ বাধাই। উল্টোটাও একইভাবে সত্যি। সাহিত্যপত্রিকা, লিটল ম্যাগ কখনো বড় প্রতিষ্ঠানের পাল্টা শক্তি অর্জন করে না, করলে তা আর মানসম্পন্ন কাজের জায়গা থাকে না। দুটোর ক্ষেত্র ও লক্ষ্য আলাদা।
আর কিছু দায়বদ্ধ সত চর্চা যা আছে সেটা ক্ষীণধারার, তা দিয়েই বলা যায় কি তারা সাহিত্যাঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলছে?
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (১:০৪ পূর্বাহ্ণ)
>>> ডোবার ব্যাং
১.
কথাগুলি আপনি বলেছেন বিদ্যমান লিটল ম্যাগ চর্চার পক্ষে। পক্ষে থাকুন, কিন্তু কোনো কিছুকেই পরম বা স্থায়ী ধরে নেবেন না। বাংলাদেশের লিটল ম্যাহ চর্চা ষাট দশকে হাংরি-বিট ইত্যাদির সংগে পশ্চিমের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরের আত্মমগ্ন ও দেশ-কাল-মানুষ বিমুখ অস্তিত্ববাদ নিয়ে মেতে থেকেছে। ষাটের গণসংগ্রাম তাদের স্পর্শ করেনি। সত্তরের দশকে যখন রাষ্ট্র ও সমাজে উথাল-পাথাল হচ্ছে তখন তারা নাই হয়ে যায়। আশির সেনাশাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় তারা কবিতা কল্পনালতার অধীন থেকেছে। এ কারণে বলছি যে, ষাট থেকে শাসসুর রাহমান-হাসান হাফিজ প্রমুখদের হয়ে নির্মলেন্দু গুণ/আবুল হাসান/মোহাম্মদ রফিক প্রমুখদের মাধ্যমে বাংলাদেশের কবিতার একটা নিজস্ব স্বর ও চেতন দাড়াচ্ছিল; এরা সংগ্রাম করেছেন এর বিরুদ্ধে। ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু মোটের ওপর যা হয়েছে তার বড় উদাহরণ ব্রাত্য রাইসু এমনকি মাসুদ খান পর্যন্ত। ভাবকে তারা ফ্যান্টাসি, অভিব্যক্তিকে বিকার আর কাব্যভাষাকে অনেকটা কৃত্রিম ও তৈরি করা প্রকরণে এমন সাজান সাজালেন যে, আজ সেই সাজ খুলে মুখ বের করা আর তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
গদ্যে কারা দাড়িয়েছেন এখান থেকে বলুন তো?
এদের পোস্টমর্ডানিটি, এদের প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা ইত্যাদি শেষ পর্যন্ত কোন গাড্ডায় হারালো? তার মধ্যেও একটা প্রবণতায় এরা সহি, সেটা হলো নিজের সামনে উপস্থিত বাস্তব আর অন্তর্গত ভাষিক জগতকে এড়িয়ে নিজে নিজেই যেমন খুশি তেমন সৃষ্টির উল্লাসে মাতা। আজ এসে তাই বলতেই হবে যে, এই সাধনা শেষ হয়েছে অসাধে আর অ-সুখে। পেটিবুর্জোয়ার অসুখী আত্মার আর্ত চিতকার আর বিকার সাহিত্য নয়। যেমন নয়, বুর্জোয়াদের তল্পিতলে বিপ্লবের স্বপ্ন রচনা। আমাদের বামপন্থা এবং লিটল ম্যাগের মধ্যে গড়ের মিল এটাই যে, তারা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের পরিত্যক্ত দায় ও বিবেককে মাথায় তুলেছেন, ভাষা ও মানুষের ভেতর নতুন নির্মাণ ঘটাননি। কারণ হারানো সুইটা তারা খুজেছেন বুর্জোয়া ঝাড়বাতির নীচে।
ফলে কী করছি, তার লক্ষ্য এবং আদর্শ বাদ দিয়ে না রাজনীতি না লিটলম্যাগের বিচার_ অতএব সম্ভব না।
২.
