জহির রায়হান তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্যকে গ্রন্থিত করেছিলেন মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে। জীবন ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিভ্রমণের স্থান আর শিল্প ছিল সেই পরিভ্রমণ উদ্ভাসনের দীর্ঘ পথ। জীবন ও শিল্পের পরিভ্রমণ ও উদ্ভাসন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল আরও এক দীর্ঘ পথের বাকে, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্প অর্থময় হতে পারে না। তিনি তাই স্বাধীকার আন্দোলনের দীর্ঘতর পথ ধরে হাঁটতে থাকেন। তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক ও অভিন্ন হয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। [...]

জহির রায়হান তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্যকে গ্রন্থিত করেছিলেন মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে। জীবন ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিভ্রমণের স্থান আর শিল্প ছিল সেই পরিভ্রমণ উদ্ভাসনের দীর্ঘ পথ। জীবন ও শিল্পের পরিভ্রমণ ও উদ্ভাসন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল আরও এক দীর্ঘ পথের বাকে, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্প অর্থময় হতে পারে না। তিনি তাই স্বাধীকার আন্দোলনের দীর্ঘতর পথ ধরে হাঁটতে থাকেন। তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক ও অভিন্ন হয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। দীর্ঘতর ওই পথ তাঁর জীবনকে হ্রস করে দিয়েছে – কেননা মুক্তির জন্যে মানুষকে মূল্য দিতে হয়। জহিরকেও দিতে হয়েছে, তিনি নিরুদ্দেশে গেছেন, পরে উদ্ঘাটিত হয়েছে তিনি শহীদ হয়েছেন। জীবন তাঁর হারিয়ে গেছে, কিন্তু শিল্প তাঁর এখনও উজ্জল আলো ছড়াচ্ছে; কেননা মুক্তির নিরবধি সংগ্রাম এক পরম শৈল্পিকতা, ওই শৈল্পিকতায় জহির রায়হান এক হয়ে গেছেন, লীন হয়ে আছে তাঁর জীবন ও শিল্প।
প্রায়-উপনিবেশিক এক শাসন যে পূর্ববাংলায় জীবন ও শিল্পের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে রেখেছে জহির রায়হান তা জেনেছিলেন নিজের জীবনের মধ্যে দিয়ে। সিনেমাতে তাঁর প্রথম ফুটপ্রিন্ট ছিল ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ১৯৫৭ সালে ছবিটিতে সহকারী পরিচালকের কাজ করেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিচালক হয়ে ওঠেন, ১৯৬১ সালে নির্মাণ করেন ‘কখনো আসেনি’, ১৯৬২ তে ‘সোনার কাজল’ আর ১৯৬৩তে ‘কাচের দেয়াল’। কিন্তু পরপর তিনটি চলচ্চিত্রই অসফল হয় বাণিজ্যের দৌড়প্রতিযোগিতায়। সমাজের অবকাঠামো তার কাঠামোর উপযোগী মনস্তত্ব তৈরি করে চলে, মারাত্মক সেই মনস্তত্ব ষাটের দশকে তো বটেই, এখনও আমাদের প্রতিনিয়ত হিতোপদেশ দেয় – জীবন এত কষ্টের, সিনেমা, নাটক আর গল্প উপন্যাস যদি আমাদের একটু হাসাতেই না পারে, তা হলে কি দরকার ওসবের? অতএব জহিরকে একপা এগুনোর জন্যে দু’পা পেছাতে হলো। মুখ ফেরাতে হলো বাণিজ্যিক ছবির দিকে। ভাষা আন্দোলন গভীরতর ছাপ ফেলেছিল তার ওপরে। তিনি তাই পরিকল্পনা করেছিলেন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের একটি রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাণের। ততদিনে বাণিজ্যিক ছবির কল্যাণে তিনি প্রযোজক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সামর্থ্য এলেও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তাঁকে তাই রূপকাশ্রয়ী হয়ে নির্মাণ করতে হলো ‘জীবন থেকে নেয়া’। পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্পের অবনমিত চেহারার সঙ্গে প্রতিনিয়ত এভাবেই মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে।
কিন্তু সেই যে স্পেন দেশের এক প্রবাদ আছে – ‘শৈশবের স্বপ্নকে অবহেলা করো না’ – জহির রায়হান ছিলেন ওই প্রবাদের একনিষ্ঠ সাধক। স্কুলে নিচের ক্লাসে পড়ার সময়েই প্রায়ই বোতাম থাকত না জন্যে একহাতে ঢোলা হাফপ্যান্ট কোমরের সঙ্গে ধরে রেখে ছাত্র ফেডারেশন ও কম্যুনিস্ট পার্টির আত্মগোপনকারী সদস্যদের মধ্যে চিঠিপত্র আর খবর আদানপ্রদানের কাজ করেছেন তিনি, খোলা রাস্তায় বিক্রি করেছেন কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘স্বাধীকার’। বড়ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের প্রতি একান্ত ভালবাসা আর আনুগত্য থেকে জীবনের যে সরল আকাঙ্ক্ষা আর উদ্দেশ্য তিনি শৈশবেই খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটিকে হারাতে দেননি বাণিজ্যের প্রবল দাপটের মধ্যেও। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রকেও তিনি তাই করে তুলতে চেয়েছিলেন সৃষ্টিশীলতার অপর এক প্রান্তর। একাত্তরে তাই জহিরকে দেখি শৈশবের মতোই উঠে দাঁড়াতে। সেই দাঁড়ানোয় কোনও পিছু টান নেই, কোনও আপস নেই। তাঁর ‘স্টপ জেনোসাইড’ তখন হয়ে ওঠে যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিরোধময় বাংলাদেশের বিশ্বস্ত দলিল।

