বুড়ি পৃথিবী কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা![...]

খবরটি পুরনো – রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন মণীন্দ্র গুপ্ত, সময়মত সুপারিশকৃত লিন্কে দিতে পারিনি, আজ ভেবেছিলাম লিন্কটা তুলে দেব – কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও লিন্কটা আর খুঁজে পেলাম না। মণীন্দ্র গুপ্ত সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না, সত্যি কথা বলতে এই পুরস্কারের সূত্রে এবারই একবির নাম আমি প্রথম শুনেছি। নিজের পড়ার ঘরে একটা খোঁজ লাগালাম, বিচ্ছিন্নভাবে তার দুটি আশ্চর্য কবিতা খুঁজে পেয়েই, কবিতা দুটি এখানে তুলে দিলাম। অশ্রু পাখির মরণ যখন ঘনিয়ে আসে তখন তার ডাকের মধ্যেও ব্যথা ফুটে ওঠে। মাঠের কাকতড়ুয়ারাও তা বোঝে, সারা রাত তাদের হাঁড়িমাথায় শিশির পড়ে পড়ে ভোরবেলায় চোখ ভিজে উঠেছে। হেমন্তের ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে তারা দেখে – কৃষক আসছে, গোরু আসছে। ওদের চুনে আঁকা চোখ কি শেষ পর্যন্ত আমার জ্যান্ত চোখের চেয়েও অনুভূতিপ্রবণ হল! আমার কেউ আসেও না, যায়ও না। রাত্রে গোরের থেকে যারা ওঠে তাদের কান্না কে শুনেছে! যাবার আগে, আমার শেষ সান্ধ্যভোজের শক্ত পাঁউরুটিটুকু অন্তত যাতে ভেজে, আমি সেইটুকু চোখের জলের অপেক্ষায় আছি। ছাই ছেলেবেলায় পায়রার গলায় ছুরি বসিয়ে লিচুগাছের ডাল ভেঙে দুই কাঁদি তালশাঁস খেয়ে বাগান লণ্ডভণ্ড আর পুকুরের জল ঘোলা করে দিনের শেষে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন ঠাকুমাবুড়ি মাকে শাসাত : খবরদার বউমা, ওকে আজ ভাত দেবে না উনুনের ছাই বেড়ে দেবে। ঠাকুমা কবে মরে গেছে। আমিও মরমর। কিন্তু এতকাল ধরে আমরা বাগান লণ্ডভণ্ড করেছি শয়তানের পিছনে কাঠি দিয়েছি। এখন মাটির নিচে জল পাঁচ মিটার নেমে গেছে। মেঘ আসে কিন্তু লাফায় না, গর্জায় না, মরা মাছের মতো নীরবে ভেসে যায়। বেশি টানাহ্যাঁচড়া করলে মাটি থেকে জলের বদলে আর্সেনিক ওঠে। গাছের শিকড় নুন মাখানো জোঁকের মতো সিটিয়ে গেছে – নিচে যেতে পারে না। পুত্রবধূ আর নাতবউয়েরা পাথরের ফাটলবাসী গিরগিটিদের মতো ধুলোমাখা। খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা! কতদিন ঘরে এক দানা চাল নেই – বউমা, ওদের ভাতের বদলে ছাই বেড়ে দাও, উনুন থেকে গরম ছাই তুলে দাও। মণীন্দ্র গুপ্ত তার কবিতার জগৎ নিয়ে বলছেন আমার একটি নিজের জগৎ আছে। এই বাস্তব জগতের অনুরূপ হয়েও সেজগৎ বাস্তবতা ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে যায়।…

ত্রিশ-চল্লিশের দশকে ভাষা নিয়ে এক ঝড় উঠেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। শ্রেণি বিপ্লব হয়েছে, ক্ষমতায়ন ঘটেছে সর্বহারা শ্রেণির, চলছে রাষ্ট্র ও সমাজের সবকিছু ঢেলে সাজানোর কাজ। এরকম কর্মযজ্ঞের মধ্যে একদল ভাষাবিদ তুলে ধরলেন শ্রেণিভাষার ধারণা।...

