মন্দিরা বাজতে কোনো ভুল করছে না[...]

ডান হাতে বামের মন্দিরা তো ভালই বাজত, বামের হাতেও ডানের মন্দিরা বাজতে কোনো ভুল করছে না। কাল নিরবধি : বাম নিশ্চিন্তে চলে ডানের সাথে তিনিই মধ্য যিনি থাকেন উভয়সংকটে।

বহুদিন এমন সহজ আত্মজীবনী পড়িনি।[...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ রাজনৈতিক কর্মীর নোটবই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ।। শেখ মুজিবুর রহমান ।। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা।। প্রথম প্রকাশ জুন ২০১২ ।। মূল্য ৫২৫ টাকা ।। বহুদিন এমন সহজ আত্মজীবনী পড়িনি। বহুদিন কোনো আত্মজীবনী এভাবে আমার ভেতরে হানা দেয়নি। একেবারে শুরুতেই ভাল লেগেছে, যখন শেখ মুজিব লিখছেন একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম। শুরুর এই সলতে পাকানো সারা বইয়ে সার্থকতার সাথে আলো জ্বালিয়ে গেছে নির্বিঘ্নে। আমরা ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত’ রাজনৈতিক কর্মময়তায় ডুবে থাকি। অনেক শুনেছি এই ‘ফুলটাইমার’ শব্দ, আজ পড়ছি – এর আগে এর চেয়ে বেশি আর কোনো ‘ফুলটাইমার’কে পড়েছি বলে মনে হয় না। বড় প্রয়োজন ছিল এই আত্মজীবনীর। বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের আপাদমস্তক এই রাজনৈতিক কর্মীর জীবন সম্বন্ধে জানবার। রেণুকে [বেগম মুজিব] ছোটোখাটো আঁচড়ে যা জেনেছি, বলতেই হবে এক মহৎ জীবনসঙ্গীকে জেনেছি। হাচিনাকে [শেখ হাসিনা] ও কামালকে যৎসামান্য যা পাওয়া গেছে তাতে বোঝা গেছে জেল খাটা সেইসব দেশ আলো করা রাজনৈতিক কর্মীদের ছেলেমেয়েদের শৈশব কীকরে কেটেছে। খুবই সরল চলনের এই বই। রাজনীতির কূটকচালের, ঘটনার ঘনঘটার আশায় যারা এই বইয়ে হামলে পড়বেন তারা ভুল করবেন। কিন্তু যারা রাজনৈতিক কর্মীর নোটবই হিসাবে পড়বেন, তাদের জীবনে দ্যুতি ছড়াবে এই বই। অনেকদিন, বহুদিন।

৩ জুন ২০১২তে বাস থামিয়ে যে দশ জন মুসলিমকে ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল তার মধ্যে আট জনই ছিলেন রেঙ্গুনের মুসলমান যারা রাখাইন প্রদেশে তবলিগি চিল্লা শেষে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন। [...]