হুমম, কিছু ব্লগচর্চা করছি গোটাকতেক লোক আমরা, কিছু পত্রিকাও বেরয়_ বেরুতেই থাকবে। কিন্তু কোটি মানুষের যোগফল যেমন জনগণ বা জাতি নয়, তার জন্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিপ্রায় ও প্রত্যয় প্রয়োজন। আর সেটা যখন দাড়ায়, তখন ছোটো পত্রিকা দিয়ে কাজ হয় না, বড় পত্রিকা হতে হয়। নেপালের শীর্ষ পত্রিকাগুলো মাওবাদীদের হাতে। যে বিরাট সংগ্রাম তারা করছে তাতে বড় আয়তনে শক্তি দরকার হয়, নেইলকাটার দিয়ে গাছ কাটার স্বপ্ন দেখুন। অল্টারনেটিভ হওয়া যায় না, সেটা হয় ষাট টাকায় কেনা উবিনীগের দেশি চালের মতো। সেই বিলাস যাদের আছে কিংবা রাজনীতি যাদের বাচামরার বিষয় নয়, তারা করতে পারে। যেখান থেকেই শুরু করা হোক না কেন, যত ছোটোই তার আওতা হোক লক্ষ্য বৃহত না হলে কেউ বড় কিছু অর্জন করতে পারে না।
প্রত্যক্ষ রাজনৈতিকতার কথা বাদ দিলে, নিরেট সাহিত্যিক প্রয়োজনে, অগ্রসর চিন্তার প্রয়োজনেই লিটল ম্যাগ বা ব্লগের প্রয়োজন আছে। তবে সেটার আওতা বিশেষ, সর্বসাধারণ সেখানে কদাচ আসবেন না, সেখানে তা প্রভাব ফেলতেও অক্ষম। এগুলো কেবল আমরা আর আমাদের মামুদের ব্যাপার।
আমি কোথাও বলিনি, বুর্জোয়া মিডিয়া আমাদের কাজ করে দেবে। কিন্তু সেই মিডিয়ায় আপনার কয়েক ডজন লোক থাকা দরকার। তাহলে সমাজে তাদের কিছুটা প্রভাব পড়তো। নিরেট ফ্যাসিবাদ ছাড়া কাজের লোকের কাজ বা কথা বলার সুযোগ একেবারে বন্ধ করা যায় না।
জামাতিরা কাকের ঘরেই কোকিল ছানাকে প্রশিক্ষিত করে এখন নিজেদের মিডিয়া দিয়েছে। আজ আপনি দেখান তো, যে বামপন্থিরা লেখাপড়ায় এত পারঙ্গম তাদের থেকে অন্তত ৫ জন লোক, যারা ভাল করে কলামটা লিখতে পারে? পত্রিকা সম্পাদনা তো পরের কথা। সব কি আল্লায় করে দেবে?
৩.
মিডিয়ার বাইরে থাকা কি রাষ্ট্রের বাইরে থাকা, বাজারের বাইরে থাকা। মিডিয়া এখন রিয়ালিটি ক্রিয়েট করে, সেই রিয়েলেটি আপনাকেও তার অধীনস্ত করে। এভাবে ক্ষমতাসম্পর্কের বাইরে থাকার চিন্তা করা ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞান থাকার লক্ষণ।
কোন রাশেদ? কিংবা আমি তাদের সঙ্গে মিলি কী মতে? আমাদের শিল্প বা রাজনৈতিক বোধ কী এক? আর আত্মরক্ষাই কি শেষ কথা?