ত্রিশ-চল্লিশের দশকে ভাষা নিয়ে এক ঝড় উঠেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। শ্রেণি বিপ্লব হয়েছে, ক্ষমতায়ন ঘটেছে সর্বহারা শ্রেণির, চলছে রাষ্ট্র ও সমাজের সবকিছু ঢেলে সাজানোর কাজ। এরকম কর্মযজ্ঞের মধ্যে একদল ভাষাবিদ তুলে ধরলেন শ্রেণিভাষার ধারণা। ভাষাকেও হয়ে উঠতে হবে শ্রেণির ভাষা,- এককথায় এটিই ছিল সে ঝড়ের মূল বার্তা। ঝড়ের সেই ঝাপটা স্পর্শ করে জোসেফ স্ট্যালিনকেও, যিনি ছিলেন তখন সেই প্রথম ও নতুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির নির্মাণযজ্ঞের প্রাণকেন্দ্রে। ভাষা সমাজের কোনো কাঠামোভুক্ত কি না, শ্রেণিভাষা হতে পারে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে ভাষাবিতর্কের এক পর্যায়ে স্ট্যালিনও অংশ নেন। ‘প্রাভদা’ পত্রিকায় ১৯৫০ সালে বিভিন্ন প্রশ্ন ও চিঠির উত্তরে জোসেফ স্ট্যালিন যা লিখেছিলেন, সেগুলো নিয়ে পরে ১৯৫২ সালে, বাংলা ভাষা আন্দোলনের বছরে, প্রকাশ পায় ‘ মার্কসিজম অ্যান্ড প্রবলেমস অব লিঙ্গুয়িস্টিক্‌স’ নামের গ্রন্থটি। ইংরেজি ভাষার পাঠকদের কাছে বইটি পৌঁছায় আরও দু বছর পর - ১৯৫৪ সালে। কালপর্বের হিসেবে সোভিয়েত রাশিয়ায় ভাষাবিতর্কের সময় বাংলাদেশেও (তৎকালীন পূর্ববঙ্গে) চলছে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। স্ট্যালিন এই রক্তঝরা আন্দোলন সম্পর্কে কী ভেবেছেন, জানা নেই আমাদের। তবে ভারতের অবমুক্ত হওয়া দুটি

কূটনৈতিক নথিপত্র থেকে এটুকু বোঝা যায়, সোভিয়েত রাশিয়ার ওই ভাষাবিতর্কের সময় স্ট্যালিন চেষ্টা করেছেন ভারত ও পাকিস্তানের ভাষাগুলি সম্পর্কে ধারণা পাবার। সোভিয়েত রাশিয়ার ওই ভাষাবিতর্ক তুলে ধরেছে এমন সব ধারণা ও প্রসঙ্গ, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষাচিন্তায় এখনও অর্থবহ। শ্রেণি-অঞ্চল-অর্থনীতি-প্রযুক্তি-সমাজ ইত্যাদির বিভিন্ন পরিবর্তনের সূত্রে ভাষায় নতুন নতুন যে-সব উপাদান সঞ্চারিত হয়, সেগুলি নিয়ে প্রায়ই কৃত্রিম বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, খণ্ডিত ভাবনা থেকে সেগুলিকে জনগোষ্ঠী ও পাঠকশ্রেণির ওপর চাপিয়ে দিয়ে আসলে ভাষার প্রাণপ্রবাহকেই শ্লথ ও রুদ্ধ করে দেয়া হয়। স্ট্যালিনের ওইসব লেখাগুলি প্রকাশের পর প্রায় ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাই সেগুলি প্রকাশের প্রেক্ষাপট, বিষয়বস্তু ও উপসংহার এখনও অর্থবহ। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাষাবিতর্ক স্ট্যালিনের নজরে আনেন জর্জিয়ান সেন্ট্রাল কমিটির প্রধান সম্পাদক ক্যানডিড শার্কভিয়ানী (Kandid Charkviani)। যার মাধ্যমে এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল, সেই নিকোলাই ইয়াকভলেভিচ মার (১৮৬৪-১৯৩৪) অবশ্য অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। কিন্তৃ ১৯২৪ সাল থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত নিকোলাই ইয়াকভলেভিচ মার (Nikolay Yakovlevich Marr) কাজ করে গেছেন ‘মার্কসীয় ভাষাবিজ্ঞানের’ কাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে। নিকোলাইয়ের ‘মার্কসীয় ভাষাবিজ্ঞান’ নিয়ে আপত্তি তোলায় ভাষাবিদদের অনেককেই হয়রানির…

ন্যুয়কের্র ফিফ্‌থ্‌ অ্যাভিন্যুর গা ঘেঁষে একটি বেশ উঁচুমানের দর্জির দোকানের মালিক ছিলেন আমার বাবা। [...]