দুই.
আরও অনেক সিনেমা বোদ্ধাও ছিলেন তখন, কিন্তু তাদের কেউই ‘স্টপ জেনোসাইড’-এর মতো ফিল্ম তৈরি করতে পারেননি। পারেননি এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও। জহির রায়হানের পক্ষেই কেবল সম্ভব হয়েছিল ‘স্টপ জেনোসাইড’ তৈরি করা – কেননা তিনি জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক করে নিতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। অর্থসঙ্কট তো অনেক পরের ব্যাপার, ‘স্টপ জেনোসাইড’ নির্মাণের প্রতিবন্ধকতা ছিল পদে পদে। সশস্ত্র দখলদার পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ছিল। ছিল আওয়ামী লীগের মাথামোটা নেতারা। বিভিন্ন সেক্টরে স্যুটিং করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জহির। কোনো কোনো সেক্টরে নিষিদ্ধ করা হয় তাঁকে এবং শেষ পর্যন্ত স্যুটিং করার সুযোগ পান সাত নং সেক্টরে। কিন্তু আরও এক যুদ্ধ অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্যে, সেই যুদ্ধ চিত্রটিকে মুক্তির মুখ দেখানোর যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় এপ্রিল-মে মাসেই ‘স্টপ জেনোসাইড’ নির্মাণের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন দ্য মোশান পিকচার অ্যাসোয়িশেন অব বেঙ্গলের সঙ্গে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাদের রাজি করান তিনি। কিছু আর্থিক অনুদান যোগায় তারা, কিছু আর্থিক অনুদান যোগান ড. এ আর মল্লিক। কিন্তু প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের পর আসে সবচেয়ে বড় বাধা। যতটা না গণহত্যা, তারও বেশি মুক্তিযুদ্ধ ও তার নেতাদের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রই বেশি দরকার ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা তাই এটির সেন্সর অনুমোদন ও প্রদর্শনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগের ইনচার্জ এমএ খায়ের তার স্মৃতি উন্মোচন করেছেন সাংবাদিক আফসার আহমেদের কাছে, ভেতরের ঘটনা ছিল অন্যরকম। আপত্তি তোলার সবচেয়ে প্রধানতম কারণ ছিল প্রামাণ্যচিত্রটিতে বঙ্গবন্ধুর কোনও উপস্থিতি না দেখানো। জহির রায়হানের লক্ষ্য ছিল, বিশ্ববাসীর কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি আদায় করা আর মুজিবনগর সরকারের লক্ষ্য ছিল, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। এমএ খায়ের বলেছেন সাংবাদিক আফসার আহমেদের কাছে, মুক্তিযুদ্ধে যে বঙ্গবন্ধুই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এ ব্যাপারে জহির রায়হানের কোনও সংশয় ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নামে শ্লোগান দিচ্ছেন, শপথ নিচ্ছেন, এসব কিছুই জানা ছিল তাঁর। জানা ছিল, বিদেশিদের কাছেও মুজিব নামটি কত সুপরিচিত। কিন্তু তিনি এ-ও জানতেন, বিশ্বজনমতকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আনতে হলে রাজনৈতিক গতিপ্রবাহ তুলে ধরার চেয়ে গণহত্যার প্রকৃতি ও মর্ম তুলে ধরা অনেক-অনেক বেশি জরুরি। অপ্রাসঙ্গিকভাবে এর মধ্যে নেতৃত্বপ্রসঙ্গ উপস্থাপন করতে তিনি রাজি ছিলেন না। রাজি ছিলেন না কথায় কথায় অপ্রয়োজনে একেকটি চরিত্রের মুখ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বের করে আনতে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনের চক্ষুশূল আরও বেশ কিছু উপাদান ছিল এতে। যেমন, চলচ্চিত্রটির শুরু হয় লেনিনের উদ্ধৃতি দিয়ে, তারপর আমরা দেখি জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের অসহায় পরিণতি, একেবারে শেষে আবার ধ্বনিত হতে শুনি ‘জাগো জাগো সর্বহারা’ সঙ্গীতের সুর। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে এ চলচ্চিত্রে, অথচ আওয়ামী লীগের একাংশ চাইছিল ওই সাম্রাজ্যবাদী অক্ষশক্তির ইচ্ছানুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে ক্ষান্তি দিতে, আরেকটি অংশ চাইছিল ভবিষ্যতের শাসনের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার কোনও সমালোচনাই না করতে।
এরকম সব উদ্দেশ্যপ্রবণ জটিল মনস্তত্বসমূহের পক্ষে সম্ভব ছিল না জহিরের শৈল্পিকতা অনুভব করা। এদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি শক্ত করে বাধা ছিল প্রতিক্রিয়াশীলতার খুঁটিতেই। এদিকে জহিরের নিজের রাজনৈতিক অবস্থানটিও ছিল জটিল। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধ ছিল তার কাছে রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সে বাস্তবতা তিনিও মেনেও নিয়েছিলেন। কিন্তু মেনে নেয়ার পরও সাংঘর্ষিকতা দেখা দিয়েছিল তিনি নিজে মার্কসবাদী মতের মানুষ হওয়াতে। পিকিংপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিতে ভাঙন ধরার পর তিনি আর সরাসরি কোনও দলে নাম না লেখালেও তাঁর সমর্থন ছিল তাদের প্রতিই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পিকিংপন্থী দলগুলির কোনো-কোনোটি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ নিয়েছিল, কোনো-কোনোটি পাকিস্তান ও মুজিবনগর সরকার উভয়ের বিরুদ্ধেই রাজনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল – যদিও আক্রমণের পাল্লাটি ছিল মূলত মুজিবনগর সরকারের বিরুদ্ধেই – মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই। জহির রায়হান রাজনীতির দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে পড়েছিলেন গণঅভ্যুত্থানের সময়- এসময় তিনি মাওসেতুং-এর লেখা পড়েন এবং বিভিন্ন মাওপন্থী দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন, তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতাও করতে শুরু করেন। পিকিংপন্থীদের গণবিরোধী এই ভূমিকা তাই মুক্তিযুদ্ধে নিবেদিত ও একাত্ম জহির রায়হানকে নিঃসঙ্গ করে ফেলে। আবার মস্কোপন্থী কমিউনিস্টদের প্রতিও পিছুটান ছিল তাঁর, কেননা মতবাদিক দিক থেকে খানিকটা দূরত্ব থাকলেও বড়ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার ও জীবনের প্রথম পর্বের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূত্রে মস্কোপন্থী বিভিন্ন নেতা, লেখক ও সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সখ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধ তাই জহির রায়হানের ব্যক্তিগত জীবন ও বোধকেও দেয় নতুন এক মাত্রা। মুক্তির সংগ্রামে নতুন নতুন মিত্র খোঁজেন তিনি এবং ক্ষতবিক্ষত হন মৈত্রীর বোধ ও শর্তসমূহ নির্মাণ করতে গিয়ে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কঠিন সংগ্রামেও জয়ী হতে শুরু করেন তিনি। আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সেন্সর বোর্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল ‘স্টপ জেনোসাইড’কে ছাড়পত্র না দেয়ার জন্যে। এই অনুরোধের ভবিষ্যত নিয়ে এত বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, আওয়ামী লীগের প্রধান সারির এক নেতা ওই সময় নাকি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছবিটি মুক্তি দেয়া হলে তিনি বাংলাদেশ মিশনের সামনে অনশন করবেন।’ পশ্চিমবঙ্গ সেন্সর বোর্ডও প্রথমে ছবিটিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। দিল্লী পর্যন্ত ছুটতে হয় জহির রায়হানকে, শহীদুল্লাহ কায়সারের যে-সব বন্ধু ভারতীয় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্য চান তিনি। এইভাবে ‘স্টপ জেনোসাইড’ ভারতে প্রদর্শনের ছাড়পত্র পেয়েছিল। যদিও তারপরও সম্ভব হয়নি ছবিটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
জহির রায়হানের প্রতি মুজিবনগর সরকারের সবার দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য এক ছিল না। এম এ খায়েরের স্মৃতিচারণ থেকেই জানি আমরা, খুব গোপনে ‘স্টপ জেনোসাইড’-এর প্রথম প্রদর্শনীর সময় উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। ছবি দেখে তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় মন্ত্রিপরিষদ জহির রায়হানকে দিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তাজউদ্দীন এ সময় এমএ খায়েরকে বলেন, জহির রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। জহির রায়হান সানন্দে রাজি হন ওই আহ্বানে। শুধু তাই নয়, মুজিবনগর সরকার তাঁকে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের অর্থ দিলেও তিনি তা দিয়ে নির্মাণ করেন চারটি ছবি। কলকাতায় ‘জীবন থেকে নেয়া’র প্রদর্শনী থেকে যত অর্থ পাওয়া গিয়েছিল, তার সবই তিনি দিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে। এমএ খায়ের জহির রায়হান নির্মিত সেই চারটি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘বার্থ অব আ নেশন’, ‘চিলড্রেন অব বাংলাদেশ’ ও ‘সারেন্ডার’ এই তিনটি ছবির নাম মনে করতে পেরেছেন, কিন্তু আরেকটি ছবির নাম ভুলে গেছেন। ছবি চারটিই মুক্তিযুদ্ধের পর কোলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল, সেগুলির শিল্পমান নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি, প্রশ্ন কেবল একটাই – ছবিগুলি হারিয়ে গেল কেমন করে? আর কোনোদিনই কি খুঁজে পাওয়া যাবে না সেসব?