আমার প্রথম আলোয় চাকরি করা আপনার পছন্দ নয়, আমারো নয়। ব্যস। এর বেশি আপনার আর কিছু বলবার অধিকার নেই আমারো শোনার সময় নেই। পথে হাটতে গেলে হোচট খাই, কিন্তু সেই হোচট খাওয়া খোয়ার টুকরা বা বিরাট পাথর, বা আপনি বা প্রথম আলো, সক্রিয়তার ট্রাফিক নন, নিয়ন্তা তো ননই। দয়া করে এই সীমাটুকু মনে রাখবেন। নইলে কিছু করবো না, কেবল উপেক্ষা করবো।
রায়হান রশিদ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৯:২১ পূর্বাহ্ণ)
প্রিয় ফারুক ওয়াসিফ এবং কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর,
আলোচনাটা অত্যন্ত উপভোগ্য হচ্ছে এবং সে ধন্যবাদ এই পোস্টের লেখকসহ সকল মন্তব্যকারীর প্রাপ্য। আমার এই মন্তব্য অবশ্য অন্য একটি বিষয় নিয়ে, সবিনয়ে করছি, আপনাদের বিবেচনার জন্য।
আপনাদের দু’জনের মন্তব্যেই মন্তব্যকারী ‘ডোবার ব্যাং’ এর প্রকৃত পরিচয় নিয়ে এক ধরণের সুক্ষ আক্রমণ (নাকি নির্দোষ অনুসন্ধিৎসা) রয়েছে, তার আসল পরিচয় জানার চেষ্টা রয়েছে। এই প্রবণতাটিকে অত্যন্ত ক্ষতিকর মনে করি। আর লেখাই বাহুল্য, এ ধরণের ‘অনুসন্ধিৎসা’ ব্লগের স্বীকৃত চর্চা এবং নীতিগুলোর সাথে কখনোই মানানসই না। কারণ, স্বনামে লিখলেই কেউ বাহাদুর লেখক হয়ে যান না, আবার ছদ্মনামে লিখলেই তাকে এই ধরণের আবডালে মার দিতে হবে তার সাথেও ঠিক একমত হতে পারছি না। ঠিক একই কারণে স্বনামের লেখকদের যখন কেউ আত্মপ্রচারপ্রেমী মানুষ বলে লেবেল আঁটার চেষ্টা করে, তার সাথেও গলা মিলাই না।
অনেকেই নিভৃতে থাকতে পছন্দ করেন, এমনকি স্বচ্ছন্দও হয়তো বোধ করেন। এই স্বাচ্ছন্দ্য চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ বলে মনে করি। সেটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রকৃত ব্যক্তিটির পরিচয় উদঘাটনের এই চেষ্টাগুলো/প্রবণতাগুলো অন্তত আমার অভিধানে অনেকটাই ‘ফ্যাসিবাদী’ (আপনাদের তাতে দ্বিমত থাকতেই পারে)। এ ধরণের চেষ্টাগুলো সাধারণত রাষ্ট্র বা এসটাবলিশমেন্টের পক্ষ থেকেই করা হয়ে থাকে। ব্লগারদের কাছ থেকে আমরা তা কখনোই আশা করি না।
বেনামে কিংবা ছদ্মনামের লেখকদের স্বাধীন মিডিয়ায় বিশাল ভূমিকার কিংবা অবদানের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সেটা আপনারা এমনকি আরও ভাল জানবেন। সাম্প্রতিক কালে বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলো কি প্রক্রিয়ায় এ ধরণের ব্লগারদের টার্গেট করে ধীরে ধীরে জাল গুটিয়ে আনছে মুক্ত বুদ্ধির চর্চার স্থায়ী কন্ঠরোধের লক্ষ্যে, তা মুক্তাঙ্গনের আগের কিছু আলোচনাতেও উঠে এসেছে (এখানে দেখুন)। হ্যাঁ, ছদ্মনামে লিখবার এই অধিকারের যে অপব্যবহার হয় না, সে দাবী করছি না। তাও নিশ্চয়ই হয় এবং হচ্ছে। অনেকেই এর এবিউজ করেন – ব্যক্তিগত আক্রমণের ঢাল হিসেবে, কিংবা দায়িত্বহীন বক্তব্য প্রচারের লক্ষ্যে। সে ব্যাপারেও আমরা নিশ্চয়ই সতর্ক থাকবো সবাই মিলে; কিন্তু ভারসাম্যটাও মনে হয় জরুরী। কারণ, চিন্তার নিয়ন্ত্রণগুলোর বেশীরভাগই কিন্তু শুরু হয় এমন নির্দোষভাবেই, ইতিহাস তার সাক্ষী।
একে উপদেশ প্রদানের ধৃষ্টতা বলে ধরে নিলে কিংবা personally নিলে সত্যিই দুঃখিত হবো। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে হলো নিতান্ত বাধ্য হয়েই। কারণ, সাম্প্রতিককালে আরও কিছু আলোচনায় (আপনাদের নয়) এই প্রবণতাটি চোখে পড়েছে, এবং তা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় মন কষাকষি শেষ পর্যন্ত লেখকের ব্লগ ছেড়ে যাওয়া পর্যন্তও গড়িয়েছে। তাই, আপনাদের মাধ্যমে সবার বিবেচনার জন্য এই বিনীত মতামত।
