দ্য ট্রায়াল অব দ্য বার্থ অব আ নেশন -- সোজা বাংলায় বলতে গেলে একটি রাষ্ট্রের জন্মবিচার; লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট-এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এটি। ইকোনমিস্ট কি তাদের এই শিরোনাম বুঝেশুনে দিয়েছে? জানা নেই আমাদের। তবে বুঝে হোক আর না-বুঝে হোক, ইকোনমিস্ট একটি নির্মম সত্যই বলে বসেছে, বাংলাদেশে এখন চূড়ান্ত অর্থে এই রাষ্ট্রের জন্মের বিচারকাজ চলছে। [...]

যুদ্ধাপরাধী বিচারের রাজনীতি ৪ দ্য ট্রায়াল অব দ্য বার্থ অব আ নেশন -- সোজা বাংলায় বলতে গেলে একটি রাষ্ট্রের জন্মবিচার; লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট-এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এটি। ইকোনমিস্ট কি তাদের এই শিরোনাম বুঝেশুনে দিয়েছে? জানা নেই আমাদের। তবে বুঝে হোক আর না-বুঝে হোক, ইকোনমিস্ট একটি নির্মম সত্যই বলে বসেছে, বাংলাদেশে এখন চূড়ান্ত অর্থে এই রাষ্ট্রের জন্মের বিচারকাজ চলছে। এই জনপদের মানুষ তখন চেয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসন ও দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক রাষ্ট্রের বাইরে এসে গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে, এরকম রাষ্ট্র যাতে মুক্তিকামীরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সেজন্যে বিরোধীরা সবরকম সহিংস পথ বেছে নিয়েছিল। ইকোনমিস্টের শিরোনাম তাই পুরোপুরি ইঙ্গিতময় : এই রাষ্ট্রে কি তারা আইনের উর্ধ্বে থাকবে, যারা একদিন এই রাষ্ট্রের জন্ম ঠেকানোর জন্যে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে সব কিছু করেছে? ওরাই করবে রাষ্ট্র পরিচালনা যারা একাত্তরে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করেছে একটি রাষ্ট্রের জন্মযন্ত্রণা? আর এর বিপরীতে তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে ন্যায় বিচার, যারা একদিন এই রাষ্ট্রের জন্যে স্বজন হারিয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে আর পালিয়ে থেকে জীবন বাঁচিয়েছে? না কি বাংলাদেশ একাত্তরের সেইসব পরিবারের জন্যে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রমাণ করবে, যারা ম্যাসাকারের শিকার হওয়ার মধ্যে দিয়ে খুব সরল সিধা এই সত্য তুলে ধরেছিল যে, তাদের আকাঙ্ক্ষিত নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্মের জন্যে যে কোনও পরিণতি বরণ করতে রাজি তারা? যেমনটি বলেছিলেন খান সারওয়ার মুরশিদ একাত্তরের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথবাণীর একটি বাক্য হিসেবে : ‘আমরা অঙ্গীকার করছি স্বাধীনতার জন্য জীবন সম্পদ সব দেব।’ আজ হয়তো অনেকে কথাটি মানতে রাজি হবেন না, কিন্তু ভবিষ্যত প্রমাণ করবে, এই প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যে দিয়ে ইকোনমিস্ট পৃথিবীর সাংবাদিকতার ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে জঘন্য কালো একটি অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে মিশন নিয়ে ইকোনমিস্ট এখন মাঠে নেমেছে সে মিশনকে বৈধতা দিতে তারা মীমাংসিত বিষয়কেও অমীমাংসিত করে তোলার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। যেমন, প্রতিবেদনের প্রথম পরিচ্ছেদেই তারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা উল্লেখ করতে গিয়ে জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা তিন লাখ থেকে বর্তমান সরকারের দাবি অনুযায়ী ত্রিশ লাখের মধ্যে একটা কিছু হবে। যুদ্ধাপরাধীদের…

মস্কোতে ছিলাম দুই দশকের অধিককাল। দেখা হয়েছে সমাজতন্ত্রের সুদিন, গর্বাচ্যোভের পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্ত, ইয়েলৎসিনের প্রতিবিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের পতন, পুতিনের পুঁজিতন্ত্র। তার পরও যাতায়াত ছিল। এবার এলাম অনেক দিন পর। আমার ভালো লাগার শহরটিকে এখন আর চিনতে পারি না। [...]