[হেনরি মিলারের 'ভাবনাগুচ্ছ' : ১] আমার বাবা ন্যুয়কের্র ফিফ্‌থ্‌ অ্যাভিন্যুর গা ঘেঁষে একটি বেশ উঁচুমানের দর্জির দোকানের মালিক ছিলেন আমার বাবা। আমার মায়ের ইচ্ছেতে বাবার ওপর গোয়েন্দাগিরি করাই আমার সেই দোকানে কাজ করতে যাবার অন্যতম কারণ ছিল। আমার বাবা ছিলেন ভয়ংকর মদ্যপায়ী, যাকে বলে একেবারে অ্যালকহলিক। আমার বাবা যখন মদের আসরে যেতেন তখন আমাকেও তঁর সঙ্গে যেতে হত কেননা তিনি এতটা মাতাল হয়ে যেতেন যে বাড়ি ফেরার পথ চিনতে পারতেন না। দর্জির দোকানটা ছিল একটা ক্লাবঘরের মত যেখানে ব্যবসার কাজে কাপড়বিক্রেতারা আসতেন এবং কাজশেষে আমার বাবাকে মদ খাওয়াতে নিয়ে যেতেন। একদিন আমি ও বাবা যখন ব্রডওয়ের একটা ভদ্রস্থ পানশালায় যাই তখন এক খচ্চর গোছের ফরাসি বেয়ারা আমার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে "তুই একটি আস্ত মাতাল বদমাশ ছাড়া আর কিছু না।" সে এমন ভঙ্গিতে কথাটা বলে যে আমার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে তার গলা চেপে ধরি। আমি চাইছিলাম সে যা বলেছে সেটা যেন ফিরিয়ে নেয়। পানশালার লোকজন আমাকে টেনে সরিয়ে দেয় কেননা ততক্ষণে তার চোখ বেরিয়ে আসছিল প্রায়। আমি খুবই অপমানিত বোধ করছিলাম কেননা সে যা বলেছে সেটা আদতে সত্য। কিন্তু আমি এটা মানতে প্রস্তুত ছিলাম না যে আমার বাবা একজন মদ্যপ। এর পাশাপাশি, বইয়ের প্রতি, বিদ্যার প্রতি তাঁর অনাগ্রহও আমাকে খুব পীড়িত করতো। তিনি খবরের কাগজ ছাড়া আর কিছুই পড়েন নি কোনদিন। বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের কোন আকর্ষণ ছিলনা তার কাছে। হয়তবা আমার বাবামার অনাগ্রহের কারণেই আমি সেই জগতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। এটি আমাকে তাঁদের থেকে আলাদা ও দূরবর্তী করে তুলেছিল। আমি তাঁদের মত হতে চাই নি কেননা একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তাঁরা আসলে মূর্খ। কিন্তু আমার বাবা সবসময়ই আমার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেছেন। আমার মায়ের বিপরীতে তিনি ছিলেন দয়ালু ও সহিষ্ণু। তিনি মনের দিক থেকে একজন ভালো মানুষ ছিলেন। আমি কেন জানি সবসময় তাঁর জন্য দুঃখ অনুভব করেছি। আমার মায়ের সঙ্গে বাস করা এত কঠিন ছিল যে আমি জানি না কীভাবে তিনি তাঁর সঙ্গে থাকতে পেরেছিলেন কিংবা কেন তিনি তাকে ছেড়েছুড়ে একেবারে চলে যান নি। আমার মা এমন একজন মানুষ…

‘ট্রপিক অভ ক্যান্সার’, ‘ট্রপিক অভ ক্যাপ্রিকর্ন’, ‘সেক্সাস’, ‘প্লেক্সাস’, ‘নেক্সাস’ ইত্যাদি বহুল আলোচিত ও একই সঙ্গে বহুবিতর্কিত গ্রন্থের রচয়িতা হেনরি মিলার [...]

