বহুদিন এমন সহজ আত্মজীবনী পড়িনি।[...]

পুরনো বইপ্রস্থ
বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯
বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০
বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০

রাজনৈতিক কর্মীর নোটবই

অসমাপ্ত আত্মজীবনী ।। শেখ মুজিবুর রহমান ।। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা।। প্রথম প্রকাশ জুন ২০১২ ।। মূল্য ৫২৫ টাকা ।।

বহুদিন এমন সহজ আত্মজীবনী পড়িনি। বহুদিন কোনো আত্মজীবনী এভাবে আমার ভেতরে হানা দেয়নি। একেবারে শুরুতেই ভাল লেগেছে, যখন শেখ মুজিব লিখছেন

একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।

শুরুর এই সলতে পাকানো সারা বইয়ে সার্থকতার সাথে আলো জ্বালিয়ে গেছে নির্বিঘ্নে। আমরা ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত’ রাজনৈতিক কর্মময়তায় ডুবে থাকি। অনেক শুনেছি এই ‘ফুলটাইমার’ শব্দ, আজ পড়ছি – এর আগে এর চেয়ে বেশি আর কোনো ‘ফুলটাইমার’কে পড়েছি বলে মনে হয় না।

বড় প্রয়োজন ছিল এই আত্মজীবনীর। বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের আপাদমস্তক এই রাজনৈতিক কর্মীর জীবন সম্বন্ধে জানবার। রেণুকে [বেগম মুজিব] ছোটোখাটো আঁচড়ে যা জেনেছি, বলতেই হবে এক মহৎ জীবনসঙ্গীকে জেনেছি। হাচিনাকে [শেখ হাসিনা] ও কামালকে যৎসামান্য যা পাওয়া গেছে তাতে বোঝা গেছে জেল খাটা সেইসব দেশ আলো করা রাজনৈতিক কর্মীদের ছেলেমেয়েদের শৈশব কীকরে কেটেছে।

খুবই সরল চলনের এই বই। রাজনীতির কূটকচালের, ঘটনার ঘনঘটার আশায় যারা এই বইয়ে হামলে পড়বেন তারা ভুল করবেন। কিন্তু যারা রাজনৈতিক কর্মীর নোটবই হিসাবে পড়বেন, তাদের জীবনে দ্যুতি ছড়াবে এই বই। অনেকদিন, বহুদিন।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

১০ comments

  1. মোহাম্মদ মুনিম - ২৬ জুন ২০১২ (৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    বইটির বাংলা সংস্করণ সহসা হাতে পাবার উপায় নেই। ইংরেজি সংস্করণটি বেজায় দামী (৬০ ডলার)। ইংরেজি সংস্করণটি পড়ার বিশেষ ইচ্ছেও নেই, কিছু কিছু বই অনুবাদ করা যায় না।
    ১৯৫৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল মোটে ৩৫, কিন্তু এর মধ্যেই সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁর বিশ বছর হয়ে গেছে। ১৯৫৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক জুলফিকার ভুট্টোর বয়স ছিল ২৭, সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁর একদিনও কাটেনি। বিলেত আমেরিকা থেকে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র শিখে ভুট্টো দেশে ফিরে প্রেমে পড়ে গেলেন এক পারস্য সুন্দরীর (বঙ্গবন্ধুর মতো ভুট্টোরও বাল্যবিবাহ হয়েছিল)। পারস্য সুন্দরীর সাথে বছর খানেক ‘লাইলি মজনু’ করে তাঁকে বিয়ে করলেন, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই, প্রথম স্ত্রী শিরিন বেগম অবহেলায় পড়ে রইলেন গ্রামের বাড়িতে। ভুট্টোর ‘রাজনীতি’ শুরু ১৯৫৭ সালে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পানি এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী হিসাবে।
    একজন রাজনৈতিক মহানায়কের সাথে একজন শখের রাজনীতিবিদের এখানেই পার্থক্য।