মস্কোতে ছিলাম দুই দশকের অধিককাল। দেখা হয়েছে সমাজতন্ত্রের সুদিন, গর্বাচ্যোভের পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্ত, ইয়েলৎসিনের প্রতিবিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের পতন, পুতিনের পুঁজিতন্ত্র। তার পরও যাতায়াত ছিল। এবার এলাম অনেক দিন পর। আমার ভালো লাগার শহরটিকে এখন আর চিনতে পারি না। নতুন নতুন ফ্ল্যাট বাড়ি, অসংখ্য প্রাইভেট কার, বিদেশি পণ্যে ঠাসা দোকানপাট, সর্বত্র মানি এক্সচেঞ্জ, অতিশয় কর্মব্যস্ত মানুষ, ঝলমলে বাগান, বিশ্বের সেরা রাজধানীগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। আমার মুগ্ধ হওয়ার কথা কিন্তু এক অদ্ভুত অস্বস্তি আমাকে তাড়া করে। কিছুতেই ভুলতে পারি না যে, অক্টোবর মহাবিপ্লব লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, ভেঙে গেছে দুনিয়াজোড়া মেহনতি মানুষের স্বপ্ন। সন্দেহ নেই, যা ঘটেছে তার একটা ইতিহাস আছে। সমাজতন্ত্রের রুশি মডেল ইউরোপ কখনো গ্রহণ করেনি -- সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা তো নয়ই, কমিউনিস্টরাও না। স্মরণ করা যেতে পারে, রোজা লুক্সেমবুর্গের সঙ্গে লেনিনের বিতর্কের কথা। রোজা জার্মানির জন্য ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ অনুমোদন করেননি, চেয়েছেন গণতন্ত্র। এই মতধারা সমাজতন্ত্রের পতন পর্যন্ত ইউরোপে অব্যাহত থেকেছে। ইতালি ও ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে রাশিয়ার মতানৈক্যের টানাপোড়েন চলেছে ক্রমাগত। পূর্ব ইউরোপের নবজাত সমাজতন্ত্রী দেশগুলোর ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাশিয়া সেইসব ‘বিদ্রোহ’ দমন করেছে বল প্রয়োগের মাধ্যমে। আর তাতে বিনষ্ট হয়েছে সমাজতন্ত্রের নতুন কোনো টেকসই মডেল উদ্ভবের সম্ভাবনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের জন্য তৈরি মার্কিন পুনর্গঠন পরিকল্পনায় সংগত কারণেই রাশিয়া শরিক হতে পারেনি, অধিকন্তু আত্মরক্ষার জন্য পরমাণু অস্ত্রসজ্জা নির্মাণের দুর্ভর বোঝা বইতে বাধ্য হয়েছে। এতে রাশিয়া সামরিক পরাশক্তি হতে পেরেছে, কিন্তু জনগণের চাহিদামতো ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে সফল হয়নি। সেই সঙ্গে ছিল অতিকেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থা, স্বাধীন মতামত প্রকাশের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অবাধ চলাচলে প্রতিবন্ধসহ নানা দমনমূলক দুর্ভোগ। উন্নত পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে তখন বইছে উন্নয়নের জোয়ার, উদ্ভব ঘটেছে কল্যাণ রাষ্ট্রের, সর্বত্র সচ্ছলতার আবহ। রুশিরা স্বভাবতই তাতে আকৃষ্ট হয়েছে, নিজেদের বঞ্চিত ভেবেছে। এ পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বের মুক্তিসংগ্রামে রাশিয়ার উদার সাহায্যকে তারা সুনজরে দেখেনি এবং শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান যুদ্ধের রক্তক্ষরণ তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে থাকবে। মনে পড়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে রাশিয়ার অবদান নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমার এক রুশি বন্ধুর মন্তব্য: ‘তোমার দেশে বিপ্লব মানে আমাদের আরও ভোগান্তি, দোকানে আরও লম্বা লাইন।’ উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বে ‘অপুঁজিবাদী উন্নয়ন’ বাস্তবায়নে রাশিয়া যে বিপুল সহায়তা জুগিয়েছিল তার সবই জলাঞ্জলি গেছে। পুঁজিতন্ত্রের নিদান…

চোর নির্বাচন [...]