পূনশ্চ: এটি (‘ডোবার ব্যাং’) আমার ছদ্মনাম বলে ধরে না নিলেই বাধিত হবো। তবে এই মন্তব্যকারীর অনেক মন্তব্যেই চিন্তার খোরাক পেয়েছি, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। অন্তত, ক্ষতিকর মনে হয়নি কখনোই।
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৩:১১ অপরাহ্ণ)
নাম মানে পরিচয়, আর পরিচয় একজনের শারীরিক-মানসিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য প্রতিভূ। পরিচয় আক্রান্ত হলে স্বয়ং ব্যক্তিটিই আক্রান্ত হন। সাইবার-মণ্ডলে যিনি নিক ব্যবহার করে পরিচিত হন, তাঁর বেলায় দুটো পরিচয় দাঁড়িয়ে যায়। একটি তার রিয়েল আরেকটি ভার্চুয়াল। একটি আক্রান্ত হলে সেখানে আরেকটি সরাসরি আক্রান্ত হয় না। আবডাল তাঁকে এই সুবিধা দেয়। যিনি স্বনাম ব্যবহার করে আবির্ভূত হন, তাঁকে নিরন্তর তাঁর সামগ্রিক অস্তিত্বের প্রতিনিধিতত্ব করতে হয়, নিজের অবস্থান-চেতনা এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়। তিনি অনেকটা আবডালহীন খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন। অন্যদিকে নিক পরিচয়ধারীর ভার্চুয়াল ভাবমূর্তির বাইরে আর কিছু রক্ষার দায় যেহেতু অতটা থাকে না, সেহেতু তিনি আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করেন। এই পার্থক্য মনে রাখতে হবে।
যদি রাখি, তাহলে নিক পরিচয়ধারীর সেই সুবিধা যাতে অন্যকে এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করায় ব্যবহৃত না হয় সেটাও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে নিক-এর পরিচয় উদঘাটনে যতই রহস্যভেদের আনন্দ থাকুক, সেই আনন্দ এ কারণে অবৈধ ও অনৈতিক; তা অপরের ব্যক্তিগততা ও গোপনীয়তার অধিকারের লংঘন। সুতরাং নিক নিয়ে সুক্ষ্ম খোঁচাখুচির আগ্রহ আমার একেবারেই নাই।
‘আপনি উদ্দেশ্য লুকাননি, নাম লুকিয়েছেন’ এ দিয়ে আমি পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইনি। ‘উদ্দেশ্য লুকাননি’ এটা আমার মূল্যায়ন। আর ‘নাম লুকিয়েছেন’ এটা নিক-গ্রহণজনিত ফ্যাক্ট। এর মধ্যে আপনি কীভাবে ‘খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রকৃত ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটনের’ চেষ্টা দেখলেন? সমস্যা খোঁজার এই ব্যগ্রতাই বরং দৃষ্টিকটু এবং আমার নিজের কাছে ‘অনুভবতিক্ত’ লেগেছে। আপনার বাকি সব কথার সঙ্গে একমত।
২.
দ্বিতীয়ত, আপনি এ ব্যাপারে আমার আর কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের ঐকতান দেখেছেন। দু’জনের অবস্থান ভিন্ন। এবং আমার আপনার, ডোবার ব্যাং কিংবা জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অবস্থানের প্রতি সমীহ রয়েছে। কারো সঙ্গে কারুকে বৃত্তভুক্ত করা তাদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করে, এটা তাদের স্বতঃষ্ফুর্ত কথা বলার পরিবেশকে সংকুচিত করে। আপনি নিশ্চয় চিহ্নিত করার জন্য এটা করেননি, সদুদ্দেশ্যে একটি প্রবণতা সনাক্ত করতে চেয়েছেন। কিন্তু ওপরে বলেছি যে, এখানে তেমন কোনো সমিল প্রবণতা আমি দেখছি না। আপনার উদ্দেশ্যের সঙ্গে একমত, অ্যাপ্রোচটির সঙ্গে নয়।
৩.