ট্রপিক অভ ক্যান্সার, ট্রপিক অভ ক্যাপ্রিকর্ন, সেক্সাস, প্লেক্সাস, নেক্সাস ইত্যাদি বহুল আলোচিত ও একই সঙ্গে বহুবিতর্কিত গ্রন্থের রচয়িতা হেনরি মিলারের পরিচয় ওয়াকিবহাল পাঠকের কাছে অজ্ঞাত নয়। উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজৈবনিক রচনাসহ তাঁর অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে রিফ্লেকশন্‌স্‌ বলে একখানি বইও বাজারে চালু আছে তাঁর নামে। যদিও এই বইটি ঠিক তাঁর রচনা নয়। এটি প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর ঠিক এক বছর বাদে ১৯৮১ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার কাপ্রা প্রেস থেকে জনৈকা টুইঙ্কা থিবো কর্তৃক সম্পদিত হয়ে। থিবো লিখিত মুখবন্ধটি থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি মিলারের জীবনের একেবারে অন্তিম পর্বে তাঁর সঙ্গে চার চারটি বছর কাটান একই ছাদের নিচে, তাঁর ভাষায়, মিলারের পাচক ও দেখভালকারী হিসাবে। এই চার বছর মিলারকে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয় তাঁর। তিনি আবিষ্কার করেন মিলার অসাধারণ বাকপটু, সুরসিক ও চৌকস একজন মানুষ, জীবন ও জগৎকে দেখার একেবারে নিজস্ব একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যার। সেই সঙ্গে রয়েছে তাঁর পর্যবেক্ষণসমূহ প্রকাশের জন্য একটি অননুকরণীয়, বুদ্ধিদীপ্ত ও চিত্তাকর্ষক ভাষাভঙ্গিও। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মিলারের কাছে আসতেন তার কোন না কোন বন্ধু কিংবা অনুরাগী। এর বাইরে বেশ কজন লেখক শিল্পীও আসতেন নিয়মিত। তাদের সঙ্গে বসে দীর্ঘসময় ধরে পানাহার আর গল্পগুজবে কাটানো সেই বাঙ্ময় সন্ধ্যাগুলোর ঘনিষ্ঠ সাক্ষী থিবো। মিলার তখন তাদের সঙ্গে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতেন সেগুলো তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে শুনতেন এবং পরে তা যথাসম্ভব মিলারীয় ভাষা ও ভঙ্গিতে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। এক পর্যায়ে বেশ কিছু লেখা জমে গেলে তিনি সেগুলো মিলারকে দেখিয়ে চমকে দেন। মিলার সেগুলো পড়ে খুবই খুশি হন এবং থিবোকে বলেন যে এটি তার জন্য অনেক বড় এক প্রাপ্তি। তিনি এমনকি থিবোকে ভাবীকালের কাছে তাঁর শেষ উচ্চারণসমূহ তুলে-ধরা ব্যক্তিগত লিপিকর বলেও আখ্যা দেন। লেখাগুলো তিনি কিছটা ঘষামাজা করে দেন তার স্বভাবসুলভ লিখনশৈলীতে এবং বলেন, `এগুলো সংকলিত হলে একটি ভালো বই হতে পারে'। তো সেই লেখাগুলোকে একত্রিত করেই থিবো তার মৃত্যুর পরের বছর রিফ্লেকশন্‌স্ নামে প্রকাশ করেন যেখানে তিনি লেখকের নাম হিসাবে মিলারের নামই ব্যবহার করেন এবং নিজেকে এর সম্পাদক হিসাবে উপস্থাপিত করেন। বইটির সুলিখিত ভূমিকায় তিনি মিলারকে তাঁর শিক্ষক, গুরু, পালকপিতা ও বন্ধু বলে সম্বোধন করেন। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত মোট রচনার সংখ্যা…

আমার মতন পাঠকের আদৌ সাহিত্যনির্ভর সিনেমা দেখা উচিত কিনা, এই নিয়ে আমার দ্বিধা আছে [..]