টুইট করতে করতে অনেক সময় এমন কিছু গুচ্ছ টুইট হয়ে যায় যেগুলোকে পোস্টের রূপ সহজে দেয়া যায়। সেকাজটাই এখানে করা হল। আগে এরকম প্রচুর টুইট কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন থেকে ভাবছি, এরকম টুইটগুলোকে ‘টুইট থেকে পোস্টে’ সিরিজে সংগ্রহ করে রাখব। এই পোস্টে সংকলিত টুইটগুলো ক্রমান্বয়ে : এক, দুই, তিন। এখন শুধু একথা মুখ ফুটে বলার বাকি আছে, আমাদের চুরিতে জনগণের সমর্থন আছে -- কারণ জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। আর বিরোধীদের একথা মুখ ফুটে বলার বাকি আছে, ওরা আর কত চুরি করবে এবার আমাদেরকে চুরি করার সুযোগ দিন। আর ভোটারদের একথা মুখ ফুটে বলার আছে, আমরা চোর নির্বাচন করি। নির্বাচিত চোর হতে চাইলে আমাদের দুয়ারে আপনাদের আসতেই হবে।

মন্দিরা বাজতে কোনো ভুল করছে না[...]

ডান হাতে বামের মন্দিরা তো ভালই বাজত, বামের হাতেও ডানের মন্দিরা বাজতে কোনো ভুল করছে না। কাল নিরবধি : বাম নিশ্চিন্তে চলে ডানের সাথে তিনিই মধ্য যিনি থাকেন উভয়সংকটে।

বহুদিন এমন সহজ আত্মজীবনী পড়িনি।[...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ রাজনৈতিক কর্মীর নোটবই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ।। শেখ মুজিবুর রহমান ।। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা।। প্রথম প্রকাশ জুন ২০১২ ।। মূল্য ৫২৫ টাকা ।। বহুদিন এমন সহজ আত্মজীবনী পড়িনি। বহুদিন কোনো আত্মজীবনী এভাবে আমার ভেতরে হানা দেয়নি। একেবারে শুরুতেই ভাল লেগেছে, যখন শেখ মুজিব লিখছেন একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম। শুরুর এই সলতে পাকানো সারা বইয়ে সার্থকতার সাথে আলো জ্বালিয়ে গেছে নির্বিঘ্নে। আমরা ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত’ রাজনৈতিক কর্মময়তায় ডুবে থাকি। অনেক শুনেছি এই ‘ফুলটাইমার’ শব্দ, আজ পড়ছি – এর আগে এর চেয়ে বেশি আর কোনো ‘ফুলটাইমার’কে পড়েছি বলে মনে হয় না। বড় প্রয়োজন ছিল এই আত্মজীবনীর। বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের আপাদমস্তক এই রাজনৈতিক কর্মীর জীবন সম্বন্ধে জানবার। রেণুকে [বেগম মুজিব] ছোটোখাটো আঁচড়ে যা জেনেছি, বলতেই হবে এক মহৎ জীবনসঙ্গীকে জেনেছি। হাচিনাকে [শেখ হাসিনা] ও কামালকে যৎসামান্য যা পাওয়া গেছে তাতে বোঝা গেছে জেল খাটা সেইসব দেশ আলো করা রাজনৈতিক কর্মীদের ছেলেমেয়েদের শৈশব কীকরে কেটেছে। খুবই সরল চলনের এই বই। রাজনীতির কূটকচালের, ঘটনার ঘনঘটার আশায় যারা এই বইয়ে হামলে পড়বেন তারা ভুল করবেন। কিন্তু যারা রাজনৈতিক কর্মীর নোটবই হিসাবে পড়বেন, তাদের জীবনে দ্যুতি ছড়াবে এই বই। অনেকদিন, বহুদিন।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.