ব্রায়ান মুর একটি উপন্যাস লিখেছিলেন ‘দ্য স্টেটমেন্ট’ নামে; যুদ্ধাপরাধী পল ট্রভিয়েরের জীবন ছিল তাঁর সে কাহিনীর ভিত্তি। পরে মুরের ওই পাণ্ডুলিপিকেই নতুন এক রূপ দেন রোমান পোলানস্কির হলোকাস্টভিত্তিক চলচ্চিত্র দ্য পিয়ানিস্ট-এর চিত্রনাট্য লেখক রোনাল্ড হারউড। আর রোনালেন্ডর ওই চিত্রনাট্য নিয়ে পরিচালক নরমান জুইসন নির্মাণ করেন ২০০৩ সালে চলচ্চিত্র ‘দ্য স্টেটমেন্ট’। পল ট্রভিয়ের এখানে যুদ্ধাপরাধী পিয়ের ব্রোসার্ড। ১৯৪০ সালে জার্মান বাহিনী ফ্রান্সের ভিসি শহর দখল করে নেয়ার পর ১৯৪৩ সালে তাদের সহায়তা করার জন্যে ভিসি সরকার মিলিচ নামে একটি আধা-সামরিক বাহিনী গড়ে তোলে; যাদের কাজ ছিল নাজী দখলদারদের বিভিন্ন হুকুম তালিম করা, নানাভাবে সহায়তা করা। পিয়ের ব্রোসার্ড ছিলেন সেই মিলিচ নামের আধা-সামরিক বাহিনীর একজন। তরুণকালের ব্রোসার্ডকে দিয়েই শুরু হয়েছে এ চলচ্চিত্র; দেখি আমরা ১৯৪৪ সালের ফ্রান্সের ডোমবে,- মানুষজনকে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে তুলে আনার কাজে সেখানে নেতাগিরি করছে ব্রোসার্ড, গণহত্যার জন্যে তাদের দাঁড় করাচ্ছে সারিবদ্ধভাবে এবং আদেশ দিচ্ছে ‘ফায়ার’। এরপরই আমরা দেখি ১৯৯২ সালের ব্রোসার্ডকে। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৭০। তাঁর জীবনের একমাত্র সাধনা এখন নিজের অতীতকে লুকিয়ে রাখা। স্যালন ডি প্রোভিন্স-এর একটি মঠে বসবাস করে সে। সংগোপনে বসবাসকারী ব্রোসার্ডের খোরাকী জোগায় ক্যাথলিক চার্চের বন্ধুচক্র, অপরিসীম সহানুভূতি যাদের ব্রোসার্ডের মতো যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি। এইভাবে বেশ ভালোভাবেই বেঁচে থাকে ব্রোসার্ড। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হতেই মার্শাল পিটেইনের নেতৃত্বে গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এরকম সব যুদ্ধাপরাধী ফ্রান্স থেকে ভাগতে থাকেন, কেউ কেউ আবার আদালত থেকেও ব্রোসার্ডের মতো পার পেয়ে যান। কেননা রাষ্ট্রকাঠামো ও চার্চের মধ্যে স্থান করে নেয়া সমমনা রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারক ব্যক্তিরা সহায়তা করেন তাদের। ব্রোসার্ডের ক্ষেত্রেও দেখি, অপরাধ করার পরও তাঁর কোনও সাজা হয় না, চার্চের সহায়তায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমা পেয়েই আত্মগোপনে চলে যায়, এক মঠ থেকে অন্য মঠে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে ধর্মচর্চায় মন দেয় সে। ধর্মকর্ম করে, অতীত লুকিয়ে রাখে, আর বৃদ্ধ হতে থাকে। অবশ্য যত বৃদ্ধই হোক না কেন, কর্মক্ষমই থাকে ব্রোসার্ড। নিজের গাড়ি নিজে চালায়, দৈনিক গাল কামায় এবং প্রার্থনাও করতে পারে কোনও কষ্ট ছাড়াই। কিন্তু তারপরও বৃদ্ধ সে। মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই পিয়ের ব্রোসার্ডের। কিন্তু এরকম এক সময়ে হঠাৎ করেই পাল্টে যায় পিয়ের…
'অন্যেরা যাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে নেয় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্ব। ঐকমত্য পোষণ করা শিল্পীর ধর্ম নয়। দ্বিমত পোষণ করার চেষ্টা থাকা চাই, তাহলেই সন্ধান মিলবে সত্যের। এই বিবেচনা থেকেই তিনটি প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করা হলো।' -- ক্রিস্তফ্ জানুসি