ভার্চুয়াল স্পেসের দ্ব্যর্থবোধক অন্য অর্থ হচ্ছে, এখানে আমাদের সত্তা প্রকাশিত হয় না, ভাষা ও ভঙ্গিমার মাধ্যমে কেবল ভার্চু বা নীতি বা মতটিই প্রকাশিত হয়। এবং ভাষা ও ভঙ্গিমার মধ্যে দিয়ে উঠে আসে পরস্পরের প্রতি পরষ্পরের মনোভাব, গ্রহণ-বর্জনের কাঁটাযুক্ত বা কাঁটাহীন সক্রিয়তা। কেবল ভাষিক বাস্তবতার জন্য এখানে নিরীহ বাক্যও শ্লেষার্থক হয়ে যেতে পারে। এটাই আমার বুঝ। সেকারণে ডোবার ব্যাং-য়ের আমার একটা স্টেটমেন্টকে _আমি দৈনিক পত্রিকায় আমপাঠকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করি_ নিয়ে আমার নাম, আমার রাজনৈতিক সংলগ্নতা, আমার পেশা এমনকি আমার লিখবার প্রকরণ নিয়ে শ্লেষে লিপ্ত হওয়াকে আমি কথোপকথনের গণতান্ত্রিক রীতির লংঘন বলেই মনে করেছি। তার মানে এই নয়, তাঁর সমগ্র বক্তব্য বা তাঁর ভার্চুয়াল সত্তার প্রতি আমার অশ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু নিজে গোপন থেকে, ইলিয়াসের লেখা নিয়ে একটি কথাও না বলে, কেবল লেখার শিরোনামের নীচের নামটি (আমার) নিয়ে লেগে পড়া এধরনের পরিসরের জন্য অস্বাস্থ্যকর মনে হয়েছে। সেই উষ্মাও আমি প্রকাশ করেছি। ব্যক্তি আমার কাছে মুখ্য ছিল না, কিন্তু এই লেখার জন্য আমি ব্যক্তিটি কেন এত মুখ্য হয়ে উঠলাম তার ব্যাখ্যা কোথায় চাইব? লিখব, না এসব অহেতুক এই কুস্তি করে যাব। আপনি যখন ইন্টারভেন করলেনই, তখন এসব বিষয়আশয়ও আসা উচিত ছিল। সেদিকে গেলেন না, গেলেন আপনি যে ‘ডোবার ব্যাং’ নন এবং তাঁর লেখা যে আপনার কাছে মূল্যবান সেটি জানাতে। আপনি বলবার আগে এমন কথা আমার মাথাতেই আসেনি, আসতে পারতোও না। এর ডোবার ব্যাংসহ এখানে যাঁরা লেখেন তাঁদের সবার লেখা ও মতই গুরুত্বপূর্ণ। ভার্চুয়াল স্পেস এবং ইন্টার্যাক্টিভ মিডিয়া কারো সামাজিক পরিচয় বা প্রতিষ্ঠার তেমন গুরুত্ব থাকে না, থাকা উচিতও নয়। তাহলে কেন এহেন ঘোষণা?
এবার আসুন, ডোবার ব্যাং কীভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের ’অভব্য’ অস্ত্র নিয়ে নেমেছেন, তা দেখুন।
আমার এই কথার জবাব তিনি দিয়েছেন এভাবে:
বলেছেন,
এরকম একটা পাল্টাপাল্টির আবহাওয়াতেই আমি বলি:
”আপনি বাংলাদশেরে মিডিয়ার রাজনীতি ধরতে পারনে। সেটা একা একা না বুঝে স্বনামে আর দশজনকে জানান। ডোবার ব্যাং হয়ে আর কতকাল কাদা ঘাটবেন।”
কাদা ঘাটার প্রসঙ্গ আমার আনা উচিত হয়নি। কিন্তু তর্কটাকে কাদা ছোঁড়াছুড়ির বেশি মনেও হয়নি। নিজে আড়ালে থাকার পূর্ণ সুবিধা নিয়ে প্রতিপরে প্রকাশ্য অবস্থানকে ক্রমাগত হামলা করে যাওয়া অন্যায় ও অনৈতিক। খুব ভাল হতো কি, আমি নিজেও একটা নিক খুলে আরামসে উত্তর দিয়ে যাওয়ার সুবিধা নেওয়া? এই বিভ্রাট উপস্থিত না হলে চমৎকার আলোচনা এগুচ্ছিল, আরো ঘন কথাবার্তাও আসতে পারতো। এই যদি হয়, ইন্টারাক্টিভিটির সুফল, তবে তাতে আমি ভীত। লিখায় বিতর্ক হবে, রক্তারক্তি নয়, আর লেখার জন্য যত্রতত্র আত্মপক্ষ সমর্থনের ডান্ডা নিয়ে হাজির হওয়াও আমার অভিরুচি নয়। এর থেকে মানে মানে মাঠত্যাগ করাই ভাল।
পুনশ্চ: এই লেখায় ঢুকলে আপনার এবং ডোবার ব্যাং-এর মন্তব্য আগে চোখে পড়ে, তারপরে পূর্ববর্তী মন্তব্যে ক্লিক করলে পুরো মন্তব্যের ধারাটা আসে কিন্তু এই দুটি আর দেখা যায় না। বিষয়টা কী?