তিন.
জহিরের পথিকৃৎ ভূমিকায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, কিন্তু তাঁর জন্যেও মূল্য দিতে হয়েছে তাঁকে – ধীরে ধীরে সরে আসতে হয়েছে সাহিত্যচর্চা থেকে। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রথম শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাসটির লেখক তিনি – ‘আরেক ফাল্গুন’ কেবল রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহেরই নয়, জীবনপ্রবাহের নিদর্শন হয়ে বেঁচে আছে। শাহরিয়ার কবিরের এক লেখায় জহির রায়হানের দেয়া ভাষ্যানুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম যে দশজন ১৪৪ ধারা ভেঙেছিলেন, জহির রায়হান তাদেরই একজন। ‘আরেক ফাল্গুন’ তাই জহির রায়হানেরই জীবনের অর্জন এবং অভিজ্ঞা। কিন্তু মানুষের জীবনকে তিনি খুঁজে নিয়েছেন ধারাবাহিকতার মধ্যে দিয়ে, তাই তাঁর পক্ষে অনায়াসেই লেখা সম্ভব হয়েছে ‘হাজার বছর ধরে।’ লেখা সম্ভব হয়েছে ‘বরফ গলা নদী’। তিনি লিখেছেন ‘কতগুলো কুকুরের আর্তনাদ’ আর ‘ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি’র মতো গল্প। জহির এক অনিঃশেষ সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল – তাই বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা দেখি, এসবের কোনওটাই তিনি তাঁর চলচ্চিত্রের জন্যে লেখেননি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার আদল কোনো কোনো লেখায় ব্যবহার করলেও তিনি তাঁর সাহিত্যকে চলচ্চিত্র থেকে শেষ পর্যন্ত দূরেই রেখেছিলেন। এমনকি প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’তেই তিনি যে প্রথাবিরোধী মেজাজ তৈরি করেছিলেন, একটি নিম্নবিত্ত পরিবারকেই শুধু নয়, সমাজ ও পরিবারে নারীর অবস্থানকে যেভাবে অবলোকন করেছিলেন, ৫০ বছর পরও তা আমাদের বিস্মিত করে। এসব দিক বিবেচনা করলে এ-ও স্পষ্ট হয়, তাঁর সমসময়ের শক্তিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের থেকেও তিনি পুরোপুরি আলাদা। সত্যজিৎ ও ঋত্বিককে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন শক্তিমান কথাসাহিত্যিকদের চলচ্চিত্রোপযোগী সাহিত্যকে আশ্রয় করতে, কিন্তু ‘আনোয়ারা’ বাদ দিলে জহির রায়হানের এমন কোনও চলচ্চিত্র নেই যেটি সাহিত্যগ্রন্থনির্ভর। চলচ্চিত্ররূপ দিয়ে এমনকি নিজের সাহিত্যগ্রন্থকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না তিনি। চলচ্চিত্র আর সাহিত্যের আলাদা সত্বাকে মনেপ্রাণেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তিনি, চাননি একটির ভাষাকে আরেকটির ওপর চাপিয়ে দিতে। তবে শেষের দিকে সাহিত্যচর্চা থেকেই অনেক দূরে চলে এসেছিলেন তিনি, যার ছাপ পড়েছে ‘আর কতদিন’-এ। অনুরোধের পর অনুরোধে বিব্রত ও অসহায় জহির রায়হান ‘লেট দেয়ার বি লাইট’-এর চিত্রনাট্যটিকেই কোনওমতে উপন্যাসের আদল দিয়ে রচনা করেন ‘আর কতদিন’, যা প্রকাশ পায় সচিত্র সন্ধানীতে। এই ‘আর কতদিন’ ও সচিত্র সমীপেষু নামের একটি পত্রিকার জন্যে ডিকটেশন দিয়ে লেখা ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ই পরবর্তী সময়ে সমালোচনাজীবীদের কাছে তাঁর চিত্রনাট্যের আদলে সাহিত্য রচনার প্রধান উদাহরণ হয়ে ওঠে।