পোলিশ চলচ্চিত্র পরিচালক ক্রিস্তফ্ জানুসি-র (জ. ১৯৩৯) একটি ছোট গদ্যরচনা পড়েছিলাম কয়েক বছর আগে। সেই লেখাটির অনুবাদ এখানে তুলে দিচ্ছি। মত, পালটা মত অন্যেরা যাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে নেয় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্ব। ঐকমত্য পোষণ করা শিল্পীর ধর্ম নয়। দ্বিমত পোষণ করার চেষ্টা থাকা চাই, তাহলেই সন্ধান মিলবে সত্যের। এই বিবেচনা থেকেই তিনটি প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করা হলো। প্রসঙ্গ ১ : লোকজন যখন সংবিধানকে নির্বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করে, তখন আমি ধন্দে পড়ে যাই। সংসদে প্রত্যক্ষ ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সংবিধান পাশ হয়। কিন্তু এতে বড়ো রকমের ফাঁক থেকে যেতে পারে কিংবা এর প্রতি কারো শ্রদ্ধাবোধ না থাকতে পারে। আমার জানামতে এমন অনেক দেশ আছে যাদের সংবিধানগুলি খুব চমৎকার কিন্তু সে-সব দেশের বাস্তব পরিস্থিতি ভয়াবহ। সে-কারণেই, আমার দৃষ্টিতে, আইন বা সংবিধান মুখ্য বিষয় নয়। আমি মানব-মনের সত্যিকার শান্তির প্রত্যাশী, এবং সেখানে যদি সামঞ্জস্য থাকে, ভারসাম্য থাকে, তাহলে তা প্রতিফলিত হবে সংবিধানে। কিন্তু এমন অনেক জিনিসকেই স্বতঃসিদ্ধ বা অলঙ্ঘনীয় বলে মনে করা হয় যেগুলি আমার দৃষ্টিতে আদৌ তা নয়। কূটনীতি ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট মানুষজন দুই রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী সীমারেখাকে অলঙ্ঘনীয় বলে মনে করেন। সীমান্ত জিনিসটা পুরোপুরি কৃত্রিম। তা মানুষের তৈরি এবং বিতর্কযোগ্য। দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ বিতর্কের পরিসমাপ্তি হয় যুদ্ধে, যা কোনো সমাধান নয়। সীমান্তকে অলঙ্ঘনীয় বলা তাই অর্থহীন। প্রসঙ্গ ২ : ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আমার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রচয়িতার স্বত্ব পরিশোধ করা হলে আমি লাভবান হই। তবে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আদৌ সংরক্ষিত হওয়া উচিত কি না সে-বিষয়ে নীতিগত অবস্থান থেকে আমি সংশয়ী। আমি জনপ্রিয় হতে চাই, আমি চাই আমার সৃষ্টির পাঠ গ্রহণে আগ্রহী যে-কারোর নাগালের মধ্যে তা পৌঁছে যাক। রাশিয়াতে আমার ফিল্মের পাইরেটেড ক্যাসেট দেখার পর আমার ইচ্ছে করছিল ওই বিক্রেতাদের বুকে জড়িয়ে ধরি, কারণ ছবিগুলিকে ক্রেতাসাধারণের নাগালের মধ্যে আনার জন্য তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। চীনে আমার ফিল্মের পাইরেটেড ডিভিডি-র সন্ধান পেয়ে আমি গৌরবান্বিত বোধ করেছি। আমার হয়তো কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু আনন্দের ভাগটাও তো কম নয়। আমার কাজের ব্যাপারে আগ্রহী যে-কারো কাছে তা সহজলভ্য হবার আকাঙ্ক্ষা এবং এর বিনিময়ে অর্থাগমের লোভ করা -- এই দুটি অবস্থান পরস্পরবিরোধী। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য…
রচনাঃ হাসান মাহমুদ পরিচালনাঃ রাকিবুল হাসান অভিনয়ে শ্রেষ্ঠাংশে: রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং ইলোরা গওহর। কপিরাইট সৌজন্যে: আমারব্লগ.কম
রচনাঃ হাসান মাহমুদ পরিচালনাঃ রাকিবুল হাসান অভিনয়ে শ্রেষ্ঠাংশে: রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং ইলোরা গওহর। কপিরাইট সৌজন্যে: আমারব্লগ.কম =ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের সর্বত্র অলাভজনক বিতরণ এবং প্রচারের জন্য উম্মুক্ত= হিল্লা: প্রথম পর্ব হিল্লা: দ্বিতীয় পর্ব হিল্লা: তৃতীয় পর্ব হিল্লা: চতুর্থ পর্ব হিল্লা: পঞ্চম পর্ব হিল্লা: ষষ্ঠ পর্ব হিল্লা: সপ্তম পর্ব হিল্লা: অষ্টম ও শেষ পর্ব দ্রষ্টব্য: ১) হাসান মাহমুদের 'ইসলাম ও শরিয়া' বইটি এখন পাওয়া যাবে পাঠক সমাবেশ লাইব্রেরীতে (আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা)। ২) লেখকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে এই লিন্কটি ব্যবহার করুন: hasan.mahmud@hotmail.com
কৃষি প্রধান অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসাট। ওখানকার অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী এবং খেটে খাওয়া মানুষ। কৃষিকাজকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবনের যাবতীয় সুখ, দুঃখ, হাসি কান্না, সফলতা, ব্যর্থতা। তাই নির্দিষ্ট মওসুমে তারা ধান বপন করে তাদের সর্বস্ব দিয়ে, এমনকি যারা নিতান্তই হতদরিদ্র, কিছুই অবশেষ নেই, তারাও ধার দেনা করে, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে ঢেলে দেয় ধানের জমিতে। ধান উঠলে যাবতীয় ধারদেনা শোধ হবে, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে, গৃহিনীর মুখে হাসি ফুটবে, সচল থাকবে সংসারের চাকা।