রায়হান রশিদ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৪:২৩ অপরাহ্ণ)
উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। আপনি কি বলতে চেয়েছেন বুঝতে পারছি, আর আমি কি বলতে চেয়েছি তাও হয়তো আপনি বুঝেছেন। বিষয়টি উত্থাপন যদি আপনার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়ে থাকে তাহলে এই বেলা ক্ষমা চেয়ে নিয়ে মূল বিষয়ে ফিরে যাওয়াটাই prefer করবো।
আপনার এই বক্তব্যের সাথে অংশত দ্বিমত পোষণ করতে হচ্ছে। কারণ “এখতিয়ার” শব্দটি এবং সেটা যেভাবে ব্যবহৃত হল, তাতে আপত্তি আছে। এ ধরণের “এখতিয়ার” নির্ধারণ করে দেয়ার চেষ্টাই বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলো করছে, যা আগেও উল্লেখ করেছি। যাকগে। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, সম্ভবত পুরোপুরি ভিন্ন দু’টো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে আমরা বিষয়টি দেখছি। এখানে নিরবতাই হয়তো মনান্তর এড়ানোর শ্রেয়তর পথ।
আপনি লিখেছেন:
একেবারে ‘মানে মানে মাঠ ত্যাগ’ করার মতো ‘রক্তারক্তি’ পরিস্থিতি কখন তৈরী হলো তাই ঠিক বুঝছি না। এ তো মহা মুশকিল দেখছি!
মন্তব্যগুলো কয়েক পাতায় ভাগ হয়ে প্রদর্শিত হওয়াতে এমনটা হয়েছে সম্ভবত। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মন্তব্যের পর ‘মন্তব্যের-পৃষ্ঠা’ পরিবর্তন হয়ে যায়। এক সাথে অনেক মন্তব্য এক পাতায় থাকলে সে পাতা স্বাভাবিকভাবেই খুলতে অনেক বেশী সময় নেয়। সেটা নিরোধেই এই ব্যবস্থা।
ভাল থাকুন।
রায়হান রশিদ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৬:২৮ অপরাহ্ণ)
সংযোজন:
@ ফারুক ওয়াসিফ
আলোচনাগুলো আবারও উপর থেকে পড়লাম। আপনার এই বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত:
একটু অন্যভাবে এবার দেখার চেষ্টা করা যাক। এটা কিন্তু ব্লগের পুরোনো সমস্যাগুলোর একটি। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে (যখন ব্যাখ্যা চাইবার প্রকৃত মানুষটিকেই পাওয়া যায় না) আমাদের সবাইকেই কম বেশী পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কি সেটা আমার অন্তত জানা নেই; বাকিদের মতামতে কোন উপায় নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াগুলোই কন্টকাকীর্ণ, কারণ, সমস্যার গহ্বরটি হা করে থাকে সর্বক্ষণ স্রেফ পা বাড়ানো দুরত্বেই, আবার কিছু না বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাও মেনে নেয়া কঠিন। তার ওপর রয়েছে চেনা অচেনার সংকট। যাদের লেখা নিয়মিত পড়ি, তাদের সাথে ইন্টারেকশনের মাধ্যমে মানুষগুলো সম্বন্ধে এক ধরণের ধারণা জন্মায়, ভরসা জন্মায়, সেই সাথে কিছুটা হয়তো দাবীও জন্মায়। এই দাবীবোধগুলো কাজ করে প্রিয় অপ্রিয় কথাগুলো চেনাজনদের বলবার