চার.
প্রচণ্ড ও অহেতুক ভীড়ের মধ্যেও, প্রচুর আবর্জনা ও জঞ্জালের মধ্যেও জহির রায়হানের সাহিত্য ও চলচ্চিত্র (বিশেষত চলচ্চিত্র) শেষ পর্যন্ত একটি পরিণতি পেয়েছে। মুগ্ধতা ছাপিয়ে এক মগ্নতায় নিয়ে যায় তাঁর চলচ্চিত্র আর সাহিত্য স্বল্পপরিসরে হলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের নিরন্তর জীবনপ্রবাহ হিসেবে আমাদের আন্দোলিত করে।
কিন্তু জহির রায়হান, আমাদের দেবার মতো অফুরান সৃজনক্ষমতা থাকার পরও, নিজেই হারিয়ে যান বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে। বড়ভাইয়ের প্রতি তাঁর ছিল অফুরন্ত আনুগত্য ও অনুরাগ, তাই ভাইকে হারিয়ে তিনি এলোমেলো হয়ে যান। হয়তো এই এলোমেলো হওয়ার সূচনা একাত্তরেই, যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে, শুনতে হয়েছে পিকিংপন্থী হওয়ার গালি, নীরবে হজম করতে হয়েছে মস্কোয় যাওয়ার ভিসা না পাওয়ার গ্লানি। ১৬ ডিসেম্বরেই তিনি জানতে পারেন, শহীদুল্লাহ কায়সার ও আরো অনেক বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা এবং ১৭ ডিসেম্বরেই ভারতীয় এক বিমানে ঢাকা চলে আসেন। ভাইকে খুঁজে পেতে তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন এবং তাই খুঁজতে থাকেন পাকিস্তানিদের এদেশিয় সহযোগীদেরও। সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি ঘোষণা দেন, ওইসব সহযোগীদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সত্যি কথা বলতে গেলে, এই সময় জহির রায়হান হয়তো একজন মার্কসবাদী থেকে একজন অপ্রকৃতিস্থ অদৃষ্টবাদীতেই রূপান্তরিত হয়েছিলেন – কেননা তিনি এ সময় পীর-ফকিরদের কাছেও ধর্ণা দিতে থাকেন এবং আজমীর শরীফে যান খাজা বাবার কাছে ভাইয়ের জন্যে দোয়া চাইতে।
যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জহির রায়হানের ছিল, এভাবেই তা নিরুদ্দেশে যায়; তারপর নিরুদ্দেশে যান তিনি নিজেই। এক অদৃশ্য টেলিফোন তাকে মীরপুরে নিয়ে যায়, যে-এলাকা ছিল তখনও পাকহানাদার বাহিনী ও বিহারীদের নিয়ন্ত্রণে। কয়েক বছর আগে সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিকের তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়েছে, তিনি তাদের গুলিতেই শহীদ হয়েছেন।
যদি এ নিয়ে তখনই অনুসন্ধান হতো, চিরুনি-তল্লাশ হতো, তা হলে আমরা অন্তত তাঁকে সমাহিত করতে পারতাম শ্রদ্ধার সঙ্গে; তা হলে নিরুদ্দিষ্ট ভাইয়ের মতো তাঁকেও হয়তো নামপরিচয়হীন লাশ হয়ে যেতে হতো না। কিন্তু তাকে আমরা দিনের পর দিন খুঁজেছি এবং এখনও খুঁজছি – প্রথমে দেশজুড়ে বধ্যভূমিতে, তারপর তার সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে – কিন্তু একাগ্র সেই উদ্ভাসন আমরা আর খুজে পাইনি; কখনো পাব কি না তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না।

মাঘ ১৪১৬/ জানুয়ারি ২০১০

ইমতিয়ার শামীম

আপনারে এই জানা আমার ফুরাবে না...

১৭ comments

  1. বিনয়ভূষণ ধর - ২৪ জানুয়ারি ২০১০ (১২:২০ অপরাহ্ণ)

    ইমতিয়ার ভাই!!! অনেকদিন পর আপনার আর একখানা অসাধারন লেখা আমরা পেলাম। তাই প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমার পক্ষ থেকে। আমার পড়ে অসম্ভব ভাল লেগেছে!!! আপনার পোষ্টখানার শিরোনামটি জহির রায়হান : জীবন, শিল্প ও মুক্তির যুদ্ধে” বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে এককথায় অসাধারন হয়েছে। সময়রে অভাবে আজ এখানে শেষ করতে হচ্ছে। তবে ইচ্ছা আছে আপনার লেখার উপর সামনে কিছু বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য রাখার…