কৃষি প্রধান অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসাট। ওখানকার অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী এবং খেটে খাওয়া মানুষ। কৃষিকাজকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবনের যাবতীয় সুখ, দুঃখ, হাসি কান্না, সফলতা, ব্যর্থতা। তাই নির্দিষ্ট মওসুমে তারা ধান বপন করে তাদের সর্বস্ব দিয়ে, এমনকি যারা নিতান্তই হতদরিদ্র, কিছুই অবশেষ নেই, তারাও ধার দেনা করে, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে ঢেলে দেয় ধানের জমিতে। ধান উঠলে যাবতীয় ধারদেনা শোধ হবে, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে, গৃহিনীর মুখে হাসি ফুটবে, সচল থাকবে সংসারের চাকা। http://www.flickr.com//photos/84513436@N05/sets/72157631039164398/show/ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার এ অঞ্চলটি বাংলাদেশের অন্যান্য জনপদের মতই শান্ত, নির্বিরোধী এবং নিরীহ জনগনের আবাস। নিজস্ব সংস্কৃতি, গান, আম এর বাইরে তাদের আলাদা সংগ্রামী কোন বৈশিষ্ট্যর কথা আলাদা করে কেউ শোনেনি। কিন্তু ২০০৬ সালের একটি ঘটনা কানসাটকে সমগ্র দেশের আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে, বিদু্যতের অভাবে পানির অভাব ঘটে, পানির অভাবে ধানের চারা মারা যেতে থাকে। ঐ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ফলে কানসাটবাসী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মুখোমুখি বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কানসাটে কি কি করেছিল? ১.কয়েক বছরের মধ্যে মিটার ভাড়া ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৫ টাকা নির্ধারণ। ২. বিদ্যুৎ দিতে পারুক বা না পারুক গ্রাহকসংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ হাজার থেকে ৫৬ হাজারে উন্নিত করণ (প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার ভাড়া বাবদ বিপুল অর্থ আদায় করা যাবে)। ৩. গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করা। গ্রামবাসীর অভিযো,গ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না, ঐ থাকাকালীন সময়েও ৭/৮ বার ভোল্টেজের বাড়া কমার কারণে তাদের মটর পুড়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকলে সেচপাম্প চলে না, সেচপাম্প না চললে জমিতে পানির সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানির অভাবে কৃষকের চোখের সামনেই তাদের জমিতে ধানের চারা গুলি নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। মারা যেতে থাকে। ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে কৃষক, প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদী কৃষকদের শায়েস্তা করার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু লোক রাতে এসে (রাতের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে জবাব দিয়েছিল, মিটার চেক করতে এসেছে) তাদেরই ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় (বিদ্যুতের কাজ না জানলে ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকলে সাধারণ কারো পক্ষে ট্রান্সফরমার খোলা সম্ভব নয়), চুরির দায় চাপায় গ্রামবাসীর উপর…
প্রায় ৭/৮ মাস পড়ে থাকার পর গত পরশু ‘স্বপ্নভূমি’ দেখলাম। ভালো লাগল। তবে প্রামাণ্য চিত্রটির বিহার ও করাচি অংশটির মেকিং আমার ভালো লাগেনি। সম্ভবত বিহার ও করাচির অংশটি নিয়ে সময় কম দেয়া হয়েছে, অথবা যাবতীয় খোঁজখবর সংগ্রহে ব্যাপ্তি কম ছিল। (more…)