বেলায়। অচেনা কিংবা অতিথি মন্তব্যকারীদের ক্ষেত্রে এই ডাইনামিক্স, আমরা যতোই চাই না কেন, সেভাবে কাজ করে না। সেটাই হয়তো স্বাভাবিক, যে কারণে অতিথি মন্তব্যকারীরা অনেক সময়ই হয়তো বুঝতে পারেন না একটি প্লাটফর্মের সবার ইন্টারেকশনে গড়ে ওঠা চর্চাগুলো। আপনি তো জানেনই, এমন প্লাটফর্মও আছে যেখানে এক ধরণের এক্সক্লুসিভ সংস্কৃতির চর্চা হয়। আমরা নিশ্চয়ই তেমন হতে চাই না। আরও ইনক্লুসিভ হতে চাওয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই গর্হিত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। আর সে চেষ্টাটা হয়তো আমাদের সবারই নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু একটু করে করা উচিত, সে জন্যই ‘ডোবার ব্যাং’ নিয়ে আমার মন্তব্য, এবং নিতান্তই সেটা ব্যক্তিগত মতামত। মানা না মানার তো কোন বাধ্যবাধকতা নেই কারও। আশা করি অবস্থানটুকু বোঝাতে পেরেছি।
অহেতুক ঝগড়া বাদ দিয়ে আশা করি এবার আমরা মূল প্রসঙ্গে ফিরতে পারবো।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, আপনি রায়হান রশীদ, হঠাৎ এধরনের আচরণ কেন করছেন? আমার এখানকার লেখাটি পড়লে যে কারও মনে হবে, আমি নিতান্তই কৌতূহলবশত ডোবার ব্যাঙ-এর পরিচয় জানতে চেয়েছি। আর আমাকে ফারুক ওয়াসিফের সাথে মেলানোর চেষ্টা কেন করা হচ্ছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। লিটল ম্যাগ. বিষয়ে আমি বরং ডোবার ব্যাঙ-এর সাথে সহমত প্রকাশ করে কিছু কথাও এখানে বলেছি।
আমি যদ্দূর জানি, আপনি মুক্তাঙ্গন ব্লগ-এর ব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন মানুষ। এখানে বিভিন্ন মত ও পথের লোকজন তাদের মতামত রাখছেন। তাতে একধরনের সমন্বয়কের কাজ আপনি করছেন। কিন্তু আপনার হঠাৎ এমন ধৈর্যচ্যুতির কারণ কি? আবার আপনি যে ডোবার ব্যাঙ নন তাও স্মরণ করিয়ে দিলেন! ডোবার ব্যাঙ বিষয়ে আপনার এধরনের ক্রিয়াকলাপ থেকে কিছু ভাবনার কবলে পড়তে বাধ্য হচ্ছি আমি-
১. আপনার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে- ঠাকুর ঘরে কেরে/আমি কলা খাই না।
২. আপনাদের কর্তৃত্বাধীন ব্লগে হয়ত আমরা এই দুজন আপনাদের মেজাজ-ভাবনা-ফিলসফির সাথে খাপ খাওয়াতে পারছি না। যারফলে একেবারে অহেতুক আমাদের আচরণকে ফ্যাসিবাদী বলতেও দ্বিধা করছেন না। এখানেও আবার ফারুক ওয়াসিফকে মেলাবেন না, কারণ এটি নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মত।
৩. আপনি কি এই ব্লগের কালচারাল লিডারশীপ হারানোর ভয়ে আছেন? আপনি হয়ত ভাবছেন, সবার পোস্ট বা মন্তব্যে তো ব্লগ সমানভাবে সরব হয় না!
এসব আমি অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে বাধ্য হচ্ছি- কারণ আপনি হঠাৎ এখানে নাজেল হয়ে একটা সুস্থ-স্বাভাবিক প্রবণতাকে ফ্যাসিবাদী আচরণ বলছেন!