    • ইমতিয়ার - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৩:৫২ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ বিনয়ভূষণ ধর আপনাকে।
      এ লেখাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা বোধহয়, এতে জহির রায়হানের কি চলচ্চিত্র কি সাহিত্য কোনওটা সম্পর্কেই বিস্তৃত আলোচনা নেই। কেন নেই, সে সম্পর্কে আমার পক্ষ থেকে হয়তো বক্তব্য দেয়া যেতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত সত্য হলো নেই।
      এমনকি সত্যিকার অর্থে, জহির রায়হানের চলচ্চিত্র ও সাহিত্য নিয়ে কখনো বিস্তারিত কিছু লেখাও হয়নি। অবশ্যম্ভাবীভাবে তাঁর নাম এসেছে, কেননা তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ, তিনি যুদ্ধদিনে স্টপ জেনোসাইডের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে গেছেন।
      এখন সময় এসেছে, তাকে আলোচনার পাদপ্রদীপে নিয়ে আসার। কেননা মুক্তিযুদ্ধের আগে আমাদের যে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল, তাদের অন্তর্জগত বুঝবার জন্যে জহির রায়হানের সাহিত্য খুবই জরুরি। জরুরি আমাদের যে-ভাষা নির্মাণ হচ্ছিল, সেটি বুঝবার জন্যেও।
      জহির রায়হানের বেশ কয়েকটি উপন্যাস থেকে পরে টিভি নাটক তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলি নিয়েও বিভিন্ন সময় যাদের কথা বলতে শুনেছি, দেখেছি, তারা কথা বলছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মুন্সীয়ানা নিয়ে। যে-জীবন ও সময় উঠে আসছে কাহিনীর মধ্যে থেকে তার ব্যবচ্ছেদ করার প্রবণতা খুবই কম।
      আর শেষ পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় হলেও বলি,- আমি যে সে চেষ্টা করিনি, তার কারণ, আমার হাতের কাছে তার কোনও গ্রন্থ ছিল না। শেষ মুহূর্তে আমি অবশ্য দুটি গ্রন্থ পেয়েছিলাম, কিন্তু তার জীবন সম্পর্কিত কিছু তথ্য ছাড়া কোনও কিছু সংযুক্ত করার সময় ছিল না। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস মিডিয়া আর্কাইভ। নিশ্চয়ই এটিও একটি ত্রুটি যে, আমি তথ্যসূত্র যুক্ত করিনি। কেননা মনে হচ্ছিল, এতে হয়তো পড়ার গতি হোঁচট খাবে।
      আপনি যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য রাখার,- তার অপেক্ষায় রইলাম।

  2. মুয়িন পার্ভেজ - ২৪ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৪৯ অপরাহ্ণ)

    ‘সময়ের প্রয়োজনে’ — মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে দিনলিপির ধরনে লেখা জহির রায়হানের এ-গল্পটি ছিল আমাদের ইস্কুলপাঠ্য। লেখক-পরিচিতিতে সম্ভবত লেখা ছিল ‘তিনি নিখোঁজ হন’ কথাটি। ওই সময়ে, নব্বইয়ের দশকে, শহীদুল্লা কায়সারের সংশপ্তক উপন্যাসটির নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত হচ্ছিল দূরদর্শনে। পরে জেনেছি, অগ্রজ শহিদ শহীদুল্লার খবর নিতে গিয়েই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান জহির। ‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পের সেই শহিদ মুক্তিযোদ্ধার অসমাপ্ত দিনলিপির ছোট-ছোট বাক্যদৃশ্যগুলো বিষাদাক্রান্ত ক’রে তোলে আমার মন এখনও। প্রথমবারের মতো পরিচিত হয়েছিলাম গল্পবয়নের এক নান্দনিক কৌশলের সঙ্গে — কুশলতা ও আন্তরিকতার অসামান্য দলিল এ-গল্প। অনেকদিন পরে, সদরের এক বিজয়মেলা উপলক্ষে প্রদর্শিত হয় জহিরের প্রামাণ্যচিত্র স্টপ জেনোসাইড — খোলামাঠে আমার দেখা প্রথম ছবিও এটি।

    আরও অনেক সিনেমা বোদ্ধাও ছিলেন তখন, কিন্তু তাদের কেউই ‘স্টপ জেনোসাইড’-এর মতো ফিল্ম তৈরি করতে পারেননি। পারেননি এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও। জহির রায়হানের পক্ষেই কেবল সম্ভব হয়েছিল ‘স্টপ জেনোসাইড’ তৈরি করা – কেননা তিনি জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক করে নিতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে।

    এ-অংশে এসে আমার মনে পড়ছিল শামসুর রাহমানের ‘সংকটে কবির সত্তা’ কবিতাটির কথা। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জহির রায়হানের ক্ষুব্ধ অথচ প্রদীপ্ত মানসলোকের চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে ইমতিয়ার শামীমের মরমী কলমে। আমাদের পথিকৃৎ-চলচ্চিত্রকার জহির সংক্রান্ত রচনাবলিতে এ-লেখা নিঃসন্দেহে স্বর্ণোজ্জ্বল সংযোজন হয়ে থাকবে। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।


    প্রাসঙ্গিক আরও দু’টি লেখা পড়লাম কিছুক্ষণ আগে: অমি রহমান পিয়ালের ‘প্রপোগান্ডা, স্টপ জেনোসাইড ও জহির রায়হান’ (১২ ডিসেম্বর ২০০৭) এবং বিপ্লব রহমানের ‘জহির রায়হান: একটি ব্যক্তিগত কথন’ (১৪ আগস্ট ২০০৮)। একটু ঝাপসা হলেও দেখা যেতে পারে প্রায় বিশ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র স্টপ জেনোসাইড (প্রথম অংশ, দ্বিতীয় অংশ, তৃতীয় অংশ)।

    • সৈকত আচার্য - ২৫ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৫২ পূর্বাহ্ণ)

      “ষ্টপ জেনোসাইড” এ লাঠি হাতে প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী সেই অশীতিপর বৃদ্ধা, যিনি প্রায় শত মাইল পথ পাড়ি দিয়েছেন একা, পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর আক্রমন থেকে নিজেকে বাঁচাতে, সেই দৃশ্য দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।

      সেই বৃদ্ধার চোখ দেখে, নিজের জীবনটাই ব্যর্থ মনে হলো।

    • ইমতিয়ার - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৪:০৯ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ মুয়িন, আপনার গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনগুলির জন্যে। এগুলি আমার এ চটজলদি লেখার ক্ষতি ও পঠনজনিত বিবিধ কৌতূহল পুষিয়ে নিতে পাঠককে সাহায্য করবে।
      ‌সময়ের প্রয়োজনে গল্পটি অবশ্য আমাদের সময় ছিল না। কিন্তু প্রতি বছরই জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেখতাম আমাদের গ্রামের স্কুলে আসা একমাত্র দৈনিক পত্রিকাটি দৈনিক বাংলা-র এককোণে খুব গুরুত্ব দিয়ে তার নিখোজ সংবাদটি ছাপা হতো। সেই থেকে চেহারাটি মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে গেছে।
      প্রসঙ্গত আরও একটি বইয়ের কথা বলি, নাম মনে নেই, পান্না কায়সারের লেখা। আপনার কি জানা আছে?

      • কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৩:১০ অপরাহ্ণ)

        পান্না কায়সারের গ্রন্থটির নাম মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে

  3. তানবীরা - ২৫ জানুয়ারি ২০১০ (৪:০১ পূর্বাহ্ণ)

    অসম্ভব সুন্দর তথ্যবহুল এ লেখাটির জন্যে লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    জহির রায়হান আমার খুব প্রিয় একজন লেখক। এতো সহজ বাংলায় জীবনের অনেক কঠিন বাস্তবতা খুব কম লেখকই লিখতে পেরেছেন। আশাপূর্না দেবীর লেখা পড়লেই আমার আমাদের জহির রায়হানকে মনে পরে। আর জীবন থেকে নেয়া একমাত্র বাংলা সিনেমা যেটা আমি অনেক ক’বার দেখেছি।

    আমাদের মাথা মোটা রাজনীতিবিদদের জন্য অনেক শিল্পীই তার মর্যাদা পাননি। লজ্জাকার যে এরা দেশকে আজো নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

    • ইমতিয়ার - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৮:১০ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ তানবীরা।
      তবে রাজনীতিকদের মাথা চিকন হলেই যে শিল্পীর মর্যাদা নিশ্চিত হবে, সেটিই বা বলি কী করে! শিল্পী যদি স্বাধীনতার মধ্যে মর্যাদা খুঁজতে চান, তা হলে মাথা চিকন রাজনীতিকদের সঙ্গেও তার অনতিক্রম্য ভিন্নতা দেখা দিতে পারে।
      জীবন থেকে নেয়া বার বার দেখেছেন, সেই আগ্রহ থেকে ধরে নিচ্ছি, জহির রায়হানের আর সব সিনেমাও দেখেছেন। জীবন থেকে নেয়ার আচলে চাবির গোছা বাধা নারী, কখনো আসেনির স্থির শিল্প হয়ে যাওয়া নারী,- জহির রায়হানের নারী অবলোকনের গভীরতা সত্যিই বিস্ময়কর, অন্তত আমার কাছে। জহির রায়হানের নারীদের নিয়েই হতে পারে আন্দোলিত করার মতো কোনো লেখা।
      কেউ না কেউ নিশ্চয়ই লিখবেন, কারো না কারো কাছ থেকে প্রত্যাশা থাকল সেরকম একটি লেখার।

      • তানবীরা - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:৫১ পূর্বাহ্ণ)

        মাথা চিকন লোকেরা সমমনা না হলে একসাথে টিকতে পারে না ঠিক। মুখে যাই বলি, সবার মতামতকে শ্রদ্ধা কম সাধারনত মাথা চিকন লোকেরাই করতে পারে না। আপনার কথা যথার্থ।

        আসলে বাংলাদেশে সে আমলে একুশে ফেব্রুয়ারী, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলই ডিসেম্বর যেকোন উপলক্ষ্যেই এ সিনেমাটা সবচেয়ে বেশি দেখাত বলে এ সিনেমাটাই আমার দেখা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি সিনেমা আমি বলতে পারি। অন্য বাংলা ছবি দেখার সুযোগ আমার হয়নি যদিও আমি তাঁর বইগুলো পড়েছি।

        হাতের কাছে বইগুলো আবার যোগাড় করতে পারলে, আপনার কথাটা ভেবে চেষ্টা করবো কিছু দাঁড় করাতে পারি কী না।

        অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

  4. সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ২৬ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৫২ অপরাহ্ণ)

    লেখাটা মুগ্ধ হয়ে পড়লাম, ধন্যবাদ ইমতিয়ার শামীমভাইকে। জহীর রায়হান যে সাহিত্যে এবং চলচ্চিত্রে আমাদের মুগ্ধতা থেকে মগ্নতায় তরিয়ে নেন, এটা বলবার জন্যে অনেক অনেক অভিবাদন। অল্পবয়েসে ‘কাঁচের দেয়াল’ দেখে আমার মনে হয়েছিল এই সিনেমাটার একটা নিজস্ব পৃথিবী আছে- পরে আস্তে আস্তে দেখেছি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সিনেমাগুলির সবগুলিরই তাই আছে- নিজস্ব পৃথিবী- নিজভূম। সে পৃথিবীতে-পাতালে দর্শককে টেনে নিতে পারলেই সেটি শিল্প হিসেবে মানুষকে স্পর্শ করবার সার্থকতা লাভ করে। ‘দিস স্পোর্টিং লাইফ’ কিংবা ‘দ্য এল শেপড রুম’ এর মত মুভি দেখতে দেখতে আমার বারবার কাঁচের দেয়ালের কথা মনে পড়েছে।
    হুমায়ূন আহমেদের প্রথমদিকের উপন্যাস দু’টি গভীরভাবে জহীর রায়হানাক্রান্ত, কারণ হিসেবে দেখতে গেলে বাঙালির প্রেম-সংগ্রাম-বিত্তহীনতা-সংরাগ-অনুভব-শ্রেণী-লাঞ্ছনা দেখাবার যে রাস্তা জহীর রায়হান দেখিয়ে গেছেন তার চেয়ে প্রাঞ্জল এবং নির্ভুল রাস্তা আর হয়না। আমাদের সিনেমাকে এই অসম্ভব বলিষ্ঠ শিল্পী একরকমের গন্তব্য জানিয়ে গেছেন- বাঙালি রেখেও আধুনিক করে গেছেন, আমাদের সাহিত্যকে দিয়ে গেছেন একরকম ভাষা। আমাদের জন্যে চরম দুর্ভাগ্য এই শিল্পীকে স্বাধীন দেশে হত্যা করা হয়েছিল, আবার ভেবে দেখতে গেলে এইরকম ধুমকেতূর মত আকাশ প্লাবিত করে উধাও হওয়া তো ক্ষণজন্মারই লক্ষণ।

    • ইমতিয়ার - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৩৪ অপরাহ্ণ)