আগামী ১৬ জুন নোবেল ফাউন্ডেশন এক বিলম্বিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৯৯১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার তুলে দেবেন সু কি'র হাতে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ও তার পূর্বাপর ইউরোপ সফরের উদ্দেশ্যে আজ রেঙ্গুন ছাড়বেন সু কি। বর্তমানে বার্মার রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম-রাখাইন বৌদ্ধ যেদাঙ্গা হচ্ছে তা পেছনে ফেলে ইউরোপ সফর এবং সফর শেষে দেশে ফিরে আসাই এখন তার মূল লক্ষ্য, তাই দায়সারা মন্তব্যের চেয়ে বেশি কিছু বলছেন না তিনি। অথচ ৩ জুন ২০১২তে বাস থামিয়ে যে দশ জন মুসলিমকে ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে আট জনই ছিলেন রেঙ্গুনের মুসলমান যারা রাখাইন প্রদেশে তবলিগি চিল্লা শেষে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন। রাখাইন বৌদ্ধরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ২৮ মে ২০১২তে রাখাইন এক মেয়েকে কয়েকজন রোহিঙ্গা মুসলিমের ধর্ষণ ও পরবর্তীতে খুনের রেশ ধরে। বার্মার রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানেরা ২০১০ সালে ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন এবং কথা ছিল সেনাবাহিনী সমর্থিত দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে তাদেরকে বার্মার জাতীয়তাও দেয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো তৎপরতা থাইন সাইন সরকারের মধ্যে দেখা যায়নি। রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী আছে এটা ঠিক, কিন্তু সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলমানরা তো সন্ত্রাসবাদী নয়। সন্ত্রাসবাদীদের চিহ্নিত করে সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতীয়তা দেয়ার প্রশ্নে সু কি'র কোনো স্পষ্ট অবস্থান এখনো আমাদের চোখে পড়েনি। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইট ওয়াচ বাংলাদেশকে বলছে বাংলাদেশের সীমান্ত রোহিঙ্গা সাধারণ শরণার্থী মুসলমানদের জন্য শিথিল করে দিতে। কিন্তু জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইট ওয়াচ নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত সু কি'কে কেন বলছে না, রাখাইন প্রদেশেই এই শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ ক্যাম্প সৃষ্টিতে সহায়তা করতে? জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা যদি এরকম ক্যাম্প সৃষ্টি করতে পারে তাহলে সেই ক্যাম্পে যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকবে। এবং বাংলাদেশে শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও পর্যায়ক্রমে সেই ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করতে নীতিগত সহায়তা চাইবে। আর যদি এর জন্য জাতিসংঘের শান্তি মিশন প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সাড়া দেবে। আর এই সবকিছু সম্ভব সু কি যদি এবিষয়ে নিজেকে জড়াতে চান। কিন্তু সু কি'র যা অবস্থা তাতে তো শুধু এটাই মনে হচ্ছে তিনি নোবেলে ও সংসদে আটকা পড়ে গেছেন।

আমার পড়াশোনা আইন বিষয়ে। ‘ক্রসফায়ারের’ সাথে আমার পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে, সেই ২০০৭ সালে, যখন আমি ছাত্র অবস্থায় ‘অধিকার’ নামক একটি মানবাধিকার সংগঠনে কাজ শুরু করি। আমি সেখানে মূলত ডকুমেন্টেশানের কাজ করতাম। প্রধানত র‌্যাব কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ক্রসফায়ারের ঘটনার উপর তৈরি করা অধিকারের প্রতিবেদন আমি বাংলা ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতাম। বলতে গেলে অনুবাদ করার সুবাদেই আমার টানা বেশ কয়েক বছর অগণিত ক্রসফায়ারের বিষদ বর্ণনা পড়ার সুযোগ হয়। প্রায় সব ঘটনাতেই র‌্যাব -এর পক্ষ থেকে বলা হত যে একটি সোর্স-এর মাধ্যমে তারা ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত একটি সন্ত্রাসী/ডাকাতের দল তাদের উপর আক্রমণ চালায়। সেই আক্রমণের ফলে র‌্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়। গুলি বিনিময়কালে একজন মারা যান (যিনি ক্রসফায়ারের শিকার) এবং সন্ত্রাসী/ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসী/ডাকাতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া যায় একটি রিভল্ভার এবং কয়েক রাউন্ড গুলি। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন র‌্যাবের গুলি কখনো ক্রসফায়ার ভিক্টিমের ‘পায়ে’ লাগে না কেন? কেন তাদের গুলি সবসময়েই ‘বুক’ বা তার কাছাকাছি স্থানে আঘাত হানে? সেই প্রশ্ন সবারই। এমনসব প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাই পরবর্তী বছরগুলোতে আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর জন্য কিছু কাজ করতে গিয়ে। আমার মনে আছে হেনরিক আলফ্র্যামের সাথে ঢাকা এবং গাজিপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোর কথা। আমরা ক্রসফায়ার ভিক্টিমদের কথা শুনতাম। হয়তোবা একজন হতভাগা মা আমাদের জানাতেন কিভাবে তার সন্তানকে র‌্যাব তাদের বাসা বা বাসার সামনের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিভাবে জীবিত অবস্থায় সেই সন্তানকে আর খুঁজে পাওয়া হয়ে ওঠে না। আমার আজও মনে পরে কিভাবে ক্রসফায়ার ভিক্টিমদের পরিবারের সদস্য আমাকে টেলিফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট প্রকাশিত কবে হবে? তাদের বুকে তখন অনেক আশা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন তাদের না বলা কথা তুলে ধরবে আর সেই সুবাদে বিচারের পথ প্রশস্ত হবে, এই ছিল তাদের চাওয়া। দুবছরের মধ্যে দুটি পৃথক (২০০৯ ও ২০১১ সালে) রিপোর্ট প্রকাশিত হয় । শুরুর দিকে মনে অনেক আশা ছিল – মহাজোট সরকার ক্রসফায়ারকে শক্ত হাতে দমন করবে যেমন তারা…