আপনি, রায়হান রশীদ, আপনাকে একান্তভাবে অনুরোধ করব, ঠাণ্ডা মাথায় আপনি আপনার বক্তব্য নিয়ে ভাবুন এবং অহেতুক এই ধরনের ফ্যাসিবাদী-অভিধান রচনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৬:২১ অপরাহ্ণ)
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ভাই, বিষয়টা মনে হয় এত গুরুতর নয়। আশা করছি, এর ইতি এখানেই ঘটবে।
রায়হান রশিদ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৭:২০ অপরাহ্ণ)
@ কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর,
ভাইরে, এতো ভেবে ‘ডোবার ব্যাং’ নিয়ে মন্তব্য করিনি। কিন্তু এভাবেও (!!) যে ভাবা যায়, তা আপনার মন্তব্য পড়ে প্রথম জানলাম! তাতে আপনার চিন্তা পদ্ধতি সম্বন্ধে অন্তত কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল।
আমার অবস্থানটুকু উপরেই যথাসাধ্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। দয়া করে পড়ে নিন। আশা করি আমরা মূল আলোচনায় ফিরতে পারবো এবার।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৫৭ অপরাহ্ণ)
আপনার উপরের মন্তব্যহেতু আমার ব্যক্তিত্ব এবং আমার মন্তব্য (১৬.২) সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। প্রথম কথা হচ্ছে, আমার উপর কেউ অন্যায় মন্তব্য করলে করলে তা আমার একেবারেই সহ্য হয় না। এবং তাতে আমি যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকি তা বরাবরই বেশ কড়া হয়ে যায়। যার জন্য পরবর্তী সময়ে আমি হয়ত মানসিক অস্বস্তিতেও পড়ে যাই।
যাই হোক, এখানে আরও একটি বিষয় ক্লিয়ার করা দরকার। আমার মন্তব্যটি করলাম ৫.৫০ মিনিটে আর আপনার মন্তব্য (১৬.১.১) করা হলো ৫.২৮ মিনিটে। তার মানে এটি পাঠ করার পরও আমি (১৬.২) এর মন্তব্যটি করলাম! বিষয়টি কিন্তু তা নয়। কারণ আমার মন্তব্য লেখার সময়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। এবং ঘণ্টাখানেক পর আবারও আমার মন্তব্যটি কমপ্লিট করি। তারও পর আপনার এবং ফারুক ওয়াসিফের নিচের লেখাটি (১৮) পাঠ করি।
যাই হোক, আমরা অতঃপর মূল লেখায় ফেরার অপেক্ষা করতে পারি।
ডোবারব্যাং - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
লেখক বলেছেন,
লাইনটা খেয়াল করুন, পত্রিকায় ‘লেখা’ নিয়ে বলা হয়নি। বলা হয়েছে পত্রিকায় লিখে ‘আমপাঠকের সাথে জনসংযোগ’ নিয়ে।
লেখক বলেছেন,
গণস্বাস্থ্য কিম্বা সে সময়ের আরো কয়েকটা এনজিও তো (তাদের কাগজপত্রে) এসব কথা বলেই শুরু করেছিলো। দাঁড়িয়েছেও। তাতে কি লাভ হয়েছে? ইদানিং বাজারে আসা ‘লোকজ ইন্সটিটিউট’ কি ‘বিনির্মান আন্দোলন’ টাইপের এনজিওগুলোর কাগজপত্রেও তো এই কিসিমের কথাবার্তা লেখা। আপনার পরামর্শমত তিন দশক আগের গণস্বাস্থ্য কিসিমের কিম্বা হাল আমলের লোকজ কিসিমের এনজিওগুলোকে কি আমরা মিত্র/অক্ষতিকর/‘দেশজ প্রতিষ্ঠান’ ভাববো??
লেখক বলেছেন,
অবশ্যই একমত। তবে সেই ‘বড়’ নিশ্চয়ই শাসকের ‘বড়’টা নয়!! ‘বড়’র প্রয়োজনীয়তা আছে এই বাস্তবতা শাসকের ‘বড়’তে বিলীন হয়ে যাওয়াকে যায়েজ করে না।
লেখক বলেছেন,
আমি কোথাও বলিনি আপনার চাকরি নিয়ে আমার কোনো অপছন্দ আছে। আপনি যদি সেটা ভেবে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আপনার বোঝার ভুল। তবে ব্যাপারটা আপনার কেনো অপছন্দের সেটা তো বুঝলাম না। আপনিই তো এই লেখাতে ‘যেখানে যতটা পারা যায় ব্যবহার করা দরকার’ সূত্র দিলেন।
অকৃত্তিম শুভেচ্ছা জানবেন।
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৩:১৩ অপরাহ্ণ)
আমার যা বলার বলেছি, পত্রিকায় সংবাদ ছাপানো বা প্রেসরিলিজো একধরনের সংযোগ, এতে আপত্তির কী থাকতে পারে আমি বুঝছি না। যাহোক, লেখা ফেলে মন্তব্য নিয়ে আমি আর এগতে চাই না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১২ (১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
আজ তেভাগা দিবস, আগে খেয়াল করিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মৃত্যুদিনের সাথে তেভাগা দিবসের এই সমাপতন।
Pingback: অরণ্য থেকে অন্তর্জালে, রাঙা মাটির পথ থেকে রাজপথে | আলুটিলা ছাড়িয়ে
Pingback: অরণ্য থেকে অন্তর্জালে, রাঙা মাটির পথ থেকে রাজপথে: আদিম অন্যতার জমিন ঘুরে দেখা | ।।জুম্মো ব্লগ।।
মাসুদ করিম - ৫ জানুয়ারি ২০১৬ (১০:৪০ পূর্বাহ্ণ)