      সাগুফতা শারমীন তানিয়া *
      হুমায়ূন আহমেদ নিজে অবশ্য কখনও জহির রায়হানের প্রভাবকে স্বীকার করেননি। প্রথম উপন্যাস সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সোমেন চন্দের ইঁদুর গল্পটি পড়ার পর তাঁর ইচ্ছা জাগে মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে নিয়ে গল্প লেখার। তবে মধ্যবিত্তের গভীর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন যে মনস্তাত্ত্বিকতার জন্ম দেয়, তা কতটুকু নিয়ে আসতে পেরেছেন, সে প্রশ্নের উত্তর বোধহয় সবাই জানেন। লেখাই বাহুল্য, এখনও তাঁকে বাচিয়ে রেখেছে প্রথম দুটি উপন্যাসই। এরপর তিনি আমাদের যে মধ্যবিত্ত মানুষদের কাছে নিয়ে গেছেন তাদের চরিত্র সংজ্ঞায়িত করা কঠিনই বটে। জহিরের সঙ্গে তার লেখার সম্পর্ক রয়েছে জেনে কৌতূহলই জাগছে।
      অনুরোধ থাকল আপনার কাছে, কাচের দেয়াল (যখনই এর পুরানো পোস্টার দেখি, তখনই প্রথমে চোখ পড়ে এর কাচ বানানটির ওপর, যতদূর মনে পড়ে কাচ বানানটি লেখা হয়েছিল কাঁচ) আর আপনার দেখা সিনেমা দুটির দৃশ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনও লেখা তৈরি করার। অভিবাদন আপনাকেও।

      কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ভাই*
      পান্না কায়সারের বইটির নাম সংযুক্ত করে দেয়ায় অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

  5. মোহাম্মদ মুনিম - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    জহীর রায়হানের একটা ছোটগল্প সঙ্কলন পড়েছিলাম। একটা গল্প ছিল বন্যাক্রান্ত এক গ্রাম নিয়ে। বন্যায় গ্রাম রক্ষাকারী বাঁধ ভেঙ্গে পরার দশা, স্থানীয় মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে গ্রামের মুসুল্লীরা বাঁধ রক্ষার জন্য বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করেন। একই সাথে গ্রামের কিছু যুবক সারারাত বাঁধের ফাটলে মাটি ফেলে বাঁধ রক্ষা করে। ভোরে মুসুল্লীরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান। আরেকটি গল্প ছিল এক কেরাণির আর্থিক অনটনের কারণে পার্টটাইম রিকশাচালকে পরিণত হবার।

  6. রেজাউল করিম সুমন - ৩১ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৪৩ অপরাহ্ণ)


    অল্প বয়সে আমরা জহির রায়হানকে চিনতাম জীবন থেকে নেয়া ছবির পরিচালক হিসেবে। যতদূর মনে পড়ে, তাঁর গোটা দুই গল্প স্কুল পর্যায়ে আমাদের পাঠ্য ছিল। পাঠ্যসূচির অন্তর্গত ‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পটি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ‘গল্পবয়নের এক নান্দনিক কৌশলের সঙ্গে’ও। কিন্তু গল্পের একটা অংশে খানিকটা গোঁজামিল ছিল, অন্তত একটা বাক্য ছিল অমসৃণ। পাঠ্যবইয়ের পাঠটি যে মূল গল্পের ‘সেন্সর্‌ড্‌’ সংস্করণ তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল স্কুলের লাইব্রেরিতে (রব পাঠাগার) মুক্তিযুদ্ধের গল্পের সংকলন বাংলাদেশ কথা কয় হাতে পাবার পর।

    ‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পের এক জায়গায় নৌকোয় করে ‘বেশ্যা’দের পারাপারের উল্লেখ আছে। স্কুলের উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের এই বিপজ্জনক শব্দটি থেকে তফাতে রাখার জন্যই ওই ক’টা লাইন বাদ দিতে হয়েছিল – এ নাহয় বোঝা গেল। ‘শেখ সাহেব’কে তো পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, পাঠ্যবইয়ের পাতা থেকেও অতএব অনিবার্যতই বাদ পড়েন তিনি। কিন্তু কালোবাজারি? কালোবাজারিদের নির্মূল করার জন্য যুদ্ধে যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছিল ওই গল্পের এক মুক্তিযোদ্ধা; গল্প থেকে ‘কালোবাজারি’র প্রসঙ্গও কেন বাদ দেয়া হয়েছিল?


    ইমতিয়ার ভাইয়ের লেখা থেকে জানলাম, স্টপ জেনোসাইড-এর প্রথম প্রদর্শনীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন এবং ছবি দেখে তাঁরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। সেটাই তো স্বাভাবিক আর প্রত্যাশিত। সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি তাঁদের আচ্ছন্ন করার কথা নয়।

    মুজিবনগর সরকারের অর্থায়নে তৈরি জহির রায়হানের বার্থ অব আ নেশন, চিলড্রেন অব বাংলাদেশ, সারেন্ডার ও নাম-না-জানা আরেকটি ছবি কি চিরতরেই হারিয়ে গেল? এগুলোর সবকটিই কি তথ্যচিত্র?

    বইপত্রে একসময়ে লেখা হতো, অগ্রজ শহীদুল্লা কায়সারের লাশ খুঁজতে গিয়ে জহির রায়হান নিজেই সদ্য-স্বাধীন স্বদেশে ‘নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন’। আমরা স্কুল-কলেজে পড়ার সময়ে বছরের পর বছর ধরে শুনে এসেছি জহির রায়হানকে আসলে গুম করে ফেলা হয়েছিল; আর তা করেছিল আওয়ামী লীগেরই লোকজন। অনেক পরে জুলফিকার মানিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে এসেছে।


    সাগুফতা শারমীনের সঙ্গে পুরোপুরি একমত, হুমায়ুন আহমেদের প্রথমদিকের ‘উপন্যাসে’ (লেখক নিজে অবশ্য সংগতভাবেই সেগুলোকে ‘গল্প’ বলতেন সে-সময়ে) জহির রায়হানের প্রভাব সুস্পষ্ট, যদিও হুমায়ুন নিজে অবশ্য বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন সোমেন চন্দের ‘ইঁদুর’ গল্পের অনুপ্রেরণার কথা। যতদূর মনে পড়ে, বরফগলা নদীর সঙ্গে শঙ্খনীল কারাগার-এর সামীপ্য আমাদের অবাক করেছিল, সেই কলেজ-জীবনে – ততদিনে জহির রায়হানের গল্প-উপন্যাসগুলি শেষ করে আমরা বন্ধুরা প্রতিযোগিতা করে হুমায়ুনের লেখা পড়তে শুরু করেছি।