আমাদের সরকার, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিকদের সৌভাগ্যই বলতে হবে, তাদের কাছে শিল্পী বেগমদের বিচারের দাবি তোলার ক্ষমতা নেই, বিচার ও আইন বিভাগের কাছে তাদের কোনও প্রত্যাশা নেই, অন্যায়ের কাছে পরাস্ত হয়ে তারা শুধু কাঁদতে কাঁদতে আল্লার কাছে বিচার চাইতে জানে।

সারা রাত তিনি বাস চালিয়ে ঢাকা এসেছিলেন। খুলনা থেকে ট্রিপ নিয়ে তারা রওনা হয়েছিলেন ঢাকার দিকে রাত ১০টার দিকে। ঢাকায় এসে মালিবাগে শেষ যাত্রী নামিয়ে দেয়ার পর বাস পার্ক করেন গভর্নমেন্ট কলোনীর সামনে। রাতে আবারও বাস চালাতে হবে। তাই ঘুমানোর উদ্যোগ দেন তিনি আর তার হেলপার। ঘুমানোর আগে তিনি স্ত্রীর কাছে টেলিফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি এখন বাসে ঘুমাবো। আমাকে এখন ফোন করিও না। পরে ফোন করিও। এটা বলতে টেলিফোন করলাম।’ হয়তো অনেক কথাই তার বলার ছিল। কিন্তু তার চোখ বুজে ঘুম নামছিল। তিনি তাই স্ত্রীকে বলেছিলেন, পরে ফোন দিতে। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয়নি। দুপুর দু’টার দিকে খিলগাঁওয়ের গভর্নমেন্ট কলোনির সামনে পার্ক করা এই বাসটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় হরতাল আহ্বানকারীদের দল। আর সেই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন তিনি, বাসের চালক মাত্র ৪৮ বছরের বদর আলী বেগ। ফোন বন্ধ করে তিনি ঘুমিয়েছিলেন-আগুনের আঁচেও ঘুম ভাঙেনি, টের পাননি আগুন জ্বলছে তার চারপাশে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে উদ্ধার করে তার পোড়া লাশ। হরতাল যারা ডেকেছিলেন, হরতাল সফল করার জন্যে যারা মাঠে নেমেছিলেন, তাদের কেউ কি দেখেছেন সেই লাশ? কিংবা শুনেছেন কি বদর আলী বেগের স্ত্রী হাওয়া বেগমের আর্তনাদ : ‘ও আল্লা, যারগে জন্যি আমি শেষ বারের মতো আমার স্বামীর মুখখান দেখতি পাল্লাম না, যারগে জন্যি আমার ছেলেমেয়েরা তাগো বাপের মুখটা দেখতি পাল্লো না, সে হরতাল আলাগো তুমি বিচার করো’? তারা কি জানেন, বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন হাওয়া বেগম? জ্ঞান হারানোর পর শোকাচ্ছন্ন স্বগতোক্তি করেই ফের মুর্চ্ছা খাচ্ছেন? হরতাল আহ্বানকারীরা শুনতে পাচ্ছেন তার আর্তনাদ, ‘এহন হরতাল আলারা কি আমার সংসার চালায়ে দেবেনে? দেবে না!’ বলে আবারও অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন হাওয়া বেগম। বদর আলী বেগের মতো আগুনে পুড়ে মরেননি, কিন্তু মৃত্যুবরণ করেছেন আরেক চালক। ধারদেনা করে মাস দুয়েক আগে একটি ট্যাক্সিক্যাব কিনেছিলেন তিনি। তাও আবার হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছিল একবার। কখনো সে গাড়ি নিজে চালাতেন, কখনও আবার ভাড়া খাটাতেন। এইভাবে সারা মাসে আয় হতো ১০/১২ হাজার টাকা। তাই দিয়ে চলতো তার সংসার। সকালে গাড়ি নিয়ে কাজে বেরুনোর আগে শিশুসন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছেন তিনি। খাওয়ার টেবিলে ছিল ভাত আর মাংস। ছেলে পরশের ভাতের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.