আমার মতন পাঠকের আদৌ সাহিত্যনির্ভর সিনেমা দেখা উচিত কিনা, এই নিয়ে আমার দ্বিধা আছে, যার মনে ‘আরন্যক’ এর চাঁদ ডোবা অন্ধকারের নিঁখুত ছবি আছে, যার চোখে মানিকের ‘শ্যামা’র (জননী- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়)কিংবা ‘গ্যাটস্বী’র (দ্য গ্রেট গ্যাটস্বী- স্কট ফিটজেরাল্ড) মুখ একেবারে ভাসে, সিনেমার স্কারলেট ও’হারার (গন উইথ দ্য উইন্ড- মার্গারেট মিচেল) জামার লেস এর রঙ বইয়ের সাথে মিললে যে খুশি হয়ে ওঠে, সেইসবের সাথে না মিললে যে বিষনয়নে অমিলগুলি দ্যাখে। অতএব, সাধারণতঃ আমি যে বইটা পড়েছি, তার চিত্ররূপ দেখতে বসিনা, আমার বড় কোঁদল শুরু হয় ডিরেক্টরের সাথে। সে আমি দেখবোনা দেখবোনা করে বসে বসে ‘সমাপ্তি’ দেখে ফেললাম। রবিঠাকুরের ছোটগল্প, সত্যজিত রায়ের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি। ‘সমাপ্তি’ আমার খুব প্রিয় ছোটগল্প। শেষদৃশ্যে যে আসলে মৃণ্ময়ীই অন্ধকার ঘরে অপূর্বকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়- এটা বুঝে অল্পবয়েসে বেশ রোমাঞ্চ হয়েছিল আমার মনে আছে।ঘোর শ্রাবণমাসে গল্পের শুরু।আমার মনে আছে এই যূগল লুকিয়ে মৃণ্ময়ীর বাপের কর্মক্ষেত্রে যাবার সময় নদীর একটা বর্ণনা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ- “কী মুক্তি, কী আনন্দ। দুইধারে কত গ্রাম, বাজার, শস্যক্ষেত্র, বন”। আর তার ভেতর দিয়ে শিশুর মত উৎসাহী স্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব তিলের নৌকাকে তিসির নৌকা, পাঁচবেড়েকে রায়নগর আর মুন্সেফের আদালতকে জমিদারি কাছারি হিসেবে চিনিয়ে দিচ্ছে। সিনেমায় সেই নদীপথে যাত্রা নাই, সেই কুশীগঞ্জের বাপের কাছে যাওয়া নাই, সেই দু’দিনের খেলাঘর না থাকলে স্বামী মৃন্ময়ীর কাছে সহনীয় হয়ে ওঠে কী করে! প্রথমেই আমি হোঁচট খাই, অপূর্বর নাম অমূল্য কেন? যে অপূর্ব মৃন্ময়ীকে বিয়ের জন্যে পছন্দ করেছিল বলে গাঁয়ের লোকে তার নাম দিয়েছিল ‘অপূর্ব-পছন্দ’ তার অমূল্য হয়ে লাভ কী? (‘নষ্টনীড়’এর চারুবালা যখন সত্যজিতের হাতে চারুলতা হয়েছিল, নাহয় তার একখানা ওজর ছিল-যে, দু’খানা নামের রূপকল্প আলাদা।) সমাপ্তির পটভূমি লিখতে গিয়ে যদ্দুর মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথ একটি কোঁকড়াচুলের সবল-পরিপুষ্ট মেয়ের কথা লিখেছেন- ঘাটের রমনীরা নিত্যিদিন তার দস্যিপনার গল্প করতো- একদিন সকলকে আশংকা আর মঙ্গলভাবনায় ভাসিয়ে মেয়েটি শ্বশুরবাড়ি চলে যায়- ঘাটের মেয়েরা ভাবতে বসে- চিরস্বাধীনা সেই মেয়েটি সংসারের পীড়া সইতে পারবে তো! যে দেশে ব্যাধ নাই, বিপদ নাই, সেদেশের সরল হরিণশিশুর জায়গায় অপর্ণা দাশগুপ্তকে অনেক বেশী চর্চ্চিত লাগে, অনেক বেশী ফিল্টার্ড। ছবিখানা সত্যজিতের বলেই হয়তো গভীর মনোযোগিতার ডিটেইল বারবার আমাদের চোখ কেড়ে নেয়,…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.