    ইমতিয়ার ভাই লিখেছেন,

    জীবন থেকে নেয়ার আচলে চাবির গোছা বাধা নারী, কখনো আসেনির স্থির শিল্প হয়ে যাওয়া নারী, – জহির রায়হানের নারী অবলোকনের গভীরতা সত্যিই বিস্ময়কর, অন্তত আমার কাছে। জহির রায়হানের নারীদের নিয়েই হতে পারে আন্দোলিত করার মতো কোনো লেখা।

    কেউ না কেউ নিশ্চয়ই লিখবেন, কারো না কারো কাছ থেকে প্রত্যাশা থাকল সেরকম একটি লেখার।

    (আমি কাচের দেয়াল দেখলাম এই গত বছর, অনেক দেরিতে। এ ছবিতেও নারীর অবস্থান বিশিষ্ট।) ইমতিয়ার ভাইয়ের মতো আমরাও অপেক্ষায় রইলাম এরকম একটি লেখার জন্য। আর আশা করব সময়-সুযোগ করে জহির রায়হানের সমগ্র সাহিত্য-কৃতির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ইমতিয়ার ভাই-ই আমাদের উপহার দেবেন। ধন্যবাদ।

  7. ব্লাডি সিভিলিয়ান - ৮ এপ্রিল ২০১০ (১২:৪৩ অপরাহ্ণ)

    যথারীতি চমৎকার, তবে চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার আরও একটু বিস্তারিত আশা করেছিলাম।
    ‘উত্তরাধিকার’-এর মাঘ, ১৪১৬ সংখ্যায় ফিউচারিস্টদের নিয়ে আপনার দুর্দান্ত লেখাটা পড়লাম।
    এমন লেখা লিখুন না মুক্তাঙ্গনে।

    • ইমতিয়ার - ২৬ এপ্রিল ২০১০ (৬:৫২ অপরাহ্ণ)

      সমস্যা হলো, জহির রায়হানের চলচ্চিত্রগুলি দেখেছি অনেক আগে- অতএব আরও আলোচনার ঝুকিঁ নিতে চাইনি। অবশ্য নতুন করে দেখার পর কী মনে হবে তাও জানি না। তবে পূর্বদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা সত্যজিৎ ও ঋত্বিক নিয়ে যত আলোচনা করেছি, তার একাংশ মনযোগও দেইনি জহিরের চলচ্চিত্রের আলোচনায়। তাঁর চলচ্চিত্র বার বার ফিরে এসেছে যত না চলচ্চিত্রের ভাষা বোঝার প্রয়োজনে তারও বেশি আমাদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে। সত্যজিতের ও ঋত্বিকের প্রথম চলচ্চিত্রের সঙ্গে জহিরের প্রথম চলচ্চিত্রের ভাষার মিল-অমিল কেবলমাত্র এই একটি আলোচনাই আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক ধারণাকে পাল্টে দিতে বলে মনে করি আমি।
      ২.
      ফিউচারিস্টদের নিয়ে লেখাটা আসলে মুক্তাঙ্গনের জন্যেই লিখেছিলাম। কিন্তু এটি উপলব্ধি করি, ব্লগে কেউ দীর্ঘ লেখা পড়তে চান না; আবার যারা পড়তে আগ্রহী হবেন, তাদের কাছে হয়তো ক্রমানুসারে বিভক্ত লেখাটি বিরক্তির ও ধারাবাহিকতাছেদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া, ব্লগের সংজ্ঞা ও ধারণা অনুযায়ীও লেখাটি হয়তো বিরক্তির জন্ম দিতো অনেকের কাছে।

      ধন্যবাদ আপনাকে- পড়ার জন্যে, আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্যে।

  8. kamruzzaman Jahangir - ২৮ এপ্রিল ২০১০ (১১:০৫ অপরাহ্ণ)

    জহির রায়হানকে আমি আমার সত্তাবিকাশের এক ধারণাই জ্ঞান করি। এই জনপদের মানবিক উত্থানের অপরিহার্য নামটিই জহির রায়হানের। তাকে মনে করলেই জীবন থেকে নেয়া, বেহুলা, হাজার বছর ধরে, বরফ গলা নদী, আরেক ফাল্গুন, স্টপ জেনোসাইড আর একটা সত্তা নিখোঁজ হয়ে যাওয়াকে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
    একুশে ফেব্রুয়ারি যেন তার মাধ্যমে আমাদের মনোজগতে নতুন চেতনা নিয়ে আসে। আমার কেবলই মনে হয়, তিনি ভাষা আন্দোলনের এক মূতঁ প্রকাশ।
    তার জীবন শুধুমাত্র তার জীবন থেকেই পাঠ নেয়া চলে। তার সৃজনকৃত নানান কর্ম থেকেই আমরা তাকে পাই। মুক্তিযুদ্ধকে তিনি কিভাবে দেখতেন তা তার স্টপ জোনোসাইড-এর তিনটি অংশে দেখি।
    তার অন্তর্ধানের বিষয়টি পান্না কায়সারের মুক্তিযুদ্ধ ঃ আগে ও পরে নামের গ্রন্থে অত্যন্ত নিপুণভাবে বর্ণিত হয়েছে।
    জহির রায়হানের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে তার আত্মীয়০স্বজন, বিশেষত সুচন্দা, বিপুল রায়হান, শাহরিয়ার কবিররা কী বলেন? তা কি কারও জানা আছে। পান্না কায়সারের বইটি থেকে জানা যায়, জহিরের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দিন সরকারি তরফ থেকে তার ফ্যামিলির লোকজনের সাথে রহস্যজনক আচরণই করা হয়। এমনকি তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে তেমন কোনো তদন্তও করা হয় নি। এ নিয়ে অদ্যাবধি নানান পক্ষের অপরাজনীতিও কম হচ্ছে না।
    যাই হোক, জহির রায়হান মানুষের লড়াই-সংগ্রামে ছিলেন, এখনও আছেন, থাকবেনও।

  9. kamruzzaman Jahangir - ২৮ এপ্রিল ২০১০ (১১:৫৪ অপরাহ্ণ)

    সরি, ইমতিয়ার শামীম, আপনার লেখাটি অনেক আগেই পড়েছি, পাঠের ভিতর ছিলামও; তবে এতে অংশগ্রহণে দেরি হয়ে গেল!

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.