    • মাসুদ করিম - ২৬ জুন ২০১২ (১০:৩১ পূর্বাহ্ণ)

      বাংলা সংস্করণ কেন আমেরিকায় যাচ্ছে না? আমাদের বাঙালিরাও তো আমেরিকায় আছে? আর যিনি বাংলা জানেন তিনি কোন দুঃখে ইংরেজিতে পড়বেন? এটা কি বইটির প্রকাশক/পরিবেশকের মার্কেটিং সমস্যা যে বইটি বাংলায় আমেরিকায় যায়নি। নাকি আপনি এখন আমেরিকায় বাংলা বইয়ের এথনিক বাজার থেকে দূরে আছেন? অথবা আমেরিকায় আদৌ বাংলা বইয়ের কোনো এথনিক বাজার আছে কিনা? যাক, আশা করি এসব প্রশ্নের উত্তর যাই হোক — বইটি যত দ্রুত সম্ভব আপনার হাতে আসুক।

      আর সারা পৃথিবী কাত করা ভুট্টোর প্রসঙ্গ এনে ভালই করেছেন। ভুট্টোর মত একটা জলজ্যান্ত পরিহাসের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি আর বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় উপমহাদেশের তিন রাষ্ট্র ব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিশীলিত এই শেখ মুজিবুর রহমনাকে বাংলাদেশের মানুষই ঠিকমত চিনল না। শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখ করে লিখেছেন

      মনে মনে দুঃখ করলাম, আর ভাবলাম, যে লোক [শহীদ সোহরাওয়ার্দী] হাজার হাজার টাকা উপার্জন করে গরিবকে বিলিয়ে দিয়েছেন আজ তাঁর চিকিৎসার টাকা নাই, একেই বলে কপাল!

      আসলেই, একেই বলে কপাল!

  2. নীড় সন্ধানী - ২৬ জুন ২০১২ (১১:১৩ পূর্বাহ্ণ)

    বইটা চট্টগ্রামে কোথায় পাওয়া যাচ্ছে? বাতিঘর বা বিশদ বাঙলায় পাবো?

    • মাসুদ করিম - ২৬ জুন ২০১২ (১২:৪৯ অপরাহ্ণ)

      হ্যাঁ,পাবেন। আর চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের শোরুমেও পাবেন, মোবাইল : ০১৭১৪৫১৫৮২৭.

  3. রায়হান রশিদ - ২৩ জুলাই ২০১২ (৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    পড়বার আগ্রহ হচ্ছে খুব। কবে যে হাতে পাবো! এর মধ্যে কোনো সদয় ব্যক্তি আশা করি ইন্টারনেটে দিয়ে দেবেন।

  4. বিনয়ভূষণ ধর - ২৩ এপ্রিল ২০১৩ (৪:২৭ অপরাহ্ণ)

    সত্যি কথা বলতে আমি নিজেও অনেকদিন এরকম মানে এতো সহজ-সরল ভাষায় লেখা কারো আত্মজীবনী পড়িনি। আমার শুধু একটা জায়গায় আফসোস লেগেছে বারবার বইটি পড়ার পর – যদি বঙ্গবন্ধু পুরো আত্মজীবনীটা লিখে শেষ করে যেতে পারতেন তাহলে আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি আজ আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লিখা হতো!!!

  5. মাসুদ করিম - ৮ আগস্ট ২০১৪ (১১:৩২ অপরাহ্ণ)

    ‘মায়ের কাছ থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার শিক্ষা’

    ‘বঙ্গমাতা’বেগম ফজিলাতুন নেছার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈরী সময়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার শিক্ষা তিনি মায়ের কাছেই পেয়েছেন।

    তিনি বলেছেন, “প্রতিকূল সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার শক্তি দেখেছি আমি আমার মায়ের মধ্যে। মায়ের দৃঢ়তার জন্যই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে সামরিক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাননি।”

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় শুক্রবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

    বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বেগম ফজিলাতুন নেছার ভূমিকা তুলে ধরে তাদের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক জীবনে যে মোড়গুলো এসেছে, সেসব সময়ে মায়ের দৃঢ়তা দেখেছি।বাবার ছিল রাজনীতি আর মায়ের ছিল সিদ্ধান্ত নেয়ার দৃঢ়তা। আমার মা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।”

    এর উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার স্মৃতি রোমন্থন করেন, যে মিথ্যা মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

    ওই মামলায় প্যারোলে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে সামরিক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাননি। পরে গণআন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবুর রহমানকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয় তখনকার পাকিস্তান সরকার।

    শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মা কোনোদিন পাকিস্তান-করাচি যাননি। মায়ের জন্যই আব্বা প্যারোলে মুক্ত হয়ে পাকিস্তানে আলোচনার জন্য যাননি।

    “তখন আওয়ামী লীগের অনেক হোমড়া চোমড়া নেতা মাকে বলেছিল, ‘ভাবী, ওরা মুজিব ভাইকে মেরে ফেলবে। আপনি বিধবা হবেন। আপনার ছেলে-মেয়েরা এতিম হবে।’ মা শুধু বলেছিলেন, ‘শুধু আমি কোন? আরো ৩৪ জনের পরিবার আছে। তাদের কি হবে’?”

    ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বিপ্লব করে দেশকে স্বাধীন করার কথা ভাবলে তাতে স্ত্রীর সমর্থন পেয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দেয়ার পর তার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন যে হরতাল হয়েছিল, তা সফল করতে মায়ের বিশাল অবদান ছিল।”
    শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বঙ্গবন্ধু জেলে গেছেন, তখনই নেতা-কর্মীদের বাজারের টাকা দেয়া থেকে শুরু করে সব খোঁজ-খবর নিয়েছেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

    “কোনোদিন মায়ের মুখে আর্থিক দৈন্যতার কথা শুনিনি। যেদিন বাসায় বাজার হতো না, সেদিন বলতেন, আজকে আমরা গরিব খিচুরি খাব। মিন্টো রোডের বাসা ছেড়ে নাজিরাবাজারের ছোট একটা বাসায় উঠলাম। আব্বা জেলে। মা সোফাটা বেচে দেয়ার সময় বললেন, এতো ছোট ঘরে এতো বড় সোফা দরকার নেই।

    “আমার এখনো মনে আছে, ফ্রিজ বিক্রির সময়ে বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেয়ে শরীর খারাপ হচ্ছে। ওটা রাখার দরকার নেই।

    “মা গয়না বিক্রির আগে বলতেন, ওগুলো পুরনো হয়ে গেছে। আর দরকার নেই। আর আব্বা তো সব সময় বলতেন, তোমরা গহনা পরে কাদের দেখাবে? যে দেশের মানুষ দু’বেলা খেতে পারে না, তাদের?”

    শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতিবিদ বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেও মায়ের স্নেহ পেয়ে তারা বড় হয়েছেন।

    মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম এবং শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন।

  6. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০১৫ (১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

  7. মাসুদ করিম - ২ আগস্ট ২০১৫ (৬:২৭ অপরাহ্ণ)

    বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ জাপানি ভাষায়

    ইংরেজির পর এবার জাপানি ভাষায় অনূদিত হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।

    বইটি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করেছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে এর বাংলা বিভাগের প্রধান অনুষ্ঠান পরিচালক কাজুহিরো ওয়াতানাবে।

    ৬০০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করেছে জাপানের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ‘আশাহি শোতেন’।

    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র জাপানি সংস্করণ রোববার বঙ্গবন্ধুকণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেবেন অনুবাদক ওয়াতানাবে।

    বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

    ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত কারাগারে বন্দি থাকাকালে আত্মজীবনী লেখা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তা শেষ করে যেতে পারেননি।

    চারটি খাতায় তার লেখা সেই পাণ্ডুলিপি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘দি আনফিনিশড মেমোরিজ’ নামে ২০১২ সালে প্রকাশ করে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।

    বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতির ইতিবৃত্ত রয়েছে।

    পাশাপাশি দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।

    কারাগার ও বাইরের জীবন, বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজনের কথাও এতে বলেছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি।

  8. মাসুদ করিম - ৯ আগস্ট ২০১৬ (২:৪২ অপরাহ্ণ)

    বঙ্গমাতার দূরদর্শিতাই স্বাধীনতার পথ খুলে দেয়
    ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গিনী হিসেবে নেপথ্যে থেকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মুক্তিসংগ্রামে সহায়তা করেছেন। এই মহীয়সী নারীর দূরদর্শিতাই স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল।

    গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতার সার্বক্ষণিক ছায়াসঙ্গী বেগম মুজিবই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে তাকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে সামরিক সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নিষেধ করেছিলেন। এর মাধ্যমেই সেদিন বঙ্গমাতা বাংলার স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিলেন।

    বঙ্গমাতার অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাবাকে সহযোগিতা করতেন আমার মা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে আটকাবস্থা থেকে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানের সামরিক সরকার। ছয় মাস পর্যন্ত তার কোনো হদিস ছিল না। আমরা জানতেও পারিনি তিনি বেঁচে আছেন কি-না। এরপর কোর্টেই

    বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার সুযোগ হয়। তখন পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন। আম্মা সোজা বলে দিলেন, কোনো প্যারোলে মুক্তি হবে না। নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে হবে না।’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মায়ের সিদ্ধান্তের কথা কোর্টে যখন বঙ্গবন্ধুকে জানালাম তখন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকেও দেখেছি তারা বলেছেন, তুমি কেমন মেয়ে? বাবার মুক্তি চাও না? আম্মাকে বলেছেন, ভাবি, আপনি কিন্তু বিধবা হবেন। আমার মা তখন কঠিন স্বরেই বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি নিলে মামলার আর ৩৪ জন আসামির কী হবে? পরে বঙ্গবন্ধু প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে বহুবার জেলে গেছেন, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন। একটার পর একটা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। কিন্তু মাকে কখনই ভেঙে পড়তে দেখিনি।’

    ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ধৈর্য, সহনশীলতা ও কর্তব্যবোধের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা একাধারে সংসার সামলেছেন, আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। আবার আদালতে দৌড়াদৌড়ি করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য টাকা জোগাড় করে সংগঠনটাও তাকেই সচল রাখতে হয়েছে।

    বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনো কোনো নেতা বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘এখনি বলে দিতে হবে আজ থেকে স্বাধীন।’ কেউ বললেন, ‘এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে।’ কেউ কেউ এসে বলেছেন, ‘এটাই করতে হবে, না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। অমুক হবে, তমুক হবে।’ ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধুকে মা বললেন, ‘তুমি রাজনীতি করেছ, কষ্ট সহ্য করেছ। তুমি জান কী বলতে হবে। তুমিই জান এ দেশের মানুষ কী চায়, এ ব্যাপারে তোমার থেকে বেশি কেউ জানে না। কাজেই তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সেই কথাই বলবে। কারও কথা তোমার শুনতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে কোনো কাগজও ছিল না। নিজের মন থেকেই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু।

    মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমেন এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

    বিএনপির কমিটি শহীদদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল :বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের জায়গা করে দেওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের তাদের নিয়ে দল গঠন করে সেই যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদেরই বিএনপি নতুন কমিটিতে স্থান দিয়েছে। এটি জাতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ মা-বোনের সঙ্গে প্রতারণা করা ছাড়া কিছুই নয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুবলীগ প্রকাশিত ‘শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় :বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। তার পরিবার ওই কাজই করে যাচ্ছে।

    অনুষ্ঠানে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, শহীদ সেরনিয়াবাত, মাহবুবুর রহমান হীরন, ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.